‘চারী’, ‘ধরম’ ও জঙ্গলমহলের কুড়মি মাহাত সম্প্রদায়: একটি প্রতিবেদন

শময়িতা সেন

 


সাংস্কৃতিক গবেষণা কেন্দ্র (কালচারাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট) তাদের রিপোর্টে কুড়মি সংস্কৃতিতে হিন্দুধর্মের প্রভাবকে বড় করে দেখিয়েছে। গবেষণা কেন্দ্রের মতে, কুড়মিদের 'স্বতন্ত্র সংস্কৃতি' লোপ পেয়েছে। কেন্দ্রের প্রাথমিক রিপোর্ট তাই কুড়মিদের জনজাতি স্বীকৃতির বিরোধিতা করেছে। এই রিপোর্টে যা নজর এড়িয়ে গেছে তা হল, কুড়মিদের ওপর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আগ্রাসনের ইতিহাস। এই লেখায় আমরা সেই ইতিহাসকেই তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। সেই আগ্রাসী ইতিহাসের বিরুদ্ধে কুড়মিদের বর্তমান আন্দোলনের কিছু পাঠ-ও আমরা আলোচনা করলাম

 

প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের ঘনিষ্ঠ সংযোগ যেন ‘এক অনন্ত পথ-চলার ছবি’[1]। সেই পথ চলা কখনও বন্ধুত্বপূর্ণ, আবার কখনও দ্বান্দ্বিক। ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে, মানুষ কখনও প্রকৃতির পুজো করেছে আবার কখনও তার ওপর নিজের আধিপত্য কায়েম করতে চেয়েছে। যারা প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছে, সেইসব মানুষের প্রবহমান লোকায়ত বিশ্বাসের নানান ধারা বেড়ে উঠেছে প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে। প্রকৃতির নিজস্ব রূপ ও সাধারণের লোকায়ত বিশ্বাস, এই দুইয়ের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে এক অন্যরকম সংস্কৃতি/কৃষ্টি। এই লেখাটি সেরকম এক অন্যরকম সংস্কৃতির ধারকদের ক্রমপরিবর্তনশীল জীবনের একটুকরো পাণ্ডুলিপি। এই পাণ্ডুলিপিতে আছে একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর মানুষের নিজেদের “চারী” (বাংলায়, সংস্কৃতি) বাঁচিয়ে রাখার একটা গল্প। যে গল্প মানববাবুর কথায়, ‘যেমন-তেমন তো না—/হাসির মধ্যে রইল মিশে/মনখারাপ ও দুঃখ ভারি!’

ভারতবর্ষের ইতিহাসের ধারায় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন সুপরিচিত বিষয়। বহু আদিম জনগোষ্ঠী এই আগ্রাসনের স্বীকার। এই গল্পে আমাদের আলোচ্য তেমনই এক জনগোষ্ঠী, কুড়মি মাহাত নামে যারা পরিচিত। স্বাধীনতা-উত্তর আদমশুমারীতে কুড়মিদের ‘হিন্দু’ ধর্মাবলম্বী হিসেবে গণ্য করা হলেও তারা নিজেদের ‘হিন্দু সমাজের গড়ন’-এর আওতার বাইরে রাখে। তারা বিপুলাংশে বিশ্বাস করে যে, তারা সর্বপ্রাণবাদী অর্থাৎ অ্যানিমিস্ট। সর্বপ্রাণবাদ (ইংরেজিতে অ্যানিমিজম্) এমন এক আধ্যাত্মিক বিশ্বাস যা প্রকৃতিকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে। সর্বপ্রাণবাদীরা প্রকৃতির পূজারী। তারা মনে করে যে, যে সকল উপাদান দিয়ে প্রকৃতি তৈরি— অর্থাৎ গাছাগাছালি-পাখপাখালি-নদনদী-পাথরশিলা— তাদের সবার প্রাণ আছে। আর এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলি সর্বপ্রাণবাদীদের আরাধ্য। ভারতবর্ষে মূলত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর[2] মধ্যে সর্বপ্রাণবাদ প্রচলিত থাকলেও তাদের এই সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের ভারতীয় সাংবিধানিক কাঠামোতে কোনও জায়গা নেই। স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষের আদমসুমারিতে যে ছয়টি ধর্মকে প্রণিধান দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে সর্বপ্রাণবাদের উল্লেখ নেই। এই নিয়ে বহু আদিবাসী সংগঠন ক্রমান্বয়ে আন্দোলন করলেও, সর্বপ্রাণবাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য তাদের এখনও অনেক পথ হাঁটা বাকি।

সর্বপ্রাণবাদী কুড়মি মাহাত সম্প্রদায় এক আদিবাসী সম্প্রদায়। খবরের কাগজের পাতায় চোখ রাখলে আজকাল প্রায়শই কুড়মি সম্প্রদায়কে নিয়ে লেখালিখি চোখে পড়ে। যদিও তারা কখনওই খবরের শিরোনামে আসে না, তবে একটু খুঁটিয়ে কাগজ পড়লে তাদের আন্দোলন সম্পর্কিত নানান টুকরো খবর আমাদের নজরে পড়ে। জানা যায় যে, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত কুড়মি মাহাতরা পড়শি ঝাড়খণ্ড ও ওডিশা রাজ্যের কুড়মিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সাংবিধানিকভাবে জনজাতি অর্থাৎ সিডিউল্ড ট্রাইব স্বীকৃতি লাভের জন্য বিরাট এক আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনটির মূল দাবিগুলির মধ্যে একটি হল সাংবিধানিকভাবে সারনা[3] কোডের স্বীকৃতি। কুড়মি মাহাতরা এই স্বীকৃতির জন্য লড়াই করছে কারণ তাদের সত্তা রাজনীতির (অর্থাৎ আইডেন্টিটি পলিটিক্স) সঙ্গে তা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারা মনে করে যে, হিন্দুধর্ম বিশেষত ব্রাহ্মণ্যবাদের আগ্রাসনের ফলে তাদের কৌম-সংস্কৃতির প্রবহমান লোকায়ত ধারা নানানভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং সারনা কোডের সাংবিধানিক স্বীকৃতির মাধ্যমে তারা নিজেদের আচার[4] আবার পুনরুদ্ধার করতে পারবে। তাদের এই দাবির যে ভিত্তি আছে তা একটি অতিসাম্প্রতিক উদাহরণের সাহায্যে আন্দাজ করা সহজ হবে।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর, আশ্বিন মাসের ৭ তারিখে, কুড়মিদের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরব, করম পরব অনুষ্ঠিত হল গোটা জঙ্গলমহল জুড়ে। করম পরবের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে কুড়মিদের কৃষিজীবন ও প্রকৃতির সঙ্গে তাদের নিবিড় সম্পর্ক। এই পরবের মাধ্যমে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কৃষিকাজে হাতিখড়ি হয়। প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার বীজমন্ত্র এই পরবের গান— যাকে জাওয়া গান বলা হয়— তার কথায় উঠে আসে। সেই গানে কুড়মিদের জীবনযন্ত্রণার ছবিও ধরা পড়ে। এখানে বলে রাখা ভাল যে, করম শুরু হয় ভাদ্র মাসে। জাওয়া দেওয়ার মাধ্যমে। স্থানভেদে এই পরব ৯ থেকে ১১ দিন ধরে উদযাপিত হয় কিন্তু রাজ্য সরকার এই পরবে ছুটি ঘোষণা করে মাত্র একদিন।

এই বছর, করমের দিন একটি ছবি নেটদুনিয়া ও সংবাদপত্রে অনেকেরই নজরে পড়েছে। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় মেদিনীপুর থেকে নির্বাচিত তৃণমূলের প্রতিনিধি ব্রাহ্মণ দিয়ে করম পুজো করাচ্ছেন। অথচ, করম সহ কুড়মিদের নিজস্ব যে কোনও পরবেই ব্রাহ্মণের কোনও ভূমিকা নেই। তাদের নিজেদের সমাজের পুরোহিত অর্থাৎ ‘লায়া’র দ্বারা কুড়মিদের মান্য দেবতারা পূজিত হন। কুড়মিদের জাহেরথানে, অর্থাৎ উপাসনা করার জায়গায়, লায়া ছাড়াও যে-কোনও পুরুষ পুজো করতে পারেন; জোগাড় করেন মূলত মহিলারা। করম পরবে লায়া করমডালকে পুজো করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের শিক্ষামূলক ‘করম কাহিনি’ শোনান। এই পরবে কোনও মন্ত্রোচ্চারণ হয় না। সারাদিন ধরে নানান লোকাচারের মাধ্যমে পরব অনুষ্ঠিত হয়। যত রাত বাড়ে, জাওয়া গান আর জাওয়া নাচে, করমের নিজস্ব “পুরাখেনি” (পুরনো) গানে মেতে ওঠে কুড়মি গ্রামের কুলহি (রাস্তা)। এ-কথা অনস্বীকার্য যে, কুড়মিদের সব গ্রামে এই ছবি ধরা পড়ে না। অঞ্চলবিশেষে পরব নিয়ে উৎসাহ ও উদ্দীপনার তারতম্য আছে। এর মূলে রয়েছে হিন্দুকরণের রাজনীতি। ব্রাহ্মণকে দিয়ে করম পুজো করানো সেই রাজনীতিরই আরেকটা রূপ। কুড়মিরা ঐতিহাসিকভাবে এই আগ্রাসনের রাজনীতির শিকার। সেই ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করার আগে বিশদে একটু পরিচয় করে নিই কুড়মি জাতির সঙ্গে।

 

কুড়মি কারা? তারা কী চাইছে?

কুড়মি একটি বিশেষ সম্প্রদায়। নিজেদের সম্প্রদায় সম্বন্ধে কথা বলার সময় তারা যে বিশেষ্য পদটি ব্যবহার করে সেটি হল ‘সমাজ’। কুড়মিদের বাস মূলত ভারতবর্ষে। হাতেগোনা কিছু কুড়মি বাংলাদেশেও বসবাস করে। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম জেলাসমূহ, যা একত্রে জঙ্গলমহল নামে পরিচিত, সেই জেলাগুলিতে অর্থাৎ ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও বীরভূমে কুড়মিরা অন্যতম সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং অসমে তারা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে। কুড়মিরা মূলত কৃষিজীবী। ইদানীং, চাষের থেকে আয় কমে যাওয়ায়, সমাজের কিছু মানুষ অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে পাড়ি দিচ্ছেন ভিন রাজ্যে। কুড়মিরা সাংবিধানিকভাবে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ইংরেজিতে, আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস বা ওবিসি) হিসেবে স্বীকৃত। এখন কুড়মিরা ব্যাপকভাবে জনজাতি তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। যদিও, এই আন্দোলনে বিহার ও উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে বসবাসকারী কুড়মিজাতি অংশগ্রহণ করছে না।

পশ্চিমবঙ্গ ও তার সংলগ্ন রাজ্যগুলির (মূলত ঝাড়খণ্ড ও ওডিশার) কুড়মিরা নিজেদেরকে ‘ঢঁড়’ কুড়মি হিসেবে পরিচয় দেয়। ‘ঢঁড়’ মানে পেট। ‘ঢঁড়’ কুড়মি হল তারা যারা কৃষিকাজ করে ও তাদের উৎপাদিত শস্যের একটি অংশ খেরোয়াল[5] এবং হিত-মিতান (অর্থাৎ বন্ধুত্বপূর্ণ) সম্প্রদায়, যারা কুড়মিদের চাষাবাদে সাহায্য করে, তাদের মধ্যে বিতরণ করে। জনজাতি তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্যে যে কুড়মিরা লড়াই করছে, তারা এও দাবি করে যে, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে বসবাসকারী কুড়মি জাতি এবং বাংলা, ওডিশা, ঝাড়খণ্ডে বসবাসকারী কুড়মি সম্প্রদায় আসলে আলাদা। নিজেদের ‘টোটেমিক’ কুড়মি হিসেবে পরিচয় দিয়ে তারা দাবি করে যে, বিহারি কুর্মি সম্প্রদায় মুর্তিপূজায় বিশ্বাসী হিন্দু হলেও কুড়মিরা আসলে সর্বপ্রাণবাদী। আসলে, কুড়মি জাতি ৮১টি গোষ্ঠী/টোটেমে বিভক্ত। গোষ্ঠীগুলির নামকরণ হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু গাছ এবং প্রাণীর নাম অবলম্বনে। যেই গোষ্ঠী যেই গাছ/প্রাণীর নামে নামাঙ্কিত সেই গোষ্ঠীর সেই গাছ/প্রাণী হল টোটেম। নিজেদের টোটেম রক্ষা করার দায়িত্ব আছে প্রতিটি গোষ্ঠীর। কুড়মিদের বিশ্বাস যে, সেই দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারলে, প্রকৃতিতে একটা সামঞ্জস্য থাকবে। যেমন, কাঢ়ুয়ার গোষ্ঠী যাদের টোটেম কাঢ়া বা মোষ, তারা মোষ দিয়ে হালচাষ করতে পারে না; যাদের গোষ্ঠী বঁশরিয়ার তারা বাঁশগাছ কাটতে পারে না ইত্যাদি। পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত কুড়মি নেতারা দাবি করে যে, কুড়মিদের সর্বপ্রাণবাদী বিশ্বাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রমাণ হল তাদের গোষ্ঠীভাগ। এ-কথা অনস্বীকার্য যে, এই গোষ্ঠীব্যবস্থার ওপরেও ব্রাহ্মণ্যবাদ আক্রমণ শানিয়েছে, কিন্তু কুড়মি নেতারা বিশ্বাস করে যে, তাদের সম্প্রদায় জনজাতি তালিকাভুক্ত হলে তারা তাদের এই সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে পারবে।

আসলে কুড়মিরা স্বাধীনতার আগে প্রশাসনিক স্তরে ‘ট্রাইব’ হিসেবে স্বীকৃত ছিল। যদিও, স্বাধীনতার আগে থেকেই প্রশাসনের দৃষ্টিতে কুড়মির পরিচয় ক্রমান্বয়ে বদলে বদলে গেছে। ১৯০১ এবং ১৯১১ সালের আদমসুমারিতে কুড়মিদের আদিবাসী জনজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল; ১৯২১ সালের আদমসুমারিতে তারা অ্যানিমিস্ট হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিল; এবং ১৯৩১ সালের আদমসুমারিতে তাদের আদিম জনজাতি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। কুড়মি সম্প্রদায়ের নাম ১৯৫০ সালে অর্থাৎ স্বাধীনতার পরে জনজাতির তালিকা থেকে বাদ পড়ে। তার জন্য কোনও কারণ সরকারের তরফে দেখানো হয়নি। পরবর্তীতে, ১৯৫৬ সালে কালেলকার কমিশন রিপোর্ট এবং ১৯৯০ সালে মন্ডল কমিশন রিপোর্টের প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে, কুড়মিরা (এবং কুর্মিরা) ওবিসি হিসেবে স্বীকৃত হয়।

কুড়মিরা আদৌ আদিবাসী কিনা এই বিষয়ে নানা মুনির নানা মত। সেইসব এই লেখার আলোচ্য বিষয় নয়। সরকারের চোখে ক্রমান্বয়ে বদলে বদলে যায় যে সম্প্রদায়ের প্রশাসনিক সত্তা, সেই বদলের ইতিহাস খুঁজে দেখলে পাওয়া যায় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কিছু টুকরো টুকরো ছবি। সেই ছবিগুলো এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।

 

কুড়মিদের ওপর সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ঐতিহাসিক দলিল

১৮৯০ থেকে ১৯৫০ সালের ভিতর জঙ্গলমহলের সংস্কৃতি, রাজনীতি ও কৌম স্মৃতি কীভাবে বদলে বদলে গেছে তার এক ঐতিহাসিক দলিল আমরা পাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রণবীর সমাদ্দারের কাজে। কুড়মিদের ওপর সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের একটা ছবিও সেই কাজেই উঠে এসেছে। রণবীর সমাদ্দারের মতে জঙ্গলমহলের নিজস্ব পরিচয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন লুকিয়ে আছে তার সংস্কৃতিতে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গর থেকে জঙ্গলমহলকে আলাদা করে তার সংস্কৃতি। রণবীর সমাদ্দার তাঁর গবেষণায় আরও বলেছেন যে, জঙ্গলমহলের সংস্কৃতি ক্রমান্বয়ে আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। জঙ্গলমহলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় ফলে কুড়মিদের ওপরেও সেই আগ্রাসনের প্রভাব পড়েছে।

পশুপতি মাহাত কুড়মি বুদ্ধিজীবী এবং গবেষক ‘নির্বাকিকরণ’[6]-এর তত্ত্ব প্রস্তাব করেছেন। উদাহরণের সাহায্য নিয়ে তাঁর নানান বইয়ে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে আধিপত্য বিস্তারকারী বাঙালি ‘ভদ্রলোক’ বুদ্ধিজীবীদের প্রভাবে কুড়মিরা একপ্রকার বাধ্য হয়েছিল নিজেদের কৌম-জীবনের বাইরে গিয়ে জাতীয়তাবাদের এক অন্য বাগধারা, প্রতীক, লক্ষণ এবং শৈলী নিজেদের বলে গ্রহণ করতে। কুড়মিদের উপর হওয়া সাংস্কৃতিক নিপীড়নের ইতিহাস সংক্ষেপে এবার আমরা অন্বেষণ করব।

কুড়মিদের কৌম সঙ্কল্পে প্রথম ফাটল দেখা দিতে আরম্ভ করে ১৮৯০-এর দশকে যখন তাদের মধ্যে একাংশ (অবশ্যই উচ্চশ্রেণি) নিজেদের কুড়মি ক্ষত্রিয় হিসেবে দাবি করে আন্দোলনে শুরু করেছিল। অল ইন্ডিয়া কুর্মি ক্ষত্রিয় মহাসভা, ১৮৯৪ সাল থেকে কুড়মিদের ক্ষত্রিয়ত্বের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল। আর্য সমাজ, হিন্দু মহাসভা, হিন্দু মিশনের মতো সংগঠনগুলি ক্ষত্রিয়ত্ব প্রমাণ করার প্রয়োজনীয় পুরাণকথা কুড়মিদের সরবরাহ করেছিল। অর্থাৎ কুড়মিদের হিন্দুকরণের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ মদত ছিল ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু সংগঠনগুলির। এ-কথা অনস্বীকার্য যে, কুড়মি ক্ষত্রিয় আন্দোলন জঙ্গলমহলে কিছুটা সাফল্যর মুখ দেখেছিল যার ফলস্বরূপ ১৯৩১ সালে বাংলার কুড়মিদের আদিম উপজাতির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তবে, সামগ্রিকভাবে সাধারণ কুড়মিদের মধ্যে এই আন্দোলনের প্রভাব বিশেষ ছিল না। তবে, ক্ষত্রিয়করণ আন্দোনের ফলে কুড়মিদের সাংস্কৃতিক অভ্যাসের কিছু হিন্দুকরণ হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিধবাদের পুনর্বিবাহ নিষিদ্ধ করা, পুরুষদের পৈতে পরতে উত্সাহিত করা উল্লেখযোগ্য। পুজো-পরবে আমিষ ভোজনও তখন বন্ধ করা হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকটা প্রভাব বিশেষত বিধবা বিবাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা এখনও জারি আছে।

১৯২০ এবং ১৯৩০-এর দশকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বিস্তারও কুড়মিদের সাংস্কৃতিকভাবে প্রভাবিত করেছিল। রণবীর সমাদ্দারের বই এই বিষয়ে আলো ফেলেছে। ভদ্রলোক বাঙালিরা মাহাতদের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ধারাগুলিতে ‘আলোকপ্রাপ্ত’ করেন। কুড়মিদের মধ্যে বাঙালি ভদ্রলোকের রাজনৈতিক সক্রিয়তার প্রধান উপাদান হয়ে দাঁড়ায় হিন্দু আচার-অনুষ্ঠান, বাংলা-কেন্দ্রিক সাক্ষরতা প্রচার, নৈতিক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। কুড়মি সম্প্রদায়ের কাছে বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে গ্রহণ করার আবেদনও সেই জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিকরা রাখেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কুড়মিদের ‘ভদ্র, সংস্কৃতিবান, শিক্ষিত, সনাতন হিন্দু’ বানিয়ে তোলার। এখানে বলে রাখা ভাল যে, এই ভদ্রলোক রাজনীতিকরা ছিলেন মূলত কংগ্রেসকর্মী। তাঁরা অধিকাংশই শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের জীবনী থেকে জানা যায় যে, তাঁরা মনেপ্রাণে হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস করতেন। তাই তাঁদের রাজনৈতিক প্রচারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত থাকত ধর্মীয় প্রচার। তাঁরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন, গ্রামবাসীদের স্বদেশি রাজনীতির পাঠ দিতেন যার মধ্যে কিছু (হিন্দু) ধর্মকথাও থাকত।

কংগ্রেসি নেতাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বহু কুড়মি গান্ধির আন্দোলনে যোগ দেয়। জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপে, বিশেষ করে গান্ধিবাদী আন্দোলনে আকৃষ্ট হওয়ার কারণে ও বাঙালি ভদ্রলোক রাজনীতিবিদদের প্রভাবে কুড়মিরা নিজেদের কৌমসত্তাকে এক বিশেষ ভদ্রলোকীয় জাতীয়তাবাদী বাগধারায় প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছিল যা তাদের নিজস্ব চারীর থেকে আলাদা ছিল। ‘স্বদেশি রাজনীতির’ ঘূর্ণিতে কুড়মিদের নিজস্ব ‘প্রজা রাজনীতি’র রূপের পরিবর্তন ঘটেছিল যার প্রভাব তাদের সাংস্কৃতিক অভ্যেসের ওপরেও পড়েছিল।

বহু কুড়মি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেছে। এই তথ্য আমরা পেয়ে যাই নৃতত্ত্ববিদ সুহৃদ কুমার ভৌমিকের লেখায়। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী সম্প্রদায় হওয়া সত্ত্বেও, কুড়মিরা ব্রাহ্মণদের দ্বারা, বিশেষত ওডিশা থেকে আসা ব্রাহ্মণ ও হিন্দু জমিদারদের হাতে নিপীড়িত হত। বৈষ্ণবধর্মের একেশ্বরবাদী, ব্রাহ্মণ-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি কুড়মিদের আকৃষ্ট করেছিল। এই বৈষ্ণবীকরণও তাদের সংস্কৃতিতে একটি স্বতন্ত্র ছাপ রেখে গেছে। বহু কুড়মি গ্রামে এখনও হরিমঞ্চ দেখা যায়। প্রত্যেক বছর, বিশেষত দোলযাত্রার সময়, সেইসব গ্রামের হরিমঞ্চে অষ্টমপ্রহরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সারা রাত ধরে পালাকীর্তন শোনেন গ্রামের মানুষরা। কুড়মি পরিবারগুলিতে আজও সন্ধ্যার প্রার্থনায় নিয়মিতভাবে উঠানের ঠিক মাঝখানে স্থাপিত তুলসিমঞ্চে তুলসিগাছের পুজো করা হয়। এগুলো বৈষ্ণবধর্মের সঙ্গে যুক্ত দীর্ঘস্থায়ী আচার। কুড়মির নিজস্ব সংস্কৃতিতে এর অনুপ্রবেশ তাদের ঐতিহ্যগত সর্বপ্রাণবাদী বিশ্বাসকে অবশ্যই প্রভাবিত করেছে। তবে, এখন কুড়মিদের মধ্যে হিন্দু ও বৈষ্ণব সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সচেতনতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। পরের অংশে আমরা সেই সচেতনতার দুটো স্বতন্ত্র রূপ নিয়ে আলোচনা করব।

 

সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কুড়মি সমাজের ভেতর থেকে উঠে আসা প্রতিবাদের দুটি রূপরেখা

ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ অ্যান্থনি কোহেনের মতে যে সম্প্রদায়গুলি সংস্কৃতিনির্ভর, তাদের জন্য, সংস্কৃতির ক্ষতি ‘সামাজিক মৃত্যুর’ অনুরূপ। কুড়মিসত্তার ওপর তাদের নিজস্ব লোকায়ত সংস্কৃতির প্রভাব যে কতটা ব্যাপক তা বোঝা যায় কুড়মি বুদ্ধিজীবীদের লেখালেখি থেকে। কুড়মি সম্প্রদায় নিয়ে তাদের নিজস্ব আলোচনায় ঘুরেফিরে এসেছে তাদের সংস্কৃতির বর্ণ-গন্ধ-ছন্দ। গবেষক বঙ্কিম মাহাত বৃহত্তর ঝাড়খণ্ডী সংস্কৃতির সঙ্গে কুড়মি সংস্কৃতির সাদৃশ্য টেনে তাদের আচার-অনুষ্ঠান ওপর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসম্বলিত বই লিখেছেন। প্রভাবশালী ভদ্রলোকশ্রেণির হাতে কুড়মিদের সাংস্কৃতিক ‘মিমোসাইড’ (অর্থাৎ কৌম স্মৃতির হত্যা) সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন তাঁর বইয়ে পশুপতি মাহাত। কুড়মালি ভাষার প্রাচীনত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন কিরীটি মাহাত। তিনি একজন কুড়মালি ভাষাবিদ। তিতকি এবং গরাম থানের মতো লিটল ম্যাগাজিন সহ কুড়মি সমাজের সাম্প্রতিকতম প্রকাশনাগুলিতেও বিশদে আলোচনা হচ্ছে কুড়মিদের “চারী” বা “সংস্কৃতি” নিয়ে। এইসব তথ্যবহুল রচনায় তাদের সংস্কৃতির ওপর হিন্দুধর্ম ও ব্রাহ্মণ্যবাদের কুপ্রভাব বিশেষভাবে সমালোচিত হচ্ছে। ইদানীংকালে এই পত্রিকাগুলি কুড়মিদের মধ্যে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছে। অতএব আমরা এটা বলতেই পারি যে, কুড়মি সম্প্রদায়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক নীরবতা ছড়িয়ে পড়াও যেমন সত্যি, তেমন ‘সাংস্কৃতিক সাক্ষরতা’ (সমাদ্দারের বাক্যাংশ থেকে ধার করা)-র দিকে থেকেও তারা আর পিছিয়ে নেই।সংস্কৃতির পুনরুদ্ধারের নানান পথ আছে। আদিবাসী নেগাচারী[7] কুড়মি সমাজ আন্দোলন কুড়মিদের লুপ্তপ্রায় সর্বপ্রাণবাদী প্রথাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছে। নেগাচারী আন্দোলনের নেতা অনুপ মাহাত একজন ব্যবসায়ী। অনুপের সঙ্গে আন্দোলন সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিশদ আলোচনার সময় তিনি বলেছিলেন যে, তাঁর নেতৃত্বে নেগাচারী আন্দোলনের কর্মীরা কুড়মিদের মধ্যে ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রভাবের অবসান ঘটাতে চায়। তিনি বিশ্বাস করেন যে মৃতপ্রায় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কুড়মিদের নিজস্ব পরবগুলির পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে কুড়মিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, মূলত ধর্মীয় আগ্রাসন রুখে দেওয়া সম্ভব। তিনি আরও মনে করেন যে, তাঁদের সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পারফরমিং আর্টসের পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমেও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রতিরোধ সম্ভব। এখানে বলে রাখা ভাল যে, অনুপ মাহাত জনজাতি হিসাবে কুড়মিদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি সমর্থন করলেও তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য কুড়মি সম্প্রদায়ের ভেতরে তাদের নিজেদের ‘চারী’র প্রতি অহঙ্কার আবার জাগিয়ে তোলা। তাঁর মতে, সাংস্কৃতিক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকেই আসা উচিত।নেগাচারী আন্দোলন কুড়মিদের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানগুলির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। আন্দোলনের নেতারা মনে করেন যে, এই আচার-অনুষ্ঠানগুলিই কুড়মালি সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে। অনুপের মতে হিন্দু ধর্মের তীব্র প্রভাব কুড়মিদের মধ্যে দেখা গেলেও তারা এখনো তাদের আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নিজেদের লোকায়ত সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাই এই আন্দোলনের কর্মীরা, যারা অধিকাংশই পুরুষ, তারা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের একত্রিত করে এবং তাদের সমাজের নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠান (নেগ-নেগাচার) বিষয়ে বক্তৃতা দেয়। তারা গ্রামবাসীদের কুড়মালি মতে পরব উদযাপন করতে উত্সাহিত করে। এই আন্দোলনটি বর্তমানে সাধারণ কুড়মি সমাজে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করছে। কুড়মিদের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণ পুরোহিতের প্রাধান্য হ্রাস পাচ্ছে। এখন বহু কুড়মি পরিবার, বিয়ে কিংবা শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান পরিচালনা করার দায়িত্ব দিচ্ছেন এই আন্দোলনের কর্মীদের।

কুড়মি সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ পরবগুলিতে বিভাগীয় ছুটি ঘোষণার দাবিও এই আন্দোলনের মূল আরেকটি দাবি। অনুপ মনে করেন যে, সংখ্যালঘুদের প্রতি রাষ্ট্রের একটা দায়বদ্ধতা আছে। তার মতে, প্রশাসনের উচিত বিভিন্ন প্রচার এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে কুড়মিদের তাদের পরব পালন করতে উৎসাহিত করা। এখানে বলে রাখা ভাল যে, আধুনিক যুগে, সংস্কৃতি এবং আচারকে প্রায়শই বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়। আচারকে বিশ্বের সঙ্গে যোগসূত্রে একটা প্রাচীর হিসাবে গণ্য করা হয়। সেইসূত্রে অনুপ তাঁর কথায় কুড়মালি আচারের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, আধিপত্যবাদী সংস্কৃতিগুলি প্রায়শই আদিবাসী সংস্কৃতিকে ‘আদিম’ হিসাবে অবজ্ঞা করলেও, এর কোনও ‘যৌক্তিক, বৈজ্ঞানিক’ ভিত্তি নেই। প্রকৃত সত্য এর বিপরীত। উদাহরণ হিসাবে টুসু পরবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন যে, টুসু পরব পাঁচ দিন ধরে উদযাপিত হয় তার কারণ এই পরবটির মাধ্যমে কুড়মিরা সূর্যের দক্ষিণায়ন যাত্রার সমাপ্তি ও উত্তরায়ণ যাত্রার সূত্রপাত উদযাপন করে। এই পরবের পঞ্চম দিন, অর্থাৎ মকড়ে, সূর্যের উত্তরায়ণ যাত্রা শুরু হয়। এই দিন থেকেই আবার কুড়মালি কৃষিপঞ্জি-ও আরম্ভ হয়। রণবীর সমাদ্দার আদিবাসীদের উৎসবের পর্যালোচনায় প্রকৃতি ও সংস্কৃতির মধ্যে মিথ্যা বিরোধিতার সমালোচনা করেছেন। এর পরিবর্তে, তিনি দুইয়ের মধ্যের এক যোগসূত্রের কথা বলেছেন যা অনুপের বিশ্বাসেও নিজস্ব এক অভিব্যক্তি খুঁজে পেয়েছে।

নেগাচারী আন্দোলন কুড়মিদের নিজস্ব লোকগান ও নৃত্যশৈলী পুনরুজ্জীবিত করতেও তৎপর। বিশেষ করে ঝুমুর এবং আহিরা গানের পুনরুদ্ধারের দিকেও এই আন্দোলন বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কুড়মিদের সংস্কৃতি ঐতিহ্যগতভাবে মৌখিক। তারা তাদের গানের মধ্যে দিয়ে ঐতিহাসিকভাবে নিজেদের সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুঃখ-দুর্দশাগুলির কথা তুলে ধরেছে। উদাহরণ হিসেবে মানভূম আন্দোলনের সময় গাওয়া টুসু গানগুলি স্মরণীয়। বিহারিদের ভাষাগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানভূম জেলার কুড়মিদের সঙ্ঘবদ্ধ করতে টুসু গান একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। এই আন্দোলনের ফলেই ১৯৫৬ সালে পুরুলিয়া বাংলার অন্তর্ভুক্ত হয়। অনুপ দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন যে, পুরনো প্রজন্মের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই কুড়মি সংস্কৃতি একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়েছে। তিনি বলছিলেন যে ঝুমুর ও আহিরা শিল্পীরা বেঁচে থাকতে থাকতে তাঁদের গানগুলি নথিবদ্ধ করে রাখা আশু প্রয়োজন কারণ তা না হলে, কুড়মিদের নিজস্ব সামাজিক ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্য সম্পূর্ণ অবলুপ্ত হয়ে যাবে। কথোপকথনের প্রায় শেষ পর্যায়ে অনুপ মাহাত বিষাদগ্রস্ত হয়ে বলেছিলেন যে, “পুঁথির বিদ্যে হামদের অশিক্ষিত করে দিল!” যদিও এটি আধুনিক শিক্ষার সমালোচনার মতো শোনাতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি তাঁর সংস্কৃতির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সম্পর্কেই এই মন্তব্য করেছেন। আসলে, কুড়মিরা প্রথাগতভাবে তাদের ‘চারী’র মধ্যেই খুঁজে নিয়েছে নিজেদের জীবনের রসদ। তাদের জীবনের জ্ঞান ও বিশ্বাসের মূলে আছে তাদের সংস্কৃতি যা তারা যুগ যুগ ধরে একত্রে তৈরি করেছে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। আজ যখন সেই সংস্কৃতি ভাঙনের সামনে দাঁড়িয়ে, আজ যখন আধুনিক শিক্ষার আলোয় ফিকে হয়ে আসছে চিরায়ত বোধ, তখন শোনা যাচ্ছে এইসব চাপা দীর্ঘনিশ্বাস যা শিকড়হারা মানুষের নিঃশব্দ আর্তনাদ।

আরেকটি আন্দোলন, কুড়মালি চিসই চারী আন্দোলন, ১৯৯৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জয়ন্ত মাহাত ও গবেষক নারায়ণ মাহাতের নেতৃত্বে ঝাড়গ্রামে শুরু হয়। কুড়মালি ভাষার সম্ভাব্য মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগকে কেন্দ্র করে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। একটি সাক্ষাত্কারে জয়ন্ত বলেছিলেন যে, ভাষা সংস্কৃতির মূল। তিনি আরও বলেছিলেন যে, ঝাড়গ্রামে বসবাসকারী কুড়মিরা বাংলা-প্রধান শিক্ষার প্রসারের জন্যে দ্রুত তাদের নিজেদের ভাষার সঙ্গে সংযোগ হারাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, কুড়মালি ভাষা ঝাড়গ্রামে প্রায় ব্যবহৃত হয় না। যদিও পুরুলিয়াতে এটি এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এর কারণ ভৌগোলিক। পুরুলিয়া ঝাড়খণ্ডের কাছে অবস্থিত, যেখানে কুড়মালি একটি প্রভাবশালী ভাষা হিসাবে রয়ে গেছে। অন্যদিকে, খড়্গপুর ও কলকাতার অনতিদূরে ঝাড়গ্রামের অবস্থানের কারণে এখানে বাংলা ভাষার প্রভাব অনেক বেশি।

এই আন্দোলন ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা না বললেও সেই প্রভাব অস্বীকার-ও করে না। আন্দোলনকারীরা মনে করেন যে, কুড়মিরা যে সাংস্কৃতিক বঞ্চনার শিকার হয়েছে তা সম্ভব হয়েছে কুড়মিরা নিজস্ব ভাষার সঙ্গে তাদের সংযোগ হারিয়েছে বলে। তাই এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দাবি করেন যে, ভাষা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমেই কেবল কুড়মালি সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন সম্ভব কারণ কুড়মিদের ধর্মীয় নেগ-নেগাচারের ভিত্তিও আসলে লুকিয়ে আছে কুড়মালি ভাষা ব্যবহারে ও সেই ভাষার গোপন ভাণ্ডারে।

কুড়মালি ভাষার নিজস্ব কোনও লিপি বহুবছর ছিল না। ১৯৮৬ সালে জয়ন্ত মাহাত ‘চিসই’ নামে একটি লিপি তৈরি করেন যা কুড়মালি বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আপাতত অনেকাংশেই গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। ‘চিসই’ ছাড়াও অন্যান্য লিপি কুড়মালি বুদ্ধিজীবী মহলে ব্যবহৃত হলেও ‘চিসই’ অনেক বেশি জনপ্রিয় কারণ এটি কুড়মালি সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত নানান চিহ্নকে তার লিপিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। যেমন, চিসই-এর নানান অক্ষরের সঙ্গে কুড়মিদের মান্য দেবতা, বুড়হাবাবার সাদৃশ্য রয়েছে।

কুড়মালি লিপির প্রয়োজনীয়তা জয়ন্তর কথায় বিশেষভাবে উঠে এসেছে। ঝাড়গ্রামের কলেজগুলিতে কুড়মালিতে পঠন-পাঠন চালু করার জন্য রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে জয়ন্ত অভিযোগ করেছিলেন যে, এই কলেজগুলিতে কুড়মালি বাংলা লিপিতে অর্থাৎ ইস্টার্ন-ব্রাহ্মী লিপিতে পড়ানো হচ্ছে। অথচ বাংলা এবং কুড়মালি ভাষা ব্যাকরণগতভাবে এতই আলাদা যে বাংলা লিপিতে লিখলে কুড়মালি ভাষার সাংস্কৃতিক গুণমান হারিয়ে যায়। নারায়ণ মাহাত লিপির গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে স্পষ্টভাবে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, শিক্ষা যদিও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শিক্ষার মাধ্যম আসলে অবদমনের এক হাতিয়ার। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জোরের সঙ্গে জানান যে, বাংলায় কুড়মালি শেখানো শুধুমাত্র একটি ভাষা হিসাবে কুড়মালির বিলুপ্তি ত্বরান্বিত করবে না সেই সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষার প্রতাপ আরও বেশি করে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে সেইসূত্রে ঝাড়গ্রাম অঞ্চলে।

আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষার প্রসারের জন্য, কুড়মালি চিসই চারী ফাউন্ডেশন, যা পূর্বোক্ত আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে, তা কুড়মালিতে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করেছে। এই কোর্সগুলিতে অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়ছে যা আশাজনক। ২০০৯ সাল থেকে এই ফাউন্ডেশন ভাষা শিক্ষার জন্য ছোট ও বড়দের মধ্যে নানান স্কুল পরিচালনা করছে। এই আন্দোলনের নেতারা জনজাতি হিসেবে কুড়মিদের স্বীকৃতির দাবিকে সমর্থন করলেও, বর্তমানে তারা অষ্টম তফসিলে প্রবেশ করে ভাষাগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মর্যাদা পাওয়ার চেষ্টা করছে। ভাষাগত পুনর্গঠনের এই প্রচেষ্টার একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ভিত্তিও আছে। স্বাধীনতার পরে ছোটনাগপুর অঞ্চল নানান রাজ্যে ভেঙে যাওয়ার কারণে কুড়মিরা একে অপরেরর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বর্তমানে, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড এবং বাংলায় তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাই তাদের মধ্যে ভাষাগত পার্থক্য এখন প্রবল। এই আন্দোলনের বৃহত্তর লক্ষ্য হচ্ছে কুড়মিদের মধ্যে একটি ভাষাগত ঐক্য গড়ে তোলা যা আন্দোলনকারীদের মতে একটি নির্দিষ্ট লিপি এবং ব্যকরণের উদ্ভাবনের দ্বারা সম্ভব। যেহেতু ইতিহাস কুড়মিদের বিভক্ত করেছে, এই আন্দোলনের বর্তমান লক্ষ্য তাদের ভাষাগতভাবে একত্রিত করা।

এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত লোকেরা কেবল ভাষার মৃত্যুর সঙ্গেই লড়াই করছে না, কুড়মালি ব্যাকরণ ও লিপিকে একটি সুসংহত রূপ দিয়ে তারা ভাষার ক্ষয়ক্ষতির বিরুদ্ধেও লড়াই করার চেষ্টা করছে। নারায়ণ মাহাতের কথায়, “ভাঙনের সাক্ষী একটা সমাজ, নিজেকে খুঁজছে। ভাষা ছাড়া সে নিজেকে বুঝবে কীভাবে?”

 

উপসংহার

সাংস্কৃতিক গবেষণা কেন্দ্র (কালচারাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট) তাদের রিপোর্টে কুড়মি সংস্কৃতিতে হিন্দুধর্মের প্রভাবকে বড় করে দেখিয়েছে। গবেষণা কেন্দ্রের মতে, কুড়মিদের ‘স্বতন্ত্র সংস্কৃতি’ লোপ পেয়েছে। কেন্দ্রের প্রাথমিক রিপোর্ট তাই কুড়মিদের জনজাতি স্বীকৃতির বিরোধিতা করেছে। এই রিপোর্টে যা নজর এড়িয়ে গেছে তা হল, কুড়মিদের ওপর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আগ্রাসনের ইতিহাস। এই লেখায় আমরা সেই ইতিহাসকেই তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। সেই আগ্রাসী ইতিহাসের বিরুদ্ধে কুড়মিদের বর্তমান আন্দোলনের কিছু পাঠ-ও আশা করি আমরা গ্রহণ করতে পারলাম।

শোষিত ও শাসক, এই দুই বিপরীত অবস্থান সম্পর্কে সুমন্ত মুখোপাধ্যায় লিখেছেন যে, শাসকেরা জানে ‘তাদের জগৎ কেমন, কেমন জগৎ তারা চায়।’ কিন্তু, শোষিতদের ‘কোনও জগৎ নেই যেটা সম্পূর্ণ… তাই তারা শুধু রিহার্সাল দেয়। শেষ করা ছবি টাঙায় না।’ অর্থাৎ, অনিশ্চিত নিপীড়িতরা বিশ্বজুড়ে তাদের পথ বেছে নেয় ‘মহড়া’র মাধ্যমে। এই আলোয় ব্যাখ্যা করলে, কুড়মি সম্প্রদায় ‘নিপীড়িতের থিয়েটার’-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সাংস্কৃতিক পরাধীনতা, রাজনৈতিক আধিপত্য এবং অর্থনৈতিক প্রান্তিকতা কুড়মি চেতনায় তাদের ছাপ ফেলেছে। তাদের জাতিসত্তা আজ বিভ্রান্ত। তবে বিভ্রান্তি যেমন আছে, প্রতিরোধও আছে। তারা যদিও তাদের কৌম চৈতন্যের রূপ সম্পর্কে অনিশ্চিত, তবু এ কথাও অনস্বীকার্য যে, কুড়মিরা সাংস্কৃতিকভাবে একটি নতুন চেতনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই চেতনা ‘যোগীর দেশ/সাধকের দেশ’ ভারতবর্ষে ঠিক কী আকারে দেখা দেবে তা এখনও অনিশ্চিত, তবু এই পাণ্ডুলিপিটিতে রইল কুড়মিদের নানান মহড়ার একটি বিবরণী। ‘কেমন কতটা বোঝাপড়া/কাউকে তো বলে যেতে হবে’।

 

তথ্যসূত্র:

  • Cohen, Anthony P. 1993. “Culture as Identity: An Anthropologist’s View.” New Literary History 24 (1): 195-209.
  • Mahato, Bankim. 1983. Jharkhander Lokabhavana. Calcutta: Kathasilpa.
  • Mahato, Bhupen Chandra, ed. 2023. Goram Thaan. Jhargram: Bhupen Chandra Mahato.
  • Mahato, Kiriti, and Miria Malik. 2021. Adi Charyapada. Bankura: Teracotta.
  • Mahato, Mrinalkanti. 2023. “Banda Porob o Kudmi Hitmitan Jonogosthee.” Titki 3 (1): 12-19.
  • Mahato, Pashupati. 2014. Performing Arts of Junglemahal and Jharkhand. Kolkata: Purbalok.
  • Mahato, Pashupati Prasad. 2000. Sanskritization Vs Nirbakization. Calcutta: Sujan Publications.
  • Nanda, Chandi Prasad, and Hermann Kulke. 2015. Rethinking Local History and Identity Politics: Locating Kurmi Community in Odisha. New Delhi: Manohar.
  • Samaddar, Ranabir. 1998. Memory Identity Power: Politics in the Jungle Mahals 1890-1950. Chennai: Orient Longman.
  • ভট্টাচার্য, প্রদ্যুম্ন। প্যাপিরাস। “মার্ক্সের দিকে”। In টীকা টিপ্পনী, ১৭৩-২১৪. কলকাতা: ১৯৯৮।
  • মুখোপাধ্যায়, সুমন্ত। ২০২৩। বেচারা বি.বি.র সঙ্গে এক সন্ধ্যার মুলাকাত. কলকাতা: রোববার ডিজিটাল। সেপ্টেম্বর, ২০২৩।

[1] ভট্টাচার্য। প্যাপিরাস, ১৭৩।
[2] এখানে মনে রাখতে হবে যে, ভারতবর্ষের সংবিধানে আদিবাসী শব্দটির উল্লেখ নেই। আদিবাসী এবং সংবিধানে উল্লিখিত জনজাতি বা সিডিউল্ড ট্রাইব গুলিয়ে ফেললে চলবে না।
[3] সারনা অর্থ পবিত্র স্থান। এটি সর্বপ্রাণবাদের এক লোকজ ব্যবহৃত রূপ।
[4] কুড়মালি ভাষায় ‘নেগাচার’।
[5] সাঁওতাল, ভূমিজ, লোধা, ওরাওঁ, মাহালি ইত্যাদি সম্প্রদায়।
[6] অর্থাৎ, সাংস্কৃতিক নীরবতা। ইংরেজিতে ‘Nirbakization’।
[7] নেগা মানে বাম, নেগা মানে নিয়ম।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4663 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

2 Comments

  1. লেখিকা সময়টা সেনের এই প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণরূপে পক্ষপাত দুষ্ট একটা লেখনী । উনি ধরেই নিয়েছেন যে কুর্মিরা আদিবাসী সম্প্রদায় কাজেই উনি লিখছেন “সর্বপ্রাণবাদী কুড়মি মাহাত সম্প্রদায় এক আদিবাসী সম্প্রদায়।”
    এরই সঙ্গে ওনার লেখনীতে যেভাবে করম, ভাদু বা টুসু ইত্যাদি উৎসবগুলো স্রেফ কুর্মিদের বলে উল্লেখ হয়েছে সেটাও সম্পূর্ণ ভুলে ভরা।
    উল্লেখ্য আনন্দবাজার পত্রিকাও আদিবাসীদের ধ্বংসের জন্য ক্ষত্রিয় কুর্মিদের হঠাৎ করে আদিবাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করনের অনৈতিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ হয়ে উঠেছে।
    আর এইসব করতে গিয়ে সব থেকে আপত্তিকর যে বিষয় উঠে এসেছে সেটি হল আদিবাসীদের ইতিহাস বিকৃতি। ক্ষত্রিয় কুর্মিরা কিভাবে আদিবাসীদের ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে আদিবাসী তালিকায় আসতে চাইছে সেই বিষয়টা সন্তর্পনে এড়িয়ে গেছেন।

  2. লেখিকা শময়িতা সেনের এই প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণরূপে পক্ষপাত দুষ্ট একটা লেখনী । উনি ধরেই নিয়েছেন যে কুর্মিরা আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত কাজেই উনি লিখছেন “সর্বপ্রাণবাদী কুড়মি মাহাত সম্প্রদায় এক আদিবাসী সম্প্রদায়।”
    এরই সঙ্গে ওনার লেখনীতে যেভাবে করম, ভাদু বা টুসু ইত্যাদি উৎসবগুলো স্রেফ কুর্মিদের বলে উল্লেখ হয়েছে সেটাও সম্পূর্ণ ভুলে ভরা।
    উল্লেখ্য আনন্দবাজার পত্রিকাও আদিবাসীদের ধ্বংসের জন্য ক্ষত্রিয় কুর্মিদের হঠাৎ করে আদিবাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করনের অনৈতিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ হয়ে উঠেছে।
    আর এইসব করতে গিয়ে সব থেকে আপত্তিকর যে বিষয় উঠে এসেছে সেটি হল আদিবাসীদের ইতিহাস বিকৃতি। ক্ষত্রিয় কুর্মিরা কিভাবে আদিবাসীদের ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে আদিবাসী তালিকায় আসতে চাইছে সেই বিষয়টা সন্তর্পনে এড়িয়ে গেছেন।

আপনার মতামত...