ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাস

ভাস্কর জানা

 


আমাদের দেশের অবস্থান এবং পরিকাঠামোগত সুবিধা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ-ক্ষেত্রে আমাদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। মহাকাশ গবেষণা শুরুর ছয় দশক পরে বাণিজ্যিকভাবে অন্য দেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা শুরু করেছে ভারত। তৈরি হয়েছে নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড যারা অন্য দেশের সঙ্গে এই বাণিজ্যিক চুক্তিগুলি করবে। শুরু হয়েছে ছোট বড় অজস্র স্টার্ট আপ। সব মিলিয়ে মহাকাশক্ষেত্রে ভারতের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল

সময়টা ১৯৬২ সাল। ভারতের দক্ষিণ প্রান্তে কেরলের ত্রিবান্দ্রমের কাছে আরব সাগরের ধারে একটি ছোট জনপদ থুম্বা। মূলত জেলেরাই থাকতেন সেখানে। দেখার মধ্যে সারি সারি নারকেল গাছ, জেলেদের কু্ঁড়েঘর আর মেরি ম্যাকডালেন চার্চ, এখানকার অধিকাংশ লোক ক্যাথলিক খ্রিস্টান তাদের উপাসনার জায়গা এটাই। ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামে একদিন মাপজোকের যন্ত্রপাতি নিয়ে পৌঁছলেন বিজ্ঞানীদের একটি দল যার নেতৃত্বে এক তরুণ বিজ্ঞানী, বিক্রম সারাভাই। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে কসমিক রে নিয়ে গবেষণা করার পর ভারতে এসেছেন তিনি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর স্নেহধন্য তিনি, নেহেরুজি হোমি জাহাঙ্গির ভাবা এবং তাঁকে ভারতে মহাকাশ গবেষণার কাজ শুরু করার দায়িত্ব দিয়েছেন এবং INCOSPER (Indian National Committee for Space Research ) সংস্থা তৈরি করেছেন, যাদের কাজ ভারতে মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যৎ ক্ষেত্র তৈরি করা। ভবিষ্যতে এই সংস্থাই ইসরোতে পরিণত হবে। সারাভাই ভাবছিলেন sounding rocket দিয়ে বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার গবেষণা করবেন। এই রকেট লঞ্চ করার সবথেকে ভাল জায়গা হল পৃথিবীর magnetic equator বা চুম্বক বিষুবরেখার ওপরে কোনও জায়গা। এই লাইনে কোনও চুম্বক রাখলে তার ওপর পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের কোনও প্রভাব থাকে না। এখানে আয়নোস্ফিয়ারে Equitorial Electrojet নামে একধরনের কারেন্টের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যা গবেষণা করতে রকেট পাঠানো হয়। বিজ্ঞানীদের এই দলটি থুম্বায় এসে দেখলেন এখানে একটি জায়গা সেই রকেট লঞ্চিং-এর জন্য উপযুক্ত, কিন্তু সমস্যা একটাই, সেই জায়গাতেই রয়েছে ৩০০ বছরের পুরনো মেরি ম্যাকডালেন চার্চ। সারাভাই-এর প্রস্তাব শুনে চার্চের বিশপ ডঃ পেরেইয়া মৃদু হেসে জবাব দিলেন আপনি বরং কাল চার্চে চলে আসুন। ওখানেই উত্তর পেয়ে যাবেন। পরের দিন রবিবার গ্রামের সব লোক সাপ্তাহিক উপাসনার জন্য চার্চে জড়ো হল। উপাসনা শেষে বিশপ একটি ছোট্ট বক্তৃতা দিলেন।

“বন্ধুরা আজ আমাদের সঙ্গে একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আছেন। তিনি তার কাজের জন্য এই চার্চ এবং আমার থাকার জায়গাটিকে নিতে চাইছেন। বিজ্ঞান সেই সত্যের সন্ধান করে যা মানবজাতিকে সম্বৃদ্ধ করবে। আমাদের ধর্মও শাশ্বত সত্যকে অনুসন্ধান করে। আমি পরম পিতার কাছে তোমাদের ভালর জন্য প্রার্থনা করি। আমি এবং এই বৈজ্ঞানিক সেই অর্থে একই কাজ করি যাতে মানবজাতির সামগ্রিকভাবে ভালো হয়। আমার একটাই প্রশ্ন আমাদের এই উপাসনালয় কি বিজ্ঞানের জন্য আমরা ছেড়ে দিতে পারি?”

সারা চার্চে কিছুক্ষণের জন্য সংক্ষিপ্ত নীরবতা। হঠাৎ সবাই মিলে চিৎকার করে সমস্বরে বলে উঠলেন আমেন, আমেন।

বিক্রম সারাভাই

ভারতবর্ষের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এই মেরি ম্যাকডালেন চার্চের গুরুত্ব অপরিসীম, এক বছর পর ১৯৬৩ সালের ২১ নভেম্বর এখান থেকে Nike Apache নামের প্রথম sounding rocket-টি ছাড়া হয়। এই রকেটটি এসেছিল NASA থেকে এবং সোডিয়াম ভেপার পেলোডটি তৈরি করেছিল ফ্রান্স। সেই সময় বাইসাইকেল ও গরুর গাড়িতে করে পেলোড এবং রকেটের যন্ত্রাংশ নিয়ে যাওয়া হত। বিক্রম সারাভাইকে শ্রদ্ধা জানতে থুম্বার এই লঞ্চ স্টেশনটির এখন নাম হয়েছে বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টার। গত কয়েক দশকে এখান থেকে ৩০০টিরও বেশি sounding rocket ছাড়া হয়েছে।

এখনকার বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারের স্পেস মিউজিয়াম, আগে যেখানে ছিল মেরি ম্যাকডালেন চার্চ

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ভারতে পরীক্ষামূলকভাবে মহাকাশ গবেষণার শুরু অনেক পরে। স্বাধীনতা লাভের পর খাদ্য, শিক্ষা, শিল্প, অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং উদ্বাস্তু সমস্যায় জর্জরিত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের কাছে মহাকাশ গবেষণা ছিল এক বিলাসিতার মতোই। কিন্তু বিক্রম সারাভাই এবং হোমি জাহাঙ্গির ভাবার মতো কয়েকজন বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী সেই সময়ে এই কাজে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তরুণ বিজ্ঞানী আব্দুল কালাম INCOSPER-এ সেই সময়ে যোগ দেন। সারাভাই-এর মতো সুযোগ্য একজন লিডারের জন্য মহাকাশ গবেষণা এক অন্য উচ্চতা স্পর্শ করেছিল। Nike Apache লঞ্চ করার পরেই নিজস্ব প্রযুক্তিতে Sounding Rocket তৈরি করার কাজ শুরু হয়ে যায় থুম্বায়।

মহাকাশ গবেষণার ঊষালগ্নে সারাভাই পেয়েছিলেন একদল তরুণ মেধাবী বিজ্ঞানীকে, তাদের অভিজ্ঞতা একদম নেই, কিন্তু রয়েছে প্রচণ্ড মেধা আর চূড়ান্ত কাজের উৎসাহ। সেই সময় সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে একটি উৎক্ষেপণ যান বা launch vehicle তৈরি করা ছিল তাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। সারাভাই গ্রুপ মিটিং ডেকে এক-এক করে প্রত্যেকের কাছেই সমস্যার সমাধান জানতে চাইতেন, যার উত্তর সবথেকে যুক্তিপূর্ণ মনে হত তার প্রস্তাবটাই হত সেই গ্রুপ মিটিং-এর আউটপুট। আবদুল কালাম তার Wings of Fire বইতে সারাভাই-এর leadership সম্বন্ধে অনেক কিছু লিখেছেন।

তরুণ বিজ্ঞানী আব্দুল কালামের সঙ্গে সারাভাই

১৯৬৭ সালে সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি sounding rocket, রোহিণী সিরিজের রকেট RH-75-কে থুম্বা থেকে উৎক্ষেপন করা হয়। Sounding Rocket পৃথিবীর ওপর একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত যেতে পারে, তারপর তার জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে সেটি নষ্ট হয়ে যায়। মূলত বায়ুমণ্ডলের উঁচুর দিকের স্তরের ওপর গবেষণা করার কাজে এই রকেট ব্যবহার করা হয়। Sounding Rocket-এ পেলোডটির অন্তিম গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। SLV তার পেলোড বা স্যাটেলাইটটিকে নিয়ে পৃথিবীর চারপাশে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে ছাড়ে এবং সেই কক্ষপথের জন্য স্যাটেলাইটের একটি নির্দিষ্ট গতিবেগ তৈরি করে দেয় যাতে সেটি সেই কক্ষপথে থেকে ঘুরতে পারে। কাজেই SLV তৈরি করা অনেক জটিল এবং কষ্টসাধ্য। এটি ছাড়ার অনেকগুলি পর্যায় থাকে এবং প্রত্যেকটি পর্যায়ের জন্য নিজস্ব কন্ট্রোল সিস্টেম থাকে। টেলিমেট্রি সিস্টেম দিয়ে এর গতিপথ ট্র্যাক করা যায়। এছাড়া SLV যে পেলোড বা স্যাটেলাইটটিকে বহন করে তা তৈরি করতে হবে আমাদের দেশেই। এত কিছু একসঙ্গে করা নির্দিষ্ট কোনও সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয়। এইজন্যই একাধিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকেও মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত করার কথা ভেবেছিলেন সারাভাই এবং সেই পথে এগিয়ে আজকে চন্দ্রযান এবং সূর্য অভিযানের মতো একাধিক প্রজেক্ট তৈরি হয়েছে।

ভারতের নিজস্ব লঞ্চ ভেহিকল তৈরি করতে প্রায় ২০ বছর সময় লেগেছিল। তার মধ্যে অনেকগুলো গুরত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গিয়েছিল যা উল্লেখ করা দরকার। ১৯৬৯ সালে INCOPAR পরিণত হয় ইসরো-তে। ১৯৭৫ সালে ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ আর্যভট্ট উৎক্ষেপণ করা হয়। আমেদাবাদের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানী ইউআর রাও এবং আরও ২৫ জন ইঞ্জিনিয়ার এবং গবেষক এটি তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা নেন। সেই সময় আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে Cold war চলছিল যার প্রভাব আমাদের মহাকাশ গবেষণায় পড়েছিল। প্রথমে আমেরিকার স্কাউট লঞ্চ ভেহিকলের মাধ্যমে আর্যভট্ট উৎক্ষেপণ করার পরিকল্পনা হয়েছিল। ১৯৭১ সালে মস্কোর ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন জানায় তারা এই স্যাটেলাইট লঞ্চ করতে ইচ্ছুক। সেই বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সারাভাই। দিল্লি এবং মস্কোর মধ্যে এগ্রিমেন্ট সাইন করেন ইসরোর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এমজিকে মেনন। ইউআর রাও-এর হিসাব অনুযায়ী এই উৎক্ষেপণের খরচা ছিল তখনকার হিসেবে প্রায় ৩ কোটি টাকার কাছাকাছি। যদিও শেষমেশ খরচা আরও বেড়ে যায়, রাশিয়াকে প্রায় ১ কোটি টাকা দিতে হয় এই লঞ্চের জন্য তখনকার হিসেবে যা ছিল বিশাল অঙ্কের টাকা। পুরনো দিনের ২ টাকার ব্যাঙ্কনোটে আর্যভট্টর ছবি দেখতে পাওয়া যায়। ১৯৭৫ সালের ১৯ এপ্রিল রাশিয়ার কাপুরিন ইয়ার বেস থেকে কসমস 3M রকেটের মাধ্যমে আর্যভট্ট আকাশে ওড়ে। এই স্যাটেলাইটে কসমিক এক্স-রে, গামা রে এবং সোলার নিউট্রন গবেষণা করার ইনস্ট্রুমেন্ট ছিল। পরীক্ষামূলকভাবে ইসিজি সিগন্যাল শ্রীহরিকোটা থেকে বেঙ্গালুরুতে পাঠিয়ে ই- টেলিমেডিসিনের ধারণা শুরু হয় এই স্যাটেলাইট থেকেই।

২ টাকার নোটে আর্যভট্টের ছবি

১৯৭৫ সালে আর একটি STEP নামে আরেকটি পরীক্ষামূলক স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম শুরু হয়। দেশের প্রায় ২৫০০ গ্রামে, যেখানে যোগাযোগব্যবস্থা অনুন্নত এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল লোকেরা বাস করেন তাঁদের জন্য দূরদর্শনের কিছু শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান স্যাটেলাইট মাধ্যমে সম্প্রচার করা শুরু হয়। এজন্য নাসার ATS-6 স্যাটেলাইট ব্যাবহার করা হত। ইউনেসকো, ইউনিসেফ-এর মতো কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা এই প্রোজেক্টকে সাপোর্ট করত। পরবর্তীকালে জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের ধারণা তৈরি করার জন্য এই ধরনের প্রোজেক্টগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

মহাকাশ গবেষণার সুফল যখন দেশের আমজনতার কাছে সরাসরি পৌঁছতে শুরু করল তখন সরকারি তরফ থেকেও স্যাটেলাইট লঞ্চ প্রযুক্তির নিজস্ব পরিকাঠামো তৈরি করার জন্য সবরকম সাহায্য আসতে শুরু করল। ভারতের পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগরের গায়ে একটি ছোট দ্বীপ শ্রীহরিকোটাকে স্যাটেলাইট ছাড়ার উপযুক্ত জায়গা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়, কারণ এই অঞ্চলে পৃথিবীর নিজ কক্ষের চারপাশে ঘোরার গতিবেগ সবথেকে বেশি হওয়ার কারণে তা সহজে রকেটকে উপরে উঠতে সাহায্য করে। SLV প্রজেক্টের ডাইরেক্টর ছিলেন আব্দুল কালাম।

মোট চারটি স্টেজে এই রকেট পেলোড টিকে নিয়ে যায়, যার অন্তিম পর্ব বা Fourth stage-কে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বলা যায়, এই স্টেজটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বেও ছিলেন কালাম। SLV-র টেলিকমান্ড সিস্টেম তৈরির দায়িত্বে ছিলেন আরও দুই প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ইউআর রাও এবং মাধবান নায়ার। পরবর্তীকালে দুজনেই ইসরোর চেয়ারম্যান হয়েছেন এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ন প্রোজেক্ট তৈরি করেছেন। প্রাথমিকভাবে এই মিশনটির লক্ষ্য ছিল ৪০ কেজি ওজনের একটি স্যাটেলাইটকে পৃথিবীর ৪০০ কিলোমিটার দূরে low earth orbit-এ স্থাপন করা।

ইসরোর যেকোনও মিশন চালু হওয়ার আগেই শুরু হয় মিশন কাউন্টডাউন। কাউন্টডাউন শেষ হলে তবেই মিশন শুরু হয়। এই সময় একটি স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার মিশনের সমস্ত স্টেজ এবং কন্ট্রোল সিস্টেম চেক করে সবুজ সঙ্কেত দেয়। সম্প্রতি ইসরোর গগনযান মিশনের টেস্ট ফ্লাইট কম্পিউটার চেকিং-এর সময় গ্রিন সিগন্যাল না পাওয়ার কারণে শুরু করা হয়নি। SLV-র প্রথম পরীক্ষামূলক লঞ্চের সময়ও এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৭৯ সালের ১০ আগস্ট শ্রীহরিকোটা থেকে SLV-র প্রথম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপন শুরু হয়েছিল। কাউন্টডাউন চলাকালীন হঠাৎ বিপ বিপ আওয়াজ করে রেড অ্যালার্ট জারি করে কম্পিউটার। সেকেন্ড স্টেজে ফুয়েল ট্যাঙ্কে একটা ছোট leakage ধরা পড়ে। যদিও প্রোজেক্ট ডিরেক্টর কালামের মনে হয়েছিল ফুয়েল ট্যাঙ্কে পর্যাপ্ত জ্বালানি থাকার কারণে কোনও সমস্যা হবে না। তিনি ম্যানুয়ালি মিশন চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। ২৩ মিটার লম্বা, ১৭ টনের রকেটটি শ্রীহরিকোটা থেকে উড়ান শুরু করে। ঠিক ৩১৭ সেকেন্ড পর Second stage শুরু হওয়ার সময় রকেটটি হঠাৎ করে আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে যায় এবং পেলোড-সহ বঙ্গোপসাগরের জলে আছড়ে পড়ে। প্রায় হাজারখানেক লোকের ১০ বছরের পরিশ্রম জলে তলিয়ে যায়। এরপর ইসরোর তৎকালীন অধিকর্তা সতীশ ধাওয়ান ঘোষণা করলেন এক বছরের মধ্যেই ইসরো আবার এই মিশন শুরু করবে। পরের বছর ১৯৮০ সালের ১৮ জুলাই SLV রকেট সফলভাবে রোহিণী স্যাটেলাইটকে তার কক্ষপথে স্থাপন করে। এভাবেই ইউনাইটেড স্টেটস, রাশিয়া, চিন, জাপান এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পরে ভারত নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন প্রযুক্তি শুরু করে।

এরপর PSLV এবং GSLV-র মতো আরও উন্নতি প্রযুক্তির উৎক্ষেপণ যান তৈরি করেছে ভারত। আমাদের দেশের অবস্থান এবং পরিকাঠামোগত সুবিধা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ-ক্ষেত্রে আমাদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। মহাকাশ গবেষণা শুরুর ছয় দশক পরে বাণিজ্যিকভাবে অন্য দেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা শুরু করেছে ভারত। তৈরি হয়েছে নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড যারা অন্য দেশের সঙ্গে এই বাণিজ্যিক চুক্তিগুলি করবে। শুরু হয়েছে ছোট বড় অজস্র স্টার্ট আপ। চাঁদ, মঙ্গল এবং সূর্যে অভিযান চালানোর পর ইসরোর পরবর্তী লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতের প্রথম মহাকাশচারীকে গগনযান মিশনের মাধ্যমে মহাকাশে পৌঁছে দেওয়া। সব মিলিয়ে মহাকাশক্ষেত্রে ভারতের ভবিষ্যৎ যে উজ্জ্বল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4666 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...