পাঁচটি কবিতা
কাটা দাগ
হাঁটুর কাটা দাগে
আর ব্যথা নেই।
কেবল ছুঁয়ে থাকলে
মনে পড়ে কাটা দাগ বেয়ে
রক্ত গড়িয়ে নামছে
পায়ের পাতায়।
খেলতে খেলতে
তুই ঠেলে দিয়েছিলি,
আর আমি গড়িয়ে পড়েছিলাম
সিঁড়ি থেকে।
আজ আর একবার
ঠেলে দিয়ে যা,
সিঁড়ি দিয়ে পড়তে পড়তে দেখি,
রক্ত কতদূর গড়ায়।
মতবিরোধ
তুমি ঝাল খাবে, আমি ঝাল খাব না
এইরকম সাঙ্ঘাতিক মতবিরোধের পরেও
আমি হুস হাস করতে করতে
ঝাল দেওয়া ফুচকা খেয়ে ফেলতে পারি।
আমি ঘরের অগোছালো বিছানা
তুমি বাইরের রোদ ভালবাসলেও
কোনও কোনও দিন আপস করে
বিছানায় গড়িয়ে গড়িয়ে
দিন কাটিয়ে দিতে পারি।
এমনকি মসজিদ ভেঙে মন্দির হবে কি হবে না
অথবা হাসপাতালে আর ইশকুলে
বোমা মারা উচিত হয়েছে কি হয়নি
এইসব খুচরো মতবিরোধেও
আমাদের কিছু যায় আসে না
পরিচয়
এক একদিন আয়নার সামনে দাঁড়ালে
নিজেকে অন্যরকম লাগে।
তখন আর সাহস করে
ভোটার কার্ডের দিকে তাকাই না।
সোমবার মনে হল আমার নাম হারাধন দাস
চালের আড়তদার, নকল গোবিন্দভোগ বেচি।
বুধবার আয়না থেকে নিবারণ বাঁড়ুজ্জে
আমার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালেন।
আজ আমি সুন্দরবনের সেই ইশকুলমাস্টার,
যে সিপিএম থেকে এখন
বেমালুম তৃণমূল হয়ে গেছে।
শেষ কৃষক
শেষ বরফটার উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়ে নিচ্ছে মরুভল্লুক
শেষ গাছটার ডালে বসে গান গাইছে শেষ কোকিলটা
মরা মায়ের বুক থেকে শেষ দুধটুকু শুষে নিচ্ছে শিশু
শেষ কৃষক মাটিতে ছড়িয়ে দিচ্ছে তার শেষ বিছনটুকু
জাগতে রহো
পড়তে পড়তে ঘুম পেলে
চোখে জলের ঝাপটা দিতাম,
চা খেতাম, কফি খেতাম।
কখনও রাস্তায় রাস্তায় হেঁটেও আসতাম।
এখন একবার মাঝরাত্তির অবধি জেগে থাকতে পারলে
আর ঘুম আসে না।
এখন জেগে থাকার সময়।
জাগতে রহো।
মাঝরাত্তির আসতে
আর কত দেরি?