প্রদীপ দত্ত
সিবিআইয়ের অভিযোগ ছিল, সোহরাবুদ্দিন শেখ ও তার স্ত্রীকে বিচারবহির্ভূত হত্যার ষড়যন্ত্রে অমিত শাহই ছিলেন মাথা। তুলসিরাম হত্যার পরে ওই মামলার মুখ্য তদন্তকারী অফিসার সিবিআই আদালতে জানিয়েছিলেন, অমিত শাহ ও তিন আইপিএস অফিসার ছিল ওই হত্যার মূল চক্রী। ‘তহেলকা’র হাতে যে কলরেকর্ড এসেছিল তাতেও দেখা গেছে সোহরাবুদ্দিন, কৌসরবাই এবং তুলসিরাম হত্যায় যেসব পুলিশ অফিসার যুক্ত ছিলেন তাঁদের সঙ্গে অমিত শাহ ক্রমাগত যোগাযোগ রেখেছেন। বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর, ২০১৪ সালে সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ তুলে নেয়
পূর্ব-প্রসঙ্গ: হরেন পান্ড্যর লড়াই
সিবিআইয়ের মতে, ২০০৫ সালের ২৬ নভেম্বর গুজরাতের পুলিশ সমাজবিরোধী, তোলাবাজ এবং খুনের আসামি সোহরাবুদ্দিন শেখ ও তার স্ত্রী কৌসরবাইকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে। গুজরাতের এক দৈনিক পত্রিকা জানিয়েছিল হরেন পান্ড্য হত্যার সঙ্গে যোগ ছিল বলেই সোহরাবুদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে একইভাবে আরেক সমাজবিরোধী তুলসিরাম প্রজাপতিকেও হত্যা করা হয়।
সিবিআই-এর চার্জশিট অনুযায়ী, সোহরাবুদ্দিন, কৌসরবাই ও প্রজাপতি বাসে চড়ে হায়দ্রাবাদ থেকে মহারাষ্ট্রের সাংলিতে আসছিল। পুলিশ রাস্তায় সোহরাবুদ্দিন ও কৌসরবাইকে বাস থেকে নামিয়ে গান্ধিনগরের কাছে এক খামারবাড়িতে নিয়ে যায়। কয়েকদিনের মধ্যে সেখানেই দুজনকে হত্যা করে। পরে সিবিআই আরও জানিয়েছিল যে, ওই বিচারবহির্ভূত হত্যার চক্রান্তে গুজরাত, রাজস্থান ও অন্ধ্রপ্রদেশের পুলিশ জড়িত ছিল। সোহরাবুদ্দিন হত্যার কথা জানাজানি হলে গুজরাত পুলিশ জানায়, সে পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার লোক ছিল এবং মুখ্যমন্ত্রীকে হত্যার চক্রান্ত করেছিল। গ্রেফতার করতে গেলে সে গুলি চালায়, পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে তার মৃত্যু হয়।
সোহরাবুদ্দিন ও কৌসরবাইকে যে বাস থেকে নামিয়ে নেওয়া হয়, সেই বাসেই ছিল তুলসিরাম প্রজাপতি, বাস থেকে নামিয়ে নেওয়ার প্রত্যক্ষদর্শী। পরের মাসে অন্য একটি মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার মা জানিয়েছিলেন, ছেলে ঘরে অনেকবার বলেছে, মেরা এনকাউন্টার হো জায়েগা। সেই আশঙ্কার কথা জেলেও সে বারবার বলেছে, এমনকি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে চিঠিতেও লিখেছে। ২০০৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর তার আশঙ্কা সত্যিতে পরিণত হয়। আদালতে শুনানির পর পুলিশ তুলসিরামকে নিয়ে আমেদাবাদ থেকে উদয়পুরে ফিরছিল। পুলিশের জানায়, সে তাদের জিম্মা থেকে পালানোর চেষ্টা করলে বাধ্য হয়ে পুলিশ গুলি চালালে তার মৃত্যু হয়।
ওই তিন হত্যার জন্য সিবিআই রাজস্থান ও গুজরাতের ২২ জন পুলিশকে অভিযুক্ত করে। সিবিআই-এর গুরুত্বপূর্ণ ছিল সাক্ষী উদয়পুরের সমাজবিরোধী আজম খান। খান আদালতে বলে, তুলসিরাম উদয়পুর সেন্ট্রাল জেলে আসার কয়েক মাস আগে থেকেই সে ওই জেলে ছিল। ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসেই সে সোহরাবুদ্দিন হত্যার কথা শুনেছিল। তুলসিরাম জেলে আসার পর তার সঙ্গে দেখা হলে সে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। বলে, তার ভুলের জন্যই সোহরাবুদ্দিন ও কৌসরবাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। উঁচু পদের পুলিশ অফিসার বানজারা-সহ অন্যেরা সোহরাবুদ্দিনকে ধরতে তুলসিরামের সাহায্য নিয়েছিল। তারা তাকে বলে, সোহরাবুদ্দিনকে ধরার জন্য রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। বলেছিল, সোহরাবুদ্দিনকে গ্রেফতার করে কয়েক মাস রেখে ছেড়ে দেবে।
আজম খান বলে, ২০০২ সাল থেকেই সোহরাবুদ্দিন ও প্রজাপতিকে সে জানত, পরস্পরের সহযোগী ছিল। সে সোহরাবুদ্দিনকে উদয়পুরে ঘর খুঁজে দিতে সাহায্য করেছে। সোহরাবুদ্দিন ও কৌসরবাইয়ের বিয়ের ব্যবস্থাপনাও সেই করেছে। এইভাবেই তারা পস্পরের ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। সে বলে, সোহরাবুদ্দিন তাকে বলেছে যে, সে, শহিদ রামপুরি আর নইম খান মিলে হরেন পান্ড্যকে হত্যা করেছে। একজন ভাল মানুষকে হত্যা করেছে বলে কথাটা শুনে তার খারাপ লাগে। সোহরাবুদ্দিন বলেছিল, উঁচু থেকে নির্দেশ এসেছে, পুলিশ অফিসার বানজারা তাকে ওই কাজের ঠিকা দিয়েছে। উদয়পুর জেল থেকে সে বারবার আদালতে এ-নিয়ে বিবৃতি দিতে চাইলেও সে সুযোগ পায়নি।
তুলসিরামের সঙ্গে আজম খানের শেষ দেখা হয় ২০০৬ সালের ২৩-২৪ ডিসেম্বরে। তুলসিরামের ভয় ছিল তাকে মেরে ফেলা হতে পারে। খানকে সে বলেছিল, আমাদের দুজনের যে কাউকে মেরে ফেলা হবে, হয় আমি নয় তুই আর জেলে ফিরে আসবি না। এরপর পুরনো চুরির মামলায় গুজরাত পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। ওদিকে খানকে আনা হয় আমেদাবাদের আদালতে।
সিবিআইয়ের ধারণা, তুলসিরামের এনকাউন্টারের সম্ভাবনা অনুমান করে তার আত্মীয়রা তুলসিরামকে জেল থেকে আদালতে নিয়ে আসার সময় তার সঙ্গে থাকত। খান তার সাক্ষ্যে জানায়, একবার রাজস্থান পুলিশ তাদের উদয়পুর সেন্ট্রাল জেল থেকে আমেদাবাদে নিয়ে এলে গুজরাতের সন্ত্রাসবাদ দমন শাখা (এটিএস) তাদের হেফাজতে নেয়। আদালতে হাজির করার আগে সাধারণত সবরমতি জেলে নিয়ে যাওয়া হত। ভয় পেয়ে তারা চিৎকার শুরু করে, আমাদের মেরে ফেলবে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাদের আদালতেই নিয়ে যায়। এটিএস জানায় আজম খান ও তুলসিরামের উপর আক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে বলে তারা তাদের রক্ষা করছে। খান বিচারককে জানায় সে পুলিশের হাতে মৃত্যুর আশঙ্কা করছে, তাই যেন তাদের হাতকড়া পড়িয়ে উদয়পুর জেলে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে পুলিশ বলতে পারবে না যে আমরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম বলে গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে।
২০০৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর সে আর তুলসিরাম এক সঙ্গে আদালতে যায়নি, পুলিশরক্ষীদের সঙ্গে খান একা গিয়েছিল। চার্জশিটে সিবিআই জানায় তুলসিরামকে কয়েকদিন আগেই অন্য মামলার জন্য জেরা করা যেত, কিন্তু রাজস্থানের উদয়পুরের এসপি দীনেশ এমএন বলেন যে তিনি ডিসেম্বরের ২৫ তারিখে একাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান। সেইমতো হেফাজতে নিলেও তিনি আদৌ তাকে জেরা করেননি। তাঁর আসল উদ্দেশ্য ছিল তুলসিরামকে যেন পুলিশ একা আমেদাবাদে নিয়ে যেতে পারে। চার্জশিটে বলা হয় এই সবকিছু থেকে ধারণা হয় তুলসিরামকে নিয়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, যেন তুলসিরামের সঙ্গে আজম খান সঙ্গে না থাকে। এরপর ২৮ ডিসেম্বর আদালত থেকে উদয়পুর সেন্ট্রাল জেলে নিয়ে যাওয়ার পথে তাকে হত্যা করা হয়।
সিবিআইয়ের তদন্তে সোহরাবুদ্দিন, কৌসরবাই ও তুলসিরাম হত্যা মামলায় সিবিআই অপরাধী-পুলিশ-রাজনীতিবিদ বন্ধনের কথা বলে। চার্জশিটে সিবিআই জানায়, গুজরাতের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজস্থানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলাবচাঁদ কাটারিয়া এবং পুলিশ অফিসার বানজারা অন্যতম চক্রান্তকারী। চার্জশিটে রাজস্থানের উদয়পুরের দীনেশ এমএন-সহ গুজরাতের অভয় ছুদাসামা এবং অন্য কিছু পুলিশ অফিসারের নাম ছিল।
তুলসিরাম প্রজাপতি হত্যার অভিযোগে ২০১০ সালের ২৫ জুলাই অমিত শাহ গ্রেফতার হলে তিন মাস তিনি সবরমতি জেলে ছিলেন। পরে জামিন হলেও কোর্ট তাঁকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গুজরাতে পা ফেলতে নিষেধ করে। দীর্ঘকাল দিল্লির গুজরাত ভবনই ছিল তাঁর ঠিকানা। সিবিআই জানায়, তদন্তে দেখা গেছে শাহ এবং ছুদাসামা যখন জেলে ছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য নষ্ট করতে, নিজেদের ও অন্য অভিযুক্তদের আইনের হাত থেকে বাঁচাতে তাঁরা গুজরাতের পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে চক্রান্ত করেছে। খানের অপহরণ সেই চক্রান্তের অঙ্গ। সিবিআই জানায়, মিথ্যা হলফনামার মাধ্যমে খানকে তার আগের বিবৃতি থেকে সরে আসতে বাধ্য করা হয়, যেন অভিযুক্ত অমিত শাহের জামিন পেতে সুবিধা হয়।
পড়ুন, ইলেকশন এক্সপ্রেস ২০২৪
সিবিআই বিশেষ আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার এক মাস পরে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রায় বেরোনোর কয়েকদিন আগে, আজম খান আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার আবেদন করে। সে জানায় তার সাক্ষ্য অসম্পূর্ণ, কারণ তার সাক্ষ্যের আগে একনাগাড়ে দিন কুড়ি উদয়পুরের পুলিশ তার উপর অত্যাচার করেছে। এমনকি সাক্ষ্য দেওয়ার দিন সকালেও একজন অভিযুক্ত তাকে ভয় দেখিয়েছে।
আবেদনে খান অভিযোগ করে, সে ও তার পরিবারকে ছ-মাস ধরে একনাগাড়ে হয়রান করা এবং ভয় দেখানো হয়েছে। তার আগে ওই বছর ৭ জুন এক আবেদনে সে দাবি করেছিল তার দুই ভাই ও কাকাকে পুলিশ তুলে আনে এবং তার মাকে এই বলে শাসায় যে আজম খান তাদের কথামতো সাক্ষ্য না দিলে তার আত্মীয়দের ছাড়া হবে না। সাত দিন পরে তার আত্মীয়দের ছাড়ার আগে এক বিবৃতিতে তাদের স্বাক্ষর করতে হয় যে, তাদের কয়েক ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। খানের আবেদনে এও বলা হয় যে, ২৬ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী রিজওয়ানা সিবিআই আদালতে গেলে আদালতকক্ষের মধ্যে এক অপরিচিত তাকে বলে যে, আমরা যেমন বলব আজম খানের সাক্ষ্য সেইমতো হতে হবে। আরও বলা হয়, একদিন রিজওয়ানা যখন বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে নম্বরপ্লেট ছাড়া এক মোটরসাইকেলে তিনজন আরোহী তার মুখোমুখি হয়ে কাছেই এক জায়গায় তাকে যেতে বাধ্য করে। এক বিলাসবহুল সাদা গাড়ি দাঁড়িয়েছিল সেখানে। গাড়িটির পিছনের সিটে বসে থাকা একজন তাকে ভয় দেখিয়ে বলে খান যদি তাদের পক্ষে সাক্ষ্য না দেয় তাহলে কৌসরবাইয়ের যা হয়েছে রিজওয়ানারও তাই হবে। সোহরাবুদ্দিন ও তুলসিরামের যা হয়েছে তার চেয়ে তার স্বামীর অবস্থা আরও খারাপ হবে।
২০১৮ সালের ৬ অক্টোবরে লেখা এক চিঠিতে তার ওই অভিজ্ঞতার কথা বিস্তারিতভাবে লিখে রিজওয়ানা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং রাজস্থান ও বম্বে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিদের পাঠান। চিঠিতে এও লেখেন যে, গাড়িতে যিনি ছিলেন তিনি বিচারপতি লোইয়ার উদাহরণ দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন, লোইয়া আমাদের কথা শোনেনি বলে আমরা তাঁর কী করেছি সে-কথা আজম খান জানে কি না।[1]
২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর, প্রমাণের অভাবে ২২ জন অভিযুক্তই মুক্তি পায়। সিবিআই বাস্তবে ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করেছিল। তবে রাজনীতিক ও উঁচু পদের পুলিশ অফিসার-সহ ১৬ জন আগেই ছাড়া পেয়েছিল। ওদিকে ২১০ জন সাক্ষ্যের মধ্যে ৯২ জন বিরূপ হয়েছিল।
সিবিআইয়ের অভিযোগ ছিল, সোহরাবুদ্দিন শেখ ও তার স্ত্রীকে বিচারবহির্ভূত হত্যার ষড়যন্ত্রে অমিত শাহই ছিলেন মাথা। তুলসিরাম হত্যার পরে ওই মামলার মুখ্য তদন্তকারী অফিসার সিবিআই আদালতে জানিয়েছিলেন, অমিত শাহ ও তিন আইপিএস অফিসার ছিল ওই হত্যার মূল চক্রী। অভিযোগ ছিল, পান্ড্যহত্যার দায়িত্বপ্রাপ্ত দুর্নীতিগ্রস্ত বানজারা ও ছুদাসামা— দুজনেই মোদির উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সিন্ডিকেটের অংশীদার ছিলেন।
ওদিকে ‘তহেলকা’র হাতে যে কলরেকর্ড এসেছিল তাতেও দেখা গেছে সোহরাবুদ্দিন, কৌসরবাই এবং তুলসিরাম হত্যায় যেসব পুলিশ অফিসার যুক্ত ছিলেন তাঁদের সঙ্গে অমিত শাহ ক্রমাগত যোগাযোগ রেখেছেন। সিবিআই জানিয়েছিল, অমিত শাহ পুলিশের সঙ্গে তোলাবাজির র্যাকেটে সোহরাবুদ্দিনের মতো সমাজবিরোধীদের ব্যবহার করতেন। বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর, ২০১৪ সালে সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ তুলে নেয়।
সোহরাবুদ্দিন হত্যায় জড়িত হিসাবে ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে সিনিয়র আইপিএস অভয় ছুদাসামাকে গ্রেফতার করা হয়। সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগ ছাড়া সোহরাবুদ্দিনের সঙ্গে তোলাবাজির কারবারের অভিযোগও আনে। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ নেই বলে আদালত ছুদাসামাকে মুক্তি দিলে জুন মাসে তিনি ডিআইজি পদে উন্নীত হন।
সোহরাবুদ্দিন-হত্যা নিয়ে উঁচুমহলের নির্দেশের যে কথা আজম খান বলেছে, একই কথা ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে, জেল থেকে লেখা চাকরির ইস্তফাপত্রে পুলিশের ডিআইজি ডিজি বানজারাও জানিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি গুজরাত সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যানীতির কথা বলেন। সোহরাবুদ্দিন শেখ ও কৌসরবাই এবং তুলসিরামের বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সাল থেকে তিনি সাত বছর জেলে ছিলেন।
ওই বছরই ২১ সেপ্টেম্বর টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছিল, বানজারা বলেছেন যে, পান্ড্যহত্যা হল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। তিনি জানান যে তুলসিরামের হত্যার সঙ্গে হরেন পান্ড্য হত্যার যোগ রয়েছে। মনে করা হত বানজারা মোদির অতি পছন্দের অফিসার। হিন্দু জারীয়তাবাদী বানজারাও বলতেন, মোদি ‘আমার ভগবান’। ২০১৭ সালে সোহরাবুদ্দিন হত্যা মামলা থেকে তিনি রেহাই পান, বাকি মামলা থেকে ২০২০ সালে।
জেল থেকে বিচারাধীন অবস্থায় তিনি গুজরাতের অতিরিক্ত মুখ্যসচিবকে (স্বরাষ্ট্র) চিঠিতে লেখেন:
…যখন স্বরাষ্ট্রবিভাগের প্রাক্তন রাষ্ট্রমন্ত্রী অমিতভাই শাহকে গ্রেফতার করা হল, সরকার হঠাৎ খুব সক্রিয় হয়ে উঠল। সবচেয়ে বড় বিশেষজ্ঞ, সবচেয়ে সিনিয়র, সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক দেওয়া হয় যাকে সেই রাম জেঠমালানি তাঁর হয়ে দাঁড়ালেন এবং রেকর্ড তিন মাসের মধ্যে তাঁকে জামিনে ছাড়িয়ে আনলেন। এর বিপরীতে রাজকুমার পান্ডিয়ান এবং দীনেশ এমএনের সঙ্গে আমাকে যখন গ্রেফতার করা হল সরকার আমার পরিবারকে মুখের কথাতেও আশ্বস্ত করেনি… সুপ্রিমকোর্টের অর্ডারে আমাদের সোহরাবুদ্দিন মামলার বিচার মুম্বাইয়ে স্থানান্তরিত হল… কিন্তু অমিতভাইয়ের আইনগত এবং রাজনৈতিক চালে সোহরবুদ্দিন মামলার বিচার এবং পরে তুলসিরাম মামলা গুজরাতের বাইরে গেল না… তিনি তুলসিরাম এনকাউন্টার মামলা সোহরাবুদ্দিন এনকাউন্টার মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করে দিতে পারলেন, যেন দ্বিতীয় মামলায় তাঁকে আর গ্রেফতার করা না যায়… আমার অফিসাররা এবং আমি বিচ্ছিন্ন বোধ করলাম এবং এই সরকার ও তাকে টিকিয়ে রাখার কৌশলবিদ অমিতভাই শাহকে বিশ্বাস করার আর কোনও কারণ রইল না… বিবেকহীনভাবে আমাদের জীবন নিয়ে খেলা করলেন… অফিসাররা… স্রেফ সরকারের সচেতন নীতি অনুযায়ীই কাজ করেছে… সিআইডি/সিবিআই আমার অফিসার এবং আমাকে গ্রেফতার করে তথাকথিত জাল এনকাউন্টার করার জন্য দায়ী করেছে। তা যদি সত্যি হয় তাহলে চারটি মামলাতেই সিবিআই তদন্তকারী অফিসারদের নীতি প্রণয়নকারীদেরও গ্রেফতার করতে হয়। কারণ আমরা প্রধান সেনাপতির নিচের কর্মকর্তারা শুধু এই সরকারের নীতিই প্রয়োগ করেছি…
Reference:
- Mahurkar, Uday. & Parihar, Rohit. IPS officers D G Vanzara, R K Pandian arrested in Sohrabuddin’s encounter case. India Today. May 7, 2007.
- Sohrabuddin Case: Witness Azam Khan shot at. NDTV. Sep 15, 2010.
- Death of a judge: What we know, what we don’t know. The Wire. Jan 12, 2018.
- CIO in Tulsiram Prajapati encounter case claims Amit Shah part of key conspirators: All you need to know. Firstpost. Nov 22, 2018.
- Excerpts from Vanzara’s letter: Modi was my god. The Indian Express. Sep 4, 2013.
[পরের পর্ব- কুলদীপ শর্মার কথা]
[1] ২০১৪ সালে ১ ডিসেম্বর নাগপুরে লোইয়ার হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়। তিনি ছিলেন সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারপতি, যেখানে সোহরাবুদ্দিন মামলার বিচার চলছিল। লোইয়ার মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক বলা হলেও তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। তাঁর পরিবার তাঁর মৃত্যু নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছিল। তাঁরা জানিয়েছিল, লোইয়াকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যে সোহরাবুদ্দিন হত্যা মামলায় মূল অভিযুক্ত মন্ত্রী অমিত শাহের পক্ষে রায় দিলে তাঁকে ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে।