বিস্ময়বালক অগ্নিজ

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

এখনও অব্দি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আইকিউ-এর অধিকারী মানুষটি কে জানেন? আজ্ঞে না, আপনি যা ভাবছেন তা নয়। ইটস নট অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। বরং স্কটল্যান্ডনিবাসী বছর সতেরোর এক বাঙালি কিশোর, অগ্নিজ ব্যানার্জী। তার আইকিউ স্কোর (মেনসা-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী) ১৬২, এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। গতমাসে অগ্নিজ ইন্টারন্যাশানাল ম্যাথেমেটিকাল অলিম্পিয়াডে ৪২ স্কোর করে।

কলকাতায় জন্মালেও অগ্নিজের বড় হয়ে ওঠা পুরোটাই স্কটল্যান্ডে, মাত্র ২ বছর বয়সে বাবা-মার সাথে স্কটল্যান্ড চলে যায় অগ্নিজ৷ এই সতেরো বছরের কিশোরকে এখনই সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের সাথে তুলনা করা হচ্ছে, যদিও অগ্নিজের এ ব্যাপারে কোনও উচ্ছ্বাস নেই।

বর্তমানে তাদের নাকতলার ফ্ল্যাটে ছুটি কাটাচ্ছে অগ্নিজ৷ তার ছোট ভাই আরিয়ানকে পাশে বসিয়ে বলে, “ডান্ডির থেকে কলকাতায় একটু বেশি গরম, কিন্তু ঘরের ভেতরে থাকলে খুব একটা অসুবিধা হয় না।” অগ্নিজের মতে ভিড়টা সব জায়গাতেই বেশ বিভ্রান্তিকর। ছুটির দিনগুলোতে বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়দের সাথে ঘুরতে ঘুরতে অগ্নিজ বিরিয়ানির প্রেমে পড়ে গেছে।

বাবা-মার সাথে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রেস্টুরেন্ট বা সিনেমায় গেছে অগ্নিজ। পিটার ক্যাটের চেলো কাবাব তার বেশ পছন্দের। থ্রি ইডিয়েটসের মতো সিরিয়াস থিমের কমেডিই অগ্নিজের প্রিয়।

যে বয়সে ছেলেমেয়েরা সাধারণত পড়াশোনার চাপ সামলাতেই নাজেহাল হয়ে পড়ে, সে বয়সে অগ্নিজ অঙ্কের ওপর একটা বই লিখে ফেলেছে [“উইয়ার্ড ম্যাথস : অ্যাট দ্য এজ অফ ইনফিনিটি এন্ড বিয়ন্ড”, হারপার কলিন্স প্রকাশিত, সহলেখক — ডেভিড ডার্লিং]। সোশাল মিডিয়া অগ্নিজের খুব একটা পছন্দের জায়গা নয় একেবারেই, তার মতে, “সোশাল মিডিয়া খুব একটা কাজের জিনিস বলে আমার মনে হয় না। পড়াশোনা বা কাজের সব দরকার ইমেলেই মেটানো যায়।”

অঙ্ক না করলে অগ্নিজ দাবা, তবলা বা টাইকোন্ডোতে মন দেয়, এবং অবশ্যই পাজল সলভিং-এ।

হয়তো সেজন্যই আগাথা ক্রিস্টি ও তার রহস্য উপন্যাস অগ্নিজের প্রিয়, যদিও গল্পের বইয়ের ক্ষেত্রে তাকে ঠিক ‘বইপোকা’ বলা যায় না। বরং, পরের বইটা নিয়ে কাজ করতে বেশি ব্যস্ত অগ্নিজ। ডেভিড অ্যাটেনবরোর ভক্ত অগ্নিজ পশুপাখি ও প্রকৃতিকেন্দ্রিক তথ্যচিত্র দেখতেও ভালোবাসে।

“আমি ওকে পড়াশোনার বাইরে অন্যকিছু করতে দেখিনি তেমন। আমাদের কাছে পড়াশুনা তো একটা বাধ্যতা ছিল, আমার ছেলের কাছে এটাই একমাত্র আনন্দের জায়গা। টিভি দেখলে ও একমাত্র অ্যানিমাল ডকুমেন্ট্রিই দেখে”, বাবা শুভায়ু ব্যানার্জী জানান।

গণিতবিদের পাশাপাশি অগ্নিজ একজন মানুষ হিসেবেও যথেষ্ট সংবেদনশীল। অনেকবছর আগে, ইংরাজি সাহিত্যের ক্লাসে একটা ছোটগল্প লিখতে দেওয়া হয়, “আমার গল্পের নায়ক ছিল একজন ফোটোগ্রাফার যে অনেকদিন ধরে প্রকৃতির ছবি তোলার চেষ্টা করছে যেটা তাকে বিখ্যাত করে তুলবে। সে এটার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। শেষ অব্দি সে কয়েকজন লোকের গাছ কাটার একটা ছবি তোলে যেটা তাকে তার কাঙ্ক্ষিত খ্যাতি এনে দেয়”, সারকাজম বা কটাক্ষধর্মী লেখা লিখতেই বেশি স্বচ্ছন্দ অগ্নিজ।

অঙ্কের বিষয়ে কথা বলতে শুরু করলেই অগ্নিজের আগ্রহের মাত্রা বদলে যায়, খুব কম বিষয়েই বোধহয় অগ্নিজ এতটা আনন্দ বোধ করে। এছাড়া অগ্নিজ ভালোবাসে তার ছোট ভাই আর পাশ্চাত্য ধ্রুপদ সঙ্গীতকে।

অগ্নিজ জানায় রোমানিয়ান ম্যাথেমেটিকাল অলিম্পিয়াডে কীভাবে সে ভালো ফল করল এবং বল্কান অলিম্পিয়াডে কীভাবে জ্যামিতিতে ইউনাইটেড কিংডম থেকে তার হোম টিম বেশি ভালো ফল করে।

পিওর ম্যাথেমেটিক্সের পর পার্টিকেল ফিজিক্স তাকে সবচেয়ে বেশি টানে। “আমার থিওরেটিকাল ম্যাথেমেটিক্সের থেকে অ্যাপ্লায়েড ম্যাথেমেটিক্স অনেক বেশি ভালো লাগে”, অগ্নিজ জানায়। তার মতে যে কোনও গণিতবিদ বা পদার্থবিদের উচিত খুব ভালো করে তার শ্রোতাদের বিষয়টা বোঝানো। সেইজন্যই ফেইনম্যান তার খুব প্রিয়। “আপনি কী করছেন সেটা অন্যদের জানানো জরুরি”, অগ্নিজ বলে।

অগ্নিজের বন্ধুর সংখ্যা বরাবরই কম। ভাই আরিয়ানের পর ম্যাথ ট্রেনিং ক্যাম্পের বন্ধুরাই অগ্নিজের সবচেয়ে কাছের। প্রত্যেক রাতে অগ্নিজ যখন ট্রেনিং ক্যাম্পে থাকত আরিয়ান তার দাদার সাথে কথা না বলে ঘুমোতে যেত না। “আমার ওর সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব। আমি ওর জন্যই বিটেলস শুনতে শুরু করি। ওর প্রিয় গান পেপারব্যাক রাইটার, যেটা ও প্রায়ই আমাকে বোঝানোর জন্য বলে”, হাসতে হাসতে বলে অগ্নিজ।

স্বভাবতই অগ্নিজ সঙ্গীতের সাথে গণিতের মিল পায়। বাখ ও বিঠোফেন নিয়ে কথা বলার সময় অগ্নিজ বলে, “বাখের নোটস কম্পোজ করার একটা মজাদার গাণিতিক ধরন ছিল।”

তবে এত কিছুতেও অগ্নিজ খুব একটা গর্ববোধ করে না, বরং এত কম বয়সে এত খ্যাতি, প্রশংসায় তার ঠিক কেমন লাগছে জানতে চাইলে অগ্নিজ একটু হেসে কাঁধ ঝাঁকায় শুধু। অগ্নিজ নিঃসন্দেহে গণিতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিনয়ী কিশোর প্রতিভা। ‘চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম’ তাকে আগামীর শুভেচ্ছা জানায় ও তার আরও উন্নতি কামনা করে।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4661 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...