![cnnd bkmar](https://i2.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2021/03/cnnd-bkmar.jpg?resize=678%2C381&ssl=1)
চার নম্বর নিউজডেস্ক
কোভিড অতিমারির এখনও রয়ে যাওয়া রেশ। গ্রামীণ এবং শহরতলি লাগোয়া ভারতবর্ষের একটা অংশের চিরন্তন দারিদ্র এবং সংগ্রাম। এবং সর্বোপরি সরকারি অবহেলা। এই সমস্ত গল্পেরই একপাশে ধোবিঘাট।
দিল্লির বাটলা হাউসের লাগোয়া একটা বিশাল অংশ। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া মেট্রো স্টেশনের কাছে। কারা থাকেন ওখানে? কন্সট্রাকশন-কর্মী, সাফাইকর্মী, ধোপা, রিকশচালক, লোকের ঘরে কাজ করে খেটেখাওয়া একটা অংশের হাজারখানেক মানুষজন। তাঁদের সংসার। ছেলেমেয়ে। সুখদুঃখ। অতীত-বর্তমান। এবং ভবিষ্যৎ বলে যদি কিছু থাকে, সেসবও।
গত চব্বিশে সেপ্টেম্বর। দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি থেকে অবৈধভাবে গুঁড়িয়ে দিল ২০০-র বেশি বসতি, অস্থায়ী পাকা ঘর। প্রায় ৭০০-র উপর অধিবাসী সম্বল হারালেন। আচমকা আক্রমণ হওয়ায় বহু মানুষ আধার কার্ড, প্যান কার্ড, রেশন কার্ড ইত্যাদি জরুরি কিছু জিনিসপত্রও ফেলে রেখে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসেন। কোনওরকম আগাম ঘোষণা ছাড়াই। সবকিছুই হঠাৎ। যেমনটি হয়, করে আসছে শাসক। বিমুদ্রাকরণ, লকডাউন এবং বস্তি উচ্ছেদ। তফাত থাকে না কোথাও।
![](https://i2.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2021/03/cnnd-bkin-1.jpg?resize=640%2C429&ssl=1)
এপর্যন্ত গল্পটা চিরকালীন অত্যাচারিত নিপীড়িত ভারতবর্ষের কথা। ভালো খবরটা কোথায়? আলো কোথায়? আসছি। অতিমারি পরিস্থিতিতে শিক্ষার ক্ষেত্রে সাংঘাতিক একটা মেরুকরণ হয়ে গেছে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। হাইস্পিড ইন্টারনেট, আলাদা ঘর, অতিরিক্ত স্মার্টফোন— ধোবিঘাট সহ একটা বিশাল অংশের ভারতবর্ষের কাছে এসব বাতুলতা মাত্র। তাহলে? পড়াশুনো? শুকনো ছোট ছোট মুখ?
এখানেই আলোর দিশা। ধোবিঘাট পাঠশালা। প্রায় ১০০-র কাছাকাছি উচ্ছেদ হওয়া বস্তির ছেলেমেয়েদের নিয়ে স্কুল। অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইসা), রেভলুশনারি ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন (আরওয়াইএ) এবং নারীকেন্দ্রিক এক সংগঠন ধোবিঘাট ঝুগগি অধিকার মঞ্চ— এই তিন সংস্থার উদ্যোগে ধোবিঘাট পাঠশালা বাটলা হাউসের পাশের বস্তিতে তৈরি হল। তারিখটা ২৮ ফেব্রুয়ারি।
![](https://i2.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2021/03/cnnd-bkin-2.jpg?resize=417%2C314&ssl=1)
![](https://i2.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2021/03/cnnd-bkin-3.jpg?resize=640%2C363&ssl=1)
কারা পড়ান এখানে? সংস্থার কর্মীরা, কখনও জামিয়ার ছাত্ররা। একটা স্থায়ী শিক্ষক কমিটি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলছে। সোমবার থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ২টো। দুটো করে ব্যাচ, দু ঘণ্টা করে। মোটামুটি ৫ থেকে ১৭ বছরের ছোট ছোট মুখ আসছে, গল্প করছে, পড়ছে। ক্লাস সেভেনের আলিশা বলছে, কীভাবে দাদাদিদিরা ওদের হিন্দি, উর্দু, বিজ্ঞান আর অঙ্কের সঙ্গে ইংরিজিটাও শিখিয়ে দিচ্ছে সহজে। এখানে ওরা ভুল বললে কেউ হাসে না। সবাই ওদেরই মতো, সবাই এক। টেবিলের একটা পাশে বড় একটা গ্লোব রাখা। ক্লাস ফাইভের সাহিল বলল, কোনওদিন ওরা বাটলা হাউস, এনএফসি আর জামিয়া স্কুলের বাইরে কিছু দেখেনি। শহর বলতে শুনেছে দিল্লি, মুম্বই আর পাটনার নাম। কত তাড়াতাড়ি দেশের পনেরোটা বড় শহর কোথায় বলে দিতে পারছে সে। তার বন্ধুরাও। স্কুলের চারদিকে এঁকে, রং করে সাজাচ্ছে ওরা। স্কুল যেন দেখতে ভালো হয়। যেন ওদের ভেঙে পড়া ঘরগুলোর মতো না হয়।
![](https://i2.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2021/03/cnnd-bkin-5.jpg?resize=640%2C483&ssl=1)
আইসা আন্দোলনকারীদের কথায় জানা গেল, শিক্ষার অন্য এক দিক। শুধু ছাত্রছাত্রীরা না, শেখানো হচ্ছে বাবা-মাদেরও। স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার দিকটাও যে বড় জরুরি। ঝুগগি অধিকার মঞ্চের মেয়েরা স্যানিটেশনের দিকটা দেখছে। বস্তির যেটুকু যা টয়লেট ছিল, উচ্ছেদের পর তাও লোপাট। যেভাবে হোক, মেয়েদের কাজকর্ম সারতে হচ্ছে খোলা জায়গাতেই। নিরাপত্তা, সুরক্ষার অভাবের পাশাপাশি ভ্যাজাইনাল ইনফেকশনের সম্ভাবনা। পাঠশালায় এই দিকগুলোও দেখা হচ্ছে, পড়ানো হচ্ছে। মেন্সট্রুয়েশন নিয়ে শিক্ষায় কোনও ছুৎমার্গ রাখছে না কেউই। এদের সিলেবাস তাই স্বাভাবিক স্কুল সিলেবাসের থেকে একটু অন্যরকম। এদের সিলেবাসে রোজকার বেঁচে থাকার উপকরণ। সেসবও জানতে হবে যে …
![](https://i0.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2021/03/cnnd-bkin-6.jpg?resize=640%2C337&ssl=1)
কিন্তু কতদিন? প্রথম তিন চারদিন স্কুল ভালোই চলছিল। নির্বিঘ্নে। তারপর থেকেই শুরু হল তোলাবাজ, বিল্ডারদের হামলা। স্থানীয় বিধায়কের থেকেও কখনও অবহেলা, কখনও সরাসরি বিল্ডারদের পাশে দাঁড়ানোর প্রমাণ হাতেনাতে পাওয়া গেল। ঝুগগি মঞ্চ এগিয়ে এল। ৫ মার্চ কিছু ধ্বস্তাধস্তি। পাঠশালা ভেঙে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চলে গেল মাফিয়াদল।
এইসব নিরাপত্তার অভাব, ভয় আর দিন গোনা নিয়েই দিন কাটাচ্ছে ধোবিঘাট পাঠশালা। আলো বলতে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে যাদের শেখার কৌতূহল আকাশচুম্বী, জামিয়ার কর্মী, ছেলেমেয়েরা, ঝুগগি অধিকার মঞ্চের স্বপ্নকণ্ঠী নারীরা অথবা শবনম হাসমি সহ বেশ কিছু সমাজকর্মী এবং থিয়েটারকর্মী একদল তরুণ-তরুণী। ওদের গানে, কথায়, মুষ্টিবদ্ধ হাতে যেন কোনওদিন বন্ধ না হয় ধোবিঘাট পাঠশালা।