বাংলা উপন্যাসের অন্দরমহল: পুরাণকথা ও বাংলা উপন্যাসের সম্ভাবনা

বাংলা উপন্যাসের অন্দরমহল: পুরাণকথা ও বাংলা উপন্যাসের সম্ভাবনা -- দেবকুমার সোম

দেবকুমার সোম

 



কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক

 

 

 

পূর্ব-প্রসঙ্গ: উপন্যাসে মহাকাব্যের ব্যবহার

পুরাণ আর পুরাণকথা এই দুই শব্দের মধ্যে আপাত সাযুজ্য থাকলেও আজ তারা পরস্পরবিচ্ছিন্ন। বিশ্লিষ্ট। শব্দের বহমানতা, তার অভিযোজনের মধ্যে দিয়ে শব্দের তাৎপর্য যেমন বদলে যায়, তেমন বদলে যায় তার পরিপার্শ্ব। আদিতে পুরাণকে বলা হত পঞ্চম বেদ। বিশ্বের সৃষ্টি থেকে প্রলয় পর্যন্ত বিবিধ ব্যাখ্যা রয়েছে ভারতীয় পুরাণগুলিতে। পুরাণের মোট সংখ্যা আঠেরো। তাকে আবার তিনটে প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মৎস্য পুরাণকে আদর্শ মেনে পণ্ডিতেরা পুরাণের মোট পাঁচটি লক্ষণ খুঁজে পেয়েছেন:

১) সর্গ: এখানে বিশ্ব–ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
২) প্রতিসর্গ: এই অধ্যায়ে প্রলয়ের পরের সৃষ্টিকাহিনি বর্ণিত।
৩) বংশ: দেবতা ও বিভিন্ন মুনি-ঋষিদের বংশগৌরব এই অধ্যায়ের বিষয়।
৪) মন্বন্তর: এই অংশে মনুর শাসনকালের কথা বিবৃত। মানবজাতির সৃষ্টির আদি কাহিনি এখানে পাওয়া যায়।
৫) বংশানুচরিতম‌্‌: যে রাজার সময়কালে পুরাণ রচিত, সেই রাজার বংশলতিকা ও তার ইতিহাস এই অধ্যায়ে বর্ণিত।

পুরাণ কাহিনিকে পৌরাণিক কাহিনি বা পৌরাণিক কথা বলা হত। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘পৌরাণিকী কথা’ নিবন্ধে জানিয়েছেন,

পুরাণসকল লোক–শিক্ষার উদ্দেশ্যেই লিখিত। সে লোক–শিক্ষা কেমন? ধর্মশিক্ষা না পাইলে মানুষ মানুষ হয় না। নরাকারে পশুবৎ থাকিয়া যায়।[1]

পুরাণকে আদিতে অষ্টাদশ ভাষার মধ্যে গণ্য করা হত। মুকুন্দরাম চক্রবর্তী অষ্টাদশ ভাষার যে তালিকা দিয়েছেন তার মধ্যে চার বেদ, ছয় বেদাঙ্গ ছাড়া পুরাণ, মীমাংসা, ন্যায়, ধর্মশাস্ত্র, আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গান্ধর্ব ও অর্থসাধনাকে যুক্ত করেছেন।

এই পৌরাণিক কাহিনির মধ্যে সুপ্ত ছিল বিভিন্ন অঞ্চলভেদের লোকগাথা। লোকশ্রুতি। লোককাহিনি। গত শতকের দ্বিতীয়-তৃতীয় দশক থেকে যখন পুরাণ শব্দটির পারিভাষিক অর্থ হিসাবে মিথ‌্‌ শব্দের প্রয়োগ শুরু হল, তখন থেকে পুরাণ শব্দটি তার মূল অর্থ থেকে খানিক সরে যায় এবং ইংরাজি শব্দের অনুবর্তী হয়ে পড়ে। প্রায় তখন থেকেই পৌরাণিক আর পুরাণকথা দুটি ভিন্ন প্রেক্ষিতে ব্যবহার হয়ে আসছে। ‘A Dictionary of English Folklore’ গ্রন্থে মিথের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে:

Myth is a folklore genre consisting of narratives that play a fundamental role in a society, such as fundamental tales or original myths.[2]

ইংরাজি বর্ণমালায় মিথ শব্দটা এসেছে মূল গ্রিক থেকে। যার অর্থ ‘A traditional story, especially on which explains the early history or a cultural belief or practice of a group of people, or explains a natural event.’ মিথের চর্চা থেকে তৈরি হয়েছে মিথোলজি শব্দবন্ধন। মিথোলজির জনপ্রিয় ইংরাজি আভিধানিক অর্থ: ‘A set of stories of beliefs about a particular person/situation, especially when exaggerated of fictions.’

‘পৌরাণিক কাহিনি’ এই শব্দবন্ধন থেকে আমরা যখন ‘পুরাণকথা’ একক শব্দটিতে এসে পৌঁছাই, তখন আমাদের কাছে ‘Exaggerated of fictions’ মুখ্য হয়ে ওঠে। আমরা আমাদের ঔপনিবেশিক বোধ ও মানসিকতা নিয়ে পৌরাণিক কাহিনিকে পুরাণ (অর্থাৎ মিথ) হিসাবে চিনতে চাই। তার সঙ্গে আমাদের সংলাপ শুরু হয়। বাংলা কবিতায় প্রায় ১৯৩০-এর দশক থেকে এর ব্যবহার কিংবা প্রচলন বহুল হয়ে ওঠে। বাংলা উপন্যাসে বিক্ষিপ্তভাবে পুরাণের ব্যবহার সেই একই চাল ও প্রকরণে ঘটলেও একটি সার্থক এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ উপন্যাস হয়ে উঠতে আমাদের বেশ কয়েকটা দশক কাটিয়ে আসতে হয়। যদিও এর মধ্যে উপন্যাসের চরিত্র হিসাবে মহাকাব্য কিংবা মহাকাব্যিক চরিত্রের আগমন ঘটেছে বাংলা উপন্যাসে। বিশেষত কৃষ্ণ, কর্ণ, অর্জুনের সঙ্গে আধুনিক সময়কে চিনে নিচ্ছিলেন বাঙালি ঔপন্যাসিকেরা। কিন্তু সেভাবে পুরাণকথার চরিত্রদের আমরা ব্যবহার দেখলাম অনেক পরে। অমিয়ভূষণ মজুমদারের কলম থেকে পাওয়া গেল পুরাণকথা নির্ভর এক সম্পূর্ণ উপন্যাস।

মনসামঙ্গল কাব্যের প্রধানতম পুরুষ চরিত্রকে নিয়ে অমিয়ভূষণ রচনা করলেন তাঁর ‘চাঁদবেনে’ উপন্যাস। সেখানে তিনি বাংলার হিন্দু সমাজসংস্কারকে (যাকে ‘রেনেসাঁ’ নামে জনপ্রিয়তা দেওয়া হয়েছে) শিরোধার্য করে রচনা করলেন এমন এক পুরুষ চরিত্র, যার মধ্যে আধুনিক উপন্যাসের সূত্রগুলো প্রবলভাবে স্পষ্টতা পেল। উপন্যাস শুরু হচ্ছে— বণিক চন্দ্রশেখর বসুর পুনরায় সমুদ্রযাত্রার খবর নিয়ে তোলপাড় বন্দর নগর। সেখানে অতীতের দুর্বিপাকের কথা প্রসঙ্গসূত্রে ঔপ্যনাসিকের কলমে উঠে আসছে এইভাবে:

চন্দ্রশেখর ইতিমধ্যে কয়েকবার নিজেই সমুদ্রযাত্রা করেছে, জাহাজের সংখ্যা বাড়িয়েছিল। প্রথমবারে সে তাম্রপর্ণির মুক্তা ও কদম্বের হাতির দাঁতের অলঙ্কার নিয়ে স্বর্ণদ্বীপে গিয়েছিল, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ ছাড়াও খাস সাত সাতখানা অর্ণবপোত নিয়ে যাত্রা করে, সুদীর্ঘকাল পরে সেই সাতখানি পোতের সবগুলোকে খুইয়ে যখন সে সমতটে ফিরেছিল, তখনকার অবস্থা সম্বন্ধে প্রবাদ এই, চাঁদ বলেই সয়।[3]

চাঁদ সদাগরের ডিঙা বা জাহাজডুবির কথা আমরা বিস্তারিত পাচ্ছি বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গল কাব্যে। সেখানে মনসা প্রথমে তাঁর পালক পিতা মহাদেব শিবের কাছে অনুমতি চান বেনের জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়ার। কিন্তু শিব তাঁকে অনুমতি না দিয়ে তিরস্কার করেন। এরপর মনসা নেতা ধোপিনীর সঙ্গে শলা-ষড়যন্ত্র করেন। পবনদেবতাকে সমুদ্রঝঞ্ঝা সৃষ্টি করতে বলেন। ফলে শুরু হয় প্রবল জলোচ্ছ্বাস। অলক্ষ্যে দেবী স্বয়ং দেখা দিয়ে চাঁদকে বশ্যতা স্বীকার করতে বলেন। বেনে অস্বীকৃত হন। মনসা পবনপুত্র হনুমানের শরণাপন্ন হন। হনুমানও বেনের জাহাজ ডোবাতে ব্যর্থ হয়। অনেক প্যাঁচ কষে শেষমেশ মনসা চাঁদের জাহাজগুলোকে ডুবিয়ে দিতে সফল হন।

মহাকোপে কহে চান্দ মনের সন্তাপে।
যে ছিল নির্ব্বন্ধ খণ্ডাবে কার বাপে।।
লক্ষ ছাগল দিয়া পূজি ভগবতী গঙ্গা।
বিপরীতকালে ডুবাইল চৌদ্দ ডিঙ্গা।।[4]

মিথকে উপন্যাসে সার্থকভাবে ব্যবহারে ক্ষেত্রে আমরা নিপুণতার পরাকাষ্ঠা দেখতে পাই স্প্যানিশ সাহিত্যে। বিশেষত গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ় যেভাবে সারা দুনিয়ার সাহিত্যে প্রগাঢ় প্রভাব ফেলে অতিখ্যাত হয়েছিলেন, জীবিতকালে তেমন খ্যাতি অ্যালবেয়র ক্যামু কিংবা জঁ পল সার্ত্র-এরও অধরা ছিল। সফল ইংরাজি অনুবাদের মধ্যে দিয়ে যেমনভাবে মার্কেজ় আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছেন, তা এক বিস্ময় বটে। এর ফলে আমাদের বাঙালিদের নজর এখন ঘুরে গেছে হিস্পানিয়ান উপন্যাসের দিকে। আর কী আশ্চর্য আমরা দেখতে পাচ্ছি সেখানে মিথের কী বিপুল আর সফল ব্যবহার। তারই কিছু প্রয়োগ আমরা পেয়ে যাই এই সময়ের বিকল্পধারার বাংলা উপন্যাসে।

মিথকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে মার্কেজ়ের অন্যতম সফল উপন্যাস ‘Del amor y otros demonios (Of Love and Other Demons)’। উপন্যাসের রচনা সময় ১৯৯৪। এই উপন্যাস রচনার প্রেক্ষাপট মার্কেজ় স্বয়ং কাহিনির শুরুতে পাঠকদের জানিয়েছেন (যা তাঁর উপন্যাসের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম)। ১৯৪৯ সালে গাবো (মার্কেজ়ের ডাকনাম) শিক্ষানবীশ সাংবাদিক হিসাবে একটি দৈনিকে কাজ করতেন। সে-সময় ২৬ অক্টোবরে পত্রিকার সম্পাদক তাঁকে পাঠান সান্তা ক্লারা মিশনারি মঠে। যার একটা অংশ আগে হসপিটাল হিসাবে ব্যবহার হত। সেটাকে ভেঙে একটা নতুন পাঁচতারা হোটেল তৈরি হবে। ফলে ভাঙচুর চলছে। তার মধ্যে থেকে প্রচুর কবর খুঁড়ে বের করা হচ্ছে। গাবো সেখানে গিয়ে দেখেন শ্রমিকেরা এক একটা বিখ্যাতজনের কবর কীভাবে ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে। তার মধ্যে থেকে হঠাৎই আবিষ্কার হয় এক বিস্ময়। শ্রমিকেরা একটি অজানা কবর ভাঙলে তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে তামারঙা দীর্ঘ চুল। একটি অল্পবয়সী মেয়ের মাথার খুলির সঙ্গে তখনও চুলের গোছা অক্ষতভাবে লেগে ছিল। পরে মেপে দেখা গেল সেই চুলের দৈর্ঘ্য বাইশ মিটার এগারো সেন্টিমিটার। এই ঘটনা তরুণ অনামী গাবোকে বিস্মিত করে। তিনি উপন্যাসের মুখবন্ধে জানাচ্ছেন:

The impassive foreman explained that human hair grew a centimetre a month after death, and twenty-two meters seemed a good average for two hundred years. I, on the other hand, did not think it so trivial a matter, for when I was a boy my grandmother had told me the legend of a little twelve-years-old marquise with hair that trailed behind her like a bridal train, who had died of rabies caused by a dog bite and was venerated in the towns along the Caribbean coast for the many miracles she had performed. The idea that the tomb might be hers was my news item for the day, and the origin of this book.[5]

পরিস্থিতি আমাদের দেশের থেকে খুব একটা ভিন্ন নয় দক্ষিণ আমেরিকার। সেখানেও আমাদের মতো অশিক্ষা আর বিকৃত ধর্মবিশ্বাস আজও জনমানসে অটুট। আমাদের মতোই ঔপনিবেশিক ব্যবস্থায় তাদের বেড়ে ওঠা। বেঁচেবর্তে থাকা। ফলত সুচিকিৎসা দূরঅস্ত, আধুনিক চিকিৎসার কোনও সম্ভাবনাও ছিল না উপন্যাসের নায়িকা সেই বালিকাটির। ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র যাদব কবিরাজের মতো হয় সূর্যবিজ্ঞান কিংবা ঝাড়ফুঁক, ওঝাগিরি, কালা–জাদুতে অভ্যস্ত ছিল তখনকার জনজীবন। আর মানসিক অসুখ, মনোবিকার ইত্যাদিকে তো অবতারবাদের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া চেষ্টা আধুনিক সময়েও হয়ে থাকে। কতক অজ্ঞানতার কারণে। বাকিটা বাণিজ্যের প্রয়োজনে। ফলে গাবো তাঁর ঠাকুরমার কাছে শোনা কাহিনির মিথকে উপন্যাসে ব্যবহার করেন। আর সেটা হয়ে ওঠে এমনভাবে:

In the slave market in a topical Colombian seaport, venturing to buy a string of bells, the Marquis’s twelve-year-old daughter, Sierva Mar’ia, is bitten by a rabid dog. ‘No medicine cures what happiness cannot,’ the wily physician Abrenuncio advises her father…. novel of doomed love tells of Sierva Maria’s incarnation in the convent of Santa Clara where Cayetano Delaura, the young priest sent to exorcize the virulent demon of her sickness, falls in love with her.[6]

মৌখিক সাহিত্যের আলোচনায় আমরা হালকাভাবে ছুঁয়ে গেছি পুরাণকথা, অর্থাৎ মিথের ব্যবহার। আজকের বাংলা সাহিত্যে মিথের বহুল প্রচলন থেকে ‘ডি-মিথিং’ এই নতুন শব্দবন্ধের জন্ম হয়েছে। যার অর্থ ওই কলম্বিয়ান অথরের লেখার সূত্রে। অর্থাৎ আমরা ফের একটা বিদেশি সাহিত্য তত্ত্বকে আঁকড়ে ধরলাম স্বজাতীয় উপন্যাসের ব্যাখ্যা এবং রচনায়। অথচ, আমাদের মতো প্রাচীন সমাজসভ্যতায়, যেখানে মিথ আর ইতিহাস প্রায় সমগোত্রীয় হয়ে রয়েছে, সেখানে বিদেশযাত্রা কৃত্রিমতার ঝোঁক নয় তো? প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতে আমরা পুরাণ শব্দের একটু গভীর খোঁজে যেতে চাইছি। ফলে ফের একবার অভিধানের চৌকাঠ মাড়াতে হবে আমাদের।

হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ গ্রন্থে আমাদের জানাচ্ছেন:

বিণ (পুরা ভবম‌্‌ ইতি পুরা+তন (ষ্টন), নিপাতনে ‘ত’ লোপ, ণত্ব (অ.টী), সং পুরাতন>প্রা পুরাঅণ>ণ(?)….১ পুরাভব, পুরাতন, চিরন্তন।…২ আদিম। ক্লীব প্রত্যয়ে ১. ব্যাসাদিরচিত সর্গাদিপঞ্চলক্ষণ শাস্ত্রবিশেষ। ২. পুরাণকথা, প্রাচীনবৃত্ত।[7]

অর্থাৎ পুরাণকথা হল সেই অস্পষ্ট সীমারেখা যেখানে ইতিহাস, লোককথা আর প্রাচীন সাহিত্যের কোনও সুস্পষ্ট বিভাজন পাওয়া যায় না। ফলে এই কুয়াশাময় স্থান থেকে বারবার নির্মিত হয় কবিতা, উপন্যাস কিংবা কাহিনিমালার। আমাদের মঙ্গলকাব্যের ভেতরে ‘দেবখণ্ড’ কিংবা ‘নরখণ্ড’ অংশে কবিরা তাঁদের কল্পনার স্বাধীনতা নিয়েছেন পুরাণ সাহিত্যের নব ব্যাখ্যাকার হিসাবে। সেখানে কবিরা তাঁদের কাব্য রচনার সময়কাল উল্লেখ করতে চেয়ে সামাজিক আর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অস্বীকার করেননি। এমনকি পূর্বজ কবিদের অপমান করার সুযোগও এই পর্যায়ে পরবর্তীকালের কবিরা করেছেন। যেমন মনসামঙ্গল কাব্যের অন্যতন শ্রেষ্ঠ কবি বিজয় গুপ্ত মনসামঙ্গলের প্রথম কবি হরি দত্তকে (তাঁর এক চোখ সম্ভবত কানা ছিল) প্রথম কাব্য রচনার জন্য কোনও সম্মান দেননি, বরং কটূক্তিজনক বাক্য রচনা করে লিখেছেন: ‘মূর্খে রচিলা গীত না জানে মাহাত্ম্য।/ প্রথমে রচিলা গীত কানাহরি দত্ত।।’

আনুমানিক ১৫৩৫ সালে পুরীতে শ্রীচৈতন্যের মৃত্যু(?) এমনটা ধরা হয়। আর মুকুন্দরাম চক্রবর্তী তাঁর চণ্ডীমঙ্গল লেখার সূচনা করেন ১৫৪৪ সালের পাশাপাশি সময়। তখনকার গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গে নতুন ধর্মের শাখা হিসাবে বৈষ্ণব ধর্মের জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন গৌড়ে হুসেন শাহি রাজবংশের রাজত্ব থাকায় পরধর্মসহিষ্ণুতার কিছু নিদর্শন যেমন ছিল, তেমন স্থানিক বৈরিতাও কিছু কম ছিল না। অনাথকৃষ্ণ দেব তাঁর ‘বঙ্গের কবিতা’ প্রবন্ধমালায় মুকুন্দরামের সমকালে বঙ্গদেশের রাজনীতির যে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়েছেন তা এমন:

যখন মোগল পাঠান বঙ্গে সিংহাসন লইয়া বিব্রত, যখন দেশে শ্রীচৈতন্যশিষ্য বৈষ্ণব দল পাষণ্ড দলনে প্রবৃত্ত এবং রাধাভাব প্রচারে উন্মত্ত, দেশের অন্য কথা উপকথা বৈষ্ণবীয় মাধুর্য্য-স্রোতে নিমজ্জিত হইবার উপক্রম, চণ্ডীকাব্য সেই সময়ে রচিত।[8]

মুকুন্দরাম সনাতন হিন্দুধর্মের কৌলীন্যপ্রথার মধ্যে থেকেও দেব-দেবীকে স্বর্গের কল্পিত কোনও আসনে বসাননি। বরং হিন্দু পুরাণ কিংবা পুরাণ থেকে সংগৃহীত পৌরাণিক কাহিনিগুলো বহুলাংশে লৌকিক কাহিনিতে তিনি পরিণত করেন। তাই মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর মঙ্গলকাব্য প্রসঙ্গে সঙ্গত কারণেই বিজিতকুমার দত্ত আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে:

কবি যেন প্রতিজ্ঞা করেছেন— স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যে সূক্ষ্ম ভেদ-রেখাটিও নিশ্চিহ্ন করে দেবেন। তা না হলে স্বর্গের দেবতাদের কানা, খোঁড়া, গোদা, কালা বলার সময়ে কবি নিশ্চয়ই একবার চিন্তা করতেন।[9]

পৌরাণিক কাহিনি কিংবা হিন্দু দেবদেবীদের প্রায় মানুষের স্তরে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে মঙ্গলকাব্যের কবিরা সেদিন প্রায় বৈপ্লবিক সাধ্য সাধন করে ছিলেন। যা আজকের এই হিন্দুত্ববাদের নয়া হুল্লোড়ে প্রায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান। পনেরোশো শতকের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে কবি বিজয় গুপ্ত দেবী মনসার জন্মকথায় কৈলাসবাসী শিবের হস্তমৈথুনের বর্ণনা করেছেন এমন স্পষ্টতায়:

কে বুঝে দৈবের গতি,            যে দেব সৃষ্টির পতি

হেন শিব পীড়িত মদন।।

কামে ব্যাকুল শিব,                কাতর চঞ্চল জীব,

রতিরসে করে ঢসমস।

অতি কামে হইয়া ভোল,   শ্রীফল বৃক্ষেরে দিল কোল,

আচম্বিতে খসিল মহারস।।[10]

পুরাণ কিংবা পৌরাণিক আখ্যানকে এমন সময়োপযোগী পুর্ননির্মাণ বাংলা উপন্যাসের ভবিতব্য। এই ভাবধারায় ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যের উল্লেখ আমাদের করতে হয়। কিন্তু পরিতাপের কথা দীর্ঘ ঔপনিবেশিক সময়কালে তো বটেই, উত্তর-ঔপনিবেশিক সময়কালের এক দীর্ঘ সময় জুড়ে বাংলা উপন্যাসে পুরাণকথা নির্ভর কাহিনির ওপর তেমন নজর ছিল না। তখন মিথের চাইতে পৌরাণিক আখ্যানকেই সাহিত্যিকেরা বেশি মান্যতা দিয়েছেন। অবস্থার পরিবর্তন ঘটে জাদুবাস্তবতা বা ম্যাজিক রিয়ালিজমের অনুষঙ্গে। আমরা বরাবর এটাই বলতে চেয়েছি যে, বিদেশে যখন কোনও নতুন তত্ত্ব তামাদি হয়ে গেছে, তখন সেই তত্ত্বকে বুকে আগলে ধরে আমাদের সাহিত্যিকেরা কিছুদিন হুল্লোড় করেছেন। তারপর ফের যখন আর একটা পশ্চিমের ফেলে দেওয়া তত্ত্ব আমরা পেয়েছি, আমরা সেটা নিয়েই মেতেছি। তেমন দুর্দশা হয়েছে বাংলা উপন্যাসে মিথের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। যতদিন না জাদুবাস্তবতার তত্ত্ব সাধনায় মত্ত হননি বাংলার সারস্বত সমাজ, ততদিন প্রায় ব্রাত্য থেকেছে বাংলা উপন্যাসে মিথ বা পুরাণকথার উপাদান।

রামকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর উপন্যাস ‘ধনপতির সিংহলযাত্রা’য় চণ্ডীকাব্যের মধ্যে উপন্যাসের যে বীজ বপন করা ছিল তাকে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করেছেন। দেখার বিষয় এই যে, অমিয়ভূষণের ছিল বাংলার, তথাকথিত ‘রেনেসাঁ’র প্রতি অমোঘ টান (আমরা তাঁর ‘রাজনগর’ উপন্যাসে ‘রেনেসাঁ’ প্রীতির নমুনা পাই)। অমিয়ভূষণের ‘চাঁদবেনে’ একজন আধুনিক পুরুষ। একজন বণিক। যার কাছে লাভ–লোকসানের কড়ির চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অভিযান। আজকের ভাষায় যাকে আমরা বলি ‘ফাটকা খেলা’। বণিক চন্দ্রশেখর বসু সেই খেলায় কখনও জেতে। কখনও আবার হারে। এই সত্যকে সহজে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠে ‘চাঁদবেনে’ নভেলের অবয়ব। তার বিবিধ চরিত্রের বিস্তার। সেখানে আর্যধর্মের সঙ্গে লৌকিক অনার্য ধর্মের লড়াই আর শেষে শৈব চন্দ্রশেখর বসুর ঘরে পূজিত হন সাপের দেবী, অনার্য ধর্মের প্রতিভূ মনসা স্বয়ং। এও বাংলা ‘রেনেসাঁ’র উপাদান। যেখানে পুরাণকে ব্যাখ্যা করা হয় ঔপনিবেশিক মননে।

‘ধনপতির সিংহলযাত্রা’ তেমন উপন্যাস নয়। মূলত এই উপন্যাসে রামকুমার আমাদের স্মরণ করাতে চেয়েছেন প্রাচীন বাংলার প্রাক‌্‌-ঔপনিবেশিক সময়কাল। রামকুমার নিষ্ঠার সঙ্গে বণিক ধনপতির শ্রীলঙ্কায় বাণিজ্যযাত্রা বর্ণনা করেছেন। সেকালে বাংলা ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্রে। বৈদেশিক বাণিজ্য না হলে ‘কীসে সাজা হবে তাম্বূল, কী দিয়ে রাখবেন মান!’ ফলে ধনপতিকে যেতে হবে সিংহল দেশ। কারণ ‘শেষ দক্ষিণ পাটানে গিয়েছিল জয়পতি দত্ত, ধনপতির বাবা। ডিঙার পর ডিঙা ভরে এনেছিল নানা সামগ্রী। তারপর আর কোনো সাধু ওমুখো হয়নি, কোনো সওদাগর আসেনি ওদেশ হতে।’ এমন পরিস্থিতিতে তার বিদেশ যাত্রা।

ধনপতির কাহিনি যেমন যেমন চণ্ডীমঙ্গলে আখ্যায়িত, রামকুমার তার থেকে বিচ্যূত হননি। তিনি তাঁর নিজস্ব কোনও দর্শন আরোপ করেননি উপন্যাসকে সমকালীন রাখতে। বরং মূল কাহিনির মূলানুগত থেকে তাঁর পাঠকের চোখের সামনে তিনি প্রাক-ঔপনিবেশিক আর উত্তর-ঔপনিবেশিক অর্থনীতি আর সমাজনীতির পার্থক্য তুলে ধরেছেন। কাহিনির অন্তিমে এসে সওদাগরকে বাধ্য করেন মহামাতা সিংহলে দেবী চণ্ডীর পুজো প্রচলনে।

মহামাতা বলে, ওহে সাধু, এই দেখ‌্‌ আমার রণরূপ। যদি সাধ জাগে আমার চৌষট্টি যোগিনী দেখার, দেখাব তোকে। ধেয়ে আসবে আসি ও খাঁড়াভুজা উগ্রচণ্ডা, লোহিত বসনা শিবদূতী, রণপ্রিয়া, কঙ্কালমালিনী, বৃষারূঢ়া মহেশ্বরী, খট্টাঙ্গধারিণী ঘোরস্বনা আদি যোগিনী। আমি আহ্বান করলে ত্রিকোটি বিকটদশনা দানা হানা দেবে লঙ্কাদেশে। বল সওদাগর, তুই স্থাপন করবি চণ্ডীবারি। ভজনা করবি মহামায়া।[11]

অবশেষে ‘অকালবোধনে মৃৎশিল্পী নির্মাণ করে দেবী প্রতিমা। মশানের প্রধান কর্মকার দেবী-করের জন্য স্বাতীনক্ষত্রতলে চতুর্থী নিশীথে গড়ে ক্ষুরধার খড়গ।’

একজন প্রভাবশালী অথরের কাছে স্থানীয় মিথ কীভাবে উপন্যাসের আধার হয়ে ওঠে তার উদাহরণ জীবনের শেষ পর্যায়ে দেবেশ রায় রচিত এক অনন্য রচনায়। সেই অত্যাশ্চার্য নভেলের নাম ‘লেফটেনান্ট কর্নেল মজিদ আলির জীবনের দু-তিনটি বেজোড় আখ্যান’। সেই নভেলে অথর দেবেশ রায় বর্ধমানের খণ্ডঘোষে দামোদর নদের শুকিয়ে যাওয়া এক খাতের ধারে ফাল্গুনী অমাবস্যায় মাঠকালীর মৌখিক গল্পকথা আমাদের শুনিয়েছেন। দেবেশ রায়ের নির্মাণে সেই কাহিনির বর্ণন:

কথ্য আছে: এক মুসলমান জোলা কোনো এক প্রাচীন ফাল্গুন অমাবস্যায় কোনো এক হাট থেকে তার খদ্দের জোটেনি কিছু শাড়ির পোঁটলা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে বসেছিল এই বড়ালের ওপর। তার পর, চোখ দুটো কখন জুড়ে গেল। ঘুমের মধ্যেই সে সেই প্রান্তরের বায়ুকোণের দিকে পাশ ফিরেছে। দামোদরের পুরনো খাতের দিকে। কখন সূর্যাস্ত হয়েছে অথচ একটাও তারা ফোটেনি— তা সে টের পায়নি। হঠাৎই এক ফুটফুটে মেয়ে কোত্থেকে এসে তাকে ডেকে বলল: ‘তোমার পোঁটলার একটা শাড়ি আমাকে দাও, আমি পরব, আমার পরনে কিছু নেই।’[12]

গল্পের বাকিটা অভিজ্ঞ পাঠকের চোখের সামনে সহজে নির্মিত হয়ে যাবে। স্বপ্নদৃষ্ট মৌখিক কাহিনি থেকে সৃষ্ট জনরব বা জনশ্রুতি। যার বীজ হয়তো ছড়িয়ে রামপ্রসাদ সেনের সাফল্যের সঙ্গে মিশে থাকা সেই কিংবদন্তিসম শ্যামলা মেয়েটার সঙ্গে। মুসলমান জোলার স্বপ্নে দেখা সেই উলঙ্গ বালিকা পরনের লজ্জা নিবারণে বস্ত্র পায়। জোলার গাঁটরিতে থাকা রঙে সে হয় মাঠকালী। লেফটেনান্ট কর্নেল মজিদ আলির কাছে খণ্ডঘোষের চারপাশের আরও বহু মানুষের মতো মাঠকালী এক বিস্ময়। যিনি মুসলমান হয়েও হিন্দু দেবদেবীর প্রতি বিশ্বাসে অটুট। যিনি মুসলমান হয়েও ভারতীয় সেনাবাহিনিতে লেফটেনান্ট কর্নেলের মতো পদে উন্নীত হন। আবার সেই মুসলমান বলেই বাবরি মসজিদ ভাঙার দিনে তাঁকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেন রাষ্ট্ররক্ষকেরা। রাষ্ট্র যতই ধর্মের আবরণে মানুষে-মানুষে বিভেদনীতির চাষ করুক, কথা এই, ভারতের মাটির গভীরে প্রোথিত ধর্মীয় মিথ। তা হিন্দু কিংবা মুসলমান, সব মানুষের জন্য। সত্যনারায়ণের সিন্নি আর গাজীর গানে একাকার বাংলার সাধারণ মানুষ। আর তাদের কথা বলতে গেলে মিথের ব্যবহার। পুরাণকথার বিনির্মাণ বারবার ঘটবে। এই হল ইতিহাসের ইঙ্গিত। সমকালীন বাংলা উপন্যাসকারেরা তাকে যেন অগ্রাহ্য না করেন। কারণ স্থানীয় মাঠঘাট থেকে সঞ্চিত এমন উপাদানে পুষ্ট হয় উপন্যাসের বীজ। ভারতের মতো বহুধর্মের দেশে, বহুভাষার দেশে মিথ কাহিনিগুলির মধ্যেই পাওয়া যায় ভারতীয় চেতনা।

 

(আবার আগামী সংখ্যায়)


[1] বন্দ্যোপাধ্যায়, পাঁচকড়ি। পৌরাণিকী কথা, পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাবলী, প্রথম খণ্ড। সম্পাদক: বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রজেন্দ্রনাথ ও দাস, সজনীকান্ত। কলকাতা: বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ। তৃতীয় মুদ্রণ: আষাঢ়, ১৩৭০। পৃষ্ঠা ১০৬।
[2] Jaequeline, Simpson and Roud, Steve (ed.). A Dictionary of English Folklore. Oxford: Oxford University Press. ISBN 978-01-9126-664-4.
[3] মজুমদার, অমিয়ভূষণ। চাঁদবেনে। কলকাতা: গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড। প্রথম প্রকাশ: ১ বৈশাখ, ১৪০০ (বাংলা); ১৪ এপ্রিল ১৯৯৩। পৃষ্ঠা ৬।
[4] গুপ্ত, কবিবর বিজয়। পদ্মাপুরাণ বা মনসামঙ্গল। সম্পাদনা: পণ্ডিত কালীকিশোর বিদ্যাবিনোদ। কলকাতা: বেণীমাধব শীল’স লাইব্রেরি, পুনর্মুদ্রিত: শ্রাবণ, ১৪১৫ (বাংলা); আগস্ট, ২০০৮। পৃষ্ঠা ১৪৬।
[5] Ma’rquez, Gabriel Garci’a. Of Love and Other Demons. Translated from Spanish: Grossman, Edith. New Delhi: Penguin Books. First Published in India: 1997. Page No. 2-3.
[6] পূর্বোক্ত।
[7] বন্দ্যোপাধ্যায়, হরিচরণ। বঙ্গীয় শব্দকোষ। নিউদিল্লি: সাহিত্য অকাদেমি। ষষ্ঠ মুদ্রণ: ২০০৪। পৃষ্ঠা ১৩৪৫।
[8] দেব, অনাথকৃষ্ণ। কবিকঙ্কণ চণ্ডীর বৈশিষ্ট্য, বঙ্গের কবিতা। কলকাতা: বসুমতী সাহিত্য মন্দির। প্রকাশকাল অলিখিত। পৃষ্ঠা ২০।
[9] দত্ত, বিজিতকুমার। ভূমিকা, বঙ্গের কবিতা। কলকাতা: বসুমতী সাহিত্য মন্দির। প্রকাশকাল অলিখিত। পৃষ্ঠা ৩।
[10] দ্রষ্টব্য, টীকা ৪। পৃষ্ঠা ৭।
[11] মুখোপাধ্যায়, রামকুমার। ধনপতির সিংহলযাত্রা। কলকাতা: মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ। প্রথম প্রকাশ: বৈশাখ ১৪১৭। ISBN 978-81-7293-993-9। পৃষ্ঠা ২৩১–৩২।
[12] রায়, দেবেশ। লেফটেনান্ট কর্নেল মজিদ আলির জীবনের দু-তিনটি বেজোড় আখ্যান। কলকাতা: দে’জ পাবলিশিং। প্রথম প্রকাশ: মাঘ ১৪২৪, জানুয়ারি ২০১৮। ISBN 978-81-295-5330/67। পৃষ্ঠা ৪৪।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4664 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...