মৃন্ময় চক্রবর্তী

মৃন্ময় চক্রবর্তী | পাঁচটি কবিতা

পাঁচটি কবিতা

 

পাখির বাসা 

কখনও কখনও মনে করে ওঠো আমাকে
দীর্ঘ নীরবতার পর, তোমার নজর পড়ে, কেঁপে ওঠে আমার ঘুলঘুলি,
চমকে যায় হৃদয়ঠাসা মাকড়সার ঝুল, ধুলো, ছেলেভুলানো আবর্জনা,
আশ্চর্য জল জেগে ওঠে, জাগিয়ে তোলো আসলে তুমিই!
তুমি আসবে না, যদিও অকারণ তীক্ষ্ণ চোখ
পাখির বাসাটিকে ভেঙেচুরে দেবে বারংবার!

 

শিরার ভেতরে গোয়েন্দারা

আমার সামান্য দানা ঘামে মেখে মুঠোয় তুলেছি
খাচ্ছি খাচ্ছি হাত-পা, তামাম নিজেকে।
সামান্য দানা, আমার রক্তের গন্ধে, হাড়ে,
পূর্বপুরুষের, ছোটখাট পুণ্যে আর পাপে
আমাকে বাঁচাতে চেয়ে ক্রমশ বাড়ন্ত….
জীবনে তেমন কিছু নেই,
দু-একটা করুণ আগ্রহ ছাড়া।
তবু শিরার ভেতরে এসে গোয়েন্দারা
কতখানি দিয়েছি রাষ্ট্রকে, খোঁজ করে;
জেনে নেয়, চুরি করা সামাজিক কাজ
একথা নিয়মিত স্বীকার করেছি কিনা!

 

ভিখারির গ্রহতারা

কাঙালের মতো দুয়ারে এসেছিলে, অথবা আমিই ভিখারি!
তারপর তোমার নগ্ন অশরীরে ছিঁড়ে ছিঁড়ে আমার মাংস
পঙক্তির মতো অমল মাধুর্যে ফুটে গেল;
জ্বলন্ত নৌকা থেকে জ্বর উঠে লেলিহান পোড় খেল তাবৎ কবিতা।
কখনও বুঝিনি আমি হৃদগ্রস্ত আয়োজন এইভাবে খুলে খুলে
তোমার হাত থেকে যাবে, আঁধারে জোনাকির মুক্তমালা যেভাবে পতনশীল
সেভাবে বেকার, আশ্চর্য নতুন অচেনা সবকিছু, ছন্দ নীল-অচ্ছুৎ
গ্রহতারা খসে গিয়ে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে মাটিতে তামাম….

 

এই অন্ধ হাওয়ার ভেতর

দেওয়ালে দেওয়ালে নানান ওষুধ ঝুলছে
পাওয়ারফুল দাওয়াখানা পাড়ায় পাড়ায়।
ইঁদুর জব্দ করতে কী কী জরুরি
ব্যাং টিকটিকি মশামাছি মারতে কী কী দরকার।
গলির ভেতরে এখন আর হাওয়া নেই,
অন্ধকারের নিঃশব্দ চলাচল।
চারদিকে উড়ন্ত চোখ দেখছে লোকটা কথা বলে কিনা!
শহরের কাগজ তাকে যদিও পোছে না
মঞ্চেরা যদিও তাকে তাচ্ছিল্য করে
তবু উড়ন্ত চোখেরা তাকে দ্যাখে কোনও এক আশ্চর্য কারণে।
সে বহুদিন কোনও কিছু লেখেনি
সে এখন লিখতেই ভয় পায়
কে জানে এই অন্ধ হাওয়ার ভেতরে কোন শব্দ ওঁত পেতে আছে!
তর্জনী কলম ছুঁলেই তো সে অনুভব করে এক ধাতব ট্রিগার!

 

জলস্পর্শহীন

ছিল না অর্জুন তাই বিদ্ধটুকু সাঙ্গ করে গেছে
দীর্ণ পাতাল থেকে সুপেয় শান্তি হয়ে বসেনি তৃষ্ণায়!
ভূমিহীন আশা তবু সবুজের গানে থাকে ডুবে…
শরন্দাজি মনে পড়ে, গোধূমবরণী
বিকেলের আলো নিয়ে, কপাল নাচানো বানজারা।
পাথুরে স্মৃতির রেল, রেলিঙের শরশয্যা থেকে
হলুদ শাড়িটি এসে কুরুক্ষেত্রের মতো ওড়ে
নদীর বাতাসে দেখি, তবু চির জলস্পর্শহীন।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4667 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...