প্রাগ নকটার্ন কিংবা প্রাগে কোজাগরী

নিরুপম চক্রবর্তী

 

কোজাগরী, কোজাগরী কে জাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমাতে?
ভ্লাতভা নদীর তীরে শিশুরা আনন্দে খেলিতেছে।
পূর্ণিমায় শিশুদল: জাগরিত, আনন্দিত, অতীব উল্লাসে
আরও বহুদূরে দ্যাখো জিষকভ টাওয়ার বেয়ে উঠে!
জিষকভ টাওয়ার বেয়ে উঠে তারা
অতি কুশ্রী জিষকভ টাওয়ার বেয়ে নামে
(শিশুদের সিলোয়েট অবিরত উঠে নামে রাত্রি মধ্যযামে)
তাহাদের অঙ্গ জুড়ে সুপিচ্ছিল চাঁদের আলোক।

জিষকভ টাওয়ার বুঝি টেলিভিশনের
অদৃশ্য তরঙ্গরাজি ছড়াতেছে প্রাগ নগরীর
প্রতিটি অগম্য কোণে, শিশুরা আনন্দে হাসিতেছে।
হাসিছে বিদেশি এক: সুদূর ভারত হতে আবির্ভূত হরিদাস পাল
হাসিছে পাগল চেক, শিল্পকর্মী বিশিষ্ট মাতাল,
মুগ্ধ হয়ে দেখিতেছে চন্দ্রাহত ভাস্কর দাভিদ চার্নি তার নাম
(শিশুদের সৃষ্টিকর্তা: তাহার সাকিন প্রাগধাম!)

প্রাগে আজ কোজাগরী প্রাগে আজ জ্যোৎস্নার প্লাবন
প্রাগে আজ ধনবৃষ্টি, পুঁজি সৃষ্টি, ঘোর রাতে লক্ষ্মী আবির্ভূতা
শিশুরা আনন্দে হাসে, দেবী নিজে ঘোর আনন্দিতা!

এ বড় পবিত্র ঠাঁই
শিশুদের চোখ নাই, ঠোঁট নাই, মুখে শুধু বারকোড আছে

সানন্দে দ্যাখেন দেবী তাহাদের বারকোডে স্বর্গীয় স্ক্যানারে
আজি এই মধ্যরাত্রে কোজাগরী জ্যোৎস্না পড়িয়াছে!

 

লেনন দেয়ালের সেস্টিনা: প্রাগ

যদি এলে ত্রুবাদুর, তৃষাতুর, এ হেমন্তে প্রাগ নগরীতে
চলো যাই মালাস্ত্রানা, লেনন দেয়ালে ওই আঁকা ছবিগুলি
তোমাকে খুঁজছে আজ যন্ত্রণায়, গ্রাফিতির ভাষা তুমি জানো।
সূর্যমুখী ফুল তার দেশ, তার স্বাধীনতা নীলাভ আকাশ
এইটুকু তার চাওয়া, আজ সে বিপন্ন মেয়ে রক্তস্রোতে ভাসে
লেনন দেয়ালে প্রাগে, ত্রুবাদুর সেই আজ তোমার সেস্টিনা।

খাঁচার চাবিটি খুলে পাখিগুলি উড়ে গেলে তাদের সেস্টিনা
গেও তুমি ত্রুবাদুর, এ দেয়াল গান গায় প্রাগ নগরীতে
স্মিত হাসি লেননের: যুদ্ধ নয় যেন শুধু ভালবাসা ভাসে
ভালবাসা নেই তাই ভালবাসা খুঁজেছিল এই ছবিগুলি
উড়ে যায় বোমারু বিমান আর ক্ষেপণাস্ত্রে ঢেকেছে আকাশ
ধ্বংস হলে সাঁজোয়া গাড়িটি তবু সূর্যমুখী ফুটেছিল জানো।

এইসব ঘটমান বর্তমান ত্রুবাদুর তুমি ঠিক জানো
দেয়াল লিখনগুলি ঠিকঠাক পড়ে নেয় তোমার সেস্টিনা
রক্তেভাসা মেয়েটিকে ভাষা দিও, দিও তার অর্ধেক আকাশ
সে আকাশ গাঢ় নীল, নীলাকাশে ভালবাসা তার নগরীতে
দেয়াল লিখন যারা পড়েনি বা দ্যাখেনি অমোঘ ছবিগুলি
তাদের দিগন্তে যেন ত্রুবাদুর তোমার সেস্টিনা আজ ভাসে।

লেনন দেয়ালে আজ সুরঞ্জিত, যৌবনের জলোচ্ছ্বাসে ভাসে
নিষিদ্ধ গ্রাফিতিগুলি প্রথম আঁকার গল্প তুমিও কি জানো
ত্রুবাদুর? লুকিয়ে চুরিয়ে আঁকা প্রাথমিক সেই ছবিগুলি?
তারা কি সোশিওপ্যাথ? গাইবে তাদের গান তোমার সেস্টিনা:
সেসব মাতাল যারা রাতভর এঁকেছিল প্রাগ নগরীতে?
দিন বদলায়: আজ অচেনা তারায় ভরা নতুন আকাশ।

ছবির ওপরে ছবি, নতুন গ্রাফিতি ঢাকে পুরোনো আকাশ
বেলেল্লা রঙের পাত্র ছবি মোছে, নীলাকাশে পুরুষাঙ্গ ভাসে
দেয়াল এবার শেষ, কারা যেন লিখেছিল প্রাগ নগরীতে
আবার ছবির ভিড়ে লেননের পুনর্জন্ম তুমি তো তা জানো
ত্রুবাদুর, এবার নতুন সুরে গাইবে না নতুন সেস্টিনা?
যুদ্ধ নয়, দানবের ধ্বংস চেয়ে ওরা যে এঁকেছে ছবিগুলি।

ত্রুবাদুর এসো আজ গান করি, গেয়ে যাই, ওই ছবিগুলি
লেনন সেস্টিনা দিয়ে এসো আজ ভরে দিই সমস্ত আকাশ
জগতের আলো চেয়ে, ভালো চেয়ে ত্রুবাদুর তোমার সেস্টিনা
নক্ষত্র সফরে যাক, মহাপৃথিবীর ছবি এ দেয়ালে ভাসে
আমাদের স্বপ্ন আছে তুমি তাকে গানে গানে ভরে দিতে জানো
তোমার সেস্টিনা লেখো লেনন দেয়ালে এই প্রাগ নগরীতে।

লেনন দেয়ালে লেখা সেস্টিনা, গ্রাফিতি কিংবা অন্য ছবিগুলি
ফুটিয়েছে সূর্যমুখী, উন্মুখর নগরীতে বিস্তৃত আকাশ
নীলাভ প্রশান্তি ভাসে, ত্রুবাদুর তাকে চিনি, তুমি তাকে জানো।।

 


*ছবিগুলি কবির তোলা

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4650 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...