ব্যাগপ্যাক হিরোজ

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

ব্যাগপ্যাক হিরোজ— নামটা চেনা? বাল মিত্র মণ্ডল? তাও সম্ভবত নয়। তার কারণ নামগুলো, ঘটনাগুলোর আয়ু এক বছর পেরোয়নি, আর সবচেয়ে বড় কথা ঘটনাগুলো এলিট শহর-টাউনের বাইরে। পুনের কৈলাস সত্যার্থী চিলড্রেন্স ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ‘বাল মিত্র মণ্ডল’ নামের একটি ফ্ল্যাগশিপ সংস্থা গত মে মাসে পুনের সমস্ত বস্তি এলাকার বাচ্চাদের পড়াশুনো শেখানোর ব্যবস্থা নিয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে পড়লে নতুন কিছু নয়। তবে, চমক এখানেই, ওই সমস্ত ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়াচ্ছে কারা? আরও অনেক খুদে, কচিকাঁচা, কিশোর যারা তুলনামূলকভাবে একটু অবস্থাসম্পন্ন ঘর থেকে এসেছে। কারণ ওরা পালস চেনে। ওরা হৃৎস্পন্দন চেনে। বাচ্চাদের রাস্তার ধারে, বাসস্টপে ঘন্টাদুয়েক করে ক্লাস করিয়ে একসময় সরকারি স্কুলের জন্য যোগ্যতার জায়গায় আনা। কম কথা নয়, একেবারেই কম কথা নয়।

আর এরাই ব্যাগপ্যাক হিরোজ। শহরের ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্ট, বাসস্টপ এইসব জায়গা ধরে ধরে বস্তির ছেলেমেয়ে বা নাবালক ভিখারি— এদের টার্গেট করে পড়াচ্ছে বস্তি থেকে উঠে এসে একটু রোজগারের মুখ দেখা ঘর থেকে নির্বাচিত শিশু, কিশোর। অঙ্ক, বিজ্ঞান, হিন্দি, ইংরিজি, আঁকা, জ্ঞান, খেলা বা বেঁচে থাকার, বড় হওয়ার যাবতীয় টুকটাক জ্ঞান— একদল শিশু ছড়িয়ে দিচ্ছে আরেকদলকে। প্রতিটি পয়েন্টে থাকছে একাধিক ব্যাগপ্যাক লিডার। একজন দুজন পড়াচ্ছে, অন্য কেউ শিক্ষার্থীদের নাম, ঠিকানা, বাবা-মায়ের নাম লিখে রাখছে ডেটাবেসের জন্য। তাদের সহায়তায় থাকছেন সংস্থার প্রাপ্তবয়স্ক একজন। অদ্ভুত নিয়ন্ত্রিত এবং পরিকল্পিত উপায়ে এগোচ্ছে বাল মিত্র মণ্ডল। মোট নটা জনবহুল জায়গা চিহ্নিত করে ৬৩ জন হিরো প্রতিদিন দু ঘণ্টা করে আলো দেখাচ্ছে পুনে শহরে।

মোটামুটি পুনে থেকে শুরু হলেও বাল মিত্র মণ্ডলের এই শাখা বাড়ছে বাকি দেশে। ২০১৮ সালে শূন্য থেকে শুরু করে প্রায় নব্বই হাজারের কাছাকাছি সদস্য সংখ্যা এখন। ছড়িয়ে পড়ছে শহরতলি বা গ্রামেও।

 

সম্প্রতি রাজধানী দিল্লি শহরে বাল মিত্রের এই উদ্যোগ দেখা গেল। হলুদ টিশার্ট পরা প্রায় জনা চল্লিশেক শিশু কিশোর রাজধানী শহরের বিশেষ কিছু জায়গা যেমন নেহেরু প্লেস বাসস্ট্যান্ড, মতিবাগ মেট্রো স্টেশন, মহীপালপুর বাইপাস বা ছতরপুরের খাজান সিং পার্ক— এই আলোময় উন্মুক্ত ক্লাসে প্রায় দেড়শোজন বস্তিবাসী ছেলেমেয়েকে দেখা যাচ্ছে স্লেট, খাতাপেন্সিল হাতে বসে থাকতে। গায়ে ছেঁড়া জামা, প্যান্ট। মুখে হাসি।

দিল্লির অসম্ভব গরমে ১১টা থেকে ১টা— সবচেয়ে সেনসিটিভ সময়কেই বেছে নিয়েছে ব্যাগপ্যাক হিরোরা। কারণ এই সময়ে এমনিতেই ওরা, অর্থাৎ এই খুদে ছাত্রছাত্রীরা বাইরেই থাকে। বস্তির চারপাশে ঘোরে, কেউ ভিক্ষে করে। তাই, এই সময়টাই থাকুক। প্রতি মুহূর্তে কড়া নজরদারি ওদের। কারণ এক মুহূর্ত আলগা হলেই ছাত্রদের অনেকেই উঠে পালাচ্ছে, এতদিনকার মন থেকে, ব্যবস্থা থেকে সরে আসতে সময় লাগছে বড়। তাই, দু ঘন্টা করে প্রায় প্রতিদিনের এই সিলেবাস, এই কোর্স প্রায় নিশ্চিত। অন্তত দু ঘণ্টা করে ওদের সঙ্গে খেললেও তার ভেতর কিছু পড়াশুনোর কথা উঠে আসবে, যা পরবর্তীকালে আলো দেবে ওদের।

এই লক্ষ্যের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় উপকরণ অর্থাৎ খাতাপেন্সিলের আর্থিক দায়িত্ব চিলড্রেন্স ফাউন্ডেশন সংস্থার। ছোট ছোট লিডারদের শুধু সময় দিতে হবে, এবং তা তারা দিচ্ছে প্রাণ ঢেলেই। এ অন্যরকম এক আলোর গল্প, সন্দেহ নেই।

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4666 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

2 Comments

  1. মনটা ভরে গেল ব্যাগপ্যাক হিরোদের কথা জেনে। ওদের জন্য হার্দিক শুভেচ্ছা ভালোবাসা।

আপনার মতামত...