ব্রিজ নড়ছে, টনক নড়ছে না

দেবব্রত কর বিশ্বাস

 

রোজ কত কিছু ভেঙে যায়। হাত, পা, প্রেম, বিশ্বাস। আমরা মনে মনে হাহাকার করি। বালিশ চাপড়াই। তারপর দোষ দিতে শুরু করি। একে ওকে তাকে। নিজেকেও। না না, নিজেকে সেভাবে না। অন্তত প্রকাশ্যে তো নয়ই। আড়ালে বড়জোর ভেবে দেখি। কিন্তু এই ভেঙে পড়াটা যদি ব্যক্তিগত সীমানা ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে? আর রাস্তা থেকে যদি ব্রিজে উঠে পড়ে? তবে? আর ব্রিজ মানেই এখন ভেঙে পড়ার ভয়। মানে দিব্য সুস্থ-সবল একটা ব্রিজ দিয়ে আপনি হেঁটে যাচ্ছেন আপনার প্রিয়জনের হাত ধরে, কথা নেই বার্তা নেই দুম করে হাওয়ায় ভেসে পড়লেন, কারণ আপনার পায়ের তলায় রাস্তা নেমে যাচ্ছে হু হু করে। আপনিও নামতে শুরু করলেন। ছিটকে পড়লেন। মারাও গেলেন। ব্যস। আপনি তো ‘নেই’ হয়ে গেলেন, আপনার আর কিছু গেল এল না। আপনার পরিবার কিছু টাকা পেল। মিডিয়ার দুদিনের হইচই পেল। মন্ত্রীদের সমবেদনা পেল। তবে সবচেয়ে বড় কী পেল জানেন? ট্রমা! কারণ তারা জানতেই পারল না আপনি কেন চলে গেলেন? আপনার চলে যাওয়ার পেছনে কার দায় সবচেয়ে বেশি। কারণ তাদের জানতে দেওয়া হবে না। মিডিয়া দুদিন পরে অন্য খবরে চলে যাবে। সামনে পুজো আসছে!

পূর্বস্মৃতি

উল্টোডাঙার ব্রিজ ভাঙার তিন বছর পর ঘটেছিল ঘটনাটা। ৩১ মার্চ, ২০১৬ দিনটা অসংখ্য পরিবারের কাছে ট্রমা হয়ে আছে আজও। ভরদুপুরবেলা কলকাতার পোস্তার মতো ব্যস্ত অঞ্চলে ভেঙে পড়েছিল বিবেকানন্দ উড়ালপুল। এমন একটি উড়ালপুল যার কাজ বছরের পর বছর ধরে চলেছে, চলতেই থেকেছে। এমন একটা উড়ালপুল, যার কাজ বছরের পর বছর ধরে বন্ধ ছিল, বন্ধই হয়ে ছিল। এমন একটি উড়ালপুল, যা কোনও নিয়ম না মেনে রাস্তার পাশে থাকা বাড়ির বারান্দার ঠিক উপর দিয়ে চলে যায়। সে যাই হোক, সেদিন অফিসে কাজ করছিলাম, হঠাৎ খবর এল, ব্রিজ ভেঙে পড়ছে। অফিসের টিভি চালিয়ে দেখে থম মেরে গেলাম। একটা ব্যস্ত রাস্তার উপর দুম করে ভেঙে পড়ল একটা ব্রিজের কিছুটা অংশ। হইচই পড়ে গেছিল সারা কলকাতা জুড়ে। সারা দেশজুড়েও। কত যে মানুষ চাপা পড়েছিলেন তার ইয়ত্তা নেই। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ছিল সম্ভবত ২৭। আর আমরা সবাই জানি এই ‘সরকারি হিসেব’ ব্যাপারটা কতটা গোলমেলে। শুধু কি তাই, কত যে মানুষ গুরুতর আহত হয়েছিলেন! প্রচুর রক্তের জোগান দেওয়া প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কলকাতা শহরের সহনাগরিক বন্ধুরা। ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে লাইন পড়ে গেছিল রক্ত দেওয়ার জন্য। চরম বিপর্যয়ের দিনেও সে ছিল এক আশ্বস্ত হওয়ার মতো দৃশ্য। তখন এই ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার সময় বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছিল। যেমন সিন্ডিকেট ব্যবসা, টাকাপয়সার ভাগ বাটোয়ারা। শোনা গেছিল, ব্রিজ বানানোর জন্য যে মেটেরিয়াল লাগে, যেমন সিমেন্ট, রড ইত্যাদি সব কিনতে হবে সিন্ডিকেটের থেকে। আর তার গুণগত মান ভালো ছিল না। আমরা জানতে পেরেছিলাম, ঠিকাদার সংস্থার লোকেরা ইঞ্জিনিয়ারকে ব্রিজ ভেঙে পড়ার আগের রাতে ঢালাইয়ের পদ্ধতি নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। বলেছিলেন ব্রিজের গার্ডার ভেঙে পড়তে পারে। ইঞ্জিনিয়ার কথা শোনেননি। বহুদিন ধরে অসমাপ্ত হয়ে থাকা ব্রিজটি শেষ করার জন্য চাপ ছিল কি সেই ইঞ্জিনিয়ারের উপর? ফলত যা হওয়ার তাই হল। ঢালাই দেওয়ার পরের দিন ভেঙে পড়ল ব্রিজ। অকালে চলে গেলেন বহু মানুষ। আমরা অসহায় হয়ে দেখেছিলাম, ব্রিজের তলায় চাপা পড়া সেই মানুষটাকে, যিনি কিছুতেই বেরোতেই পারছিলেন না, হাত বাড়িয়ে জল চাইছিলেন। আমরা অসহায় হয়ে দেখলাম সেই দুটো ছেলেকে, যারা ব্রিজের ঠিক পাশেই রাস্তা পার হবে বলে দাঁড়িয়েছিল। ব্রিজ ভেঙে পড়ার দৃশ্য দেখে তারা ছুটে পালিয়ে গেছিল। কিছু সেকেন্ডের এদিক ওদিক হলেই ওরাও তো ‘নেই’ হয়ে যেত। আর ট্রমা জমত তাদের পরিবারের মনেও। আমার অফিসের বস ওই ব্রিজ ভেঙে পড়ার ঠিক আধঘণ্টা আগে নিচ দিয়ে গাড়িতে করে এসেছিলেন। ওই, সেকেন্ড-মিনিক-ঘণ্টার এদিক ওদিকে আমাদের বেঁচে থাকা মরে যায় ঝুলে থাকে, ব্রিজের মতো। কিন্তু তার দোষ? অনেক নাম এসেছিল। তাদের নাম কী? তারা শাস্তি পেয়েছে? তাদের নামগুলো তখন মনে ছিল। এখন আর নেই। তখন কি ট্রমাও ছিল? আমরা যারা দূর থেকে দেখলাম ট্রমা কি তাদের হয়নি? হয়েছিল। কেটে গেছে এখন। মিডিয়া, সরকার, উৎসব ইত্যাদি আমাদের সাহায্য করে ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতে। এসেছি কি?

বর্তমানের আতঙ্ক

একে তো নামেই বেহালা। যানজট, ব্যস্ততা, জল জমা, হইচই, ধাক্কাধাক্কি সব মিলিয়ে বেহাল আর বেহালা সমার্থক। এটা মোটামুটি সবাই জানে। উত্তর এবং মধ্য কলকাতার সঙ্গে, বেহালা ঠাকুরপুকুর, জোকা, ডায়মন্ডহারবার এলাকার মানুষের যাতায়াতের মূল কানেক্টর হল মাঝেরহাট ব্রিজ। পাশেই গুরুত্বপূর্ণ মাঝেরহাট রেলস্টেশন। সম্ভবত ১৯৬৪ সালে তৈরি হয়েছিল এই ব্রিজ। মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। এই ফাঁকে ব্রিজ স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়েছে। সাইড দিয়ে ব্রিজ থেকে নামার সিঁড়ি ভেঙে পড়েছে। সেই সিঁড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্রিজের দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে, সেই ফাটলে গাছ জন্মেছে। গাছ তুলে ফাটলের উপর দিয়ে প্লাস্টার করা হয়েছে। কয়েক বছর পরে আবার ফাটল হয়েছে। তারপর উপর থেকে নীল আর সাদা রঙে সেজেছে এই ব্রিজ। তার বৃদ্ধ শরীর দিয়ে পারাপার করে গেছে অসংখ্য বাস, ট্যাক্সি সহ ভারি ভারি যানবাহন। সবাই জানতে এই ব্রিজ দুর্বল হয়ে গেছে, যে কোনওদিন ভেঙে পড়তে পারে। তারাতলার দিকের অংশে নিচে এক জায়গায় ঠেকনো অবধি দেওয়া আছে। কিন্তু আমরা যারা এই ব্রিজের উপর দিয়ে, তলা দিয়ে কিংবা আশপাশ দিয়ে নিত্য যাতায়াত করি, তারা কোনওদিন সেভাবে সংস্কার হতে দেখিনি এই ব্রিজকে। বছরখানেক আগে খবরে দেখেছিলাম টাকা এসেছে এই ব্রিজের সংস্কার করার জন্য। আশায় বুক বেঁধেছিলাম আমরা। বয়স্ক এবং রোগে জর্জরিত এই ব্রিজে এবার ওষুধ পড়বে। কিন্তু কোথায় কী? সেই টাকা কোন ডাক্তার বা হাকিম খেয়ে নিল কে জানে? ফলে ফাটলের দুরারোগ্য অসুখে জীর্ণ ব্রিজের শরীর শেষ পর্যন্ত ভেঙেই পড়ল। তবু তো কপাল ভালো, ট্রেন লাইনের উপরে চলন্ত ট্রেনের উপর পড়েনি। পড়েছে খালের উপর। ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু সরকারি গাফিলতিতে যদি একজন মানুষেরও প্রাণ যায়, তাকে কোনওভাবেই ছোট করে দেখা যায় না। আমার পরিবার এবং এলাকার মানুষ ওই ব্রিজের উপর দিয়েই দিনে দুবেলা করে যাতায়াত করতেন, আমি দুবেলা ট্রেনে করে ওই ব্রিজের নিচ দিয়ে আসা যাওয়া করতাম। হতেই পারত আমি বা আমরা আজ বেঁচে থাকতাম না। আর এই ব্রিজ ভেঙে পড়ার পরেই শুরু হল আসল খেলা। সরকারপক্ষ থেকে ঘোষণা করা হল, সম্ভবত মেট্রোর কাজের জন্য ভাইব্রেশনে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ সেই অভিযোগ নাকচ করল। সরকার গেল রেগে। কাজ বন্ধ করে দেওয়া হল মেট্রোর। যে বেহালার মেট্রোর কাজ ঢিমেতালে বলতেও গতিকে অপমান করা হয়, সেই মেট্রোর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে গেল। কেন? কারণ তারা অস্বীকার করে বলেছে যে তাদের কারণে ব্রিজের কোনও ক্ষতি হয়নি। চমৎকার। একে তাকে দোষারোপ করতে করতে প্রশাসন নড়েচড়ে বসল। ‘উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দেওয়া হল। ব্রিজ পরীক্ষা করা হবে। সারানো হবে নাকি পুরো ভেঙে দিয়ে নতুন করে আবার বানানো হবে সেই নিয়ে আলোচনা চলছে। সবই হচ্ছে, কিন্তু ভেঙে যাওয়ার পর। আমাদের দেশ এক আজব বস্তু, যেখানে ভেঙে যাওয়ার পর কমিটি বসে, যাতে না ভাঙে তার জন্য কোনও তদন্ত কমিটি গঠন হতে আমি দেখিনি। সরকার ঘোষণা করল, ২০টি ব্রিজের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে। আশ্চর্যের ব্যাপার দেখুন, ব্রিজ ভাঙার আগে এসব কেউ ভেবে দেখেনি। বদলে নীল-সাদা রঙ করা হয়েছে। ব্রিজের উপর রাস্তায় নতুন পিচের প্রলেপ লাগানো হয়েছে। সেদিন সদ্য আলাপ হওয়া একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বললেন, ব্রিজের উপরে রাস্তায় পিচের প্রলেপ লাগানোর নির্দিষ্ট মাপ আছে। তার চেয়ে বেশি পিচ লাগালে ব্রিজের উপর অহেতুক চাপ পড়ে। এসব তো আমরা সাধারণ মানুষরা বুঝি না। ভাবি, আহা কী দারুণ কাজ চলছে, ব্রিজের উপরের রাস্তায় নতুন পিচ দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই আমাদের বোকা বানায় সরকার। যেরকম সৌন্দর্য বর্ধনের নামে ব্রিজের উপর বিরাট বিরাট টবে গাছ লাগানো হয়েছিল। মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পর সেই টব সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। কেন? এখন মনে পড়েছে যে এভাবে টবে গাছ লাগালে ব্রিজে চাপ পড়তে পারে? আগে থেকে পূর্ত দপ্তরের শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়াররা জানতেন না? এবার বলুন, যে ২০টি ব্রিজের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে বলে ঘোষণা করেছে সরকার, সেই ব্রিজগুলির মধ্যে কোনও একটি ভেঙে পড়লে সেখানে কি আর সরকারের কোনও দায় থাকবে না? শিয়ালদা ফ্লাইওভারের ছবি খুব ঘুরছে আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেখেই ভয় লাগছে। শিয়ালদা ফ্লাইওভার ভেঙে গেলে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু অনিবার্য। কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? টিভিতে দেখানো হচ্ছে, জেলায় জেলায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য ব্রিজ মারাত্মক অবস্থায় আছে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করছে মানুষ। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে বলে বলছি, কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুরের দিকে যেতে জলঙ্গি নদীর উপর রাষ্ট্রীয় সড়কের উপর যে দ্বিজেন্দ্র সেতু, সেটি নিশ্চিতভাবে যে কোনওদিন ভেঙে পড়বে, এতটাই ভয়ানক অবস্থায় আছে। এই ব্রিজ ভেঙে গেলে গোটা অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। ন্যাশনাল হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ কেন কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে না? রাজ্য সরকারের আধিকারিকরাই বা তাদের চাপ দিচ্ছেন না কেন? একটা সেতু ভেঙে যাওয়া মানে আরও কী কী উৎপাত শুরু হয় তার ধারণা আছে প্রশাসনিক ব্যক্তিদের?

ঘুরপথ ও বাফার টাইম

বাড়ির গুরুজনেরা ছোটদের প্রায়ই বলে থাকেন “হাতে সময় নিয়ে বেরিও”। এখন বলতে হচ্ছে “হাতে কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে বেরিও”। মানে ধরা যাক আপনি বেহালা ট্রাম ডিপো থেকে মোমিনপুর যাবেন বলে বাসে উঠলেন। তারাতলা পেরিয়ে মাঝেরহাট ব্রিজ পেরোলেই আপনি পৌঁছে যেতে পারতেন। সময় লাগত বড় জোর পনেরো মিনিট। এখন আপনার বাসটিকে তারাতলা থেকে বাঁদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। আপনার বাস আপনাকে নিয়ে যাবে ব্রেসব্রিজ পেরিয়ে হাইড রোড, রিমাউন্ট রোড, খিদিরপুর নিয়ে যাবে। সেখান থেকে আপনাকে আবার মোমিনপুর যেতে হবে। সময় লাগবে খুব কম হলেও দেড় ঘণ্টা। কারণ হাইড রোড সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার নামে যেটা আছে সেটাকে রাস্তা না বলে জলাজমি বলা ভালো। ব্রেসব্রিজের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন করা না হয় ছেড়েই দিলাম। আপনাকে ওই রাস্তা দিয়েই বাধ্যত যেতে হবে। অথবা আপনাকে তারাতলা থেকে অটো করে চেতলার কাছে আলিপুর মোড়ে নামতে হবে। সেখান থেকে আবার মোমিনপুর যেতে হবে। খরচ? তারাতলার অটোওয়ালারা খুব উদাসীন ভঙ্গিতে আপনার কাছে দ্বিগুণ, তিনগুণ ভাড়া চেয়ে বসবেন। আপনি দিতে রাজি না হলে অন্য কেউ ঠিক দেবে। কারণ তার হয়তো না দিয়ে কোনও উপায় নেই, তাকে তাড়াতাড়ি পৌঁছতেই হবে গন্তব্যে। কেউ বারণ করার নেই। ওদিকে টাইমে পৌঁছতে না পারলে অফিসে আপনার লেট কাটা যাবে। মাসের শেষে মাইনেও কাটা যেতে পারে। মানে ব্রিজ ভাঙল মাঝেরহাটে, আপনার টাকা কম পেলেন আপনি! ভাবুন, কী আজব দেশে জন্মেছেন আপনি!

নতুন নাটক এবং মৃত্যুকৌতুক

মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর ফেসবুকে একটি পোস্ট অনেকেই দেখেছেন, সেখানে লেখা আছে সরকারের সমালোচনা করবেন না, কার দোষ খুঁজে দেখতে হবে না, ফেসবুকে বিশ্লেষণাত্মক পোস্ট দেবেন না, উদ্ধারকার্যে সাহায্য করুন এবং বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ান। মূলত সরকারের অন্ধ সমর্থকরা এমনটা করেছেন। কিছু মানুষ না বুঝেও করেছেন। এবার একটু বুঝিয়ে বলি। এই যে বলছেন উদ্ধারকার্যে সাহায্য করতে, কীভাবে? দুর্ঘটনা ঘটার কিছু সময় পর থেকে কাউকে তার দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশেই যেতে দেওয়া হয়নি। যেতে দেওয়া ঠিকও না। অকারণে ভিড় বাড়ালে উদ্ধারকার্যে পারদর্শী দলের কার্যে বিঘ্ন ঘটতে পারে। পোস্তার মতো ক্ষয়ক্ষতি এবার হয়নি বলে রক্তের প্রয়োজন পড়েনি বেশি। তাই এসব বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার কী মানে? এসব হল মানবিকতার আড়ালে থাকা দোষ লুকোনোর ছল। এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল আর মানুষ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কথা বলবে না? প্রশ্ন তুলবে না? আলবাত বলবে। যদিও এসবে আমাদের অভ্যেস জন্মেছে। তাই আমরা কৌতুক করতে শিখেছি। তাই নানান ‘মজার’ মিম-এ ভরে গেছে ফেসবুক। সেখানেও আমরা নিজেদের ক্রিয়েটিভিটি দেখাচ্ছি। নিজেকে সারকাজম-প্রিয় প্রমাণ করতে করতে দেখছি, উত্তরবঙ্গের ফাঁসিদেওয়ায় ভেঙে পড়ল আরেকটা ব্রিজ। আরও হয়তো কয়েকশো ব্রিজ ভেঙে পড়ার অপেক্ষায় আছে। তবু আমরা প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামব না। বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন থেকে কিছুই শিখব না। আমরা শুধু কমিটি গঠন হতে দেখব। আমরা আবার মিম বানাব। আমরা আবার হাতে বেশ কয়েক ঘণ্টা বাফার টাইম নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোব। খুব বেশি হলে, বড় একটা লেখা লিখব প্রতিবাদ করার ভঙ্গিতে, এই যেমন আমি করলাম। এসব করতে করতেই একদিন ছবি হয়ে যেতে পারি আমিও। আর আমার পরিবার হয়তো ৫ লক্ষ টাকা আর বাড়তি উপহার হিসেবে ট্রমা পাবে।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4665 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

  1. আশঙ্কা আর অসহায়তার বোধটুকু এখন আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে৷ কারণ, একে অপরকে দোযারোপ করতে অভ্যস্থ রাজনীতিজ্ঞদের যে শুভবুদ্ধি জাগ্রত হবে, এমন আশা এখানে এখন ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর৷

Leave a Reply to Satyabrata Ghosh Cancel reply