সমুদ্র-হৃদয়

আত্রেয়ী কর

 

আমার প্রথম সমুদ্র-দর্শন বছর তিনেক বয়সে। পুরীতে। সে কথা মনে নেই আমার। তারপর যখন বয়স পাঁচ, তখন ‘তাজমহল’ ছবি-খ্যাত শ্রী প্রদীপকুমারের ছেলের বিয়ে উপলক্ষে বম্বে যাওয়া হয়। সে সফরের ব্যাপারে চারটে ঘটনা মনে আছে, ট্রেনে যাওয়ার সময় আমাদের দুই বোনেরই মাম্পস হয়, সঙ্গে প্রচণ্ড জ্বর। গোটা বিয়েবাড়ি কাটে মাথায় স্কার্ফ জড়িয়ে, ফোলা গাল নিয়ে। মনে আছে জুহু বিচের বালির উপর দল বেঁধে হাঁটা, বিয়েবাড়িতে ‘দাদামণি’ অশোককুমারের পাশে আমাকে কায়দা করে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে বাবার ধরা পড়ে যাওয়া, ও দাদামণির বিনয়, এবং সর্বশেষে একদিন ‘১০০ ডেজ’ সিনেমার শুটিং দেখতে গিয়ে মাধুরী দীক্ষিতকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যাওয়া। সমুদ্রের কথা বিশেষ মনে নেই। ঠিক পাঁচ বছর পর, বাবাকে কর্মসুত্রে মাদ্রাজ (তখনও চেন্নাই হয়নি) গিয়ে থাকতে হয় বেশ কয়েকদিন। মা, বোন আর আমিও গেছিলাম গরমের ছুটিতে (হ্যাঁ গরমের ছুটিতেই!) বাবার সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসব বলে। গেছিলাম দুসপ্তাহের জন্য, প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হওয়ায়, ফিরেছিলাম সাতাশ দিন পর। সে অন্য গল্প।

এত কথা বলার কারণ, বাবার হাত ধরে সমুদ্রের ঢেউ দেখতে দেখতে বিশাল সেই জলরাশির প্রতি একটা বিশেষ টান অনুভব করার সেটাই আমার প্রথম স্মৃতি। সেটা ১৯৯৫ সাল। সমুদ্রের সঙ্গে তারপর আমার দীর্ঘ বিচ্ছেদ, বেড়াতে যাওয়াই বন্ধ ছিল অনেক বছর। তারপর আমার আবার সমুদ্রের সঙ্গে দেখা হয় ২০০৮-এ। ততদিনে আমার জানা হয়ে গেছে যে আমার নামে একটা নদী আছে উত্তরবঙ্গে, এবং সেই কারণেই আমার মনে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে সমুদ্রের প্রতি আকর্ষণের এটাই হয়ত সবথেকে বড় কারণ। সেসব হয়ত খুব ছেলেমানুষি কথা।

তবে যত বয়স বাড়ে, তত বুঝতে পারি, যে সমুদ্র আমায় বিশেষভাবে টানে। সমুদ্রের ধারে চুপ করে বসে থাকতে পারি আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সমুদ্রে নামলে জল থেকে উঠতে ইচ্ছে করেনা। সবান্ধব মজা করার জন্য শুধু নয়, একদম একা একাই। সমুদ্র কথা বলে আমার সঙ্গে। আমার কথা বোঝে। দেখেছি শুধুই বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর। দেখেছি সবার মতই পুরী, দিঘা, তাজপুর, শঙ্করপুর, উদয়পুর, মন্দারমনি, মুম্বই, চেন্নাই, গোয়াতে। তবু প্রত্যেক দেখাতে অন্যরকম লেগেছে সমুদ্রকে। যেন মনের অবস্থার সঙ্গে মিলে গেছে সমুদ্রের রূপ। আমার ক্যামেরায় বন্দি করার চেষ্টা করেছি কিছু।

 

সমুদ্র-নীল

তখনও বেড়াতে যাওয়ার আগে এত ভাবতে হত না। গোয়া, বাটারফ্লাই আইল্যান্ড, ২০১৯
সমুদ্র উঁকি মারে যখন। কাবো ডি রামা ফোর্ট, গোয়া ২০১৯
চাপোরা ফোর্ট থেকে দেখা ভাগাতোর বিচ। গোয়া ২০১৯

সূর্যাস্তের রং

মাকে নিয়ে প্রথম বেড়াতে যাওয়া। উদয়পুর, ২০১২
রঙের ছটা। দিঘা, ২০১৩
ছায়া-মানুষ। মুম্বই, ২০১৯
সূর্যাস্তের রং। কোলা বিচ, গোয়া ২০১৯

ভালোবাসার সমুদ্র

একসঙ্গে সমুদ্রকে চিনে নেওয়া। মন্দারমনি, ২০১৫​
প্রেমে-অপ্রেমে। মন্দারমনি, ২০১৫​
ব্যস্ত জীবন থেকে কিছু মুহূর্ত চুরি করে। মুম্বই, ২০১৮
এক ছুটে বাবার কাছে। কালাঙ্গুটে বিচ, গোয়া ২০১৯

 

সমুদ্রে একা

সমুদ্র-মন। মন্দারমনি, ২০১৫​
সাইকেল। তাজপুর, ২০১৮
এভাবেই বসে থাকা যায়। কোলা বিচ, গোয়া ২০১৯
অতিমারি আমাদের বড় একা করে দিয়েছে। পুরী, ২০২০

 


*সমস্ত ছবি লেখকের তোলা

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4661 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...