উইক এন্ড

অপরাজিতা ভট্টাচার্য

 

‘চিনতে পারছেন মাসিমা? আমি দিগন্তের বউ, অপালা’।

অশীতিপর মহিলার মুখাকৃতিতে অপালা বুঝতে পারে, তিনি মনে করতে পারছেন না কিছুই।

‘দিগন্তকে মনে পড়ে? দিগন্ত দে। আপনার বড় মেয়ে নীলার কলেজের বন্ধু। আপনাদের বাড়িতে দিগন্তের খুব যাতায়াত ছিল একসময়। আপনাকে নিয়ে নীলা আমাদের বিয়েতেও এসেছিল। আমি কিন্তু ঠিক চিনেছি আপনাকে। আমাদের বিয়ের অ্যালবামে ছবি আছে আপনার আর নীলার।’ অপালা স্মৃতিসূত্রে টান দেয়।

‘তুমি দিগন্তের বউ? না মা। তোমার মুখ, নাম কোনটাই মনে নেই। তবে দিগন্তের মত অমন হীরের টুকরো ছেলেকে কি ভোলা যায়? অমন শান্ত, ভদ্র আর বিদ্বান ছেলে লাখে একটা মেলে গো মা। আমার মেয়ে নীলার বাড়ি কাছেই। ডাক্তার বাবুর শুরু করতে দেরি হবে দেখে আমাকে বসিয়ে রেখে জামাইকে খেতে দিতে গেছে।’

একটা তুচ্ছাতিতুচ্ছ সোমবারের সকাল। মামনি পায়চারি করছে একটা মেটে স্যাঁতা গলিতে, মোবাইলে ওপাশের জনকে কিছু একটা বোঝাতে চাইছে ক্রমাগত। হাওয়ায় শিউলি গন্ধের হালকা রেশ। শেষ শরতের মোলায়েম রোদেও তেমন আলো নয় মামনির মুখ। দিগন্ত আর অপালার মেয়ে মামনি। বাইশ বছরের মামনির বয়সের উচ্ছ্বলতা কম। হাড্ডিসার চেহারায় কোটরে ঢোকা দীঘল চোখ। আবেগ উপচায় না চোখে, ঠোঁটে। দিগন্তের ধাত। প্রগলভ অপালার বিপরীততে তার মেয়ে মামনি।

যে বাড়িটার একতলার ঘরে অপালা আর নীলার মা বেঞ্চে বসে আছে সেটা এক কার্ডিওলজিস্টের বাড়ি। বাড়িটার পাশের গলির শিউলি গাছ তলায় মামনি ফোনে ব্যস্ত। মাকে লুকিয়ে ফোন! না এখন তার সে বয়স নয়। আসলে মাকে সে জানাতেই চায় না তার সামান্যতম তোলপাড়। রিটায়ার করার পর নিজেকে ফোনে, কিটি পার্টিতে, চ্যাট বক্সে ব্যস্ত রাখে অপালা। মায়ের সেই ব্যস্ততায় নিজের যে কোন সমস্যাকেই মামনির ইনট্রিউডার মনে হয়। মামনির পাঁচ বছরের জন্মদিনের দুদিন পরেই দিগন্ত মারা যায়। তখন থেকেই ধীরে ধীরে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে। অপালাকে জাপটাতে পারে না মামনি।  প্রয়োজন ভিত্তিক খুব কেজো কিছু আদান প্রদান ছাড়া অপালা কোন কিছুই কানে তোলে না।

অপালাকে বড় যত্নে গড়েছেন ঈশ্বর। এখনও যথেষ্ট মোহময়ী এবং অপালা সচেতনও। ষাটোর্ধ অপালা মাপের খাওয়া, মর্নিং ওয়াক, যোগ ব্যায়াম, লাফিং ক্লাস, পার্লারের রুটিনে আলসেমি করে না। তার ছাপ আছেও তার চেহারায়, বয়স তেমন ছোবল মারে নি। শিফন শাড়ি ছাড়া পরে না অপালা। দেহসৌষ্ঠব ফুটে ওঠে। তারিফে খুশিও হয় অপালা। সেখানে পড়াশুনো আর কেরিয়ার ছাড়া মামনির কী বা আছে। দিগন্তের মতই শ্যামরঙ, লম্বা কেঠো চেহারা, পাতলা চুল, মুখচোরা স্বভাব। থাকার মধ্যে এক জোড়া অকুল চোখ। সেই চোখে মাস তিনেক আগে মজেছে দীপ। মামনির কাছে দীপ এখন একটা উইক-এন্ড চায় দীঘায়। মামনি কিছুতেই সায় দিতে পারে না। মামনির ভেতর আড়ষ্ট দিগন্তের বাস। মেলে ধরতে সময় লাগে বড়।

এদিকে সামনের উইক-এন্ডটার জন্য দীপ অস্থির হতে থাকে। দীপকে ফোনে নিজের জড়তার কথাই বোঝাতে চেষ্টা করছিল মামনি। প্রায় দুবছর কলেজে চাকরি হয়ে গেল তার। কেমিস্ট্রি পড়ায় কলেজে। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যও আছে। বেড়ে ওঠার সময়েও অপালার রাশ আলগাই ছিল। তবু এক অতি ব্যক্তিগত পরিখা আছে মামনির। না সে নিজে তা পেরোয়, না অন্য কাউকে ডিঙোতে দেয়।

দিগন্ত যখন মারা যায়, তখন মামনির পাঁচ বছর। আজ অবধি অপালা খোলসা করে দিগন্তের মৃত্যুর কারণ জানায়নি মামনিকে।

‘যে গেছে সে যাবার সময় তো আমাদের কথা ভাবেনি। কী হবে সে সব কথা জেনে।’ বার কয়েক মামনির কৌতূহলের উত্তরে এই উত্তরটাই এসেছে অপালার থেকে। মামনির মধ্যে দিগন্তের বাস। সেও পরবর্তী প্রশ্নে যায়নি। মামনি এও জানে যে সে দীঘায় যেতে চাইলে অপালার তরফ থেকে বাধা আসবে না। এটাই যে আক্ষেপ মামনির। মা কখনো জড়ায় না। মামনির ইচ্ছে করে জড়িয়ে থাকতে আষ্টেপৃষ্টে। পারে কই? আলগা বরাবর অপালা।

বাবার দেওয়া এই ডাকনামটা ছাড়া ডাকা চলবে না। দিগন্ত বেঁচে থাকতেই কড়ার করিয়ে নিয়েছিল মামনি। রোজের জীবনে ঐ ডাকটাই যা রয়ে গেছে। আর আছে বাবার সঙ্গে বিজন বিনিময়। সেই বিরলে আয়না হয় দিগন্ত। বাবা বেঁচে থাকলে দীপের প্রপোজালটা বাবাকে বলতে পারত অকপট। দিগন্ত রাজি হত না। এই পজেসিভনেসটাই যে চেয়ে এসেছে মামনি। অপালা দিতে পারে না? নাকি মামনি বুঝতে পারে না!

চেম্বারের জানালা দিয়ে গলি থেকেই মামনি দেখতে পায় অপালা বেশ বয়স্কা একজনের সঙ্গে আলাপচারিতায়। মামনি তখনকার মত ফোন শেষ করে চেম্বারে এসে ঢোকে। ডাক্তারবাবু সদ্য রোগী দেখা শুরু করেছেন। বড্ড ভিড় চেম্বারে। অপালার ডাক আসতে দেরি হবে। কলেজে আজ আর যাওয়া হবে না মামনির। কাল শেষ রাত থেকে অপালার লুজ মোশন চলছে। ঘেমেছে খুব, সঙ্গে সামান্য হাঁপ। নভেম্বর চলছে, হিমেল ঠান্ডা ভাব হাওয়ায়। এমন ঘাম স্বাভাবিক নয়। আজ সকাল হতেই মামনি তাদের পারিবারিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় অপালাকে। তিনি কিছু ওষুধ দিয়ে এই কার্ডিওলজিস্টকে রেফার করেন। কিন্তু অপালাকে দেখে মামনি বুঝতে পারছে রাতের চেয়ে ভাল। স্বাভাবিক কথা বলছে ঐ বয়স্কা মানুষটির সঙ্গে। মামনিকে দেখতে পেয়ে ডাকল অপালা।

‘প্রণাম কর। ইনি একজন দিদা। তোমার বাবার কলেজের বন্ধু নীলার মা। দিগন্ত কলেজে পড়তে এঁদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল খুব। এই দিদার বাড়ি ছিল কলেজ লাগোয়া। দিগন্ত, নীলা এবং আরও অনেকে একসঙ্গে অঙ্ক করত দিদার বাড়িতেই। দিগন্তই করাত অঙ্ক। নীলাও অবশ্য অঙ্কে খুব ভাল ছিল। শুনেছি তোমার বাবার মুখে। নীলারও দিগন্তের মত কেমিস্ট্রি অনার্স ছিল।’

প্রণাম সেরে মামনি দেখল সাদা শাড়িতে সাদা চুলের শ্রীতে জ্বলজ্বল করছেন বয়স্কা মানুষটি। ত্বকের কুঞ্চনেও এক আলাদা আভা এই দিদার।

‘বেঁচে থাক মা। সুখী হও।’ দিদার কথা শেষ হতে হতে না হতে নীলা এসে পড়ে।

‘চিনতে পারছ আমায় নীলা?’  অপালার প্রশ্নে নীলা বেশ থতমত খেয়ে যায়।

‘ও দিগন্তের বউ রে। অপালা।’ নীলার মা নীলাকে বলেন হাসিমুখে।

এত বছর পর অপালাকে দেখে নীলা স্তম্ভিত হয়।

‘তুমি এখানে! কী হয়েছে তোমার! এখনও একই রকম সুন্দর আছ কিন্তু তুমি।’ নীলা তখনও বিস্ময়ে।

‘আরে দেখ না কাল শেষ রাত থেকে লুজ মোশন। বাথরুম থেকে এসে ঘামছিলাম খুব। মেয়ে সকাল হতেই পাড়ার ডাক্তার দেখিয়ে এইখানে নিয়ে এল। মাসিমা বলছিলেন তোমরা কাছাকাছিই থাক। কেমন দেখা হয়ে গেল দেখো। এই আমার মেয়ে মামনি। কলেজে পড়ায় এখন।’

কথার মাঝেই ডাক আসে নীলার মায়ের। আরও চারজনের পরে অপালার নাম। নীলা মাস দুই পর পর মায়ের রুটিন চেক আপ করিয়ে রাখে। আজ তেমনই এসেছে। সময় লাগল না বিশেষ। ডাক্তারের ঘর থেকে বেরিয়ে এলে মামনি এগিয়ে যায় নীলার দিকে।

‘তোমার ফোন নাম্বারটা দাও না। তোমাদের বাড়ি যাব একদিন।’ নীলার ফোন নম্বর চাইছে মামনি। মামনি সচরাচর এত তাড়াতাড়ি সহজ হয় না কারও সঙ্গেই। তার ওপর আবার তুমি সম্বোধন। বেশ অবাক হয় অপালা।

‘অপালা তুমিও এসো কিন্তু মেয়ের সঙ্গে।’ ফোন নাম্বারটা মামনিকে দিয়ে মাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে নীলা।

অপালার ইসিজি, বিপি সব স্বাভাবিক। রক্ত পরীক্ষা করতে দিলেন ডাক্তারবাবু। মামনিকে রিপোর্ট দেখিয়ে যেতেও বললেন। শেষ রাত থেকে ঘুম হয় নি মা, মেয়ের। খিদে, শ্রান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে দুপুর হল। বেলা খাবার বেড়ে দিল। মামনির জন্মের সময় থেকে অপালার সঙ্গী এই বেলা। মামনির বেলাপি।

‘তোমার খাওয়া হয়ে গেলে আজ একটু চুলে বিলি কেটে দেবে বেলাপি?’ মুখ ধুতে ধুতে বলে মামনি। অপালা আর বেলা চাওয়াচাওয়ি করে। মামনি জ্বরজ্বালাতেও কখনও এমন বলেনি। চুপ করে পড়ে থেকেছে।

‘কেন দেব না?’

‘বেলাপি, তোমার বাবার কথা মনে আছে?’  চুলে বিলি কাটতে কাটতে বেলা থেমে যায়।

‘সব না হলেও আছে। হঠাৎ একথা কেন গো? তাছাড়া তোমার মা শুনলে রাগ করবে জান না?’ প্রসঙ্গ পালটাতে চায় বেলা।

মামনির দাদু দিদা মারা গেছেন মামনির জন্মের আগেই। ঠাকুমার কাছে যায় মামনি মাঝে মধ্যে। সেই ক্লাস টেন থেকেই একা যায়। কিন্তু কখনই দিগন্তের মৃত্যুর কারণ নিয়ে কোন কথা হয়নি।

‘তোমায় আজ একটা ডায়রি দেব। আমি তোমাদের পরিবারের কেউ নই। কিন্তু তোমার বাবাকে দাদা ডাকতাম। ডাকতাম শুধু নয়, দাদাই মানি। সেই জোরেই পুরুলিয়ার কোয়ার্টারে পুলিশ আসার আগে তোমার বাবার আলমারি থেকে পেয়ে ডায়রিটা রেখে দিয়েছিলাম’।

‘পুলিশ? কেন?’ বেলাপিকে থামিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করে মামনি।

‘তোমার মাও জানে না ডায়রিটার কথা। তুমি বড় হলে দেব ভেবেছিলাম। দেওয়া হয়ে ওঠেনি। আজ যখন কথা উঠল, মনে পড়ল ডায়রিটার কথা। ওটা তোমার বাবার ডায়রি। তুমি পড়ে দেখো।’ বেলা বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। মামনি জানে তার প্রশ্নের উত্তর দেবে না বেলাপি।

আজ সকালের মুখচ্ছবিতে নীলা আন্টি এসে পড়ল, সঙ্গে বাবা। বাবা যে মামনির কাছে আসে না এমন নয়। কিন্তু আজ বাবা যেন এক আজব কড়া নাড়ছে। কোন দরজা খুলতে হবে মামনিকে? ডায়রিটার হলুদপাতা ওলটাতে ওলটাতে ভাবে মামনি।

কলেজে ক্লাসের ফাঁকে নীলাকে ফোন করে মামনি। কুশল বিনিময় করে রেখে দেয়। তিন দিন পর রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে কার্ডিওলজিস্টের চেম্বারে যায় মামনি। অপালা ভাল আছে। রিপোর্টগুলোও তাই বলছে। তবু ডাক্তারবাবুর কথামত রিপোর্টগুলো দেখিয়ে নেয় মামনি। ফেরার পথে নীলার বাড়িতে ঢুঁ মারতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ইতস্তত করে।

‘কী করছ আন্টি?’ পরের দিন আবার নীলাকে ফোন করে মামনি।

‘এই একটু বিছানায় গড়াচ্ছি রে। ঘুম তো ধরে না দুপুরে। তুই কদিন ফোন করছিস এসময়। খুব ভাল লাগছে রে। আমার মেয়েটা তো আসতেই পারে না। জামাইয়ের চাকরি, নাতিদের স্কুল। একদিন অপালাকে নিয়ে আয় না রে। রাতে থাকবি। বেশ গল্প হবে।’

এমন একটা আহ্বানের অপেক্ষাই করছিল মামনি।

‘বলছ? মা অবশ্য কোথাও রাতে থাকে না। মায়ের অন্য বিছানায় ঘুম আসে না। আমি যদি একা যাই? থাকতে দেবে না?’
‘এমা সেকি কথা। যখন ইচ্ছে চলে আয়। অপালার নাম্বারটা দে। আমি বলে রাখব না হয়।’
‘আমি কি বাচ্চা মেয়ে আন্টি? তাছাড়া আমি এলে মাকে তো বলেই আসব নাকি? চল এখন রাখি। একটু বাদে বেরোব।’

খাতা দেখতে দেখতে ফাঁকা ল্যাব থেকেই ফোন করছিল মামনি। বেলা প্রায় চারটে বাজে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই কলেজ থেকে বেরোবে। পশ্চিমের রোদ পড়েছে সামনের র‍্যাকের অ্যাসিডের বোতলগুলোতে। হালকা হলুদ তরলে পড়ন্ত রোদ পড়লে বাবার চোখের রঙ মনে হয়। বোতলগুলো থেকে রোদ সরে গেলে ঘড়িতে সাড়ে চারটে বাজে। মামনি ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ে। শুক্রবারগুলোয় সাড়ে চারটেতেই বেরোয় মামনি। ব্যাগ গোছাতে গোছাতে ভাবল আজই যদি যায় নীলা আন্টির কাছে? কেমন হয়? হ্যাংলামি হয়ে যাবে।

কাল সকালবেলা বরং ফোনে বলে রাখবে আন্টিকে। সন্ধ্যেবেলা যাবে ফেরার পথে। থাকবে রাতে। রবিবার ছুটি, তাড়া নেই।

‘কাল আমি আর দীপ দীঘা যাব। রবিবার বিকেলে ফিরব।’

শুক্রবার রাতে অপালার ঘরে ঢুকে জানায় মামনি। নীলা আন্টির বাড়ি যাওয়ার কথা জানাবে না ঠিক করেই রেখেছিল। বাবার সম্পর্কিত কারও সঙ্গেই অপালা তাকে মিশতে দিতে চায় না। অপালা বরং দীপের সঙ্গে দীঘা যাচ্ছে বললে আপত্তি করবে না।

অথচ অপালা মামনির অনুমানের বিপরীতে গিয়ে কথা বলল।

‘মানেটা কী? দীপের সঙ্গে কাল সকালে দীঘা? রাতে ফিরবে না। আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। কী বলছিস উল্টোপাল্টা?’ উত্তেজিত হলে অপালার তুই সম্বোধন শুরু হয়।

‘যা শুনলে তাই মা। আমি ইকনমিক্যালি ইন্ডিপেনডেন্ট, অ্যাডাল্ট। তুমি আমায় কোনওদিন ঘেরাটোপে মানুষও করোনি। ইট’স নট এক্সপেক্টেড ফ্রম ইউ মা। গুড নাইট।’

বাকশক্তিরহিত অপালা, মেয়ের ঘর থেকে সদর্প বেরিয়ে যাওয়াটা দেখে। মামনিকে এমন ভাবে হাঁটতে দেখেনি অপালা। বেলাও ডাইনিং টেবল মুছতে মুছতে দাঁড়িয়ে পড়ে।

নিজের শোবার ঘরের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায় মামনি। রাস্তার উলটোদিকের ঝাঁপবন্ধ চায়ের দোকানের সামনেটায় একটা বুড়ি আর তার মেয়ে ঘুমোয়। মেয়েটা মামনির বয়সীই হবে। মশারির অন্ধকার ভেদ করেও মামনি দেখতে পায় দুজনের গায়ে দুজনের হাত। কার্তিকের হিমে জড়সড় হয়েই কি ওরা অত কাছাকাছি! নাকি সারা বছরই! মামনিকে স্বাবলম্বী করতে ক্লাস সিক্স থেকে একা ঘুমনো অভ্যাস করিয়েছে অপালা। ক্লাস টেন অবধি বেলাপি ঘুমতো ওর ঘরের মেঝেতে। তারপর থেকে একাই ঘুমোয় মামনি। মা কি আজ বলার জন্যই বলল কথাগুলো? নাকি মা সত্যিই চায় না, সে দীঘা যাক। ব্যালকনিতে হিমেল হাওয়ার আমেজ। মাকে উদ্বিগ্ন দেখে বেশ তৃপ্তি পায় মামনি। তাকে নিয়ে অপালার উৎকণ্ঠা বড় একটা দেখেনি যে। অপালাকে জানিয়ে নীলার বাড়ি যাবে না মামনি। দীপের সঙ্গে দীঘা যাচ্ছে জানবে অপালা।

কলেজ থেকে বেরোনোর সময়ও দোনামোনা করছিল মামনি। এভাবে যাওয়াটা ভাল দেখাবে কিনা। দিগন্তের ব্যাপারে অনেক কিছুই যে জানে না সে। আর নীলা আন্টি তাকে নিজে থেকেই যেতে বলেছে। একটা তো রাত। দিদাকেও বড় মনে ধরেছে তার। দিদার জন্য ফল, মিষ্টি, নীলার জন্য একটা শাড়ি কিনল। যা হবার হবে ভেবে অটোতে উঠে পড়ে মামনি।

নীলা পরোটা, মাংসের ঘুগনি বানিয়ে অপেক্ষা করছিল।

‘কলেজ থেকে এলি। হাত মুখ ধুয়ে আগে খেয়ে নে।’ নীলার ডাকে মামনির মনে হল না এই প্রথমবার সে এ বাড়িতে এসেছে। দিদাও এসে বসলেন ডাইনিং চেয়ারে।

‘আঙ্কল নেই?’ খেতে খেতে জিজ্ঞেস করে মামনি।

‘আরে দ্যাখ না। আঙ্কেলের দিদির শরীরটা ভাল নেই। আমাদের যেতে বলছিল। তুই আসবি দেখে আমি আর গেলাম না। আঙ্কেলকেই পাঠালাম। দূরের রাস্তা। একা ফিরবে। তাই আজ ফিরতে মানা করেছি।’

‘কথা বলা, খাবার মুখে তোলা সব দিগন্তের মত। না রে নীলা?’ মামনির দিকে তাকিয়েই বলে দিদা।

‘আমি সবে বলতে যাচ্ছিলাম মা। দিগন্তের মত সব কিছু।’ দিগন্ত এসে কতবার যে তোমার হাতের রান্না খেয়ে যেত। জানিস মামনি তোর বাবা আমার মায়ের হাতের রান্না চেটেপুটে খেত। “মাসিমার রান্না আমার মায়ের থেকেও ভাল।” তোর বাবা বলত।’

মামনি তো এই কথাগুলোই শুনতে এসেছে। কিন্তু নিজে থেকে প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে কুণ্ঠা হচ্ছিল। নীলা ভারটা নিল, সহজ হল।

‘তোর বাবাকে আমি কৃষ্ণ ডাকতাম জানিস দিদিভাই।’ মামনি ইতিমধ্যেই দিদার দিদিভাই হয়ে গেছে। খাওয়া শেষ করে গুছিয়ে বসল দিদার পাশের চেয়ারে।

‘অমন চোখ আর কোনও ছেলের আমি দেখিনি রে। নীলার পরের দুই বোনকেও গল্প করার ছলে অঙ্ক করিয়ে দিত। কলেজের অফ পিরিয়ড থাকলেই আমাদের বাড়িতে চলে আসত। তোর দাদু তখন বেঁচে। তার একটা চৌকি ছিল। সেই চৌকিটায় এসে সটান শুয়ে পড়ত। পায়ের ওপর পা তুলে সোজা শুয়ে থাকত। পা দোলাত থেকে থেকে। আমি বকতাম। নীলার সঙ্গে আরও দুটো মেয়ে আসত। ওরা এলে মাদুর পেতে বসে অঙ্ক হত। তোর বাবা অল্প ভাত খেত, অন্য কোন খাবার নয়।’

‘হ্যাঁ রে পৌঁছে অপালাকে জানিয়েছিস?’ মায়ের কথার মাঝেই নীলা জানতে চায়।

‘তোমাদের বাড়িতে ঢোকার মুখেই ফোন করে দিয়েছি গো।’ মামনি নীলাকে জানায়।

‘আমি পৌঁছে গেছি। চিন্তা কর না। পরে আবার ফোন করব।’ মামনি ফোনে শুধু এটুকুই বলে ধোঁয়াশায় রেখেছিল অপালাকে। অপালা ‘হ্যালো’ ছাড়া কিছু বলার সুযোগ পায়নি। মামনির ফোন রেখে দেওয়ার ধরনে অপালাও বুঝে নেয় ফোন ব্যাক করা ঠিক হবে না। এটা মামনির ব্যক্তিগত সময়। কিন্তু অপালার অনুপুঙ্খ জানতে ইচ্ছে করছিল।

অপালাকে এই প্রথমবার মিথ্যে বলেছে মামনি। রবিবার ফিরে গিয়ে সব বলবে। অপালাকে পরখ করা, নিজের কৌতূহল নিরসন এবং দীপকে এড়িয়ে যাওয়া এই তিনটে উদ্দেশ্য সাধনে এই উইক-এন্ড।

‘দিগন্ত খুবই নরম প্রকৃতির ছেলে ছিল রে। একবার কয়েকজন মিলে একটা ছেলেকে নকশাল সন্দেহে পেটে ড্যাগার ঢুকিয়ে মেরে কলেজের পাশের পানা পুকুরে ফেলে দিয়ে যায়। তোর বাবা সেটা দেখে দৌড়ে ঢোকে আমাদের বাড়িতে। কাঁপুনি দিয়ে তার সে কী জ্বর। বাড়ি ফিরতে পারেনি সেদিন। শুধু বমি। সে ছেলে যে কী করে ……’

‘কী হল দিদা? থেমে গেলে কেন?’ মামনির কথার উত্তর না দিয়ে নীলার মা ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন। রাত নেমেছে, আর নেমেছে তাপমাত্রা। নভেম্বরের শীতভাব। নীলা কফি নিয়ে এসে বসে মামনির পাশের চেয়ারে।

‘দিদা তোর বাবাকে খুব ভালবাসত জানিস। এত আসা যাওয়া ছিল। অথচ আমার বিয়েতে আসেনি দিগন্ত। তোর বাবা ডক্টরেট করার সময় বিয়ে করে। সে সময় আমার মেয়েও হয়ে গেছে। গেছিলাম দিগন্তের বিয়েতে। অপালা সেদিন অপ্সরা। কী অপূর্ব যে লাগছিল অপালাকে বউভাতের দিন। তোর বাবা তখন পুরুলিয়ায় একটা প্লান্টে কাজ করত। বিয়ের সপ্তাহ খানেক পরেই অপালাকে নিয়ে চলে যায়। বিয়ের দু বছর পর তুই হলি। আমাদেরই এক কমন ফ্রেন্ড বিভাস, কর্মসূত্রে পুরুলিয়ায় যাতায়াত করত। বিভাস তোর আঙ্কেলেরও বন্ধু। আসত মাঝে মাঝে আমাদের বাড়িতে। টুকটাক খবর পেতাম দিগন্তের।’

এর মধ্যে পরপর দুবার অপালার ফোন এল। মামনি ধরল না।

‘ফোনটা নিয়ে নে না। কথা তো বলবই।’

নীলা আন্টির সামনে মায়ের ফোন না ধরাটা ভাল দেখায় না। মামনি ফোন নিয়ে নীলার বেড রুম পেরিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়ায়। নীলা কথোপকথন শুনতে পাবে না। মামনি অপালাকে ফোন করে।

‘বলো..’

‘তুই এটা কী করলি? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। তুই কি সত্যিই দীঘায় এখন? সঙ্গে দীপ? আমার খুব ভয় করছে রে। তোকে ছেড়ে কোনওদিন থাকিনি তো।’

‘আমি ফিরে গিয়ে কথা বলি? একটা তো রাত মা। প্লিজ।’

‘না এই রাতটার জন্যই ফোন করছি। আর কত ভেঙে বলব। দীপ তোকে বিয়ে করবে না দেখিস।’

‘উফফফ। মা। কী হচ্ছে এসব। বিয়ের কথা কেন? আর এখনই ফোনে সব বলে ফেলতে হবে? আমি এখন রাখছি। আর ফোন করো না প্লিজ। আমি ঠিক থাকব। রাতে ঘুমনোর আগে এসএমএস করে দেব। বাড়ি ফিরে কথা বলব।’

ফোনটা ছেড়ে অপালার জন্য উদ্বেগ হয় মামনির। পরমুহূর্তেই ভাবে শরীর খারাপ হলে বেলাপি ঠিক খবর দেবে। বেশি দূর তো নয়। এসব সে আগে থেকেই ভেবে রেখেছে। মামনি ডাইনিং চেয়ারে ফিরে এসে বসে।

‘বাবার কথা বল আন্টি।’
‘বিভাসের ট্যুর বেড়ে যাওয়াতে আমাদের বাড়ি আসা কমে গেছিল। হঠাৎ একদিন ফোনে তোর বাবার মৃত্যুর খবর দিয়েছিল।’
‘আমার জন্মের পাঁচ বছর পর আন্টি। আমার তখন পাঁচ যখন …’
‘হ্যাঁ। তাই হবে। তোর বাবা সুইসাইড করেছিল। জানিস নিশ্চয়ই।’
‘জানি। কিন্তু কারণটা জানি না। আমার আবছা মনে আছে দিনটা। সেও এক শনিবার ছিল জানো। তার দুদিন আগেই বেশ বড় করে আমার বার্থডে সেলিব্রেশান হয়েছিল। শনিবার বাবা কাজে বেরোনোর সময় আমি কোয়ার্টারের গেট অবধি দৌড়ে গিয়েছিলাম। আমায় কোলে নিয়ে খুব খুব আদর করেছিল বাবা। বিকেলে বাবা এল না। মা বেরিয়ে গেল। আমি বেলাপির কাছে। বেলাপি আমায় ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। বাবা কোথাও কাজে গেছে বলেছিল বেলাপি। ফিরতে দেরি হবে। তারপরের অনেক কিছুই মনে নেই। পরের দিন সকালে বেলাপি আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে পাশের কোয়ার্টারে নিয়ে গেছিল। অন্যান্য দিন আমি পাশের কোয়ার্টারের বাবলির সঙ্গে খেলতেই থাকতাম। ফিরতেই চাইতাম না। সেই দিন বেলাপি ফেরার তাড়া দেয়নি। বেলাপি আমাকে বাবলিদের বাড়িতে রেখে চলে গেছিল। সন্ধ্যের পর নিয়ে এসেছিল। কেউ কিচ্ছু বলেনি জানো। মা বাইরের ঘরে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে ছিল। একটা কথাও বলেনি।’

অবরুদ্ধ আবেগ উপচোতে চায় মামনির দুচোখ বেয়ে।

আবার অপালার ফোন আসে।

‘কাল কথা বলব মা, প্লিজ।’ নিস্পন্দ চোখের কোল টইটুম্বুর হলে ডাইনিং টেবলে মাথা গুঁজে দেয় মামনি। পিঠটা কেবল ওঠানামা করতে থাকে।

সে কান্নার নির্দয় আক্রমণে মথিত হয় নীলা। আগল খোলে।

‘দ্যাখ তুই এখন বড় হয়েছিস। চাকরি করছিস। তোকে কয়েকটা কথা বলব যদিও তা বিভাসের মুখেই শোনা। মৃত্যুর দিন পনেরো আগে সমীর পাল নামের এক ভদ্রলোক তোর বাবার সঙ্গে প্লান্টে দেখা করে। আসলে সেও নতুন চাকরিতে ঢুকেছিল ঐ প্লান্টেই। এই সমীর পাল নাকি তোর মায়ের পূর্ব পরিচিতই ছিল। দিগন্ত বিয়ের মাস চারেক পর জার্মানিতে গেছিল একটা প্রোজেক্টের কাজে। প্রায় এক মাস জার্মানিতে ছিল দিগন্ত। সেই সময় অপালার সঙ্গে সমীরের আবার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।’

‘আলোটা নিভিয়ে দাও না আন্টি।’ টেবল থেকে মুখ তোলে না মামনি।

‘যাচাই করিনি রে। যা শুনেছিলাম বিভাসের মুখে, হুবহু বলছি আজ। একটা উইক-এণ্ডে তোর মা আর সমীর নাকি দীঘায় ছিল। দিগন্ত তখন জার্মানিতে। ফিরে আসার পরেও অপালা কিছু জানায়নি দিগন্তকে। মৃত্যুর দিন পনেরো আগে এসব কথা সমীরের কাছে শুনেছিল দিগন্ত। সমীর কেনই বা ঐ প্লান্টে কাজ নিয়েছিল আমার কাছে পরিষ্কার নয়। ও যদি অপালাকে ব্ল্যাক মেল করবে ভাবত, তাহলে দিগন্তকে সরাসরি কেন বলতে গেল! এসব যদিও আমার খটকা। বাদ দে। তোর বাবা এমনিতেই ইন্ট্রোভার্ট। এসব শোনার পর বাড়িতে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিল। অপালা নাকি দিগন্তের এভাবে চুপ হয়ে যাওয়াটা বুঝতেই পারেনি। বিভাস এই সময় গিয়েছিল দিগন্তের কাছে। বিভাসকে তোর বাবা বলেছিল ব্যাপারটা। অপালাকে যে দিগন্তের মৌনতা স্পর্শই করেনি রে। তোর বাবা আর যুঝে উঠতে পারছিল না।’
‘ল্যাবের কোন টেস্টের জন্য সায়ানাইড আনিয়েছিল দিগন্ত…  মুখে দিয়ে ল্যাবেই নাকি মারা যায় …’

অন্ধকারে মামনির ফোনটা ক্রুদ্ধ গর্জন করে ওঠে। নীলা হাত বোলায় মামনির পিঠে।

‘ফোনটা ধর। অপালার ফোন।’

স্তব্ধতা ছিঁড়ে দিয়ে গর্জন থেমে যায়। মামনি মুখ তোলে। ঊর্ধ্বমুখী গলা। নীলা আবছায়াতেও বুঝতে পারে মামনির দৃঢ় চোয়ালের খিল আলগা হয়ে মুখ হাঁ হয়ে আছে।

‘বাবার একটা ডায়রি দিয়েছে বেলাপি গত পরশু। সব লেখা আছে তাতে জানো। কতবার যে হোয়াই লেখা আছে! কিন্তু বাবা যে আর বাঁচতে চায়নি তা লেখা নেই।’

‘আমার মা আবার বলে কী জানিস? দিগন্তের নাকি আমায় খুব পছন্দ ছিল। সেজন্য নাকি আমার বিয়েতে আসেনি। কিসের জন্য যে কী হয় আর কী হলে ভাল হত!’ কথা বলতে বলতে মায়ের ঘরে খাবার দিতে গেল নীলা।

মামনির জলভারনত চোখ মোবাইলে দীপের নাম খুঁজতে থাকে। দীঘা যাওয়ার সম্ভবনা নির্মূল হওয়ার পর ফোন তো আসেইনি, একটা মেসেজও নয়। শুধুই মায়ের ফোন।

এবার এল অপালার মেসেজ।

‘ছোট থেকেই তুই বড় কম্পোসড। কোনওদিন শাসনের প্রয়োজন হয়নি। তুই আমার বিশ্বাসের জায়গা। সেই বল ভরসার ভিত নড়ে গেলে এই বয়সে… তুই এলে অনেক কথা বলার আছে।’

অপালার এই এক টুকরো মেসেজ কি মামনির যাবতীয় অপ্রাপ্তির উত্তর! অথবা এই মেসেজেই কি অভিমান গাঢ়তর হল? দীপের সঙ্গে দীঘায় যাওয়ার পরিস্থিতি না এলে কি অপালা এমন আর্ত ডাকত মেয়েকে?

‘আন্টি এখনও তেমন রাত হয়নি। অন্য দিন এসে থাকব। প্রমিস। আজ বাড়ি ফিরব। প্লিজ।’

নীলা জোর করে না।

‘রাতে খাবি বলে বানিয়েছিলাম। নিয়ে যা। অপালার সঙ্গে বসে খাস।’ মামনির হাতে টিফিন ক্যারিয়ার ধরিয়ে দেয় নীলা।

রিক্সা থেকেই মামনি দেখতে পায় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে অপালা। ঠান্ডা হাওয়ায় আবার না শরীর খারাপ হয়। আশঙ্কা হয় মামনির।

ডোর বেল বাজাতেই দরজা খুলে দেয় বেলাপি।

‘বৌদি… দেখো…’

অপালা প্রায় দৌড়ে আসে, ঝাঁপিয়ে পড়ে মামনির বুকে। অপালার চেয়ে প্রায় এক বিঘত বেশি লম্বা মামনি। মামনির বুকে অপালা মাথা দিতে পারে নিশ্চিন্তে। মামনি হাত রাখে অপালার মাথায়।

‘আমি জানতাম, আমি জানতাম, আমি জানতাম। তুই পারবি না। তুই দিগন্তের মেয়ে।’

আরোহণের কান্নায় ওদের বুক ভিজে যায়, ভেসে যায়।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4647 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

আপনার মতামত...