সায়ন মাজী
ভারতীয় থিয়েটারের আধুনিক অভিমুখ তৈরির যে দীর্ঘ চর্চা তিনি করেছেন, তাকে শুধুমাত্র বর্তমান রাজনৈতিক ব্যাখ্যায় ‘ভারতীয় থিয়েটার’ বলতে যা বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তা নয়। তাঁর থিয়েটার এক প্রতিবাদ। ধ্রুপদী টেক্সটের শরীরে বুনে দেওয়া উপজাতির সরব অস্তিত্ব। এরকম মানুষের উপস্থিতি রাষ্ট্রের কাছে খানিক অস্বস্তিদায়ক হবে বৈকি, তবে তাঁকে সরিয়ে রাখা যায় না; তাঁর উৎকর্ষতার জন্যই তা সম্ভব নয়
রতন থিয়াম তাঁর রাজনৈতিক ভাষ্য মৃত্যুশয্যা পর্যন্ত রেখে গেলেন। তৈরি করে গেলেন এক অবিস্মরণীয় দৃশ্যকল্প। বলা যায়, এটি এক ধরনের ফাইনাল অ্যাক্ট। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, মৃত্যুশয্যায় শুয়ে তিনি, আর সামনে একটি মণিপুরি কিশোরী তাঁকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনাচ্ছে। দৃশ্যটি রাজনৈতিক, কারণ— যখন এই ঘটনা ঘটছে, ঠিক তখনই বাংলা ভাষাকে সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রবল রাজনৈতিক আক্রমণ ও দ্বেষের। এখানেই রতন থিয়াম। তাঁর অস্তিত্ব বারবার অস্বস্তিতে ফেলেছে রাষ্ট্রকে, শেষ জীবন পর্যন্ত।

তাঁর শৈশব কেটেছে মণিপুরে। পেশাদার থিয়েটারকর্মী হওয়ার আগে তিনি সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেছেন। এছাড়া গান ও চিত্রকলাতেও তাঁর আগ্রহ ছিল। সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে তিনি যোগ দেন দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব্ ড্রামায়। সেখানে তাঁকে পড়তে হল এক অদ্ভুত সমস্যার সামনে। তিনি মণিপুরের লোক; স্বভাবতই তাঁর হিন্দি খুব চোস্ত হওয়ার কথা নয়। ইতিপূর্বে আরেকজন মণিপুরি নাট্যব্যক্তিত্ব হেইসনাম কানহাইলাল একই সমস্যার জন্য এক বছরের মধ্যেই NSD ছেড়ে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। বরং দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে রইলেন ওখানে। অভিনয়ের সুযোগ যে খুব বেশি পাবেন না তা তিনি অচিরেই বুঝে গিয়েছিলেন। তাই মনোনিবেশ করলেন স্টেজক্র্যাফট, ডিরেকশন এবং আলোকসজ্জায়। ভারতবর্ষে থিয়েটার আঙিনায় যদি শ্রেষ্ঠ আলোকশিল্পী বা ‘সিনোগ্রাফার’-দের নাম করতে হয়, তাহলে তাঁর নাম অবশ্যই সেই তালিকায় থাকবে।
১৯৭৬ সালে মণিপুরে ফিরে এসে তিনি তৈরি করলেন ‘কোরাস রেপার্টরি থিয়েটার’। শুরুতে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা ছোট ছোট প্লট বা জমি কিনতে শুরু করেন, যা পরবর্তীতে এক বিশাল ফার্মের চেহারা নেয়। খোলা মাঠে বা খড় ছাওয়া ঘরে তাদের রিহার্সাল হয়। সেখানের সদস্যরাই শাকসবজি চাষ করেন, ফিশারি ও পোলট্রির দেখাশোনা করেন। তাঁর মতে— শিল্পী বা অভিনেতা হিসেবে যদি আমরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে গভীর সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাঁর মতে, কোনও অভিনেতা যদি পরিকল্পকের সঙ্গে হাত লাগিয়ে নিজের মুখোশ বা নিজের ব্যবহার্যগুলি নিজেই বানান, তাহলে সেগুলো কখনও তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে না। তখন তিনি সেই জিনিসটিকে ভালোবাসতে শুরু করেন। আসলে অভিনয়ের আগে প্রস্তুতি দরকার পড়ে; এমনকি মহড়ায় যাওয়ার আগেও তাঁর জন্য প্রস্তুতি প্রয়োজন। যে নাটকের মহড়া চলছে, সে-বিষয়ে আলোচনা এবং প্রত্যেকের ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। নইলে ভালো মানের কাজ সম্ভব নয়। আজকের দিনে, যেখানে মূলত বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শী বা খ্যাতনামাদের দিয়ে থিয়েটার করা হচ্ছে, সেখানে দাঁড়িয়ে রতন থিয়ামের এই কথাগুলো আমাদের সাবধানবানী হিসাবেই দেখতে হবে।
কোরাস যখন কাজ করা শুরু করে, তখন ভারতীয় থিয়েটারে রুট বা মূলের দিকে ফিরে যাওয়ার এক ধরনের ব্যবস্থা শুরু হয়ে গেছে। ঔপনিবেশিক প্রভাবের বিপরীতে দাঁড়িয়ে তা একরকম আরোপিত যুদ্ধও বলা যায়। কিন্তু রতন থিয়াম সেই সাবজেক্টকে অস্ত্র করেই চ্যালেঞ্জ জানালেন এই ব্যবস্থাকে। যে মহাভারত ট্রিলজি তাঁকে প্রভূত সম্মান এনে দেয়, সেই মহাভারত ট্রিলজিই অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের। ট্রিলজির প্রথম নাটক ভাস বিরচিত ‘উরুভঙ্গম’। কিন্তু সেখানে নাটকটি সাজালেন সাধারণ মানুষদের নিয়ে। তাঁর নাটকে ভাষ্যকার হয়ে উঠল সেই সব সৈনিকরা, যারা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন না। তাঁরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করে ‘লিডার’-দের কথায় স্লোগান দেয়, কৌরবদের পক্ষে অথবা পাণ্ডবদের পক্ষে। তাদের আচরণ সরাসরি রাজনৈতিক কর্মীদের মতোই।

পরবর্তী নাটক ‘চক্রব্যূহ’ (১৯৮৪)-এ উঠে এসেছে অভিমন্যুর ট্র্যাজিক মৃত্যু। মহাভারতের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মিশেছে বিশ্বরাজনীতি, সুপারপাওয়ার ও তাদের প্রতিপত্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বিষয়। তৃতীয় বিশ্বের ছোট ছোট দেশগুলো থাকে সুপারপাওয়ারদের অধীনে। তার বদলে তারা পেয়ে থাকে নানাবিধ সাহায্য। কিন্তু অধীনে থাকাই যেন তাদের অস্তিত্বের সার। তাদের নিজস্ব কোনও স্বাধীনতা নেই। এছাড়া, এই নাটকে আছে দুর্নীতি— আমলাতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রবল দুর্নীতিকে চিহ্নিত করেছেন তিনি। দ্রোণাচার্য এই নাটকে দুর্নীতিগ্রস্ত। তিনি বেতন পান কৌরবদের থেকে, কিন্তু তাঁর প্রছন্ন মদত থাকে সর্বদা পাণ্ডবদের পক্ষে। এই নাটকে কৌরব বা পাণ্ডবদের কোনও সংলাপ নেই। তারা নীরবে আসে, নীরবে যায়, যুদ্ধ করে সরবে। তাদের হাতে থাকে ধ্বজা, দুই বর্ণের। মাঝে একা, অসহায় অভিমন্যু।

ট্রিলজির শেষ নাটক ‘কর্ণভারম’। এটি ভাসের একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের নাটক। নাটকের মূল পরিসর আত্মপরিচয়ের সংকট, একাকিত্ব ও স্বীকৃতি পাওয়ার সংগ্রাম। অত্যন্ত আধুনিক এসব সমস্যাকে নির্দেশ করতে সাহায্য নিয়েছেন মহাভারতের। কিন্তু সমস্যাগুলো কী শুধুই ব্যক্তিমানুষের? নাকি কোথাও গিয়ে এই সমস্যা খানিকটা নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়ারও? ভারতবর্ষের অংশ থেকেও দীর্ঘকাল একরকম ব্রাত্য হয়ে থাকার যন্ত্রণা।

মজার বিষয় হল, ‘কর্ণভারম’ এবং ‘উরুভঙ্গম’ কেরলে কেএন পানিক্করও প্রযোজনা করেছেন। সেখানে তিনি প্রবলভাবে ব্যবহার করেছেন কালারিপায়াত্তু ও কুড়িআট্টামের। সেখানে রতন থিয়াম বেছে নিয়েছেন মণিপুরি মার্শাল আর্টকে। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, দক্ষিণ ভারতের মহাভারত চর্চা এবং মণিপুরের মহাভারত চর্চা এক নয়। তাদের ইতিহাস, চর্যা এক ভিন্ন প্রকরণের মধ্যে দিয়ে গেছে। শুধুমাত্র মৈতেই উপজাতির মধ্যেই পাঁচটি ভাগ আছে। তাদের মধ্যে হিন্দু (মারুপ), খ্রিস্টান, গৌরচৈতন্য, ব্রাহ্মণ (বামন) ও মুসলমান (পাঙ্গাল)— সব বিশ্বাসই বর্তমান। সেইখানে উত্তর ভারতের তথাকথিত আর্য সংস্কৃতির একটি টেক্সটে আঞ্চলিক ও উপজাতির বৈশিষ্ট্য জুড়ে দেওয়া রতন থিয়ামের একরকম সচেতন সিদ্ধান্তই বটে।
তাই তাঁর থিয়েটারকে রিচুয়ালিস্টিক বলে দাগিয়ে দেওয়ার একরকম প্রবণতা দেখা যায়, যেমনটা আমরা হাবিব তানভীরের ক্ষেত্রে লক্ষ করি। অথচ তাঁদের থিয়েটার কী প্রবল মাত্রায় আধুনিক। শুধুমাত্র ভারতীয় থিয়েটার বা ফোক থিয়েটার শব্দবন্ধে তাঁদের আটকে দেওয়ার অর্থ হল, যে আন্তর্জাতিক ও আধুনিক নাট্যাভ্যাস তাঁরা নির্মাণ করছেন তার স্তরকে লঘু করে দেওয়া। তাঁদের কাজে ভারতীয় শিকড় ও আচার আছে, কিন্তু বিষয়টা তাতেই সীমাবদ্ধ নেই।
এক্ষেত্রে ব্রেশ্টের খানিক অবতারণা প্রয়োজন। ব্রেশ্ট যে বিশেষ অভিনয়পদ্ধতির কথা বলেছেন— “গেস্টুস”, অর্থাৎ অভিনেতার শরীর এক বিশেষ চিহ্ন বা মুদ্রা ব্যবহার করবে যা তাঁর সামাজিক সম্পর্ক প্রকাশ করবে। এই ধারণা তিনি দিচ্ছেন চৈনিক ও জাপানি থিয়েটার থেকে। সেখানে আমরা দেখতে পাব রতন থিয়ামের অভিনেতারা তাঁদের শরীর দিয়ে এমন এক স্বতন্ত্র ভাষার জন্ম দিচ্ছেন। প্রবল শরীরী ভাষ্যের জন্য তিনি সাহায্য নিচ্ছেন বিভিন্ন মণিপুরি মার্শাল আর্ট— থাং বা জাপানি মার্শাল আর্ট থেকে, অথবা দ্বারস্থ হচ্ছেন কথাকলি নৃত্যের। এই প্রবল শরীরী চর্চার মধ্যে একরকম সংলাপ-নির্ভরতা থেকে বের হওয়ার চেষ্টাও তিনি করছেন। আন্তর্জাতিক থিয়েটার দীর্ঘদিন ধরে এই ছক ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার চর্চা করে চলেছে।
আসলে একজন অভিনেতাকে ভাবতে হয়, সে কী সংলাপ উচ্চারণ করছে। তা মোটেও সহজ নয়; তার জন্য অনেক শিখতে হয়, পড়তে হয়, জীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হয়। সামগ্রিক শিল্পটির সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাই একসময় শুধু কথা নয়, অভিনেতা তাঁর শরীর দিয়েও সংলাপ রচনা করেন। অথচ আমাদের এখানে সমালোচনার সিংহভাগ জুড়ে থাকে টেক্সটের কাটাছেঁড়া। কিন্তু যে প্রবল পারদর্শিতায় অভিনয়, মঞ্চ, সঙ্গীত আয়োজন ও আলো সব মিলে যে ‘স্পেক্টাকেল’-এর জন্ম হয়, তার আলোচনা কোথায়?
রতন থিয়ামের থিয়েটার স্পেক্ট্যাকুলার। হাবিব তানভির বা কানহাইলালের মতো স্বল্প আয়োজনের বদলে, তিনি তাঁর থিয়েটারকে নিয়ে গেছেন বড় ক্যানভাসে। কিন্তু তা শুধুমাত্র বৈভব বা কারিগরি ক্ষেত্রে নয়; দক্ষতা ও সূক্ষ্মতায়ও। যা একেবারে তাঁর স্বতন্ত্র। তাঁর নাটকের প্রতিটি দৃশ্য জন্ম দিয়েছে অবিস্মরণীয় নাট্যমুহূর্ত। শোনা যায়, মহড়ার সময় ব্রেশ্ট একজন ফটোগ্রাফারকে বসিয়ে রাখতেন। তাঁর ওপর নির্দেশ থাকত র্যান্ডম কিছু ছবি তুলতে, নির্দিষ্ট নাট্যমুহূর্তের নয়। ব্রেশ্ট দেখতে চাইতেন, তাঁর নাটকের প্রতিটি মুহূর্ত একটি স্বতন্ত্র নাটকীয়তা বহন করছে কি না। রতন থিয়াম এরকম কিছু করতেন কিনা, জানা নেই; তবে এই একই চর্চা তিনিও করেছেন। এই ধারণা একেবারেই ইউরোপীয়। আরিস্ততল তাঁর ‘পোয়েতিক্স’-এ এই ধারণার কথা বলেছেন। ফলে তাঁর নাট্যভাষা রিয়েলিজম ছাড়িয়ে এক নতুন বাস্তবতার স্তরে উন্নীত হয়েছে।
সিনোগ্রাফি নিয়ে তাঁর মুন্সিয়ানার একাধিক উদাহরণ রয়েছে। যেমন— লেডি ম্যাকবেথের চিঠি পড়া বা জঙ্গল এগিয়ে আসা, ‘উত্তর প্রিয়দর্শী’ নাটকে মঞ্চে হাতি উঠে আসা, বা ‘আশীবাগী একোই’ নাটকে জলাশয়ের মধ্যে দিয়ে নৌকা যাওয়ার দৃশ্য— সবই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

‘আশীবাগী একোই’ নাটকটি ইবসেনের ‘হোয়েন উই ডেড অ্যাওয়েকেন’ নাটকের রূপান্তর। এই নাটককে তিনি এনে ফেলেন মণিপুরের জল-হাওয়ায়। ভারতীয় হিন্দু ও বৌদ্ধ দর্শনের মৃত্যু ও পুনর্জন্মের চক্র স্মৃতির মধ্যে দিয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠে। আবার তিনি ব্যবহার করেন জাপানি লোককথার চরিত্রও। আসলে তিনি জানেন, মণিপুরের পরিস্থিতি, ভাষা, ঐতিহ্য ও পরিবেশ ভিন্ন। সেখানে ক্লাসিক্যাল থিয়েটারের চর্চা বেশি, কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়েও তিনি একের পর এক অনুবাদ নাটক করে গেছেন।

এই নাটকেই যেমন দেখতে পাই সময়ের প্রবাহ। দৃশ্যায়নে দেখা যায় পুতুল বোনা। আবার উল্টোদিকে পিন্টারের ‘ডাম্ব ওয়েটার’ নাটকে দেখা যায় কিউবিজমের আদলে বানানো মঞ্চ। তেমনই ‘ম্যাকবেথ’ নাটকে তার নাটকীয়তা ও কাব্যময়তা বজায় রেখেও বুনে দেন লোকজ উপাদান। মঞ্চ উপকরণ ও পোশাক হয়ে ওঠে দেশজ। সেখানে ‘ব্যাঙ্কো’-র ভূত দেখে হুইলচেয়ারে বসে পড়ে ম্যাকবেথ, এদিকে প্রায় নীরব লেডি ম্যাকবেথ তখনও হাত ধুয়ে চলেন গামলার জলে।
কিন্তু এই সব বিদেশি নাট্যপ্রযোজনার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। উত্তরে তিনি বলেছিলেন— ঐতিহ্য নিয়ে অনেক তো চর্চা হল। কিন্তু অনুপ্রেরণার উৎসকে ব্যবহার করতে অসুবিধা কোথায়?
তাঁর নিজস্ব চিন্তাভাবনা দিয়ে বরাবরই তিনি চেষ্টা করে গেছেন ভারতীয় থিয়েটারে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন করতে। তা শুধুমাত্র পুঁথিতে নির্দেশিত কিছু নিয়মাবলি নয়। যেমন— উত্তর প্রিয়দর্শী সম্রাট অশোকের কাহিনি। ফা-হিয়েনের বিবরণীর সঙ্গে সেখানে এনেছেন গিলোটিন, ইলেকট্রিক চেয়ার। বুঝিয়েছেন আধুনিক নরক কী। কখনও বিশ্বরাজনীতি তাঁকে বিচলিত করেছে, আবার কখনও মণিপুরের পরিস্থিতি।
তিনি যখন ‘হিরোশিমা’ (১৯৯৪) নাটকটি নির্মাণ করেন, তখন জাপানে বারবার গিয়েছেন, দেখেছেন তাঁদের জীবন। সোচ্চার হয়েছেন অস্ত্রব্যবসা, সামরিক রাজনীতির বিরুদ্ধে। আবার ‘ইম্ফল কারুসি’ (ইম্ফলে হচ্ছেটা কী, ১৯৮২) নাটকে তিনি সরাসরি প্রশ্ন করেছেন রাষ্ট্রব্যবস্থাকে।
ভারতীয় থিয়েটারের আধুনিক অভিমুখ তৈরির যে দীর্ঘ চর্চা তিনি করেছেন, তাকে শুধুমাত্র বর্তমান রাজনৈতিক ব্যাখ্যায় ‘ভারতীয় থিয়েটার’ বলতে যা বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তা নয়। তাঁর থিয়েটার এক প্রতিবাদ। ধ্রুপদী টেক্সটের শরীরে বুনে দেওয়া উপজাতির সরব অস্তিত্ব। এরকম মানুষের উপস্থিতি রাষ্ট্রের কাছে খানিক অস্বস্তিদায়ক হবে বৈকি, তবে তাঁকে সরিয়ে রাখা যায় না; তাঁর উৎকর্ষতার জন্যই তা সম্ভব নয়। আধুনিক থিয়েটারের কথা এলে তাই বারবার আমাদের ফিরে যেতে হবে এঁদেরই কাছে।

