অঞ্জন দাস

মৌষলকাল

 

 

এক.

তোমাকে তেমন চেনাই হল না। আমি মফস্বলের তরুণ। ছা-পোষা বেকার। উন্নাসিক এই আলোয় তোমাকে মায়াবী মনে হয়, প্রণয়ী নয়। অবহেলায় দূরে রাখি সুখ। কারণ দুঃখ সহজাত। তার সঙ্গেই মূলত সদ্ভাব। সামনেই শীত। পৌষ সর্বনাশী। ঘরে এলেই যদি, থিতু হও। পাশে বসো। বস্তা পেতে দিই। যৌবন বেড়ে দিই। এক গ্লাস জল। কাঁচালঙ্কা দিয়ে চিবিয়ে খাও এ জীবন। হাত ধুয়ে বাইরে এসো। ছোট ডিঙিনৌকো। ভাসমান শরীর। পেরিয়ে যাও এই ক্ষত, এই শীত, এই পিছুটানটুকু।

 

দুই.

মধ্যমাঘে কেঁপে উঠছি। অসহ্য যন্ত্রণা। শিকারির থাবা। রাষ্ট্রদ্রোহ। এত মিছিল পেরিয়ে এসেও বিচার নেই। প্রহসন। আমি রুগ্ন দু-হাতে করতলের গোপন আয়ুরেখা গুনি আমার মায়ের, বোনের, দিদির। সামান্য শীতে জবুথবু হয়ে বসি। একটু উষ্ণতার জন্য এত আয়োজন!

 

তিন.

আজ বড় কুয়াশা… আমাদের উত্তরে হাওয়া আছে, দক্ষিণে বিষাদ। মধ্যে সমতল। জীবনের গোপন সঞ্চয়। বর্ধিষ্ণু এই জীবনের দিকে তাকালে বড় মায়া হয়! সময় নেই, অথচ কী বিপুল আয়োজন! এই আমার স্বপ্নজীবন, এই আমার দ্রাক্ষাবন, এই আমার সবুজ শহর; তোমার উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ি সততই… তোমাকে প্রণাম…

 

চার.

আলোর নিচে বাড়ি, অন্ধকারে ঘর।
পিদিম জ্বলা জীবন, স্বপ্ন-লোকাত্তর
আসে উদ্বাস্তু বালক, তার মোহনার রং
আমাকে ছুঁয়ে দিলেই অথই…
আমি দূরে যাব, বহুদূরে;
সভ্যতা, তোমার বিস্মরণ দেখে মায়া হয়!

 

পাঁচ.

এই পেরিয়ে গেল শীত। রাঢ়বঙ্গে বসন্ত। দারিদ্র্যই আমাদের পৃথক করেছে। বসন্ত তার সাক্ষী। প্রস্থান অবধি ঠিক ছিল। আর বেশি ভিতরে এসো না। নিকটেও না। প্রাচুর্যের বিপরীতে ক্ষয়। তোমার মায়া বড় দায়! তার চেয়ে বরং এই বসন্তে তোমাকে পেরিয়ে যাই…

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5217 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...