ফসল বিমায় আধুনিকীকরণ: চাষির সুরাহা কোথায়?

দেবাশিস মিথিয়া

 


সরকার একদিকে যেমন এমএসপি-র আইনি স্বীকৃতির মতো মৌলিক দাবি এড়িয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে পিএমএফবিওয়াই-এর প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণের ওপর জোর দিচ্ছে— যা কৃষকের দীর্ঘমেয়াদি সুরাহা নিশ্চিত করতে পারছে না। ক্যাগ রিপোর্ট ও মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় এই প্রকল্পের মূল সমস্যা প্রযুক্তিগত নয়, বরং কাঠামোগত দুর্বলতা, পরিকাঠামোর অভাব এবং দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা। যতদিন না এই মৌলিক দুর্বলতাগুলি দূর হচ্ছে এবং গ্রামেগঞ্জে বিমাকর্মী-সহ কার্যালয় স্থাপন হচ্ছে, ততদিন ফসল বিমার আধুনিকতা কেবল খাতায়-কলমেই থেকে যাবে

 

মোদি সরকার কৃষকদের মন পেতে বেশ কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চালাচ্ছেন, কিন্তু কৃষক অসন্তোষ আজও বিদ্যমান। স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) ও তার আইনি স্বীকৃতির দাবিতে কৃষকরা এখনও অনড়। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ পাওয়া যায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলনে, যেখানে পাঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকরা আবারও পথে নেমেছিলেন। আন্দোলনকারীরা পাঞ্জাব-হরিয়ানার শম্ভু এবং খানউরি- সীমান্তে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রধান হাইওয়েকে অবরুদ্ধ করে অবস্থান বিক্ষোভ চালাচ্ছিলেন। দীর্ঘ আলোচনার পরেও যখন অচলাবস্থা কাটেনি তখন (২০২৫ সালের মার্চ মাসে)। পাঞ্জাব পুলিশ জোর করে আন্দোলনকারীদের উচ্ছেদ করে। এই উচ্ছেদ অভিযানে পুলিশ কৃষকদের তাঁবু ভেঙে দেয় এবং শত শত কৃষক নেতাকে আটক করে। সাময়িকভাবে কৃষক আন্দোলনের অবসান ঘটলেও এর তীব্রতা সরকারের কৃষি-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে।

​এই প্রবল চাপের মুখে মোদি সরকার নিজেদের কৃষক-দরদি প্রমাণ করতে, ২০২৫ সালের শুরুতে ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা বা পিএমএফবিওয়াই’-কে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই জন্য ৬৯ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয় এবং প্রকল্পটির প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণের জন্য সরকার ৮০০ কোটি টাকার বাড়তি তহবিল গড়ে। বর্তমানে পিএমএফবিওয়াই-ই দেশের প্রধান শস্যবিমা। এই আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও প্রশ্ন জাগে— প্রকৃত সমস্যার সমাধান কি প্রযুক্তিগত উন্নয়নে, নাকি প্রকল্পের মৌলিক কাঠামোগত দুর্বলতা দূর করার মধ্যে?

 

ভারতীয় কৃষিতে পিএমএফবিওয়াই

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও দেশের ৫২ শতাংশ জমিতে সেচের জল পৌঁছায়নি। বৃষ্টির উপর নির্ভর করে চাষ করতে হয়। কখনও অতিবৃষ্টির ফলে বন্যা, আবার কখনও অনাবৃষ্টিতে খরা। ফসল ফলার মুখে খরা বা বন্যা হলে ফসল নষ্ট অনিবার্য। এই ঘটনা ছাড়াও কীটপতঙ্গের আক্রমণ, আকস্মিক ঝড়, শিলাবৃষ্টি ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে। এর কোনওটাই চাষির নিয়ন্ত্রণে নেই। এগুলি সবই চাষির আয়কে প্রভাবিত করে। ভারতীয় চাষিদের ৮৬ শতাংশই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক। বেশিরভাগই ঋণের ভারে জর্জরিত। তাই তাঁরা ফসল নষ্টের জন্য আয়ের যে ক্ষতি, তা থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে পারেন না। কেউ কেউ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। একমাত্র ফসল বিমাই তাঁদের এই ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে।

২০১৬ সালের আগে দেশে চালু থাকা সব ফসল বিমাগুলিকে এক করে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা চালু হয়। এই প্রকল্পটি, ‘ওয়ান নেশন-ওয়ান স্কিম’ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর লক্ষ্য হল বীজ বোনা থেকে ফসল কাটার পর পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কীটপতঙ্গের আক্রমণে ফসলের ক্ষতি হলে চাষিদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা। এতে চাষির ফসল নষ্ট হলে যে আর্থিক ক্ষতি হয় তার চাপ অনেকটাই কমে। কৃষিকে পেশা হিসাবে চালিয়ে যেতে চাষিকে অনুপ্রাণিত করে।

 

পিএমএফবিওয়াই কীভাবে কাজ করে

ফসলের ভবিষ্যৎ ক্ষতির প্রত্যাশিত মূল্যকে অনুমান করে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার বিমাকৃত রাশি নির্ধারণ করা হয়। এই বিমায় বিমাকারীকে প্রিমিয়াম দিতে হয় নামমাত্র। যা খরিফ ফসলের ক্ষেত্রে বিমাকৃত রাশির ২ শতাংশ, রবিশস্য ও তৈলবীজের জন্য ১.৫ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক ফসলের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ। প্রিমিয়ামের বাকি অংশ কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারগুলি ৫০:৫০ ভিত্তিতে দেয়। উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের এই ভাগ ৯০:১০। কৃষিঋণ গ্রহণকারী কৃষকের ক্ষেত্রে এই বিমা বাধ্যতামূলক হলেও বাকিদের ক্ষেত্রে তা নয়। ফসল নষ্ট হলে কৃষক দুই ক্ষেত্রে শস্যবিমার অর্থ পেতে পারেন। এক, বিপর্যয় ব্যাপক আকারে ঘটলে। এক্ষেত্রে বিমা সংস্থা নিজেই দাবিনিষ্পত্তির কাজ করে থাকে। এখানে কৃষকের কাছ থেকে কোনও তথ্য সংগ্রহের বিষয় থাকে না। শুধু প্রকৃত ফলনের সরকারি তথ্য জেনে নিলেই চলে। দুই, স্থানীয়ভাবে বিপর্যয় হলে। এক্ষেত্রে বিমাকারী কৃষককে ঘটনা ঘটার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিমা সংস্থাকে ক্ষতির বিষয় অবহিত করতে হবে। যে কৃষক শস্যবিমা করেছেন তিনি নিজে বিষয়টি জানাতে পারেন বা সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানও (ব্যাঙ্ক) তা জানাতে পারে। শস্যবিমায় ক্ষতিপূরণ দাবি করার সময় কৃষককে সঠিকভাবে পূরণ করা রি-ইমবার্সমেন্ট ফর্ম, জমির মালিকানার দলিল, জমির পর্চা, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান বা ভোটার কার্ড যা ব্যক্তিগত পরিচয়ের প্রমাণ, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণী, ফসল বোনার বিস্তারিত বিবরণ— এগুলি সব বিমা সংস্থাকে দিতে হয়। এ-ই হল পিএমএফবিওয়াই কী এবং কেন!

 

পিএমএফবিওয়াই ও বাস্তবতা

এখন দেখার এই শস্যবিমা জন্মলগ্ন থেকে চাষিদের কতটা উপকারে এসেছে।

২০১৭-র আগস্টে কোশি নদীর বন্যায়, বিহারের আরারিয়া জেলার পালাসি ব্লকের একটি গ্রামের সমস্ত ধান জলের তলায় চলে যায়। সৌভাগ্যক্রমে, প্রায় ২৫০ জন কৃষকের অমতেই তাঁদের ব্যাঙ্কের কৃষিঋণ অ্যাকাউন্ট থেকে শস্যবিমার প্রিমিয়াম কেটে নেওয়া হয়েছিল। ওই চাষিরা প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় যুক্ত হন। যাইহোক, বন্যার পরে, এটি আশীর্বাদের মতো মনে হয়েছিল। জল কমার এক মাস পর, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ব্যাঙ্কে গিয়ে ফসলের ক্ষতিপূরণের দাবি জানায়। সেই দাবির নিষ্পত্তি ঘটতে বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে বলে ব্যাঙ্ক জানিয়ে দেয়। চাষিরা ধৈর্য ধরতে লাগলেন। ফেব্রুয়ারি ২০১৯ নাগাদ তাঁদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। বিমাকারী কৃষকরা নিজেদের নামের তালিকা তৈরি করে দাবির নিষ্পত্তির জন্য ব্যাঙ্কে চাপ দিতে থাকেন। সেই সময় ব্যাঙ্ক বিমা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে হাত তুলে দেয়। চাষিরা যেন বিমাকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিমা সংস্থার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ জানিয়ে দেয়— “আপনারা ফসল নষ্টের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আমাদের জানাননি। এছাড়াও, আমাদের রেকর্ড অনুযায়ী, আপনাদের ফসলের কোনও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি।“ ঘটনায় কৃষকরা নিজেরা প্রতারিত হয়েছেন বলে মনে করেন।

উত্তরপ্রদেশে, ২০১৯-এর খরিফ মরশুমে ফসল নষ্ট হয়। মার্চ ২০২০-তেও বিমাকারী কৃষকরা তাঁদের বিমাকৃত ক্ষতিপূরণ পাননি। সেই সময় বিমা কোম্পানিদের টোল-ফ্রি নম্বরগুলিও কাজ করছিল না বলে অভিযোগ ওঠে। অথচ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়েন্টাল ইন্স্যুরেন্স এবং ইউনিভার্সাল সোম্পো ইন্স্যুরেন্সের মতো কোম্পানিগুলি এই ফসল বিমা করিয়েছিল।

২০২১-২২ সালের শেষে কর্নাটকের কোডাগু জেলায়, মাত্র ২২২ জন কৃষক পিএমএফবি ওয়াই প্রকল্পে নিজেদের যুক্ত করেন। এখানে ধান চাষের পাশাপাশি চাষিরা কফি, এলাচ ও মরিচের চাষ করেন। অথচ, পিএমবিএফওয়াই-তে শুধুমাত্র ধান এবং ভুট্টার ক্ষেত্রে বিমার সুযোগ ছিল। ফলে এই প্রকল্প কৃষকদের খুব একটা সুবিধা দেয়নি বলেই চাষিরা মনে করেন। ২০১৮ সালে, এই জেলায় মারাত্মক বন্যা ও ভূমিধসের ফলে কৃষকরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু ২০১৭-১৮ সালে ২৫৭৪ জন বিমাকারী কৃষকের মধ্যে মাত্র ৯৫৮ জন ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন।

২০২৩-২৪ সালে মহারাষ্ট্রে ২.৪২ কোটি কৃষক পিএমএফবিওয়াই প্রকল্পে যোগ দিয়েছিলেন। ওই বছর মহারাষ্ট্রের ৩৮৫টি তহসিলের মধ্যে ১৬৫টিতে খরা বা খরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। স্বাভাবিকভাবেই পিএমএফবিওয়াই কৃষকদের কাছে জীবনদায়ী হয়ে ওঠে। কিন্তূ দেখা গেল প্রায় ৬০ শতাংশ চাষি দীর্ঘদিন ক্ষতিপূরণের জন্য অপেক্ষায় থেকে থেকে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। বিমার ক্ষতিপূরণের দাবিতে গত জুলাইয়ে সারা মাস মহারাষ্ট্রের কৃষকরা বিক্ষোভ করেছেন। ওই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে, লাতুর-সোলাপুর হাইওয়ে অবরোধ করেন। ২৯ জুলাই, সোলাপুর জেলা কালেক্টরের অফিসে অবস্থান বিক্ষোভ দেখা যায়। অথচ ওই বছরই মহারাষ্ট্রে পিএমএফবিওয়াই-এর প্রিমিয়াম সংগৃহীত হয়েছিল সবচেয়ে বেশি। যার পরিমাণ ১০,১৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় মাত্র ৩৫৫১ কোটি টাকা।

পিএমএফবিওয়াই-তে নিয়ম হচ্ছে— সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানিগুলি, বিমার গ্রহণযোগ্য দাবিগুলিকে বিবেচনা করে ফসল কাটার দু-মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা গেল, বিমাকারীরা ফসল নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেন না। ফলন-সম্পর্কিত বিষয়ে চাষিদের সঙ্গে বিমা কোম্পানি এবং রাজ্যগুলির মধ্যে বিরোধ। কোথাও আবার, রাজ্যগুলি তাদের প্রদেয় প্রিমিয়ামের অংশ বিমা কোম্পানিকে পরিশোধই করেনি। রাজ্যগুলির কাছে ২০১৮-২০২১ পর্যন্ত এই বকেয়ার পরিমাণ ছিল ৪,৭৪৪ কোটি টাকা।

 

আধুনিকীকরণ বনাম কাঠামোগত দুর্বলতা

উক্ত সমস্যাগুলির কোনও সমাধানে না গিয়ে সরকার কৃষকদের মন পেতে পিএমএফবিওয়াই-কে নতুন করে আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ, মোদি-২ সরকারের তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর এই বিমার প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণের জন্য ‘ডিজিক্লেইম মডিউল’ চালু করেন। উদ্দেশ্য ছিল ফসল ক্ষতির বৈধ দাবিকে দ্রুত নিষ্পত্তি করা। স্বচ্ছতার সঙ্গে কৃষকের দাবি অনুযায়ী তাঁর প্রাপ্য অর্থ সরাসরি তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া। কৃষকের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত দাবি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনাকে কমানো। এই ডিজিটাল অগ্রগতির অন্যতম বিশেষত্ব হল কৃষকরা তাঁদের নিজস্ব মোবাইল ফোনে দাবি নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াটি সঠিক সময়ে ট্র্যাক করতে সক্ষম হবেন এবং শস্যবিমার সুবিধাগুলি উপভোগ করতে পারবেন। এটি চালুর সময়, তিনি একটি বোতাম টিপে রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, ছত্তিশগড়, উত্তরাখণ্ড এবং হরিয়ানার বিমাকারী কৃষকদের অ্যাকাউন্টে মোট ১২৬০.৩৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। ডিজিক্লেইম মডিউল চালু করার সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, পিএমএফবিওয়াই, দুর্বলতা কাটিয়ে, চাষির উপযোগী হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। অনেক বেশি আধুনিকও হচ্ছে। তাহলে নতুন করে পিএমএফবিওয়াই-এর আধুনিকতার কী প্রয়োজন পড়ল? এর চেয়ে জরুরি ছিল ফসলের ক্ষতি হলে সঠিক মূল্যায়ন করে চাষির কাছে দ্রুত বিমার টাকা পৌঁছানো। প্রয়োজন ছিল ফসল বিমাকে সর্বজনীন করা। সেটাই হয়নি। ক্যাগ রিপোর্টেও সেই ত্রুটি ধরা পড়েছে। ক্যাগ রিপোর্ট জানিয়েছে—

  • পিএমএফবিওয়াই-এর কভারেজের অনুপাত খুবই কম। যোগ্য কৃষকদের সামান্য সংখ্যক এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন।
  • পিএমএফবিওয়াই-এর লক্ষ্য কৃষকদের সময়মতো আর্থিক সহায়তা দেওয়া। কিন্তু বিমার দাবিগুলি নিষ্পত্তিতে সময় লেগেছে অনেকটা। এটি প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমার উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করেছে।
  • গ্রামীণ এলাকায় অফিস এবং কর্মীদের অভাব-সহ অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো ক্যাগ রিপোর্টে উল্লেখ আছে। যা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করেছে।

​২০২৩ সালের ২৩ মার্চ চালু হওয়া ‘ডিজিক্লেইম মডিউল’-এর মতো ডিজিটাল ব্যবস্থা আসার পরেও ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে চাষিদের দীর্ঘ অপেক্ষার খবর এখনও শিরোনামে আসে। ফলন-সম্পর্কিত তথ্য দেরিতে আসা, প্রিমিয়াম ভর্তুকিতে রাজ্যগুলির অর্থ দেরিতে পৌঁছানো, এবং গ্রামীণ এলাকায় পরিকাঠামো ও জনবলের অভাবের মতো পুরনো সমস্যাগুলি এখনও জিইয়ে রয়েছে।

 

চাষির সুরাহা কোথায়?

কৃষিদপ্তরের মন্ত্রী বদল হয়েছে, প্রকল্পে নতুন কিছু করার চেষ্টা হবে— এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ নিয়ে যে মৌলিক প্রশ্ন উঠেছিল, তা আজও বহাল। ২০২৪ সালের ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলনের মূল দাবিও কিন্তু ফসল বিমা ছিল না, ছিল ফসলের ন্যায্য দাম (এমএসপি )। এর থেকে স্পষ্ট হয় যে কৃষকের মূল সমস্যা ফসলের ক্ষতিপূরণ পাওয়া নয়, বরং ফসল উৎপাদনের নিশ্চয়তা এবং লাভের অভাব, যার জন্য তারা ফসলের ন্যায্য দাম (এমএসপি)-এর আইনি স্বীকৃতি দাবি করে।

​সরকার একদিকে যেমন এমএসপি-র আইনি স্বীকৃতির মতো মৌলিক দাবি এড়িয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে পিএমএফবিওয়াই-এর প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণের ওপর জোর দিচ্ছে— যা কৃষকের দীর্ঘমেয়াদি সুরাহা নিশ্চিত করতে পারছে না। ক্যাগ রিপোর্ট ও মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় এই প্রকল্পের মূল সমস্যা প্রযুক্তিগত নয়, বরং কাঠামোগত দুর্বলতা, পরিকাঠামোর অভাব এবং দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা। যতদিন না এই মৌলিক দুর্বলতাগুলি দূর হচ্ছে এবং গ্রামেগঞ্জে বিমাকর্মী-সহ কার্যালয় স্থাপন হচ্ছে, ততদিন ফসল বিমার আধুনিকতা কেবল খাতায়-কলমেই থেকে যাবে।


*মতামত ব্যক্তিগত

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5217 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...