ঈশিতা দে সরকার

চারটি কবিতা

 

উপহার

পালাতে গিয়ে জন্মদিনের ভোরে ঢুকেছি।
মেঝেতে ছড়ানো আমন ফুল, বিপ্লবী মালা।
চোখে চোখ পড়তেই কেঁদে ওঠে লেনিন মাস, সাল, পূর্ব কর্মসূচি…
দরজার দু-ধারে দাঁড়িয়ে সমাজ ও তন্ত্র, দুই ভাই—
দূরে তাকিয়ে দেখি, আমার সবকটা বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারে অ্যাম্বুল্যান্স।
স্যালাইন ড্রিপে ভেজা গদ্য রেখে গেছে কেউ,
মফস্বলি জামায় জটিল নক্সার বোতাম গাঁথছে সময়।
সামনে কত লং মার্চ, হাততালি…

কিন্ত মা?

দু-বছর ধরে আমার জন্মদিনে খেজুর গুড়ের পায়েস রাঁধে না।

 

অসুখ

শীতকালীন মেঘে ভিনদেশি আতর।
কানের গোড়ায় ঘ্রাণ নিচ্ছে
নাভিমূলের দেশ।
মনে-পড়ার অত্যাচারে ধরে যায় কড়াইভর্তি ডালের তলা।
পোড়া গন্ধটুকুই সত্য।
পুড়ে যাওয়ার দাগ সত্যের চেয়েও দু-কদম এগিয়ে—
এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে যাই,
ভারি বুটে পিষে যায় পাখির দানাপানি।
কাঁটাতারের সামনে আমরা সবাই অপরাধী,
কাঁটাতারের ওধারের মানুষকে ভালোবাসা চরম অপরাধ।

 

আবদার

রোদ পায়চারি দেখছে একতারা হারানো বিকেলের।
চেয়ারের হাতলে বার্ধক্য গহর জানের গান যেন….
যেন পুনর্মিলনের জন্য হারমোনিয়াম সদ্য স্নান সেরেছে।
দরবেশি গানের রঙে ডিঙিয়ে যাওয়ার ইশারা।
বাড়িটাতে কোনও বারান্দা নেই।
রক্তক্ষরণে অযাচিত বাক্যবিন্যাস
এই কাব্যগ্রন্থ তোমাকে দিলাম।

একটা বারান্দা দিও,
যে ঘরকে “মা” বলে ডাকবে।

 

ডাকবাক্স

কাটাকুটি উড়িয়ে দিচ্ছি চা-রং দুপুরের দিকে।
পুরনো সোয়েটারে ববলিনের মতো হেমন্ত,
অটোর শব্দ থেকে রায়গঞ্জের বাড়ির বারান্দায় শুকনো আমলকির বারান্দা—
যৌবনের বনে হারিয়ে গেছে শ্বেতবস্ত্র।
আচমকা হাওয়া, হাওয়ার ষড়যন্ত্র।
শীত আসছে।

মনে পড়ছে কাঁচের গাড়িতে রাখা বাবার পা….

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5217 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...