মার্ক্স কোথায়?

মার্ক্স কোথায়? -- শঙ্কর রায়

শঙ্কর রায়

 

কথাচ্ছলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থশাস্ত্র বিভাগের প্রধান প্রয়াত ডঃ দেবেশ চক্রবর্তী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণার কাজে গিয়ে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থশাস্ত্রবিদ ওয়াসিলি লিয়নতিয়েফের উপদেশবার্তা শুনিয়েছিলেন। অধ্যাপক অম্বিকা ঘোষের অধীনে ইনপুট আউটপুট অ্যানালিসিস নিয়ে পিএইচডি করে দেবেশ তখন ফেলোশিপ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ইনপুট আউঊপুট অ্যানালিসিস তত্ত্ব লিয়নতিয়েফের। দেবেশ যখন গ্রন্থাগারে মার্কিন সরকারের ফেডারাল অর্থনৈতিক রিপোর্ট পড়ছেন, হঠাৎই লিয়নতিয়েফ তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে। দেবেশকে বলেছিলেন, “এসব কী পড়ছ? যাও, বরং মার্ক্স-এর ‘ক্যাপিটাল’ পড়ো।” লিয়নতিয়েফ লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, তিনি মার্ক্সবাদী বা মার্ক্সপন্থী না হলেও মার্ক্স-অনুরাগী ছিলেন। মার্ক্স যে গাণিতিক অর্থশাস্ত্রের পথিকৃৎ, লিয়নতিয়েফই প্রথম অ্যামেরিকান ইকনমিক অ্যাসোসিয়েশ্যনের ৫০তম বার্ষিক সভায় (মার্চ ১৯৩৮) অ্যামেরিক্যান ইকনমিক রিভ্যুতে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলেন। সেই পেপারের শিরোনাম ছিল ‘দি সিগ্নিফিক্যান্স অফ মার্ক্সিয়ান ইকনমিক্স ফর প্রেজেন্ট ডে ইকনমিক থিয়োরি’। লিখেছিলেন,

…toward the end of his life Marx actually anticipated the statistical, mathematical approach to the business cycle analysis. An approach which, incidentally, only recently was declared by an authoritative Soviet Russian textbook on mathematical statistics to be nothing else but an insidious invention of the Intelligence Division of the French General Staff. The significance of Marxian economics for the modern business cycle theory lies, however, not in such indecisive direct attempts toward the final solution of the problem but rather in the preparatory work contained mainly in the second and partly in the third volume of Capital. I have in mind the famous Marxian schemes of capital reproduction.

লিয়নতিয়েফ মার্ক্সের সঙ্কট তত্ত্ব ও ব্যবসায় চক্র ব্যাখ্যান সমর্থন করেছিলেন, মেনে নিয়েছিলেন পুঁজিবাদে ক্রমহ্রাসমান মুনাফা হার ও ভোগব্যয় খামতির বাস্তবতা, যা সঙ্কট তত্ত্ব-অঙ্গীভূত, লিখেছিলেন যে, মার্ক্সীয় তত্ত্বের সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য পুঁজিতান্ত্রিক অর্থনীতির বিশ্লেষণ। মার্ক্স এটা পেরেছিলেন তাঁর মৌলিক পদ্ধতির জন্যই, তা অকপটে সমর্থন করে লিয়নতিয়েফ কবুল করেছিলেন: ‘মার্ক্স প্রাতিষ্ঠানিক ও ঐতিহাসিক পারিপার্শ্বিকতায় তথ্য-পরিসংখ্যান যাচাই করে এক ঔপপত্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছিলেন। অবশ্য সেখানে তিনি মার্ক্সের পণ্যরতি তত্ত্বকে (কমোডিটি ফেটিসিজম) ভ্রান্ত বলেছিলেন। সেটা অন্য প্রসঙ্গ।

কিন্তু লিয়নতিয়েফ ‘ক্যাপিটাল: ক্রিটিক অফ পোলিটিক্যাল ইকনমি’ (সংক্ষেপে ‘পুঁজি’) চর্চা মিয়ে যেমন আগ্রহী ছিলেন, অন্তত আমাদের দেশে সরকারি মার্ক্সবাদী দলগুলির তাত্ত্বিক ও সদস্য/অনুগামীদের মধ্যে তা নেই, এমনকি ‘পুঁজি’-পাঠাভ্যাসও ক্রম-অন্তর্হিত। সরকারি মার্ক্সবাদী দলগুলি বলতে সিপিআই(এম), সিপিআই এবং সিপিআই(এম-এল)-এর বিভিন্ন গোষ্ঠীর সরকারি মার্ক্সবাদী (অর্থাৎ লেনিনবাদী) দলগুলি। মার্ক্সবাদী বুদ্ধিজীবীদের কাছেও ‘পুঁজি’-চর্চা মার্ক্স-পাঠ/চর্চাও কার্যত পরিত্যক্ত। ‘পুঁজি’র প্রথম খণ্ড প্রকাশের সার্ধশতবর্ষ পূর্তি (১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭)-র দিন বা তার পরে এক বছরের মধ্যে তার স্মরণে আগ্রহ দেখায়নি এই সরকারি মার্ক্সবাদী দলগুলি। অবশ্য ‘মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব’-এর শতবর্ষ পালনের মহোৎসাহের অভাব ঘটেনি, বরং মাত্রাতিরিক্ততা ছিল, আছে। আমি অনেক আগে একটি লেখায় এই আশঙ্কাই করেছিলাম।

রাশিয়ায় বলশেভিক পার্টির [রাশিয়ান সোশ্যাল ডেমক্র্যাটিক লেবার পার্টি (বলশেভিক)] ক্ষমতা দখলের দু বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই লেনিনের উদ্যোগে তৃতীয় আন্তর্জাতিক (কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল— কমিন্টার্ন) গঠিত হয়। কোনও দেশের কমিউনিস্ট বা শ্রমজীবীদের পার্টির কমিন্টার্ন-এর সদস্যপদ অনুমোদিত, ফলে সেই পার্টিকে বলা হত কমিন্টার্ন-এর সেকশ্যন। তাই পার্টিগুলি ছিল কমিন্টার্ন-এর অধীন। ফলে স্তালিনের প্রয়াণের (১৯৫৩) আগে এই পার্টিগুলির মধ্যে স্বাধীনভাবে চিন্তা ও চর্চার ট্রাডিশ্যন গড়ে ওঠেনি। পরিবর্তে লালিত হয়েছিল লেনিন ও স্তালিনের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের সংস্কৃতি। মার্ক্স ক্রমে ক্রমে ব্রাত্য হচ্ছিলেন। জর্জ অরওয়েল স্তালিন-ভক্ত কমিউনিস্টদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন কোনও তোতাপাখিকে নতুন শব্দ শেখানোর চেষ্টা করা বৃথা। মার্ক্স ও তাঁর রচনাবলি, পাণ্ডুলিপি, চিঠিপত্র, নোটস ও লেখাজোখা নিয়ে ১৯৯০ দশকের গোড়া থেকে মার্ক্স-গবেষকদের (যাঁরা পার্টিতন্ত্রের নিগড়ে শৃঙ্খলিত মার্ক্স পঠন-পাঠনের ছোঁয়াচমুক্ত) ঐতিহাসিক উদ্যোগ (যা মার্কস-এঙ্গেলস-গেসামটাউসগাবে বা মেগা নামে পরিচিত) নতুন অনুসন্ধান/চর্চার সুযোগ তৈরি করেছে। সেই সময়ে বিশেষ করে মার্ক্সের অনাবিষ্কৃত দু-ডজন পাণ্ডুলিপি স্তালিন আমলে মার্ক্স-পাঠ/চর্চার প্রতি অবহেলা প্রকট করে তুলেছে। আনন্দজাজার পত্রিকা, দেশ, এই সময়, প্রতিদিন, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, টেলিগ্রাফ, দি হিন্দু প্রভৃতি দৈনিক/সাময়িকীতে মার্ক্সের ২০০তম জন্মবর্ষপূর্তি নিয়ে কোনও লেখায় ‘মেগা’র উল্লেখ পাইনি। কালান্তর, গণশক্তি, দেশহিতৈষী, আজকের দেশব্রতী, পিপলস ডেমক্রেসি, নিউ এজ, লিবারেশ্যন মান্থলি-তে তো নয়ই। একজন উল্লেখ করলেও লিখেছেন, মেগা-র সব খণ্ডই (১১৫টি) প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু ৬০টির মত খণ্ড পরে প্রকাশিত হয়েছে। অথচ পোলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যা সোসিয়েশ্যন ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ এবং অধ্যাপক শোভনলাল দত্তগুপ্ত-র ব্যক্তিগত প্রয়াসে ২০১১ সালে মেগা নিয়ে বিশ্বের সর্বাগ্রগণ্য কতিপয় মার্ক্স-চর্চাকারদের অন্যতম অধ্যাপক পরেশ চট্টোপাধ্যায় একটি ভাষণ দিয়ে গেছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাগৃহে (তিলধারণের জায়গা ছিল না), যদিও কোনও দৈনিকে এ নিয়ে একটা লাইনও বেরোয়নি।

তাই ‘পুঁজি’ প্রথম খণ্ড প্রকাশের সার্ধশতবর্ষপূর্তির মাস দশেক আগে একটি উত্তর-সম্পাদকীয়তে আশঙ্কা করেছিলাম যে ভারতের সরকারি মার্ক্সবাদী দলগুলি তাঁর স্মরণে কোনও অনুষ্ঠান, সেমিনার বা আলোচনাসভা করবে না, তাদের মুখপত্রগুলির বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করার সম্ভাবনাও কম। ভেবেছিলাম সে লেখা কারও চোখে পড়বে এবং আমার আশঙ্কা অমূলক প্রমাণিত হবে। আমি টরোন্টোর ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্ধশতবর্ষপূর্তি স্মরণে ২৫-২৬ মে ২০১৭-য় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন নিয়ে লিখেছিলাম। কিন্তু তা হল না। আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজকে অনুপুঙ্খভাবে বুঝতে ‘পুঁজি’র, মূলধন ও তার সমস্যাদি নিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের সমালোচনামূলক পুনর্বিবেচনা, ‘মেগা’, মার্ক্স-রচনাবলির অসমাপ্ত চরিত্রের নতুন প্রতিফলন নিয়ে বিতর্ক ইত্যাদি হল না। বলা বাহুল্য, এদেশে যাঁরা মার্ক্স-এঙ্গেলস নিয়ে লেখেন, তাঁদের মধ্যে অতি মুষ্টিমেয় বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক ও গবেষক এসব নিয়ে আলোচনা করেছেন বা করতে পারেন।

অথচ বিদেশে ‘পুঁজি’র তিন খণ্ডর বিক্রিই অভূতপূর্ব হারে বাড়ছে ২০০৮-এ নয়া-উদারপন্থী পুঁজিবাদী দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি কেঁপে ওঠা ‘সাব-প্রাইম মর্টগেজ ক্রাইসিস’-এর পর থেকেই। তার সম্ভাব্য কারণ পুঁজিবাদের এমন অভাবিত বিশ্বজোড়া সঙ্কটের ব্যাখ্যা তাঁরা ফিনান্স পুঁজিবাদের বাহক অর্থবিজ্ঞানীদের বইপত্রে পাচ্ছেন না। আধুনিক আর্থ-অর্থশাস্ত্রের (মানিটারি ইকনমিক্স) ঋত্বিক মিল্টন ফ্রিডম্যান-এর তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা অথবা তাঁর গড়ে তোলা শিকাগো স্কুল অফ মানিটারি ইকনমিক্স-এর পণ্ডিতদের ওপর এঁদের পরম আস্থা সত্ত্বেও তাঁরা মার্ক্সের শরণাপন্ন হচ্ছেন। স্বভাবতই এই নতুন ক্রেতাদের একটা বড় অংশ বামপন্থী নন। কিন্তু ‘সাব-প্রাইম মর্টগেজ ক্রাইসিস’-এর আগেই ফ্রন্টিয়ার সাপ্তাহিক-এ ২০০৭-এ অধ্যাপক পরেশ চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন মার্ক্স শুধু ঊনবিংশ শতকের অর্থশাস্ত্রজ্ঞ ছিলেন তা নয়, একবিংশ শতকেও তিনি প্রাসঙ্গিক:

on a careful reading of Marx’s texts, that, excepting for the new empirical data, most of the theoretical content of what is called imperialism is contained in the corpus of Marx’s critique, pregnant with remarkable prognosis following from his discovery of motion of capital. It is not without reason that a number of readers of Marx today, not necessarily Marxist, consider Marx, far from being limited to the 19th Century, to be the economist of the twenty first century.[1]

মার্ক্সের প্রতি এই অবজ্ঞা নানা কারণে। তার একটি হল লেনিন ও লেনিননাদের প্রতি অত্যধিক ঝোঁক। আর এটা বলশেভিক ক্ষমতা দখলের (৭ নভেম্বর ১৯১৭) পর থেকে। বলশেভিক ক্ষমতা দখল বলছি এজন্যে যে তা কোনও গণবিপ্লবের মাধ্যমে ঘটেনি। লেনিনের জীবদ্দশাতেই ওলন্দাজ মার্ক্সবাদী মার্ক হ্যানসেন এ নিয়ে একটি প্রামাণ্য বই লেখেন, যার ইংরেজি অনুবাদ (‘আ শো ট্রায়াল আন্ডার লেনিন’) করেন জিন স্যান্ডার্স। তিনি ভূমিকাতেই লিখেছিলেন: “The Bolsheviks seized power in Russia in October 1917 by staging a coup d’etat, and then established a dictatorship. The new rulers suppressed all armed resistance in a bloody civil war, after which they made every effort to uproot and exterminate even peaceful political opposition of all kinds. Even now it is impossible in the Soviet Union to subject these developments to critical historical study. The political opponents of the Soviet regime of the time are still regarded by official Soviet historiography as counter-revolutionaries and the measures taken against them are seen as completely justified.” বলশেভিকদের পক্ষ থেকে হ্যানসেনের বক্তব্য খণ্ডন-করা কোনও লেখা চোখে পড়েনি।

মার্ক্সের প্রতি অবজ্ঞা লেনিনের ছিল না, কিন্তু তাঁর মার্ক্স-ভাবনার মধ্যে অনুধাবনগত ফাঁক ছিল, সেটা আজকের দিনে মার্ক্স-চর্চাবিদদের অনেকে বলেন। এঁরা অনেকেই নিজেদের মার্ক্সবাদী বলেন না, মার্ক্সবাদ নিয়ে প্রশ্নও তোলেন, অথচ এঁরা মার্ক্সীয় পদ্ধতি-অনুসারী মার্ক্স-অনুগামীও। পরেশ চট্টোপাধ্যায়ের মতে লেনিন-নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টির ক্ষমতা দখল ‘বিপ্লবী গণতন্ত্রের সম্ভাবনা ধ্বংস করেছিল’। তিনি বলেছিলেন বিংশ শতাব্দীর সমাজতন্ত্র ‘সংখ্যালঘুর শাসন’[2]। পরেশবাবুর দাবির পিছনে যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে। বলশেভিক পার্টির ক্ষমতা দখলের সময় রুশ সংসদে বলশেভিক পার্টির ১৬৮ জন সদস্য ছিল, অন্যদিকে সোশ্যাল রেভল্যুশ্যনারি পার্টির সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৬৮। লেনিন সোভিয়েতগুলির ওপর আস্থাও রাখতে পারেননি। রুশ সোভিয়েতসমূহের প্রথিতযশা ইতিহাসবিদ অস্কার আন ওয়াইলার তাঁর ‘রাশিয়ায় কাউন্সিল আন্দোলন ১৯০৫-১৯২১’ গ্রন্থে (মূল লেখা জার্মানে) লিখেছেন যে লেনিন কখনও সোভিয়েতগুলিকে শ্রমজীবীদের স্ব-শাসিত সংগঠন হতে দিতে আদৌ উৎসাহী ছিলেন না।

আজকের নব মার্ক্স-চর্চাবিদদের অনেকেই মনে করেন লেনিনের সমাজতন্ত্র-সংজ্ঞা মার্ক্সীয় তত্ত্বের সংশোধনবাদী রূপ। এই লেখকেরও একই অভিমত। এক, লেনিনের মতে সাম্যবাদের পূর্ব বা প্রাথমিক স্তর সমাজতন্ত্র। মার্ক্স কিন্তু সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের মধ্যে পার্থক্য করেননি। মার্ক্স ‘গোথা কর্মসূচির সমালোচনা’য় সাম্যবাদেরই দুই স্তর-এর কথা বলেছিলেন। তিনি বলেননি, প্রথম স্তর সমাজতান্ত্রিক সমাজ, আর দ্বিতীয় স্তর সাম্যবাদী সমাজ। বলেছিলেন, প্রথম স্তরে প্রলেতারীয় একনায়কতন্ত্র, দ্বিতীয় স্তরে তা থাকবে না ও ‘পূর্ণ সাম্যবাদ’ প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রথম স্তরে মার্ক্স সমাজ-রূপান্তরের প্রাথমিক কর্মসূচির কথা বলেছেন, যেমন জনগণের প্রয়োজন মেটানোর কাজে অত্যাবশ্যক উৎপাদিকা শক্তির পুনর্গঠন ও বুর্জোয়া সংস্কৃতির মোকাবিলার। প্রলেতারীয় একনায়কতন্ত্রের উদ্দেশ্য হবে পুঁজিবাদীদের পুনরাবির্ভাবের বিষয়ীগত ভিত্তি প্রতিবিপ্লবী শক্তিকে চিরতরে অশক্ত, অকেজো করে দেওয়া। আর দ্বিতীয় স্তরে মানসিক ও শারীরিক শ্রমের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক অবসান, যাতে শ্রমশক্তি ব্যক্তির সামগ্রিক ও সার্বিক বিকাশের পথ প্রশস্ত করতে পারে। এরই ভিত্তিতে সমবায় সম্পদের উন্মুক্ত বিকাশ সুনিশ্চিত হওয়ার কথা বলেছিলেন মার্ক্স। পিটার হুডিসও বলেছেন, “He used these terms completely interchangeably. The notion that ‘socialism’ and ‘Communism’ are distinct historical stages is alien to his work and only entered the lexicon of Marxism after his death.”[3] মার্ক্স কখনও বলেছেন সাম্যবাদ, কখনও সমাজতন্ত্র। দুটোকে আলাদা বলেননি। হুডিসের অনেক আগে পরেশ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন স্টিভ স্মিথ সম্পাদিত ‘দি অক্সফোর্ড হ্যান্ডবুক অফ দি হিস্ট্রি অফ কমিউনিজম (২০১১)-এ তত্ত্বগত দিক থেকে ঐ সঙ্কলনের প্রধানতম নিবন্ধ, ‘কমিউনিজম অফ কার্ল মার্ক্স অ্যান্ড ফ্রিড্রিখ এঙ্গেলস’-এ।

দুই, লেনিন-স্তালিনের প্রলেতারীয় একনায়কত্ব (ফলিত দৃষ্টিতে) মার্ক্সের প্রলেতারীয় একনায়কত্ব থেকে একেবারেই আলাদা। একবার তো লেনিন পার্টির একনায়কত্বকে প্রলেতারীয় একনায়কত্ব বলে (অপ)ব্যাখ্যা করেছিলেন। শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক নিখিল রুশ কংগ্রেসে (৩১ জুলাই ১৯১৯), লেনিন খোলাখুলি বললেন: “… we say, “Yes, it is a dictatorship of one party! This is what we stand for and we shall not shift from that position because it is the party that has won.” খোলাখুলি মার্ক্স-এর প্রলেতারীয় একনায়কতন্ত্র-বিরোধী অবস্থান।

বিংশ শতাব্দীর সমাজতন্ত্র-বিকৃতির সূত্রপাত লেনিনের ‘রাষ্ট্র ও বিপ্লব’ প্রচারপুস্তিকায়, যা অনেকে ভ্রান্তভাবে মানবমুক্তিমুখী মনে করেন। এতে মার্ক্সের বিপ্রতীপে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের মধ্যে পার্থক্য আবিষ্কৃত হয়েছে, সমাজতন্ত্রকে সাম্যবাদের নীচের স্তর বলা হয়েছে। লেনিনের বিবেচনায়, সমাজতন্ত্রের অর্থ ‘উৎপাদন সম্পর্কের সামাজিক মালিকানা’। আরও ব্যাখ্যা করে বলেছেন ‘শ্রমিকশ্রেণির রাষ্ট্রের মালিকানা’, কখনও বলেছেন ‘সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র’, ‘কমিউন রাষ্ট্র’। মার্ক্স সম্পূর্ণ বিপ্রতীপে জোর দিয়েছিলেন সমাজের ওপর, রাষ্ট্রের ওপর নয়। শ্রেণিহীন সমাজে রাষ্ট্র অন্তর্হিত, যে সমাজের যৌথ মালিকানা উৎপাদন সম্পর্কের। বন্ধু লুডভিগ কুগেলম্যানকে ১২ এপ্রিল ১৮৭১-এ একটি চিঠিতে স্মরিয়ে দিয়েছিলেন ১৮৫২ সালে এইটিন্থ ব্রুমেয়ার-এ তাঁর লেখার কথা। মার্ক্স একটি রাষ্ট্রের বিকল্প অন্য এক রাষ্ট্র চাননি, রাষ্ট্রযন্ত্রকেই চূর্ণ করার কথা বলেন।[4] লেনিন বলেছেন ‘সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র’, ও ‘শ্রমিকদের রাষ্ট্র’-র কথা। অথচ ‘রাষ্ট্র ও বিপ্লব’-এ লিখেছিলেন, ‘রাষ্ট্র থাকলে স্বাধীনতা থাকবে না, স্বাধীনতা থাকলে রাষ্ট্র থাকবে না। রাষ্ট্র মাত্রেই যে নিপীড়ন-প্রিয়, তা শুধু মার্ক্স বলেননি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বলেছেন, গান্ধিজিও রাষ্ট্রের হাত শক্ত করার ঘোর বিরোধী ছিলেন।

লেনিন-সূত্রায়িত সাম্যবাদের নীচের স্তরে (তাঁর ব্যাখ্যাত সমাজতন্ত্রে) অর্থব্যবস্থাকে ‘রাষ্ট্রীয় সিন্ডিকেট’ অথবা ‘একটি কারখানা’ হিসেবে দেখেছিলেন, যা ‘সমস্ত নাগরিকদের’ রূপান্তরিত করেছিল ‘রাষ্ট্রের ভাড়া-করা কর্মচারীতে’। তিনি সমাজতন্ত্রকে ‘রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ’ বলে ছিলেন। এইখানে মার্ক্সের সঙ্গে লেনিনের গভীর পার্থক্য! প্রথম আন্তর্জাতিক-এর উদ্বোধনী ভাষণে (১৮৬৪) মার্ক্স ভাড়া-করা শ্রমিক (পুঁজিতন্ত্রে) ও ‘সহযোগী শ্রমিক’ (সমাজতন্ত্রে)-এর মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য টেনেছিলেন। মার্ক্সের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে লেনিনের রাষ্ট্রই পুঁজিতান্ত্রিক মজুরি শ্রমিক নিয়োজিত করেছিল। লেনিন এভাবে সমাজতন্ত্রকে ‘রাষ্ট্রীয় পুঁজিতন্ত্র’ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। পুঁজিতন্ত্রের লক্ষ্য বেপরোয়া কেন্দ্রীকরণ। মার্ক্স-এর মতে, “In a given society, this limit [extreme centralisation] would be reached if all social capital were concentrated into the same hands, whether those of an individual capitalist or those of a single capitalist society.” এই single capitalist society-ই ‘রাষ্ট্রীয় পুঁজিতন্ত্র’। এই বিষয়টি রায়া দুনায়েভস্কায়া ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত The Nature of Russian Economy-তে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন।

লেনিন যে মার্ক্সের পথ থেকে সরে গিয়েছিলেন, আজকের মার্ক্স-স্কলারদের অনেকে বলছেন। তাঁদের মতে বিংশ শতাব্দীর উদ্বায়ু সমাজতন্ত্রের বিপ্রতীপে মার্ক্সের মুক্তান্বেষী সমাজতান্ত্রিক প্রকল্প-ভাবনার ঔজ্জ্বল্য দীপ্যমান। সমাজতান্ত্রিক বিকাশের বস্তুগত ও বিষয়ীমুখ শর্ত সৃষ্ট হয় পুঁজিতন্ত্রের অন্তঃসংঘাতে। একটি স্তরে উৎপাদিকা শক্তির সঙ্গে উৎপাদনের সম্পর্কের সংঘাত অনিবার্যভাবে দেখা দেয়। একই সঙ্গে ব্যষ্টির সঙ্গে উৎপাদনের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক। তাই বিষয়ীগত বা সক্রিয় বাহকেরাই অর্থাৎ শ্রমজীবী মানুষেরা, যাদের সৃষ্টি করেছে পুঁজিতন্ত্র। আবার তারাই পুঁজিবাদের ‘কবরখনক’, সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের পথে এরাই এক অর্থে বিষয়গত শর্তাদি-নিরপেক্ষভাবেই অনুঘটকের ভূমিকা নেবে। তাই শ্রমজীবী মানুষদের ওপরেই বর্তায় নতুন অর্থাৎ উত্তর-পুঁজিতান্ত্রিক সমাজ গড়ার বিষয়ীগত কর্তব্য। কারণ পুঁজিতন্ত্র নিজে থেকে নিরস্তিত্ব হবে না। তা সম্ভব বিপ্লবের মাধ্যমে। এরা মজুরি ও বেতনের জন্য শ্রম-ক্ষমতা (কায়িক ও মানসিক) বিক্রি করে। কিন্তু মার্ক্স চেয়েছেন শ্রমজীবী মানুষেরা নিজেরাই রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করুক, কোনও গোষ্ঠী, পার্টি নয়, লেনিন প্রবর্তিত ‘পেশাদার বিপ্লবী’দের মাধ্যমেও নয়। এঙ্গেলস কমিউনিস্ট ইস্তাহারের ‘১৮৯০ সালের জার্মান সংস্করণের ভূমিকা’র সংযোজনী টীকা-য় লিখেছিলেন, ‘ইস্তাহার-এ বর্ণিত নীতিগুলির শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে মার্ক্স পুরোপুরি ও একান্তভাবে নির্ভর করেছিলেন শ্রমিকশ্রেণির বুদ্ধিবৃত্তিগত বিকাশের ওপর, মিলিত লড়াই ও আলোচনা থেকে যার বিকাশ অনিবার্য।’[5] পেশাদার বিপ্লবীরা শ্রমিকশ্রেণিকে সচেতন করবে, মার্ক্স ও এঙ্গেলস কোথাও লেখেননি। কেননা প্রকৃত ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ মার্ক্স-এঙ্গেলসভাবিত বিপ্লবে এই কাজটা ‘বিপ্লবের প্রথম পদক্ষেপ মাত্র’, যা অবশ্যই হবে দীর্ঘকালমেয়াদি। এই ‘বৈপ্লবিক রূপান্তরের কালপর্বেই শ্রমজীবী শ্রেণি সহ সমস্ত শ্রেণিসমূহের অবলুপ্তির পটভূমি সৃষ্টি হবে ও সমাজতন্ত্রের (বা সাম্যবাদের) বিজয়-প্রারম্ভের সূচনা হবে। মুক্ত ও সাম্য-ভিত্তিক ব্যষ্টিমমূহের সমিতি উদ্বর্তিত হবে, যেখানে এক ব্যক্তির দ্বারা অন্য ব্যক্তির শোষণের (পিতৃতন্ত্র সহ নানা প্রকার ক্রীতদাসত্ব, জাতপাত) অবসান ঘটবে। ব্যক্তি-শোষণের অবসানের পূর্বশর্ত পণ্য উৎপাদনের অবসান (পুঁজিতন্ত্রের উদ্ভব পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গেই), বিকশিত হবে এমন এক সমাজ যেখানে উৎপাদনকারীদের তাদের উৎপাদিত পণ্যাদির ওপর অধিকার তার যৌথ মালিকানা। এমনটাই চেয়েছিলেন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের যুগ্ম প্রবক্তারা। লেনিনীয় সমাজতন্ত্রে এর চিহ্নমাত্র ছিল না।

বিংশ শতাব্দীর কোন তথাকথিত ‘সমাজতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদন প্রথা ও মজুরি-শ্রম প্রথা (যা পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে অন্বিত) চালু ছিল। মার্ক্স মজুরি-শ্রমকে অভিহিত করেছিলেন ‘মজুরি-দাসত্ব’। তাহলে সমাজতন্ত্র কোথায়?

মার্ক্সীয় সমাজতাত্ত্বিক সাইমন ক্লার্ক তো লেনিন মার্ক্সবাদী ছিলেন কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি ১৯৯৮ সালে একটি সন্দর্ভে[6] লেখেন যে ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’ অর্থাৎ ডায়ালেক্টিক্যাল মেটেরিয়ালিজম শব্দবন্ধ মার্ক্সের নয়, প্লেখানভের (১৮৯১-এ Neue Zeit পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে), যা লেনিন ১৮৯৪ সালে ‘হোয়াট দি ফ্রেন্ডস আর’ নিবন্ধে আরও জোর দিয়ে ব্যবহার করেন। অথচ মার্ক্সের শব্দবন্ধ ছিল ‘বস্তুবাদী দ্বন্দ্বতত্ত্ব’— মেটেরিয়ালিস্টিক ডায়ালেক্টিক্। এঙ্গেলস তাঁর ‘ডায়ালেক্টিক্স অফ নেচার’-এ মার্ক্স-এর ‘মেটেরিয়ালিস্টিক ডায়ালেক্টিক্’ উল্লেখ ও ব্যাখ্যা করেছেন, কোথাও ডায়ালেক্টিক্যাল মেটেরিয়ালিজম লেখেননি। তেমনি মার্ক্সের লেখায় ‘হিস্টরিক্যাল মেটেরিয়ালিজম’ বা ‘ঐতিহাসিক বস্তুবাদ’-এর উল্লেখমাত্র নেই। ক্লার্ক-এর মতে প্লেখানভের ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’ এঙ্গেলসের ‘মেটেরিয়ালিস্টিক ডায়ালেক্টিক’ ও মার্ক্সের বুর্জোয়া দর্শনের সমালোচনার থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা।

ক্লার্কের অনেক আগে ১৯৭০ দশকের শেষে ডেভিড ম্যাকলেলান ‘মার্ক্স’ পুস্তিকায় লেখেন মার্ক্সের কোনও লেখায় ‘ডায়ালেক্টিক্যাল মেটেরিয়ালিজম’ ও ‘হিস্টরিক্যাল মেটেরিয়ালিজম’ (ঐতিহাসিক বস্তুবাদ)-এর উল্লেখমাত্র নেই। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, ম্যাকলেলান-এর দাবি নিয়ে তদানীন্তম সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব জার্মানির দ্বন্দ্বতত্ত্বের পণ্ডিতেরা (বিশেষ করে মনে পড়ছে পূর্ব জার্মানির উইলিয়ম ন র্ডেন ও হ্বাল্টের ডিহ্ল-এর কথা) নীরব ছিলেন কেন?

এঙ্গেলস ২১ সেপ্টেম্বর ১৮৯০-এ লন্ডন থেকে তাঁর কোনিসবার্ফ-এর বন্ধু জে ব্লখকে লেখেন: “According to the materialist conception of history, the ultimately determining element in history is the production and reproduction of real life. Other than this neither Marx nor I have ever asserted.” সে চিঠির প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। এঙ্গেলস বলেছিলেন যে কেউ যদি ভাবে যে অর্থনৈতিক উপাদানই একমাত্র নির্ধারক, তা হবে অর্থহীন ও বাস্তবতারহিত।

মার্ক্স-পাঠের অন্যতম প্রধান সমস্যা, তাঁর লেখা, বক্তব্য ইত্যাদির বিকৃতিকরণ। যেমন গত প্রায় সাত দশক ধরে মার্ক্সের নামে একটি বাক্য চাউর আছে ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমি মার্ক্সবাদী নই।’ এর সত্যতা সম্পর্কে গভীর সন্দেহ আছে। যেটুকু টেক্সট ঘেঁটেছি, তাতে কোথাও পাইনি এই উক্তি। যাঁরা দশকের পরে দশক এই বাক্য উদ্ধৃত করে যাচ্ছেন, তাঁরা কেউ সূত্র উল্লেখ করছেন না। এটা কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিকৃতি? মার্ক্স প্রথম আন্তর্জাতিক-এর এক সভার পরে ১৮৮১-র মে মাসে বলেছিলেন, “এটুকু নিশ্চিত জানি, আমি মার্ক্সবাদী নই।” বলেছিলেন তাঁর জামাতা পল লাফার্গকে (লরার স্বামী) ও জুল গিদেকে এবং চোস্ত ফরাসি ভাষায়— “ce qu’il y a de certain c’est que moi, je ne suis pas Marxiste.” মার্ক্স খানিকটা বিরক্ত হয়েই, এঁদের অর্থাৎ ফরাসি সমাজতন্ত্রীদের সতর্ক করেছিলেন। দুঃখের বিষয়, অনেক তাবড় তাবড় তারপরেও উদ্ধৃত করেছেন আগেকার কল্পিত বাক্য। এমনকি অশোক সেন (‘বারোমাস’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, যাঁর প্রয়াণের পরে তাঁকে সবচেয়ে বড় মার্ক্স-পণ্ডিত আখ্যা দিয়েছিলেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ডঃ রুদ্রাংশু মুখার্জি)-ও। ২০১১ সালে প্রকাশিত ‘ইতিহাসের ঠিকঠিকানা’ গ্রন্থে অশোক সেন লেখেন, ‘মনে পড়ে মার্ক্সের সেই ব্যাজোক্তি ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমি মার্ক্সবাদী নই।’[7] অথচ মার্ক্স আসলে কী বলেছিলেন (আগেই উল্লেখ করেছি) তা তার বছর ২০ আগে প্রকাশিত।

তাই মার্ক্সকে এদেশের মার্ক্স-পণ্ডিতেরা উদ্ধত অজ্ঞানতার অন্ধ কারাগারে বন্দি করে রেখেছেন। মার্ক্সকে মুক্ত করার দায়িত্ব বর্তেছে আগামী প্রজন্মের উপর, যাঁরা মার্ক্সকে পার্টিতন্ত্রের কলুষ থেকে বাঁচাতে পারবেন।


[1] Paresh Chattopadhyay, On a New Defence of Lenin, Frontier, October 7-November 3, 2007, p6
[2] পরেশ চট্টোপাধ্যায়। টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি সোশ্যালিজম— আ মাইনরিটি রুল। ইকনমিক অ্যান্ড পোলিটিক্যাল উইকলি। ১৪ মে ২০১৬।
[3] Marx’s Concept of Socialism. Peter Hudis. The Oxford Handbook of Karl Marx. Edited by Matt Vidal, Tony Smith, Tomás Rotta, and Paul Prew. জুলাই ২০১৯।
[4] Marx to Dr Kugelmann Concerning the Paris Commune. ১১/৮/২১-এ পড়া।
[5] মার্ক্স এঙ্গেলস। কমিউনিস্ট পার্টির ইস্তাহার। প্রগতি প্রকাশন। মস্কো। পৃঃ ২০।
[6] Was Lenin a Marxist? The Populist roots of Marxism-Leninism.
[7] ‘আরেকরকম’ পাক্ষিক-এর ১-১৫ জুলাই, ২০১৮ সংখ্যায় উদ্ধৃত

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4659 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

  1. ভারী আমোদ পেলুম পড়ে। সবচেয়ে রোমহর্ষক ব্যাপার যেটা, লেখকের বিচারে সবাই মার্ক্সপন্থী, মার্ক্সীয় বুদ্ধিজীবী, মার্ক্সবাদী… একমাত্র মার্ক্সবিরোধী কোন শালা? লেনিন! ওহ! খুরে খুরে প্রণাম দাদা আপনার! কোথায় ছিলেন?

Leave a Reply to ক.ব. Cancel reply