প্রাচীন ও প্রাক-আধুনিক ভারতে হাসপাতালের নানা চেহারা— চরক-সংহিতা ও অন্যান্য

জয়ন্ত ভট্টাচার্য

 


বর্তমানে আমরা হাসপাতালের যে চেহারা দেখি তার সঙ্গে প্রাক-আধুনিক হাসপাতালের কোনওরকম সাযুজ্য নেই, একমাত্র রোগীর চিকিৎসা হয় রোগ নিরাময়ের লক্ষ্যে, এটুকু ছাড়া। আমরা চরক-সংহিতা-র হাসপাতালে দেখেছি কেবল রাজপুরুষ বা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের চিকিৎসা করা হত, এবং দক্ষিণ ভারতের বিষ্ণুমন্দিরের হাসপাতালের উপযোগিতা ছিল কেবল নিজস্ব বৈদিক কলজের ছাত্রদের জন্য। ইউরোপেও সেরকম শিশু, বৃদ্ধ, সাধারণভাবে অসুস্থ, অনাথ, দরিদ্র এবং পরিব্রাজক বা যাত্রীদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হাসপাতাল ছিল। আরেকটি বিষয় হল, এই ধর্ম-কেন্দ্রিক হাসপাতালগুলোতে লক্ষ্য থাকত রোগীদের শুধুমাত্র দেহের নয়, soul-এর-ও চিকিৎসা করা

 

হাসপাতাল মানুষের ইতিহাসের অতি প্রাচীন মানবিক সংগঠনগুলোর একটি। এবং এর ইতিহাসও অতি প্রাচীন। আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগে এলিয়াস অ্যারিস্টিডিস বলছেন— “Neither belonging to a chorus nor sailing together nor having the same teacher is as great a thing as the boon and profit of being a fellow pilgrim to the temple of Asclepius and being initiated into the first of the holy rites by the fairest and most perfect torch-bearer and leader of the mysteries.”[1]

এসকেলেপিয়াস, আমরা বোধ করি সবাই জানি, প্রাচীন গ্রিসের মেডিসিনের পৌরাণিক দেবতা। তাঁর মন্দিরে যাওয়ার জন্য, অবশ্যই রোগমুক্তির উদ্দেশ্যে, এই আকুলতা। মন্দির, মঠ, চার্চগুলোতে আর্ত মানুষের নিরাময় করার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকত সে আদিমকাল থেকে।

এসকেলেপিয়াস-এর মন্দির। সূত্র: আন্তর্জাল

ভারতের প্রথম আয়ুর্বেদ গ্রন্থ তথা শাস্ত্র বলে স্বীকৃত চরক-সংহিতা-রও সঙ্কলনকালের কিছু আগে-পরে[2] বৌদ্ধযুগের ইতিহাসে যথেষ্টসংখ্যক হাসপাতালের হদিস পাওয়া যায়। কেনেথ জিস্ক তাঁর প্রামাণ্য গবেষণাগ্রন্থ Asceticism and Healing in Ancient Indiaঃ Medicine in the Buddhist Monastery-তে জানাচ্ছেন— “Evidence of Buddhist hospitals or monastic structures devoted to the care and treatment of the sick is meager. Monks and nuns were usually treated in their own cells. However, a reference in the Pali canon to a “hall of the sick” (gildnasald), located at the Hall of the Peaked Gable (kutdgarasala) in the Great Forest (mahavana) near Vesali, points to a structure in the monastery compound set aside for the care of sick brethren … An inscription from Nagaijunikonda, dating from the third century c.e., suggests that a health house for the care of those suffering and recovering from fever was part of this famous Buddhist monastery.”[3]

৯০০ বছরের পুরনো বৌদ্ধ মঠ ও চিকিৎসাস্থল। সূত্র: Westside Gazette

 

চরক-সংহিতা ও হাসপাতালের আদিরূপ

চরক-সংহিতার পঞ্চদশ অধ্যায়ে (উপকল্পনীয়মধ্যায়) রাজতুল্য কোন ধনবান ব্যক্তি বা রাজা ও রাজপুরুষদের উপযুক্ত পঞ্চকর্মের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল তৈরির বেশ বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে ৬ নম্বর থেকে ১২ নম্বর শ্লোক পর্যন্ত। এবার বর্ণনা দেখা যাক—

বাস্তুবিদ্যায় কুশল ব্যক্তিকে দিয়ে সংশোধনৌষধসেবীর চিকিৎসার জন্য আগে থেকেই একটি গৃহ নির্মাণ করতে হবে। গৃহটি দৃঢ় হবে এবং বায়ুরহিত (অর্থাৎ বায়ু চলাচল করবে না) হবে। কেবল একটি জায়গা খোলা থাকবে যেখান দিয়ে বাতাস ঢুকতে বা বেরোতে পারবে। গৃহটি আয়তনে এরকম হবে যে ঘরের মধ্যে বিচরণে যেন কোনও কষ্ট না হয়। গৃহটি “অনুপত্যক” হবে অর্থাৎ পাশে কোনও উঁচু বাড়ি বা উঁচু পর্বতাদি থাকবে না। গৃহের মধ্যে যেন ধোঁয়া, রোদ ও ধুলো প্রবেশ করতে না পারে। গৃহে যেন কোনওভাবে অনিষ্টকর শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধসমূহের অগম্য হয়। সেখানে যেন সোপান, উদুখল, মুষল, মলত্যাগের স্থান, স্নানের জায়গা এবং রান্নাঘর থাকে।

এরকম গৃহ নির্মাণ করানোর পরে সেখানে রোগীর শুশ্রূষার জন্য সুশীল, শুচি, প্রভুভক্ত, দক্ষ, দয়ালু, সর্বকর্মে পটু, অন্ন্যব্যঞ্জন রন্ধনে নিপুণ, পাচক, স্নানকারক, হাত-পা শরীর মর্দনকারক, উত্থাপক ও সম্বেশক অর্থাৎ যে শোয়াতে ও বসাতে পটু, এবং কোনও কাজেই বিরক্তি প্রকাশ করেনা, এরকম পরিচারকেরা নিযুক্ত থাকবে।

চিকিৎসার স্থানে তথা হাসপাতালের এই আদিরূপে যে ধনাঢ্য ব্যক্তি বা রাজপুরুষ কিংবা রাজন্যবর্গ অবস্থিতি করছেন তাদের মনোরঞ্জনের জন্য গীত, বাদ্য, স্তুতিপাঠ (এই শব্দটিকে খেয়াল করব— স্তুতিপাঠ, স্তোত্রপাঠ নয়), শ্লোক, গাথা, আখ্যায়িকা, ইতিহাস ও পুরাণে কুশলী ব্যক্তিরা এবং প্রভুর অভিপ্রায়জ্ঞ (অর্থাৎ ইঙ্গিতমাত্রই যে প্রভুর অভিপ্রায় বুঝতে পারে এরকম ভৃত্য) ব্যক্তিসকল প্রভুর অভিমত ও দেশকালজ্ঞ ব্যক্তিদের পারিষদ হিসেবে নিযুক্ত থাকবে।

এই চিকিৎসার গৃহে তথা বাসস্থানে লাব (বক পাখি), কপিঞ্জল (চাতক পাখি), কৃষ্ণসার মৃগ, কালপুচ্ছ হরিণমাতৃকা হরিণ (আকারে এবং উদরের আকৃতিতে বৃহৎ হরিণ বিশেষ) ও উরভ্র অর্থাৎ ভেড়া প্রভৃতি প্রাণী থাকবে। শুধু তাই নয়, শান্ত, নীরোগ, জীববৎসা (মৃত বাছুর প্রসব করে না), দুগ্ধবতী গাভিদের রাখা হবে, এবং তাদের খাবার জন্য তৃণ, শোওয়ার জন্য গৃহ ও পানের জন্য জন্য জলের আয়োজন থাকবে।

সে স্থানে আচমনপাত্র (অর্থাৎ পুজোর কাজ শুরু করার আগে জল দিয়ে বিধিমতো দেহশুদ্ধি), জলকোষ্ঠ (জলের টব), হাঁড়ি, কলসি, ঘট, কুম্ভ, শরাব, হাতা, জলপাত্র, রান্নার পাত্র, মন্থনদণ্ড, বস্ত্র, সূত্র, কার্পাস, লোম থেকে তৈরি সূত্র, নিদ্রার সুখের জন্য উত্তম আস্তরণ, এবং তার ওপরে চাদর, বালিশ প্রভৃতি উপজরণ সমেত “ছাগদি লোমজ শয্যা ও আসন” থাকবে। এবং ভৃঙ্গার (গাড়ু) ও প্রতিগ্রহও (থুথু ফেলবার পাত্র) সেখানে থাকবে। সেখানে শয়ন, উপবেশন, স্নেহ, স্বেদ, অভ্যঙ্গ, প্রলেপন, পরিষেক, অনুলেপন, বমন, বিরেচন, শিরোবিরেচন, আস্থাপন, অনুবাসন এবং মলমূত্র ত্যাগ এসব কাজ সম্পাদনের জন্য যে যে সামগ্রী আরামদায়ক সে সমস্ত কিছুর আয়োজন করা থাকবে।

এসব ছাড়াও ভালভাবে ধোওয়া এবং পরিষ্কার করা (সুপ্রক্ষালিত) বালিশ; মসৃণ, কর্কশ এবং মধ্যম প্রকারের শিলাসমূহ; এবং কোদাল, কুঠার ও কাটারি প্রভৃতি অস্ত্রশস্ত্রসমূহ উপকরণ হিসেবে সে জায়গায় থাকবে। থাকবে ধূমপানের নল, বস্তির (তলপেট বা মূত্রাশয়) নল ও উত্তর বস্তির আয়োজন থাকবে। সেখানে কুশহস্ত (আর্দ্র দ্রব্য যাতে পচে না যায়), তুলাদণ্ড, মাপের পাত্র এবং ঘি, তেল, বসা (চর্বি), মজ্জা, মধু, মাত (ঝোলা গুড়), গুড়, লবণ, কাঠ, জল, মধুজাত মদ্য, কাঁচা ছোলা, বার্লি, তিল, মৈরেয় মেদক, দই, মণ্ড, ঘোল, ধান্যাম্ল (আউশধানের কাঁজী) এবং গোমূত্রাদি মূত্রসমূহের আয়োজন করে রাখা আবশ্যক।

এখানে শালিধান, ষষ্টিকধান, মুগডাল, মাষকলাই ডাল, যব, তিল, কুলত্থ (কলাই), মৃদ্বীকা (কিসমিস), ফলসা ফল, হরিতকি, আমলকি, বহেড়া (হরিতকির মতো ফল), এবং নানাবিধ স্নেহ (চর্বি বা ঘি) এবং স্বেদের উপযুক্ত দ্রব্য সমূহ রাখতে হবে। এছাড়া ঊর্ধ্বশোধন, অনুলোমন, ঊর্ধ্বাধঃ শোধন, সংগ্রহণীয়, দীপনীয়, পাচনীয়, উপশমনীয় এবং বাতনাশক ঔষধ-সমূহ সংগ্রহ করে রাখতে হবে। এবং এসব ছাড়া যেসব দ্রব্যে ওষুধ সেবনের পরে বিপত্তি হতে পারে তার প্রতিকারের জন্য যাতে ওষুধ সেবনের পরে সুখস্বাচ্ছন্দ্য হয়— এসব সামগ্রীরও আয়জন করে রাখতে হবে।

রোগীর শয্যার পাশে থুথু ফেলবার পাত্র থাকবে। আর রোগীর কপাল, পার্শ্ব কিংবা নাভি বা পিঠে বেদনা হলে সেসব জায়গা মালিশ করে দেবে এরকম প্রিয় সুহৃদেরা পরিচর্যার জন্য থাকবে।

এত দীর্ঘ বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হল ইংরেজিতে চরক-সংহিতায় সে-সময়ের উপযোগী proto-hospital নিয়ে আন্তর্জাতিক অ্যাকাডেমিয়ায় অনেক আলোচনা হলেও বাংলায় আমার জানার মধ্যে কোনও আলোচনা চোখে পড়েনি। অথচ হাসপাতালের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এ-অংশটুকু জরুরি— আশা করা যায় সবাই বুঝবেন।

হাসপাতালের এরকম পূর্ণাঙ্গ বর্ণনার পরে ১৮ থেকে ২১ নম্বর শ্লোকে বলা হয়েছে—

রাজা কিংবা রাজতুল্য ব্যক্তি অথবা অতুল ধনসম্পদ আছে তিনিই এরকম চিকিৎসা পেতে পারেন। দরিদ্র ব্যক্তির পক্ষে পূর্বোক্ত দ্রব্যসম্ভার সংগ্রহ করা কঠিন। এজন্য সে অসুস্থ হলে তৎকালোচিত বিরেচন ওষুধ সেবন করানো হবে। সকল মানুষেরই সমস্ত উপকরণ থাকা সম্ভব নয় এবং দরিদ্রেরও দারুণ রোগ হওয়া অসম্ভব নয়। ফলে যেরকম সম্ভব সেভাবে চিকিৎসা হবে।

আমরা এ-বিবরণ থেকে বুঝতে পারি যে হাসপাতাল বলে বিশেষ ধরনের চিকিৎসার যে স্থানটির বর্ণনা আমরা এতক্ষণ পড়লাম তার সঙ্গে আধুনিকে হাসপাতালের কোনও সাযুজ্য নেই। ধনীদের বাড়ির একটি প্রসারিত রূপ হচ্ছে এই হাসপাতাল।

কার্যত, কী ইউরোপে কী ভারতে বা চিনের বৌদ্ধ মঠগুলোতে দরিদ্র, অসুস্থ এবং আর্ত মানুষদের আশ্রয় দিয়ে থাকা, খাওয়া আর চিকিৎসার যে ব্যবস্থা ছিল তাকে ইংরেজিতে “alms house” বলা হত। নিচের ছবিটি থেকে তার ধরন বোঝা যাবে।

ইংল্যান্ডের প্রাচীন alms house. সূত্র: উইকিপিডিয়া

এরকমই কোনও গৃহের বর্ণনা চরক-সংহিতায় রয়েছে। এবং রয়েছে সাধারণভাবে অসুস্থ সবার চিকিৎসার জন্য নয়। রাজা, রাজপুরুষ বা ধনাঢ্য ব্যক্তির বিশেষ ধরনের চিকিৎসার জন্য। এখানে দরিদ্রদের বিশেষ প্রবেশাধিকার ছিল না। ফলে alms house-এর দরজা যেমন সবার জন্য অবারিত ছিল, এখানে সেরকম কোনও পরিস্থিতি ছিল না। এ-কারণে এই হাসপাতালের সঙ্গে প্রাচীন alms house-এর সাযুজ্য পাওয়া যাবে না।

রিসে তাঁর পূর্বোক্ত পুস্তকে বলছেন— “For almost a 1,000 years, almshouses and hospitals had been organized and run in accordance with highly successful monastic models of prayer and work.”[4]

 

প্রাক-আধুনিক যুগে হাসপাতালের আংশিক বর্ণনা

৭ম শতাব্দীতে চিনা পর্যটক হিউয়েন সাং[5] ভারতে পর্যটনে এসে দেখেছিলেন— “গ্রাম এবং শহর নির্বিশেষে সমগ্র ভারতবর্ষে সমস্ত রাজপথের ধারে রাজা বহুলসংখ্যক অনাথশালা[6] নির্মাণ করেছেন ভ্রমণকারীদের জন্য। এখানে এমনকি দরিদ্রদেরও একইভাবে ওষুধ এবং খাদ্য দেওয়া হয়।”[7]

সাম্প্রতিক সময়ের একটি প্রামাণ্য অনুবাদে বলা হয়েছে— “In this country there were formerly many almshouses to render help to the poor and needy or give them free food and medicine, and to provide travellers with meals so that they might dispel their fatigue.”[8]

আমরা প্রাক-আধুনিক বা মধ্যযুগের ভারতের একটি হাসপাতালের বিস্তৃত বর্ণনা পাই একাদশ শতাব্দীর এক মন্দিরগাত্রে উৎকীর্ণ তামিল লিপি থেকে (A.D. 1069)। তামিলনাড়ুর চিঙ্গালপেট[9] জেলার মধুরত্নকম তালুকের তিরুমুক্কুদলে ভেঙ্কটেশ পেরুমলের বিষ্ণুমন্দিরের প্রাচীরে খোদাই করা ছিল দুটি সেকশনে বিভক্ত এই বর্ণনা। মোট ৫৫ লাইনের এই লেখার প্রথম সেকশন লম্বায় ৫৫ ফিট। খোদাই করা এই লিপি মোট ৫৪০ স্কোয়ার ফিট জায়গা জুড়ে রয়েছে।[10]

এই সুদীর্ঘ লিপিতে এই মন্দির কীভাবে চালানো, কার কাছ থেকে কতটা সাহায্য পাওয়া যায়, কোন কোন খাতে অর্থ ব্যয় হয় এসব সংক্রান্ত বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে। এরপরে বলা আছে এই মন্দিরে বেদশিক্ষার জন্য একটি কলেজ আছে। ঋগ্বেদের শিক্ষকের জন্য বছরে ৬০ কলম (১১৫,২০০ তিলের সমান) ধান এবং ৪ কাশু মুদ্রা (প্রাচীন তামিলে ব্যবহৃত তাম্রমুদ্রা, ওজনে ১/২ গ্রাম) বরাদ্দ ছিল। কলেজের সঙ্গে যুক্ত হোস্টেলে দৈনিক ৬০ জনকে ভোজন করানো হত।[11]

এরপরে একটি হাসপাতাল চালানোর খরচের বর্ণনা রয়েছে। বৈদিক কলেজের হোস্টেলে যে-সমস্ত ছাত্ররা থাকত তাদের চিকিৎসার জন্য তৈরি হয়েছিল এই হাসপাতাল। হাসপাতালে ১৫টি শয্যা ছিল। হাসপাতালের দায়িত্বে যে ফিজিশিয়ান ছিলেন তাঁর জন্য বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৯০ কলম ধান এবং ৮ কাশু মুদ্রা। একজন সার্জন ছিলেন যাঁর জন্য বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৩০ কলম ধান। সুপ্রাচীন কাল থেকে ইউরোপের মতো এখানেও ফিজিশিয়ান এবং সার্জনের মধ্যে সামাজিক মর্যাদায় পার্থক্য ছিল সেটা এই বরাদ্দ থেকে স্পষ্ট হয়। ফিজিশিয়ানদের অবস্থান সার্জন বা শল্যচিকিৎসকদের ওপরে ছিল। যে দুজন ভেষজ সংগ্রহের কাজে নিযুক্ত ছিল তাদের জন্য বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৬০ কলম ধান এবং ২ কাশু মুদ্রা। এরা জ্বালানির কাঠ সংগ্রহ করত এবং ওষুধ তৈরির কাজও করত। ২ জন নার্স ছিল যাদের বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৩০ কলম ধান এবং ১ কাশু মুদ্রা।[12]

একজন নাপিতও ছিল যার জন্য বরাদ্দ ছিল ১৫ কলম ধান। সম্ভবত এরা ছোটখাটো অপারেশনও করত, প্রামাণিকের কাজ করা ছাড়াও। অসুস্থদের জন্য প্রত্যেকের জন্য দৈনিক বরাদ্দ ছিল ১ নালি[13] চাল। হাসপাতালের সারা রাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখার জন্য বরাদ্দ ছিল সোয়া ২ কাশু। যারা জল-বাহক ছিল তাদের বরাদ্দ ছিল ১৫ কলম ধান এবং ওষুধ সংরক্ষণ করে রাখার জন্য ৪০ কাশু বরাদ্দ ছিল।[14]

যেসব ওষুধ সংগ্রহে রাখা হত সেগুলো হল— (১) ব্রাহ্মায়ম-কাদুম্বুরি, (২) বাসা-হরিতকি, (৩) গোমূত্র-হরিতকি, (৪) দশমূল-হরতকি, (৫) ভল্লাতক-হরিতকি, (৬) গণ্ডীরা, (৭) বলাকেরণ্ড তৈল, (৮) পঞ্চাক তৈল, (৯) লশুনাদী-এরণ্ড-তৈল, (১০) উত্তম-করণাদি-তৈল, (১১) ষুক্লস-ঘৃত, (১২) বিলবাদি-ঘৃত, (১৩) মণ্ডূকর-বটীকা, (১৪) দ্রবত্তি, (১৫) বিমল, (১৬) সুনেত্রী, (১৭) তামাদ্রি, (১৮) বজ্রকল্প, (১৯) কল্যাণক-লবণ, এবং (২০) পুরাণ-ঘৃত। ব্রাহ্মরসায়নের ব্যাপারে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে ৪৪টি উপাদান দিয়ে এই ওষুধটি তৈরি হয়। যেহেতু এই ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়া ও উপাদান এবং ওষুধ হিসেবে গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি এ-জন্য ছাত্রদের সম্যকভাবে জানা একান্ত জরুরী। এ ওষুধে বুদ্ধিবৃত্তি শানিত হয়, অবসন্নতা দূর করে, স্মৃতিবর্ধক এবং শক্তি ও আয়ু বৃদ্ধি করে।[15] উল্লেখযোগ্য হল যেসব ওষুধের কথা বলা হয়েছে সে ওষুধগুলোর একটি বৃহদংশের ব্যবহার চরক-সংহিতা অথবা বাগভট রচিত অষ্টাঙ্গহৃদয়-এ পাওয়া যায়। ওষুধের তালিকায় ৮ নম্বরে যে পঞ্চাক তৈল-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, চরক-সংহিতা-য় গুল্ম পরিচয়ের যে অধ্যায় আছে সেখানে উল্লেখিত তৈল-পঞ্চক— এই দুটি সম্ভবত একই বস্তু।

এই হাসপাতালের খরচের বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে এ-গবেষণাপত্রের ২৪৯ থেকে ২৫০ পৃষ্ঠা জুড়ে। প্রথম লাইনের ৪৩-৪৫ অংশ জুড়ে হাসপাতালের এ বর্ণনা থেকে জানা যায় যে সেখানে ১৫ জন রোগী ভর্তি আছে। তাদের এবং চিকিৎসক ও অন্যান্য সাহায্যকারীদের জন্য সুনির্দিষ্ট খাতে বর্ণনার বিস্তৃত বিবরণ আছে। বলা আছে, ৪০ কাশু ভেষজ উদ্ভিদ ক্রয়ের জন্য ব্যয় করা হবে।

পূর্বোক্ত হাসপাতালের শিল্পীকৃত চিত্র। সূত্র: BMCRI Lit Club.

১৩শ শতাব্দীতে রাজা বীরেশ্বর হাসপাতালের জন্য তাঁর আয়ের এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করতেন— “The third share was granted in favour of three different institutions which were a Prasūti-śālā (প্রসবস্থল), an Ārogya-śālā and a Vipra-satra. The reference to a Prasūti-śālā, i.e., maternity or lying-in hospital, in a record of the thirteenth century is very interesting. Ārogya-śālā is a hospital.”[16]

এরপরে একই পুস্তকে বলা আছে— “The Srirangam inscription, dated Śaka 1415 (1493 A.D.), registers the gift of two veli land (old South Indian unit) made by Śrīnivāsa alias Śrīraṅgam Garuḍavāhana-bhaṭṭa who repaired and renovated the Ārogya-śālā or hospital. The hospital was constructed by one of Śrīnivāsa’s ancestors.”[17]

শ্রীরঙ্গম শিলালেখ

মুসলিম শাসনকালেও বিভিন্ন সময়ে অনেক হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। এ-ধরনের হাসপাতালগুলোতে সার্জারির গুরুত্ব ছিল।[18]

ভারতে বিভিন্ন শাসনকালে কয়েক শতাব্দী জুড়ে হাসপাতালের বিবর্তনের সম্যক চিত্র, বিবরণ ও ধারণার জন্য দেখুন— “From Hospitals to Hospital Medicine: Epistemological Medical Knowledge in India”, জয়ন্ত ভট্টাচার্য, Historia Hospitalium, Band 28, Lit Verlag, 2013, পৃঃ ৪৫-৭৪।

 

আরও কথা

দক্ষিণ কোঙ্কণের যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি-র প্রামাণ্য ভাষ্যকার অপরার্ক (দ্বাদশ শতাব্দীর শেষার্ধ) নন্দীপুরাণ থেকে হাসপাতাল (আরোগ্যশালা) প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে (যেখানে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হত) একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন— “Since the four puruṣārthas (the goals of life) viz. dharma, artha, kāma and mokṣa, depend upon health, he who provides for securing this may be said tohave made gifts of everything.” এছাড়াও হেমাদ্রি (আরেকজন ভাষ্যকার) একই রচনাংশের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। এবং স্কন্দপুরাণ-ও একই কথা বলেছে।[19]

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ, এমডি এবং ভিষগাচার্য গিরীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় তাঁর The Surgical Instruments of the Hindus, with A Comparative Study of the Surgical Instruments of the Greek, Roman, Arab and the Modern European Surgeons (১৯১৩, প্রথম খণ্ড)-এ নন্দীপুরাণ থেকে ৩ পৃষ্ঠাব্যাপী (৫২-৫৪) উদ্ধৃতি দিয়েছেন। আমার যতটুকু জানা আছে, এখন নন্দীপুরাণ-এর কোনও পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় না।

অন্য আরেকজন গবেষকের পর্যবেক্ষণ— “Realising the value; of health to holiness, the Nandi Purana extols the philanthropist whose charities are devoted to the erection of health homes and sanatoria for the benefit of the public.”[20]

নন্দীপুরাণ নিয়ে বেশ খানিকটা বিস্তৃত আলোচনা করেছেন আরেক গবেষক আরসি হাজরা তাঁর “দ্য নন্দীপুরাণ” প্রবন্ধে।[21] হাজরা লিখছেন— “Equally interesting are the 25 metrical lines, quoted by Aparārka, Vallālasena and Hemadri, on the praise of foundation of hospitals (ārogya-śālā) for the suffering humanity and the poor. According to these lines, such hospitals should be furnished with qualified and experienced physicians and powerful medicines, and food, honey, ghee, etc., should be supplied to the patients free of costs.”[22]

ডমিনিক য়ুজাস্তিক তাঁর “দ্য এভিডেন্স অফ হসপিটালস ইন আর্লি ইন্ডিয়া” প্রবন্ধে বলছেন—প “To place the practice of medicine is on a par with, or even over, the practice of ritual and sacrifice is a bold claim indeed, but it is again in line with ancient assertions that the practice of medicine could even lead to the acquisition of twice-born status for those of the śūdra caste.”[23] য়ুজাস্তিক ১২শ শতাব্দীর বাংলার রাজা বল্লাল সেনকে উদ্ধৃত করে নন্দীপুরাণ নিয়ে বলেছেন— “for the sake of health, the patron (yajamāna) should first use all his ability to design a building made of bricks and so on, as well as buildings for medicines and purifiers etc. It should be supplied with attendants of different kinds, with doctors of the aforementioned characteristics, with collections of herbs suitable for pacifying the different kinds of diseases, with resting houses.”[24]

আলোচনা সংক্ষিপ্ত করার জন্য আমি সামান্য কিছু অতিরিক্ত তথ্যের উল্লেখ করছি। ১৫৯৫ সালে মহম্মদ কোয়ালি (Quli) দার-উস-শিফা নামক একটি বড় হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন। সময়ের ধারাপথে সে হাসপাতাল এখন হায়দ্রাবাদ মিউনিসিপ্যালিটি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সমস্ত নামী হাকিমরা ওই হাসপাতালে রোগীদের দেখাশোনা করতেন।[25]

এ-কথাও জানা যায়, মুসলিম রাজত্বকালে “The Bahamani King Allauddin Ahmed-II (1436 A.D. -1458 A.D.) ordered the construction of a splendid Shafa Khana (Hospital) at Bidar for which several villages were endowed to meet its expenditure. Both Hindu-Muslim physicians were appointed to look after his hospital which catered for patients of all communities. In the Shafa Khana, besides the Unani, Ayurvedic system was also made use of for treatment by employing the vaidyas, and medicines and diet were provided free of cost to the patients.[26]

নেশাত কাইজার-এর গবেষণা দেখিয়েছে, মহম্মদ বিন তুঘলকের সময়ে শুধুমাত্র দিল্লিতে ৭০টির বেশি হাসপাতাল তৈরি হয়েছিল। ফিরোজ শাহ্ তুঘলকের সময়ের এর সঙ্গে আরও ১৫টি যুক্ত হয়। এ হাসপাতালগুলোতে হাকিম এবং আয়ুর্বেদজ্ঞ চিকিৎসকেরা একই সম্মান নিয়ে চিকিৎসা করতেন।[27]

পিয়ারসন-এর পর্যবেক্ষণে— “In certain specific areas it seems that surgery was relatively advanced at the Mughal court, though their general anatomical knowledge was inferior to Europe. Head wounds were routinely trepanned.”[28]

 

শেষ কথা

বর্তমানে আমরা হাসপাতালের যে চেহারা দেখি তার সঙ্গে প্রাক-আধুনিক হাসপাতালের কোনওরকম সাযুজ্য নেই, একমাত্র রোগীর চিকিৎসা হয় রোগ নিরাময়ের লক্ষ্যে, এটুকু ছাড়া। আমরা চরক-সংহিতা-র হাসপাতালে দেখেছি কেবল রাজপুরুষ বা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের চিকিৎসা করা হত, এবং দক্ষিণ ভারতের বিষ্ণুমন্দিরের হাসপাতালের উপযোগিতা ছিল কেবল নিজস্ব বৈদিক কলজের ছাত্রদের জন্য। ইউরোপেও সেরকম শিশু, বৃদ্ধ, সাধারণভাবে অসুস্থ, অনাথ, দরিদ্র এবং পরিব্রাজক বা যাত্রীদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হাসপাতাল ছিল। আরেকটি বিষয় হল, এই ধর্ম-কেন্দ্রিক হাসপাতালগুলোতে লক্ষ্য থাকত রোগীদের শুধুমাত্র দেহের নয়, soul-এর-ও চিকিৎসা করা।

এই হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা হত রোগীর উপসর্গের কথা শুনে। অর্থাৎ এক অর্থে রোগীর বয়ান চিকিৎসকের চিকিৎসার দিশা নির্ধারণ করত। যেহেতু শবব্যবচ্ছেদ-নির্ভর রোগের অঙ্গস্থানিকতা তখনও বহুদূরে সে-জন্য দেহের যে ধারণা ছিল তা একেবারেই দ্বিমাত্রিক ধারণা। বিভিন্ন সময়ের পেইন্টিং দেখলে দেহের ধারণার রূপান্তর বোঝা যায়।

বাঁদিকে ১৩শ শতকের অ্যানাটমিকাল ইলাস্ট্রেশন, ডানদিকে ১৫শ শতাব্দীর অ্যানাটমিকাল ইলাস্ট্রেশন

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এ-সমস্ত হাসপাতালের বর্ণনায় আমরা কেবল রোগীর চিকিৎসার খবর পাই। কিন্তু ব্যক্তি রোগীর কোনও বিবরণ তথা “কেস রেকর্ডস” পাই না। চরকের সমসাময়িক গ্রিসে জাত এবং রোমান সাম্রাজ্যে প্র্যাক্টিসরত গ্যালেন (যিনি প্রায় ১০০০ বছর ধরে পরবর্তী মেডিসিনের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন) নিজে “কেস রেকর্ডস” রাখতেন। এখানে ভারতের প্রাচীন প্রাক-আধুনিক চিকিৎসার সঙ্গে ইউরোপীয় পার্থক্যের প্রাথমিক সূচনা হয়েছিল।

Horstmanshoff, HFJ. Galen and His Patients. Ancient Medicine in Its Socio-Cultural Context. ed: Ph.J. vander Eijk, H.F.J Horstmanshoff and P.H. Schrijvers. vol. 1. 2005. pp. 83-100.

[1] Risse, Guenter B. Mending Bodies, Saving Souls: A History of Hospital. 1999. পৃঃ ১৫।
[2] আয়ুর্বেদের সবচেয়ে মান্য গবেষক মিউলেনবেল্ডের মতে এ-সময়কাল খুব বেশি হলে ১৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টাব্দের আগে হতে পারে না, বা খুব বেশি হলে ১০০ খ্রিস্টাব্দ [“the author called Caraka cannot have lived later than about A.D. 150-200 and not much earlier than about 100 B.C.”]। মিউলেনবেল্ড। A History of Indian Medical Literature. ১৯৯৯-২০০২ IA. পৃঃ ১১৪।
[3] পৃঃ ৪৪।
[4] Risse. Mending Bodies, Saving Souls. পৃঃ ১০৭।
[5] বর্তমানে Xuanzang বলা হয়।
[6] যেখানে বিনামূল্যে খাদ্য এবং পানীয় পাওয়া যায় এবং যেখানে চিকিৎসকেরা ওষুধ-সহ উপস্থিত থাকেন।
[7] Si-Yu-Ki: Buddhist Records of the Western World (A.D. 629). অনুবাদ: স্যামুয়েল বিল। ১৮৮৪, 2 volumes. volume 1, পৃঃ ১৪।
[8] The Great Tang Dynasty Record of the Western Regions. tr. Li Rongxi. 1996. p. 97.
[9] বর্তমান চেঙ্গালাপাট্টু।
[10] আয়ার, কেভি সুব্রমনিয়া। “The Tirumukkudal Insription of Virarajendra”. Epigraphia Indica and Record of the Archaeological Survey of India, vol. XXI. 1931-32. পৃঃ ২২০-২৫০।
[11] প্রাগুক্ত, পৃঃ ২২২।
[12] পূর্বোক্ত, পৃঃ ২২৩।
[13] এর হিসেব খুঁজে বের করতে পারিনি।
[14] পূর্বোক্ত, পৃঃ ২২৪।
[15] পূর্বোক্ত, পৃঃ ২২৪।
[16] Sircar, DC. Studies in the Religious Life of Ancient and Medieval India. ১৯৭১। পৃঃ ১৫৯।
[17] পূর্বোক্ত, পৃঃ ১৬২।
[18] দ্রষ্টব্য: Speziale, Fabrizio. “Introduction”, in Hospitals in Iran and India, 1500-1950s. ed. Fabrizio Speziale. 2012.
[19] Kane, PV. History of Dharmaśāstra. 1941. vol. II, part II. p. 885.
[20] Chandavarkar, Narayen. The Heart of Hinduism. 1912. p. 25.
[21] Journal of Ganganath Jha Research Institute 2 (1944-1945). pp. 305-320.
[22] পৃঃ ৩১৭।
[23] History of Science in South Asia, 10 (2022): 1–43. পৃঃ ২৬। এ-সংক্রান্ত আলোচনা চরক-সংহিতা-য় রয়েছে। পরে আলোচনা করব।
[24] প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৬।
[25] Reddy, DV Subba. Dar-us-Shifa (House of Cures) Built by Sultan Muhammad Quli in 1595 A. D.: (The First Unani Teaching Hospital in Deccan). Journal of Indian Medical Heritage. 1957. 2 (2): 102-105.
[26] Bolar, Varija. The Role of Islam in Karnataka. International Journal of Social Sciences and Human Studies. 2011. 3 (2): 489-498.
[27] Quaiser, Neshat. Politics, Culture and Colonialism: Unani’s Debate with Doctory. Health, Medicine and Empire: Perspectives on Colonial India. Biswamay Pati and Mark Harrison (ed.). 2006. pp. 317-335.
[28] Pearson, MN. The Thin End of the Wedge. Medical Relativities as a Paradigm of Early Modern Indian- European Relations. Modern Asian Studies. 1995. 29(1): 141-170, p. 152.

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4998 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

  1. ড: নির্মাল্য মজুমদার – স্নেহের Com.জয়ন্ত বড় ভালো লাগলো— তোমার একান্ত গভীর নিষ্ঠাবান research এর স্বীকৃতির পরিধীটি ক্রমশশই বুদ্ধি পাচ্ছে ,বা 👍।

আপনার মতামত...