“আমাদের কি মানায়?”

গৌতম আচার্য

 


দাঙ্গা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের প্রতিটি ঘটনায় মধুদাকে বারবার তীব্রভাবে আলোড়িত হতে দেখেছি। ইন্দিরা গান্ধি হত্যার পর শিখ নিধন হোক কিংবা বাবরি মসজিদ ভাঙার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা— প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার স্বার্থে যা যা প্রয়োজন, সশরীরে সেই সব কর্মকাণ্ডে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত থেকেছে সে। আর শুধু নিজে নয়, সঙ্গে অন্যদেরও বারবার আহ্বান করেছে। এ-প্রশ্নের বৌদ্ধিক স্তরেও মধুদা যেন এক অস্বীকৃত সমাজ-গবেষক। কত লেখা, কত সংকলন ও সম্পাদনা— হিসেব রাখাটা সহজ নয়। পাশাপাশি কবিতা, গল্প, উপন্যাস লেখার সঙ্গে তার সখ্যতা কোনওদিনই ছিন্ন হয়নি। ফেসবুকে সমাজমনস্কতার পক্ষে তার কবিতার ধারাবাহিক উপস্থিতি অনেকেরই চোখ এড়ায়নি

 

সম্ভবত ৭৮-৭৯। আমি তখন উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ছাত্র। একদিন ভরা ক্লাসের মাঝে ভেজানো দরজা খুলে দু-তিনজন তরুণ একটা চিরকুটজাতীয় কিছু এগিয়ে দিয়ে স্যারের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল। দেখলাম, স্যার নীরবে মৃদু সম্মতি জানিয়ে একটু সরে দাঁড়ালেন। তাদের মধ্যে একজন এগিয়ে এসে দাঁড়াল আমাদের মুখোমুখি। গায়ের রং উজ্জ্বল, পাতলা লম্বাটে গড়ন, ঝকঝকে নজরকাড়া মুখশ্রী। সবাইকে বাক্যহারা করে দীর্ঘক্ষণ বলে গেলেন তৎকালীন সমাজ, সংস্কৃতি ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কিছু কথা। উপলক্ষ ছিল এক ভিন্ন রুচির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের স্বাদ দিতে প্রবেশপত্র বিলি বা বিক্রি।

বক্তব্য শেষ হওয়ার পর স্যার আর ক্লাস টানলেন না, শেষ করে দিলেন। আমি ইতিমধ্যে সম্মোহিত। ক্লাস থেকে বেরিয়ে পিছু ডাক দিয়ে তাদের থামালাম। এগিয়ে এসে সহজ ভঙ্গিমায় সেই বক্তা পরিচয় স্থাপনের কর্মসূচি মেলে ধরলেন। আমার পরিচয় দেওয়ার আগেই বলতে লাগলেন— ও বাবলু, ও শিবাজী, ও রথীন, আর আমি মধু। আমার পরিচয়ও জেনে নিলেন। তারপর সেই বক্তব্যের রেশ ধরে ক্লাসঘরে না বলতে পারা আরও কিছু কথা শোনালেন। সঙ্কোচহীনভাবে দায়িত্ব অর্পণ এবং স্কুলশেষে সেই বিকেলেই যোগাযোগ করার মুক্ত প্রস্তাব দিয়ে গেলেন।

সে-বিকেলেই গিয়েছিলাম কিনা মনে নেই। তবে তারপর থেকে এক নিরন্তর যোগাযোগের সোজা পথ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সত্যি কথা বলতে কী, তখন আমারও কৈশোর। দিনবদলের রাজনীতির সবে ছোঁয়া লেগেছে আমার মনে। তেমন মানুষজনের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য মন উন্মুখ হয়ে থাকত। আর মধুদা— মানে, অন্যদের কাছে বিশ্বজিৎ রায়— ছিল তার অন্যতম আকর্ষণ। একাধারে বন্ধু, অন্যদিকে পথপ্রদর্শক।

১৯৭৮-এর বিধ্বংসী বন্যায় তখন পশ্চিমবঙ্গ পর্যুদস্ত। কলকাতার কিশোর-তরুণদের একটা অংশ তখন বানভাসি মানুষদের সাহায্যার্থে দিনরাত এক করে দিচ্ছে। সেই সময় মধুদার ডাকে সাড়া দিয়ে আমি প্রথম পেলাম মানুষের প্রত্যক্ষ প্রয়োজনে কাজ করার সুযোগ ও আনন্দ। সে-বছর দুর্গাপূজায় বেলেঘাটার মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে মধুদা ব্যাখ্যা করে চলেছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক এবং জনমুখী উপায়, আর আমাদের মতো তুলনামূলক জুনিয়ররা প্রতিমা দর্শনার্থীদের কাছ থেকে রিলিফ সংগ্রহে ব্যস্ত।

অবশ্য বিপরীতে এক অপ্রিয় বাস্তব সেদিনও বিরাজমান ছিল। বহু মণ্ডপে মধুদা ও অন্যান্যদের বলতে বাধা দেওয়া হয়েছে, মণ্ডপের অঞ্চল থেকেই তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, আলাদা করে ডেকে নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। অথচ পরবর্তী মণ্ডপে যাওয়ার কর্মসূচির দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত নমনীয়তায় তাঁকে সে স্থান ত্যাগ করতে দেখেছি। ক্ষমতাচ্যুত কংগ্রেসি হামলাকারীদের কোনও প্ররোচনায় মধুদার পা ফসকাতে দেখিনি।

কতই বা হবে তখন তাঁর বয়স? বড়জোর কুড়ি-একুশ।

পূর্ব কলকাতা বা বেলেঘাটার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে থাকার কারণে, মধুদার সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজকর্মের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটত ঘন ঘন। শ্রমিকশ্রেণির মাঝে বা পার্শ্ববর্তী শ্রমিকবস্তিতে কাজ করার ব্যাপারে ওর আগ্রহ ছিল, আমার বিচারে, ব্যতিক্রমী। সমবয়সী বা কলেজস্তরের বন্ধুরা যখন ছাত্র-যুবদের মধ্যে কাজ করছে, তখন নিজের বিশ্বাসকে প্রাধান্য দিয়ে মধুদা শ্রমিকমহল্লায় ঘুরে ঘুরে শ্রেণি-রাজনীতির পাঠ নিচ্ছে। অবশ্য এর পেছনেও থাকতে পারে সেই সময় মধুদা যে রাজনৈতিক সংগঠন করত— সত্যনারায়ণ সিং-এর নেতৃত্বাধীন সিপিআই(এম-এল)— তার নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিকল্পনা।

গ্র্যাজুয়েশন করতে মধুদা যে কলেজে ভর্তি হয়েছিল, তখন সেই বিদ্যাসাগর কলেজে নকশালপন্থী ছাত্রসংগঠন ‘ছাত্র ঐক্য কমিটি’র অবস্থা খুবই মজবুত। বিপুল সংখ্যক ছাত্র ওই ছাত্রসংগঠনের ব্যানারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমবেত হচ্ছিল। ছাত্র পরিষদ ছিল প্রধান বিরোধীপক্ষ। এসএফআই তখন সবে সংগঠন গোছাতে শুরু করেছে।

তবুও মধুদাকে এই আকর্ষণ কোনওভাবেই বেলেঘাটার খালপাড়ের কাঠকল শ্রমিকদের সংগঠিত করার দায়বদ্ধতা থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। রাজনৈতিক দায়বদ্ধতায় যতদিন সে সক্রিয় থেকেছে, ততদিন এলাকার শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গেই হাত মিলিয়ে থেকেছে।

এখানে একটা অপ্রিয় উপলব্ধির কথা এড়িয়ে যেতে পারছি না— পাঠক মাফ করবেন। কলেজজীবনে প্রবেশের পর বেশ কয়েক বছর আমিও সক্রিয়ভাবে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ি। বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হওয়া এবং কলেজের ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা— এই দুটো ক্ষেত্রেই একাধিক সিনিয়রের মতো মধুদাও প্রত্যক্ষভাবে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তারপর যতদিন ছাত্ররাজনীতি করেছি, তুল্যমূল্য বিচার করে এটুকু ঠাহর করতে পেরেছি— মধুদার মতো ব্যক্তিত্ব তৎকালীন ছাত্রআন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত না হওয়াটা, বা তার মতো একজনকে ছাত্রনেতা হিসেবে না পাওয়াটা, সেই সময়ে তৃতীয় ধারার ছাত্র-আন্দোলনের পক্ষে এক গভীর দুর্ভাগ্য। ছাত্ররাজনীতিতে তার উপস্থিতি শিবিরের বিস্তারকে আরও অনেক বেশি সাহায্য করতে পারত— এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

আশির দশকের শুরুতে আমি তখন কলেজসূত্রে মধ্য কলকাতায় ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। স্থানিক দূরত্বের কারণে, স্বাভাবিক নিয়মেই মধুদার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে কিছু ব্যবধান তৈরি হল। কাজকর্মের খোঁজখবর নেওয়ার ক্ষেত্রেও তখন এ-মাধ্যম ও-মাধ্যমের ওপর নির্ভরতা বাড়ল। ইতিমধ্যে মধুদা যে রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাতে বড়রকমের ভাঙন দেখা দিল। এর প্রত্যক্ষ প্রভাবে রাজ্য জুড়ে বহু সম্ভাবনাময় ছাত্র-যুব কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেন। মধুদার ভীষণ ঘনিষ্ঠ অনেক কমরেডও প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সরে এলেন।

তবে মধুদা নিজের মতো করে শ্রমিকদের মধ্যে কাজ চালিয়ে যেতে লাগল। পূর্ব কলকাতার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দিল। বেলেঘাটার স্বনামধন্য কোলে বিস্কুট কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে, তা পুনরায় চালু করার দাবিতে এলাকার অন্যান্য উদ্যোগী মানুষের সঙ্গে কর্মসূচি নেওয়া হল। এলাকায় এ নিয়ে কিছু প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল বটে, কিন্তু যে-কোনও কারণেই হোক, তার ধারাবাহিকতা শেষপর্যন্ত রক্ষা করা যায়নি।

মনে পড়ে, এমনই এক পর্যায়ে একান্ত আলাপচারিতায় মধুদা তার পেশাগত অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা আমায় জানিয়েছিল। সেই সময় রাজনীতির কারণে থেমে যাওয়া অর্ধসমাপ্ত পড়াশোনা আবার শুরু করে, পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে তা সম্পূর্ণ করে। এরপর নতুন উদ্যমে এপিডিআর বা অন্যান্য সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করে।

সম্ভবত এরপরই পরিবর্তন পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে মধুদার পেশাগত জীবনের সূচনা হয়। তবে সেই সূচনা কখনওই একমাত্রিক ছিল না। পরিবর্তনে কাজ করার যে কটা দিন, তা ছিল ঘটনাবহুল। সবটাই যদিও শোনা কথা।

বিরাট মাপের সংবাদপত্রের অফিসে কাজ করার পরেও মধুদাকে দেখা যেত নানা সময়ে বিভিন্ন বিক্ষোভে কিংবা নাগরিক মিছিলে। কখনও দেখেছি সংবাদ সংগ্রহ করতে এসে নিজেই চলমান কর্মসূচির শরিক হয়ে পড়েছে। আসলে মনে হয়, সংবাদজগতের ঝকঝকে বনেদিয়ানা কখনও মধুদাকে স্পর্শ করতে পারেনি।

দাঙ্গা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের প্রতিটি ঘটনায় মধুদাকে বারবার তীব্রভাবে আলোড়িত হতে দেখেছি। ইন্দিরা গান্ধি হত্যার পর শিখ নিধন হোক কিংবা বাবরি মসজিদ ভাঙার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা— প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার স্বার্থে যা যা প্রয়োজন, সশরীরে সেই সব কর্মকাণ্ডে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত থেকেছে সে। আর শুধু নিজে নয়, সঙ্গে অন্যদেরও বারবার আহ্বান করেছে। এ-প্রশ্নের বৌদ্ধিক স্তরেও মধুদা যেন এক অস্বীকৃত সমাজ-গবেষক। কত লেখা, কত সংকলন ও সম্পাদনা— হিসেব রাখাটা সহজ নয়। সম্ভবত যাঁরা সেই সময় তার সঙ্গে নিয়মিত কাজ করতেন, তাঁরাই তা বলতে পারবেন। পাশাপাশি কবিতা, গল্প, উপন্যাস লেখার সঙ্গে তার সখ্যতা কোনওদিনই ছিন্ন হয়নি। ফেসবুকে সমাজমনস্কতার পক্ষে তার কবিতার ধারাবাহিক উপস্থিতি অনেকেরই চোখ এড়ায়নি।

এমন এক জীবনের সঙ্গে শারীরিক সমস্যা আর অনিয়ম অঙ্গাঙ্গী। একাধিকবার মধুদা ভীষণ অসুস্থ হয়েছে। খবর পেলে যেভাবে পারা যায় ছুটে গেছি। বারবার সঙ্কোচ প্রকাশ করে আসতে মানা করত। তবে বেডের পাশে দাঁড়ালে আর থামত না— কথা চলতেই থাকত। শেষদিকে দেখতাম, কথা বলার মাঝে হাঁপিয়ে পড়ছে। থামাতে চাইতাম, কিন্তু তবু বলে যেত। বাইপাস অপারেশনের আগে— যেটা আর শেষ পর্যন্ত করা হল না— মধুদার অস্থিরতা সবচেয়ে প্রকটভাবে টের পেয়েছিলাম। কর্পোরেট হাসপাতালের চার দেয়ালে প্রাচুর্যের ঝলক আর তার “ছোট করে বাঁচা” দর্শনের টানাপোড়েন তাকে ভীষণভাবে ক্লান্ত, কখনও কখনও অসহিষ্ণু করে তুলেছিল। কৈশোরের আবেগ নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, “গৌতম বল তো, পারলেও আমাদের কি এটা মানায়?” আমি বলেছিলাম, “সুস্থ হতে গেলে তোমাকে এটুকু মানাতেই হবে।” বুঝেছিলাম, উত্তরটা তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

শেষবার আমার পিজিতে যাওয়া হয়নি। কদিন পরেই এল সেই খবর। একসঙ্গে, একাধিক সূত্রে। দুপুর দুটোর সময় পৌঁছলাম বেলেঘাটার বাড়িতে। শেষবার দেখব। বুঝলাম, শুধু আমরাই বন্ধুহীন হয়ে পড়িনি— মধুদাও অনেক আগেই নিঃসঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। শব-শয্যার দিকে তাকিয়ে একটা অদ্ভুত অসহায়তা গ্রাস করল। শুধু ধূপ-ধুনো, মালাই নয়— তার দেহকে জড়িয়ে ছিল নামাবলি। মনে হল, আমরাই সেই হতভাগ্য বন্ধু, পরিজন, যারা একবারও বলতে পারলাম না— দয়া করে, ওটা জড়িয়ে দিয়ে মধুদার জীবিত জীবনের সমস্ত কর্মযজ্ঞকে অসম্মানের সুযোগ দেবেন না।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5128 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

2 Comments

  1. নমস্কার, লেখাটা পড়লাম. শেষ লাইনে সম্ভবত…. ওটা সরিয়ে দিন হবে, জড়িয়ে দিয়ে লেখার জায়গায়…. অথবা এও হতে পারে আমি মানে বুঝিনি…

  2. সুন্দর লেখা। মধুদার জীবনের অনেক ঘটনা, ও তার সঙ্গে লেখকের জীবনের ঘটনার সঙ্গে একাত্ম হতে পারি। আমি অ্যামেরিকায় থাকি। আমার মা শেষ জীবনে আমাদের কাছে ছিলেন। মা মারা যাওয়ার পর দেহ-ভস্ম অ্যাটল্যান্টিকের জলে ভাসিয়ে দেওয়ার সময় স্বপ্না, মানে আমার বৌ কৌটোটি একটা লাল কাপড় দিয়ে মুড়ে দিয়েছিল।

Leave a Reply to Rahul Ray Cancel reply