সাতটি কবিতা
ভালোবাসা
‘যৌনতার সঙ্গে যদি সংস্কৃতি মেশাও, তবে তাকে
ভালোবাসা বলা যেতে পারে’–এভাবেই বিষয়টা দেখেছেন
ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন
তোমাদের কেউ প্লেটোনিক, কেউ কেউ অকথ্য বর্বর
কেউ শুধু উসকানি দিতে জানো, কেউ বা শিখেছো বিনিময়
হাতে ফুল নেই, ঠোঁটে কবিতাও নেই
বাৎসায়ন পড়োনি কখনো
পশুরও প্রস্তুতি থাকে,তোমাদের নেই
একহাতে চেকবই, অন্যহাতে জন্মরোধী টুপি
নৃত্যঘর
দূর থেকে ‘মৃত্যুঘর’ মনে হলো। কাছে গিয়ে দেখি
বড় করে লেখা আছে ‘নৃত্যঘর’– এখানে কত্থক, ভরতনাট্যম,
সিনেমার ড্যান্স অতি যত্ন সহকারে…
‘মৃত্যুর নিকুচি করি, আমি নৃত্য ভালোবাসি’– এই কথা ভেবে
এগিয়ে যেতেই দেখি একদল রক্তবর্ণ নারী প্রণামের ভঙ্গি করে
কিশোরীরা হলুদ ফুলের পাপড়ি ছিটায়
বাঁশের কুলোয় আলপনা, ঠোঁটে উলুধ্বনি
জ্ঞান হারানোর আগে শেষবার ‘ভালোবাসি’– বলে উঠি
সাহস
‘ভদ্র ছেলেদের দিয়ে কিছুই হবে না, সবখানে তারা
বেকুব দর্শক…’– ছোটকাকা বলতেন
আমিও দেখেছি রাজহংসী বসে আছে
বখাটের নতুন বাইকে
ধর্মষাঁড় বেড়া ভেঙে ঢুকে পড়ে মটরশুটির ক্ষেতে
জিমনেসিয়াম থেকে বেরোতে দেখেই গীতাদি বলেন-
‘মাসল বানিয়ে লাভ নেই, সাহসই আসল।’
রজ্জু
এ এক বিস্ময়-রজ্জু, যতোবার বাঁধি, একা একা
খুলে যায় গেরো, যেন ধুতি-প্রান্ত খসে গিয়ে
লেজ হয়ে ঝোলে
কৃতী সেজে কেউ দূরদেশে যায়–সবুজ-রূপালী ফিতে
স্মৃতিভ্রষ্ট চোখ নিয়ে দেখে
এ-ও কি আরাধ্য সন্ধ্যা, দীপশিখাহীন, বিধবার ব্রত–
উপবাস, কাঁটালতা, রোদন-বিলাস!
মানুষ
‘শয়তান আর ঈশ্বরের মাঝামাঝি বলে
মানুষকে সহ্য করা যায়।’—পুরোটা বোতল শেষ হলে
ফণিদা’র মুখে নানাবিধ বাণী ভর করে
যিশুর ক্ষমায় তিনি যাকে তাকে জড়িয়ে ধরেন
‘ভেবে দ্যাখ, ধার্মিকের পাশাপাশি বেড়ে চলে বদমাশ
প্রায়শ তাদের মুখ একাকার, পাপ ও পুণ্যের ফুল
ফুটে আছে একই ডালে— অভিন্ন চেহারা!’
‘মানুষকে ভালোবাসি, তারা দু’পথেই হাঁটে,
বেশিক্ষণ কোথাও থাকে না।’
পদাবলী
কবিতার গায়ের চামড়া খুলে নাও
তাকে শূলেও চড়াতে পারো
আত্মমৈথুনের যুগে পদাবলী মেনে নেওয়া যায়?
কৃষ্ণচূড়া লিখতেই শ্রীকৃষ্ণের কথা আসে
আমরা এখন ধুতুরার ফুলে নৈবেদ্য সাজাবো
হাতে হাতে লেগে আছে সকরুণ ক্ষরণের দাগ
ঘৃণাস্তম্ভ
খর্জুরবীথির স্বপ্নে ছুটে গিয়েছিলে
পাথরের দেশে
পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে খুঁজেছিলে ধ্যানগুহা,
পায়ের প্রাচীন ছাপ
পবিত্র ডুমুর, জলপাই, আশ্চর্য কূপের দেশে
আমাকে দেখেছ? তীর্থযাত্রা শেষে যাকে তুমি
ছুঁড়েছ পাথর, আমি সেই ঘৃণাস্তম্ভ, বিতাড়িত একজন