
অচিরাংশু আচার্য
…এই বাঁচার কথা বহুদিন আগে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন র্যাচেল কারসন ১৯৬২-তে তাঁর লেখা বই “Silent Spring” বা “নিঃশব্দের বসন্ত”-তে। লেখিকা ছিলেন একজন জীববিজ্ঞানী। তিনি তাঁর বইতে এমন এক বসন্তের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যা হবে নিঃশব্দ। যে-বসন্তে কোনও পাখি ডাকবে না, কোনও কীট-পতঙ্গের আওয়াজ শোনা যাবে না। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন মানুষকে এক ভয়ঙ্কর আত্মহননের পথে ঠেলে দিচ্ছে। র্যাচেল কারসন তাঁর বইটি শুরু করেছেন বিখ্যাত দার্শনিক Albert Schweitzer-এর একটি উক্তি দিয়ে— “Man has lost the capacity to foresee and to forestall. He will end by destroying the earth.” বইটিতে কীভাবে মানুষ উন্নয়নের নামে প্রযুক্তি ও মারণ ওষুধ ব্যবহার করে নিজেদের অস্তিত্বকে কায়েম করার প্রচেষ্টা করেছে, তার এক জলজ্যান্ত উদাহরণ।…
কিছুদিন আগে কোভিড-১৯ রোগজীবাণুর জন্য মহামারিতে সারা বিশ্বে অনেক মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এই বেদনাদায়ক ঘটনা আমাদের আধুনিক জীবনযাপন নিয়ে অনেক প্রশ্ন সামনে এনেছে। কোভিড-১৯ রোগজীবাণুর উৎপত্তি নিয়ে নানা গবেষণার পর, জানা গেছে চিনদেশের বাদুড় থেকে এই রোগজীবাণু সংক্রামিত হয়েছিল। চিনে বাদুড়ের মাংস খাওয়ার প্রচলন আছে। বাদুড় থেকে মানুষের দেহে এই জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। এর কয়েকবছর আগে উত্তর আফ্রিকা-তে ইবোলা রোগজীবাণুর কারণও ছিল বাদুড় ও বানরের দেহ থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ। এই ঘটনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে যত মানুষের সঙ্গে অন্যান্য জীবের একটা খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে, ততই রোগজীবাণু সংক্রমণ ও মহামারির সম্ভাবনা বাড়ছে। কিন্তু পশুদের সঙ্গে এরকম খাদ্য-খাদক সম্পর্ক যে মানুষের পক্ষে ভাল নয়, সে তো অনেক মনিষী বলে গেছেন। সেই কবে স্বামী বিবেকানন্দ বলে গেছেন “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর”। আবার ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন “লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু”। তাহলে মানুষের অন্য পশুদের প্রতি আগ্রাসন ও লোভ-ই কি এই মহামারির কারণ?
তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশ ১৯৫০ সাল নাগাদ ঔপনিবেশিকতা থেকে স্বাধীনতা পায়। এরপর এই দেশগুলি কীভাবে নিজেদের মানুষের উন্নয়ন করবে, যখন সে প্রশ্ন তৈরি হয়, অধিকাংশ দেশ যে দেশগুলি তাদের উপনিবেশ করে রেখেছিল তাদের উন্নয়নের রাস্তাটিকেই অবলম্বন করে। অর্থাৎ অধিকাংশ তৃতীয় বিশ্বের দেশ হতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা উত্তর ইউরোপের দেশগুলির মতো। এই উন্নয়নের রাস্তা যে ধ্বংসাত্মক, তা তারা সে-সময়ে বোঝেনি। এই উন্নয়নের পথের একমাত্র মন্ত্র ছিল পৃথিবীর খনিজ শক্তি যথেচ্ছ ব্যবহার করে (মূলত কার্বনভিত্তিক কয়লা ও তেল) মানুষের জীবন আরও উন্নত করা, আরও সুখী করা। অথচ এই বিজ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়নের পথ অবলম্বন করতে গিয়ে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি ভুলে গেল যে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্র সরকার জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে অ্যাটম বোমা ফেলেছিল। তারা ভুলে গেল কীভাবে বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহার করে হিটলার কয়েক হাজার ইহুদিদের নিধন করেছিল। এই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি সেই একই উন্নয়নের পথ অবলম্বন করল যার সাহায্যে এদের এতদিন উপনিবেশ করে রাখা হয়েছিল। ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছে প্রায় আশি বছর হতে চলল। এই লেখা যখন লিখছি তখন খবর আসছে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে পাপ মুছতে ও পুণ্য লাভ করতে গিয়ে অনেক পুণ্যার্থী পদপিষ্ট হয়ে নিহত ও আহত হয়েছেন। যাকে বলে একেবারে গঙ্গাপ্রাপ্তি। মনে পড়ে গেল সত্যজিৎ রায়ের তৈরি ছবি হীরক রাজার দেশের সেই দৃশ্য যেখানে মগজধোলাইয়ের পর রাস্তায় আর্তনাদ করে এক কৃষক বলছে “যদি যায় যাক প্রাণ, হীরকের রাজা ভগবান।”
যাই হোক, ফিরে আসি কোভিড-১৯-এ। কোভিড-১৯ মহামারির সময় বেশ কিছুদিন যানবাহন বন্ধ ছিল। তখন কিছুদিনের জন্যে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিছুটা হলেও ধরা দিয়েছিল। অনেক দূর থেকে হিমালয়ের শৈলচূড়া দেখা গেছিল। নানারকম পাখির ডাক আবার শোনা যাচ্ছিল। মনে হল যেন “বসন্ত এসে গেছে”। কিন্তু সে ছিল ক্ষণিকের অতিথি। কোভিড-১৯ শেষ হতেই আরও বেশি করে মানুষ প্রযুক্তিনির্ভর হতে শুরু করল। কিন্তু এই যে কোভিড-১৯-এর ফলে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও পরিষ্কার নীল আকাশ, পাখির কলতান, বসন্ত ঋতু বোঝা গেল, হয়তো মনের মধ্যে কোথাও মনে হয়েছিল যে মানুষ হিসেবে এটাই তো আমরা চেয়েছিলাম। ঋত্বিক ঘটকের ছবি, মেঘে ঢাকা তারার সেই দৃশ্য মনে পড়ে গেল, যেখানে যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত বোন তাঁর দাদাকে বলছে “দাদা আমি কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম, দাদা আমি বাঁচতে চাই।”
এই বাঁচার কথা বহুদিন আগে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন র্যাচেল কারসন ১৯৬২-তে তাঁর লেখা বই “Silent Spring” বা “নিঃশব্দের বসন্ত”-তে। লেখিকা ছিলেন একজন জীববিজ্ঞানী। তিনি তাঁর বইতে এমন এক বসন্তের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যা হবে নিঃশব্দ। যে-বসন্তে কোনও পাখি ডাকবে না, কোনও কীট-পতঙ্গের আওয়াজ শোনা যাবে না। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন মানুষকে এক ভয়ঙ্কর আত্মহননের পথে ঠেলে দিচ্ছে। র্যাচেল কারসন তাঁর বইটি শুরু করেছেন বিখ্যাত দার্শনিক Albert Schweitzer-এর একটি উক্তি দিয়ে— “Man has lost the capacity to foresee and to forestall. He will end by destroying the earth.” বইটিতে কীভাবে মানুষ উন্নয়নের নামে প্রযুক্তি ও মারণ ওষুধ ব্যবহার করে নিজেদের অস্তিত্বকে কায়েম করার প্রচেষ্টা করেছে, তার এক জলজ্যান্ত উদাহরণ।
মানুষের বাঁচার মূল প্রয়োজন হল খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান। কিন্তু তার এই প্রয়োজনীয়তা মেটাতে গিয়ে সে বহুযুগ ধরে বাকি প্রাণীদের এক হত্যালীলায় মেতে উঠেছে। ধরা যাক খাদ্য, যা আসে কৃষি থেকে। এই কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার এমন যথেচ্ছভাবে করা হয়েছে, যাতে অন্য নির্ভরশীল প্রাণীদের নিধন সম্পূর্ণ হয়। শুধু কি তাই, যত বেশি কীটনাশক ব্যবহার হয়েছে, ততই কীটপতঙ্গের সহ্যশক্তি বেড়ে গেছে। ফলে তাদের মারতে আরও বেশি ক্ষমতাশালী কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে অন্য প্রাণীরাও এইসব কীটনাশক ব্যবহারের ফলে প্রাণ হারাচ্ছে। একই কথা বলা যায় রাসায়নিক সারের ব্যবহার নিয়ে। অতিরিক্ত সার ব্যবহারের ফলে মাটি উর্বর থেকে অনুর্বর হয়েছে। এই অনুর্বর মাটি উর্বর করতে আরও বেশি ও আরও কড়া সারের ব্যবহার হচ্ছে। ফলে মাটি আরও অনুর্বর হচ্ছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এই যে দেশগুলির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নের প্রচেষ্টা, এর ফল যে কত ভয়ঙ্কর তা র্যচেল কারসন তাঁর বইতে দেখিয়েছেন। ১৯৬২-তে র্যচেল কারসনের বই প্রকাশিত হয়, তার কিছু পরেই ১৯৭০ ও ৮০-র দশকে শুরু হয় সবুজ বিপ্লব। মূলত উত্তর ভারতের পঞ্জাব ও হরিয়ানায় এবং ভারতবর্ষের অন্যান্য কিছু জায়গায় এই সবুজ বিপ্লবের ফলে প্রচুর ধান ও গম উৎপন্ন হয়। এ-কথা অবশ্যই স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে এর ফলে ভারত খাদ্যসুরক্ষায় অনেকটা সক্ষম হয়। কিন্তু এর ফলে পরিবেশের অনেকটা ক্ষতি হয়ে যায়। মাটি হয়ে যায় অনুর্বর, মাটির তলার জলের স্তর অনেকটা নেমে যায়। কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে অনেক কৃষকের নানারকম রোগ ধরা পড়ে।
অথচ র্যাচেল কারসন তাঁর বইতে ১৯৬২ সালেই কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ভয়ঙ্কর পরিণতি আমাদের দেখিয়েছিলেন। সাবধান করেছিলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমূহ ক্ষতির ব্যাপারে। কিন্তু তাঁর সে কথা আমরা কানে তুলিনি।
র্যাচেল কারসন তাঁর বইতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ভয়ঙ্কর প্রভাবগুলো বিস্তারিতভাবে লিখেছেন। তার মধ্যে আছে জৈববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং কীটপতঙ্গের পৃথিবী থেকে বিলুপ্তি। শুধু তাই নয়, এর জন্য নানা পশু-পাখি, জীবজন্তু-র বিলুপ্তিও অবশ্যম্ভাবী। এই কীটনাশক ও রাসায়নিক সার নদী ও বিভিন্ন জলাশয়ে মিশে যায়। এর ফলে জলাশয় বা নদীর বাস্তুতন্ত্র ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই জলাশয়ের বা নদীর ওপর নির্ভরশীল প্রাণীদের দেহে কীটনাশক ঢোকার ফলে অধিকাংশ প্রাণীদের অবলুপ্তি ঘটে। ঠিক সেরকমই, যখন কৃষকরা মাটিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার করে, তারা ভুলে যায় যে সেই মাটির মধ্যে কয়েক হাজার প্রাণ আছে, যেমন কেঁচো, পিঁপড়ে বা সাপ। মানুষের কিন্তু এ-সকল প্রাণীকেও প্রয়োজনে লাগে। যেমন মাটির পোকা না থাকলে মাটি আরও অনুর্বর হবে। পাখিরা তাদের খাদ্য থেকে বঞ্চিত হবে। এগুলো কৃষকরা বুঝতে চায় না। বা তাদের বোধহয় কোনও উপায়ও থাকে না। মানুষের লক্ষ্য হল যেনতেনপ্রকারেণ খাদ্য উৎপাদন, উদ্বৃত্ত তৈরি ও মুনাফা। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই সব কীটনাশকের ব্যবহার যে মানুষের ভয়ঙ্কর ক্ষতি ডেকে আনতে পারে, সেটা সে বুঝতে চায় না।
র্যাচেল কারসেন তাঁর বইতে পৃথিবীকে দেখতে চেয়েছেন এক সবুজ বাগান হিসেবে। জল, মাটি ও সবুজ আবরণ ও গাছপালা প্রাণীদের বাঁচিয়ে রেখেছে বহুযুগ ধরে। মানুষ এই প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের মতো এক বাস্তুতন্ত্রতে পরিণত করেছে। যেমন একাধিক নানাবিধ প্রাকৃতিক গাছ যেখানে ছিল, সেখানে যে গাছ সবচেয়ে বেশি মুনাফা দেবে, শুধু সেই গাছ বিস্তার করা ও অন্য বাকি গাছ নিধন করা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শস্যের জায়গায় সেই শস্যই বপন করা যা সবচেয়ে বেশি মুনাফা দেবে। এইভাবে বাকি সমস্ত জৈববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে, মানুষ তাঁর নিজের এক প্রকৃতি কায়েম করেছে যেখানে তাঁর প্রয়োজন ব্যতিরেকে অন্য কোনও জীববৈচিত্র্যকে সে তৈরি হতে দেবে না। প্রকৃতি নিজস্ব গুণে কিছু তৈরি করলেও, সেটি যদি মানুষের কোনও কাজে না লাগে খুব সহজেই মানুষ সেটি ধ্বংস করতে পারে। তাঁর কাছে প্রকৃতি ধ্বংসের সব কীটনাশক-ই মজুত আছে। অর্থাৎ, হে প্রকৃতি, হয় তুমি আমার, আর না হয় তুমি কারও নও।
র্যাচেল কারসনের বইতে সব মিলিয়ে ১৭টি অধ্যায় আছে। প্রত্যেকটি অধ্যায়তেই কীভাবে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে এক সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, এই নিয়ে আলোচনা আছে। উনি আমাদের সাবধানবাণী শুনিয়েছেন এই সব কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার নিয়ে। আলোচনা করেছেন প্রকৃতির ওপর এগুলির কুপ্রভাবের। কীভাবে বিকৃত হয়েছে মাটির উর্বরতা, জলাশয়, নদী ও অন্যান্য প্রাকৃতিক পরিমণ্ডল। আকাশ, বাতাস সবই আজ ক্ষতিগ্রস্ত।
বইয়ের শেষ অধ্যায়ে লেখিকা মানুষের উন্নয়নের দুটি পথের কথা বলেছেন। প্রথম পথ শুরুতে খুবই মসৃণ, রাস্তার হাইওয়ের মতো। কিন্তু সে পথের শেষে আছে এক বড় গর্ত। ফলে সেই পথে মৃত্যু আসন্ন। অন্য পথ অত মসৃণ নয়, চলতে সময় লাগে, কিন্তু সে চলার পথ আনন্দের পথ, সেখানে মৃত্যু অপেক্ষারত নয়। আমরা যেহেতু প্রথম পথটিই বেছে নিয়েছি, তাই মানুষ কতদিন এই পথে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারবে বলা শক্ত।
র্যচেল কারসনের “নীরব বসন্ত” বইটি প্রচুর বিক্রি হয়েছে, বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বহুচর্চিত এই বই। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ-বই মানুষ তাঁর নিজের জীবনে খুব একটা কাজে ব্যবহার করতে পারেনি। নিজেকে সে পরিবর্তন করতে পারেনি। এ বই এক পথ দেখায়, সহিষ্ণুতার পথ। যে পথে রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধি হেঁটেছেন। যে পথ সবাইকে নিয়ে চলার পথ।
মানুষ ভাবে সে অনেক উন্নতি করেছে। বাড়ি কিনেছে, গাড়ি কিনেছে। কিন্তু এটাও ঘটনা যে আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষকে এক ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। চারিদিকে শুধু আধুনিক প্রযুক্তি, যেমন ড্রোন ব্যবহার করে সারা পৃথিবীতে এক যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। আর প্রকৃতি এক ভয়ঙ্কর চেহারা নিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। সেটিকে আটকাতে আবার মানুষের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম ঠান্ডা যন্ত্র তৈরি হচ্ছে। দূষিত বায়ু, দূষিত নদী। দিল্লিতে বায়ুদূষণে শিশুদের শ্বাসকষ্ট। শিশুদের ফুসফুসে নানা রোগ। দেশের অধিকাংশ নদীর জল ভয়ঙ্করভাবে দূষিত। আসন্ন দিল্লি রাজ্যের নির্বাচনে কে যমুনা নদী দূষিত করছে, তাই নিয়ে তর্জা। এদিকে দেশের অনেক নদী শুকিয়ে বিলুপ্তপ্রায়।
যে উন্নয়নের পথ আমরা বেছে নিয়েছি তা যে ধ্বংসাত্মক, সেটি বোধহয় এখন অনেক মানুষ বুঝছে। র্যাচেল কারসেন আজ থেকে ৬২ বছর আগে যে সাবধানবাণী শুনিয়েছিলেন, আমরা সেটি শুনেছি বা পড়েছি, কিন্তু জীবনের চলার পথে তা ব্যবহার করিনি। আর তাই যখন আমার সন্তান বায়ুদূষণের জন্য ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারে না, অতিরিক্ত গরমের জন্য স্কুল যেতে পারে না কারণ স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়, তখন মনে হয় যদি র্যাচেল কারসেনের বই থেকে কিছুমাত্র শিক্ষা আমরা নিতাম, তাহলে এই ভয়ঙ্কর দিন আজ দেখতে হত না।