লিনজ় থেকে মন্টিসি

নিরুপম চক্রবর্তী

 

পর্ব ১: যদি একদিন, দানিউব নদীতীরে

মাপিয়াছি অন্তরীক্ষ, এখন মাপিব প্রচ্ছায়া
মানসযাত্রী ছিনু মহাকাশে, ভূমিতে ফিরিল মম কায়া।

বালখিল্য প্রবচনে কহে যদির কথা নদীতে যাউক। যদি এই নদীর নিকট না আসিতাম তবে একটি সমাধিগাত্রে উৎকীর্ণ এই কবিতাটি এইরূপে আমার মর্মভেদ করিত না। আমি এই নদীটিকে দানিউব বলিয়া জানি। এই নদীর দুকূল ভরিয়া লিনজ় নামক সুরম্য নগরী, অস্ট্রিয়া ইতি নামধারী রাষ্ট্রের অঙ্গীভূত। বিদগ্ধ পাঠক, তোমার শঙ্কার কারণ সম্পর্কে আমি অবহিত। বিলক্ষণ ঠিক ধরিয়াছ যে একদা এই নগরী এডল্‌ফ নামক বালগোপালের লীলাভূমি। বালক যৌবনপ্রাপ্ত হয়। অতঃপর হাইল হিটলার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তমসা। ভয়ার্ত পাঠক! নিশ্চিত থাকো, আমি সে অন্ধকারের আখ্যান শুনাইতে আসি নাই। সকল বৃত্তান্ত বলিতে গেলে, তব তো এক বহুত লম্বি কহানি শুরু হো যায়েগি! হাতে অত সময় নাই তোমার, জানি, অতএব সংক্ষেপে বলিতেছি।

একদা এই নগরী এডল্‌ফ নামক বালগোপালের লীলাভূমি

২০০৬ খ্রিস্টাব্দের প্রবল নিদাঘে সে এক নিবিড় অপরাহ্ণ। পূর্বেই বলিয়াছি যে মদীয় পার্থিব কায়া যদি সেই ক্ষণে দানিয়ুব নদীতীরে বিচরণ না করিত, তাহা হইলে এই কবিতার মর্মবাণী, হে পাঠক, আমি তোমার নিকটে উপস্থিত করিতে পারিতাম না। দানিয়ুব নদীতীরে লিনজ় নগরী সেই পলে দিবাস্বপ্ন দেখিতেছে, এই বান্দা অতঃপর একটি প্রাসাদোপম মকানের সম্মুখে স্থিত। পাঠক, তুমি কি সঙ্গীতের গুণগ্রাহী, পাশ্চাত্য মার্গসঙ্গীতের গুণগ্রাহী? অষ্ট্রিয়া প্রবাদপ্রতিম কালোয়াত মোৎসার্তের দেশ, এই গৃহ তাঁহার স্মৃতিবিজড়িত, এই স্থানে অবস্থান করিয়া তিনি তাঁহার সুবিখ্যাত লিনজ় সিম্ফনি রচনা করিয়াছিলেন। যদি এই প্রাসাদ না থাকিত তাহা হইলেও কি লিনজ় সিম্ফনি রচিত হইত? মননে এইসব নানাবিধ যদির কথা লইয়া আমি আনমনে হাঁটিতেছিলাম। নদীকূলে মৃদুমন্দ বাতাস বহে, সমস্ত চিন্তাসূত্র ভাসাইয়া লইয়া যায়। যদি এই নদীটির নাম দানিউবের পরিবর্তে ধলেশ্বরী হইত সেক্ষেত্রে কি ইহার সহিত বাঁশি নামক রবীন্দ্রকবিতাটির সম্পর্ক রচিত হইত? হে পাঠক! নাম পরিবর্তনের প্রয়োজন নাই, এই নদীর আছে এক নিজস্ব গোপনতা, এই নদীর সহিত সংযুক্ত রহিয়াছে অন্য এক কিনু গোয়ালার গলি, আর তাহার সহিত অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত জর্মন ভাষায় রচিত ওই কবিতাখানি, যাহার আমি এই নিবন্ধ রচনার প্রাক্কালে বঙ্গানুবাদ করিয়াছি। হে বঙ্গীয় পাঠকবৃন্দ! একদা দানিউব নদীকূলে ইতস্তত উদ্দেশ্যহীনভাবে বিচরণ করিতে করিতে লিনজ় শহরে সেই সর্পিল সরণীটিকে আমি আবিষ্কার করিয়াছিলাম। আইস আমার সহিত: আও তুমকো দিখলায়েগা উধারকি কুছ রঙ্গিন সিন; দেখো দেখো দেখো দেখো দেখো, অ্যান ইভিনিং ইন লিনজ়! মূল সঙ্গীতটি প্যারিস নগরীকে ঘিরিয়া রচিত। লিনজ় নগরীতে ইহাকে পরিবেশন করিবার নিমিত্ত কিঞ্চিৎ পরিবর্তন করিলাম। হে ক্ষমাসুন্দর বলিউড, মার্জনা করিও!

যদি এই নদীটির নাম দানিউবের পরিবর্তে ধলেশ্বরী হইত

তা সে যাহাই হউক, অতীব সমৃদ্ধ অস্ট্রিয়া দেশে এই গলিটি যেন বাগবাজার যথা। অতিশয় সরু, অতীব সাধারণ, পরিপূর্ণরূপে প্রসাধন-বিবর্জিত। আইস পাঠক আমরা আনমনে এইস্থানে বিচরণ করি। আমরা কোনও কিছু প্রত্যাশা করিয়া আসি নাই, তথাপি এক অকস্মাৎ আবিষ্কার আমাদিগকে স্তব্ধ করিয়া রাখে। পরিচর্যাবিহীন পীতবর্ণের একটি বসতবাটি, সম্মুখে একটি অতিকায় জঞ্জাল ফেলিবার ভ্যাট, তাহার পাশে একটি শুঁড়িখানার প্রবেশপথ, পশ্চাতে গোগো নাচের মুজরা বসিয়াছে, দ্বিতলে ট্যারট তাস সহযোগে গ্রহনক্ষত্রকে পর্যদুস্ত করিয়া প্রবল বিক্রমে ভাগ্য গণনা চলিতেছে। অথচ, হে পাঠক! অবলোকন করো যে তাহার প্রবেশদ্বারে জর্মন ভাষার প্রায় অদৃশ্য বিবৃতিটি অতীব সরল তথা সহজবোধ্য, দ্যখো লিখা রহিয়াছে: এই গৃহটিতে যোহানেস কেপলার বসবাস করিতেন!

এই গৃহটিতে যোহানেস কেপলার বসবাস করিতেন!

গৃহটিতে অনতিদূরের মোৎসার্তবাবুর লিনজ় সিম্ফনির প্রাসাদটির রাজকীয় ঝলকানির কণামাত্র নাই! গ্রহনক্ষত্রের গতিবিধিকে গাণিতিক সুশৃঙ্খলায় আবদ্ধ করিয়াছিলেন মহাকাশবিজ্ঞানের এই প্রবাদপুরুষ। এই নিবন্ধ ‘যদি’-বিষয়ক; অতএব বলো যদি এই পুণ্যাত্মা ধরাধামে আবির্ভূত না হইতেন, অধরা রহিয়া যাইত মানবের মহাকাশ বিজয়, নাসা নামক প্রতিষ্ঠানটির জন্মগ্রহণ অনিশ্চিত হইয়া উঠিত, আর ‘হয় যেন মর্তের বন্ধন ক্ষয়, বিরাট বিশ্ব বাহু মেলি লয়, পায় অন্তরে নির্ভয় পরিচয় মহা-অজানার’, এক প্রাচীন কবির এই পুরাতন কবিতাটি এই স্থানে এই রচনার পৃষ্ঠায় সংযোজন করিবার দুঃসাহস আমি দেখাইতে পারিতাম না। অথচ দ্যখো চূড়ান্ত অবহেলায় পড়িয়া আছে তাঁহার বাসস্থান। শুনিলাম এই সম্পত্তিটির মালিকানা ব্যক্তিগত, বর্তমান অধিকারী বাবুটির কেপলারের স্মৃতির প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ আছে বলিয়া বোধ হয় না। অতএব অবাধে চলুক ট্যারট তাসের ভাগ্যগণনা, হে পাঠক আমাদিগের আখ্যানও চালু থাকুক।

অনতিদূরের মোৎসার্তবাবুর লিনজ় সিম্ফনির প্রাসাদটির রাজকীয় ঝলকানি

কেপলার এই গৃহে অবস্থান করেন ১৬১২ হইতে ১৬৩০ খ্রিস্টাব্দ তক। লিনজ় শহরে তাঁহার আগমন অধুনা চেক প্রজাতন্ত্রে স্থিত প্রাগ নগরী হইতে এবং ১৬৩০ সালে তাঁহার নিষ্ক্রমণ অধুনা জর্মন দেশে অবস্থিত উল্‌ম নগরীতে। (পাঠক! ভাবিয়া দ্যাখো সদাপ্রভুর কী বিচিত্র লীলা: অধুনা ২০২৪ খ্রিস্ট-বৎসর, অনন্তকাল বাদে প্রাগ নগরীতে বসিয়া ধর্মহীন অবিশ্বাসী আমি এই রচনা পরিমার্জনা করিতেছি, অদূ্রে এই শহরস্থ কেপলারকোঠি যাহা নিয়মিত পরিচর্যায় আজিও পথিকের সম্ভ্রম জাগায়!)

প্রাগ শহরস্থ কেপলারকোঠি

তা যাহাই হউক, পাঠক, আমার প্রতীতি হয় যে খ্রিস্টীয় পরিমণ্ডল সেইকালে যদি ওইপ্রকার অতীব হিংস্ররূপে বিভক্ত না হইত, সেক্ষেত্রে এই দুটি ঘটনার কোনওটিই ঘটিত না, এবং লিনজ় শহরে জনাব কেপলারের ওই বাসস্থানটি লইয়া আমার এই প্রগাঢ় আক্ষেপের কোনও যৌক্তিকতা থাকিত না। কেপলার জন্মসূত্রে লুথারবাদী, অথচ লুথারবাদের বহু বক্তব্যে তাঁহার বিপুল সংশয়, আর পরিবর্তে পোপবাদী হইতে তাঁহার প্রবল আপত্তি! অতএব যিশুর জন্মক্ষণের নির্ধারণ যাঁহার অন্যতম কীর্তি, অর্থাৎ খ্রিস্টাব্দ নামক পঞ্জিকাটি যাঁহার গণনার উপর ভর করিয়া আছে, সেই মানুষটি সেইকালে প্রায় সর্বপ্রকার যিশুভক্তের বিরাগভাজন। এই ধর্মীয় সঙ্ঘাত তাঁহাকে প্রাগ হইতে লিনজ়ে টানিয়া আনে, তদুপরি প্রাগ নগরে বিড়ম্বনা হিসাবে সংযুক্ত হয় তাঁহার ব্যক্তিগত দুঃসময়: স্ত্রী এবং অতিপ্রিয় শিশুসন্তানটির মৃত্যু তাঁহাকে আচ্ছন্ন করে। শুনিয়াছি তাহাদের এপিটাফ তিনি নিজেই রচনা করিয়াছিলেন। হে বিদগ্ধ পাঠক! আমি তাহাদের অন্বেষণে সমর্থ হই নাই। সে-সকল রচনা যদি তোমার সংগ্রহে থাকে অবশ্যই আমাকে জানাইও। তা যাহাই হউক, লিনজ়ে আগমনের অব্যবহিত পরেও দুঃসময় কেপলারের পশ্চাদ্ধাবনে বিরতি দেয় না। তাঁহার মাতা ডাকিনী বলিয়া অভিযুক্ত হন, সুপুত্র কেপলার প্রায় দ্বিবৎসরের নিরন্তর প্রচেষ্টায় মাতাকে মুক্ত করিতে সমর্থ হন। সত্যকে তিনি বলিতেন সময়ের সন্তান, নিজেকে তাহার ধাত্রী বলিয়া গণ্য করিতেন। তাঁহার যুগান্তকারী গবেষণা লিনজ়ে অবস্থানকালে ইহার পর পরিণতি প্রাপ্ত হইতে থাকে। পরিশেষে তৎকালীন আনন্দবাজার যখন ঘোষণা করিল যে অতঃপর এই অঞ্চলে ত্রিশ বৎসরব্যাপী ধর্মযুদ্ধের দামামা বাজিতেছে, তখন যুযুধান দুই পক্ষেরই বিরাগভাজন, অথচ নিজ বিশ্বাসে দৃঢ় এই মানুষটি পুনরায় অনিকেত হইলেন। লিনজ় শহরের কিনু গোয়ালার গলিতে, ওই অবহেলিত গৃহটি আধুনিক ইতিহাসের এই অবিস্মরণীয় পৃষ্ঠাগুলি আজও ধারণ করিয়া আছে।

হে পাঠক! আইস আমরা কবিতায় ফিরি। এই আখ্যানের প্রারম্ভে উদ্ধৃত কবিতাটি কেপলারের সমাধিগাত্রে খোদিত হইয়াছিল। রচনাকার কেপলার স্বয়ং! অজস্র নতুন কবিতার জন্ম দিতে পারে এই পুরাতন কবিতাটি ও তাহার সন্নিহিত আখ্যান। ত্রিশ বৎসরের উন্মত্ত ধর্মযুদ্ধকালে সুইডিশ সেনাবাহিনি কেপলারের সমাধিটি ধ্বংস করে। অধুনা আর তাহার সন্ধান পাওয়া যায় না। তথাপি প্রবল আহ্লাদে, হে পাঠক, দ্যাখো কবিতাটি বাঁচিয়া আছে: যুদ্ধের অগ্নিতে ভস্ম হয় নাই, শান্তির প্লাবনে ভাসিয়া যায় নাই। কালজয়ী কবিতারা এইরূপে বাঁচে; আইস পাঠক আমরা নতজানু হই।

 

এই পর্বের উপসংহার

কেপলার চলিয়া গেছেন বহুকাল, লিনজ় নগরে দানিউবের প্রবাহ থামে নাই। ত্রিশ বৎসরের ধর্মযুদ্ধ শেষ, তাহার আরও অনেক পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও সমাপ্ত হইল। এই শহরের বালগোপাল এডল্‌ফ ফ্যুয়েরার হইয়াছিল অবশ্য, কিন্তু তাহার এই শহরে প্রত্যাবর্তনের আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ রহিয়া গেল। খ্রিস্টাব্দ ১৯৫২। লিনজ় শহরে ফয়েস্ত আপিনে নামক প্রতিষ্ঠানটি ইস্পাতশিল্পে যুগান্তর আনিল বাতাসের পরিবর্তে অক্সিজেন গ্যাস ব্যবহার করিয়া। লিনজ়-ডোনাউইতস বা এল-ডি প্রক্রিয়ার জন্ম হইল এইস্থানে। আশ্চর্যজনকভাবে অস্ট্রিয়া নামক ভূমিখণ্ডের বাহিরে এল-ডি প্রক্রিয়ার সর্বপ্রথম প্রয়োগগুলির একটি হয় ভারতবর্ষ নামক তৃতীয় বিশ্বের এক দেশে, রাউরকেলা ইতি নামক এক পাণ্ডববর্জিত জনপদে। ফয়েস্ত আপিনের প্রথম এল-ডি কনভার্টারটি তাহাদের প্রাঙ্গণে সযত্নে সুরক্ষিত, আর তাহার চারিপাশে, হে পাঠক, আপনি বরং রাউরকেলার ছবির প্রদর্শনীটি দেখিয়া আসুন! এই রচনাপাঠে আপনি যদি লিনজ় নগরীর সহিত আপনার নাড়ির টানটি উপলব্ধি করেন তাহা হইলে আমার এই কথকতা পূর্ণতা পাইবে।

ফয়েস্ত আপিনের প্রথম এল-ডি কনভার্টার, এখনও সযত্নে সুরক্ষিত।

 

পর্ব ২: অন্য ইতালি

আরও আরও দূরে বুঝি মন্টিসি গ্রামে ইতালিতে
বিনম্র অতীতে আজ পরিশ্রান্ত কবিতা ফিরেছে
আমার কবিতা বুঝি কোনও এক তীব্র শোকে
সারারাত সারাবিশ্বে জ্যোৎস্নায় ভিজেছে৷৷

—কিথ প্যাট্রিকের স্মৃতি

কিথ প্যাট্রিক প্রয়াত আজ অনেকদিন। তবে এ-কিসসা প্রাচীন, আগেই বলেছি, ধরাধামে তখন ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ। উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল। এই মার্কিন নাগরিকটি তখন নিজস্ব বিচিত্র ব্যক্তিত্বে জিন্দাবাহার। পাঠক! ঠিক কোন সূত্রে সেই ১৯৭৯ সনে এই অতীব বিত্তবান ব্যক্তিটির সঙ্গে আমার মতো দরিদ্র গির্জা-মূষিকের বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়, যা অটুট তার পরবর্তী দুই প্রজন্মে, কেন তার সঙ্গে আমি হেঁটে যাই সিয়াটলে, সান্তা মনিকায়, সল্টলেক সিটি অথবা আরও বহুদূরে ব্রাসিলের কোপাকাবানা তটে কিংবা ওরো প্রেতো শহরের রহস্যময়তায়, সেসব অন্য গল্প, এ-মুহূর্তে তা জানবার তোমার প্রয়োজন নেই। বরং শুরু করা যাক লিনজ় শহরে বসে কিথের কাছ থেকে পাওয়া একটা ই-মেল থেকে। কিথ যা লিখছে তার মর্মার্থ হল: ইতালির টাস্কানি অঞ্চলে মন্টিসি বলে একটা ঈশ্বর-পরিত্যক্ত পাঁচশো বছরের পুরনো গণ্ডগ্রামে একটা দশ কামরার ভিলা ভাড়া নিয়েছি, এসে কয়েক দিন ঠ্যাং উঁচু করে কাটিয়ে যাও! উত্তর দিই: এসে পড়লাম বলে!

হিটলারের শহরে সমস্ত চলে নিয়মমতে! সেই তাসের দেশের সুন্দরী ইস্কাবনের বিবি তখন ওখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেক্রেটারি। হেসে বলে: যাচ্ছ, যাও; তবে ওটা কিন্তু ঠিক আমাদের মতো ইউরোপ নয়! আমাকে আশ্বস্ত করে সে-সময়ে ওখানে বিরাজমান আমার বন্ধু ইতালীয় গণিতজ্ঞ ভিঞ্চেঞ্জো কাপাসো। বলে: নির্ভয়ে যাও হে বন্ধু আমার! তুমি হলে হাভাতে এশিয়ান আর আমরা হলাম হাভাতে ইউরোপিয়ান, গেলেই বুঝবে আমরা একদম আত্মার আত্মীয়! ইস্কাবনের বিবি হেসে ওঠে, বলে: ঠিক আছে, খোঁজ নিচ্ছি কীভাবে যেতে হয় ওসব জায়গায়।

অতএব নির্গত হই। লিনজ় থেকে ট্রেনে ভিয়েনা, আর সেখান থেকে অস্ট্রিয়ান উড়ান। সন্ধ্যের দিকে ফিরেঞ্জে, অর্থাৎ ফ্লোরেন্স শহরের বিমানবন্দরে ব্যোমযানটি প্রায় টেনিস বলের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে অবতরণ করে! প্রাণ হাতে করে বেরিয়ে হাত-পা টিপে টুপে দেখে দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে বেঁচে আছি!

বাইরে আসি। মতলবটা এই যে রাতটুকু ওই ইস্কাবনের বিবির বুক করে রাখা একটা হোটেলে কাটিয়ে পরের দিন মন্টিসির সন্ধানে বেরোব। বিমানবন্দরের বাইরে বেরিয়ে তাই ট্যাক্সি খোঁজার চেষ্টা করি। বিশাল লাইন, কয়েক শত যাত্রী ট্যাক্সির প্রতীক্ষায়, যার একটা বিরাট অংশ মার্কিন ভ্রমণকারী, এবং কোথাও একটাও ট্যাক্সি নেই, কেননা এই মুহূর্তে ইতালি ফ্রান্সের সঙ্গে ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলছে, ড্রাইভারেরা সবাই খেলা দেখছে, খেলা শেষ না হলে কেউ আসবে না, আর ইতালি হেরে গেলে দুঃখে আজ নাও আসতে পারে! আমি টেলিপ্যাথিতে শুনি ইস্কাবনের বিবি অট্টহাস্য করছে: বলেছিলাম না, ওটা কিন্তু ঠিক…!

তা দাঁড়িয়ে আছি, আছি তো আছিই! হঠাৎ চারদিকে প্রবল শব্দে বাজি ফাটতে থাকল, তারস্বরে হাজার খানেক গাড়ি হর্ন বাজাতে লাগল। আমার সামনের বুদ্ধিমান মার্কিনটিকে আমি বললাম: যাক, খেলা শেষ হল এবার। সে হতচকিত হয়ে বলল: তাই বুঝি? কে জিতল? আমি বললাম: নির্ঘাত ফ্রান্স, নইলে ইতালিয়ানরা এত আনন্দ করে? তারপর প্রায় নদীর স্রোতের মতো ট্যাক্সির পর ট্যাক্সি। প্রবল জোরে ভেঁপু বাজাতে বাজাতে এসে একজন ড্রাইভার প্রায় আমাকে পাঁজাকোলা করে তার ট্যাক্সির পেছনের সিটে বসিয়ে দিল, আর কোথায় যাব বলার মিনিট তিনেকের মধ্যেই এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলল: ওই যে তোমার হোটেল! জায়গাটা বলতে গেলে রাস্তার ওপারেই! মনে হয় সেদিন অন্তরীক্ষে বসে ভগবান গুগুলও বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখছিলেন, যতদূর জানি গুগুল ম্যাপ তৈরি করার ভাবনাটা এই ঘটনাটির পরেই তাঁর মাথায় আসে!

তা যাকগে, পরেরদিন ফ্লোরেন্সে মনোরম সকাল। দলে দলে কালচার-ভালচারে শহর ভর্তি! মূর্খ আমি ওসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ভাবতে থাকি ঠিক কীভাবে মন্টিসি যাওয়া যায়। বুঝলাম সে এক বিষম ব্যাপার। ট্রেন বা বাসে করে সিয়েনা পৌঁছতে হবে। তখনও মন্টিসি দূর অস্ত। একটা বাস যায় অবশ্য, সারাদিনে একবার, তবে সেটা খুব ভোরভোর, এইসব ট্রেন, বাস পৌঁছনোর আগেই ছেড়ে চলে যায়। যা থাক কপালে বলে ফ্লোরেন্সের হাওড়া স্টেশনের দিকে রওনা দিই। হাওড়া স্টেশন বলে হাওড়া স্টেশন: যেন একদম যমজ ভাই! অবিশ্বাস্য বিশৃঙ্খলা, লোকজন দেদার ছুট লাগাচ্ছে, আর চারদিক থেকে ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে ভোঁসভোঁস করে! মানসচক্ষে দেখি ইস্কাবনের বিবি হেসে গড়াচ্ছে, আর কাপাসো বলছে: বলো ঠিক দেশের মতো কিনা!

দেশের মতোই, তবে দেশের হাওড়া স্টেশনের নিয়মকানুনগুলো আমার জানা আছে, এখানে প্রায় কোনও কিছুরই থই পাই না। খেয়াল হয় ঢোকার মুখে একটা ট্রাভেল এজেন্সি আছে দেখেছি। ঠিক করি ওখানেই গিয়ে কথাবার্তা বলব। এক মহিলা বসে আছেন সেখানে টেবিল আলো করে। দিব্যি ইঞ্জিরি বলেন। বলামাত্রই এক কথায় সিয়েনার ট্রেনের একটা টিকিট ইস্যু করে দিলেন। আহ্লাদে আটখানা হয়ে আমি আবার স্টেশনে ঢুকি। কিন্তু ট্রেন কোথায়? এ ট্রেন তো কোনও প্ল্যাটফর্মে নেই! মরিয়া আমি ওখানে ইংরেজি বলা কাউকে খুঁজতে থাকি। একটি অল্পবয়সী মেয়ে এগিয়ে আসে, আমার টিকিট দেখে বলে: এ ট্রেন তো আধঘণ্টা আগে ছেড়ে গেছে! বুঝি যে সেই ট্রাভেল এজেন্সির মহিলা অকাতরে আমাকে এমন একটা ট্রেনের টিকিট গছিয়েছেন যেটা আমি কখনওই ধরতে পারব না! বড় আশ্চর্য এক পরাবাস্তব পরিস্থিতি। আমি বিমোহিত হয়ে ভাবি এর পরে কী? ট্রাভেল এজেন্সিতে ফিরে গিয়ে লাভ নেই, আমি লিখে দিতে পারি ওখানে ফিরলে মহিলা ইতালিয়ান ছাড়া অন্য কোনও ভাষা ব্যবহার করবেন না! আমি ঠিক করি ট্রেন নয়, এবার বাসে যাওয়ার চেষ্টা করা যাক। বাসস্ট্যান্ড স্টেশনের ঠিক পাশেই। ঢোকার মুখে সেটাও চোখে পড়েছে। সেখানেই যাই ও সিয়েনা লেখা একটা বাসে চড়ে বসি। ড্রাইভার সাহেব সততার প্রতীক; তিনি টাকা নেন, টিকিটও দ্যান, এবং যাকে বলে একজন ইমানদার মানুষ হিসেবে সিয়েনার বদলে অন্য কোনও শহরে নামিয়ে দ্যান না! পরবর্তীকালে একবার অবশ্য মিলান এয়ারপোর্ট থেকে যেতে গিয়ে দেখেছিলাম যে বাসের ড্রাইভার অকাতরে সবাইকে নিয়ে যাচ্ছেন, সবার কাছ থেকে ভাড়ার টাকা গুণে নিচ্ছেন অথচ অনেককেই টিকিট দিতে ভুলে যাচ্ছেন! আমার মনে সেদিন সিয়েনার বাসের ড্রাইভার সাহেবের ছবিটা বারবার ফিরে আসছিল। ভদ্রলোক সাচ্চা ইতালিয়ান কিনা কে জানে!

তা যাকগে। বাসযাত্রা শেষে সিয়েনায় নামি। একটা অসামান্য প্রাচীন শহর। এর প্রতিটি পুরনো অট্টালিকা যেন মধ্যযুগীয় ইউরোপের ইতিহাসের একেকটি পৃষ্ঠা। এর সর্পিল, অপরিসর গলিগুলির প্রতিটি বাঁকে লুকিয়ে আছে এক আশ্চর্য রহস্যময়তা। কেন্দ্রের চত্বরটিতে শুনলাম প্রাচীন প্রথা মেনে এখনও ঘোড়দৌড় হয়। পর্যটকের ভিড় এখানেও যথেষ্ট, তবে তা যেন ফিরেঞ্জের মতো অসহনীয় নয়।

সিয়েনা: এর প্রতিটি পুরনো অট্টালিকা যেন মধ্যযুগীয় ইউরোপের ইতিহাসের একেকটি পৃষ্ঠা।

 

সিয়েনা: এর সর্পিল, অপরিসর গলিগুলির প্রতিটি বাঁকে লুকিয়ে আছে এক আশ্চর্য রহস্যময়তা।

একটা বিশাল সমস্যা থেকেই যায়: এবার সিয়েনা থেকে মণ্টিসি গ্রামে যাই কীভাবে? সে সময় হাতে হাতে সেলফোনের নয়, ডায়াল করা ল্যান্ডলাইন ফোনের ক্রিং ক্রিং করে বেজে ওঠার দিন সেসব (‘হায়, ফুলের দিন!’)। আমার কাছে কিথের ভিলার ল্যান্ডলাইন নাম্বার আছে, আর সিয়েনার বাসস্ট্যান্ডে সারি সারি পাবলিক ফোন। প্রথমটিতে পয়সা ফেলি, আওয়াজ হয়, ঘ্যাক-টুং-ঘটাং-ডুং; আর তারপরে নিশ্ছিদ্র নীরবতা, ইউরো কয়েনটি কোনও কৃষ্ণগহ্বরে বিলীন হয়ে যায়! ইস্কাবনের বিবির অট্টহাস্য যেন বাজে আবার: ওটা কিন্তু ঠিক…! দ্বিতীয় ফোনটিতে পয়সা ফেলি, আবার সেই একই ঘটনা, ইউরো কয়েনটিও রীতিমাফিক বেপাত্তা হয়ে যায়! তবে এবার মনে হয় কাপাসো বলে উঠল: হাল ছেড়ো না বন্ধু, আরও পয়সা ছাড়ো জোরে! আমি তৃতীয় ফোনটাতে পয়সা ফেলি, ওপাশে কিথের ছোটছেলে ইয়ানের গলা: চিন্তা কোরো না, আমাদের সঙ্গে গাড়ি আছে, তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে আসছি।

সিয়েনা: কেন্দ্রের চত্বরটিতে প্রাচীন প্রথা মেনে শুনলাম এখনও ঘোড়দৌড় হয়।

অতএব অবশেষে মন্টিসি পৌঁছে যাই। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা সুপ্রাচীন গ্রাম। নিস্তব্ধ এবড়োখেবড়ো রাস্তাগুলিতে মানুষের দেখা মেলে না সারাদিন। যুবক-যুবতীরা জীবিকার খোঁজে এ-গ্রাম ছেড়ে গেছে বহুকাল। পড়ে আছেন কিছু প্রায় অথর্ব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, একজন হাড়ভাঙার চিকিৎসক, ধরে নিতে পারি তাঁর পসার ভালই। গ্রামের একমাত্র ক্যাফেটি সারাদিন ঘুমোয়, সন্ধ্যাবেলা জেগে ওঠে। জমাটি আড্ডা বসে। গ্রামের স্ত্রী-পুরুষ আনেকেই সেখানে, আর তাঁদের মধ্যে নব্যযুবকটি অনুমান করি সদ্য সত্তর পেরিয়েছেন। প্রাচীন ভিলাগুলি মাঝেমধ্যে খোলে, কিথ প্যাট্রিকের মতো কোনও বেজায় খাপছাড়া ভ্রামণিকের আবির্ভাব ঘটে!

মন্টিসি পৌঁছে যাই। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা সুপ্রাচীন গ্রাম।

 

মন্টিসি: নিস্তব্ধ এবড়োখেবড়ো রাস্তাগুলিতে মানুষের দ্যখা মেলেনা সারাদিন।

 

মন্টিসি: ভিলাগুলি মাঝেমধ্যে খোলে, কিথ প্যাট্রিকের মতো কোনো বেজায় খাপছাড়া ভ্রামণিকের আবির্ভাব ঘটে!

তারপরে সেই নিঝুম নিঃস্পন্দ গ্রামে কয়েকটা দিন কেটে যায়। আমি আর কিথ ঘণ্টার পর ঘণ্টা আবোলতাবোল আলোচনা করি। টাস্কানির টিলার ওপর সূর্য ঢিমেতালে ওঠে আর অস্ত যায়। এক আশ্চর্য অলস যাপন, প্রায় অর্থহীন এক দিবাস্বপ্ন যথা!

একটি স্থানীয় মানুষ আসেন, টাস্কানি অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে পরিচিতি দিতে। আমরা কাছেই একটা তথাকথিত ‘স্লো’ রেস্টুর‍্যান্টে নৈশভোজ সারতে সদলবলে হাজির হই। সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। ছোট্ট একটা দোকান, বিগত পাঁচশো বছর ধরে যদি অবিকৃত থেকে থাকে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। গোটা দোকানটাই সেদিন ভিলাবাসী মার্কিন ভ্রমণার্থীদের সেবায় নিয়োজিত। আমরা বসি। মালিক সমেত কর্মচারীরা করমর্দন করেন। তারপর ক্রমান্বয়ে রন্ধনের উপাদানগুলি দ্যাখাতে থাকেন। প্রায় সন্ধে সাতটা তখন। ঘণ্টা খানেক পরে খাবার আসে। আসে। আসে। আসতেই থাকে! শেষ পদটি আসে ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ, আমরা ঘুমে ঢুলছি, সঙ্গের কয়েকটি শিশু সটান ভূমিশয্যায় নিদ্রামগ্ন; কে জানত এই ‘স্লো’ রেস্টুর‍্যান্টের ঘড়ির প্রতিটি মিনিট বাইরের পৃথিবীর একটি ঘণ্টার সমান!

এবার ফেরার পালা। সেই একইভাবে ফ্লোরেন্সে প্রত্যাবর্তন, হোটেলে রাত্রিযাপন; কাকভোরে ভিয়েনার উড়ান। হোটেলের রিসেপশনে আমি একটা ট্যাক্সি বুক করি। ভোর চারটেতে যে রওনা হব সেটা পইপই করে বলে দিই। চারটের অন্তত মিনিট পনেরো আগে আমি লবিতে গিয়ে হাজির হই। যে লোকটির কাছে আমি গতরাতে ট্যাক্সি বুক করেছিলাম তিনি তখনও ওখানে উপস্থিত। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন, আমিও তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকি! তিনি একটিও শব্দ উচ্চারণ করেন না। চারটে বাজে; ট্যাক্সি আসে না। চারটে দশ বাজে; ট্যাক্সি আসে না। পরিবর্তে দুটি যুবক যুবতী চেক আউট করে। চারটে পনের; আমি কাউন্টারে যাই। কাউন্টারের লোকটির সঙ্গে আমার কথোপকথনের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ রইল এখানে।

আমি: কাল আমি যে একটা ট্যাক্সি বুক করেছিলাম?
লোক: হ্যাঁ, করেছিলে তো!
আমি: তা সে কখন আসবে? দেরি হয়ে যাচ্ছে!
লোক: (উদাসীন স্বরে) না, ট্যাক্সি আসবে না!
আমি: (বেজায় ঘাবড়ে গিয়ে) কেন?
লোক: (একইরকম উদাসীন স্বরে) কাল রাতে ওরা ধর্মঘট করেছে!
আমি: (হতভম্ব হয়ে) সে কি! এতক্ষণ বসে আছি, তুমি বলোনি কেন?
লোক: (নির্লিপ্তির সঙ্গে) তুমি জিজ্ঞাসা করোনি তো!
আমি: (বিস্ময় এবং আতঙ্কের সংমিশ্রণে) তা, আমি তাহলে এয়ারপোর্ট যাব কীভাবে?
লোক: (অবিচল নির্লিপ্তির সঙ্গে) কাছেই তো! হাইওয়ে ধরে হাঁটতে থাকো, পৌঁছে যাবে!

বিকল্পবিহীন আমি ট্রলিব্যাগ টানতে টানতে হাইওয়ের দিকে যেতে থাকি, আর ভাবি যে কালকের কোনও ইতালিয়ান খবরের কাগজে, গাড়িচাপা পড়ে এক বিদেশির মৃত্যুসংবাদ ছাপা হলে, সেটা আদৌ পরিচিত কেউ জানতে পারবে কিনা!

উল্কাগতিতে পাশ দিয়ে গাড়িগুলো চলে যেতে থাকে, আর প্রাণ হাতে করে এগিয়ে চলি। বেশিদূর যেতে হয় না, কান ঘেঁষে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। ভাবি, এইরে, এবার পড়েছি মাফিয়ার হাতে, খানা খেতে হবে সাথে! দেখি, হোটেলে একটু আগে দ্যাখা সেই ইতালিয়ান যুবক-যুবতী। ছেলেটি বলে: এভাবে কোথায় যাচ্ছ তুমি? সংক্ষেপে ঘটনাটা তাকে বলি। সঙ্গেসঙ্গে দরজা খুলে দিয়ে তারা দুজনেই একসাথে বলে ওঠে: চলে এসো আমরা তোমাকে এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিচ্ছি! গাড়িতে বসে প্রশ্ন করি যে ওরা এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছে কিনা। যুবক বলে: না, আমরা উল্টো দিকে যাব। এটা কোনও বিরাট ব্যাপার নয়। আমার দেশের মানুষ তোমার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে তার জন্য একজন ইতালিয়ান হিসেবে আমি ক্ষমা চাইছি!

সবে সূর্য উঠতে চলেছে। ফ্লোরেন্স বিমানবন্দরের সামনে দাঁড়িয়ে মনে পড়ে সেই কবে পড়া ম্যাক্সিম গোর্কির ইতালির রূপকথা ননী ভৌমিকের অনুবাদে। বাচ্চা ছেলে পেপে গাইছে, ও সোলে মিয়া! ওগো সূর্য, ওগো সূর্য মোর! ওগো সূর্য বুকে আমার কিরণ ঢেলে দিও!

মানুষের প্রতি অসীম বিশ্বাসে মন ভরে উঠতে থাকে।

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4998 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...