নাছোড় বিরক্তিকর সেই লেখাটি যা প্রতি নারীদিবসে বরাদ্দ

যশোধরা রায়চৌধুরী

 


সরকারি কর্মচারীর সার্ভিস রুলে যা যা লেখা আছে সবটাই যদি বাস্তবায়িত হত তাহলে না জানি কী হত। আপাতত আমার খুব ভাবতে ইচ্ছে করে, কত মানুষের চাকরি চলে যেত যদি সব কেস রিপোর্টেড হত। তবে হ্যাঁ, আমাদের চাকরি পাওয়া যেমন কঠিন, যাওয়া তেমনই কঠিন, এ-কথা ডে ওয়ান থেকে শুনে এসেছিলাম। এই বিশ্বাসে ভর করেই শুধু নারীর প্রতি কটুকাটব্য, অশ্লীল জোকস ইত্যাদিতে থেমে না থেকে আরও কিছুদূর হেঁটে যেতে পারেন সরকারি কর্মীরা। যেখানে টাকা খাওয়া থেকে শুরু করে আরও অনেক অপকর্ম করেও শাস্তি হয় না সেখানে এইসব কর্ম তো দুধভাত

 

না বলা বাণীর ঘন যামিনী

“এখানে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৬৪টা অ্যাবিউজের ঘটনা ঘটে।”

“কোনও মিটিং-এ প্রতি ৪৬ মিনিটের মাথায় একটি করে নারীবিরোধী জোক বলা হয়।”

“প্রতি প্রতিনিধিত্বমূলক টিমে মহিলাদের বাদ দিতে চেয়ে শেষ পর্যন্ত মাঝেমধ্যে মুখরক্ষা করতে একটি মহিলা প্রতিনিধি রাখা হয়।”

এইরূপ ধামাকেদার উচ্চকিত ক্যাচলাইন তৈরি করার পর্যাপ্ত ইচ্ছা আমার ছিল বটে। কিন্তু আমি পারিনি ঠিক ঠিক এমন সব তথ্য জোগাড় করতে। কী করে পারব শুনি? যে-বিষয় না বলা বাণীর ঘন যামিনীতে ঢাকা, অকথিত গোল্ডেন সাইলেন্সের বর্ম পরা, আন্ডার রিপোর্টিং, চেপেচুপে যাওয়া, অনির্দেশ্য ধোঁয়াটে তথ্যতে ভরপুর? লুকোছাপা আদৌ যদি কোথাও থাকে তো তাই এইখানে, এইখানে, এইখানে।

এ আমাদের কেরানিস্বর্গ, এ আমাদের অফিসারবরাহনন্দনকানন, এ আমাদের হায়ারার্কিসিঁড়ি, এ আমাদের রুল হুলুস্থুল, এ আমাদের সকল পাপ ধুয়ে ফেলার পুণ্যডুব।

উল্টোদিক থেকে দেখুন। অসভ্যতা করলে শাস্তি আছে। ব্যস এই অব্দি। বাকিটা দুর্গম গিরি কান্তার মরু। অসভ্যতার সংজ্ঞা থেকে শুরু করুন৷ তারপর নালিশপ্রক্রিয়া। তারপর কানুনি তরিবত।

ধরুন ব্যুরোক্রেসির আপনি একজন দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাপের মহিলা কর্মী। প্রথম ধাপের অফিসার একদিন আপনার দিকে কামময় চাহনি দিলেন। আপনি উপেক্ষা করলেন। “বাবার বয়সী” লোক। হয়তো আপনার ভুল। কিন্তু বস সেখানেই থেমে গেলেন না। আপনাকে কাজে-অকাজে ডেকে পাঠালেন, চা-কফি অফার করলেন। আপনার জন্য অপ্রত্যাশিত গিফট রাখলেন টেবিলে। এবার আর ভুল হওয়ার না। এক সন্ধেবেলা রেস্তোরাঁতে খেতে নিয়ে যাবেন বলায় মেয়েটির অ্যান্টেনা খাড়া।

বাহানা দেখিয়ে না বললেন। পীড়াপীড়ি চলল। এরপর নানাভাবে আপনাকে বশীভূত করার চেষ্টা করতে লাগলেন।

এরপরও না?

এবার ঘুরিয়ে থ্রেট। তুমি তো এখনও চাকরিতে কনফার্মড নও।

ধরুন আপনার বয়স ২৫। আর আপনার বসের বয়স ৫০। বসের চাটুকার পারিষদবর্গের সংখ্যা কুড়ি। অ্যাডমিনের ডেপুটি থেকে শুরু করে প্রায় সবাই বসকে ভেট দিতে তৎপর। আপনাকেই সে ভেট হিসেবে টার্গেট করা হল। ২৫ বছর বয়সী সদ্য চাকরিতে জয়েন করা মেয়েটি নিজের সাগ্রহে যদি ভেট হতে রাজি না হয়, যদি তার কাছে এই প্রস্তাবটুকুও অবান্তর এবং আপত্তিকর মনে হয়, তাহলে ওই কুড়িজনের দলটি কীভাবে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে আপনার বিরুদ্ধে, তা আপনার কল্পনার বাইরে। প্রথমে মিষ্টি কথায় আপনাকে বোঝানো হচ্ছিল, তারপরে শুরু হল ভয় দেখানো, নানা অপদার্থতা আবিষ্কার করে মেমো ধরানো। সবটাই সরকারি রুলের আওতায়। তারপরে শুরু হল স্টকিং। আপনি অফিস থেকে স্কুটি নিয়ে ফেরার সময় আপনার পেছনে পেছনে লোক আসে। আপনার বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে অচেনা লোক।

এরপর ২৫ বছরের মেয়েটি, মানে আপনি, অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে রুখে দাঁড়ান এবং কমপ্লেন্ট কমিটিতে যান। প্রত্যেক অফিসে একটি করে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট কমিটি থাকা বাধ্যতামূলক খাতায়কলমে অন্তত। কিন্তু এক্ষেত্রে যাঁকে দোষী বলে সাব্যস্ত করতে চাইছেন তিনিই তো দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। কাজেই কমপ্লেন্ট কমিটির যিনি মাথা তিনি তাঁর শিরদাঁড়াটি বসের কাছেই বিক্রি করে আছেন। পাশের অফিসের আরেক মহিলা অফিসারকে গিয়ে বলার পর খানিকটা কাজ হল। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা কমপ্লেন্টের আকৃতি পেল। যেহেতু গ্রুপ-এ অফিসার অভিযুক্ত, তাই হেডকোয়ার্টার অব্দি গড়াল।

এরপর আসল খেলা শুরু। অসংখ্য পেপারওয়ার্কের পর অসংখ্যবার আপনার সাক্ষ্য নেওয়ার পর আচমকা ডিসিপ্লিনারি প্রসিডিং খতম। ফাইল ক্লোজ। কিন্তু আপনাকে কি কোনওরকম বিচারই দেওয়া হয়নি? হয়েছে তো! আরে আরে মেয়েদের সেফ স্পেস দেবে তো আপিস। তাই আপনাকে বদলি করে দেওয়া হল অন্য অফিসে। যাও এবার খুশি হয়ে বিছানাবালিশ বেঁধে নাও। হ্যাঁ বসকেও বদলি করে দেওয়া হল। আরও দূরে। কেন শাস্তি হয়নি? প্রমাণ নেই। সেভাবে প্রমাণ নেই। অভিযুক্তকে অভিযুক্ত বলা যায় কিনা সে প্রশ্ন অবশ্যই এখানে ওঠেনি ভাগ্যক্রমে। তবে ওই আর কি। এক ধাপ ডিমোশন বা একটি ইনক্রিমেন্ট কাটা। এসব হলেও তাকে শাস্তি বলা যেত খাতায়-কলমে। তা হল না কারণ বাপ কা ভি বাপ হ্যায়। বসের মাথায় তাঁরও বসের আশীর্বাদক করস্পর্শ। শাস্তি নয় শুধু বদলি। অন্য অফিসে গিয়ে সেখানকার মাথা বা প্রধান হয়ে এই একই আক্রামক আরও একবার নতুন নতুন আক্রমণের ছক শানাবেন।

সদ্য চোখে দেখা এক কাহিনি বর্ণন করলাম।

হায়ারার্কি-প্রধান এই অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-বিশ্বে এমন ঘটনা বেমিল নয়।

সংখ্যাতত্ত্ব কি সবটা বলে? না, বলে না।

সরকারি কর্মচারীর সার্ভিস রুলে যা যা লেখা আছে সবটাই যদি বাস্তবায়িত হত তাহলে না জানি কী হত। আপাতত আমার ভাবতে ইচ্ছে করে, খুব ভাবতে ইচ্ছে করে, কত মানুষের চাকরি চলে যেত যদি সব কেস রিপোর্টেড হত। তবে হ্যাঁ, আমাদের চাকরি পাওয়া যেমন কঠিন, যাওয়া তেমনই কঠিন, এ-কথা ডে ওয়ান থেকে শুনে এসেছিলাম। এই বিশ্বাসে ভর করেই শুধু নারীর প্রতি কটুকাটব্য, অশ্লীল জোকস ইত্যাদিতে থেমে না থেকে আরও কিছুদূর হেঁটে যেতে পারেন সরকারি কর্মীরা।

যেখানে টাকা খাওয়া থেকে শুরু করে আরও অনেক অপকর্ম করেও শাস্তি হয় না সেখানে এইসব কর্ম তো দুধভাত। দুটো বিয়ে, যার দ্বিতীয়টি বেআইনি, এমন যে কত দেখা হয়ে গেল এই ত্রিশ বছরের কর্মজীবনে, মরাল টার্পিটিউডের নাম দিয়ে একাধিক লোকের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া শুরুও হল বটে। শেষ আর দেখা হল না তারও। স্ত্রীরা পালাক্রমে এসে অ্যাডমিন ডেপুটির সামনে কেঁদে গেলেও।

মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্যুরোক্রেসিতে আসার দিন থেকে শুরু হয় এই দ্বিতীয় লিঙ্গের সঙ্গে প্রথম লিঙ্গের আশ্চর্য অদৃশ্য তুলনা ও রেষারেষি। যেমন, ঢোলপুর হাউজে, ১৯৯২ সালে, আইএএস পরীক্ষার ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে হাজির হওয়ার আগেই, সেই ইউপিএসসি ভবনে বসেই শুনেছিলাম, “তোমার তো পাওয়ার চান্স আমার চেয়ে বেশি। মেয়েদের কোটা থাকে তো!”

সেই থেকে শুরু। মেয়েদের সম্পর্কে নিন্দামুখর না হয়ে জলগ্রহণ না করা বস থেকে শুরু করে, সন্তানের জ্বর হলে অ্যাবসেন্ট কেন করবে কোন মা, যে নাকি সরকারি পদাধিকারী, তা নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ, বুদ্ধি নিয়ে কটুকাটব্য করে একঘর পুরুষ অফিসারের নাকাল ও অপদস্থ করার চেষ্টা। সবই দেখলাম।

আমার চেয়ে দশ বছরের জুনিয়র মেয়ে একটা কাহিনি বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিল। তার বস তার গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে এত বেশি ট্যুর ও ছোটাছুটি করতে বাধ্য করেছিলেন, যে, তার গর্ভনাশ হয়ে যায়। এই অ্যাবর্শনের জন্য সে কুড়ি বছর পরেও চোখের জল ফেলেছিল। যদিও পরে তার সন্তান হয়েছে।

বায়োলজিকাল ক্লকের তাড়নায়, যে মেয়েটির কেরিয়ারের গ্রাফ সুউচ্চ চূড়ার দিকে ধাবমান, সে হঠাৎ দেখে তার পরিবারের প্রত্যাশা ও তার নিজেরও জৈবিক চাহিদা মেনে, সেটাই তার মা হওয়ার সময়। মাতৃত্বকে পাশে সরিয়ে কেরিয়ার করা মেয়েরা তো গণমানসে শয়তানের তুল্য, ভিলেনের কম কিছু নয়। সিনেমা সোপ সিরিজ সব মাধ্যমকেই ধন্যবাদ। এই এক বিষয়ে মাতৃত্বকে প্রত্যাহত করা মেয়েদের ভিলেন বানানোর ক্ষেত্রে এরা এককাট্টা।

ফলে, মাতৃত্ব এসে এই মেয়েদের মগজের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নেয়। এবং একবার মাতৃত্ব ঢুকলে তা মোটামুটি ১৮ বছরের জন্য মেয়েদের পেড়ে ফেলে। সংসার আর অফিসের মধ্যে দু-টুকরো হতে থাকে মেধা ও মনন, ইচ্ছা ও চেষ্টা, সমস্ত জীবনের বড় বড় ঘটনায় সংসার এসে বাধা দিতে থাকে। বিদেশ গমন, অজস্র ট্যুর, নানা শহরে বদলি সবই বিশালভাবে ব্যাকসিট নেয়। সন্তানের পরীক্ষা আর তার অসুখ, শেষমেশ মায়েদের জীবনকে এইসব মাইলস্টোন বেঁধে ফেলে।

এই যে পৌরুষভর্তি কর্মস্থল, সেখানে অন্য পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে পদে পদে প্রতিযোগিতায় হেরে যেতে থাকে মেয়েটি। হয় সে ভয়াবহ কঠোর হয়ে ওঠে, ভয়ানক কেজো হয়ে ওঠে, ও নির্দয়ভাবে নিজের প্রতি ঔদাসিন্য দেখিয়ে প্রাধান্য দেয় কাজ ও সংসার উভয়কে, না হলে তাকে কামচোর আখ্যা পেতেই হয়, ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেওয়া হয় তার কার্যকরিতা সীমিত।

পাশাপাশি অতি উৎসাহী ও উদ্যোগী মেয়েদের সরিয়ে দিতে চাওয়া, বা সহ্য করতে না-পারা পুরুষ সহকর্মীর সংখ্যাও খুব কম না। বোকা সেজে থাকা প্র্যাকটিস না করলে মেয়েদের সমূহ বিপদ ঘটে যায়। বুদ্ধি কতটা ধারালো তার প্রকাশ পুরুষপ্রধান কর্মস্থলে খুবই বিপজ্জনক। পেছনে ছুরি মারার জন্য অজস্র লোক জমা হয় তখন। সহকর্মী ও কর্মিণী কেউ কম যান না।

 

আইন, নিয়ম, বাস্তবতা

খাতায়-কলমে কীভাবে অন্তত POSH আইন, হ্যারাসমেন্টের সংজ্ঞা তৈরি এবং সংগঠিত সেক্টরে একটা কমপ্লেন্ট কমিটি গঠন অব্দি হয়েছিল, সে গল্পটাও বলে রাখি।

১৯৯৭, ১৩ আগস্ট। রাজস্থানে বারবার উচ্চবর্ণের যৌন উৎপীড়নের শিকার সমাজকর্মী তথাকথিত নিম্নবর্ণের ভাঁওরি দেবীর পক্ষ নিয়ে বিশাখা ও অন্যান্য মহিলা সংগঠনরা সোচ্চার হয়েছিল। কাজের জায়গায় পুরুষের হাতে মেয়েদের যৌন হয়রানি বন্ধ করতে তাদের দাখিল করা রিট পিটিশনের প্রতিক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্ট বিশাখা জাজমেন্ট আনল। এটা নারীর কর্মক্ষেত্রে যৌন উৎপীড়ন প্রতিরোধ বিষয়ক নির্দেশাবলি মাত্র। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি, প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে, সংগঠিত বা অসংগঠিত, সর্বত্র এই নির্দেশাবলি বলবৎ হল। আইন বানাবার দায়িত্ব পার্লামেন্টের অতঃপর। আপাতত এই নির্দেশাবলির বলে ম্যানেজমেন্টকে এ-বিষয়ে একটা “কমপ্লেন্ট কমিটি” বা অভিযোগ সমিতি গঠন করতেই হবে। কমপ্লেন্ট কমিটিতে মহিলা মেম্বার থাকা বাধ্যতামূলক, সম্ভব হলে কোনও উচ্চপদস্থ মহিলা অফিসারকে এর চেয়ারপার্সন করতে হবে। অফিসে কোনও মহিলা কর্মচারী যৌন উৎপীড়নের শিকার হলে, অবাঞ্ছিত লাঞ্ছনার শিকার হলে, এই সমিতির কাছে তাঁর অভিযোগ জানাবেন। সমিতির এনকোয়ারি রিপোর্টকে গুরুত্ব-সহ বিচার করতে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বাধ্য থাকবে।

এসবের পরেও, সরকারি ক্ষেত্রে কিছু বাধানিষেধের, ফর্ম আর রিটার্নের কড়াকড়ি ঘটলেও, প্রায় কোনও প্রভাবই নেই এই গাইডলাইনের (পরবর্তীতে যা আইন[1] হল ৯ ডিসেম্বর ২০১৩-তে)।

এর অধীনে নিয়মকানুনও তৈরি হল— Sexual Harassment of Women at Workplace (Prevention, Prohibition & Redressal) Rules, 2013 (“Rules”)। এর বলে প্রতি অফিসে একটি অ্যান্টি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট পলিসি থাকার প্রয়োজন। একটি কমিটি থাকতেই হবে। যে-কোনও সংগঠিত ক্ষেত্রে তা সে সরকারি হোক বা বেসরকারি।

বেসরকারি ক্ষেত্রের ছবি তো আরও ভয়াবহ। তা আবার অসংগঠিত ক্ষেত্র হলে তো বটেই। সেই কবে মহানগর ছবিতে সত্যজিৎ রায় দেখালেন বাড়ি বাড়ি উলবোনা মেশিন বিক্রি করতে যাওয়া মেয়েদের অ্যাবিউজের সম্ভাবনা। একাকী পুরুষের বাড়িতে ঢুকে দৌড়ে পালিয়ে আসা। সদ্য গৃহ থেকে বাইরে পা রেখেছে মেয়েরা। সেই ষাটের দশক থেকে এতগুলো বছর এগিয়ে গেলাম আমরা। ৬০ বছরের ব্যবধান।

তেহেলকা-খ্যাত তরুণ তেজপালের কেস মনে করি। সাংবাদিকদের সম্মেলনে লিফটের ভেতরে একটি মেয়েকে মলেস্টেশনের অভিযোগ। ২০১৩ থেকে চলা প্রক্রিয়া, ৭ মাস জেলেও থাকতে হয়েছিল তাঁকে। পরে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে জামিন দেয়। ২০২১-এ গোয়ার কোর্টে নির্দোষ সাব্যস্ত হলেন তিনি।

সংবাদজগতের হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতার আবহে, এসব ঘটনা খুচরো পাপের মতো বিরাজমান। তেমনই, অনেক সাংবাদিক মহিলা তাঁদের ঊর্ধ্বতন পুরুষ সাংবাদিকদের অবাঞ্ছিত যৌন রঙে রাঙানো মন্তব্য এবং অসভ্য আচরণের বিরুদ্ধে এইচআরকে জানিয়েও ফল না পেয়ে চাকরি ছেড়েছিলেন… যেমন লিখেছিলেন সাংবাদিক রাজশ্রী দাশগুপ্ত, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের তৎকালীন সম্পাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা। গুগল করলে এমন ঘটনা আরও জানা যাবে।

কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে আমাদের, মানে ভারতের ট্র‍্যাকরেকর্ড খুব ভাল নয়। সবচেয়ে খারাপ অসংগঠিত ক্ষেত্র টিভি, চলচ্চিত্র ইত্যাদিতে। এসব শিল্পক্ষেত্রে তো সে অর্থে কোনও মাথা নেই। বহুধড় বহুমুণ্ড মেডুসার মতো এক উপস্থিতিতে “কাস্টিং কাউচ” অতি প্রাচীন শব্দ।

অবিশ্যি হলিউডের কাহিনিগুলি, চলচ্চিত্রজগতের নিরিখে ঘটা, চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভে ওয়াইন্সটাইনের উপর্যুপরি নারীনিগ্রহের ঘটনার পর, হ্যাশ ট্যাগ মি টুর গপ্পোগুলো, সেগুলোই বা কী এমন সুন্দর? এত কিছুর পরও ওয়াইন্সটাইনের শাস্তি হয়নি। ক্ষমতাবান পুরুষের আইনি লড়াই লড়বার অগাধ টাকা থাকাটা খুব কার্যকর এ সব ক্ষেত্রে।

ফিরে আসি ভারতের সরকারি ক্ষেত্রে। কিছু পরিবর্তন ঘটেছে কি? ৩০ বছর প্রায় আগে, পাঞ্জাবের আইএএস অফিসার রুপান দেওল বাজাজ এক পার্টিতে তাঁকে অবাঞ্ছিতভাবে স্পর্শ করা পাঞ্জাবকেশরী পুলিশ কমিশনার খালিস্তানিদের ঘুম ছোটানো বীর সিংহ কেপিএস গিলকে দোষী সাব্যস্ত করে সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন।

আজও, একইভাবে শাখায় শাখায় ডালে ডালে আরও অনেক নর কপি আছেন। তাঁরা তাঁদের আচরণ একেবারে অটুট সুন্দর রেখেও মহিলাদের সঙ্গে নানারূপ কদর্য আচরণ করে যান। বিশেষ করে সোশাল মিডিয়া যুগে অজস্র অশ্লীল আধা-অশ্লীল জোকস প্রেরণ খুবই সহজ সস্তা পুষ্টিকর অ্যাবিউজ। মেয়ে সহকর্মী ভুলক্রমে তাতে হা হা ইমোজি দিলেই তিনি কনসেন্ট বা সম্মতি দিয়েছেন এই সাব্যস্ত হবে।

গ্লাস সিলিং শব্দটি ভারতে আবিষ্কৃত হয়নি। আমেরিকার প্রেক্ষিতে বহুদিন ধরেই তিনি বর্তমান। লরা মালভে মেল গেজ-এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিলেন দৃশ্যগতভাবে সৌন্দর্য থাকাটা মেয়েদের বাধ্যতামূলক ধরে নেওয়া হয় মার্কিন সংস্কৃতিতে (ভিস্যুয়াল প্লেজার)। আর নানা সময়েই আরও অনেক সমাজতাত্বিক বলেছিলেন এখনও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে মেয়েলি আর পুরুষালি এই দুই অভিধার প্রাবল্য ও গুরুত্ব কোনওভাবেই হ্রাস পায়নি। অথচ দেখছি, একটি স্পেকট্রামের নানা বিন্দুতে আছেন পুরুষ ও নারীরা। কোন মেয়ে হেঁকোডেকো, কোন পুরুষ মৃদুভাষী।

 

শতাংশ মেপে

২০০১-এর সেন্সাস বা জনগণনা অনুসারে ভারতের মোট কর্ম-ক্ষম জনগণের সংখ্যা ৪০ কোটি। তা গোটা দেশের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ। এর ভেতরে ৩১.২ কোটি মূল কর্মী আর ৮.৮ কোটি হলেন প্রান্তিক কর্মী, অর্থাৎ যাঁদের তার আগের বছরে ১৮৩ দিনের ওপরে কাজ ছিল না। কর্মক্ষম চল্লিশ কোটি মানুষের ভেতরে ১২.৭ কোটি মাত্র নারী। অর্থাৎ ২৫.৬ শতাংশ নারী আছেন ভারতীয় কর্মক্ষেত্রে। মূলধারা আর প্রান্তিক কর্মীদের মধ্যে যদি তুলনা করি, দেখব, মূলধারায় মাত্র ২৩.৩ শতাংশ কর্মী হলেন মহিলা। অথচ প্রান্তিক ধারায় মহিলারা পুরুষদের তুলনায় বেশি।

অন্যদিকে কর্মী মহিলাদের ৮০ শতাংশই কিন্তু আসছেন গ্রাম থেকে। অর্থাৎ চাষবাসের কাজের সঙ্গে যুক্তদের একটা বিশাল অংশই যেমন প্রান্তিক ধারার, তাঁদের অর্ধেকের ওপরই মহিলা। শহরের কর্মীদের মধ্যে ঘরে ঘরে কাজ করার মহিলার সংখ্যাই বেশি।

এবার আসি, সরকারি-বেসরকারির হিসেবে। অবশ্যই এটা অর্গানাইজড সেক্টরের কথা। লেবার ব্যুরো, কেন্দ্রীয় সরকারের ২০০৫-এর একটি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৩০ লাখ মহিলা পাবলিক সেক্টরে কাজ করেন, আর ২১ লাখ মহিলা প্রাইভেট সেক্টরে। কিন্তু কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যানের যথাযথতা কতখানি বলা মুশকিল। একটা অর্থে ধরেই নিতে পারি যে অর্গানাইজড সেক্টরে যেটুকু যা মেয়েদের অংশগ্রহণ, সেন্সাসের মাধ্যমে বা অন্যান্য রিপোর্টিং-এর মাধ্যমে তা ধরা পড়বে। কাজেই এই তথ্যটুকুকে কাজে না লাগিয়ে আমাদের উপায় নেই। সাম্প্রতিক কিছু স্টাডিও বলছে, মেয়েদের অর্গানাইজড সেক্টরে বেশি না আসার কারণ প্রথাগতভাবে বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা। এবং কিছু ক্ষেত্রে চাকরি ছেড়ে দেবে এই ভয়ে তাদের প্রাইভেট সেক্টর ফার্মগুলি নিতে চাইছে না। অর্থাৎ একটা পঙ্কিল আবর্তের মতো কাজ করছে এই ব্যাপারটি। এর সঙ্গে সঙ্গেই ওই স্টাডি থেকে আরও দেখা যাচ্ছে যে কর্মক্ষম মহিলাদের (১৫ থেকে ৫৯ বয়সী) মাত্র ৬.৫ শতাংশ হাইস্কুল পাশ করেছেন। সুতরাং যে সব কাজে কলেজ-পাশের বিদ্যে দরকার বা কোনও বিশেষ কাজের প্রশিক্ষণ দরকার এমন ভাল মাইনের চাকরি জুটবে না সেই সব মেয়েদের, যাঁরা সামান্য লেখাপড়া করেছেন। ফলত মেয়েরা অধিকাংশই কাজ করেন খুব খারাপ মাইনেতে।

আর সেখানেই লিঙ্গবৈষম্য মারাত্মক। সামাজিক সুরক্ষা থেকে শুরু করে ছুটিছাটার সুযোগ (বিশেষ করে মেটার্নিটি লিভ) বা অন্য কোনওরকম সুযোগসুবিধা তো তাঁদের নেইই, এমনকি সমান মেধা বা দক্ষতাসম্পন্ন পুরুষদের থেকেও তাঁরা অনেক কম মাইনে পান। যেখানে নিরক্ষর এক পুরুষের দিনমজুরি ১৭৭ টাকা, এক নিরক্ষর মহিলার মজুরি ৮৫ টাকা মাত্র।

জানার চেষ্টা করি, এইসব মেয়েরা কোথায় কাজ করছেন তাহলে?

ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশনের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০৯-১০ এই সময়কালে, এক লক্ষ গৃহ থেকে সঙ্কলিত তথ্যের ভিত্তিতে, ভারতে নারীকর্মীর সংখ্যা, ১১.২ কোটি। (২০১১-র জনগণনা অনুযায়ী দেশে নারীর সংখ্যা ৫৮ কোটি)। লক্ষ করব, আগেই যে তথ্য পেশ করেছি, তার ভিত্তি ছিল ২০০১-এর জনগণনা। সেখানে বলা হয়েছে নারীকর্মীর সংখ্যা ১২.৭ কোটি। অর্থাৎ ২০০১-এর জনগণনার চেয়ে ২০১০-এর রিপোর্টে নারীকর্মীর সংখ্যা কম দেখা যাচ্ছে। যাই হোক, মূলত কোথায় কাজ করেন এঁরা?

  • চাষবাস, পশুপালন— ৬৮ শতাংশ
  • তামাকশিল্প, বস্ত্রশিল্প, দর্জির কাজ— ১০.৮ শতাংশ
  • গৃহনির্মাণ কাজ (মূলত ইট, বালি ইত্যাদি বহনের শ্রমিক হিসেবে)— ৫ শতাংশ
  • স্কুল/কলেজ, বিভিন্ন স্তরে শিক্ষাদানের সঙ্গে যুক্ত থাকা— ৩.৮ শতাংশ
  • মুদি-দোকান দেওয়া (চাল ডাল তেল খুচরো সবজি এবং পানসিগারেটের দোকান দেওয়া)— ২.১ শতাংশ
  • গৃহকর্ম (ঝাড়পোঁছ, বাসন মাজা, কাপড়কাচা প্রভৃতি)— ১.৬ শতাংশ
  • ব্যক্তিগত সেবা (ম্যাসাজ, বিউটি ট্রিটমেন্ট, বেবিসিটিং ইত্যাদি)— ১.৫ শতাংশ
  • স্বাস্থ্যসেবা— ১.১ শতাংশ
  • ব্যুরোক্রেসি (সরকারি চাকরি)— ১ শতাংশ।

লক্ষ্যণীয় যে, চাষবাস থেকে শুরু করে নির্মাণ ও শিল্প সর্বত্রই সামান্য হলেও মেয়েদের যোগদান গত দশ বছরে কমে এসেছে দেখা যাচ্ছে। এমনকি গৃহকর্মের ক্ষেত্রেও মেয়েদের যোগদান কমেছে সংখ্যাতত্ত্বের নিরিখে। ২ শতাংশ থেকে নেমে ১.৬ শতাংশ। একমাত্র ব্যুরোক্রেসিতেই ০.৭ শতাংশ থেকে উঠে এসেছে ১ শতাংশে!

সাম্প্রতিক বেশ কিছু ডেটা দেখাচ্ছে, কোভিডকালে যে বিপুল পরিমাণ মানুষ কাজ হারিয়েছেন তার ভেতরে একটা বিশাল অংশ স্বভাবতই মেয়েরা। অর্থাৎ পরিবারের বৃদ্ধদের ও শিশুদের দেখভালের জন্য কাজের লোক তুলে দিয়ে মেয়েদের আবার সেই সেই কর্তব্যগুলো করবার জন্য বাড়িতে থেকে যেতে হল কোভিড-পরবর্তী কাজের বাজারে। যেখানে স্বামীরই কাজ নেই অনেক সময়ে, স্ত্রীদের কাজ যে আরও দ্রুত উধাও হবে তা বলাই বাহুল্য। কাজের বাজার আবার চালু হলে, অনেক পুরুষ ফিরে আসতে পারলেন সেখানে, অনেকেই পারলেন না। মেয়েরা অদৃশ্য হয়ে গেলেন কাজের বাজার থেকে। অর্থাৎ গত পঞ্চাশ বছরে মেয়েদের কাজ করার যে স্পেসটা তৈরি হয়েছিল সেটা হঠাৎ সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গেল এক ধাক্কায় দু-বছরের অতিমারিতে।

আমি এই লেখায় অধিকাংশ তথ্য ব্যবহার করেছি ২০০১ ও ২০১১-র জনগণনার তথ্যপুঁজি থেকে। কেন? এ-কথার উত্তর দেওয়ার দায়ও থাকে। যে-কোনও হিসেব সেন্সাস-এর এখন ২০১১-র, অর্থাৎ বারো বছরের পুরনো। ২০২১-এর যে জনগণনার জন্য আমরা উন্মুখ হয়ে ছিলাম কোভিড অতিমারির জন্য পিছিয়ে যায় তা। তারপর থেকে সে-গণনার সম্পর্কে একটাই কথা বলা যায়, তোমার দেখা নাই গো তোমার দেখা নাই। ফলে, সেই গণনার দেখা না পেলে আমরা জানব না তথাকথিত চাকুরি করা নারীর সংখ্যা কবে কর্পূরের মতো উড়ে গেছে। ইতিমধ্যে আমাদের দেশের জনসংখ্যা অন্তত ১৬ কোটি বেড়েছে, দশ বছরে আরও অনেক পুরুষ-নারী হয়েছেন প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ কাজের বাজারে প্রবেশের উপযোগী। অর্থনীতিবিদদের একাংশের হিসেব এই সংখ্যানির্দেশ করছে। কিন্তু একটি জনগণনা সঠিক সংখ্যা তুলে ধরতে পারে। যে-কোনও সরকারি স্কিম তৈরি করতে যা অত্যন্ত জরুরি।

এত সবের পরে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, অর্গানাইজড সেক্টরের চাকুরে মেয়েরাও কি আদৌ ক্ষমতায়িত? নাকি দিবসান্তে নিজের টাকাটি স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির হাতে তুলে দিয়ে লক্ষ্মী বৌমা হয়ে থাকাটাই তার জীবনের সারাৎসার?

 

দ্বিমেরু জগৎ এবং তৃতীয় লিঙ্গ

আজ অব্দি ওয়ার্কপ্লেস বা কাজের জায়গা, অর্থাৎ যে-কোনও সংস্থা প্রচণ্ড ও প্রবলভাবে এই জেন্ডারগত দ্বিকেন্দ্রীভূত বা দুই মেরুর অবস্থানে বিশ্বাসী। এবং সচরাচর সব সংস্থাই পুরুষপ্রাধান্য বা পুরুষের তথাকথিত বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য বেশি করে তৈরি। অর্থাৎ “সফল কর্মী” এই ভাবনাটাই আসছে কিন্তু পুরুষের তথাকথিত কিছু বৈশিষ্ট্যকে আধার করে। ব্যুরোক্রেটদের ক্ষেত্রে এই ভাবনাটা আরও স্পষ্ট, আরও বিভাজিত।

ব্যুরোক্রেটদের মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গ, বা স্পেকট্রামের মাঝামাঝি অবস্থানকারী— অর্থাৎ যাঁরা তথাকথিত পুরুষালি এবং তথাকথিত মেয়েলি (পড়ুন সুন্দরী, বালুঘড়ি ফিগারসম্পন্না, অতি সুসজ্জিতা— হ্যাঁ, মার্কিনদের কাছে এখনও এগুলো খুবই প্রতিষ্ঠিত বিষয় বইকি!) নন, তাঁদের স্থান নিয়ে ট্রাম্প সাহেবের নীতি কী, তিনি তো প্রেসিডেন্ট পদে যোগ দেওয়ার প্রায় দু-তিন দিনের মাথাতেই জানিয়ে দিয়েছেন সুস্পষ্ট করে। তৃতীয় লিঙ্গকে সরাসরি অস্বীকার করায় এবং সরকারি পদ থেকে যথাসম্ভব বাদ রাখায় তাঁর মত, এবং ভবিষ্যৎ নীতি— এ কথা বলতে তাঁর বাধে না।

আমাদের দেশের কথা বলা দায়। এখনও নীতি প্রণয়নই হয়নি। আজও শিক্ষিত, বিদূষী অধ্যাপক তাঁর সহকর্মী আরেক অধ্যাপক, যিনি ঘোষিতভাবে লিঙ্গ পরিবর্তন করেছেন, এবং বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় দায়িত্বে আছেন, তাঁর বিষয়ে কথা উঠলে ব্যঙ্গ করেন, তাঁর উচ্চারণকে মিমিক্রি করেন। স্বচক্ষে দেখেছি। স্বীকার বা গ্রহণের অনেক দেরি।


[1] The Sexual Harassment of Women at Workplace (Prevention, Prohibition & Redressal) Act, 2013 (“Act”).

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4998 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...