ক্লডিয়া গোল্ডিনের শিক্ষা: শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত ভারতীয় মহিলাদের কাজ, পরিবার এবং পরিচয়

রত্না এম সুদর্শন, মালা খুল্লার

 


রত্না সুদর্শন এবং মালা খুল্লারের এই নিবন্ধটি ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি (ভল্যুম ৫৯, ইস্যু ১৭)-তে ২৭ এপ্রিল ২০২৪-এ প্রকাশিত Learning from Claudia Goldin: Work, Family, and Identity of Educated, Middle-Class Indian Women নিবন্ধটির সারাৎসার। লেখকদের সহৃদয় অনুমতিক্রমে লেখাটি আমরা বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করলাম। অনুবাদ করেছেন সোমরাজ ব্যানার্জি

 

২০২৩ সালের ক্লডিয়া গোল্ডিনকে প্রদত্ত নোবেল অর্থনীতি পুরস্কার মহিলাদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ, প্রবণতা এবং লিঙ্গসমতার প্রভাব নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে। গোল্ডিনের কাজটিতে বিশেষ জায়গা পেয়েছে মহিলাদের কর্মসংস্থানের পরিণতির উপর কর্মক্ষেত্রের চাহিদা এবং পারিবারিক দায়িত্বের প্রভাব। এই প্রবন্ধটিতে দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলের শহুরে, শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত মহিলাদের কর্মসংস্থান নির্বাচনের বিষয়টিকে খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে, বিশেষত যাঁরা পারিবারিক দায়িত্বের জন্য কর্মজীবন থেকে বিরতি নিয়েছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতাগুলি একটি স্থায়ী “ব্রেডউইনার-হোমমেকার” মডেলকে প্রতিফলিত করে, যা কর্মস্থলে দীর্ঘ সময় কাজের প্রত্যাশা দ্বারা প্রভাবিত।

 

মহিলাদের কাজ এবং শ্রমবাজারের প্রবণতা

গোল্ডিনের গবেষণা দেখায় কীভাবে আমেরিকায় শিক্ষার প্রসার, আংশিক সময়ের কাজের সুযোগ এবং গার্হস্থ্য প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলস্বরূপ মহিলারা জীবনযাপনের তাগিদে কাজ করার পরিবর্তে ক্রমশ চাকরিকে তাঁদের আত্মপরিচয়ের কেন্দ্রস্থল হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন। ভারতে, উচ্চশিক্ষায় লিঙ্গসমতা থাকলেও মহিলা শ্রমিকের সংখ্যা তলানিতেই থেকে গিয়েছে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত মহিলাদের মধ্যে। ২০১৮-১৯ সালে, কর্মক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েট মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল ২৪.৮ শতাংশ, যেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে এই হার প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ।

ভারতে মহিলা শ্রমিকের অংশগ্রহণের হার (FLFPR) দশকের পর দশক ধরে উদ্বেগের বিষয় হয়ে থেকে গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে অর্থনৈতিক উন্নতি সত্ত্বেও FLFPR-এর হারের কোনও উন্নতি হয়নি, বরং কিছু ক্ষেত্রে তা পড়তির দিকে। কাঠামোগত ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি, যেমন পিতৃতান্ত্রিক নিয়মকানুন, নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য পরিবহনের অভাব, শিশুর যত্নে প্রয়োজনীয় সহায়তার সীমাবদ্ধতা এই প্রবণতাকে ইন্ধন জোগায়। সেইসঙ্গে, মহিলাদের চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, যেমন অপেশাদারি মনোভাব, সুযোগসুবিধার অভাব এবং পুরুষের তুলনায় কম মজুরি।

পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের চাকরির সুযোগের অসমতা কাজের ধরন দ্বারা প্রভাবিত হয়। অনেক মহিলাই অনিয়মিত বা অ-নিয়ন্ত্রিত ক্ষেত্রে কাজ করেন, সেখানে চাকরির নিরাপত্তা খুব কম। এমনকি রীতিবদ্ধ চাকরিতেও, লিঙ্গভিত্তিক বেতনবৈষম্য এবং কর্মস্থলে অসাম্য থেকেই যায়। এই প্রতিবন্ধকতাগুলির সঙ্গে বিয়ে এবং শিশু প্রতিপালনের মতো সামাজিক প্রত্যাশা যোগ হলে, অনেক মহিলাই কর্মক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন।

 

পরিচয়, শিক্ষা এবং কর্মজীবন নির্বাচন

পরিচয় তৈরি হয় আরোপিত (উত্তরাধিকার সূত্রে) এবং অর্জিত (পরিশ্রমের মাধ্যমে) অবস্থান দ্বারা। শিক্ষা যদিও বা ক্ষমতাবৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে, তবু তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্মজীবনে স্থায়িত্বের পথ প্রশস্ত করে না। ভারতে, কর্মজীবন সংক্রান্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরিবর্তে সাধারণত সামাজিক সক্রিয়তা বা বিয়ের যোগ্যতা অর্জনের নিয়ামক হিসেবে উচ্চশিক্ষাকে দেখা হয়। বিয়ে প্রায় সর্বজনীন এবং তুলনামূলকভাবে কম বয়সে ঘটে, যা কর্মজীবনের গতিপথকে প্রভাবিত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে দেরিতে বিয়ে করা পেশাগত জীবন গঠনের সুযোগ দেয়, ভারতীয় মহিলাদের কর্মজীবনের সিদ্ধান্তগুলি প্রায়ই বৈবাহিক দায়িত্বের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধির পরেও, প্রথাগত লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা পেশা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে থাকে। অনেক পরিবার মেয়েদের শিক্ষাকে উৎসাহ দেয়, তবে সেইসঙ্গে তাঁদের পারিবারিক জীবনকে পেশাগত আকাঙ্ক্ষার চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার প্রত্যাশা থেকেই যায়। কাজকে আত্ম-চরিতার্থতার একটি মাধ্যম হিসেবে না দেখে একটি প্রয়োজন হিসেবে দেখা হয়, যা মহিলাদের চাকরি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভারতের অনেক মহিলাই বিবাহ বা সন্তানজন্মের পর কর্মজীবনে বিরতি নেন। সমাজিক চাপ সাধারণত তাঁদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করে, যা স্বামীর আয়, পরিবারের অনুমোদন এবং দ্বৈত রোজগারের প্রয়োজনীয়তার মতো উপাদানগুলির উপর নির্ভরশীল। পাশ্চাত্য সমাজে যেখানে পেশাদার পরিচয় সাধারণত আত্মমর্যাদার একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে দেখা হয়, ভারতীয় মহিলাদের পরিচয় প্রায়শই নির্ধারিত হয় পরিবারে তাঁদের ভূমিকা অনুসারে।

 

শহুরে শিক্ষিত মহিলাদের উপর করা একটি সমীক্ষা

এই গবেষণাটি দিল্লি-এনসিআর-এর ৩০-৫০ বছর বয়সি ২২ জন শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত মহিলাদের নিয়ে করা হয়েছে, যাঁরা পারিবারের দেখাশোনা করার জন্য তাঁদের কেরিয়ারে বিরতি নিয়েছেন। অংশগ্রহণকারীরা মূলত পোস্টগ্র্যাজুয়েট, এমবিএ, এমফিল, পিএইচডি অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিপ্রাপ্ত। তাঁদের স্বামীরাও সমজাতীয় শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন এবং বেশিরভাগই বেসরকারি চাকরিতে কর্মরত। অনেক মহিলাই বিবাহ বা সন্তানজন্মের পর তাঁদের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন কর্মরত থাকলেও পরে চাকরি ছাড়তে হয়েছে।

সাক্ষাৎকারগুলি থেকে বোঝা যায় যে, মহিলারা প্রায়ই কাজ এবং পারিবারিক প্রত্যাশার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যার সম্মুখীন হন। অনেকেই সন্তানধারণের পর পরিবারের পরোক্ষ চাপের কারণে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। যাঁরা কর্মজীবনে আবার প্রবেশ করতে চান, তাঁদের ক্ষেত্রে দক্ষতায় বিরতিজনিত ঘাটতি, কর্মস্থলে এই ধরনের কর্মবিরতির প্রতি বিরূপতা এবং আংশিক সময়ের কাজের সুযোগের অভাবের মতো বিষয়গুলি বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

যাঁরা আগে চাহিদাপূর্ণ কর্পোরেট চাকরি করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দীর্ঘ কাজের সময় এবং নমনীয়তার অভাব সেই কাজে ফিরে যাওয়াকে কঠিন করে তুলেছে। বেশ কয়েকজন অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন যে, তাঁদের শিক্ষাকে মূল্য দেওয়া সত্ত্বেও, যত্নসংক্রান্ত সামাজিক নীতি তাঁদের পূর্ণ সময়ের কাজকে যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

 

কাজ, পরিবার এবং কঠিন সিদ্ধান্তগুলি

শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দেওয়া সত্ত্বেও, এই মহিলারা কেরিয়ারের পরিবর্তে পরিবারকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে যেসব কারণ প্রভাব ফেলেছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— শিশুসম্পর্কিত সমস্যা, কর্মস্থলে চাপ, এবং নমনীয় কাজের অপশনের অভাব। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায়, ভারতীয় বাজারে নিয়মিত আংশিক সময়ের কাজের সুবিধার বড় অভাব, যা মহিলাদের পেশা এবং পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন করে তোলে। কিছু মহিলা আংশিক সময়ের জন্য বা স্বাধীনভাবে (Freelance) কাজ করলেও, অধিকাংশই পুরুষ-উপার্জনকারী এবং মহিলা-গৃহিণী মডেল অনুসরণ করেছিলেন।

কাজ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সাধারণত এককভাবে নেওয়া হয় না। অনেক মহিলাই তাঁদের স্বামীর কেরিয়ারের অগ্রগতিকে একটি মূল নির্ধারক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেহেতু পুরুষদের কেরিয়ারকে সাধারণত অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, মহিলাদের কাজকে সেকেন্ডারি বা ঐচ্ছিক হিসেবে দেখা হয়। মহিলারা আরও জানান যে, প্রাথমিক পরিচর্যাকারী (caregiver) হওয়ার প্রত্যাশা প্রায়শই পূর্ণ সময়ের চাকরির সম্ভাবনাকে নষ্ট করে।

যেসব মহিলারা নিজস্ব ব্যবসা বা নমনীয় স্বাধীন পেশায় যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই তা প্রয়োজনের তাগিদে করেছেন, পছন্দের কারণে নয়। শিশুপালন ব্যবস্থার অভাব এবং সীমিত পারিবারিক সহায়তাও তাঁদের বিকল্প পথকে অবরুদ্ধ করেছে। অনেক মহিলাই উল্লেখ করেছেন যে, প্রচলিত কর্পোরেট চাকরি তাঁদের পরিচর্যার দায়িত্বগুলোর সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারেনি, যা তাঁদের বিকল্প কাজের ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

 

কাজের জায়গার চাহিদা ও কর্মজীবনের পথরেখা

গোল্ডিনের “লোভী কাজ” (greedy work) ধারণাটি এই মহিলাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত কারণ এই চাকরিগুলোর জন্য দীর্ঘ, অনমনীয় সময় দাবি করে। ভারতের কর্মস্থলগুলোর প্রত্যাশা এখনও কঠোর, যেখানে নমনীয় সময়সূচির সুযোগ খুবই সীমিত। কাঠামোবদ্ধ আংশিক সময়ের কাজের অভাব মহিলাদের চাকরি বজায় রেখে পরিবারিক দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করে। এমনকি যখন নমনীয় বিকল্পগুলি উপলব্ধ ছিল, অনেক মহিলাই মনে করেছিলেন যে সেই বিকল্প কাজগুলি করে পারিবারিক পরিচর্যার জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করা যায় না।

অনেক সংস্থাতে সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি, ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ এবং শিশু-যত্নের সুবিধার মতো সহায়ক নীতির অভাব রয়েছে। কর্মবিরতি কাটিয়ে আবার কাজে ফেরত আসা মহিলারা প্রায়ই পক্ষপাতিত্বের সম্মুখীন হন, যেখানে নিয়োগকর্তারা তাঁদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন করেন। মহিলারা তাঁদের কর্মজগতকে অস্থায়ী বা দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে দেখছেন, এরকম একটি ধারণা তাঁদের পেশাগত উন্নতির প্রতি বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

এছাড়াও, পরিচর্যার দায়িত্ব সম্পর্কিত সামাজিক প্রত্যাশাগুলি মহিলাদের উপর অসম প্রভাব ফেলতে থাকে। কিছু পরিবার মহিলাদের পেশাগত আকাঙ্ক্ষাগুলোর প্রতি সমর্থন জানালেও, লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা সম্পর্কে প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে এখনও প্রচলিত। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী অনেক মহিলা উল্লেখ করেছেন যে, স্বামীর সমর্থন থাকা সত্ত্বেও ঘরের কাজ এবং শিশুযত্নের দায়িত্ব মূলত তাঁদের উপরেই বর্তায়।

 

ভারতে নারীদের কাজের ভবিষ্যৎ

অনেক প্রতিক্রিয়াদাতাই এই আশা রেখেছেন যে তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ তুলনায় অনেক বেশি হবে। তাঁদের বিশ্বাস যে সবেতন কাজ তাঁদের কন্যাদের ক্ষেত্রে আবশ্যক হবে, যা সামাজিক নীতির মধ্যে একটি সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। তবে, মহিলাদের কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ বজায় রাখতে কাঠামোগত পরিবর্তনগুলি— যেমন নমনীয় কাজের ব্যবস্থা, আংশিক সময়ের চাকরি সৃষ্টি এবং উন্নত পরিচর্যা সহায়তা— এই বিষয়গুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

দূরে বসে (remote) কাজ এবং ডিজিটাল কর্মসংস্থানের সুযোগগুলো বাড়তে থাকলে তা একটি সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কোভিড-১৯ মহামারি প্রমাণ করেছে যে নমনীয় কাজের ব্যবস্থা কতটা কার্যকরী, এবং অনেক মহিলাই দূরে বসে কাজের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। তবে, এই পরিবর্তনগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে পরিণত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন প্রয়োজন।

সরকারি নীতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুসেবায় বাড়তি বিনিয়োগ, বাধ্যতামূলক মাতৃত্বকালীন সুবিধা এবং কর্মক্ষেত্রের নমনীয়তা মহিলা কর্মীদের কাজে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করতে পারে। সেইসঙ্গে, পারিবারিক দায়িত্ববোধের প্রতি সমাজের মনোভাব পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন, যাতে পুরুষরা আরও বেশি ঘরোয়া দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন।

 

উপসংহার

নারী-শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ভারত একটি দীর্ঘস্থায়ী বিবর্তনের পর্যায়ে রয়েছে, ঠিক যে পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোল্ডিনের বিপ্লব-পূর্ব সময়ে ছিল। তবে, ভারতের ক্ষেত্রে বিবাহের নিয়ম এবং চাকরিগত কাঠামোর পার্থক্য বিষয়টিকে অনন্য করে তোলে। শিক্ষার সম্প্রসারণ, পরিবর্তিত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, এবং সম্ভাব্য কর্মস্থল সংস্কার ভবিষ্যতে শিক্ষিত মহিলাদের উচ্চতর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের দিকে পরিচালিত করতে পারে। ততদিন পর্যন্ত, কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতাগুলো স্থায়ী কর্মসংস্থানকে শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষিত ভারতীয় মহিলাদের মধ্যেই সীমিত করে রাখবে।

নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা শুধুমাত্র পরিসংখ্যানের মধ্যে আবদ্ধ থাকা উচিত নয়। কর্মস্থলের পক্ষপাত, শিশুসেবা পরিকাঠামো এবং সমাজের প্রত্যাশার মতো বিষয়গুলি সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যায় যেখানে নারীরা তাঁদের ব্যক্তিগত দায়িত্বের সঙ্গে আপস না করেও পেশাগতভাবে সফল হতে পারে। অর্থপূর্ণ পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন হল একটি সর্বাঙ্গীন দৃষ্টিভঙ্গি, যা নিয়োগকর্তা, নীতি নির্ধারক এবং পরিবার— এই সবকিছুকেই অন্তর্ভুক্ত করে।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4998 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...