সৌম্যদ্বীপ চক্রবর্তী

পাঁচটি কবিতা

 

নুড়িপাথরের শব্দ

রেললাইনের ধারে দাঁড় করানো বাবার পুরনো সাইকেল
হেলে থাকা হাতলে ঝুলছে কয়েকটা কমলালেবু
রোদ পোহাতে আসা কাকির গুনগুন করা গান
বাবার চোখ দূরে, কারখানার চিমনিতে, গাঢ় কালো ধোঁয়ায়

চোখের কোণ থেকে সে আমাকে চোখে চোখে রাখে
রেললাইনের ধারে পাথর কুড়োচ্ছি আমি
চ্যাপ্টা, পাতলা, ব্যাঙাচি করার, ভাললাগার পাথর

কোলে শুলেই লুঙ্গির ভেতর থেকে হাড় এসে ফুটত
উপুড় হয়ে ম্যাপ দেখার সময় দেখতে পেতাম পিঠের হাড়গুলো
মায়ের ধমকে দুজনে চেপে ধরলাম দুজনের জামাটা
দারুণ ওজনে ছিঁড়ে যায় প্লাস্টিক
খোলা বারান্দা জুড়ে নুড়িপাথরের শব্দ…

 

গৌতমের সেলুন

মাঠে শীতের রোদ পড়ছে
আমার ঘাসে শুয়ে থাকতে ভাল লাগে

একটু দূরে গৌতম চুল কাটছে
সারি সারি ইটের উপর কয়েকজন বসে

কেউ কেউ তিন চারটে বিড়ি খায়
বাটির জল ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে এলে
ব্রাশটা গালে ঠেকালে চোখ কুঁচকে যায়

ওর দোকানে এলে গৌতম বলতেই থাকে
চেয়ারে বসে খদ্দেররা তাড়া দেয়, রাগারাগি করে

আমি আমার পরে আসা লোকদের ছেড়ে দিই

 

শীতের বৃষ্টি

পাশের বাড়ির বাচ্চাটা আমার মতো
মাঝরাতে উঠে পড়ে আর কাঁদে
মা গান শোনায়, ঘুম পাড়ায়
আমি ছাদে হাঁটি, শুনি
আজ কতদিন হল ছাদে হাঁটা হয় না

শীতের বৃষ্টি ঝিরঝির করে পড়ছে
মায়ের গানের মাঝে মাঝে বাচ্চাটা কেঁদে উঠছে

বিল্টুর নতুন সাইকেল গরম জলের স্টোভ এঁটো বাসন

আমার হাঁটার জায়গা কমে যাচ্ছে

 

সেই দিন

ভোরের আলো ফুটবে, তখনই ফোন
নিশ্চয়ই সময় হয়ে গেছে
ঘরের অন্ধকার জানলার পর্দা পেরিয়ে ভোরে মিশছে

আকাশ যদিও আজ মেঘলা
রাতভর ঝিরঝিরে বৃষ্টি
একফালি বারান্দার মাটিতে তোমার আমার জলের ছাপ

আজ চলে যেতে হবে।

 

সন্ততি

আজ তো আবার হসপিটালে নিয়ে গেল
খুব বাড়াবাড়ি হয়েছিল সকালে
বউকে তো ওখানে থাকতে হচ্ছে
বাচ্চা ছেলেটাও সাথে গেছে

মুখ চোখ এমন হয়েছে
দেখলে চিনতে পারবে না

ডাক্তার বলে দিয়েছে তো, তাই না?
হ্যাঁ…

আর ওঁর বাবা? উনি কী বলছেন?

কিছু বলেন না
দেখলাম ঘরে এসে একবার মাথায় হাত বুলিয়ে গেলেন
গলি থেকে অ্যাম্বুলেন্সটা বেরোনো অবধি দাঁড়িয়েছিলেন বারান্দায়

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4998 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...