কে বিদেশি মন উদাসী

প্রবুদ্ধ বাগচী

 

কাজীসাহেবের মনমাতানো গান একদা খুব প্রিয় ছিল আমাদের। তখনও আমাদের সবজিবাজারে দিশি-বিদেশি নিয়ে এমন কৌলীন্যপ্রথা ছিল বলে মনে পড়ে না। ইদানীং নিত্যদিনের সবজি কিনতে গেলে দিশি পটল, দিশি শসা, দিশি কুমড়ো বা কপির এমন মুখে খই ফোটানো বিজ্ঞাপনী আনুকূল্য যে মনে হয় দেশ ব্যাপারটা সত্যিই কত ছোট হয়ে এল আজকাল। আদপে এই দিশি-বিদেশির তফাত হাইব্রিড বীজ ব্যবহারে— না হলে পাড়ার বাজারে নিশ্চয়ই বার্লিন থেকে বেগুন বা ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কপি আসা সম্ভব নয়, কার্যত তা আসেও না। বীজের ক্ষেত্রে যা হাইব্রিড বলে বিবেচিত হয় তার একটা বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা আছে, কিন্তু এই দেশের অধিবাসী হিসেবে আমরা সবাই অবিমিশ্র রক্তের সন্তান, এমন আষাঢ়ে দাবি কার্যত ভ্রান্তিবিলাস। সুকান্ত লিখেছিলেন ‘পিতৃপুরুষ রক্তে উপস্থিত’, কিন্তু সেই চোদ্দ বা চোদ্দ হাজার পিতৃ বা মাতৃপক্ষের কোনও ঠিকুজি পাওয়া সম্ভব নয়— আমাদের কোনও সুদূর পূর্বজ মধ্য বা পূর্ব এশিয়ার কোনও সুন্দরীর অনুরাগে আরক্ত হয়েছিলেন কি না, অথবা তার বিপরীতটা, এগুলো আজ আর নির্ধারণ করা অসম্ভব, আর তার প্রয়োজনই বা কী! কিন্তু বিদেশি আর দিশির দ্বৈরথ কিছুকাল হল সবজিবাজার ছাড়িয়ে ভিন্ন পরিসরে ছড়িয়ে পড়ছে, ঠিক যেভাবে এক গ্লাস জলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এক ফোঁটা রক্ত। কারণ, ‘শক হুন দল পাঠান মোগল’ একদেহে যে লীন হয়নি, সেই পুনরাবিষ্কারের ঠিকা নিয়ে একদল চিন্তক (পড়ুন ক্রীড়নক) ইতিহাস আর সংস্কৃতির বাজারে বিপণি খুলে বসেছেন। বাজার মানে সেখানে লাভ-ক্ষতির বিষয় থাকবেই। তাই চড়া মুনাফার জন্য ‘সনাতন ধর্ম’কে ‘বিদেশি’ রক্তে ‘কলুষিত’ করার এক মেগা সিরিয়ালের রিপিট টেলিকাস্ট হয়ে চলেছে প্রায়ই।

দেশ ব্যাপারটা আসলে ঠিক কী বুঝে গেলে ‘বিদেশ’ শব্দটাকে ঠিক তার বিপরীতে চিহ্নিত করতে সুবিধে হয়। আর শব্দের অর্থের যেহেতু সামাজিক-রাজনৈতিক রূপান্তর ঘটে— এই বিষয় নিয়ে শব্দার্থতত্ত্ব নামের একটি আস্ত শাখাও আছে— তাই আজ আমরা দেশ বলতে যে স্থানিক ও রাষ্ট্রীয় ভূখণ্ড বোঝাই, আদপে এই বিবেচনায় আসতে আমাদের কয়েক শতাব্দী কেটে গেছে। ‘দেশ’ শব্দটার সঙ্গে ‘দিশ’ বা ‘দিক’ শব্দের একটা যোগ আছে (‘দশদিশি’ কথাটা আমরা ব্যবহার করি, দশদিক বোঝাতে)— দিক দ্বারা নির্দিষ্ট একটি ভূখণ্ড, তাই হয়তো দেশ। স্বাধীনতা পাওয়ার আগে লাহোর বা ফরিদপুর ছিল আমাদের দেশের মধ্যেই, আজ আর নয়, ওটা অন্য দেশ। এমনকি এইভাবে ঢাকা আর করাচি যে একই দেশের অধীন ছিল, তাও একদিন আলাদা আলাদা দেশের আওতায় চলে এল। মাত্র তিরিশ বছর আগে মস্কো আর কিয়েভ একই দেশের অন্তর্গত ছিল, এখন তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। আমাদের এশিয়া মহাদেশেই কোরিয়ার যুদ্ধ উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়াকে দুটি আলাদা দেশে টুকরো করে দিয়েছে। চিন এখনও মনে করে তিব্বত তাদেরই দেশ, তিব্বত আবার তা মনে করে না— কে কার দেশ ঠিক করবে? এই ভাঙাচোড়ার ইতিহাস আজকের নয়।

ভারতবর্ষ নামের এই দেশটার অখণ্ড সত্তার চেতনাটাই এসেছে উপনিবেশের শাসনের আমলে। জাতীয়তা বা স্বদেশপ্রেমের বিষয়ে সোচ্চার হতে গেলে আগে তো দেশের আয়তন চাই— কোন দেশের শৃঙ্খল মোচন করব? কতটুকু পরিসরে করব? ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে তো শোনা যেত সূর্য অস্ত যায় না— তাহলে কি সুদূর বার্মা বা আর্জেন্টিনার জন্যও লেখা হবে আমাদের ‘দেশ’প্রেমের মন্ত্র? আমাদের দেশের এই জাতীয়তাবাদের জন্ম উনিশ শতকের দ্বিতীয় অর্ধে। সেই কারণেই একটা সময় রামমোহন ও বিদ্যাসাগর বিষয়ে ‘অভিযোগ’ করা হত, তাদের লেখায় বা ভাবনায় নাকি তেমন ‘দেশপ্রেম’ নেই, কারণ তারা সাম্রাজ্যবাদী শাসকের বিরুদ্ধতা তেমন করেননি। বিদ্যাসাগর কেন ‘সিপাহি বিদ্রোহ’কে পছন্দ করেননি, সেই ‘অপরাধে’ বারবার তাঁর মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছিল একসময়। যদিও এসব যুক্তি ও বিচারবোধ নিতান্তই ছেলেমানুষি এবং ইতিহাসবিরোধী। ১৮৪৮ সনের আগে সারা দুনিয়াতে কোথাও জাতীয়তাবাদ শব্দের কোনও ব্যঞ্জনাই ছিল না। তবে বিশ শতকের গোড়ায় তার বিকাশের পর্যায়ে যখন স্বদেশব্রতের উদযাপন, তখন কবি গোবিন্দচন্দ্র দাস লিখেছিলেন: ‘স্বদেশ স্বদেশ করিস কারে, এদেশ তোদের নয়।’ জন লেননের ভুবনবিখ্যাত ‘ইমাজিন’ গান বা পিট সিগারের ‘রেনবো রেস’, এর অনেক পরে লেখা। আর মজার ব্যাপার এটাই যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রাক্কালে পাঁচশো বাষট্টিটি দেশীয় রাজা তথাকথিত ‘ভারত’-এর মধ্যে ঢুকতে অস্বীকার করেছিলেন— তাঁদের অনেককে তুতিয়ে বাতিয়ে ঠান্ডা না করতে পারলে আমাদের দেশের ম্যাপটাই একদম আলাদা হয়ে যেত। দেশীয় রাজাদের ‘ভারতভুক্তির’ প্রতিশ্রুতির বিনিময়েই নেহেরুজি একদা ‘রাজন্যভাতা’ চালু করেছিলেন, যা পরে তার কন্যা বাতিল করে প্রাক্তন রাজা-রানিদের বিরাগভাজন হন! দেশপ্রেমের জন্য উৎকোচ নেওয়ার এই উদাহরণ খুব বেশিদিনের নয়।

আর নিজের দেশকে ‘সেরা’ তকমা দেওয়ার কাব্যিক ও সাঙ্গীতিক প্রয়াসের শুরুও সেই উনিশ শতকীয় জাতীয়তাবাদের গর্ভেই। নিজের জন্মভূমিকে ভালোবাসার অর্থ তাঁকে ‘সকল দেশের সেরা’ বলে উঁচু করে তুলে ধরতে হবে— এটার ‘পলিটিক্যাল কারেক্টনেস’ থাকলেও ব্যাপারটা খুব ঝুঁকির। ‘দুঃস্বপ্নের নগরী’ নাটকে উৎপল দত্ত চিত্রিত সেই সম্পাদকের কথা মনে আছে তো— চিনেরা উত্তর-পুব সীমান্তে হই হই রই রই করে ঢুকে পড়ে যিনি মঞ্চে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন! কার্যত, স্বদেশি যুগে বা তার পরে আমাদের সমস্ত স্বদেশি সঙ্গীত এই ‘একদেশদর্শিতায়’ প্রবলভাবে সংক্রামিত— একমাত্র ব্যতিক্রম রবীন্দ্রনাথ। তিনি ‘দেশের মাটিতে মাথা’ ঠেকাতে চাইলেও বলতে পেরেছিলেন সেখানে আসলে ‘বিশ্বমায়ের’ আঁচল পাতা আছে— বিশ্বের মনীষা যেখানে ভারতের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলে মিশে গেছে সেইটাই তো বিশ্বভারতী— ‘বিশ্ববাংলা’র এক বকচ্ছপ গোলকের সঙ্গে তাকে একাকার করে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আরও বিস্ময় লাগে যখন খেয়াল করে দেখি উনিশ শতকের শেষ বছরের শেষ দিনে যখন শান্তিনিকেতন আশ্রমের ভাবনা খুব অস্পষ্ট তখন তাঁর ‘নৈবেদ্য’-র কবিতায় তিনি আভাস দিয়ে যান, এই ‘দেশপ্রেম’ একদিন ‘জাতিপ্রেম’-এর আঁতুড়ঘর তৈরি করে দুনিয়ায় ডেকে আনবে ধ্বংসের আগুন— ‘জাতিপ্রেম নাম ধরি, প্রচণ্ড অন্যায়/ধর্মেরে ভাসাতে চাহে বলের বন্যায়’। বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হতে তখনও দেড় দশক বাকি। আর তার সোয়াশো বছর পরে আজকে আমাদের বাসভূমিতে দেশ-বিদেশ-বহিরাগত নিয়ে কী চূড়ান্ত নরক গুলজার!

তাহলে বিদেশ ব্যাপারটা ঠিক কী? এটা ঠিক যে, একাদশ শতক থেকেই দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের আক্রমণকারী লুঠেরা ও আগ্রাসী বিজেতারা এদেশে এসেছেন, লুঠপাট করেছেন এদেশের সম্পদ, পরে কেউ কেউ পাকা আস্তানা গেড়েছেন এখানেই, শতকের পর শতক রাজত্ব করে গেছেন। রক্তের বিনিময় ও মিশ্রণ ঘটেছে প্রজন্মের পর প্রজন্মে। এমনকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্তত মুঘল সম্রাটরাও এই দেশকে নিজেদের দেশই করে নিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে যে বিপুল আমলা, কেরানি, যোদ্ধারা এসেছিলেন, তাঁরাও আর অনেকেই নিজেদের পুরনো দেশ মধ্য এশিয়ায় ফিরতে চাননি। শাহজাদা দারাশুকো, যাকে সম্প্রতি সঙ্ঘ পরিবার ‘আদর্শ দেশপ্রেমিক’ বলে চিহ্নিত করেছেন, তাঁর স্ত্রী যাচনা করেছিলেন মৃত্যুর পরে ভারতেই যেন তাঁর দাফন হয়— সসম্মানে লাহোরে শায়িত আছেন তিনি। এই চাওয়াটাও কিন্তু নিজের বাসভূমির প্রতি এক ধরনের ভালোবাসা। একই আক্ষেপ ও বেদনায় বিধুর হয়ে আছে বাংলা ও পাঞ্জাবের একটা গোটা প্রজন্ম। দেশভাগের উদ্যত ছুরির সামনে রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল তাঁদের নিজেদের বাসভূমি আঁকড়ে বেঁচে থাকার সামূহিক ইচ্ছে আর স্বপ্ন। নিতান্তই ক্ষমতার হাতের আঁচড় কেড়ে নিয়েছে তাঁদের সেই অভিলাষ ও সংকল্প। কিন্তু ‘বিদেশ’-এর এই নির্মিত আখ্যানের জন্মকাল ঠিক কখন?

একটু খেয়াল করে দেখি রবীন্দ্রনাথের ‘বীরপুরুষ’ কবিতাটা— ‘মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে/মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে’। ছোট্ট খোকা তার মাকে পালকিতে চড়িয়ে কতদূর ‘বিদেশ’ ঘোরাতে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে হয়? নিশ্চয়ই কলকাতা থেকে কাবুল-কান্দাহার নয়! তার মানে শিশুমনের চেতনায় এপাড়া থেকে ওপাড়া বা বড়জোর একটা মাঠ বা দীঘি পেরোলেই ‘বিদেশ’— রবীন্দ্রনাথ কি তবে নিজের ভাবনাকেই এই শিশুর মধ্যে বুনে দিলেন আশ্চর্যভাবে, নাকি শিশুর চেতনা যে পারিবারিক আবহে পুষ্ট হয় সেখানেও ধারণাটা একই? তাহলে খুব চেনা ‘পুরাতন ভৃত্য’ কবিতাটা একটু খুলে পড়া যাক। ভৃত্যের মালিক যখন কেষ্টাকে নিয়ে শ্রীবৃন্দাবন যাওয়ার তোড়জোড় করছেন, তখন ‘গৃহিনী কহিল কাঁদি/পরদেশে গিয়ে কেষ্টারে লয়ে কষ্ট অনেক পাবে’— তার মানে এই কবিতার সময়কালে ‘বৃন্দাবন’ পরদেশ? যে গ্রন্থে এই ‘পুরাতন ভৃত্য’ কবিতা সংকলিত, সেই ‘কথা ও কাহিনি’র প্রথম প্রকাশ, আষাঢ় ১৩০৬ (১৮৯৯)। কবিতা যদি সমকালের বাস্তবতা নিজের শরীরে বিম্বিত করে, তাহলে উনিশ শতকের শেষের দিকেও তো প্রতিবেশী রাজ্যের কোনও জনপদ আসলে বিদেশ! আসাম, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, আমাদের বাংলাদেশের একেবারেই গা-লাগোয়া রাজ্য, যাদের মধ্যে শ্রম ও পর্যটনের যাতায়াত বহুকালের, কার্যত সেই এলাকাগুলোকেই আমরা ‘বিদেশ’ ভাবি। অনেকে বলেন ‘বিদেশ বিভূঁই’ অর্থাৎ নিজের ভূমি বা ভুঁই থেকে বাইরে— এই ভূমি মানে কিন্তু ‘ও আমার দেশের মাটি’ নয়, নিজেদের ছোট্ট একটা দেশের চেতনা।

আশ্চর্য এই যে, বহু বছর ধরে আমাদের রাজ্যে বা রাজধানীতে ভিনপ্রদেশের এমন সব মানুষের বাস, যাদের কাছে ‘দেশ’ ব্যাপারটা আলাদা। আর আলাদা বলেই এরা ছুটিছাটায় ‘দেশে যান’ বা ‘মুলুক যান’— বাড়ির গৃহসহায়িকা ‘দেশের বাড়ি’ গেলে বাড়ির কর্ত্রীর মুখভার হয়ে থাকে, কারণ ‘ওরা দেশে গেলে আর সহজে ফিরতে চায় না’। অমলেন্দু চক্রবর্তীর ‘রাধিকাসুন্দরী’ আখ্যানের ‘রাধিকা’ এমনই এক বালিকা, যে শিশুবেলা থেকে তাঁর ‘দেশের বাড়ি’ গুড়াপ ছেড়ে এসে থাকে কলকাতার লেকটাউনে বাবুদের বাড়ি— বিমুগ্ধ মোহে সে ভাবতে থাকে এইটেই ‘বিদেশ’! কারণ তাঁর গ্রামের বাড়িতে, যেখানে বিজলিবাতিই নেই, সেখানে শহরের বাবুবাড়িতে খাবার ঠান্ডা রাখার মেশিন, কাপড় কাচবার মেশিন, গ্যাসের চুল্লি— এসব তো ‘বিদেশে’ থাকে। রাধিকা নিজের গাঁয়ে ফিরে বারবার ওই লেকটাউনের বিদেশকে গৌরবান্বিত করতে চায়, দু-এক টুকরো ‘বিদেশ’ সাজিয়েও নিতে চায় নিজের ‘দেশগাঁয়ে’। প্রাক-স্বাধীনতার যুগে পুববাংলা থেকে প্রচুর মানুষ চাকরি করতে আসতেন কলকাতায়, সারা সপ্তাহ মেসবাড়িতে কায়ক্লেশে থাকতেন, আর সপ্তাহান্তে ফিরে যেতেন ‘দেশে’, পুজোর লম্বা ছুটিতে যাত্রা নাটক মঞ্চস্থ করতেন ‘দেশের বাড়ি’। আজও দূর মফস্বলের অনেকেই শহরে বা শহরতলিতে মেসে বা পেয়িং গেস্ট ব্যবস্থায় থাকেন, এবং ফুরসৎ পেলেই চলে যান ‘দেশে’— কত ক্ষুদ্র, কত খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে আছে আমাদের দেশের চেতনা। এমনই এক ভিনপ্রদেশের ‘গতর খাটা’ তরুণ, যিনি ক-বছরে একবার ‘দেশের নদীর কিনারে’ যান, তাঁকে কবীর সুমন ‘বাঁশুরিয়া’ গানে জিজ্ঞাসা করেন: তোমাদের দেশে বুঝি সব মানুষই বাঁশি শেখে? এই মানুষটির দেশ আর আমাদের দেশ একাকার না বিভাজিত?

আর এইসব সমূহ বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়ে, যখন দেখি দেশ আর বিদেশ নিয়ে ক্রমশ জমাট বাঁধে বিদ্বেষ আর বিষের ধোঁয়া, কে দেশি আর কে বিদেশি তাই নিয়ে জড়ো হতে থাকে চণ্ডীমণ্ডপের ইতর কুচুটেপনা— তখন মনে হয়, কোথায় আমাদের অবিমিশ্র দেশ, কোথায়ই বা দেশান্তর, কোনটাই বা আমাদের জন্মভূমি, কোথায়ই বা চিতা জ্বলবে আমাদের? রবীন্দ্রনাথের সাধের বিশ্বভারতীতে সর্বোচ্চ সম্মানের নাম ‘দেশিকোত্তম’— এই অভিধা সারা বিশ্বের মনীষার প্রতি তাদের শ্রদ্ধার স্মারক। তবুও দেশ কথাটা আছে ওই শিরোনামে, আছে এক বৃহৎ অর্থেই। দেশ নিয়ে এই বড় আকাশের ব্যঞ্জনাটুকুই যেন শুষে নেওয়া হচ্ছে ইদানিং, বিপরীতে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এক প্রদীপ্ত বাচালতা।

সব আগুন আলো দেয় না, তাকে বাড়তে দিতে নেই।

 

ঋণ: অধ্যাপক রণজিত চক্রবর্তী (ইতিহাস বিভাগ, জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়), শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘বিয়েবাড়ির বিভীষিকা ও অন্যান্য’— অশোক রুদ্র

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5088 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...