
সৈকত ভট্টাচার্য
—বলছি যে এই রবি ঠাকুরকে কাটিয়ে দিয়ে ‘অনুকূল’-এর মতো একটা হোলটাইমার রাখলে হয় না?
শুভর মন্তব্য শুনে সোফা থেকে ঘাড় বেঁকিয়ে তাকাল জয়দা। অবিশ্যি একে তাকানো না বলে কটাক্ষপাত কিংবা দৃষ্টি-নিক্ষেপ জাতীয় কিছু একটা বললে মানায় বেশি। সোফার একদিকের হাতলে একটা বালিশ রেখে, তাতে ঠেস দিয়ে পা দু-খানা লম্বা করে দিয়ে কী একটা বই পড়ছিল জয়দা। রবি ঠাকুর রান্নাঘরে। আমাদের জন্য রাতের খাবার বানাচ্ছে। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে সামনের দৃশ্যাবলি ক্যামেরাবন্দি করার একটা অক্ষম চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। শুভ বইও পড়ে না, ছবি-টবিও তোলার প্রতি কোনও আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। সে একটা সিঙ্গল সোফাতে পা তুলে বসে মোবাইলে কিছু একটা দেখছিল। প্রথমে হেডফোন না নিয়ে স্পিকারে দিয়েই শুনতে শুরু করেছিল। কিন্তু তার চিনে মোবাইলের প্রবল শব্দব্রহ্ম যে জয়দার নিবিষ্ট পাঠমগ্নতায় প্রবল বিঘ্ন ঘটাচ্ছে, সেটা জয়দা দুবার ‘হুঁহ’ বলে হুঙ্কার ছেড়ে বোঝানোর পর, ছেলে এখন কানে হেডফোন গুঁজেছে। সেই হেডফোন পরিহিত আবস্থাতেই গলার স্বর দুই অক্টেভ চড়িয়ে ‘অনুকূল’-এর মতো একজন হোলটাইমার রাখার কথা পাড়ল। আর জয়দা সেই কথার বক্তব্যের জন্য নাকি শুভর অমন বাজখাঁই চিল্লানোর জন্য জানি না, তার দিকে একটা অমন অবর্ণনীয় দৃষ্টি-নিক্ষেপ করল।
কোভিড মহামারির সময় জয়দার কাছে যাঁরা তিব্বতের গল্প শোনেননি, তাঁদের জন্য আমাদের পরিচয়টা এইখানে দিয়ে রাখি। জয়দা, শুভ এবং আমি— এই তিনমূর্তি চেন্নাইতে চাকরিসূত্রে থেকেছি বেশ কয়েকবছর। একই ফ্ল্যাটে ভাগাভাগি করে থাকতাম আমরা। জয়দা আমাদের মধ্যে খানিকটা বড়— বয়স, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান— সব দিক থেকেই। সেই ফ্ল্যাটে আমাদের রান্নার কাজ করত এক ওড়িয়া পাচকঠাকুর— নাম রবীন্দ্রনাথ দাস— তাকে আমরা নিজেদের মধ্যে ‘রবি ঠাকুর’ নামেই ডাকি। মঞ্জুশ্রীর সঙ্গে পরিচয় সেই করোনাকালেই। শুভর গার্লফ্রেন্ড— যদিও ওকে জিজ্ঞেস করলেই লজ্জায় প্রায় বেগুনী হয়ে বলবে, আরে ধুর, ও তো বন্ধুউউউ।
আমরা চেন্নাই ছেড়েছি বছর দুয়েক হল। আমাদের এই ‘এক্সোডাস’ অবিশ্যি একসঙ্গে হয়নি। পর্যায়ক্রমে প্রথমে জয়দা, তারপর আমি, এবং সবশেষে শুভ। মঞ্জুশ্রী এখনও ওখানেই আছে— চাকরির পাশাপাশি দুঃস্থ বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য একটা এনজিও-র সঙ্গে যুক্ত। কোভিডের লকডাউন উঠে যাওয়ার কিছুদিন পরেই জয়দা বাড়ি যায়। এবং সেখানে কাকিমা, মানে, জয়দার মা তাকে ধরেবেঁধে প্রায় বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়েই দিচ্ছিলেন। কোনওক্রমে প্রাণ হাতে করে পালিয়ে আসে সে। তারপর দেখলাম তিব্বত-টিব্বত তাকে তুলে রেখে এআই নিয়ে চার-পাঁচটা বই কিনে জোরদার পড়াশোনা শুরু করল। সঙ্গে নতুন চাকরির ইন্টারভিউও চলল জোরকদমে। অবশেষে একখানা নামজাদা টেকনোলজি কোম্পানিতে বেশ শাঁসালো চাকরি জুটিয়ে ফেলল। কিন্তু লোকেশন পেল ব্যাঙ্গালোর।
যেদিন অফার এল, সেদিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরে ভারি দুঃখ-কাতর মুখ নিয়ে চায়ের টেবিলে বসে জয়দা বলল, শোন একটা খারাপ খবর আছে।
আমরা ভাবলাম কী না কী হয়েছে। ভারি ব্যস্ত হয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে? বাড়িতে কিছু…
শুভ আর এক কাঠি এগিয়ে জিজ্ঞেস করল, আবার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন নাকি কাকিমা?
জয়দা মশা তাড়ানোর ভঙ্গিতে হাত নাড়িয়ে বলল, ধুস, সেসব নয়। তার চেয়েও খারাপ খবর। আমি একটা চাকরি পেয়েছি। … তারপর একটা নাটকীয় পজ নিয়ে বলল, আর সেটা ব্যাঙ্গালোরে।
এমন একটা অযাচিত রকমের খবরে হাসব না কাঁদব না বুঝতে পেরে প্রায় তিরিশ সেকেন্ড ভ্যাবলা হয়ে রইলাম।
অতঃপর আমাদের এক্সোডাসের শুরু। জয়দা মাসদুয়েকের নোটিস পিরিয়ড পালন করে ঝোলা তুলে পাশের রাজ্যে চলে গেল। তাকে অনুসরণ করে আমি আর শুভও কয়েক মাস কুস্তি করে ইন্টারভিউ-টিউ দিয়ে চাকরি পাল্টে ব্যাঙ্গালোর যাত্রা করলাম। বেচারা মঞ্জুশ্রী তার সেই এনজিও ছেড়ে আসবে কি না সেই নিয়ে মানসিক ডামাডোলে আছে এখনও। তবে আমাদের রন্ধনাচার্য শ্রীযুক্ত রবি ঠাকুরকে কিন্তু আমরা অনেক ভজিয়ে-ভাজিয়ে, ভালো কেরিয়ারের স্বপ্ন দেখিয়ে ব্যাঙ্গালোরে ট্রান্সফার করিয়েছি। আমাদের সোসাইটিতে আরও কয়েকটা ঘরে কাজও পেয়ে গেছে। সেও তোফা আছে এখানে।
শুভ অনুকূল-এর কথা বলায় আমি প্রথমে বুঝতে পারলাম না, কার কথা বলছে সে। বারান্দা থেকে জিজ্ঞেস করলাম, সেটা আবার কে রে?
ও বেশ একটা মুরুব্বিয়ানার সঙ্গে বলল, কিছুই তো জানিস না। এই শর্টফিল্মটা দেখিস। ওর মোবাইলে দেখে বুঝলাম সত্যজিৎ রায়ের ‘অনুকূল’ গল্পটা নিয়ে একটা শর্টফিল্ম হয়েছিল কিছুদিন আগে, এতদিনে ও সেটার খোঁজ পেয়েছে। নিশ্চয়ই মঞ্জুশ্রী বলেছে। আমি বললাম, ওহ, তা অমন পুরনো একটা শর্টফিল্ম হঠাৎ করে তুই দেখতে বসবি, সে আমি কী করে জানব?
জয়দা ব্যাপার বুঝে এবার পাশ থেকে ফুট কাটল, রাখাই যায়, তবে শেষে তোর কপালেই ধর আঙুল দিয়ে শক দিয়ে দিল। তখন আবার পুলিশ কেস-টেস— সে মহা ঝক্কির ব্যাপার।
শুভ জয়দার এই কথাটায় পাত্তা না দিয়ে তাকেই জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, এআই নিয়ে তো হেব্বি কাজকর্ম চলছে চারদিকে, তা এমন একখানা রোবট বাজারে আসছে না কেন?
জয়দা একটা হাই তুলে হাতের বইটা বন্ধ করে রেখে উঠে বসে বলল, সে ভারি জটিল ব্যাপার। এরকম হিউম্যানয়েড বানানো কি চাট্টিখানি কথা?
—কেন? শুভ আবার প্রশ্ন করে।
জয়দা এবার একটা কুশন কোলে নিয়ে সামনে ঝুঁকে পড়ে বলল, তাহলে তো এআই সম্পর্কে জানতে হয়। কী বুঝিস বল আগে।
শুভর জিভের ডগায় উত্তর তৈরিই ছিল, কেন? এই যে চ্যাট জিপিটি!
—সে তো এআই-এর একটা অ্যাপ্লিকেশন। এআই বিষয়টা আরও গভীর।
আমি বারান্দা থেকে ঘরে এসে বললাম, মানে ধর একটা যন্ত্র, মানে একটা কম্পিউটারকে যদি শেখানো যায় যে একটা কাজ কীভাবে করতে হবে, সেটাই হবে এআই, তাই না?
জয়দা বলল, কারেক্ট। কিন্তু অন্যান্য সফটওয়্যারের সঙ্গে এআই-এর তফাত কী? তুই যদি কম্পিউটার থেকে একটা ডকুমেন্ট প্রিন্ট করতে দিস, তবে সে ঝপাস করে প্রিন্ট করে দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সেটা কেন এআই নয়? এখানেও তো তুই একটা কাজ দিচ্ছিস, তোর মেশিন সেটা সুন্দরভাবে সম্পাদন করছে!
আমরা কোনও উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না দেখে জয়দা নিজেই বলল, তফাৎ শুধু ওই এআই-এর ‘আই’তে— অর্থাৎ কি না ইন্টেলিজেন্সে। এই প্রিন্টিং-এর কাজে কম্পিউটার শুধুমাত্র তোর আদেশ পালন করছে, কিন্তু নিজের বুদ্ধি খাটাচ্ছে না।
—কম্পিউটারের বুদ্ধি! শুভ খানিক অবাক হয়ে বলল।
—হুঁ হুঁ বাওয়া। সেই নিয়ে সারা পৃথিবী লড়ে যাচ্ছে। কে কত বুদ্ধিমান কম্পিউটার বানাতে পারে। পরের বিশ্বযুদ্ধটা এই নিয়েই হবে মনে হচ্ছে।
—তা একটু খোলসা করে জানা যায় ব্যাপারটা কী? আমি প্রস্তাব দিলাম। শুভও বিস্তর ‘হ্যাঁ হ্যাঁ’ করে সে প্রস্তাব অনুমোদন করল।
জয়দা এবার গুছিয়ে বসে বলল, তবে তো যেতে হবে সেই সৃষ্টির আদিতে। ছোটবেলায় উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরির লেখায় সৃষ্টি আর প্রলয়ের কথা পড়েছিলিস তো?
আমি মাথা নাড়লাম। শুভ ওসব পড়ে-টড়েনি। কিন্তু আমি মাথা নাড়লাম দেখে ও-ও মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলে দিল।
জয়দা বলতে শুরু করল, উপেন্দ্রকিশোর লিখেছিলেন যে, মহাভারতে নাকি আছে সৃষ্টির পূর্বে কেবলই অন্ধকার ছিল। তারপর একটা ডিম হল— এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল বস্তুর বীজ নাকি নিহিত ছিলও এই ডিমের ভিতর। সেই ডিম ফেটে সবার প্রথমে আবির্ভূত হলেন ব্রহ্মা। তার চারটে মাথা, বেদের খাতা। এই ব্রহ্মা এবং এই অণ্ড থেকেই জন্ম বাকি ব্রহ্মাণ্ডের।
—একটা ডিম ফুটে এত কিছু? ভারি বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করল শুভ।
—হ্যাঁ, অন্তত কবির কল্পনায় সেরকমটাই হয়েছে। আদতে যেটা হয়েছিল তাকে ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রেড হোয়েল নাম দিয়েছেন ‘বিগ ব্যাং’। এই নামটা নিশ্চয়ই তোরা শুনেছিস?
আমি বললাম, হ্যাঁ সে তো ছেলেবেলায় ইশকুলে পড়েছিলাম। বিশদে তো জানি না।
জয়দা বলল, বেশ। আমেরিকান পদার্থবিদ জর্জ গ্যামো এই তত্ত্বের প্রবক্তা হলেও ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ফ্রেড হয়েল ঊনিশশো ঊনপঞ্চাশ সালে বিবিসিকে দেওয়া একটা সাক্ষাৎকারে এই ‘বিগ ব্যাং’ শব্দবন্ধটা প্রথম ব্যবহার করেন। গ্যামোর মতে, এ জগতের সকল পদার্থের জন্ম হয়েছিল সৃষ্টির আদিতে— একটা প্রবল বিস্ফোরণের ফলে। তার আগে ছিল একটা বিন্দু— তাকে ‘সিঙ্গুলারিটি’ বলে নামকরণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেই বিন্দু তুবড়ির মতো উগড়ে দিল এই জগতের সকল সারকে। মানে, যত পদার্থ, অপদার্থ— মানে ডার্ক ম্যাটার, শক্তি, ডার্ক এনার্জি ছিটকে বের হয়ে এসেছিল সেই সৃষ্টির ক্ষণে। সমস্ত কিছু একীভূত হয়ে ছিল অ্যাদ্দিন।
—ওই একটা ছোট্ট জায়গায় এত কিছু কীভাবে আটকে ছিল? প্রশ্ন করলাম আমি।
—আর এইসব জানাই বা গেল কী করে? শুভও জিজ্ঞেস করে।
—ভারি কঠিন প্রশ্ন করিস তোরা। জয়দা উত্তর দিল। কীভাবে আটকেছিল, আদৌ আটকে ছিল নাকি এ সবই বৈজ্ঞানিকদের উন্নত মনের আকাশকুসুম কল্পনা— তাও কেউ বুক ঠুকে নিশ্চিত হয়ে বলতে পারে না। এই বিগ ব্যাং থিওরি— যার আর একটা বৈজ্ঞানিক পরিভাষা হল স্টান্ডার্ড মডেল— তার পরিপন্থী আর একটা তত্ত্ব আছে। তাকে বলে স্টেডি স্টেট থিওরি। সেখানে বলা হচ্ছে যে এইসব বিগ ব্যাং-ট্যাং সব বাজে কথা। আদতে মহাবিশ্ব এমনটাই ছিল বরাবর। ওই যে কিছুক্ষণ আগে ফ্রেড হোয়েলের কথা বললাম, তিনিও ছিলেন এই দ্বিতীয় তত্ত্বের প্রবক্তাদের একজন। ফ্রেডের মাথায় এই তত্ত্ব আসার পিছনে একটা মজার গল্প আছে। ঊনিশোশো সাতচল্লিশ সালে, তিন বন্ধু— ফ্রেড, হারম্যান বন্ডি, এবং টমি গোল্ড একসঙ্গে একটা ভূতের সিনেমা দেখতে গেছিলেন। তিনজনেই বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘রাডার’ নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছিলেন। সেই থেকেই বন্ধুত্ব। তিনজনেই অসম্ভব বুদ্ধিমান, অঙ্ক আর পদার্থবিদ্যায় পণ্ডিত। তো যাই হোক, সেই সিনেমাটা নাকি এতটাই বোরিং ছিল যে তার থেকে এই তিনজনের মাথায় আইডিয়া আসে যে আমাদের বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডটাও তো এরকম হতেই পারে। অমন চোখধাঁধানো বিগ-ব্যাং নাই হয়ে থাকতে পারে— বরং হয়তো আদি অনন্তকাল থেকে সে ঠিক এমনিই আছে— একটা অটল অপরিবর্তিত অবস্থা বা ‘স্টেডি স্টেট’-এ।
—ভূতের সিনেমা দেখে আমরা ভয়ে মরি, আর এদের মাথায় ব্রহ্মাণ্ড নিয়ে নতুন ধারণা আসে। শুভ স্বগতোক্তির ঢঙে বলল কথাটা।
—নইলে কি আর এমন নামকরা বিজ্ঞানী হতে পারে রে! সে যাই হোক, আর একটু গবেষণা করে ফ্রেড হয়েল বললেন যে ওসব বিগ-ব্যাং-ফ্যাং ছেলে ভোলানো গল্প— বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বরং এই নতুন তত্ত্বটা শোনো— এই মহাবিশ্ব বরাবরই এমন প্রায়-স্থিতিশীল। খুব ধীরে ধীরে পরিবর্ধিত হচ্ছে। কিন্তু কোনও হঠাৎ বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট নয়। এই ধীর পরিবর্ধনের ফলে যে সমস্ত শূন্যস্থান তৈরি হচ্ছে, তা ক্রমাগত ভরাট হয়ে চলেছে নতুন পদার্থ সৃষ্টির মাধ্যমে। আর সেই জন্যই আজি যত তারা তব আকাশে। এর সঙ্গে অঙ্ক কষে দেখালেন যে মহাবিশ্ব যে হারে ক্রমবর্ধমান তা ব্যাক-ক্যালকুলেশন করে যদি সেই বিন্দুতে পৌঁছতে হয়, তবে তার বয়স দাঁড়ায় মাত্র কয়েক বিলিয়ন বছর। এদিকে তদ্দিনে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বের করে ফেলেছেন যে আমাদের সৌরজগতের বয়সও তার চেয়ে ঢের বেশি। এদিকে গ্যামোর তত্ত্বে যেহেতু একটা সৃষ্টিতত্ত্বের কথা বলা হয়েছে, সেটা আবার ক্যাথলিক ধর্মগুরুদের বেশ পছন্দ হয়েছে। পোপ তো ঊনিশশো বাহান্ন সালে বলেই দিলেন যে, ওহে অবিশ্বাসীর দল, দেখলে তো, তোমাদের বিজ্ঞানও কি না শেষে আমাদের ধর্মগ্রন্থে লেখা সৃষ্টি-প্রলয়ের কথা মেনে নিল। আবার অন্যদিকে স্বয়ং গ্যামো বলে বসলেন যে, স্টেডি স্টেট থিওরি আসলে কমিউনিস্টদের চক্রান্ত— ওরা সবেতেই সমবণ্টন, সমসত্ত্ব চায় কি না! অর্থাৎ এক কথায় এই দুই কসমোলজিক্যাল তত্ত্ব নিয়ে ধর্ম, রাজনীতি, বিজ্ঞান সব মিলিয়ে বিশাল গোল বেধে গেল। কিন্তু কে যে ঠিক তাই ঠিক করা যাচ্ছে না।
—তাহলে? কী হল? আমি প্রশ্ন করলাম।
—বিজ্ঞানের যে-কোনও দ্বিধার ক্ষেত্রে যা হয়। প্রমাণ। প্রমাণ ছাড়া নানাবিধ দাবিদাওয়া ধর্ম বা রাজনীতিতে চলতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানে ওটাই সব।
—কিন্তু সেই কোটি কোটি বছর আগে কী হয়েছিল তার প্রমাণ কীভাবে পাওয়া যাবে? টাইম ট্রাভেল করতে হয় তো তাহলে! আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আবার।
—হ্যাঁ, তা করতে হবে বৈকি! বলে একটু রহস্যময়ভাবে হাসল জয়দা।
[আবার আগামী সংখ্যায়]