পদকুল

হীরক সেনগুপ্ত

 

পদকুলে ভোট। হইচই ব্যাপার। গওতন্ত পুজো। আসছে বচ্ছর আব্বার হবে— এ শোলোগানে তো সব্বদা কাজ হয় না। বচ্ছর বচ্ছর জো নেই। এ উৎসবের হেবি গ্যাপ। ষাটমাস। তবে দু-একবার ফটাফট লেগেছে। কিন্তু সেসব মলমাসের রেয়ার ক্যাঁচাল।

 

দুই.

কাগজ লিখল: সঙ্কুলের ভোট ১লা এপ্রিল

 

তিন.

‘সঙ্কুল’ নামে একটা কেস আছে‌। ওরিজিন্যালটা ছিল ‘শ্বাপদসঙ্কুল’। নামটা গোলমেলে। ওই নামে লোকে ভয় খেত। বুদ্ধিজীবীরা অনেক মাথা-ফাথা খাটিয়ে নাম দিল আপদসঙ্কুল। তাতেও গেরো।

 

চার.

শ্বাপদ মানেটা খটমট। লোকে ‘আপদ’টা টক করে ধরে ফেলল। বলে বুদ্ধিজীবী না, গাধা। শেষে মান বাঁচল এক ক্ষেতমজুরে। নিরক্ষর নিরাপদ মাল। বলল,

—পদকুল দাও না কেনে?

 

পাঁচ.

সেই থেকে শুরু। যাকগে। যে কথা হচ্ছিল। পদকুলের ভোট। এখানে ভোট হয় একটাই। পোস্ট। বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট।

 

ছয়.

প্রগতিশীল সমাজ। বাকি, দুধভাত।

 

সাত.

অতীতে নির্বাচনে বহুত খচ্চাটচ্চা হত। ঝাড় খাওয়ায় আসন কমেছে, খরচও। নির্বাচন ফুল রিমোট সিস্টেমে। ফলে অর্থনীতি উদ্বৃত্তে মালামাল।

 

আট.

তবে ভোট এখন বাহারি। জগঝম্প। তাজঝিম মাজঝিম দিল্লাগি। মিটিং-মিছিল, ঢ্যামকুড়কুড়। সবার হাতে পিকে (আদি) সহায়িকা। ডবল বহর বক্তৃতা। দেওয়াল দখল। গরু, ছাগল, কুকুরের গায়ে পোস্টার। যাবতীয় চামদের ল্যাজে ল্যাজে ফেস্টুন। লাইটপোস্টে ‘ঋতুবন্ধে’ হাপিশ। এখন প্রকাশ্যে ওনলি মদ্যপান— আব্বুলিশ, সমাবেশ।

হারামজাদা চোর-ছ্যাঁচড়ে গওতনতের ভাবমূর্তি ঠাপ। দলে সংশোধনী। পইটিকসের টেন্ডার বেরোয়।

 

নয়.

দুন্নিতিমুত্ত পাথ্থি চাই। লিডারশিপ ক্যালি, বিশেষ অগ্গাধিকার। ফর্ম— ৫ x হলুদ গান্ধি।

পদকুলের আপামর উদ্গান্ডুর দৌড়— যখন যেটায় পফিট। এইবার যেমন, ক্যান্ডিডেটে।

 

দশ.

পদকুলে তিনটে দল । তৃং। ব্রিং। হ্রিং।

ভোটের পোইটিকস বলে কতা। সাং সাং এ্যাকশন। চকোলাভা ইস্তেহার। ষাঁড়াষাঁড়ি বান।

 

এগারো.

তৃং-ইস্তেহার:

আমার রাজ্য। আমিই রাজা।
ফুটেছে মোন্তি। ঢাকঢোল বাজা।।

ব্রিং-ইস্তেহার:

ঝেড়েছি ডান্ডা।
বিলকুল ঠান্ডা।।

হ্রিং— একটু প্রাচীনপন্থী ইস্তেহার:

সাট্টা পেন্সিলার।
রেভেনু কালেক্টর।।
আমাদের শক্তি।
বাতেলায় মুক্তি।।

 

বারো.

তৃং, ব্রিং, হ্রিং কর্তৃপক্ষ ব্যস্ত। চোপ— ইন্টারভিউ চলছে।

 

তেরো.

তৃং দপ্তর:

—বাড়ি?
—ভ্যাবলা
—নাম?
—ফুলেশ্বর ল্যাঙট
—বিবাহিত?
—না
—কাজ?
—হাফসোল
—চলবে। ওই লাইনে।

ব্রিং দপ্তর:

—আপনি?
—আমোদিতা লাট্টু
—বিবাহিত?
—আজ্ঞে
—ছেলে-মেয়ে?
—ইয়ে, এখনই বলতে হবে?
—মানে?
—বাড়তে পারে কিনা
—বাড়বে মানে?
—টপকাব কিনা তাই
—পাচার নাকি?
—আজ্ঞে না
—তবে যে টপকাব বললেন?
—আজ্ঞে বেড়া টপকানো
—ও অনুপোবেশ?
—আজ্ঞে ‘না’
—মানে? এ তো অনুপোবেশই
—ওরম মনে হয় প্রথমটা
—তবে কি?
—আজ্ঞে, রিজার্ভ বেঞ্চ
—সেটা কী?
—আজ্ঞে মেয়েদের বেড়া
—মেয়েদের আবার বেড়া কী?
—পেটের
—পেটের কি বেড়া হয়?
—এমনিতে হয় না। গরিব-দুঃখীর হয়
—কীরম?
—দিনকাল মন্দ। বাজার খারাপ। আগে বেড়া-ফেড়ার কেস করিনি। এখন বাধ্য হয়ে
—লাভ?
—তা একটু লাভ আছে বইকি
—কেমন লাভ, শুনি?
—এই যে এত সরকারি প্রকল্প। দ্রুত শিলান্যাস। যদি একটা ফট করে কমপ্লিট হয়ে যায়। তখন? লোক কোথায় পাবে? তাই ঝোপ বুঝে কোপ। একজনের বয়স পেরোলেও টেনশন নেই। পরের জন লাইনে হাজির…
—বাহ! চমৎকার আইডিয়া
—আজ্ঞে নেসিসিটি
—শিক্ষা?
—হেঁহেঁ, যাকে বলে ডাব্বা মাসটার…
—ইন্টারেস্টিং… কাজ?
—জন্ম দেওয়া
—ওকে। ওই লাইনে…

হ্রিং দপ্তর:

—আপনি?
—গুলেন্দ্র সাঙাৎ। ছোট্ট করে, গুলকুমার।
—বিয়ে?
—বউ ভাগলবা।
—কাজ?
—চমকানো।
—লেখাপড়া?
—বাংলু। ডক্টরেট।
—বলেন কী! নতুন পোডাক! কোন কোম্পানি?
—আজ্ঞে স্লেট
—স্লেট মানে? পাঠশালায়?
—ওইরমই…
—অ। চলবে। ওই লাইন

 

চোদ্দ.

—আপনাদের সাবজেক্ট কী কী?

নির্বাচিত প্রার্থীদের সোল্লাস— ওই ওই…

—ধেৎ! সাবজেক্ট বলুন। কোন সাবজেক্টে ভাষণ দেবেন?
—আজ্ঞে প্রাথ্থী…. হব না?
—আঃ সেসব পরে। এখন বক্তা লাগবে।
—আজ্ঞে বক্তা?
—হ্যাঁ। জনোপোতিনিদিরা এখন মাল্টিটাস্কার
—ঠিক ঠিক
—আপনারা কী কী জানেন?

একজন মাথা চুলকায়।

—আজ্ঞে নিজের গুণ কি আর বলা যায়। এই ধরুন কৃষি, শিল্প, পরিষেবা…
—এঃ ওসব পুরনো
—যাহঃ
—আপনি?
—ক্ষুদ্দ্রকুটির, এনজিও, মাইক্রোস্বযুক্তি, মানিলন্ডারিং, অ্যাকসিডেন্টাল শিং, বেকার-ভাতা, বংশ-যোজনা, ডি ইন্ডিয়া…
—কৃতিত্ত?
—গরু। ধর্ম নাটক। যোগাসন…
—ঠিক আছে ঠিক আছে। ওই লাইনে
—আপনি?
—ক্লাব, সমাজসেবা, সতীদাহ… ইসে… মড়া পোড়ানো, ফ্যাসান, ফিলিম, ছিলিম, প্রোটেকশন, চপ, ঝালমুড়ি, হাওলা কীর্ত্তন, দলবদল, হর্সট্রেডিং, জব-ঘোটালা, লুঙ্গিবাত…
—আপনি?
—রিয়্যালিটি শো দাদি নং ১, ক্যালাই চণ্ডীপাঠ, চুনকালি ইনডাসটি, হাউয়ানই মাসি, ওয়ান রাখাল মেনি কাউ…

একটু দম নেয়।

—আরও আছে। লেটেস্ট। সিভিক ছুপারুস্তম, অচিরাচরিত-চোর, ননরেজিস্টারড চোর…
—ওঃ থামুন থামুন। ঝালাপালা বাঁধিয়ে দিলেন। চলবে। চলবে। হুইখানে

 

পনেরো.

এখন সিস্যুরাও জানে। ভোট হল ওরিজিনাল রিয়ালিটি শো। নো রিহার্সাল। ফুল ফিল্ড-ওয়ার্ক। এ প্রান্তে, ও প্রান্তে কপ্টার দৌড়।

পোস্টার-মোস্টারে ছয়লাপ। ব্যাপক বাউন্সার। বাম্পার হুক। জনগন লাঙ্গুলিত। প্রার্থীরাও ঘ্যামাচ্ছে।

 

ষোলো.

নমিনেশন চপ, এখনও উত্তেজনার তেলে ছ্যাঁক হয়নি। ফোর্সড উইথড্র। ফ্যাব্রিকেটেড মার্ডার। বিফিটিং রিপ্লাই। ফুল খর্চ্চা, নো চর্চ্চা— এসব সেকেন্ড ইনিংসে।

 

সতেরো.

পরিবেশবান্ধব প্রতীক।

তৃং: বটগাছ।
ব্রিং: সপ্তর্ষি-মণ্ডল।
হ্রিং: তেঁতুলপাতা।

 

আঠেরো.

নতুন রক্ত। নতুন ভক্ত। ভোটের বক্তিতায় ধুন্ধুমার। ধুরন্ধর হাইব্রিড কথা। ল্যাবারণ্যে আগুন। ধিক ধিক। দাউ দাউ। থেকে থেকে, দিকে দিকে। হু হু। আক্রমণ। প্রতি আক্রমণ।

উলুর পঞ্চুদের ডান পটকান  অবস্থা। ঝিনচ্যাক ইয়র্কার লেকচার। ফুল এপাং ওপাং ঝপাং।

 

উনিশ.

ভাম-আদমি। সকালে বলছে:

—তাই তো!

বিকেলে চোখ পাকায়:

—বটে!

রাতে ঢুলু ঢুলু:

—ইস!

 

কুড়ি.

মোটামুটি অমল দত্তের ডায়মন্ড ছকে গেম। প্রার্থী-দল-জনতা-প্রার্থী-দল… গোওওওলটাই বাকি। খেলা জমে ক্ষীর।

 

একুশ.

তৃং— ফুলেশ্বর লেঙট। প্রতীক, বটগাছ।

—বন্ধুগণ, আপনার ভোট মূল্যবান। আগলে রাখুন।

সপ্তর্ষিমণ্ডল কোথায় থাকে? ওই আকাশে। ধরাছোঁয়ার বাইরে। বুঝুন। ভোটে জিতে গেলে কী হবে। দেখাই পাবেন না। মোবাইলে মাঝে মাঝে কী বলে? এই নাম্বারটি নেটওয়ার্কের বাইরে। আপনি যাকে ফোন করেছেন, তিনি এখন ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর, আবার চেষ্টা করুন। লাইন বিজি। লাইফ হেল। আপনার টকটাইম মানে বাকস্বাধীনতা? ফুউসসস! আপনি অন্ধকারে হাতড়াচ্ছেন।

লজ্জাবতী লতা দেখেছেন তো। ছুঁয়ে দিলে? একেবারে মাটিতে মিশে যায়। ওটা তেঁতুল নয়। লজ্জাবতী। ছদ্মবেশ। ভাবুন একবার। ফুচকার কথা। মুখে জল আসছে তো? আমারও। কিন্তু বন্ধুগণ, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা কী বলছে? সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর। অপখাদ্য। হেরোইনের নেশা। মাথামুন্ডু হুঁশ নেই। পাগলের মতো গিলছেন। আর কী হচ্ছে? শরীরের বারোটা। তেঁতুলের ছড়া মুখে টানুন। জিভ ছড়ে বারোটা। বুঝুন ঠেলা। লোকে বলে পুরনো তেঁতুল উপকারী। আমরা বলি কত পুরনো? খিদে এখন। সমস্যা এই মুহূর্তে। আপনি অপেক্ষা করবেন? কতক্ষণে তেঁতুল পুরনো হবে! হাত দিয়ে পেড়েছেন কোনওদিন তেঁতুল? ওই ও-ই উঁচুতে। না-গা-ল পাবেন না। আর এসব কখন হবে? যদি ভুল করেন। কী ভুল? ওদের ক্ষমতা দেন। ভুল করবেন না।

আপনাকে সুরক্ষা দেবে কে? বটগাছ। ভারতের সংস্কৃতির অঙ্গ। সীতার আশীর্বাদধন্য। সত্যবাদী। মজবুত। সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। কবিগুরুর গান: ছায়ার ঘোমটা মুখে পানি/আছে আমাদের গ্রাম খানি/ছায়া সুনিবিড়/শান্তির নীড়। এই ছায়া কে দেয়? শান্তি কে দেয়? বটগাছ দেয়। কাকে দেয়? জাতপাত নির্বিশেষে। ধনীদরিদ্র ভেদাভেদ ভুলে। পশুপাখি, জন্তু জানোয়ারকে। হোলসেল। কাকে নিয়ে বাঁচে? সবাইকে নিয়ে বাঁচে। আর কী করে? বাঁচায়। ঝড়ে কী করে? রক্ষা। ভূমিকম্পে? রেহাই। ভূমিক্ষয়? প্রতিরোধ। পুজোয় কী লাগে? পঞ্চবট। আপনার জীবন জুড়ে কে আছে? বটগাছ। কী অবদান? অমূল্য। কোথায়? সংস্কৃতিতে। সাহিত্যে? বটতলা। শিল্পে? ‘আমরা দেখেছি যারা নিবিড় বটের নিচে লাল-লাল ফল’। বিজ্ঞানে? বোটানিক্যাল গার্ডেন। ভাবুন! অনলাইনে জবাব দিন। বটচিহ্নে?

আওয়াজ উঠল: ছাপ দিন
খবরদার, বট সর্দার।
ট্যাক্স মাপ, বটে ছাপ।
সীতার আশীর্বাদ, আমাদের আশীর্বাদ

 

বাইশ.

ব্রিং— আমোদিতা লাট্টু। প্রতীক, তেঁতুল পাতা

—ভাইসব, ভুল করবেন। একশোবার করবেন। ভুল করাটা আপনার অধিকার‌। ভোট, বটগাছেই দিন। মজা দেখুন। বটগাছ দেখেছেন কোনওদিন?
—হ্যাঁ দেখেছি
—কীরকম বলুন?
—অনেক বছর বাঁচে
—ঠিক। বহুবর্ষজীবী। আর কী করে?
—ছায়া দেয়
—বাঃ। আর?
—অক্সিজেন
—গুড। আচ্ছা বন্ধুরা আপনারা তো অনেক জানেন। একটা প্রশ্ন করি। বটের ঝুড়ি দেখেছেন?
—দেখেছি
—ভেবেছেন কোনওদিন বটের ঝুড়ি নিয়ে?
—কই না
—একবার জন্মাতে দিন। খেলা শেষ। পাঁচশো হাজার বছর।
—এই বছরগুলো কী?
—এগুলো রাজত্ব। ছেলে। তার ছেলে। তার ছেলে। যাকে ইতিহাস বলছে ডাইনেস্টি। বংশপরম্পরায় রাজ করবে। আর আপনি? আঙুল চুষবেন। ফুটপাতে। ছেঁড়া কাঁথায়। আপনার লাইফ? ফিনিশ। বটগাছ লাগিয়েছেন তো ফেঁসে গেলেন। কেন? আর কোনও গাছ বাগানে হচ্ছে না। কারণ? ওই বট…
—কেন?
—বটগাছের নীচে, আশেপাশে আর কোনও গাছ বাঁচে?
—না।
—বাকি কোথায় গেল গাছ? বটেই খেয়ে নিল। তেমনই আপনিও? আর বাঁচবেন না। ধনে প্রাণে মরবেন। বংশ? উজার। কবি কেঁদেছেন: সকলের মাঝে বসে/নিজের মুদ্রাদোষে/আমি শুধু হতেছি আলাদা। বট একা। এ হল আলাদা। সবার ধাঁধা। পথের বাধা। তাহলে কী করবেন?
—বটের গাছ

আওয়াজ হল:

—সব বকোয়াজ
—এবার বট
—দূরেই হট্
—আর সপ্তর্ষিমণ্ডল? ধাপ্পা। স্রেফ ধাপ্পা। আপনি কল্পনায় জুড়তে পারলে আছে। না হলে নেই। কোথায় আছে? আকাশ। আকাশের শেষ আছে? নেই। শুরু আছে? নেই। কী দিয়ে সৃষ্টি? ফাঁকা। শূন্য। তা বন্ধুরা আপনারা শূন্যকেই নিন। ভোট দিন। সপ্তর্ষিমণ্ডলকেই দিন। আমাদের নয়। রাজত্ব কায়েম করতে? ভোট দিন বটগাছকে। আমাদেরকে নয়। যদি আপনি বলেন— সপন যদি মধুর এমন/হোক সে মিছে কল্পনা— সপ্তর্ষিমণ্ডলকেই বেছে নিন। রাজাবাদশা চাইলে? বটগাছকেই মাথায় রাখুন।

হারাধনের দশটি ছেলে
ঘোরে পাড়াময়,
একটি কোথা হারিয়ে গেল
রইল বাকি নয়।

হারাল কেন? বাঁধন নেই। পাড়াময় ঘুরছে। কেউ ফিরেও দেখল না। আর আমরা বলি— যদি হও সুজন/তেঁতুলপাতায় ন-জন। ওই তেঁতুলপাতা। একাই ধরে রাখে। দশ-বিশ। আপনি শস্যশ্যামলা পৃথিবী চান? স্বজনদের নিয়ে বাঁচতে চান? অতিথি দেব ভব চান?

তেঁতুলপাতা তেঁতুলপাতা
তেঁতুল বড় টক রে।
তোমার সাথেই আমার প্রেম
অনেকদিনের শখ রে

এ তো তেঁতুলের গুণেই প্রেম। আটকায় সাধ্য কার। নীরোগ জীবন যদি চান তবে কাকে চাই? তেঁতুলপাতা।

জোয়ার আসে:

—তেঁতুলপাতা
—বর্ষায় ছাতা
—তেঁতুলপাতা
—শীতের কাঁথা
—ঐক্য কোথায়
—তেঁতুলপাতায়

 

তেইশ.

হ্রিং— গুলেন্দ্র স্যাঙাত। প্রতীক, সপ্তর্ষিমণ্ডল।

কাঁপিয়ে দিল।‌

—মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল,
আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ
ভীম রণ-ভূমে রণিবে না…

….বট, তেঁতুল তো চিনব। কীভাবে চিনব? যদি শিক্ষাই না থাকে? চেতনা না থাকে। কল্পনা না থাকে।

পেঁচার ধূসর পাখা উড়ে যায় নক্ষত্রের পানে। আপনারই চেতনার রঙে পান্না সবুজ। চুনি রাঙা। আপনি চোখ মেললেন। আকাশ জ্বলে উঠল আলো হয়ে। কোথায়? পুবে-পশ্চিমে! গোলাপকে কী বললেন? সুন্দর। তাই সুন্দর হল সে।

লেকচার নয়। এ আপনারই বাণী। এ সত্য। এ আপনার অহঙ্কার। সমস্ত মানুষের হয়ে। সারল্যের অহঙ্কার। বিশ্বকর্মার বিশ্বশিল্প। জপ করছেন। নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে। না-পান্না, না-চুনি, না-আলো। না-গোলাপ। না-আমি। না-দল। না-পার্টি। না-ভোট।

ওদিকে ভোটের অসীমে কে? তিনি স্বয়ং আপনি। কী করেছেন? সাধনা। সরকারের সীমানায় কে? আপনি। সেই আপনার মধ্যে আছি, আমি। আপনি নেই, তো আমরাও নেই। গহনে আছেন আপনি। ব্যস্ত আছেন মহামিলনে। সহিষ্ণুতায়। কীভাবে দেখা দেন? রূপে। কী জাগিয়ে তোলেন? রস। আপনি পাবলিশ হয়ে উঠলেন। আর আপনার মায়ামন্ত্রে কে বশ হল? এই আমরা। কে কথা বলেন? আপনি। আমরা কে? আপনার বর্ণ। অক্ষর। ভাষা। আপনি হলেন ঈশ্বর। কোথায়? না ভোটে। আর? ইভিএমে। আর? সরকারে।

সপ্তর্ষিমণ্ডলের ধারণায় “স্টার চার্ট সফটওয়্যার” আবিষ্কার। এখনও পর্যন্ত কোনও ভুল গণনা নেই। গ্রহনক্ষত্রের গতিবিধির গণনা সঠিক। এ কীভাবে সম্ভব? যদি কল্পনাই না থাকে? আপনি চিনতেই পারলেন না আপনাকে। এ পৃথিবীকে। স্বপ্ন এমন নয়। যা আমরা ঘুমের মধ্যে দেখি। স্বপ্নই আমাদের জাগিয়ে রাখে। ঘুমোতে দেয় না।

আপনি জানবেন কী করে আপনি জেগে আছেন কিনা? আপনার অধিকার কী? আপনার দাবি কী?

আমরা আফিমের ঘুম চাই না। তাই সচেতন। কল্পনা করাই।

এক যে আছে মজার দেশ,
সবরকমে ভালো,
অন্ধকারটা সাদা দেখায়,
সাদা জিনিস কালো!
আকাশ সেথা সবুজবরণ
গাছের পাতা নীল;
ডাঙ্গায় চরে রুইকাতলা
জলের মাঝে চিল!

আর কী কী কল্পনায়?

ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী। সাক্ষর পৃথিবী। শোষণমুক্ত পৃথিবী।

এসব আসবে কোত্থেকে?

ওই সপ্তর্ষি মুনির মতো। আপনার কল্পনায়।

জনগনেশ টেম্পার খেয়ে যায়।

—ভোট চঞ্চল
—সপ্তর্ষিমণ্ডল
—ভুলেছি কোন্দল
—সপ্তর্ষিমণ্ডল

 

চব্বিশ.

জোরদার জমেছে। পাবলিক কনফিউজ। সব সত্যি। যুক্তি অকাট্য। গিলে হজম।

 

পঁচিশ.

ভোকাল সে লোকাল চর্চা।

—বটগাছের ফুলেশ্বরকে দেখেছেন, আগুনের ফুলকি।
—আরে ছোঃ! তেঁতুলপাতার আমোদিতার কথা বলুন? গরিবের ইলু ইলু।
—ফালতু খিচাইন কোরো না। বামাল হয়ে যাবে।
—সপ্তর্ষিমণ্ডলের গুলকুমার, ম্যাজিকওলা। এক নির্ভীক যোদ্ধা। খাপ-খোলা তলোয়ার। সত্যি, বাঁচাতে এইই পারে। শিক্ষায় উদ্দীপ্ত।

 

ছাব্বিশ.

সব দল চাঙ্গা। বক্তৃতায় বিপক্ষ দল কাত। তিনজনই ফিট। এই তিন সবার নজরে।

 

সাতাশ.

ফুলেশ্বর: যো জিতা ওহি সিকন্দর

আমোদিতা: জওয়ানি দিওয়ানি

গুলকুমার: অন্দর মে ফিট বাহার মে ফিট

 

আঠাশ.

নমিনেশন ফাইলড। তৃং, ব্রিং, হ্রিং।

ঝাড়পিটের স্কোর ইকুয়াল। তিন নং সাতাশ। লাশ পড়েছে। ইচ পার্টির।

 

ঊনত্রিশ.

প্রার্থীদের বাড়িতে অবশ্য উত্তেজনা নেই। যাহা বাহান্ন, তাহা তিপ্পান্ন‌।

সাংবাদিকেরা ছোটে প্রার্থীর বাড়ি বাড়ি।

ফুলেশ্বর বাড়ি নেই।

আমোদিতার মেয়ে বলল— ঠাপে গেছে।

শেষমেষ, গুলকুমার অ্যাভেইলেবল। মিডিয়া সাক্ষাৎকার বাইট নিল।

—এবার কী হবে?
—কী আর হবে!
—ভয় করছে?
—হেঃ ভয়!

সাংবাদিকেরা হামলায়।

—কী ভাবছেন স্যার? এনি প্রেডিকশন?
—আমিই জিতব
—কী বলছেন স্যার? ভোটই তো হল না। জেতার ব্যাপারে এত কনফিডেন্স কীভাবে পাচ্ছেন?
—ধুর। জেতাটা কোনও বিষয়! জেতা নিয়ে চিন্তিত নই
—কী বলছেন!
—আবৃত্তি। গান। নাটক। বিতর্ক। রং।
—মানে?
—সাড়ে সাংঘাতিক

সাংবাদিকদের হেঁচকি উঠে গেল…—মানেটা কী হল স্যার…?

—কিছু না। ঢং
—কী মিন করছেন?
—রেজাল্টের দিন সব উড়ে যাবে
—দেদার ছাপ্পা নাকি?
—ধুর মশাই। দেদার ধাপ্পা
—মানে?

গুলকুমার ছবি দেখায়।

—দেখুন… এই আমোদিতা, এই হল ফুলেশ্বর
—একি! এরা তো সব অপোজিশন… আমোদিতা লাট্টু… ফুলেশ্বর লেঙট…
—ইয়েস। সব হাপিস
—আপনি সাবোতাজ করবেন?
—হেঃ… ছেলেবেলায় বিদ্যে… ফুলেশ্বর, আমোদিতা, গুলকুমার… সব আমি। এই শর্মা। মেকাপ, মেকাপ।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5088 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...