
শাশ্বত বসু
আলুথালু অতি প্রাচীন বিসর্গচিহ্নের মতো পাথুরে টিলাগুলো চারপাশ জুড়ে শুয়ে আছে। যেন চিরবসন্তের আড়ালে অবসাদের স্নায়ুরেখা বেয়ে ওঠানামা করে চলেছে উচ্চ ও নিম্ন মধ্যবিত্তের আশা-আকাঙ্ক্ষার জীবনবাদী দর্শনধারা। ধরিত্রীর বুক থেকে মুছে যেতে যেতে, আদিমতার খাতিরে টিকে গেছে কোনওমতে। তবু সারা গায়ে জট পরে যাওয়া অর্জুন-শাল-সেগুন-খেজুরগাছের জঙ্গল নিয়ে প্রতি মুহূর্তে পায়ের গোড়ার এবড়ো-খেবড়ো সমতলভূমির সঙ্গে এঁটে ওঠার লড়াই! টাঙ্গি-বল্লম-বর্শা নিয়ে উদ্যত ওঁরাও-কিস্কু-হেমব্রম বাহিনীর মতো পাহাড়গুলোও যেন কোনও কিছুতেই সমান পেলব না হয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছে, মাথা উঁচু রাখার যত্নশীল স্পর্ধায়। শূন্য পথে নির্জনতার বুক চিরে একটা ক্ষীণ অস্থিরতার এপিটোম লিখে দিচ্ছে বুনো শুয়োরের শরীর থেকে ভেসে আসা একটা একটানা বিচ্ছিরি ঘোঁতঘোঁত শব্দ! সেটা তখন টিলাটার গায়ের ঢালু খাদ বরাবর নামার চেষ্টা করছে। সাঁওতালদের আদর্শ খাদ্য! হাড়ি নেই, বাসনকোসন নেই, তবু জঙ্গলের শালকাঠ আছে, তাতে পোঁড়া ধরানো আগুন আছে। অনেকবার করে কাঁচা শালপাতায় মুড়ে রসুন-পিয়াঁজ-সর্ষের তেল মাখানো মাংসের টুকরোগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা আগুনে পুড়ে যেন উপাদেয় খাদ্যময়তায় সহস্রাব্দের ব্যঞ্জনা তৈরি করে। উগ্র পোড়া ঝলসানো মাংসের গন্ধে আদিম রসনার লাল গালিচা বিছিয়ে দেয় প্রান্তর জুড়ে। পাহাড়ের গায়ে ধাপ কাটা সিঁড়ির আড়ালে একটা খেজুরগাছের তলায় চুপ করে বসে আছেন অমল— অমলকান্তি। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একদল সাঁওতাল তরুণী মাথায় জঙ্গলের কাঠ কেটে নিয়ে ফিরে চলেছে ঘরের উদ্দেশ্যে। ঠিক তার ব্যাকড্রপে পলাশরঙা সূর্য্যটা ডুবছে, যেন খরচ না-হওয়া জীবনটুকুকে আগলে রাখতে চাওয়ার বিনিময়ে অনর্গল বলে চলা, ধূসর রঙা এক অনন্ত মৃত্যুর গল্প! দুর্বল আলোর সঙ্গে ছুটে আসা হালকা হাওয়াটার তালে তালে ওদের শরীরগুলো দুলছে, যেন দলমার জঙ্গল থেকে আচমকা বেরিয়ে আসা যুবতী চিতা! ক্ষিপ্র! নির্মেদ! তরুণীদের মুখ থেকে ভেসে আসা গুঞ্জন, অনিবার্য ধূলিকণা হয়ে প্রবেশ করে অমলের কানে— হাজুক মে উসারা (এসো তাড়াতাড়ি)। অযোধ্যা সার্কিটের ওপর পরপর গ্রামগুলো যেমন লছমনপুর, আহাঢ়া, শিলিংদামোড়, লাহা ডুঙরি, ছাতনি জুড়ে শুধুই আদিবাসীদের বাস। পর্যটনের নামে বৃক্ষছেদন করে, ধ্বংসের জটিল বর্গক্ষেত্রে গজিয়ে ওঠা রিসর্টগুলোর বেবাক আধিপত্যের সঙ্গে এই অরণ্যভূমির আসল হকদারদের এই অদ্ভুত যৌথ যাপন যেন চোখে পড়ার মতো!
দূরে ধোঁয়ার ভাসাভাসা সরের মাঝে একটা আধখোলা ভাতের হোটেল চোখে পরে অমলের, অনিল মাহাতোর লাইন হোটেল। লেখাটার গা থেকে খামখেয়ালির মতো একটা আলো জেদি হয়ে এসে পড়ে অমলের পায়ের কাছে। চারপাশের সময়টা যেন বদলে যায়, প্রবল গ্রীষ্মে শালপাতায় যেমন ফুটিফাটা চিড় ধরে ঠিক তেমনতর ঝাপসা অথচ অকম্পিত দৃষ্টিতে দূরের দিকে চেয়ে থাকেন অমল। তার নিশ্চুপ, নির্ভার, ছায়াচ্ছন্ন দু-চোখে তখন বুনো স্যাক্সাফোনের মতো, বিদেহী ম্যান্ডোলিনের মতো, দীর্ঘস্থায়ী উপকথার ক্যানভাস এঁকে চলেছে ওপারের দলমা পাহাড় আর তার কোল বেয়ে সদ্য বিকশিত ঈশ্বরী শরীরে ঢেউ তোলা সুবর্ণরেখা! অমলের ছেলেবেলার মায়াপাহাড়! একইসঙ্গে উচ্ছল আবার মেঘলা মনখারাপের মতো শান্ত নদী! অমলের ফেলে আসা জামশেদপুরের জীবন! এসবই পার্শ্বচরিত্র হয়ে ওঁর স্মৃতির ভারে পিছিয়ে পড়া সাকিনের, খুবলে খাওয়া শরীরটা বরাবর ফ্যাটফ্যাটে অস্বাভাবিক রঙের একটা ফণা তুলে গুলিয়ে দিয়ে যায় অমলের বর্তমান সময়কে।
“There are more things in Heaven and Earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy”, হ্যামলেটের স্বর্গত পিতার ভূত যেমন হোরাশিওর সামনে হঠাৎ উদয় হয়ে মিশিয়ে দিয়েছিলেন বাস্তব আর পরাবাস্তবকে যৌথতার প্রয়োজনে, ঠিক সেরকম একটা বোধ নিয়ে গভীর দুঃখের মাঝে আনন্দের উৎসটাকে জেনে ফেলার ব্রহ্মমুহূর্তে তেরছা করে অমলের গায়ে এসে পড়ে কমলা রঙের রোদটা। প্রায় রোজই যখন সেটা অমলকে ছুঁয়ে দিয়ে মিলিয়ে যায় পাহাড়ি রাস্তার বুকে, তখন তার পিছনে ধাওয়া করা মানে জীবনের পাকদণ্ডি বেয়ে ভুলভুলাইয়াকে ডেকে আনা! এইরকম একটা ঘোলাটে হয়ে যাওয়া মানসিক অবস্থায় দাঁড়িয়ে অমলকান্তি আফসোস করে ওঠেন, সুবর্ণরেখা তো জামশেদপুরকে অনেক সবুজ করেছে! তেমন একটু প্রেম যদি একটু বান্দোয়ানের পাহাড়ের গায়ে পাওয়া যেত! ঊষর ফুটিফাটা মাটিকে ভালোবেসে অমল যেন পেয়েছেন নারীত্বের স্বাদ! প্রকৃতি সেই ভালোবাসাকে খালি হাতে ফেরায়নি।
আজ এতগুলো শীতকালকে উল্টেপাল্টে দেখতে শিখেও অনায়াসে নাগরিক কর্কশতার ভরকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা কোনও নগরবর্তিকার সঙ্গে অমল শুরু করে দিতে পারেন মূক-বধির অথচ চেতনাময় এক কনভার্সেশন! তুমি কী চেয়েছিলে? একটা বারোশো স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাট, একটা আধুনিক সুবিধাযুক্ত গাড়ি, একটা ব্যাংকের লকার, তাতে ভরি দশেক গয়না, একটা ডায়মন্ডের নেকলেস, এক ছেলে এক মেয়ের গোছানো সংসার, তুমি পেয়েছ। ভালো আছ্ তো তুমি? আমি একটা জঙ্গল চেয়েছিলাম! আমি হাতে গড়া জঙ্গল পাইনি, কিন্তু দলমার পায়ে পায়ে ঘুরে আমি জঙ্গল বানাবার একটা মন্ত্র পেয়েছি! লক্ষ লক্ষ বর্গকিলোমিটার জুড়ে আমি আম, জাম, পেয়ারা, ন্যাসপাতি, রুদ্রাক্ষ গাছ লাগিয়েছি। সঙ্করায়ণের ভারে প্রায় মুছে যাওয়া “কনকচূড়” ধানের বীজ নিয়ে এসে আমি চাষ করেছি এই পাথুরে অববাহিকায়! বলদ দিয়ে হাল চষিয়েছি। আমাদের ঘামে মাটি ভিজে গেছে, নরম হয়ে গেছে। আজ হঠাৎ যখন সূর্য ঢলে যায় পারাবার জুড়ে, আলো করে চাঁদ ওঠে, সেই হিমজ্যোৎস্নায় শালগাছের পাতার ফাঁক দিয়ে আমি অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড দেখতে পাই। আমাকে কালপুরুষ, সপ্ত ঋষির ঝাঁক, লুব্ধক ওপেন চ্যালেঞ্জ ছোড়ে। বলে, আয় ব্যাটা লড়াই করি! আমি মনুর ব্যাটা মানব। পাগলা জগাই হতে পারি কিন্তু বোকা তো নই! আমি জানি সৃষ্টির আদিকাল থেকে কৌরব কোনওদিন জেতেনি। ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুৎ-ব্যোম এই পঞ্চপাণ্ডব আর তাদের বন্ধনীস্বরূপ এই ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে লড়তে যাওয়া বোকামি! তোমরা তো ধর্মকে পূজা করো! বৃক্ষনাথ আমার দেবতা। আমি জানি মাতৃজঠরে থাকতে আমার হাতের মুঠোর ভিতর ঈশ্বর আমাকে আরেক জোড়া কান দিয়েছেন, আরেক জোড়া চোখ দিয়েছেন, দিয়েছেন আরেকটা করে হৃদয়-ফুসফুস-যকৃৎ। সব একটা করে স্পেয়ার! ওই স্পেয়ার অর্গ্যানগুলো দিয়ে আমি মানুষের হৃদয়কে ছুঁয়ে দেখতে পারি। অন্তরে ছড়ানো ছেটানো জাগতিক অনন্তকে দেখতে পাই। তোমাদের বাড়িগুলোর সামনে সব বারোতলা, পাশে ছতলা, পিছনে সব কুড়িতলা! খিদে পেলে তোমরা মাছ মাংস আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট খাও। ধনতন্ত্রে দম বন্ধ হয়ে এলে বিষবাষ্প গিলে চল অনর্গল! আমার খিদে পেলে আমি মানুষের ভালোবাসা খাই। অনেক অনেক তারিখ চান্দ্রমাস সন পার হয়ে আসা অমাবস্যা রেশমের ভগ্ন অভিমান, নগ্ন আত্মসম্মান চিবোই! আমার প্রতিটি রোমকূপ দিয়ে আমি শুষে নিই কোটি আলোকবর্ষ দূরত্ব থেকে কত সংস্কৃতিশূন্য সকাল জুড়ে, কচ্ছপের গতিতে উড়ে আসা ধূলিকণার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভিটামিন ডি আর দুধসর বর্ণের জ্যোৎস্নার মায়াবী পুষ্টিরস। তোমরা আমায় ভালোবাসলে আমি তো সেই ভালোবাসা নেব না, শুধু এক্সচেঞ্জার মিডিয়াম হয়ে সবটুকু শুধে নিয়ে ছুড়ে দেব ওই ল্যাংটা গায়ের কালচে মেরে যাওয়া ওঁরাও-কিস্কু-মুন্ডাদের ঘরের ছেলেমেয়েদের। অনেক অতৃপ্তি নিয়ে, অনেক অভিমান বুকে ধরে অথবা অনেক ক্ষোভ রাগের আংরা নিজেদের কালো শরীরে জ্বেলে ওরা সেটুকুকে কাফন চাদরে মেখে নিয়ে, আমার শেখানো আবোলতাবোল কিংবা ভবানীপ্রসাদ বলবে, আমার বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখবে ওরা! আমার ঘুম ভাঙায় এই জঙ্গল আর তার আড়ালে বাসা বাঁধা বসন্তবৌরি, ময়না আর দূর্গাটুনটুনির দল! আবারও বলছি আমার ঈশ্বর এই বৃক্ষনাথ! এই ধরার বুকে আমার পূর্বপুরুষদের আগমনের অনেক আগেই বহু সৃজনশীল ও অতিমানববিক আলো-আঁধারের বেলা পেরিয়ে, আগমন হয়েছে তাদের। এই পৃথিবীর প্রথম প্রাণ! প্রথম বসন্ত! তাই তো জননী স্নেহে আমার মূল মূত্রটাও গ্রহণ করে আমার দিকে বাড়িয়ে দেয় পরিপুষ্ট ফল আর ফুলের সমাহার।
নির্জনতার পেটের ভেতর ফুটে ওঠা ব্যাকস্টেজের এই চিত্রনাট্য, সংলাপ, স্ববিবাদী দ্বিধাদ্বন্দ্বের সমীকরণ নিপুণ তুলিতে আঁকা হতে থাকে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। পুরুলিয়ার রক্তপলাশ আর উষ্ণপ্রবাহের দাবাযুদ্ধকে সাক্ষী রেখে অমল জানেন প্রতিবার পাল্লা তাঁর দিকেই ভারী থাকে। তবু আফসোস তাঁর যায় না, একটা নদী, একটা এমন নারীশরীর যদি পাওয়া যেত, যে নিজের গন্ধে ভিজিয়ে দিত বান্দোয়ানের রুক্ষ্ম প্রান্তর। হয়তো বা সে নদীর জল নেই, কূল নেই, তবু ঢেউ আছে। যার উৎসে সম্মোহন আর মোহনায় মায়া আছে। পিছন দিক থেকে অমলের গা ঘেঁষে এসে বসেন দময়ন্তী, এখন অমলের নিত্যসঙ্গী। বান্দোয়ানের আশ্রমের “মা”। ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়ানো থেকে গোপালন, চাষবাস সব তিনিই দেখেন। খুব ছোটবেলা থেকেই ওঁরা দুজনে বন্ধু ছিলেন। জামশেদপুরের ছোটখাটো এক ফাউন্ড্রির মালিকের সঙ্গে দময়ন্তীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার আগেই স্ত্রীপুত্র-সমেত ভরা সংসার ত্যাগ করে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান অমল। তাঁর আগামীর আস্তানা ‘ভালো পাহাড়’ খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন। একদিন দেখেন সব কিছু হারিয়ে দময়ন্তীও তাঁর পিছু পিছু এসে হাজির হয়েছেন। ঠিক যেমন অযোধ্যা পর্বতের অজানা কোনও আস্তানা থেকে লক্ষ লক্ষ ফোঁটা বৃষ্টির জল বুকে করে বয়ে নিয়ে এসে ‘বামনী’ নদীর ওপর আছড়ে পড়েছে ঝর্ণাটা। আশেপাশের পর্ণমোচী বৃক্ষ থেকে ঝরে যাওয়া পাতাদের নাড়িয়ে দিয়ে আয় আয় আয় এক আশ্চর্য গণআহ্বান তোলা হাওয়াটা শ্যাওলা ধরা পাথরটার বুকে ধাক্কা খেয়ে ওর জলে বাষ্প তুলেছে। দূরে একটা সাঁওতাল ছেলে খেজুরপাতা নিয়ে ফুল বানাচ্ছে, একপাল গরু নিয়ে দূরের কোনও এক প্রায় জল শুকিয়ে যাওয়া ডিহিতে চড়াতে নিয়ে যাচ্ছে রাখালের দল। মুখে তাদের বুলি, চল চল ফেরাইন চল। চল না বে! জঙ্গলের ভিতর অচেনা কোনও চার রাস্তার মোড় থেকে ভেসে আসছে লম্বা লাঠির মাথায় ময়ূরের পালক বাঁধা একটা বাদ্যযন্ত্রের সুদীর্ঘ অথচ ক্ষীণ আওয়াজ। এটাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাউরি’ বলে। সঙ্গে দ্রিমি দ্রিমি নৃত্যের তালে তালে বিরতিহীন ঘুঙুরের শব্দ!
প্রতিটি নারীর শরীরে মাতাল করা একটা গন্ধ থাকে। তাদের খোলা চুলের জটে আঙুল বুলিয়ে, বুনো তিতিরের মাংসের মতো নরম দুটো বুকে যদি মাথা নামানো যায়, তবে শোনা যায় নিরন্তর চলে যেতে চাওয়া এক জীবনের গল্প। সারা দুপুর জুড়ে তার দুটো কোমল হাঁটুর ভাঁজে অবাধ্য শিশুর মতো মাথা গুঁজে গভীর শ্বাস নিলে, উত্তাল সমুদ্রের বুকে থিতিয়ে পড়া শ্যাওলার মতো অপরাহ্নে এসে উপলব্ধি করা যায়, বর্ষায় জঙ্গলের বুকে তৈরি করা ‘রাস্কা পথ’ (আনন্দের পথ) আসলে শেষ হয় কোনও না কোনও নারীতেই! দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতার সরলরৈখিক চিহ্নকে অতিক্রম করে যে যাওয়ার সে চলে যায়। শুধু পড়ে থাকা জন্মদাগের ছবি হয়ে আশেপাশের পাহাড়গুলো কেমন যেন ভালো হয়ে যায়!
*হেডার ছবি লেখকের আঁকা
ধন্যবাদ