
আশিস গুপ্ত
আধুনিক বিশ্বে যুদ্ধ আর নিছক ভূরাজনৈতিক বিরোধ বা আত্মরক্ষার উপায় নয়— এটি হয়ে উঠেছে এক সুসংগঠিত, কর্পোরেট-চালিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা। এই যুদ্ধ-অর্থনীতির পেছনে রয়েছে অস্ত্র প্রস্তুতকারী বহুজাতিক কোম্পানি, তাদের অংশীদার রাজনৈতিক নেতা এবং কর্পোরেট মিডিয়া। বিশেষ করে ইউক্রেন ও গাজার সাম্প্রতিক যুদ্ধদ্বয় একে একে প্রমাণ করেছে যে সমকালীন যুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য আর নিরাপত্তা নয়, বরং অস্ত্রের চাহিদা সৃষ্টি এবং লাভজনক বাজার বিস্তার। সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমিত আকারের যে যুদ্ধটি হয়ে গেল আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী তাতে প্রতি ঘণ্টায় এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে। আসলে যুদ্ধ এখন আর শুধুই ‘সমস্যা’ নয়, বরং নিজেই একটি ‘সমাধান’— একটি অর্থনৈতিক মডেল, যেখানে ধ্বংস মানেই পুনর্গঠন, যুদ্ধ মানেই প্রযুক্তির উন্নয়ন, আর অস্ত্র মানেই বিনিয়োগ
প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংহ-র প্রেসসচিব সঞ্জয় বারু তাঁর এক সাম্প্রতিক প্রবন্ধে লিখেছেন, “প্রথম যে সংবাদ সংস্থাটি এটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তা ছিল অ্যাংলো-আমেরিকান সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। তারা জানায়, ফরাসি নির্মিত রাফাল যুদ্ধবিমান— যা বর্তমানে ভারতের বিমানবাহিনীর অস্ত্রভাণ্ডারের অংশ— ভূপাতিত হয়েছে। এই খবরে রাফাল-নির্মাতা দাসোঁ এভিয়েশনের শেয়ারের দাম ৩.৩ শতাংশ পয়েন্ট কমে যায়; শেয়ারের মূল্য $৩৭৩.৮ থেকে নেমে দাঁড়ায় $৩৬২.০৫-এ। একই সময়ে পাকিস্তান বিমানবাহিনী যে যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে— চিনের তৈরি জে-১০সি ও জে-১৭— তার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের শেয়ারের মূল্য প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। অভিযোগ অনুযায়ী, চিনে তৈরি এই যুদ্ধবিমানই ফ্রান্সে তৈরি রাফালকে গুলি করে নামিয়েছে।”
এই অংশটুকু উল্লেখ করলাম এ-কারণেই, যাতে যুদ্ধের চরিত্রে যে আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে, তা কিছুটা হলেও বোঝা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে গোটা বিশ্ব একযোগে শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গঠনের অঙ্গীকার করলেও যুদ্ধ থেমে থাকেনি। কিন্তু গত ২৫ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেভাবে সমরাস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে, তাতে জনমানসে একটাই প্রশ্ন উঠে আসছে— এই ধ্বংসযজ্ঞ, নরসংহার, আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার, কার স্বার্থে?
আধুনিক বিশ্বে যুদ্ধ আর নিছক ভূরাজনৈতিক বিরোধ বা আত্মরক্ষার উপায় নয়— এটি হয়ে উঠেছে এক সুসংগঠিত, কর্পোরেট-চালিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা। এই যুদ্ধ-অর্থনীতির পেছনে রয়েছে অস্ত্র প্রস্তুতকারী বহুজাতিক কোম্পানি, তাদের অংশীদার রাজনৈতিক নেতা এবং কর্পোরেট মিডিয়া। বিশেষ করে ইউক্রেন ও গাজার সাম্প্রতিক যুদ্ধদ্বয় একে একে প্রমাণ করেছে যে সমকালীন যুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য আর নিরাপত্তা নয়, বরং অস্ত্রের চাহিদা সৃষ্টি এবং লাভজনক বাজার বিস্তার। যুদ্ধের নামে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলে, তা বাস্তবে বহু কোম্পানি, ব্যাঙ্ক, নিরাপত্তা পরামর্শদাতা এবং রাষ্ট্রীয় এলিট শ্রেণির জন্য কোটি কোটি ডলারের মুনাফার উৎস। যুদ্ধ যেন এখন আর শুধুই ‘সমস্যা’ নয়, বরং নিজেই একটি ‘সমাধান’— একটি অর্থনৈতিক মডেল, যেখানে ধ্বংস মানেই পুনর্গঠন, যুদ্ধ মানেই প্রযুক্তির উন্নয়ন, আর অস্ত্র মানেই বিনিয়োগ।
২০২২ সালে রাশিয়া যখন ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে, তখন বিশ্বজুড়ে মানবিক সহানুভূতির পাশাপাশি শুরু হয় এক নতুন ধরনের অর্থনৈতিক উত্তেজনা। পশ্চিমি দেশগুলি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেনকে শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহ শুরু করে। এই অস্ত্রের বড় অংশ সরবরাহ করে মার্কিন কোম্পানি Lockheed Martin, Raytheon Technologies, General Dynamics এবং Northrop Grumman। যুদ্ধ শুরুর প্রথম বছরেই এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্য ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়, যা Wall Street-এ যুদ্ধবাণিজ্যের সুস্পষ্ট প্রতিফলন।[1]
এই সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি রুশ হুমকিকে কেন্দ্র করে দ্রুত প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়িয়ে দেয়, যার সরাসরি সুবিধা পায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই কোম্পানিগুলি। ২০২৩ সালে Lockheed Martin ইউরোপের কাছে বিপুল পরিমাণে F-35 যুদ্ধবিমান বিক্রি করে, যার প্রত্যেকটির দাম ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।[2] শুধু তাই নয়, ইউক্রেনকে দেওয়া প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিস্থাপন চুক্তিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার করেছে এই কোম্পানিগুলির সঙ্গেই— যাতে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়াটাই তাদের জন্য লাভজনক হয়ে ওঠে।[3]
২০২২ সালে Raytheon-এর সিইও Greg Hayes সরাসরি বলেছিলেন, “We see increased instability, and that creates opportunity for us.” এই অস্ত্রনির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলি শুধু অস্ত্র তৈরি করেই থেমে নেই— তারা লবিস্ট নিয়োগ করে যুদ্ধকে ‘আবশ্যিক’ হিসেবে তুলে ধরতে সাহায্য করে, মিডিয়ায় ‘হুমকি’র গল্প ছড়ায়, এমনকি পররাষ্ট্রনীতির দিকনির্দেশনাতেও অংশগ্রহণ করে। কোনও লুকোছাপা না করে Raytheon-এর CEO এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, “This conflict in Ukraine has been good for business.”[4]
এই উক্তি যুদ্ধের পেছনে কর্পোরেট মুনাফার বাস্তবতা নির্লজ্জভাবে উন্মোচন করে। একই সঙ্গে The Washington Post-এর এক অনুসন্ধান অনুযায়ী, অন্তত ৪৮ জন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালীন সময়েই যুদ্ধ-সম্পৃক্ত কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন— যা রাজনৈতিক ও কর্পোরেট স্বার্থের গাঁটছড়া সম্পর্কে গভীর সন্দেহের জন্ম দেয়।[5]
শুধু ইউক্রেন নয়, গাজা যুদ্ধও আজ এক কর্পোরেট অস্ত্র-পরীক্ষাগারে রূপ নিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইজরায়েল যখন গাজায় ব্যাপক হামলা চালায়, তখন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি ধ্বংস, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুললেও ইজরায়েলি অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলি— বিশেষত Elbit Systems— যুদ্ধকে রপ্তানি বাজারে নিজেদের ‘ব্র্যান্ডিং’ হিসেবে কাজে লাগায়। এই অস্ত্রগুলো “Tested in Gaza” শিরোনামে বিক্রি করা হয় দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকার নানা দেশে।[6] এটি নিছক বাজার কৌশল নয়— বরং মানুষের মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞকে পণ্যে পরিণত করার একটি নির্লজ্জ বাণিজ্যিক ব্যবহার।
ইজরায়েলি সমাজবিজ্ঞানী Jeff Halper-এর মন্তব্য এই চিত্রটিকে স্পষ্ট করে তোলে: “Israel has turned its occupation into a laboratory for weapons development. Gaza is not only a battlefield, but also a showroom.”[7] এ-কথার মধ্যেই ফুটে ওঠে যে গাজা আসলে এক প্রদর্শনী মঞ্চ— যেখানে মানুষের জীবন অস্ত্র-প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক উপকরণ মাত্র।
ইজরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সামরিক সহায়তাপ্রাপক। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইজরায়েলকে ১৭.৯ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা প্রদান করে, যার মধ্যে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত।[8] এই চক্রটি একটি ঘূর্ণায়মান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা— যুক্তরাষ্ট্র অর্থ দেয়, ইজরায়েল যুদ্ধ চালায়, অস্ত্রনির্মাতারা মুনাফা করে, এবং রাজনীতিকরা এর বিনিময়ে কর্পোরেট অনুদান ও শেয়ারমূল্য থেকে সুবিধা পান।
মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বেসামরিক প্রাণহানির প্রশ্ন এখানে দ্বিতীয়— প্রথম লক্ষ্য অস্ত্রের কার্যকারিতা এবং তা থেকে রাজস্ব আহরণ। ২০২৩ সালে ইজরায়েল যখন গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায়, তখন ব্যবহৃত JDAM বোমা, GBU সিরিজ গাইডেড মিসাইল এবং স্মার্ট বোমাগুলোর উৎস ছিল Raytheon ও Boeing। আর এই সরবরাহ অব্যাহত রাখতে গাজা যুদ্ধকেই ইজরায়েলি সামরিক লবি ‘আবশ্যিক’ হিসেবে তুলে ধরে। মার্কিন কংগ্রেসে American Israel Public Affairs Committee (AIPAC)-র মতো সংগঠন এই সহায়তা অব্যাহত রাখতে আইনপ্রণেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে— ফলে মানবিক বিপর্যয় উপেক্ষিতই থেকে যায়।
সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমিত আকারের একটি যুদ্ধ হয়ে গেল। ৮৭ ঘণ্টার এই সংঘাত শুধু আকাশেই নয়, অর্থনীতির মাটিতেও যুদ্ধের রূপ নিয়েছিল। শেয়ারবাজারে ধস, বিমান চলাচলে স্থবিরতা, সরবরাহ শৃঙ্খলার ভেঙে পড়া এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পিছু হটে যাওয়ায় বোঝা গেছে— আধুনিক যুদ্ধের প্রকৃত মূল্য শুধু ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র বা যুদ্ধবিমানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ঘণ্টায় এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের ক্ষতি এই ৮৭ ঘণ্টার সংঘাতকে বিশ্বের কাছে এক করুণ বাস্তবতা হিসেবে তুলে ধরেছে।[9] ভারত বা পাকিস্তান— কারও অর্থনৈতিক অবস্থাই ভালো নয়। পাকিস্তান কার্যত দেউলিয়া রাষ্ট্র হওয়ার পথে। তবুও যুদ্ধপ্রস্তুতি থেমে নেই।
২০২৪ সালে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের মধ্যে এক অসম ভারসাম্য লক্ষ করা গেছে, যা উপমহাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ক্রমাগত অনিশ্চিত করে তুলছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI)-এর মতে, ২০২৪ সালে ভারতের সামরিক ব্যয় ছিল প্রায় ৮৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার— যা বৈশ্বিক তালিকায় চতুর্থ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। একই সময়ে পাকিস্তানের সামরিক ব্যয় ছিল ১১.৩ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ভারতের তুলনায় প্রায় আট ভাগের এক ভাগ।[10]
এই বিপুল ব্যবধান শুধু অস্ত্র সংগ্রহেই নয়, প্রতিফলিত হয় যুদ্ধসক্ষমতা, প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতাতেও। ভারতের সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা বাজেটের বড় অংশই ব্যয় হয় দেশীয় অস্ত্রনির্মাণ ও সীমান্ত প্রযুক্তির উন্নয়নে, যেখানে পাকিস্তানকে বেশি নির্ভর করতে হয় চিন ও অন্যান্য তৃতীয় বিশ্বের দেশের উপর। এই অসম প্রতিযোগিতা শুধু দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনাই বাড়ায় না, বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় এক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে— যা অস্ত্রব্যবসার জন্য ক্রমেই এক লাভজনক ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আজ ভেঙে পড়ছে মূলত দেশটির গভীর অর্থনৈতিক সংকট, ঋণের বোঝা এবং কমে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কারণে— যা সামরিক খাতে ব্যয় ধরে রাখা বা বাড়ানোর ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে সীমিত করেছে। গত এক দশকে পাকিস্তানের অর্থনীতি কাঠামোগত দুর্বলতায় ভুগছে— যেমন কর রাজস্বের ঘাটতি, বিপুল বাজেট ঘাটতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বিদেশি ঋণের উপর নির্ভরশীলতা। ২০২৪ সাল নাগাদ পাকিস্তান তার ইতিহাসের অন্যতম গভীর মন্দার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি দ্বিঘাত অঙ্কে পৌঁছেছে, মুদ্রার মান ক্রমাগত পড়ে যাচ্ছে এবং বৈদেশিক সাহায্যও দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।[11] তবুও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলিকে লালন-পালন এবং সমরাস্ত্র ক্রয়ে কোনও খামতি নেই ইসলামাবাদের।
অন্যদিকে ভারতের শীর্ষ নেতারা ইউরোপ, আমেরিকা বা রাশিয়া সফরে গেলেই বড় বড় অস্ত্রক্রয় চুক্তি করে আসেন। অথচ ২০২৪ সালের মার্চে ভারত সরকারের মোট জাতীয় ঋণের পরিমাণ পৌঁছেছিল ১৬৮.৭২ ট্রিলিয়ন টাকায়। বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে এই ঋণ বেড়ে দাঁড়াবে ১৮১.৬৮ ট্রিলিয়ন টাকায়।[12] সরকার আর্থিক ঘাটতি সামলাতে ক্রমাগত ঋণ নিচ্ছে, ফলে ঋণের বোঝা বাড়ছে— তবুও অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে কোনওরকম খামতি দেখা যাচ্ছে না।
সব যুদ্ধই দেখিয়েছে— সংঘাত যত দীর্ঘ হয়, অস্ত্রব্যবসায়ীদের লাভ তত বেশি হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ প্রকাশ্যেই যুদ্ধ অবসানের চেষ্টাকে নিরুৎসাহিত করে, কারণ স্থায়ী শান্তি মানে অস্ত্রের চাহিদার পতন। মার্কিন ভাষ্যকার ও চিন্তাবিদ নাওম চমস্কির কথাই মনে পড়ে: “War is a way to transfer public funds to private pockets.” যুদ্ধ মানে হচ্ছে জনসম্পদ থেকে কর্পোরেট পুঁজিতে এক নীরব, অদৃশ্য অথচ ভয়াবহ অর্থনৈতিক স্থানান্তর।
গাজার ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের নিচে চাপা পড়া শিশুদের মরদেহ, কিংবা ইউক্রেনের বিধ্বস্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাইয়ের নিচে কেবল হতাশা নয়— লুকিয়ে আছে বহুজাতিক অস্ত্রব্যবসার অসৎ হিসাব। এই যুদ্ধগুলো একদিকে যেমন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে কর্পোরেট শেয়ারহোল্ডারদের জন্য হয়ে উঠেছে মুনাফার উৎস।
যখন যুদ্ধ একটি ব্যবসায় রূপ নেয়, তখন শান্তি হয়ে ওঠে এক হুমকি। রাষ্ট্রগুলো যখন অস্ত্র উৎপাদনকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়, তখন যুদ্ধ কেবল প্রতিরক্ষা নয়, বরং এক পণ্যে পরিণত হয়— যার ভোক্তা বিশ্বব্যাপী, কিন্তু যার খেসারত দিতে হয় কয়েকটি ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের সাধারণ মানুষকে।
ইউক্রেন ও গাজার ধ্বংস সেই যুদ্ধ-বাণিজ্যের নির্মম বিজ্ঞাপন।
যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বিশ্ব বারবার শিক্ষা নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগগুলো অস্ত্রনির্ভর ভূরাজনীতির কষাঘাতে প্রায়শই ব্যর্থ হয়। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত Arms Trade Treaty— যার উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক অস্ত্রবাণিজ্যের ওপর মানদণ্ড আরোপ করে যুদ্ধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ করা— তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িতই হয়নি, বিশেষত সবচেয়ে বড় অস্ত্র উৎপাদনকারী রাষ্ট্রগুলোর অনীহার কারণে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি স্বাক্ষর করলেও ২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসন তা প্রত্যাহার করে নেয়। চিনের মতো শক্তিধর দেশ বহুদিন এ বিষয়ে নির্লিপ্ত ছিল। রাশিয়া ও ভারতের মতো দেশ শুরু থেকেই এটিকে প্রত্যাখ্যান করে।[13]
এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল— কে কার কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে, তা স্বচ্ছ করা এবং যেন সেই অস্ত্র গণহত্যা, শিশু সৈনিক নিয়োগ বা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজে ব্যবহৃত না হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, এই ধরনের চুক্তিগুলিকে বারবার দুর্বল করে তুলেছে কর্পোরেট লবি এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক শক্তিগুলো।
Amnesty International ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে,
Major arms exporters are either circumventing the Arms Trade Treaty or never committing to it, rendering its enforcement mechanisms hollow.
জাতিসংঘের শান্তি প্রক্রিয়াও প্রায়শই শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর ভেটো ক্ষমতার হাতে বন্ধক থাকে। যেমন ২০১৪ সালে গাজার ওপর ইজরায়েলের বোমা হামলার সময় জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশে বাধা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যার ফলে ইজরায়েল আরও কয়েক সপ্তাহ অবিরত হামলা চালায়। শুধু তাই নয়, নিরাপত্তা পরিষদে শান্তি প্রতিষ্ঠার বহু প্রস্তাব— বিশেষত সিরিয়া, ইয়েমেন কিংবা ইউক্রেন নিয়ে— বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে বড় শক্তিগুলোর দ্বৈতনীতি ও কূটনৈতিক হস্তক্ষেপে।
জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আন্নান একবার বলেছিলেন, “We don’t produce weapons for peace. Every weapon is ultimately produced to be used.” অর্থাৎ, অস্ত্রের উৎপাদনের শেষ লক্ষ্য সেটি ব্যবহার করা— আর সেটির অর্থ যুদ্ধ। জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ভেবার (Max Weber) যুদ্ধকে রাষ্ট্রীয় সহিংসতা প্রয়োগের বৈধ উপায় হিসেবে ব্যাখ্যা করলেও, আধুনিক বিশ্লেষকরা আজ এটিকে অর্থনৈতিক মুনাফার উৎস হিসেবেই চিহ্নিত করছেন।
বিশ্বব্যাপী অস্ত্রশিল্পের আর্থিক পরিসর এতটাই বড় যে বহু দেশের অর্থনীতি এখন এর ওপর নির্ভরশীল। ২০২৪ সালে স্টকহোম পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বৈশ্বিক অস্ত্রবাণিজ্যের বাজার প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অংশই ৪০ শতাংশের বেশি। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১০টি অস্ত্রনির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এর মধ্যে Lockheed Martin, Raytheon Technologies, Boeing, Northrop Grumman এবং General Dynamics সবচেয়ে প্রভাবশালী। এককভাবে Lockheed Martin-এর ২০২৩ সালের রাজস্ব ছিল ৬৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যার প্রায় পুরোটাই এসেছে সামরিক বিমান, যুদ্ধবিমান (যেমন F-35), ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিক্রি থেকে।[14]
এই কোম্পানিগুলোর গ্রাহকের তালিকায় রয়েছে বিশ্বের প্রায় সব বড় শক্তিধর রাষ্ট্র এবং বহু সংঘাতপীড়িত অঞ্চলও। ফলে আন্তর্জাতিক পরিসরে যুদ্ধের সমাপ্তি মানে অনেক দেশের জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা— আর এ কারণেই শান্তিপ্রক্রিয়াগুলো ঠান্ডাঘরে পড়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা একে বলেন military-industrial-political complex— যেখানে রাষ্ট্র, কর্পোরেশন এবং নিরাপত্তা কাঠামো মিলিতভাবে যুদ্ধকে টিকিয়ে রাখার একটি কাঠামো গড়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন কংগ্রেসে এমন বহু সদস্য রয়েছেন, যাঁরা সরাসরি অস্ত্র কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার অথবা তাঁদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের নির্বাচনী অনুদান গ্রহণ করেন। এর ফলে কংগ্রেস যুদ্ধের সমাপ্তির পরিবর্তে নতুন সামরিক বরাদ্দ অনুমোদনে আগ্রহী থাকে।
ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে একাধিক মার্কিন সিনেটর Lockheed Martin ও Raytheon-এর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন— যাদের অস্ত্রেই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে কিয়েভ। আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ার যুদ্ধের সময় General Dynamics, Boeing, Raytheon ইত্যাদি কোম্পানি বিপুল পরিমাণে চুক্তি পেয়েছে। একদিকে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয়, অন্যদিকে এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্য ও মুনাফা বেড়ে চলে।[15]
বিশ্বজুড়ে সামরিক খাতে ব্যয় নতুন মাত্রা অতিক্রম করেছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI) ২০২৫ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ পৌঁছেছে ২.৭১৮ ট্রিলিয়ন ডলারে— যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৯.৪ শতাংশ বেশি। এটি ১৯৮৮ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বার্ষিক বৃদ্ধি।[16]
এই বিপুল পরিমাণ ব্যয় বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, বিশ্বের দেশগুলো প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭.৪৫ বিলিয়ন ডলার এবং প্রতি মিনিটে প্রায় ৫.১৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে শুধুমাত্র সামরিক খাতে। এই ব্যয়ের সবচেয়ে বড় অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র, যার একক সামরিক ব্যয় ২০২৪ সালে ছিল ৯১৬ বিলিয়ন ডলার। এর পরে রয়েছে চিন, রাশিয়া, ভারত ও সৌদি আরব। ইউক্রেন যুদ্ধ, ইজরায়েল-গাজা সংঘর্ষ, পূর্ব এশিয়ায় উত্তেজনা এবং সামগ্রিকভাবে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা— এই ব্যয়বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এই পরিসংখ্যান বিশ্বে নিরাপত্তাহীনতা ও অস্ত্র প্রতিযোগিতার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে, যেখানে মানবিক খাতের তুলনায় সামরিক বাজেট বহু গুণ বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে। SIPRI-র গবেষণা এই প্রবণতার প্রতি একটি সতর্ক সঙ্কেত হিসেবে কাজ করছে— যেখানে যুদ্ধ, প্রতিরক্ষা ও অস্ত্রায়নের দুনিয়ায় রাষ্ট্রগুলো ক্রমাগত বেশি সম্পদ বিনিয়োগ করছে, অথচ জলবায়ু সংকট, স্বাস্থ্যসেবা কিংবা দারিদ্র্য বিমোচনের মতো জরুরি খাতগুলো তুলনায় অনেক বেশি অবহেলিত রয়ে যাচ্ছে।
শুধু আন্তর্জাতিক চুক্তিই নয়, শান্তির ধারণাটিও আজ একপ্রকার “পণ্য” হয়ে উঠেছে— যেখানে রাজনৈতিক দখলদারিত্ব, জাতিসংঘে প্রভাব এবং কর্পোরেট চাপ মিলেমিশে ‘যুদ্ধ’কে অনেক সময় নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
এই যুদ্ধ-ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কর্পোরেট মিডিয়া। তারা ‘শত্রু’র ভয় দেখিয়ে যুদ্ধকে বৈধতা দেয়— যেমনটা দেখা গেছে ইরাক যুদ্ধের সময়। পরে প্রমাণিত হয় যে, ইরাকের কোনও গণবিধ্বংসী অস্ত্র ছিল না,[17] তবু সেই যুদ্ধে অস্ত্রপ্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোর আয় বহুগুণ বেড়ে যায়। ব্রিটিশ সাংবাদিক জন পিলজার (John Pilger) বলেছেন, “Journalism has become war propaganda. And behind the propaganda are the war merchants.” অর্থাৎ, সাংবাদিকতা অনেক সময়েই যুদ্ধের প্রচারণায় পরিণত হয়, আর সেই জনমত তৈরি ও ভয়ের সংস্কৃতি ছড়ানোর নেপথ্যে থাকে অস্ত্রবাণিজ্যের স্বার্থ।[18]
বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ নিঃসন্দেহে একটি ব্যবসা— এটি আর শুধুমাত্র মানবিক দুর্যোগ নয়, বরং কর্পোরেট লাভের এক বিরাট সুযোগ। অস্ত্র বিক্রির জন্য দরকার নতুন বাজার, আর সেই বাজার তৈরির উপায় হল সংঘাত, শত্রু এবং অনিশ্চয়তার পরিবেশ সৃষ্টি। যখন যুদ্ধের পরিকল্পনা রাজনীতি নয়, অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, তখন মানবতাই হয়ে পড়ে সবচেয়ে বড় শিকার।
অতএব, যুদ্ধ বন্ধে শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছাই নয়, প্রয়োজন অস্ত্রশিল্পের ওপর কঠোর আন্তর্জাতিক নজরদারি, স্বচ্ছতা, এবং কর্পোরেট প্রভাবমুক্ত কূটনৈতিক কাঠামো। তা না হলে, ‘শান্তি’ নামক শব্দটি শুধু কূটনৈতিক ঘোষণায় রয়ে যাবে, আর বাস্তবে চলতেই থাকবে কর্পোরেট মুনাফার রক্তাক্ত খেলা।
[1] Lanlan, Huang. GT Investigates: How much have US ‘Big Five’ weapon manufacturers gained from arms sales to Ukraine? Global Times. Aug 3, 2023.
[2] এই বিক্রয় চুক্তিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হল:
- চেক প্রজাতন্ত্র: ২৪টি F-35A যুদ্ধবিমান, মোট আনুমানিক মূল্য $৫.৬ বিলিয়ন।
- জার্মানি: ৩৫টি F-35A যুদ্ধবিমান, আনুমানিক মূল্য $৮.৮৩ বিলিয়ন।
- রোমানিয়া: ৩২টি F-35A যুদ্ধবিমান, আনুমানিক মূল্য $৬.৫ বিলিয়ন।
পড়ে দেখতে পারেন: Smith, Rich. Lockheed Martin Lands New Multi-Billion Dollar Deal in Europe. The Motley Fool. Jul 30, 2023.
[3] প্রতিস্থাপন চুক্তির মূল উদাহরণসমূহ:
- Javelin ক্ষেপণাস্ত্র: Lockheed Martin ও Raytheon-এর যৌথ উদ্যোগে $1.3 বিলিয়ন মূল্যের চুক্তি হয়েছে, যা ২০২৩ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে ৪,০০০-এর বেশি Javelin ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের জন্য। এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হল ইউক্রেনে সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিস্থাপন।
- Patriot GEM-T ক্ষেপণাস্ত্র: Raytheon-এর সঙ্গে NATO Support and Procurement Agency (NSPA) $478 মিলিয়ন মূল্যের চুক্তি করেছে, জার্মানির ইউক্রেনকে সরবরাহ করা Patriot ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিস্থাপনের জন্য।
- AIM-120 AMRAAM ক্ষেপণাস্ত্র: Raytheon (বর্তমানে RTX) $1.2 বিলিয়ন মূল্যের চুক্তি পেয়েছে, যার একটি অংশ ইউক্রেনের জন্য নির্ধারিত। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি NASAMS সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়, যা ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
- 155mm হাউইটজার গোলাবারুদ: General Dynamics এবং অন্যান্য কোম্পানিগুলি $901 মিলিয়ন পর্যন্ত চুক্তি পেয়েছে ইউক্রেনকে সরবরাহ করা গোলাবারুদের প্রতিস্থাপনের জন্য।
পড়ে দেখতে পারেন: US Arms Firms Reportedly Given $9.7 Billion to Replace Weapons Sent to Ukraine. Sputnik International. Aug 1, 2023.
[4] Raytheon CEO Gregory Hayes: How Ukraine Has Highlighted Gaps in US Defense Technologies. Harvard Business Review. Mar 25, 2022.
[5] Moore, David. Here Are the Members of Congress Invested in War. Sludge. Sep 12, 2024.
[6] Dowling, Paddy. Dirty secret of Israel’s weapons exports: They’re tested on Palestinians. Al Jazeera. Nov 17, 2023.
[7] বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন: From the Gazan Laboratory to the World’s Borders: A Conversation with Jeff Halper. ICAHD. Nov 7, 2023. Halper-এর এই বিশ্লেষণ তার বই War Against the People: Israel, the Palestinians and Global Pacification (Pluto Press, 2015)-এও বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। এই বইয়ে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে ইজরায়েলি অস্ত্রশিল্প দখলদারিত্বকে একটি অর্থনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছে।
[8] Tarhan, Muhammet; Hacıcaferoğlu, İbrahim Hamdi. US provided $17.9B in military aid to Israel since October 2023: Report. AA. Oct 30, 2024.
[9] এই সংঘাতের সময়, ভারতের মোট আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৮৩ বিলিয়ন ডলার এবং পাকিস্তানের ক্ষতি প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার হিসেবে অনুমান করা হয়েছে। পড়ুন: Shahid, Gazi Abbas. How much did 87-hour long India-Pakistan conflict cost? Know how much each country spent on weapons, and what losses they incurred. India.com. May 25, 2025.
[10] উল্লিখিত SIPRI-র “Trends in World Military Expenditure, 2024” শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায় বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় ২০২৪ সালে ৯.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২,৭১৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা SIPRI-র রেকর্ড অনুযায়ী সর্বোচ্চ। এই বৃদ্ধির পেছনে ইউক্রেন যুদ্ধ, ইউরোপীয় দেশগুলির সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
[11] পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা, চুম্বকে:
- কর রাজস্বের ঘাটতি: পাকিস্তানের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৯.৫%, যা ভারতের (১৬%) ও বাংলাদেশের (১২%) তুলনায় অনেক কম। এই নিম্ন কর সংগ্রহের হার রাজস্ব ঘাটতির একটি প্রধান কারণ।
- বাজেট ঘাটতি ও ঋণের বোঝা: ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত, পাকিস্তানের মোট সরকারি ঋণ জিডিপির প্রায় ৭৪.৩% ছিল। ঋণ পরিষেবার খরচ প্রায় ৫.২ ট্রিলিয়ন রুপি, যা পুরো ফেডারেল সরকারের রাজস্ব আয়ের চেয়েও বেশি।
- মূল্যস্ফীতি: ২০২৩ সালের মে মাসে পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতির হার ৩৮% ছাড়িয়ে যায়, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রায় ৩০% ছিল।
- মুদ্রার অবমূল্যায়ন: IMF-এর নির্দেশে রুপির কৃত্রিম মান নির্ধারণ বাতিল করার পর, রুপির মান দ্রুত হ্রাস পায়, যা আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি করে এবং মূল্যস্ফীতিকে ত্বরান্বিত করে।
- বিদেশি ঋণ: ২০২৪ সালে পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণ ১৩৩.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা জিডিপির ৩৬.৪%। এই ঋণ ২০২৯ সালের মধ্যে তিন গুণ হয়ে ৪১১.২৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।
- বিদেশি সাহায্য হ্রাস: পাকিস্তান বারবার IMF-এর সাহায্য চেয়েছে, তবে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় সাহায্যপ্রাপ্তি বিলম্বিত হয়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে IMF-এর সঙ্গে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেইলআউট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অবস্থা
- অর্থনৈতিক সংকট: ২০২৪ সালে পাকিস্তান অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। IMF-এর সাহায্য সাময়িক স্বস্তি দিলেও, সাধারণ জনগণ এখনও এর সুফল অনুভব করতে পারেনি।
আগ্রহী পাঠক পড়ে দেখতে পারেন: Khan, Maheen. Reassessing Pakistan’s Economic Trajectory: Can Uraan Pakistan Break the Cycle of Debt and Dependency? South Asian Voices. Mar 17, 2025.
[12] Debt position of the Government of India. Indiabudget.gov.in.
[13] Vestner, Tobias. The New Geopolitics of the Arms Trade Treaty. Arms Control Association. Dec, 2020.; Bajpaee, Dr Chietigj & Toremark, Lisa. India-Russia Relations. Chatham House. Oct 17, 2024.
[14] দ্রষ্টব্য, টীকা ১০।
[15] Coburn, Noah. et al. Corporate Power, Profiteering, and the “Camo Economy”. Watson Institute. Sep, 2021; Sajjadiankhah, Sahara. How U.S. businesses profit from war worldwide. The Reynolds Center. Dec 15, 2023.
[16] দ্রষ্টব্য, টীকা ১০।
[17] Wilkins, Brett. 20 Years Later, the Stain of Corporate Media’s Role in Promoting Iraq War Remains. Common Dreams. Mar 20, 2023.
[18] এই প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক ডেভিড বারস্টো-র একটি বিশদ প্রতিবেদন সবিশেষ উল্লেখনীয়। এই প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় যে পেন্টাগন প্রায় ৭৫ জন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বিশ্লেষককে নিয়োগ দিয়েছিল, যারা বিভিন্ন টেলিভিশন নেটওয়ার্কে “স্বতন্ত্র বিশ্লেষক” হিসেবে উপস্থিত হয়ে ইরাক যুদ্ধ এবং বুশ প্রশাসনের সামরিক নীতির সমর্থনে বক্তব্য দিতেন। এই বিশ্লেষকদের অনেকেরই প্রতিরক্ষাশিল্পের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক ছিল, যা দর্শকদের কাছে প্রকাশ করা হয়নি। পেন্টাগন তাদেরকে গোপন ব্রিফিং, ইরাক সফর এবং শ্রেণিবদ্ধ গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে প্রভাবিত করেছিল। পড়ে দেখুন: Barstow, David. Behind TV Analysts, Pentagon’s Hidden Hand. NYT. Apr 20, 2008.