শিবসেনা বনাম শিবসেনা

শঙ্কর রায়

 



সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক

 

 

 

 

মহা বিকাশ আগাড়ি (এমভিএ) শুধু শিবসেনার ইতিহাসে নয়, গত অর্ধ শতাব্দীর মহারাষ্ট্রে এক নতুন রাজনৈতিক নিরীক্ষা, যদিও তা আড়াই বছরের বেশি টেঁকেনি। শিবসেনা তার একদা ঘোর শত্রু ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ও জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস (এনসিপি)-এর সঙ্গে সরকার গঠন করে সেই নিরীক্ষা শুরু করে। উদ্ধব ঠাকরের মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ও বিধান পরিষদ থেকে ইস্তফার অর্থ এমভিএ নিরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে, এখনই এমন নিদান দেওয়া যায় না। আড়াই বছরে এমন একটি মোর্চা সরকার চালাল যার তিন শরিকের রাজনৈতিক মতাদর্শ পরস্পরবিরোধী। অথচ কখনও মোর্চার অস্তিত্ব টলমল করেনি। খেয়োখেয়ি বা ক্ষমতার লড়াই হয়নি।

শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের পুত্র উদ্ধব ২০১৪ সালেই বুঝতে পেরেছিলেন যে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়া ও ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র বিপুল ভোটে জেতার সময় থেকে মহারাষ্ট্রে শিবসেনার প্রভাব কমছে এবং সেই প্রভাবক্ষেত্রে ভাগ বসাচ্ছে বিজেপি। সেটা বোঝা গিয়েছিল ২০১৪-র বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই। বিজেপি জিতেছিল ১২২টি আসনে আর শিবসেনা ৬৩টি আসনে জেতে। পাঁচ বছর আগে ছিল বিজেপি ৪৬ ও শিবসেনা ৪৫। আর ২০১৯-এ বিজেপি ১০৬টি আসনে ও শিবসেনা ৫৬টিতে জেতে। শিবসেনার ক্ষমতাকেন্দ্র বালাসাহেব ঠাকরের বাড়ি ‘মাতোশ্রী’তে যেন ফাটল ধরল। সেই সময় উদ্ধব ঠাকরে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী হবেন শিবসেনা মনোনীত, ২০১৪-য় দুই দলের মোর্চা জেতার পরে মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। আড়াই বছর আগে উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি করলে দুই দলের জোট ভেঙে যায় এবং শিবসেনা। উদ্ধবের সেই সিদ্ধান্তকে বিজেপি নেতৃত্ব বিশ্বাসঘাতকতা মনে করলেও শিবসেনার পক্ষে এই সিদ্ধান্ত অনিবার্য ছিল। কারণ উদ্ধবের কাছে শিবসেনাকে টিঁকিয়ে রাখার ঔচিত্যও ছিল। এর মধ্যে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে বিজেপি-শিবসেনা বন্ধুত্বের সঙ্গে মোদিরাজ কায়েম হওয়ার পরে সেই বন্ধুত্ব ছিল কি না সেটা বিচারের সময় এসেছে। কারণ মোদিরাজ বিরোধীদের তো বটেই, শরিকদের অস্তিত্বের (আইডেন্টিটি) ওপরেও আঘাত হেনেছে। পাঞ্জাবে শিরোমনি অকালি দল ও বিহারে জনতা দল (ইউনাইটেড) মোদি আমলেই দুর্বল হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর পুত্র ও এমভিএ সরকারের অন্যতম মন্ত্রী আদিত্য ঠাকরে এনডিটিভি সংবাদ চ্যানেলে ২১ মিনিটের সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাঁদের সরকার গণমুখী উন্নয়ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি লালন, ভ্রমণ শিল্পের প্রসার, পরিবেশপ্রযত্নমূলক (মূলত ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে) কর্মসূচির উপর জোর দিয়ে একটি দুর্নীতিমুক্ত ও জনকল্যাণমুখী প্রশাসন গড়ে তুলেছিল। ওই সাক্ষাৎকার উদ্ধবের নতুন ভাবনা (সাবেক শিবসেনার উগ্রতা ও বিরোধীদের প্রতি শত্রুতার ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে আসা) বিজেপি নেতৃত্ব (পড়ুন নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর পদানুগত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্‌) এতে অস্বস্তি বোধ করছিল, কারণ এমভিএতে হিন্দুত্ববাদী শিবসেনা থাকলেও ওই মোর্চা সরকার বিজেপি হুকুমৎ ধারার উল্টোদিকে চলছিল, যাতে লাভবান হচ্ছিল কংগ্রেস ও এনসিপি।

উদ্ধব এক মাস আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন যে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এমভিএ সরকার ভাঙার এক চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে এবং শিবসেনা বিধায়কদের মধ্যে বিভেদের ছক তৈরি করেছে। রাজ্যসভা নির্বাচনে বিজেপির পাঁচটি আসনে জেতা সম্ভব ছিল না, যদি শিবসেনা বিধায়কদের একাংশ বিজেপি প্রার্থীদের ভোট না দিতেন। সেটা স্পষ্ট হল যখন একনাথ শিন্ডেকে সামনে রেখে ৪০ জনের বেশি শিবসেনা বিধায়ককে টোপ দিয়ে প্রায় কিনে নিল বিজেপি, যদিও এই দলবদলুরা বিজেপিতে যোগ না দিয়ে পাল্টা শিবসেনা তকমা নিল— শিবসেনা (বালাসাহেব ঠাকরে), যেন উদ্ধব নন, ওই দলবদলুরাই সাচ্চা শিবসেনা। শিন্ডের নেতৃত্বে তথাকথিত বিদ্রোহের পেছনে যে ‘ডার্টি মানি’ (যা কালো টাকার চেয়েও কালো) সক্রিয় ছিল, এ বিষয়ে বিজেপি বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর সদস্য ও সমর্থক ছাড়া সকলেই একমত। প্রায় ৪০ জন শিবসেনা বিধায়ককে চার্টার্ড বিমানে কড়া পুলিশি (কেন্দ্রীয়) নিরাপত্তায় মোদি-শাহ-র রাজ্য গুজরাটের সুরাটে আর সেখান থেকে আবার চার্টার্ড বিমানেই গুয়াহাটিতে নিয়ে গিয়ে পাঁচতারা র‍্যাডিশ্যন হোটেলে আটকে রাখা (তাদের সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলা দূরস্থান, মুঠোফোনও ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি), যার জন্য হোটেলের তিন-চতুর্থাংশ ঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছিল (প্রতিদিন যার ভাড়া আট লক্ষ টাকারও বেশি, খানাপিনা বাদে)। সেখান থেকে দুদিনের জন্যে গোয়ায় বিলাসবহুল হোটেলে দুদিন আটকে রাখা। এসবের পেছনে যে বিজেপি ছিল বা আছে, তার প্রমাণ অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিশেষ তত্ত্বাবধানে পুরো ‘অপারেশন’ সংগঠিত হল। অসমে প্রায় অর্ধেক অঞ্চলে যখন বন্যা ভয়াবহ আকার নিচ্ছে, তখন তিনি বন্যা মোকাবিলার কর্তব্য অবহেলা করে পাঁচতারা হোটেলে এসে দলবদলুদের স্বাগত জ্ঞাপন ও মদত দিতে গিয়েছিলেন। তার প্রতিবাদে কংগ্রেসের যুব সংগঠন ন্যাশনাল স্টুডেটস ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়ার সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে পথে নেমেছিল।

কিন্তু মহারাষ্ট্রের নব্য মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে কোথা থেকে এত টাকা পেলেন? বদ্ধ পাগলও বিশ্বাস করবে না যে এই পালটি খাওয়া বিধায়কেরা শুধু আদর্শগতভাবে এমভিএ মোর্চা সরকারের পতন ঘটাল। বিপুল টাকার লেনদেন হয়েছে— মুম্বাইয়ের তথা ভারতের প্রধান শেয়ারবাজার দালাল স্ট্রিটে কান পাতলে শোনা যাচ্ছিল যে কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে (যদিও এর সত্যতা যাচাই করা প্রায় অসম্ভব)। এই লেনদেন ছাড়াও চার্টার্ড বিমান ভাড়া, হোটেল খরচ ইত্যাদি শিন্ডে কোথা থেকে পেলেন, এটা কেন সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশ্যন (সিবিআই) তদন্ত করছে না? কারণ সিবিআইকে সুপ্রিম কোর্ট ‘খাঁচাবন্দি’ সংস্থা আখ্যা দিয়েছে, যার কর্তারা ও কর্তাধীন গোয়েন্দারা ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ, যাদের প্রভুভক্তি গোয়েন্দা বিভাগের ‘স্নিফার’ (প্রধানত ডোবারম্যান ও জর্মন শেপার্ড বা অ্যালসেশিয়ান)-দের চেয়েও বেশি।

মাসখানেক আগে উদ্ধব ঠাকরে বলেছিলেন বিজেপির মিত্র থেকে শিবসেনার ২৫টা বছর নষ্ট হয়েছে, অর্থাৎ বালাসাহেবের সময়েই এটা বোঝা হয়ে গিয়েছিল। সেই ভাঙন-ছক রুখতেই ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের পরে বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছিল শিবসেনা। নতুন পথ ও নতুন নিরীক্ষাকল্পে এনসিপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে নতুন জোট গড়ে মহা বিকাশ আগাড়ি সরকার গঠন করেছিল। তার আগে উদ্ধব দাবি করেছিলেন বিজেপির সঙ্গে জোট গড়লেও শিবসেনা মহারাষ্ট্রে সরকারে নেতৃত্ব দেবে অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী হবেন শিবসেনা মনোনীত কেউ। মোদি-শাহ চক্র তা মানেনি। তাই এমভিএ গড়া হয়েছিল ও তদনুযায়ী উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রী হন। যেহেতু তিনি নির্বাচিত বিধায়ক ছিলেন না, তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার ছ-মাসের মধ্যে মহারাষ্ট্র বিধান পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

ইতিহাসের এমন পরিহাস যে সেই বিজেপি নেতৃত্ব এখন পাল্টা-শিবসেনা গোষ্ঠীর নেতা একনাথ শিন্ডে-কে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছে, যা আড়াই বছর আগে কিছুতেই করতে রাজি হয়নি। যেদিন ঘোষণা হয় যে শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, সেদিন সকাল অবধি ঠিক ছিল দেবেন্দ্র ফড়নবিশই মুখ্যমন্ত্রী। কারণ বিজেপি বিধায়ক সংখ্যা ১০৬ আর দলবদলুদের সংখ্যা ৫০-এর নীচে। ফড়নবিশ এক বিবৃতিতে বলেন তিনি শিন্ডে সরকারের মন্ত্রী হবেন না,  অথচ মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি মোদি-শাহ ও বিজেপি সভাপতি জয়প্রকাশ নাড্ডার কাছে প্রায় নাকখত দিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী হতে রাজি হয়ে যান। ভারতের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে এর নজির নেই— ইতিপূর্বে কোনও মুখ্যমন্ত্রীই পরে উপমুখ্যমন্ত্রী হতে রাজি হননি।

যাই হোক, উদ্ধব নিজে থেকেই আস্থা ভোটের আগেই ইস্তফা দেন, তার আগে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ছেড়ে পৈতৃক বাড়ি ‘মাতোশ্রী’তে ফিরে যান। আস্থা ভোট আপাতত স্থগিত রাখার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল শিবসেনা। কিন্তু বিস্ময়কর এই যে জরুরি ভিত্তিতে মামলা শুনেও হস্তক্ষেপ করতে রাজি হয়নি শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ। উলটে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে আস্থা ভোটের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দেয়। উদ্ধব মুখ্যমন্ত্রী ও বিধান পরিষদের সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দেন। ফলে উদ্ধবের আস্থা ভোট নেওয়ার প্রয়োজন হল না। সুপ্রিম কোর্ট কার্যত একনাথ শিন্ডের আইনজীবী নীরজ কল-এর বক্তব্য মেনে নেয় যে ‘আস্থা ভোট হলে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ঘোড়া কেনাবেচা হতে পারে।’ কিন্তু প্রায় ৪০ জন বিধায়ককে চার্টার্ড বিমানে সুরাট-গুয়াহাটি-গোয়ায় নিয়ে যাওয়ার মধ্যে যে ঘোড়া কেনাবেচা হতে পারে, তা শীর্ষ আদালতের ভাবনায় ছিল বলে মনে হচ্ছে না। এও এক আশ্চর্য! সেই পরিস্থিতিতে উদ্ধব রাজনৈতিক সম্ভ্রম বজায় রেখে ইস্তফা দেন। আদিত্য ঠাকরে পূর্বোক্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শিবসেনার লড়াই বিজেপি-আরএসএস (নাম না করলেও)-এর বিভেদের রাজনীতি ও সংবিধান-পদদলনের বিরুদ্ধে। তাহলে কি উদ্ধব ঠাকরে দাঙ্গাবাজ ও ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণের বিপজ্জনক হিন্দুত্ব নীতির বিরুদ্ধে সহনশীল হিন্দুত্বের পথে শিবসেনাকে চাঙ্গা করার কথা ভাবছেন? এমভিএ সরকারের আমলে শিবসেনার ক্যাডার বাহিনি যে সংযত ছিল এটা অস্বীকার করা যায় না। উদ্ধবের আচরণে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের মতো অগ্রজ রাজনীতিবিদও কংগ্রেসকে শীর্ষে রেখে ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা হওয়ার কথা বলেছেন।

উদ্ধব ঠাকরেকে জোরদার সমর্থন করেছেন বলিউডের তিন অভিনেত্রী— স্বরা ভাস্কর, ঊর্মিলা মাতণ্ডকর ও কুব্রা সেইট। স্বরা টুইট করেছেন— U were unbiased & a responsible Leader of the State, transparent, communicative & assuring during COVID-19 crisis. Ur conduct turned critics like me into admirers. Work of Maha adm under u has been laudable. Go long & go strong.

ঊর্মিলা লিখেছেন— Thank you @OfficeofUT ji for your leadership in the most trying times of covid n keeping our state away from communal hatred n bigotry. Your leadership has been exemplary, unbiased, courageous, responsible, transparent, communicative Jai Maharashtra.

মহারাষ্ট্রর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখের ছেলে ও অভিনেতা রীতেশ দেশমুখ টুইটে বলেছেন— A big thank you to Shri #UddhavThackeray ji for being progressive, proactive, and caring Chief Minister of Maharashtra. Thank you for guiding & communicating with us citizens during the most difficult and dark times that humanity has ever faced -the covid pandemic.

প্রায় অনুরূপ বার্তা পাঠিয়েছেন আরেক অভিনেতা প্রকাশ রাজ। অনেকের কাছেই মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের একটা উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।

এই প্রতিবেদক কোনও দলের সমর্থক নয়, শিবসেনার তো নয়ই। কিন্তু উদ্ধব ঠাকরের হিন্দুত্বনীতির অন্যতর প্রচার ও রূপায়ণ (যার মধ্যে কিছুটা হলেও পরমতসহিষ্ণুতা আছে) কোন পথে বাঁক নেয়, তা সধৈর্যে অবলোকনের পক্ষপাতী। এই নিরীক্ষার মধ্যে হিন্দুত্বের ভিতরে অন্য এক গণতান্ত্রিক হিন্দুত্ব থাকতে পারে কি না, তা জানি না। নাও থাকতে পারে। আবার থাকতেও পারে। উদ্ধব ঠাকরের লড়াই এখন শিবসেনার শুদ্ধতা প্রযত্নের সংগ্রাম। বালাসাহেব থাকলে কিছুতেই কংগ্রেস ও/অথবা এনসিপির সঙ্গে জোট বাঁধতে রাজি হতেন না, কারণ ঐ দু দলকে তিনি শত্রু মনে করতেন। তিনি থাকলে কী করতেন, সেই ভবিষ্যদ্বাণী গজদন্তমিনারনিবাসী রাজনৈতিক পাণ্ডিত্যের বিষয় হলেও বাস্তবতা তার নিজের পথেই চলে। জোসেফ স্তালিন তো হিটলার-মুসোলিনিকে রুখতে সাম্রাজ্যবাদী গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিতালি পাতিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট আমলে সিপিআই(এম) নেতৃত্ব বামপন্থার তরলীকরণের পক্ষে ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি’র অছিলা মনে পড়ে নাকি। মার্ক্সের আজীবন ‘মাই মাস্টার’ হেগেল বলেছিলেন— এভরিথিং চেঞ্জেস, এক্সেপটিং চেঞ্জ ইটসেলফ।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4660 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...