কিয়েল, বোম্বাই-করাচি: দুই বিশ্বযুদ্ধের যবনিকা পতনে দুই নৌবিদ্রোহ, এক সংলাপ গঠনের চেষ্টা

অরুণ কে সিনহা

 

ভারত উপমহাদেশ বা জার্মানি— নৌবিদ্রোহ কোথাওই সফল হয়নি। মানুষের ইতিহাস শুধু যদি শাসকের  সাফল্যের মাপকাঠিতে বিচার করা হয়, তবে গোলাবর্ষণের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে ‘সভ্যতার’ আস্ফালনের ইতিবৃত্ত ছাড়া আধুনিক ইতিহাসে আর নতুন বিশেষ কিছু পাওয়া যাবে না। আর যদি মানবপ্রগতিকে বিদ্রোহের সংলাপ হিসাবে ভাবতে হয়, তবে আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে বিস্মৃত কিয়েলের বিদ্রোহ, বোম্বাই-করাচির সমুদ্র উপকূলের জাহাজিদের, শহুরে মজুরদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর বিস্মৃত ইতিহাসের দিকে আমাদের নজর দিতেই হবে। আজকের দিনে সমাজ পরিবর্তনের ভাবনায় এইসব বিদেহী আত্মার অকুণ্ঠ আত্মত্যাগকে স্থান দিতে হবে নিঃসঙ্কোচে। বর্তমান প্রবন্ধটি সেই উদ্দেশ্যে একটি ক্ষুদ্র বিনম্র প্রয়াস

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

৩. ভারতীয় উপমহাদেশের নৌবিদ্রোহ ও কিয়েল বন্দরের অভ্যুত্থান: তুলনা ও প্রাসঙ্গিকতা

আজকের ইন্টারনেটের যুগে ভারতীয় উপমহাদেশের নৌবিদ্রোহ এবং কিয়েল বন্দরের অভ্যুত্থান— উভয় বিষয়েই ইউটিউব ভিডিও, তথ্যচিত্র, ও বিশ্লেষণাত্মক নিবন্ধের অভাব নেই। ঘটনাবলির বর্ণনা, তারিখ ও প্রেক্ষাপট এখন মূলত পরিচিত একটি ক্ষেত্রের অন্তর্গত। কিন্তু যা অনুপস্থিত, তা হল— এই দুই বিদ্রোহের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণের প্রয়াস; মিল-অমিল অন্বেষণের প্রয়াস; এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই ঘটনাগুলির ইতিহাস থেকে বর্তমান বাস্তবতার জন্য কী শিক্ষণীয়, সেই প্রশ্নের অনুসন্ধান।

জার্মানি ও ভারত উপমহাদেশের দুটি বিদ্রোহ নিজ নিজ দেশে ব্যাপক অভিঘাত নিয়ে এসেছিল। কিয়েল ও ভিলহেল্মশ্যাফেন নৌঘাঁটির বিদ্রোহ ১৯১৮ সালের অক্টোবর থেকে ১৯১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত চলা জার্মান বিপ্লবের অন্যতম অগ্রদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। এটি পরবর্তীতে আধুনিক ইউরোপীয় বিদ্রোহ ও বিপ্লবচর্চার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে ওঠে। অপরদিকে, ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় উপমহাদেশে ঘটে যাওয়া রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভির (আরআইএন) রেটিং-দের বিদ্রোহ, আজাদ হিন্দ ফৌজের মতোই, ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় এক অস্বীকারযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল— যা দীর্ঘদিন অবহেলিত থেকেছে এবং কেবল একবিংশ শতকে এসে ইতিহাসচর্চায় পর্যাপ্ত গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে।

এখানে বলে রাখা ভালো, বর্তমান ভারতের শাসকেরা আজাদির ‘অমৃত মহোৎসব’ পালনের অংশ হিসেবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি আরআইএন বিদ্রোহকেও জাতীয় স্বাধীনতার ইতিহাসে স্থান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এর পেছনে একটি সুস্পষ্ট ও সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে— এই প্রচেষ্টায় ‘অমৃতকাল’ নামক বর্তমান শাসনকালকে ইতিহাসের কেন্দ্রস্থলে স্থাপন করা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেহেরু ও তাঁর উত্তরসূরিদের অবদানকে আড়াল করার আর একটি অস্ত্র পাওয়া।

সে যাই হোক, দুটি বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ পেরিয়ে আজ প্রায় ৭৬ বছর অতিক্রান্ত, তবু কিয়েল ও আরআইএন বিদ্রোহ— এই দুই ঐতিহাসিক নাবিক-বিদ্রোহের নায়করা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থেকে আজও প্রায় বঞ্চিত। কিয়েলে কয়েকটি স্মৃতিফলক ও বোম্বাইয়ের কোলাবায় নেভিনগরে একটি স্মৃতিসৌধ ছাড়া বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই বিদ্রোহগুলির ঐতিহাসিক তাৎপর্য রাষ্ট্রীয় পরিসরে সচেতনভাবে আড়াল করে রাখা হয়েছে। উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত ও পাকিস্তানে, কিংবা যুদ্ধ-পরবর্তী জার্মানিতে শাসকশ্রেণির দৃষ্টিতে এই বিদ্রোহগুলি পরাজিত, অবিচার্য এবং হঠকারী তারুণ্যের অভিব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কিয়েল বিদ্রোহের পর ওয়েইমার সরকারের আমলে বিদ্রোহী নাবিক ও সৈনিকদের একাংশ গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারান, অনেকে দীর্ঘ কারাবাসে বন্দি থাকেন। একইভাবে, আরআইএন বিদ্রোহের রেটিংদেরও প্রশাসন গ্রেপ্তার করে, চাকরি থেকে বরখাস্ত করে এবং সামাজিকভাবে নির্বাসিত করে দেয়।

এই দুই বিদ্রোহের প্রতি দুই ভিন্ন দেশের শাসকদের এহেন সমান নিপীড়নমূলক মনোভাবই আমাদের সামনে এক অদ্ভুত ঐতিহাসিক সাযুজ্য তুলে ধরে— এবং এখানেই বর্তমানকালে এই আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা। উভয় বিদ্রোহেই অংশগ্রহণকারী নাবিকদের গড় বয়স ছিল ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে— তাঁরা যুদ্ধের নিষ্ফলতা ও উদ্দেশ্যহীনতার শিকার হয়ে, এক মানবিকতাবাদী প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন। যুদ্ধের অবসান, শান্তি ও স্থায়ী জীবনযাপনের জন্য আকাঙ্ক্ষা দুটি দেশেরই নাবিকদের বিদ্রোহের চালিকাশক্তি ছিল।

এই বিদ্রোহগুলি এক অনুচ্চারিত সত্য প্রকাশ করে— যে যুদ্ধ কেবল শত্রুর বিরুদ্ধে নয়, বহুসময়েই তা যোদ্ধাদের নিজের অস্তিত্বের বিরুদ্ধেও পরিণত হয়। সেই কারণেই কিয়েল ও আরআইএন বিদ্রোহ আজকের দিনে যুদ্ধবিরোধী রাজনীতি, গণআন্দোলনের ইতিহাস এবং রাষ্ট্র-নাগরিক সম্পর্কের প্রশ্নে মূল্যবান দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।

দ্বিতীয়ত, কিয়েল হোক বা বোম্বাই— উভয় বিদ্রোহেই আমরা দেখি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত, বেপরোয়া ও অকুতোভয় তারুণ্যের সরাসরি অংশগ্রহণ, নেতৃত্বের নির্বাচন এবং সাংগঠনিক কাঠামো গঠনের স্পষ্ট নিদর্শন। ভিলহেল্মশ্যাফেন, কিয়েল, বোম্বাই, করাচি— সর্বত্র বিদ্রোহী নাবিক ও সৈনিকেরা নিজেরাই নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন।

কিয়েলের নাবিক-সৈনিকদের স্বতঃস্ফূর্ত কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগকে কীভাবে গুস্তাভ নোস্কে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন তা নিয়ে আগেই আলোচনা করা হয়েছে। বোম্বাইয়ের ধর্মঘটী নাবিকরাও তাঁদের মুখ্য প্রতিনিধি বিসি দত্তের অনুপস্থিতি নজরে পড়তে দেননি। ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমদিকেই বিসি দত্তকে HMIS Talwar-এ গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত হয় আজাদ হিন্দ ফৌজের লিফলেট, ১৮৫৭-র সিপাহী বিদ্রোহ বিষয়ে বই ও পোস্টার —যা দেখে কর্তৃপক্ষ তাঁকে নাশকতার পরিকল্পনার মূল মাথা হিসেবে চিহ্নিত করে এবং গ্রেপ্তার করে। তার পরও রেটিংরা দমে না গিয়ে নিজেদের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল স্ট্রাইক কমিটি গঠন করেন, যেখানে প্রতিনিধিদের নির্বাচন হয় সর্বসম্মতভাবে। তাঁরা ইউনিয়ন জ্যাক ফেলে দিয়ে নিজেদের বাহিনীকে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল নেভি’ বলে ঘোষণা করেন।

অ্যাডমিরাল গডফ্রে পরে তদন্ত কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিতে এসে বলেন, এ এক পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র; কারণ বহু জাহাজে কংগ্রেস, মুসলিম লিগ এবং কিছু ক্ষেত্রে লাল পতাকা ওড়ানো হয়েছিল।[1] তবে ধর্মঘট কমিটির গঠনের পদ্ধতি ও সদস্যদের পেশাই প্রমাণ করে দেয় যে এ ছিল সম্পূর্ণভাবে রেটিংদের অভ্যন্তরীণ উদ্যোগ এবং নিজেদের পছন্দ। নৌবাহিনীর কেন্দ্রীয় ধর্মঘট কমিটির সর্বসম্মতভাবে নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে ছিলেন:

লিডিং সিগনালার এমএস খান— সভাপতি;
পেটি অফিসার টেলিগ্রাফিস্ট মদন সিং— সহ-সভাপতি;
চিফ পেটি অফিসার ও স্কুলমাস্টার নওয়াজ— সদস্য;
লিডিং সিগনালার বেদি, বসন্ত সিং— সদস্য;
লিডিং সীম্যান নুরুল হাসান, আশরাফ খান— সদস্য;
সিগনালার এস সেনগুপ্ত— সদস্য
এবল স্টোকার গোমেজ— সদস্য
স্টোকার মহম্মদ হুসেন— সদস্য[2]

এঁরা প্রত্যেকেই উচ্চমানের কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন প্রশিক্ষিত নাবিক ছিলেন। পরবর্তীতে বিসি দত্ত ও মদন সিং যথাক্রমে ফ্রি প্রেস জার্নাল-এ সাংবাদিকতা ও BOAC (British Overseas Airways Corporation)-তে চাকুরিতে নিযুক্ত হন। এই রেটিংদের আত্মপ্রত্যয়, সাংগঠনিক দক্ষতা ও দৃঢ়চেতা ভূমিকা সমাজে মজুর-শ্রেণির প্রতি প্রচলিত অবজ্ঞাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ জানায়।

শুধু হরতালে অংশগ্রহণ নয়— উভয় দেশের নৌবিদ্রোহী নাবিকেরা যুদ্ধবিরোধী সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সহমর্মিতা ও সক্রিয় সমর্থন লাভ করেছিলেন। এই বিদ্রোহদ্বয়ের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল সৌভ্রাতৃত্ববোধ। কিয়েল বন্দরের নাবিকদের বিদ্রোহ কীভাবে ধর্মঘটী শ্রমিকদের অনুপ্রাণিত করেছিল, তার উদাহরণ আমরা ইতিপূর্বেই দেখেছি। ভারতীয় উপমহাদেশের ক্ষেত্রেও চিত্রটি ছিল অনুরূপ— বিশেষত বোম্বাই শহরে, যেখানে জনতার প্রতিক্রিয়া হয়ে ওঠে এক ঐতিহাসিক প্রতিরোধের রূপক।

বোম্বাই-এর মিলিটারি প্রশাসন Castle Barrack কলোনি এবং ধর্মঘটরত জাহাজগুলিতে খাবার ও পানীয় জলের সরবরাহ বন্ধ করে দিলে, নাবিকদের কেন্দ্রীয় ধর্মঘট কমিটি শহরবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানায়। ২১ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার— গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ার তটবর্তী এলাকায় বিশাল জনসমাগম হয়। হাজার হাজার মানুষ, ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণিনির্বিশেষে, বিদ্রোহী নাবিকদের জন্য খাবার, জল, ফলমূল ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে ভিড় করেন। সমুদ্রতীর যেন হয়ে উঠেছিল এক বিশাল মেলার মাঠ। মারাঠা প্রহরীরা জনতার ভিড় নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকলেও, তাঁরা হস্তক্ষেপ করেননি। এক প্রত্যক্ষদর্শী এই অভূতপূর্ব দৃশ্যকে বর্ণনা করেছিলেন এভাবে:

সে এক বর্ণময় দৃশ্য। সব দিক থেকে লোকজন আসছিল খাবারের ঝুড়ি হাতে— ফল, দুধ, রুটি, সবজি, যা কিছু একজন ভাবতে পারে, সবকিছুই ছিল তাতে। শ্রমজীবী দরিদ্র পরিবার, মধ্যবিত্ত সংগ্রামী মানুষ, এমনকি সচ্ছল ভারতীয়রাও তাঁদের ঘর থেকে এই রসদ এনেছিলেন।… উপস্থিত জনতা রেটিংদের বিপ্লবী স্লোগানে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল, অনেকেই আবেগে তাঁদের আলিঙ্গন করেছিল। হিন্দু, মুসলিম এবং ইরানি দোকানদাররা নৌসেনার ছেলেদের দোকানে ডেকে নিয়েছিলেন— বলেছিলেন, যা খুশি নেওয়ার জন্য। যখন বিদ্রোহী জাহাজগুলিতে কংগ্রেসের, মুসলিম লিগের ও লাল পতাকা উড়ছিল, তখন ভিড় থেকে হর্ষোল্লাসের আওয়াজ ভেসে আসছিল।[3]

বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান বিষময় সাম্প্রদায়িক পরিবেশে— যেখানে বিভিন্ন দেশে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর একতরফা আক্রমণ, রাজনৈতিক উস্কানি এবং যুদ্ধোন্মাদনার বিস্তার চলছে— রেটিং-দের ধর্মঘট ও বিদ্রোহ এক গভীর, গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। ১৯৪৬ সালের সেই অভূতপূর্ব নৌবিদ্রোহ ছিল সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ। কেন্দ্রীয় ধর্মঘট কমিটি— যেটি ছিল এই বিদ্রোহের সাংগঠনিক মেরুদণ্ড— তার সদস্যরা হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান— সব ধর্মের অনুগামী ছিলেন। কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শুয়াহেব (এমএস) খান বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বর্তমান পাকিস্তানের শিয়ালকোট জেলার নিজ গ্রামে ফিরে যান। করাচির HMIS Bahadur-এর পেটি অফিসার আব্দুল বাকি ও মোবারক আহমেদ, যাঁরা নাবালক (১৮ বছরের নিচে) হওয়ায় ট্রাইবুন্যাল থেকে মুক্তি পান, তাঁরা সিন্ধুপ্রদেশের তৎকালীন মুসলিম লিগ সরকারের গভর্নর স্যার হিদায়েতুল্লাহকে স্পষ্ট প্রশ্ন করেছিলেন:

আপনারা লিগের পক্ষ থেকে মুসলিম জনতার, বিশেষত নেভির মুসলমান সদস্যদের জন্য এখনও পর্যন্ত কী করেছেন? আপনার সরকারের অধীনে বহু নাবিক, যাঁদের অনেকেই মুসলমান, ‘সি’ শ্রেণির বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাঁদের দিয়ে মাথায় করে মাটি টানানো হচ্ছে, নোংরা পরিষ্কার করানো হচ্ছে।[4]

রেটিং-দের বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতাই তাঁদের অসাম্প্রদায়িক হতে বাধ্য করেছিল। ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস বা শ্রেণি-নির্বিশেষে খাওয়ার সময় তাঁরা একটি বড়, গোল কাঠের পাত্রের চারপাশে বসতেন, যার ভিতর থাকত জলীয়, পাথরভরা পাতলা ডাল। সঙ্গে দেওয়া হত মোটা রুটি— যা সেই পাত্রে ডুবিয়ে তাঁরা একসঙ্গে খেতেন। বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান সংগঠক বিসি দত্ত তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন:

বাবুর্চি আমাদের একটি অ্যালুমিনিয়ামের মগ দিয়েছিলেন, যেখান থেকে আমরা সবাই জল পান করতাম। এই প্রথম একই পাত্র থেকে জল খাওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের মধ্যেকার বহুদিনের সামাজিক বিভাজনের দেওয়াল ভেঙে দেয়।

১৯৪৬-এর ফেব্রুয়ারিতে ধর্মঘটী রেটিং-দের মধ্যে যে দৃঢ় ও আন্তরিক জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল— ধর্মনিরপেক্ষ, সম্প্রদায়নিরপেক্ষ ও সম্পূর্ণ একাত্ম— তা ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধিকে বিচলিত করে তোলে। লক্ষ করার বিষয়, নৌবাহিনীর এই ধর্মঘটী সদস্যরা কখনও তাঁদের আন্দোলনকে ‘বিদ্রোহ’ (Mutiny) বলে অভিহিত করেননি। তাঁরা জানতেন, যুদ্ধকালীন সময়ে নৌবাহিনীতে ‘বিদ্রোহ’-এর শাস্তি কোর্ট মার্শাল, যার সর্বোচ্চ পরিণতি ‘ফায়ারিং স্কোয়াড’-এর সামনে দাঁড়ানো। আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল অনশন ও অ-সহযোগিতার মাধ্যমে— HMIS Talwar-এ অখাদ্য খাবারের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ শুরু করেছিলেন তাঁরা।

গান্ধি ৩ মার্চ ১৯৪৬-এ হরিজন পত্রিকায় দেওয়া বিবৃতিতে বললেন: “হিংসাত্মক কাজের উদ্দেশ্যে হিন্দু ও মুসলিম এবং অন্যদের মধ্যে বর্তমান সংমিশ্রণ অপবিত্র, এই ঘটনা পরবর্তীকালে পারস্পরিক সহিংসতার দিকে নিয়ে যাবে এবং সম্ভবত এরা তার প্রস্তুতি নিচ্ছে— যা ভারত ও বিশ্বের জন্য অকল্যাণকর।”[5]

এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে অবাক করার মতো। যে সময় রেটিং-রা ‘আজাদ হিন্দুস্তান’-এর স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ হয়ে আত্মবলিদান দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে গান্ধির দৃষ্টিতে তা ‘পরস্পরবিরোধী সহিংসতার’ প্রস্তুতি! বিদ্রোহী রেটিং-দের প্রধান প্রেরণা ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজের আত্মত্যাগ। মালয় যুদ্ধে অংশ নেওয়া সলিল শ্যামের থেকে বিসি দত্ত প্রথমবার আজাদ হিন্দের কথা শুনেছিলেন, শরৎ বসু ও জওহরলাল নেহেরুর উদ্দেশে নেতাজির একটি গোপন চিঠিও দেখেছিলেন।

আরও তাৎপর্যপূর্ণ হল, গান্ধির বক্তব্যের কয়েক দিন আগেই, ২২-২৩ ফেব্রুয়ারির বোম্বাই হরতালে ব্রিটিশ প্রশাসনের গুলিতে কমপক্ষে ৩৬ জন মুসলমান নাগরিক নিহত হন।[6] অবশ্যই এ-কথা সজোরে বলার দরকার— এই শহিদদের কেউই সেই সময় নিজেদের হিন্দু-মুসলমান বলে চিহ্নিত করেননি, তাঁরা ছিলেন ভারতের আসন্ন ‘জাতীয় নৌবাহিনী’র জন্য জীবন দেওয়া সংগ্রামী সৈনিক। কে জানত, যাঁরা “আজাদ হিন্দুস্তান”-এর নামে প্রাণ দিচ্ছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে আছে একটি নির্মম বাস্তবতার মুখে— যেখানে স্বাধীনতার নামে তাঁদের ভাগ করে দেওয়া হবে দুই পৃথক রাষ্ট্রে, ভারত ও পাকিস্তানে। ‘আজাদি’র সেই স্বপ্ন ততদিনে পরিণত হবে দ্বিখণ্ডিত ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায়ে।

১৯৪৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, ব্রিটিশ নৌ কর্তৃপক্ষের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের ঠিক আগে, কেন্দ্রীয় ধর্মঘট কমিটি (NCSC)-র তরফে প্রকাশিত শেষ বিবৃতিতে লেখা ছিল:

আমাদের এই ধর্মঘট জাতির জীবনে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। প্রথমবারের মতো সামরিক বাহিনীর সদস্যদের এবং সাধারণ জনগণের রক্ত একই লক্ষ্যে একসঙ্গে প্রবাহিত হয়েছে। আমরা, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা, এই কথা কখনও ভুলব না। এবং আমরা জানি, আপনারাও— আমাদের ভাই ও বোনেরা— এই আবেদন ভুলে যাবেন না। আমাদের মহান জনগণ দীর্ঘজীবী হোক।[7]

অনুরাগী পাঠক চাইলে ভারত উপমহাদেশের ধর্মঘটী নাবিকদের কেন্দ্রীয় ধর্মঘট কমিটির (NCSC) আবেদনের সাথে ভিলহেল্মশ্যাফেন নৌঘাঁটির বিদ্রোহী ইকেরাসের বিবৃতির তুলনা করতে পারেন, যেখানে তিনি লিখে গেছেন:

তাঁরা স্বপ্ন দেখেছিলেন শ্রমিকদের এক নতুন বিশ্বব্যাপী সমাজের— একটি স্বাধীন, ভয় ও অভাবমুক্ত সমাজ, যা শ্রমিক গণতন্ত্রের ভিত্তিতে গড়ে উঠবে এবং মানবজাতিকে একটি একক সত্তায় পরিণত করবে।

এক নতুন ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে রচিত স্বপ্ন হলেও, তাঁদের মানচিত্র ছিল ভিন্ন। ভিলহেল্মশ্যাফেন নৌঘাঁটির বিদ্রোহীরা আত্মত্যাগ করেছিলেন কোনও নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে নয়; তাঁদের স্বপ্ন ছিল একটি রাষ্ট্রহীন, ভয়হীন ‘একক সত্তায় বিকশিত’ বিশ্ব-মানবসমাজের— যেখানে সমস্ত যুদ্ধের অবসান ঘটবে। অন্যদিকে, ভারত উপমহাদেশের ধর্মঘটী নাবিকদের মধ্যে এমন রাষ্ট্রহীন বিশ্বমানবতার ভাবনা দেখা যায় না। প্রায় ত্রিশ বছর পর দুই বিশ্বযুদ্ধ পেরিয়ে এলেও, তাঁদের মানসচিন্তায় আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের সীমানার বাইরে যাওয়ার কোনও স্পষ্ট প্রয়াস ছিল না। বরং, তাঁরা ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে একটি স্বাধীন জাতীয় শাসনের অধীনে দেশীয় নৌবাহিনীর সদস্য হতে চেয়েছিলেন।

গুস্তাভ নোস্কে যখন কিয়েলের বিদ্রোহী নাবিকদের কাউন্সিলের সঙ্গে গর্ভনর অ্যাডমিরাল সৌশহনের মধ্যস্থতার জন্য উপস্থিত হন, তখন কাউন্সিল তাঁর সামনে একটি ১৪-দফা দাবিপত্র পেশ করে। এই দাবিগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল:

১) গ্রেপ্তারকৃত সমস্ত নাবিক ও রাজনৈতিক বন্দির নিঃশর্ত মুক্তি
২) বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা
৩) চিঠিপত্রের সেন্সরশিপ বাতিল
৪) ঊর্ধ্বতন অফিসারদের দ্বারা নাবিকদের প্রতি ন্যায্য আচরণ নিশ্চিতকরণ
৫) কোনও শাস্তি ছাড়াই সব সদস্যকে তাদের জাহাজ ও ব্যারাকে ফিরিয়ে আনা
৬) কোনও পরিস্থিতিতেই নৌবহরকে বহির্সমুদ্রে পাঠানো যাবে না
৭) সম্ভাব্য রক্তপাত এড়াতে হবে
৮) স্থানীয় গ্যারিসনের বাইরে থেকে আসা সব সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে
৯) ব্যক্তিগত সম্পত্তির সুরক্ষার জন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কাউন্সিল
১০) ডিউটির বাইরে কোনও উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাবিকদের কৈফিয়ৎ তলব করতে পারবেন না
১১) দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর থেকে পরবর্তী ডিউটি শুরুর আগে অবধি নাবিকরা অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করবে
১২) যেসব অফিসার নাবিকদের কাউন্সিলকে সমর্থন জানাবেন, তাঁদের স্বাগত; অন্যদের রেশন ছাড়াই পদত্যাগ করতে হবে
১৩) কাউন্সিলের সদস্যদের সব অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে
১৪) ভবিষ্যতের সব সিদ্ধান্ত কাউন্সিলের সম্মতিতেই গৃহীত হবে।[8]

ঝানু রাজনীতিবিদ গুস্তাভ নোস্কে দাবিসনদের উপর চোখ বুলিয়ে তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারেন যে এই দাবিগুলির কেন্দ্রে ছিল সামরিক কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কার, আমূল রাজনৈতিক বিপ্লব নয়। ঊর্ধ্বতন অফিসারদের গালিগালাজ, শাস্তির ভয় এবং অর্থহীন যুদ্ধযাত্রায় ক্লান্ত ও অতিষ্ঠ নাবিকেরা চেয়েছিলেন সম্মানজনক পরিবেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ন্যায্যতা। বিদ্রোহীরা লাল পতাকাকে তাঁদের প্রতীক হিসেবে বেছে নিলেও, তাঁদের ১৪-দফা দাবির অধিকাংশই একটি মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক কর্মসূচির সীমা অতিক্রম করেনি। নোস্কে, বার্লিন প্রশাসনের সহায়তায়, প্রথমেই বিদ্রোহী নাবিকদের চক্ষুশূল অ্যাডমিরাল সৌশহনকে অপসারণ করান। সমাজগণতন্ত্রী নেতার ছদ্ম-সততার পরিচয় ব্যবহার করে তিনি নিজেকে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন এবং ধীরে ধীরে কাউন্সিলের প্রশাসনিক অধিকার ও স্বাধীনতাকেই খর্ব করতে শুরু করেন। এখানে কৌশলের পাশাপাশি নোস্কের নির্ভরতা ছিল বলপ্রয়োগের উপর। ভবঘুরে সেনাদের (Freikorps) নিয়ে গঠিত একটি ভাড়াটে বাহিনী কিয়েল শহরে আনা হয়। তাদের দিয়ে নোস্কে রক্তাক্ত প্রতিহিংসার মাধ্যমে কাউন্সিলের প্রতি দায়বদ্ধ নাবিক-সৈনিক ও শ্রমজীবী জনগণের প্রতিরোধকে দমন করেন।

বোম্বাই শহরে কেন্দ্রীয় ধর্মঘট কমিটির সদস্যরা সভাপতি এমএস খানের নেতৃত্বে বল্লভভাই প্যাটেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মধ্যস্থতার উদ্দেশ্যে। তাঁরা প্যাটেলের কাছে ১৪ দফা একটি লিখিত দাবিসনদ পেশ করেন। এই দাবিগুলি ছিল—

১) বিদ্রোহীদের কোনও প্রকার হয়রানি না করা,
২) পূর্বে আটককৃত আরকে সিং-এর অবিলম্বে মুক্তি,
৩) দ্রুত সেনা প্রত্যাহার,
৪) বিদ্রোহীদের প্রতি বৈরিতামূলক মনোভাবের জন্য কমান্ডার কিং-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ,
৫) রেটিংদের খাদ্যের মানোন্নয়ন,
৬) ভারতীয় রেটিংদেরকে রয়্যাল নেভির কর্মীদের সমতুল বেতন, ভাতা এবং NAAFI ক্যান্টিনে প্রবেশাধিকার প্রদান,
৭) নৌবাহিনী থেকে অব্যাহতির সময় ব্যক্তিগত ‘কিট’ ফেরত নেওয়া হবে না,
৮) অব্যাহতির সময় উপযুক্ত টার্মিনাল সুবিধা (terminal benefits) প্রদান,
৯) অফিসারদের দ্বারা ভারতীয় রেটিংদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ,
১০) নিম্নপদস্থ কর্মীদের নিয়মিতভাবে অফিসার পদে পদোন্নতির সুযোগ,
১১) বিদ্যমান কমান্ড কাঠামোর পরিবর্তে একজন নতুন কমান্ডিং অফিসার নিয়োগ,
১২) INA-র বন্দিদের, বিশেষ করে ক্যাপ্টেন রশিদ-কে অবিলম্বে মুক্তি, যাঁদের কঠোর সাজা দেওয়া হয়েছিল,
১৩) সারা ভারতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলিচালনার ঘটনা তদন্ত,
১৪) ইন্দোনেশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাহার।[9]

১৪ দফা দাবিসনদের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে শেষ তিনটি দাবিকে সরিয়ে রাখলে বাকি সব দাবিই ছিল চাকুরি-সংক্রান্ত বৈষম্যের অবসানের দাবি যা সাধারণত আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা যায়। প্যাটেল দাবিসনদ নিয়ে কোনও আলোচনাতেই রাজি ছিলেন না। দাবিসনদ একপাশে সরিয়ে রেখে প্যাটেল রেটিং-দের নিঃশর্ত অস্ত্র প্রত্যাহার করে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন যা FOCRIN অ্যাডমিরাল গডফ্রের হুমকির সঙ্গে মিলে যায়।

ভারত উপমহাদেশ বা জার্মানি— নৌবিদ্রোহ কোথাওই সফল হয়নি। মানুষের ইতিহাস শুধু যদি শাসকের  সাফল্যের মাপকাঠিতে বিচার করা হয়, তবে গোলাবর্ষণের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে ‘সভ্যতার’ আস্ফালনের ইতিবৃত্ত ছাড়া আধুনিক ইতিহাসে আর নতুন বিশেষ কিছু পাওয়া যাবে না। আর যদি মানবপ্রগতিকে বিদ্রোহের সংলাপ হিসাবে ভাবতে হয়, তবে আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে বিস্মৃত কিয়েলের বিদ্রোহ, বোম্বাই-করাচির সমুদ্র উপকূলের জাহাজিদের, শহুরে মজুরদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর বিস্মৃত ইতিহাসের দিকে আমাদের নজর দিতেই হবে। আজকের দিনে সমাজ পরিবর্তনের ভাবনায় এইসব বিদেহী আত্মার অকুণ্ঠ আত্মত্যাগকে স্থান দিতে হবে নিঃসঙ্কোচে। বর্তমান প্রবন্ধটি সেই উদ্দেশ্যে একটি ক্ষুদ্র বিনম্র প্রয়াস।

 

[শেষ]

 

[1] Our Last War of Independence: The Royal Indian Navy Mutiny of 1946. Indian History Collective.
[2] Satapute, Somnath. Role of Naval Strike Committee during RIN Mutiny 1946. Kolhapur: Shivaji University.
[3] Priya P. ROYAL INDIAN NAVY MUTINY: A STUDY OF ITS IMPACT IN SOUTH INDIA. Ph.D Thesis. University of Calicut. 2014.
[4] Bose, Biswanath. R.I.N Mutiny: 1946. New Delhi: Northern Book Centre. 1988. p14.
[5] Gandhi, M. K. Harijan. Mar 3, 1946; and reprinted in Gandhi. Collected Works, vol. 83.
[6] Fatima, Mahino. The Muslim Martyrs of Royal Indian Naval Mutiny of 1946. Heritage Times. Aug 14, 2021.
[7] Mitra, Anirban. Freedom on the Waves: The Story of the 1946 Indian Naval Mutiny. The Wire. Jan 24, 2022.
[8] RATLIFF, WILLIAM GRANT. THE POLITICAL CAREER OF GUSTAV NOSKE, 1918-1920. Master of Arts Thesis. Texas Tech University. Aug, 1980.
[9] The Royal Indian Navy made the British realise it was time to leave India. Heritage Times. Dec 4, 2018.

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5222 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...