সংলাপের শেষে…

চারের ঠেক 

 

“অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের মারার মূল চক্রীর নাম ইসমাইল। হ্যাঁ, মুসলিম। ইসমাইল কোনও অন্য ধর্মের লোকের নাম হয় না। ওই পবিত্র শান্তির ধর্মটাকে নিকেশ না করা পর্যন্ত আমাদের শান্তি নেই। হ্যাঁ, সন্ত্রাসের ধর্ম হয়, এটা ইসলামি সন্ত্রাস, এই ইসলামি সন্ত্রাসই এখন প্রধান বিপদ। সোজাসাপটা কথা।”

“কাশ্মীরে জেহাদ চলছে। সেখানে ইসলামের ওপর বর্বর হামলা চালানো হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এর বদলা নিতেই হবে যেখানেই হোক। পৃথিবীর সব কোণায় কোণায়…”

“লস্কর কিন্তু দায় স্বীকার করেনি। ইভেন ইন্ডিয়ান আর্মিও বলছে টার্গেট ছিল আর্মি, তীর্থযাত্রীরা নয়…”

“টার্গেট ফার্গেট বুঝি না! যারা কাশ্মীরে ইসলামি রাজত্ব কায়েম করতে চায়, তারা আর্মি, তীর্থযাত্রী তো দূরের কথা দুটো ঘাস মারলেও তাদের নিকেশ করা পবিত্র কর্তব্য।”

“এর পর মোদীকে তবেই ভোট দেব, যদি দেখি ও এর কড়া বদলা নিল…”

“কিন্তু বাসটা আনরেজিস্টার্ড ছিল। উপরন্তু, ওটা যাওয়ার টাইমও নয়, ফলে কনভয়ও ছিল না সাথে। এরকম হল কেন, এটাই তো একটা প্রশ্ন!”

“তার চেয়েও বড় প্রশ্ন তো হওয়া উচিত হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এমন একটা দেশে হিন্দুদের তীর্থ করতে যাওয়ার জন্য টাইম বেঁধে দেওয়া হবে কেন? কেনই বা কনভয় দিতে হবে এসকর্ট করতে?”

“কাশ্মীরে আর্মিকে পুরো ক্ষমতা দিয়ে দিক। একদম লাইসেন্স টু কিল!”

“যে লোকটা জান বাজি রেখে বাকি লোকগুলোকে বাঁচাল, সে ড্রাইভারের নাম কিন্তু সেলিম…”

“ও! সন্ত্রাসের ধর্ম হয় না, আর সাহায্যকারীর ধর্ম হয়… কেমন?”

“ইসসস… মহাদেব যদি এখন তৃতীয় নয়নটা খুলত! শালাদের ভস্ম করে দিত একেবারে…”

“আগেরবার অমরনাথে হামলাও হয়েছিল বাজপেয়ী গভর্নমেন্টের সময়। এবারেও বিজেপি গভর্নমেন্ট। এরা সরকারে থাকলেই এগুলো বেড়ে যাওয়াটা কি স্রেফ কাকতালীয়?”

“শুধু সেলিম কই? ওখানে গর্গ বলে আর একটা লোকও ছিল। সে তো গুলিও খেয়েছে। আর গর্গ…”

“রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ডিফল্টারদের যে লম্বা লিস্টি, তার মধ্যে কটা মুসলমান? জাস্ট আস্কিং…”

“ডিপ্লোম্যাটিক আর ডিফেনসিভ হয়ে হয়ে ভাই হয়ে গেল! প্যাকেজ-ম্যাকেজও বহুত হয়ে গেছে। এখন স্রেফ বন্দুককে কথা বলতে দিতে হবে!”

“বাসটা গুজরাটের। যারা মারা গেছে, তারাও গুজরাটি। সুরাট-আমেদাবাদে জিএসটির বিরুদ্ধে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির আন্দোলন চলছে। এবছরেই গুজরাট ভোট। আর বোঝার বাকি কী থাকল?”

“এসবের মধ্যে কাশ্মীরের স্বাধীনতার লড়াইটাই চাপা পড়ে যাচ্ছে…”

“স্বাধীনতা??!!! মাই ফুট! সোকলড স্বাধীনতা সংগ্রামীরা বারবার বলেছে ওরা কাশ্মীরকে ইসলামি রাষ্ট্র বানাতে চায়!”

“হুরিয়ত কিন্তু নিন্দে করেছে…”

“ক্ষুদিরামদেরও ব্রিটিশরা হিন্দু সন্ত্রাসী বলত। ক্ষুদিরামদেরও ধর্মীয় আদর্শ ছিল। ক্ষুদিরামরাও ভুল করে নিরপরাধ ব্রিটিশদের মেরেছিল…”

“এই সুযোগে ক্ষুদিরামকেও তাহলে হিন্দু সন্ত্রাসী বলে দেওয়া হল! এই হিপোক্রিসির জন্যই আজ বিজেপির এত রমরমা…”

“এই কমিউনিস্টগুলোই সবচেয়ে ক্ষতিকর…”

নিউমেরোলজি আর টার্মিনোলজির যুগে বাস আমাদের। গরুমানুষে নম্বরে সহাবস্থান করি। যেটুকু মনুষ্য পরিচিতি আছে, তাও টার্মকবলিত। ফলে উপরের বক্তাদের টার্মায়িত করতে বিশেষ বেগ পাওয়া উচিত নয়। কিন্তু মজা হচ্ছে, প্রতিটা কথাই কখনও কখনও যেন আমাদের নিজেদের মুখেই বসে যায়। আমরা প্রত্যেকেই মানুষ থেকে হয়ে পড়ি টার্ম।

আর এ কথাও অনিঃশেষ। এমন বহুমাত্রিক বিষয়ে, আর সবারই অবস্থান যেখানে বাস্তব থেকে বহু দূরে, তখন সেটা স্বাভাবিক এবং সঙ্গতও বটে। কিন্তু এ কথা ফুরোলে হাতে থাকে কী? পেন্সিল নয়… রক্ত! কার?

অতনু লিখেছেন, কোনও হিন্দু মৌলবাদী কখনও কাশ্মীরে ইসলামি জঙ্গিদের সাথে যুদ্ধ করতে যায় না। কোনও মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনও হামলা চালায় না হিন্দু মৌলবাদীদের ওপর। সবারই সফট টার্গেট সাধারণ মানুষ। সাদিক লিখেছেন, লোকগুলো বাসে চড়ত, মোমো খেত, আর করবে না সে সব। রক্ত পড়ছে আমার মেঝেতে।

“মানুষ মেরেছি আমি/পৃথিবীর পথে সেই নিহত ভ্রাতার ভাই আমি…”

এ রক্তের ছিটে থেকে বাঁচতে মুখ লুকোবেন? কোথায়? সেখানে রক্তনদী আপনাকে স্বাগত জানাবে। কৃষকের… চা শ্রমিকের… আদিবাসী মানুষের…

আমরা শোণিত-অবগাহন শুরু করেছি নিঃশব্দে…

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4596 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

Leave a Reply to ক.ব. Cancel reply