নটীর পূজা: শতবর্ষে ভদ্রমহিলার নাচ

স্বাতী ভট্টাচার্য

 


আজ থেকে একশো বছর আগে, উনিশ বছরের সেই তরুণী, শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর কন্যা গৌরী বসুর সেই নাচ রাস্তা করে দিয়েছিল বাঙালি গৃহস্থের ঘরে নৃত্যচর্চার। ‘নটীর পূজা’ (১৯২৬) মেয়েদের নাচকে পুরুষের চিত্তবিনোদনের উপকরণ থেকে সুস্থ, সুরুচিপূর্ণ সংস্কৃতিচর্চার একটি ক্ষেত্র করে তোলে। মঞ্চে মেয়েদের নাচতে দেখে সমাজে যে আলোড়ন উঠেছিল, নীলকণ্ঠের মতো তার বিষ নিজ কণ্ঠে ধারণ করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তিনি নিজের এবং নিজের পারিবারিক মর্যাদাকে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করেন তাঁর ছাত্রীদের সম্মান নিশ্চিত করতে

 

“নাচটা দেখে যেন কারও মনে না পড়ে ওটা নাচ। লোকে যেন উপাসনা বলেই ওটাকে দেখতে পায়,” মহড়ার সময়ে বারবার গৌরীকে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ‘নটীর পূজা’ নৃত্যনাট্যের একেবারে শেষে— ‘আমায় ক্ষমো হে ক্ষমো, নমো হে নমো’ গানটির সঙ্গে আরাধ্য দেবতার কাছে দেহ-মন সমর্পণের যে নাচ করবে নটী শ্রীমতী, যা তার জীবনের শেষ নাচ, তার উপরেই সমস্ত নাটকটির সাফল্য নির্ভর করছে, সতর্ক করে দিয়েছিলেন গৌরীকে।

রবীন্দ্রনাথের পঁয়ষট্টি বছরের জন্মদিনে শান্তিনিকেতনে অভিনীত হবে ‘নটীর পূজা’; প্রস্তুতির জন্য গৌরীর হাতে মাত্র দিন পনেরো সময়। কেবল নাচলেই হবে না, গৌরীকে সেই নাচের পরিকল্পনাও করতে হবে। মণিপুর থেকে আগত নৃত্যগুরু নবকুমার সিংহের কাছে গৌরী ও তাঁর সহপাঠীরা তখন তালিম নিচ্ছেন বটে, কিন্তু নটীর নাচ কেবল মণিপুরি নাচ ছিল না। মণিপুরি আঙ্গিক, মৃদঙ্গের বোল গ্রহণ করলেও ওই নাচ ছিল গৌরীর সৃষ্টি; সহায়তায় এগিয়ে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীও।

“বাইরের জিনিসকে আত্মস্থ করে তাকে এক স্বতন্ত্র নবরূপ দেওয়া গুরুদেবের সৃষ্টির বিচিত্র ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই। নৃত্যের ক্ষেত্রেও তেমনটিই হয়েছিল,” পরিণত বয়সে বলেছেন গৌরী। তাঁর সেই চেষ্টা যে সফল হয়েছিল, তার প্রমাণ মেলে প্রফুল্লকুমার সরকারের লেখায়। কলকাতায় ‘নটীর পূজা’ অভিনয়ের পরে তিনি লিখেছিলেন, “নর্ত্তকীর দেহবল্লী যেন আরতির দীপশিখায় পরিণত হইয়াছিল।”[1]

আজ থেকে একশো বছর আগে, উনিশ বছরের সেই তরুণী, শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর কন্যা গৌরী বসুর সেই নাচ রাস্তা করে দিয়েছিল বাঙালি গৃহস্থের ঘরে নৃত্যচর্চার। ‘নটীর পূজা’ (১৯২৬) মেয়েদের নাচকে পুরুষের চিত্তবিনোদনের উপকরণ থেকে সুস্থ, সুরুচিপূর্ণ সংস্কৃতিচর্চার একটি ক্ষেত্র করে তোলে। মঞ্চে মেয়েদের নাচতে দেখে সমাজে যে আলোড়ন উঠেছিল, নীলকণ্ঠের মতো তার বিষ নিজ কণ্ঠে ধারণ করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তিনি নিজের এবং নিজের পারিবারিক মর্যাদাকে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করেন তাঁর ছাত্রীদের সম্মান নিশ্চিত করতে। তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। অবতার নামে একটি কাগজ রবীন্দ্রনাথের ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছিল। “রবীন্দ্রনাথের ঘাঘরা পরা ছবির কার্টুন এঁকে তার তলায় লেখে যে আমাদের দেশের হলো কী? সম্ভ্রান্ত বংশের মেয়েরাও সকলের সামনে নাচতে নেমেছেন! রবীন্দ্রনাথ মেয়েদের নাচিয়ে আমাদের মাথা হেঁট করে দিচ্ছেন!”[2]

এমন কিছু ঘটতে পারে— এর আগাম আভাস পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। শান্তিনিকেতনে তিনি ভদ্রঘরের মেয়েদের নাচ শেখাচ্ছেন— এই সংবাদেই কলকাতায় যথেষ্ট ঢি-ঢি পড়ে গিয়েছিল। “যেদিন প্রথম শোনা গেল, রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের মেয়েদের নৃত্যশিক্ষা দিচ্ছেন, সেদিন দেশের সকলেই অতিমাত্রায় বিস্মিত হয়েছিলেন তো বটেই, সেই সঙ্গে প্রচুর উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। কেউ কেউ ঠাট্টার কথা ভেবে খবরটা উড়িয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছিলেন। ভদ্রঘরের বাঙালি মেয়েরা নাচবে— এমন অঘটন কখনও ঘটতে পারে?”— লিখেছেন হেমেন্দ্রকুমার রায়।[3]

শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের নিজের সৃষ্ট পরিমণ্ডলে, নিজের জন্মদিনের উৎসবে তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করার কেউ ছিল না। কিন্তু কলকাতার জনসমক্ষে তাঁর ছাত্রীদের, বিশেষত নটীর ভূমিকায় গৌরীর মঞ্চে নৃত্যপ্রদর্শন নিন্দিত হতে পারে— এই আশঙ্কায় তিনি নন্দলাল ও তাঁর স্ত্রীর মতামত জানতে চাইলেন। তাঁরা নিঃসঙ্কোচে উচিত-অনুচিত নির্ণয়ের ভার ছেড়ে দিলেন রবীন্দ্রনাথের উপরেই।

রবীন্দ্রনাথ তখন নাটকে যোগ করলেন একটি চরিত্র— ভিক্ষু উপালী। নিজেই অভিনয় করবেন বলে রাখলেন চরিত্রটি। নাটকে এই একমাত্র পুরুষ চরিত্র। বস্তুত, মেয়েদের অনুরোধেই ‘নটীর পূজা’ লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পুত্রবধূ প্রতিমা অন্যান্য মেয়েদের হয়ে তাঁর কাছে দরবার করেছিলেন— তাঁরা চাইছিলেন, রবীন্দ্র-জন্মোৎসবে এমন একটি নাটকে অভিনয় করতে, যাতে কোনও পুরুষ চরিত্র থাকবে না। ‘পূজারিণী’ কবিতাটিকে যদি তাঁর বাবামশায় নাটকে রূপান্তর করে দেন, তাহলে তা সম্ভব হয়। রবীন্দ্রনাথ সম্মত হলেন। দিন তিনেকের মধ্যে নাটকটি তৈরি হয়ে গেল। ‘আত্মপরিচয়’ (১৩৪৭) প্রবন্ধে তিনি লিখছেন—

বুদ্ধদেবকে নটী যে অর্ঘ্য দান করতে চেয়েছিল সে তার নৃত্য। অন্য সাধকেরা তাঁকে দিয়েছিল যা ছিল তাদের অন্তরতর সত্য, নটী দিয়েছে তার সমস্ত জীবনের অভিব্যক্ত সত্যকে। মৃত্যুকে দিয়ে সেই সত্যের চরম মূল্য প্রমাণ করেছে।

নিজের বারোটি গানের সঙ্গে কয়েকটি বৌদ্ধ মন্ত্রেও সুরারোপ করে নাটকে যোগ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯২৬ সালের মার্চ মাসে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় জোড়াসাঁকো বাড়ির চত্বরে আক্রান্তদের আশ্রয় প্রার্থনা করতে দেখেছিলেন তিনি। অশান্ত চিত্তে এপ্রিল মাসে শান্তিনিকেতনে এসে এই নাটক লেখায় হাত দেন। ‘পূজারিণী’ কবিতাটি লেখার প্রায় আড়াই দশক পরে বুদ্ধের প্রতি আত্মনিবেদনের এই কাহিনিকে নাটকের রূপ দিতে গিয়ে নাওয়া-খাওয়া ভুললেন। নাটকে হিন্দু আর বৌদ্ধদের মধ্যে সংঘাত দেখালেন। শ্রীমতীর গানে উচ্চারিত হল ‘মাভৈ’ মন্ত্র—

বাঁধন ছেঁড়ার সাধন হবে
ছেড়ে যাব তীর, মাভৈ রবে…
বাজুক বক্ষে বজ্রভেরী অকূল প্রাণের সে উৎসবে।

১৯২৬ সালে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্র-জন্মোৎসবে, উত্তরায়ণের কোণার্ক বাড়িটির অলিন্দে প্রথম অভিনীত হল ‘নটীর পূজা’। প্রশংসাও পেল যথেষ্ট। ‘সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা’ পত্রিকায় লেখা হল—

এ রূপ সর্বাঙ্গসুন্দর অভিনয় কুত্রাপি দৃষ্ট হয় নাই। শ্রীমতীর ভূমিকায় কল্যাণী শ্রীমতী গৌরী বসু যে অপরূপ নৃত্যের অবতারণা করিয়াছিলেন তাহা পর উপভোগ্য।

‘নাচঘর’ কাগজও গৌরীর প্রশংসা করে লিখল—

শেষ দৃশ্যে তিনি যে নৃত্যের ব্যাপার দেখিয়েছেন, তা অতুল।

এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে রথীন্দ্রনাথ প্রস্তাব দিলেন, পরের বছর মাঘোৎসবে নাটকটি কলকাতায় মঞ্চস্থ করে বিশ্বভারতীর জন্য কিছু টাকার সংস্থান করা হবে। মনে রাখতে হবে, জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের কাছে মেয়েদের মঞ্চে অভিনয় বা গান খুব নতুন কোনও কথা নয়। উনিশ শতকের সত্তর-আশির দশক থেকেই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের উৎসাহে ও পরিচালনায় মেয়েরা নাটকে অভিনয় করেছেন, গানও করেছেন। যেমন: ‘এমন কর্ম আর করব না’ (জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, ১৮৭৭); ‘বসন্ত উৎসব’ (স্বর্ণকুমারী, ১৮৭৯); ‘মানময়ী’ (জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, ১৮৮০); ‘বিবাহ উৎসব’ (রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ একাধিক প্রণেতা, ১৮৮৪) প্রভৃতি নাটিকাগুলিতে বাড়ির মেয়ে-বউরা অংশ নিয়েছিলেন। এরপর ‘বাল্মীকি-প্রতিভা’ (১৮৮১) লিখে উনিশ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের নাট্যপ্রতিভার আত্মপ্রকাশ। সেখানে তাঁর দুই ভাইঝি— প্রতিভা ও ইন্দিরা— অভিনয় করেছিলেন সরস্বতী ও লক্ষ্মীর ভূমিকায়।

বাল্মীকি প্রতিভা

বাবা-জেঠা, ভাশুর-দেওরের সঙ্গে অসঙ্কোচে সংলাপ বলা, গানে গলা মেলানো— উনিশ শতকে এ-ও মেয়েদের জন্য এক বিপ্লব বইকি। তবে সে-সব অনুষ্ঠান হত কেবল পরিবারের সদস্য, ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব ও বিশিষ্ট কিছু নিমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে।

শান্তিনিকেতনেও রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন নাটক ও গীতিআলেখ্যে নাচ করেছেন ছাত্রছাত্রীরা— বিশেষ করে শারদোৎসব (১৯০৭), ফাল্গুনী (১৯১৫), বর্ষামঙ্গল (১৯২১), বসন্ত (১৯২৩)-এ।

রবীন্দ্রনৃত্যের এই প্রথম যুগে নাচের কোনও বিশিষ্ট শৈলী খুব প্রথাগতভাবে আয়ত্ত ছিল না। ছাত্রছাত্রীরা কিছুটা মণিপুরী, কিছু গুজরাতি মন্দিরা নৃত্য, গরবা, কিংবা বাউল নাচের দেহভঙ্গিমা থেকে অনুপ্রেরণা নিতেন। গানের কথাকে দেহের ছন্দ, মুখের অভিব্যক্তি, সাজসজ্জা— সব কিছুর মধ্যে দিয়ে দৃশ্যমান করে তোলাই ছিল উদ্দেশ্য। ১৯২৫ সালে মণিপুর থেকে নবকুমার সিংহ এলে নিয়মিত নাচের ক্লাস শুরু হয়। তবু শেষ বর্ষণ (১৯২৫) যখন কলকাতায় অভিনীত হয়, তখনও মেয়েরা গানের সঙ্গে যে-সব ভঙ্গিমা করেছিল, তা দেখে ফরোয়ার্ড পত্রিকার (১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২৫) প্রতিবেদকের মনে হয়েছিল, এ যেন সঙ্গীতের সঙ্গে ‘প্যান্টোমাইম’ বা মূকাভিনয়।

নটীর পূজা এ সব থেকে স্বতন্ত্র। সেখানে নাচ কেবল গানের এক বাড়তি মাত্রা নয়— নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রই এক নৃত্যপারদর্শী মেয়ে, এবং গোটা নাটকটি দাঁড়িয়ে রয়েছে তার শেষ নৃত্যটির উপর। অভিনেত্রীরাও নেহাত বালিকা নন, তরুণী। শুধু আমজনতার সামনে অভিনীত হবে, তা-ই নয়— টিকিট কেটে দেখতে হবে। রঙ্গমঞ্চের নাটকের মতোই, পোস্টার ছাপিয়ে বিজ্ঞাপন করা হবে নাটকের। হলুদ পটভূমিতে লাল রঙে নৃত্যরত নটীর অবয়ব চিত্রিত করে অতি সুদৃশ্য, নান্দনিক পোস্টার তৈরি করে দিলেন নন্দলাল। ১৯৩১ সালে, রবীন্দ্রনাথের সত্তর বছর পূর্তিতে যখন কলকাতায় ‘নটীর পূজা’ ফের মঞ্চস্থ হয়, তখন এই পোস্টারেরই আরও পরিমার্জিত রূপ প্রকাশ করা হয়েছিল।

১৯২৭ সালের মাঘ মাস। জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অনুষ্ঠানের দিন, রবীন্দ্রনাথ দর্শকদের মধ্যে থেকে, হাতে ভিক্ষাপাত্র নিয়ে, “পূর্ব-গগন ভাগে, দীপ্ত হইল সুপ্রভাত তরুণারুণ রাগে” গাইতে গাইতে এগিয়ে এসে উঠলেন মঞ্চে। অত ভোরে রাজপুরীতে সবাই ঘুমিয়ে, জেগে কেবল নটী— তিনিই প্রণাম করে আশীর্বাদ পেলেন ভিক্ষু উপালীর।

এই দৃশ্যটিও যেন দ্ব্যর্থক— নাটকে তা নটীকে সন্ন্যাসীর আশীর্বাদ, আর জোড়াসাঁকোর মঞ্চে প্রকাশ্যে বঙ্গকন্যার নৃত্য পরিবেশনে ‘গুরুদেব’ রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদ। দুটি বার্তাই পৌঁছে গেল দর্শকের কাছে।

পরপর দু-দিন সব আসন একেবারে ভরে গেল— এক ইঞ্চি জায়গাও ছিল না কোথাও। যাঁরা দাঁড়িয়ে নাটক দেখলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন সাহিত্যিক পরিমল গোস্বামী। ক্ষণকালের জন্য রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাব, বা নারী-চরিত্রের প্রাধান্য— এগুলো তাঁকে অতটা নাড়া দেয়নি, যতটা শেষ দৃশ্যে শ্রীমতীর নাচ। “এমন মন পবিত্র করা একটি দৃশ্য মঞ্চে দেখা যায় না… মনের মধ্যে এর রেশ নিয়ে ফিরলাম। সব যেন স্বপ্নবৎ মনে হতে লাগল। বহুদিন মন থেকে এই দৃশ্যটি সরাতে পারিনি।” তাঁর মনে ক্রমে উপলব্ধি জাগে যে শিল্পের মাধ্যমে শিল্পী নিজেকেই দান করেন, শ্রীমতীর আত্মনিবেদনের মতো। “শ্রীমতীকে তাই আমার সকল বড় শিল্পীর প্রতীক বলে মনে হয়েছিল। এ ধারণা আর অদ্যাবধি নষ্ট হয়নি,” তিনি লিখেছেন স্মৃতিচিত্রণ (১৯৫৮) বইতে।

আরও একজনের মনে “সুগভীর ছাপ” রেখে গিয়েছিল নটীর পূজা— তিনি নাট্যব্যক্তিত্ব অহীন্দ্র চৌধুরী। তিনিও সেদিন জোড়াসাঁকোয়, দর্শকদের দলে। নিজের স্মৃতিকথা নিজেরে হারায়ে খুঁজি (১৯৬১) গ্রন্থে তিনি লিখেছেন:

আমাদের আরেক অভিজ্ঞতা হলো এ ব্যাপারে, মঞ্চে ভদ্রমহিলার নাচ দেখলাম আমরা সেই প্রথম। অন্তত তার আগে কোনো ভদ্রমহিলার নাচ দেখেছি, একথা মনে পড়ে না।… জোড়াসাঁকোর সেই দিনের সেই অভিনয়, বিশেষ করে ভদ্রঘরের মেয়েদের পক্ষে প্রকাশ্যে নৃত্য পরিবেশন— নবীনেরা হৈ-হৈ করে উঠলেন, প্রশংসায় স্বতঃস্ফূর্ত। আর, প্রবীণেরা হয়ে উঠলেন নিন্দায় মুখর।

প্রবাসী-র সম্পাদক, রবীন্দ্র-অনুরাগী রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় মেয়েদের নাচের পক্ষে কলম ধরলেন। তাঁর মতে, গানের মতো নাচের মধ্যে দিয়েও ধর্মভাব, ভক্তিভাব, নির্মল আনন্দ, শোক প্রভৃতি ব্যক্ত হতে পারে। “বালিকা বা মহিলারা তাহা করিলে দোষের বিষয় মনে করি না।” (প্রবাসী, বৈশাখ ১৩৩৩)। এই বক্তব্যের প্রত্যাঘাত ছাপা হল জ্যৈষ্ঠ সংখ্যাতেই। ‘জনৈক পাঠক’-এর বক্তব্য ছিল চাঁছাছোলা— যাঁরা মেয়েদের নাচ দেখতে যান, তাঁরা অধিকাংশই ছাত্র এবং কেউ কেউ দুষ্ট প্রকৃতির লোক। “উহাদের মনে ক্বচিৎ কখনও ভক্তিভাবের উদ্রেক হয়।” উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন। নটীর পূজা অভিনয়ের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে “Special dance of Srimati Gouri Devi”— এই ভাষায়, যেভাবে পেশাদার কোম্পানিরা বিজ্ঞাপন দেয়: ‘বিশেষ আকর্ষণ! মিস এক্স-এর কন্টিনেন্টাল ডান্স।’ ‘জনৈক পাঠক’-এর পর্যবেক্ষণ, “মহিলাদের নৃত্যাদি না থাকিলে অতি অল্পসংখ্যক লোকই যাইত।” মনুষ্যচরিত্রের উপর এমন পাকাপোক্ত অনাস্থা হয়তো প্রখর বাস্তবজ্ঞানের পরিচয়, তবে এই ‘পরম পাকা’ প্রবীণরাই (তাঁদের কেউ কেউ বয়সে নবীন হলেও) সৃজনশীল মানুষদের দুঃস্বপ্ন।

সমাজের এই নেতিবাচক মনোভাব যেন তাঁর নাটকের কুশীলব মেয়েদের ক্ষতি না করে, তার জন্য কতরকমভাবেই না চেষ্টা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। গৌরীর ভাবী বর সন্তোষকুমার ভঞ্জ এবং রানি লোকেশ্বরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ মালতী নামের এক ছাত্রীর ভাবী বর নবকৃষ্ণ চৌধুরী— এই দুজনকে নটীর পূজা দেখার জন্য সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁদের বসানো হয়েছিল সামনের সারিতে; একই সারিতে বসেছিলেন গগনেন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, সমরেন্দ্রনাথ। ভঞ্জ মশায়ের এক পাশে জগদীশচন্দ্র বসু, অন্য পাশে বাংলার তৎকালীন গভর্নর। এ যেন শিল্পীর সম্মানের নির্মাণ। মেয়েরা যাতে প্রকাশ্য মঞ্চে নাচের জন্য শ্বশুরবাড়িতে নিন্দিত না হন, রবীন্দ্রনাথ তা যেন সর্বশক্তিতে নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন— সমাজের সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তিদের মধ্যে নৃত্যশিল্পীর আত্মীয়দের স্থান করে দিয়ে।

এই উদ্যোগে সামিল ছিলেন ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যরাও। রবীন্দ্রনাথের থেকে পাওয়া একটি আরবি জোব্বা পরে সেদিন নটীর পূজা দেখতে এসেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। অনুষ্ঠানের শেষে নিজের গা থেকে খুলে সেটি পরিয়ে দিয়েছিলেন গৌরীকে— “এই যে, তোর নাচের বকশিশ্।” এ যেন কেবল শিল্পীর পুরস্কার নয়, শিল্পচর্চারই সম্মাননা। সমাজের দৃষ্টিতে যে শিল্পের স্থান পতিতাপল্লীতে, সেই নৃত্যকে দেবমন্দিরে, বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে অভিনীত নটীর পূজা

নটীর পূজা-র সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে নাচ সম্পর্কে সঙ্কোচ ও অপবাদের ভয় অনেকটাই কেটে গেল কলকাতার ভদ্র পরিবারগুলির মধ্যে। হেমেন্দ্রকুমার রায় লিখেছেন, নটীর পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েক দিন পরেই দেখা গেল, বাঙালি বালিকা ও কিশোরীরা বিপুল আগ্রহে নটীর পূজা-র নাচ নকল করার চেষ্টা করছে। ১৯২৭ সালের গোড়ায় জোড়াসাঁকোয় নটীর পূজা মঞ্চস্থ হওয়ার পর, সে-বছর এপ্রিলে ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে এবং কোরিন্থিয়ান থিয়েটার হলে ‘সম্ভ্রান্ত ভদ্রমহিলাগণ’ নটীর পূজা অভিনয় করেন। পাটনাতেও নাটকটি মঞ্চস্থ হয়, নটীর ভূমিকায় অভিনয় করেন বিজয়া দাস— যিনি পরে পরিচিত হবেন সত্যজিৎ-ঘরণী বিজয়া রায় হিসেবে।

একদিকে উদয়শঙ্করের দলে মেয়েদের নৃত্যচর্চা ও মঞ্চায়ন, অন্যদিকে শান্তিনিকেতনে মণিপুরি, কথাকলি এবং দেশীয় নানা নৃত্যশৈলীর অনুশীলন, বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের কলকাতা-সহ বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠান— নৃত্যের এই প্রসার বাঙালি মেয়েদেরও মুক্তি দিল দেহ সম্পর্কে সঙ্কোচ ও জড়তা থেকে। খুলে দিল নিজেকে প্রকাশ করার এক নতুন দিগন্ত।

রবীন্দ্রনাথও তাঁর অভ্যাসমতো একটা সীমা অতিক্রম করেই পরবর্তী বেড়াগুলিকে ধূলিসাৎ করলেন। গোড়ায় নাচকে ‘উপাসনা’ বলে দেখিয়ে সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুললেও, দ্রুত ভক্তি থেকে ঢুকে গেলেন রোম্যান্সে। ১৯৩৬-এর চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যের প্রধান ভাবসম্পদ প্রেম— তার মুগ্ধতা, বিষাদ ও উল্লাস। “প্রেমের জোয়ারে ভাসালে দোঁহারে” একটি দ্বৈতনৃত্য হিসেবেই পরিকল্পিত হয়েছিল। আর সেই সঙ্গে নারীর স্বাতন্ত্র্যের ঘোষণা— যা আজও উদ্দীপ্ত করে মেয়েদের। চণ্ডালিকা, চিত্রাঙ্গদা, শ্যামা-র মতো নৃত্যনাট্যে নাচ এসেছে নাচ হয়েই; তাকে অতিক্রম করে অপর কিছু হয়ে ওঠার দায় আর চাপাতে হয়নি শিল্পীদের কাঁধে।

রবীন্দ্রনৃত্যের গবেষক, অধ্যাপক শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায় লিখছেন, নটীর পূজা রবীন্দ্রনৃত্যের প্রথম দৃঢ় ভিত্তি। এর তাৎপর্য অনেকগুলি— এটি বাংলার তথা ভারতের শিক্ষিত, সংস্কৃত মহলে মেয়েদের নাচের উপর নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ জানাল, সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তনের সঙ্কেত দিল। বাঙালি মেয়েরা নৃত্যশিক্ষা, চর্চা ও পরিবেশনার মাধ্যমে মানসিক উৎকর্ষ ও আনন্দ আস্বদনের পথ দেখতে পেল। সেই সঙ্গে সমসাময়িক বিষয়ের অভিনয়কে— এক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক— সমাজ-সচেতনতার হাতিয়ার হয়ে উঠল।

সাফল্যের গৌরব এত উজ্জ্বলতার পাশাপাশি রয়ে গিয়েছে কিছু অন্ধকারও। প্রথমটি— বিবাহ নামক লৌহপিঞ্জর। ১৯২৭ সালের মাঘে জোড়াসাঁকোয় নটীর পূজা মঞ্চস্থ হওয়ার পরেই গৌরীদেবীর বিয়ে হয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ গৌরীকে দুটি আশীর্বাদী কবিতা পাঠান বটে, তবে ব্যক্তিগত চিঠিতে আফশোস প্রকাশ করেছেন। নটীর পূজা-র টিকিট কেনার ভিড়ে দরজা ভাঙার দশা হয়েছিল, তার বর্ণনা দিয়ে নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লিখছেন, “ইচ্ছে করলে আরো ২০/২৫ দিন এইরকম পূর্ণ বেগে ব্যবসা চালাতে পারা যেত। কিন্তু হায়রে, আসচে রবিবারে গৌরীর বিয়ে। বাস্ হয়ে গেল।”

এই আক্ষেপ আজও ধ্বনিত হচ্ছে কত না নৃত্যগুরুর অন্তরে। বহুদিনের বহু পরিশ্রমে যখন কোনও ছাত্রী শিক্ষার্থী থেকে শিল্পী হয়ে উঠছে, কুঁড়ি থেকে ফুল ফুটছে, ঠিক তখনই এসে পড়ে বিয়ের দিনক্ষণ। অতঃপর সন্ধ্যার পরে বাইরে থাকায় বাড়ির লোকেদের কুঁচকোনো ভুরু, নিজের শহরের বাইরে পারফর্মেন্স-এর কথা উঠলে চোখ কপালে— শুরু হয় এসব। বিয়ের আগে যে পাত্রটি সবান্ধব এসে বাগদত্তার নাচ দেখে যায়, বিয়ের পরে সে-ই বলে— “যা করবে, সন্তান-সংসার সামলে করবে।”

সাধারণত নাটক বা নাচ অর্থকরী হয় না, বরং ঘর থেকে টাকা দিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হয়। তাই এগুলির চর্চাকে আজও শিল্পসাধনা না বলে ‘শখ’ বা ‘বিনোদন’ বলেই দেখা হয়। বাণী বসুর গান্ধর্বী উপন্যাসটি ধ্রুপদী গানের শিল্পীর জীবনের যে কাহিনি বলেছে, নৃত্যশিল্পীর জীবনসত্য তার চেয়ে খুব ভিন্ন নয়। গত একশো বছরে নাচের চর্চা বহুগুণে বেড়েছে, কিন্তু বিয়ের পর মঞ্চ থেকে নিঃশব্দে সরে যাওয়ার রীতিও অব্যাহত।

দ্বিতীয় অন্ধকারটি আরও গাঢ়— সেখানে রয়ে গিয়েছে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অবহেলা ও বৈষম্য। অহীন্দ্র চৌধুরীর স্মৃতিকথায় পাওয়া যায়, নটীর পূজা স্টার থিয়েটারে মঞ্চস্থ করার জন্য তাঁর কাছে দরবার শুরু করেন এক থিয়েটারগোষ্ঠীর কর্তারা। রবীন্দ্রনাথের কাছে অহীন্দ্র এবং অন্যান্যরা অনুমতি চাইতে গেলেন। অনেক আলোচনা হল নাটকটি নিয়ে। কথাপ্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বললেন, “তোমাদের অসুবিধে ঐ ওদের নিয়ে।” প্রথমে অহীন্দ্র কথাটার অর্থ বুঝতে পারেননি। তাঁর মনে হচ্ছিল, তাঁদের থিয়েটারের মেয়েরা তো যে-কোনও নাচ-গান চট করে তুলে নিতে পারে, তা হলে অসুবিধে কোথায়? ক্রমে বুঝলেন, সমাজে যাঁরা ‘অপাংক্তেয়’, তাঁদের মধ্যে থেকে অভিনেত্রী নির্বাচনের দিকেই ইঙ্গিত করছেন রবীন্দ্রনাথ।

“সেদিন ওঁর কাছ থেকে বাড়ি ফিরে আসবার পথে এই কথাই মনে আলোড়ন তুলছিল— বাংলা থিয়েটারের সামাজিক মর্যাদাই যে শুধু নটীকুলের জন্য ক্ষুণ্ণ হয়েছিল তা নয়, নটীর সংস্পর্শ থাকার দরুন, বাংলার দুজন শ্রেষ্ঠ মনীষী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও রবীন্দ্রনাথ— এঁদের প্রত্যক্ষ করস্পর্শ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অথচ নটী না হলে বাংলা থিয়েটার দাঁড়াতেই পারত না,” লিখছেন অহীন্দ্র, নিজেরে হারায়ে খুঁজি বইটিতে। একইভাবে খেদ প্রকাশ করে সমকালীন নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত লিখেছেন, “[আমায় ক্ষমো হে ক্ষমো] নাচটি আমাদের কোনও না কোনও নর্ত্তকী ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। যা আমাদের রঙ্গালয়ে পাওয়া যাবে না তা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত প্রভাব … দর্শকরা যে মন নিয়ে জোড়াসাঁকোর অভিনয় দেখতে গিয়েছিলেন, সেই মন নিয়ে তাঁরা যদি আমাদের রঙ্গালয়ে অভিনয় দেখতে আসেন, তাহলে জোর করে একথা বলতে পারি যে, জোড়াসাঁকোর অভিনয় দেখে তাঁরা যেমন আনন্দ পেয়েছিলেন, আমাদের রঙ্গালয়ের অভিনয় দেখে তাঁরা তার চেয়ে কম আনন্দ পাবেন না।” (নাটমন্দির, নটরাজ, ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ)

রবীন্দ্রনাথের সম্ভবত দর্শকদের উপর সেই ভরসা ছিল না। ইতিপূর্বে তিনি তাঁর চিরকুমার সভা, গৃহপ্রবেশ, শোধ-বোধ নাটকগুলি রঙ্গমঞ্চে অভিনয়ের অনুমতি দিয়েছিলেন। ফলে রঙ্গমঞ্চের নটনটীদের প্রতিভায় তাঁর অনাস্থা ছিল— এমনটা বলা চলে না। কিন্তু নটীর পূজা দিতে রাজি হলেন না। তিনি কি চাননি যে ‘ক্ষমো হে ক্ষমো’-র উপাসনা-নৃত্য থিয়েটারের কোনও পেশাদার নৃত্যশিল্পীর দেহে মূর্ত হোক? না কি, তিনি যে নাচটি দিয়ে ‘ভদ্রমহিলা’দের নাচকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, সেই নাচ রঙ্গমঞ্চের নটীদের না দিয়ে নিজের বৃত্তের মেয়েদের সুনাম বাঁচাতে চেয়েছিলেন? নটীরা যে নাচ করছে, ভদ্র মেয়েরাও সেই নাচ করছে— দর্শকের মনে তার কেমন অভিঘাত হবে, সে-কথা ভেবে বিপত্তি উদয় হওয়ার আগেই নিবৃত্ত করতে চেয়েছিলেন হয়তো। তেমন চিন্তা করে থাকলে রবীন্দ্রনাথকে দোষ দেওয়া চলে না। তিনি তাঁর ছাত্রীদের অশালীন আক্রমণ থেকে আড়াল করেছেন— সে তো ভালো কথা।

তবে এক আশ্চর্য স্ববিরোধ চোখে পড়ে একশো বছরের এ-পার থেকে। নটীর ভূমিকায় অভিনয়, নৃত্য ভদ্রমহিলাদের মঞ্চ-পরিবেশনাকে প্রতিষ্ঠা দিল বাংলায়। কিন্তু যাঁরা বাস্তবে নটী, নাচ আর অভিনয় যাঁদের জীবিকা, তাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে সরিয়ে রাখা হল কেবল তাঁদের সামাজিক পরিচয়ের জন্যই! মনুষ্যত্বের মর্যাদা, শিল্পীর সম্মান থেকে এই মেয়েদের বঞ্চনার ধারায় কোনও ছেদ পড়ল না। যে নাচ শুধু নাচ নয়, সেই ‘অমিত বিত্ত’ সে-দিনের নটীদের ভাগ্যে জোটেনি— রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকেও না।


[1] আনন্দবাজার পত্রিকা, ২ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭।
[2] ঘোষ, কুমারেশ। ‘অবতার’, যষ্ঠি-মধু। বৈশাখ ১৩৮৫।
[3] যাঁদের দেখেছি, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৯৪১।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5088 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

  1. নমস্কার লেখাটা পড়লাম… সবশেষে একটাই কথা তুলে আনতে ইচ্ছে হল… যুক্তি দিয়ে অবশ্যই|
    আমাদের নটীর মঞ্চে আসা নিয়ে বিদ্যাসাগরের সেই অনুমান… মনে পড়ল… দৃশ্যত শিল্পীর সঙ্গে সঙ্গে তার পরিচয় দিয়ে শিল্পীর বিচার করা হয়… আজও __
    আবার সেই অনুমান মিলে যায় রবি ঠাকুরের ভাবনায়…
    মধ্যে রইল এদেশের সমাজ, যেখানে শিল্পীর বিচার হয় তাঁর জন্মের ইতিকথার সঙ্গে… নইলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটকের কাজ বঙ্গ রঙ্গমঞ্চের নটীদের পারা না পারার প্রশ্ন ওঠেই না… তথাপি সাধুবাদ জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য…

আপনার মতামত...