বাঁশকে ঘিরে মাহালিদের জীবন— নিরন্তর টিকে থাকার লড়াই

দেবাশিস মিথিয়া

 


বাঁশকে ঘিরে যে কাজ— তা কেবল একটি পেশা নয়, এটি মাহালিদের ঐতিহ্য, তাঁদের সংস্কৃতি, তাঁদের পরিচয়। মাহালিদের হাতে গড়া পণ্য শুধু স্থানীয় বাজারেই সীমাবদ্ধ থাকে না; ছড়িয়ে পড়ে দেশের নানা প্রান্তে, এমনকি পৌঁছে যায় ভিন দেশেও। সেইসব পণ্যের গায়ে লেগে থাকে তাঁদের শিল্পের ছোঁয়া, বয়ে নিয়ে যায় তাঁদের নিরন্তর শ্রমের গল্প। মাহালিদের এই বাঁশ-নির্ভর জীবন কিন্তু বাঁশের মতো সোজা নয়— বরং অসংখ্য বাঁকে ভরা। তাঁদের জীবনযাত্রার গভীরে লুকিয়ে আছে দীর্ঘশ্বাস, অভাব আর অনটনের এক কঠিন বাস্তব। জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে নানা সমস্যা

 

ঝাড়খণ্ডের সারাইকেলা-খরসাওয়া জেলার মুরূপ গ্রামের মাহালিপাড়া— যেখানে বাঁশের প্রতিটি ফালিতে জীবন জড়িয়ে থাকে— সেখানেই বাস বছর চোদ্দোর সুলতার। সকাল থেকেই সে বাঁশের কাঠি দিয়ে ছোট একটা ঝুড়ি বুনছে। তার হাতের আঙুলের নিপুণ ছোঁয়ায় বাঁশের সরু কাঠিগুলি যেন একটা ছন্দে নাচছে। সুলতা আস্তে আস্তে কয়েকটা ছোট কাঠির ভিতর দিয়ে লম্বা একটা কাঠিকে এমনভাবে নিয়ে যাচ্ছে যে দেখে মনে হয়, একে অন্যকে ভালোবাসায় বাঁধছে। আর ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে ঝুড়ির রূপ।

 

সুলতার পাশে বসে বাঁশের ছাল ছাড়াচ্ছে তার দশ বছরের ভাই রামু। ধারালো ছুরি চালাতে তার ছোট হাতদুটো এতটুকুও কাঁপছে না। ছাল ছাড়াতে ছাড়াতে রামু ফিসফিসিয়ে তার দিদিকে জিজ্ঞেস করছে, “দিদি, আজ বাবা কি ভালো বাঁশ পেয়েছে?”

ওদের বাবা জয়দেব আর দাদা দীপক ভোর হতেই দূরের জঙ্গলে গিয়েছে বাঁশের খোঁজে। শুধু তারা নয়, গ্রামের বাকি পুরুষ-মহিলারাও গেছে। ভালো বাঁশের খোঁজে এদের কখনও এক গ্রাম, কখনও দু-গ্রাম পেরিয়ে অনেক দূরে যেতে হয়। দিনের শেষে সস্তা ও পছন্দসই বাঁশ পেলে ওদের মুখে হাসি ফোটে।

 

সুলতা জানে, তাদের তৈরি ঝুড়ি, ডালা, কুলো, নানারকম ঘর সাজানোর জিনিস শুধু তাদের গ্রামের হাটেই বিক্রি হয় না— সেগুলি কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, এমনকি বিদেশেও চলে যায়। কিন্তু সেই বড় বাজারের নাগাল তাদের কাছে এখনও অধরা। ফড়েরা তাদের তৈরি জিনিস কম দামে কিনে অনেক বেশি দামে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। তবু সুলতার মনে স্বপ্ন— একদিন তারা নিজেরাই তাদের জিনিস শহরের বড় দোকানে পৌঁছে দেবে।

সন্ধ্যার পর, যখন তাদের মহল্লায় ঘুটঘুটে অন্ধকার, সেই সময় তাদের ছোট্ট কুঁড়েঘরে মাটির প্রদীপের টিমটিমে আলোয় দুই নাবালক ভাই-বোন বাঁশের নকশা নিয়ে নতুন কিছু করার কথা ভাবে। তারা স্বপ্ন দেখে এমন এক দিনের, যখন বাঁশের কাজ শুধু পেটের ভাত জোগাবে না— তাদের শিল্পকে চিনবে বিশ্ব। তাদের ছোট হাতগুলো শক্ত করে ধরে থাকে বাঁশের ফালি, আর চোখে জ্বলজ্বল করে টিকে থাকার এক অদম্য শিখা।

 

একুশ শতকের বুকে এক বিস্ময়কর ও বিবর্ণ জীবনযাত্রা

একুশ শতকের দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে— যখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় সবকিছুর রং বদলাচ্ছে— তখনও ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও বাংলাদেশের কিছু অংশে টিকে থাকা মাহালিদের জীবন বড় বিবর্ণ। এরা শুধু মানুষ নয়, বাঁশের কারিগর। বাঁশ তাদের কাছে নিছক একটি গাছ নয়— এটি তাদের রক্তে মিশে থাকা এক শিল্প, তাদের অস্তিত্বের মূলভিত্তি।

অবাক লাগে ভাবতে— এই যুগেও, যেখানে তথাকথিত শিক্ষাই সফলতার মাপকাঠি, সেখানে মাহালি বাবা-মায়েরা নিজেদের সন্তানদের স্কুলে না পাঠিয়ে পরম যত্নে শেখান বাঁশের বুনন। তাদের কাছে হাতে গড়া একটি ঝুড়ি, একটি কুলা কিংবা ঘর সাজানোর উপকরণ যেন জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক সুতোয় বাঁধা গল্প।

 

বাসস্থান: যেখানে বাঁশই জীবন

মাহালিরা মূলত ভারত ও বাংলাদেশে ছড়িয়েছিটিয়ে বাস করে। তাদের বসতিগুলো প্রায়শই নদী, বন বা পাহাড়ের আশেপাশে হয়, যেখানে তাদের জীবন ও জীবিকার প্রধান উৎস, বাঁশ, সহজে মেলে। ভারতের মধ্যে ঝাড়খণ্ড তাদের প্রধান বাসস্থান। ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী, এই রাজ্যেই মাহালিদের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১.৫২ লক্ষ। মনে করা হয়, ছোটনাগপুর মালভূমিই তাদের আদি নিবাস।

এছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ (বিশেষ করে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, মালদা, বীরভূম, বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা), ওড়িশা ও আসাম রাজ্যেও তাদের উপস্থিতি দেখা যায়।

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলি, যেমন— রাজশাহী, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ (বিশেষত রায়গঞ্জ, তাড়াশ ও সলঙ্গা উপজেলা), নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং খুলনার কয়রা উপজেলায় মূলত মাহালিদের বাস। এছাড়া সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলাতেও তাদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

 

জীবন ও জীবিকার বাঁকে বাঁকে বাঁশ

মাহালিদের জীবনযাত্রা যেন বাঁশের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে। প্রতিটি সকাল তাদের জন্য এক নতুন দিনের বাঁশের খোঁজে বের হওয়ার ডাক নিয়ে আসে। পান্তা খেয়ে, দল বেঁধে পুরুষ-নারী বেরিয়ে পড়েন— গ্রাম থেকে গ্রামে, জঙ্গল থেকে জঙ্গলে— খুঁজে ফিরতে থাকেন সেই ‘সঠিক বাঁশ’। সস্তায় পছন্দসই বাঁশ পেলে দিনের শেষে সেই বাঁশের বোঝা মাথায় করে কিংবা ভ্যানে চাপিয়ে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফেরা।

কিন্তু সে ক্লান্তি যেন জন্ম দেয় এক গভীর সন্তুষ্টির, কারণ পরদিনই সেই বাঁশ তাঁদের হাতের ছোঁয়ায় হয়ে উঠবে দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস— যা তাঁদের পরিবারের মুখে ভাত তুলে দেবে। এই বাঁশই তাঁদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি।

তাঁদের সমাজে যখন বিয়ের পাত্রী দেখতে আসা হয়, প্রথম প্রশ্নটিই থাকে— “মেয়ে বাঁশের কাজ পারে তো?” এই একটি প্রশ্নেই ফুটে ওঠে বাঁশের প্রতি তাঁদের অগাধ শ্রদ্ধা, তাঁদের জীবনে এই শিল্পের জীবনে গুরুত্ব।

বাঁশকে ঘিরে যে কাজ— তা কেবল একটি পেশা নয়, এটি তাঁদের ঐতিহ্য, তাঁদের সংস্কৃতি, তাঁদের পরিচয়। তাঁদের হাতে গড়া পণ্য শুধু স্থানীয় বাজারেই সীমাবদ্ধ থাকে না; ছড়িয়ে পড়ে দেশের নানা প্রান্তে, এমনকি পৌঁছে যায় ভিন দেশেও। সেইসব পণ্যের গায়ে লেগে থাকে তাঁদের শিল্পের ছোঁয়া, বয়ে নিয়ে যায় তাঁদের নিরন্তর শ্রমের গল্প।

 

অভাবের বুনন ও টিকে থাকার লড়াই

মাহালিদের এই বাঁশ-নির্ভর জীবন কিন্তু বাঁশের মতো সোজা নয়— বরং অসংখ্য বাঁকে ভরা। তাঁদের জীবনযাত্রার গভীরে লুকিয়ে আছে দীর্ঘশ্বাস, অভাব আর অনটনের এক কঠিন বাস্তব। জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে নানা সমস্যা, যেমন:

কাঁচামালের সহজলভ্যতা হ্রাস ও মূল্যবৃদ্ধি তাঁদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। ভালো মানের বাঁশ খুঁজে বের করা ও সংগ্রহ করা দিন দিন আরও কঠিন ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। বাজারে তাঁদের তৈরি পণ্যের দাম তেমন না বাড়লেও বাঁশের দাম বাড়ছে, ফলে তাদের লাভের অংশ ক্রমেই কমছে।

বাজারজাতকরণের সমস্যা মাহালিদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে। পুঁজির অভাবে তাঁরা প্রায়শই স্থানীয় বাজার বা ফড়েদের কাছে তাঁদের তৈরি পণ্য জলের দরে বিক্রি করতে বাধ্য হন। সারা দিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে তৈরি সেই পণ্য ফড়েরা কম দামে কিনে চড়া দামে বিক্রি করে মোটা মুনাফা লুটছে।

 

আধুনিক বাজারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের অভাব তাঁদের উন্নতির পথে এক বড় বাধা। একটি মাহালি পরিবার সারা দিনের পরিশ্রমে তৈরি বাঁশের জিনিস বিক্রি করে সাধারণত দিনে ২০০-৩০০ টাকা আয় করতে পারে। এই আয় তাঁদের পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটাতে খুবই সামান্য।

তাছাড়া, আধুনিক সরঞ্জামের অভাব তাঁদের কাজকে আরও কঠিন করে তোলে। পুরনো পদ্ধতিতে কাজ করায় সময় বেশি লাগে, উৎপাদন কম হয়। ফলে প্লাস্টিক বা অন্যান্য সস্তা উপকরণ দিয়ে তৈরি পণ্যের সঙ্গে বাঁশের পণ্যের প্রতিযোগিতা করা তাঁদের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।

 

শিক্ষার অভাব তাঁদের জীবনের সম্ভাবনাগুলিকে সীমিত করে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই শিল্পে জড়িয়ে থাকায় তাঁরা মূলধারার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত— ফলে ভালো চাকরির সুযোগ তাঁদের কাছে অনেক দূরের ব্যাপার।

স্বাস্থ্য ও পুষ্টির অভাব তাঁদের দারিদ্র্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। অসুস্থতা মানেই আয়ের উৎস বন্ধ, আর চিকিৎসার খরচ তাঁদের সীমিত আয়কে আরও গ্রাস করে। অনেক মাহালি পরিবারই ভূমিহীন— ফলে কৃষিকাজের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগও তাঁদের নেই।

তাঁদের জন্য সরকারি বা বেসরকারি কিছু উদ্যোগ থাকলেও, সচেতনতার অভাব ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সেসব সুবিধা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের নাগালে আসে না। ফলে তাঁদের জীবনে বড় কোনও পরিবর্তন আসেনি।

 

আশার আলো: সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ

তবে এই অন্ধকারেও আশার ক্ষীণ আলো দেখা যায়। সরকার ও কিছু বেসরকারি সংস্থা মাহালি জাতির জীবনযাত্রার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বাঁশ-শিল্পের দক্ষতা বাড়াতে এবং নতুন ডিজাইন শেখাতে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। হস্তশিল্প মেলা ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তাঁদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ করে দিয়ে বাজার সংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে, যাতে তাঁরা নিজেদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য পান। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে কাঁচামাল কেনা ও ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা করা হচ্ছে।

কিছু এলাকায় শিশুদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা চলছে। মাহালিদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে।

বাংলাদেশে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট বাঁশের নতুন ব্যবহার ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে, যা মাহালি শিল্পীদের আধুনিক কৌশল শিখতে সাহায্য করছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ বিষয়াদি বিভাগ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ও উন্নয়নমূলক তহবিল প্রদান করছে। এছাড়া, বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও— বাঁশ চাষ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনে সহায়তা করে মাহালিদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করছে।

 

অন্যদিকে, ভারতে মাহালিদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনও প্রকল্প না থাকলেও, তারা তফসিলি জনজাতি হওয়ায় সরকারের তফসিলি জনজাতিদের সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলি থেকে উপকৃত হন। উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রকের অধীনে প্রধানমন্ত্রী জনজাতি আদিবাসী ন্যায় মহা অভিযান, ন্যাশনাল ব্যাম্বু মিশন, ক্ষুদ্র বনজ পণ্যের জন্য ন্যূনতম সহায়তা মূল্য, বন ধন বিকাশ কার্যক্রম, স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন, এবং শিক্ষা সহায়তা ইত্যাদি প্রকল্পগুলি মাহালি সমাজের অগ্রগতিতে সহায়ক হচ্ছে। এই উদ্যোগগুলি মাহালি শিল্পীদের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বাজারজাতকরণে কার্যকর সাহায্য করছে।

এই উদ্যোগগুলি প্রশংসনীয় হলেও, মাহালি জাতির একটি স্থিতিশীল ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের জন্য আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন। তাঁদের নিজস্ব দক্ষতা, ঐতিহ্য ও শিল্পের প্রতি গভীর ভালোবাসাকে সম্মান জানিয়ে যদি সঠিক ও সুপরিকল্পিত সহায়তা প্রদান করা যায়, তবে এই বাঁশের কারিগররা মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে।

মনে রাখতে হবে, মাহালিদের হাতে গড়া প্রতিটি বাঁশের পণ্য শুধুই একটি শিল্পকর্ম নয়— তা এক জাতির টিকে থাকার, স্বপ্ন দেখার ও সংগ্রাম করার জীবন্ত দলিল।


*সমস্ত ছবিগুলি লেখকের তোলা

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5217 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...