সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
অনুক্রমিকভাবে ঘটে যাওয়া এমন সব বিপুল বিপর্যয় যতগুলো প্রাণ কেড়ে নিল, শত শত কোটি টাকার সম্পদ নিমেষেই লোপাট হয়ে গেল, পরিবেশ পরিমণ্ডলের, বাস্তুতন্ত্রের যে অপরিমেয় ক্ষতি হল তার কণামাত্র পূরণের দায় বা ক্ষমতা কোনও প্রশাসনের নেই। হিমালয়ের বুকে যথেচ্ছ দাপাদাপির পরিণতি যে এমনটাই হবে তা প্রশাসন, প্রযুক্তিবিদ, ইঞ্জিনিয়াররা জানেন না। ক্ষীরগঙ্গা নদীর গতিপথ আটকে তৈরি করা হয়েছে সব বিলাসবহুল হোটেল, আবাস। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব শেষ
দেশে দেশে এই বার্তা রটি গেল ক্রমে,
আবার তাণ্ডব চলে সেই দেবভূমে…
এই মুহূর্তে, ভারাক্রান্ত মনে আঙুল চালিয়ে কথকঠাকুরের মতো আবারও এক প্রলয়ঙ্কর বিপর্যয়ের কথকতা শোনাতে বসেছি— ধারালির আখ্যান। নানান সূত্র থেকে এই বিষয়ে অনেক কথাই নিশ্চয়ই সকলের জানা হয়ে গেছে। আরও একবার হিমালয়প্রমাণ ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে পরিবেশ, প্রকৃতি ও মানুষকে। এই অভিঘাতের কারণে ডঙ্কা বাজিয়ে উন্নয়নের গগনভেদী সম্প্রচার আপাতত কিছু দিনের জন্য বন্ধ থাকবে। হয়তো পরবর্তী বিপর্যয় অবধি প্রকৃতির জারি করা এই ফরমান মেনে চলার একটা অভিনয় চালিয়ে যাওয়া হবে। আর তারপর? যথা পূর্বং তথা পরং।
আবারও মেঘ ভেঙেছে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে। গত মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট ২০২৫, উত্তরকাশীর হার্সিল উপত্যকায় প্রকাণ্ড এক বাদলমেঘ ভেঙে পড়ে প্রবল হড়পা বানের সৃষ্টি হয়েছে। এমন বিপর্যয় এই অঞ্চলে নতুন নয়। একের পর এক বিপর্যয় নেমে এসেছে এখানে, রচিত হয়েছে বিপর্যয়ের নতুন নতুন অধ্যায়। এবারের বিপর্যয় হয়তো পরিচিত আখ্যাননামায় নতুন সংযোজন। এখনও পর্যন্ত যে-খবর পাওয়া গেছে তাতে মৃত্যুর সংখ্যা ৪ বলা হলেও জলের প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়েছে পর্বতের উঁচু ঢালে থাকা বহু বাড়িঘর ও আবাসিক মানুষজন, যাঁদের খোঁজে উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বহু মানুষ এখনও লাপাতা। তাঁদের সন্ধান করে পুনরায় নতুন জীবনে পুনঃস্থাপন করতে কতদিন লাগবে তা এই মুহূর্তে বলা সত্যিই মুশকিল, কেননা নতুন করে দুর্যোগের আশঙ্কা করছেন অভিজ্ঞজনেরা।

উত্তরাখণ্ড বিশেষ করে উত্তরকাশীতে এহেন ঘটনা নতুন কিছু নয়। সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে ফ্ল্যাশব্যাকে পেছনের ঘটনাক্রমগুলোর দিকে একবার নজর দেওয়া যাক্।
- উত্তরকাশী ভূমিকম্প, ১৯৯১: সরকারি হিসাব অনুযায়ী ৭৬৮ জন মানুষ মারা যান।
- মালপা ভূমিধস, ১৯৯৮: গোটা মালপা গ্রাম ধসের কবলে পড়ে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এই ঘটনায় প্রাণ হারান ২৫৫ জন।
- কেদারনাথের মহাপ্লাবন, ২০১৩: তীব্রতার বিচারে ভয়ঙ্করতম। সরকারের হিসেবে এই বিপর্যয়ের ফলে ৫৭০০ জন প্রাণ হারান। ৩০০০০০ মানুষ রাজ্যের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আটকে পড়েন। আজও এই ঘটনার কথা শুনলে স্থানীয় মানুষেরা আতঙ্কে আঁতকে ওঠেন।
- চামোলি গ্রামের বন্যা, ২০২১: ২০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যান অথবা নিখোঁজ হয়ে যান।
- ২০২২: দ্রৌপদী কা ডান্ডা নামের পার্বত্যস্থানে হিমানীসম্প্রপাত বা avalanche কেড়ে নেয় ২৭ জন তরতাজা পর্বতারোহীর জীবন।
- ধারালি গ্রামের ক্ষীরগঙ্গা নদীতে বিধ্বংসী হড়পা বান, ২০২৫: মৃতের সংখ্যা আপাতত ৪।

ফর্দ এখানেই শেষ ভাবছেন? মোটেই না। ২০১৬ এবং ২০২০-র দাবানলের দাপাদাপির কথা তো বলাই হয়নি। দাবানলের কারণে কয়েক হাজার হেক্টরের বনভূমি উজাড় হয়ে যায়। পরিবেশ-মানের ব্যাপক অবনমন ঘটে। অধিবাসীদের বাড়িঘর, অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিপন্ন হয় এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণীসম্পদ। এই তালিকা থেকে এই বিষয়টি খুব পরিষ্কার যে ধারালি গ্রাম তথা উত্তরকাশী জেলা অত্যন্ত সংবেদনশীল এক বিপর্যয়প্রবণ এলাকা। ভূমিকম্প, হিমানীসম্প্রপাত, ভূমিধস, হড়পা বান, দাবানলের মতো বিপর্যয়ের ঘটনা বারবার ওলটপালট করে দিয়েছে উত্তরকাশীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, একেবারে মাটির কাছাকাছি থাকা অগণিত সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত যাপনছন্দকে।
উত্তরকাশীর এই বিপর্যয়-প্রবণতার পেছনে এই অঞ্চলের ভৌগোলিক বিশেষত্বের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। নবীন ভঙ্গিল পর্বত হিমালয়ের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত এই অঞ্চলের গঠন, মাত্র কয়েক লক্ষ বছর আগে। ফলে অঞ্চলটি গাঠনিক সক্ষমতার বিচারে খুব সুস্থিত প্রকৃতির নয়। ২০১৬ সালে লোকসভায় পেশ করা এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে সমগ্র উত্তরাখণ্ড রাজ্যে একাধিক গাঠনিক থার্স্ট, চ্যুতিরেখা এবং পাত সংঘর্ষ ক্ষেত্র রয়েছে যা এখানে পৌনঃপুনিক বিপর্যয়ের কারণ। অথচ এই সব উপেক্ষা করেই এখানে অবৈজ্ঞানিক উন্নয়নের মোচ্ছব চলছে বছরের পর বছর ধরে— শিকড়ছাড়া বিকাশের খেসারত তো দিতেই হবে।
এ-বছর বর্ষার চেনা রূপ প্রথম থেকেই অচেনা ঠেকেছে স্থানীয় মানুষজনের। নিজেদের ঠিকমতো গুছিয়ে নেওয়ার আগেই বাদল মেঘের ঘনঘটা আর আকাশ দাপিয়ে বৃষ্টি। ধারালি গ্রামের বিপর্যয়ের বেলাতেও তেমনি কিছু ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকদের অবশ্য অভিমত, সেদিন উত্তরকাশীতে সামান্য থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের কথা নথিভুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয় আবাসিকদের সঙ্গে সাংবাদিকরাও জানিয়েছেন যে, রবিবার থেকেই টানা বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির ফলেই ক্ষীরগঙ্গা নদী ফুলেফেঁপে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে যে বিগত ৯০ দিনের মধ্যে ৮০ দিনই অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে কোনও না কোনও বিপর্যয়, যেমন বন্যা বা ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে পাহাড়তলিতে। তাছাড়া বন্যার জলের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ আবষ্কর (debris) বয়ে নিয়ে আসে ক্ষীরগঙ্গা যা এই প্রলয়ঙ্করী বিপর্যয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। এমন কাণ্ড ক্ষীরগঙ্গা আগেও ঘটিয়েছে ২০১৮ এবং ২০২১ সালে। সুতরাং বৃষ্টিপাতের কারণেই হয়তো এমন কুলছাপানো বন্যা হয়েছে। নদীর পথ আটকে চলছে অবাধ নির্মাণ। নদী তার পথ পুনর্দখল করল সরোষে।

তাহলে ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘভাঙার তত্ত্ব কি খারিজ হয়ে গেছে? না, সেই সম্ভাবনাকে একদম উড়িয়ে দেননি বিজ্ঞানীরা, তবে সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শীর কিছু কথা শুনে নেওয়া যাক্। আজকের ক্ষতিগ্রস্ত ধারালি বিগত কয়েক বছরের মধ্যে বদলে গেছে অনেকটাই। গঙ্গোত্রী তীর্থপথে অবস্থানের কারণে ধারালিতে লোকজনের ভিড় লেগেই থাকে। পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে ঝুঁকি নিয়েই অনেক বহুতল হোটেল ও যাত্রীনিবাস নির্মাণ করা হয়েছে বিগত কয়েক বছরে। এমনই একটা ৪০ কামরার হোটেলের মালিক হলেন জয় ভগবানজি। ঘটনাপ্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন—
“বেলা তখন দুটোর আশেপাশে। প্রথমে, প্রচণ্ড জোরে একটা আওয়াজ কানে এল। অনেকটাই বাজ পড়ার শব্দের মতো। এরপরেই কানে ভেসে এল গ্রামের অসহায় মানুষজনের তীব্র আর্তনাদ। তাঁরা সকলেই ভীতসন্ত্রস্ত কণ্ঠে শীৎকার করতে থাকে। আমরা এর পেছনের কারণগুলো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ঠিক এরপরেই নদীখাতের ঢাল-বরাবর কাদা, জল আর পাথরের ঢল নামে।”
ক্ষয়ক্ষতির ভয়ালতা সম্পর্কে কোনও ধারণা না থাকায় জয় ভগবানজি তাঁর নিজের বাড়ির দিকে ছুটে যান। তবে ততদূর পৌঁছনোর আগেই তিনি লক্ষ করেন যে বন্যার ঘোলা জল সেখানে পৌঁছে গেছে। বিচলিত হয়ে তিনি পায়ে হেঁটে হার্সিল গ্রামের দিকে রওনা দেন। পরে খবরের চ্যানেলগুলোর ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিও ফুটেজ দেখে ভগবানজি একেবারেই ভেঙে পড়েন। তিনি অসহায় কণ্ঠে বলেন—
“ভিডিওতে দেখলাম চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই আমার সাধের চল্লিশ ঘরের হোটেল একটা শুকনো পাতার মতো ভেসে গেল। আমি অসহায়ভাবে আমার পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু, হায়, কারও সঙ্গেই কথা বলতে পারিনি।”
ভগবানজির হোটেলের সমস্ত ঘর চারধাম যাত্রার প্রত্যাশীদের জন্য ইতোমধ্যেই বুক করা হয়ে গেছে। তবে ভাগ্যক্রমে ঘটনার মুহূর্তে কোনও যাত্রী সেখানে ছিলেন না।
প্রাথমিক সমীক্ষায় অনুমান যে মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণেই হয়তো এই বিপর্যয় ঘটেছে। এর পাশাপাশি বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে ice-rock avalanche-এর কথাও উঠে এসেছে কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ মহল থেকে। খুব সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের ব্লাঁতেনে এমনটাই ঘটেছে। ধারালির বিপর্যয় কি তাহলে সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি? অসম্ভব যে নয় সে-কথা মানছেন বিশেষজ্ঞরাই।
উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর হিমবাহরা আজ গভীর সংকটের মুখে। গঙ্গোত্রী হিমবাহের হাল মোটেই ভালো নয়। দ্রুতগতিতে পিছু হটছে এই গুরুত্বপূর্ণ হিমবাহটি। বরফের আস্তরণ সরে যাওয়ার অর্থই হল তার নিচে ঢাকা পড়ে থাকা শিলাচূর্ণ উন্মোচিত হওয়া এবং ঢালবরাবর গড়িয়ে নেমে এসে মহা বিপর্যয় ঘটানো। ধারালিতেও এমনটাই ঘটেছে বলে অনুমান করছেন একদল গবেষক। আবার কেউ কেউ নদীর উজানে থাকা হিমহ্রদের ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। অনুপুঙ্খ অনুসন্ধান ও পোস্টমর্টেমের পর হয়তো আসল রহস্য উন্মোচিত হবে।

ধারালির বিপর্যয়কে আর বোধহয় আলাদা করে দেখার উপায় নেই। গোটা বিষয়টাই এক ধারাবাহিক ঘটনাক্রমের একটা মর্মান্তিক এপিসোড মাত্র। হিমালয় পর্বতের মতো নরম নড়বড়ে ভূমিভাগের ওপর উন্নয়নের নির্লজ্জ ধ্যাষ্টামি চলছে বছরের পর বছর ধরে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের লাগাতার হুঁশিয়ারি, সাধারণ মানুষের নিরবচ্ছিন্ন প্রতিবাদ, প্রতিরোধ সব কিছুকে উপেক্ষা করেই চলছে উন্নয়ন। সর্বত্রই এক মডেলে চলছে সংঘর্ষ। জঙ্গল থেকে গাছ কেটে ফেলা, সড়ক রেলপথ বিমানঘাঁটি নির্মাণের নামে পরিবেশের ওপর অযথা কংক্রিটের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া, সবই চলছে খুল্লামখুল্লা। আর এই কারণেই নিছক একটা প্রাকৃতিক ঘটনা মানুষের কুটিল মারপ্যাঁচে ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের। যেখানেই যাই না কেন এক কাহিনি— উত্তরকাশী, ওয়েনাড়, কেদারনাথ, চামোলি, কিন্নর, জোশিমঠ, রংপো, সিয়াং, সিকিম— সবখানেই উন্নয়নের নামে পরিবেশের অন্তর্জলি যাত্রার আয়োজন চলছে। পাহাড়তলির জনপদের আবাসিক মানুষেরা প্রকৃতির নিয়ম মেনেই থাকতে অভ্যস্ত ছিল এতদিন। সহজ, সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত মানুষদের এই নাগরিক উন্নয়নের কোনও প্রয়োজনই ছিল না। আমরাই তাদের প্রকৃতিবিচ্ছিন্ন জীবনের সোয়াদ দিতে চেয়েছি, আর তাই আজ এমন বিষাদময় পরিণতির সাক্ষী থাকছি সবাই। তাই প্রাকৃতিক ঘটনাক্রমের শরীরে এখন ম্যানমেড ক্যালামিটির তকমা জুড়ে দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে এখনও পর্যন্ত ধারালিতে মাত্র ৪ জনের জীবনহানি হয়েছে। কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে, প্রশাসন সজাগ ছিল বলেই নাকি প্রাণহানির ঘটনা অনেকটাই এড়ানো গেছে। ডাহা মিথ্যে কথা। কোনও আর্থিক সহায়তা দিয়ে এই ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়। প্রতিটি মানুষের জীবন অমূল্য। পাশাপাশি যে বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পত্তি চিরকালের মতো নষ্ট হয়ে গেল তার ক্ষতির হিসেব কবে হবে? হলেও তার পূরণ করা সম্ভব হবে কীভাবে?
অনুক্রমিকভাবে ঘটে যাওয়া এমন সব বিপুল বিপর্যয় যতগুলো প্রাণ কেড়ে নিল, শত শত কোটি টাকার সম্পদ নিমেষেই লোপাট হয়ে গেল, পরিবেশ পরিমণ্ডলের, বাস্তুতন্ত্রের যে অপরিমেয় ক্ষতি হল তার কণামাত্র পূরণের দায় বা ক্ষমতা কোনও প্রশাসনের নেই। হিমালয়ের বুকে যথেচ্ছ দাপাদাপির পরিণতি যে এমনটাই হবে তা প্রশাসন, প্রযুক্তিবিদ, ইঞ্জিনিয়াররা জানেন না। ক্ষীরগঙ্গা নদীর গতিপথ আটকে তৈরি করা হয়েছে সব বিলাসবহুল হোটেল, আবাস। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব শেষ।
পৃথিবীর জলবায়ু বদলে গেছে অনেকটাই। আরও বদলে যাবে কালে কালে। কেবল বদল হবে না আমাদের চেতনার, বিচারবোধের। এসব নিয়ে ভাববার সময় কোথায়? এক নির্বাচন জিতে গদিয়ান হওয়া, যেনতেনপ্রকারেণ গদি টিকিয়ে রাখতে দু-হাত ভরা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে কিছু করে দেখানোর নামে আরও বড় দুর্নীতির জালে জড়িয়ে পড়া। এদের হাতে পড়ে টাইমার লাগানো বোমের সঙ্গে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছি আমরা, এ-কথা জেনেও যে, যে-কোনও মুহূর্তে বোমাটি সশব্দে বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রহর গুনছে।
আমরা সবাই বধির হয়ে গেছি। তাই সতর্কবার্তাসূচক ঘন্টার আওয়াজ আমাদের কানে ঢুকছে না।


লেখকের কাছ থেকে এই বিষয়ে এমন একটি লেখা প্রত্যাশিত ছিল।আজ সকালে লেখাটা পড়ে সেই ইচ্ছেটা ফলবতী হলো। হিমালয় প্রমাণ ভুলের জন্য আর কতদিন এভাবে ভুগতে হবে বলতে পারেন? পাশের রাজ্য হিমাচল প্রদেশের অবস্থাও তথৈবচ। পৃথিবীর জলবায়ু আজ মহা পরিবর্তনের শিকার। কোথায় কখন কী হবে তার কোনো আগাম পূর্বাভাস দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। হিমালয়ের বুকে উন্নয়নের নামে সত্যিই অনাচার চলছে। সবটাই হয়তো মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই কিন্তু বিপর্যয় ডেকে আনছে মানুষের হাজারো ভুল পদক্ষেপ। এর খেসারত কে দেবে?
আপনি নিয়মিত সতর্ক করছেন।কিন্তু কে কার কথা শোনে!
এক ফোঁটা এক ফোঁটা করে জল জমে জমে তৈরি হয় সমুদ্র। ঠিক তেমনি একজন একজন করে সচেতন মানুষ দল বেঁধে তৈরি হবে জনসমুদ্র । আমি সেই দিনের অপেক্ষায় লিখে যাই।
আবার আমার শিক্ষক মহাশয়ের থেকে একটা দরকারি লেখা।
শুধু দাদা একটু যদি হ্রদ “ফেটে ” যাওয়া বলতে কি বোঝানো হয় যদি একটু বিশদে বলেন 🙏।
*আমরা বিদ্যালয়ে শিক্ষক দের দাদা -ই ডাকি।
লেখকরা নাকি সত্যদ্রষ্টা হন। যে ভাবে হিমালয়ের বুকে একের পর এক অকল্পনীয় বিপর্যয় নেমে আসছে তাতে করে এই লেখাটির শিরোনাম সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।