করোনা বৃত্তান্ত— শাঁখের করাত

বিষাণ বসু

 




লেখক চিকিৎসক, গদ্যকার এবং প্রাবন্ধিক।

 

 

যা যা জানার, জেনে নিয়েছিলেন আগেই। অর্থাৎ হাত ধোয়া, মুখে-নাকে-চোখে বারবার হাত না দেওয়া, এদিক-সেদিক হাত না দেওয়া, অন্যের সঙ্গে তিনফুট দূরত্ব রাখা ইত্যাদি ইত্যাদি।

এর মধ্যে নতুন নতুন কথা জেনেছেন— জানতে পারছেন রোজই— নেহাত প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে না বেরোনো, চট করে দুদিন ঘুরে আসা বা সিনেমা-শপিং মল তো বাদ বটেই, পাঁচজন বন্ধু এক হয়ে আড্ডা মারাও মানা হচ্ছে আস্তে আস্তে। সবাই বলছেন, আমরা যেন একটি টাইমবোমার উপর বসে আছি— টিক টিক টিক— পারব কি আমরা সেই বোমাকে নিষ্ক্রিয় করতে? নাকি, বিস্ফোরণ অনিবার্য??

অনেকে বলছেন, বাড়াবাড়ি। যে অসুখের মারণক্ষমতা মাত্র দুই কি তিন শতাংশ, অসুখ জটিল হয় মাত্র আট কি দশ শতাংশের ক্ষেত্রে— সে জটিলতাও আবার যাঁরা অলরেডি কোনও না কোনও কারণে অসুস্থ, তাঁদের মধ্যেই— সে অসুখ নিয়ে এত হইচই স্রেফ বাড়াবাড়ি। আপাতদৃষ্টিতে তাঁদের কথায় ভুল না থাকলেও অঙ্কে ভুল আছে অবশ্যই। একশ চৌত্রিশ কোটির দেশে মাত্র দশ শতাংশ আক্রান্ত হলেও (শতাংশের হিসেবে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তার চাইতে ঢের বেশি) সংখ্যাটা দাঁড়ায় তেরো কোটির বেশি। এঁদের মধ্যে দশ শতাংশ গুরুতর অসুস্থ হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরিস্থিতি হবে কমবেশি দেড় কোটি মানুষের। দেশের সব হাসপাতাল উজাড় করে দিলেও বেডের সংখ্যাটা ধারেকাছে পৌঁছাবে না। সেই গুরুতর অসুস্থ যাঁরা, তাঁদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ মানুষেরও যদি ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয়— প্রয়োজন চল্লিশ কি পঞ্চাশ লক্ষ ভেন্টিলেটর— নাঃ, ধারেকাছেও নেই আমরা। কাজেই, শুধুই মারণক্ষমতা নয়, অসুখের সংক্রমণক্ষমতা এবং আমাদের জনঘনত্ব ও চিকিৎসা-পরিকাঠামো এক্ষেত্রে বড় বিচার্য। বেহাল স্বাস্থ্যপরিকাঠামোয় মৃত্যুর সংখ্যাটা কি দুই বা তিন শতাংশে আটকে থাকবে??

কিন্তু, উপরের মতের পক্ষে যাঁরা, তার চেয়েও বেশি মানুষ বলছেন, না, যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের দাবি, কমপ্লিট লকডাউন— অর্থাৎ সবকিছু বন্ধ করে দেশসুদ্ধ মানুষ থাকুন ঘরবন্দি। না, তাঁরা নেহাত বাজে বকছেন, এমন নয়। চিনদেশের উহান অঞ্চলে এই পথে চলেই চমকপ্রদ ফল পাওয়া গিয়েছে। কাজেই, তাঁদের দাবির পিছনে যুক্তি আছে, এবং দাবির কার্যকারিতার পক্ষে হাতেগরম প্রমাণও আছে।

দ্বিতীয় মতের সপক্ষে যাঁরা, তাঁদের উদ্দেশে বাকিরা প্রশ্ন তুলছেন, আমাদের মতো দেশে, যেখানে অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করে জীবিকানির্বাহ করেন অসংখ্য মানুষ, যেখানে দেশের অধিকাংশ মানুষ, আক্ষরিক অর্থেই, দিন আনেন ও দিন খান— সেদেশে তথাকথিত কমপ্লিট লকডাউনের ফলাফল কী দাঁড়াতে পারে? এমনিতেই বিশ্ব জুড়ে কোভিড-উনিশের কারণে শেষমেশ কজন মারা যাবেন, জানা নেই। কিন্তু, সে সংখ্যা যা-ই হোক, কোভিড-উনিশ-জনিত আর্থিক মন্দার কারণে বিপদে পড়বেন তার চাইতে অনেক অনেক বেশিই। আর, জানেন নিশ্চয়ই, এই কমাসে সারা বিশ্বে এ অসুখে যেকজন মারা গিয়েছেন, পৃথিবীতে প্রতিদিনই প্রায় ততজন শিশু মারা যায়— অনাহারে ও অপুষ্টিতে— যে রোগের ভ্যাক্সিন খোঁজার জন্যে জটিল গবেষণারও কোনও দরকার নেই, বিশ্বের শীর্ষ এক শতাংশের মানুষগুলো যদি নিজেদের অশালীন বিলাসগুলো একটু ছেঁটে দিয়ে সেই টাকাটা দিয়ে এদের খাবার কিনে দিতেন, তাহলেই কাজ হতে পারত। কোভিড-পর্ব মিটলে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যাটা বাড়বে বই কমবে না।

যাঁরা কমপ্লিট লকডাউন চাইছেন তাঁরা দৈনিক রুজির মানুষগুলোকে চেনেন না, বা তাঁদের সমস্যার কথা ভাবেন না, এমন নয়। তবু তাঁরা সবাইকে ঘরবন্দি রাখার পক্ষে। কেননা, তাঁরা জানেন, বড় অঘটন এড়াতে হলে এছাড়া পথ নেই, এবং এই ব্যবস্থা সামান্য কয়েকদিনের জন্য।

প্রশ্নটা এখানেই। কয়েকদিন, মানে ঠিক কদিন? ঠিক কতদিন দেশসুদ্ধ মানুষ ঘরবন্দি থাকলে কোভিড-উনিশ বাগে আনা যাবে?

কোভিড উনিশ থেকে বাঁচার পক্ষে সবচেয়ে কার্যকরী উপায়— ভাইরাসকে দেশে ঢুকতে না দেওয়া। কথাটা শুনতে দিব্যি লাগলেও কাজটা সহজ নয়। অন্তত, খুব বেশি দেশ কাজটা করে উঠতে পারেনি। কারণ বহুবিধ। এক, বিশ্বায়নের এই বাজারে বিমানবন্দর-সীমানা সিল করে দুনিয়া থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। দুই, অসুখটার বেসিক বায়োলজি নিয়ে আমরা প্রায় কিছুই জানি না। অতএব, উপসর্গহীন মানুষ থেকে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা শূন্য বলে এগোনো হয়েছিল— এখন অনুমান করা হচ্ছে, ওই ধরে নেওয়াটাই ভুল ছিল— উপসর্গ ছাড়াও কোনও ব্যক্তি জীবাণু ছড়াতে পারেন। কিন্তু, ইতিমধ্যেই তো আমরা উপসর্গহীন মানুষজনকে পরীক্ষা না করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছি। এবং এখনও ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁরা নিজেরাই দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে নিজেদের সেল্ফ কোয়ার‍্যান্টাইন করবেন, এই ভরসায়। তিন, এই ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি বিষয়ে যেটুকু জানা গিয়েছে, তার উপর ভিত্তি করেই ধরে নেওয়া হয়েছে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ইনকিউবেশন পিরিয়ড চোদ্দ দিন এবং কোয়ারেন্টাইন-এর জন্যেও নির্দিষ্ট হয় ওই চোদ্দ দিনই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অনুমান ভুল না হলেও, চিনদেশের হুবেই অঞ্চলেই এমন মানুষের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ও নিজের অসুখ হওয়ার ব্যবধান যাঁর ক্ষেত্রে সাতাশ দিন। কাজেই, চোদ্দ দিনের হিসেবটা সবসময় তেমন নিরাপদ কি??

অতএব, ভাইরাসকে দেশে ঢুকতে না দেওয়ার চেষ্টা ভালো, সদিচ্ছেও প্রশংসনীয়, কিন্তু, সে প্রয়াস বিফল হওয়ারই সম্ভাবনা।

পরবর্তী উপায়, মানুষ থেকে মানুষে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া আটকানো। যাঁরা কমপ্লিট লকডাউন চাইছেন, তাঁরা মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে অসুখ ছড়ানো আটকানোর জন্যেই ওই বেয়াড়া পথ বাছছেন। পাশাপাশি এও মনে রাখা দরকার, চিনদেশের উহান অঞ্চলে যে কাজ সম্ভব হয়েছিল, সেটা এদেশে সম্ভব কি? দেড় কোটি জনসংখ্যার একটি অঞ্চলের মধ্যে সব্বাইকে কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘরে আটকে রেখে, তাদের সব্বার খাবার হোম ডেলিভারির মাধ্যমে দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে, খুচরো অসুস্থতার চিকিৎসা অনলাইনে বাতলে দিয়ে ওষুধ বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা— মাথায় রাখুন, দেড় কোটি মানুষ এবং টানা কয়েক সপ্তাহ— আশ্চর্য শৃঙ্খলা ও সাংগঠনিক দক্ষতা ছাড়া এ কাজ সম্ভবই না— এদেশে এবং দেশ জুড়ে করা সম্ভব কি? এই পথে চলে উহান অসুখ নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে, আমরা পারব কি? একই মডেল— হাজার গালাগালির শেষে মেনে নেওয়া যাক আমাদের দেশে গণতন্ত্র খানিকটা হলেও আছে— এদেশে লাগু করা সম্ভব কি? ওদিকে মুশকিল, বিকল্প মডেলের খোঁজও কেউ সেভাবে দিচ্ছে না, মানে পাওয়া যাচ্ছে না, কাজেই, আপাতত নান্যঃ পন্থা।

কিন্তু, আরেকটা প্রশ্ন। মহামারীর দাপট থেকে চিনদেশের উহান আপাতত মুক্ত হলেও, সেই স্বস্তি কতদূর দীর্ঘমেয়াদি? এদেশে— যেখানে কোভিড-উনিশের দাপট এখনও তেমন উচ্চতায় পৌঁছায়নি— কিন্তু, পৌঁছে যেতে পারে যেকোনও মুহূর্তে, এমন লক্ষণ স্পষ্ট— অন্তত সবাই তেমনই আশঙ্কা করছেন— সেখানেও একই মডেলের প্রয়োগ কি যথেষ্ট কার্যকরী?

পরিস্থিতির একটু গভীরে গিয়ে ভেবে দেখা যাক। এধরনের ভাইরাসঘটিত মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসে কী করে? না, কোনও মহামারী, কোনও বিপদই চিরস্থায়ী নয়, একদিন না একদিন সে ঠিকই কমে আসে, চিকিৎসাবিজ্ঞান যখন হামাগুড়ি দিচ্ছিল, তখনও মহামারী একসময় না একসময় কমেই এসেছিল, চ্যালেঞ্জ এটাই— কত দ্রুত এই প্যান্ডেমিক নিয়ন্ত্রণে আসে, কত কম প্রাণহানির বিনিময়ে আমরা কোভিড-উনিশকে বশ করতে পারি।

এধরনের মহামারী/অতিমারী নিয়ন্ত্রণে আসে বেশ কিছু পথে। তার পেছনের বিজ্ঞানটা যদি দেখি—

. আশা করি জানেন, আমরা জীবাণুর দ্বারা সংক্রামিত হলে, শরীর তার বিরুদ্ধে লড়াই করে, তৈরি করে অ্যান্টিবডি— না, সঙ্গে সঙ্গেই তৈরি করা যায় না, জীবাণুকে চিনতে ও জানতে সময় লাগে— ইত্যবসরে জীবাণু কিছুটা জমি দখল করে ফেলে, কাজেই, লড়াইয়ে কখনও শরীর সফল হয়, কখনও জীবাণু, কিন্তু, জীবাণুকে হারানো গেলে জয়ের প্রাপ্তি হিসেবে শরীরের মধ্যে থেকে যায় অ্যান্টিবডি, বা চটজলদি অ্যান্টিবডি তৈরির ক্ষমতা— যে অ্যান্টিবডি পরবর্তীকালে ওই একই জীবাণু আক্রমণ করতে এলে সঙ্গে সঙ্গে কাজ করতে শুরু করে। অতএব, সংক্রমণের শুরুর দিকে জীবাণুকে চেনা-বোঝার যে সময়টুকুর কথা বলছিলাম, সে সময় আর দ্বিতীয়বার নষ্ট হয় না। জীবাণুকে নিকেশ করার কাজ শুরু হতে পারে সঙ্গে সঙ্গেই।

শুনতে আশ্চর্য লাগলেও, যিনি ইতোপূর্বে একই জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হয়েছেন, তাঁর শরীরে সে জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তো থাকেই, কিন্তু, সমাজের একটা বড় অংশ যদি সংশ্লিষ্ট জীবাণুর দ্বারা সংক্রামিত হন এবং তাঁদের দেহে যদি সংশ্লিষ্ট ব্যধির বিরুদ্ধে প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি থাকে, তাহলে সমাজের বাকিদের শরীরে হাতেগরম জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো অ্যান্টিবডি না থাকলেও কমে যায় সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা— যাকে বলা হয় হার্ড ইমিউনিটি (herd immunity)— বাংলা করতে চাইলে, বলা যেতে পারে দলগত বা সমষ্টিগত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। যেমন ধরুন, পালস পোলিও টীকাকরণের মাধ্যমে সমাজের একটি বড় অংশকে নিষ্ক্রিয় পোলিও ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত করা গেলে, আশা করা হয়, সমাজের সবার ক্ষেত্রেই কমে যাবে পোলিও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। তার পেছনে বেশ কিছু অন্য কারণ থাকলেও, গুরুত্বপূর্ণ কারণটি, ওই যে বললাম, হার্ড ইমিউনিটি।

এরকমটা হয় কেন? যে জীবাণু ছড়াচ্ছে একজন মানুষ থেকে আরেকজনে, সেই অসুখের বাড়বাড়ন্তের জন্যে প্রয়োজন প্রতিরোধহীন মানুষ, যিনি জীবাণুর দ্বারা সংক্রামিত হবেন এবং অন্যকে সংক্রামিত করবেন। এখন সমাজে যদি এমন মানুষের সংখ্যা একটা নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কমে যায়, তাহলে সমাজে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সুযোগই কমে যায়। যে কজন প্রতিরোধহীন মানুষ পড়ে রইলেন, তাঁদেরও বিপদ কমে যায়। ঠিক কত শতাংশ মানুষের শরীরে প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হলে পুরো সমাজ হতে পারবে সুরক্ষিত? সে এক জটিল গাণিতিক মডেল। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত আর পাঁচটা গাণিতিক মডেলের মতোই এ-ও সবসময় একশো শতাংশ নির্ভরযোগ্য বা রিপ্রোডিউসিবল নয়, কেননা অনিশ্চিত ও অজানা উপাদান প্রচুর, অঙ্কটা কষা হয় মুখ্যত অসুখ কতখানি ছোঁয়াচে, একজন অসুস্থ মানুষ কতজনের সংস্পর্শে আসতে পারছেন এসবের ওপর ভিত্তি করে। হাম যেমন ভয়ানক ছোঁয়াচে অসুখ, একজন আক্রান্ত মানুষ সংক্রামিত করতে পারেন পনেরো-ষোলজন সুস্থ মানুষকে, সমাজের অন্তত পঁচানব্বই শতাংশের শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি না হলে বাকিদের পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকার আশা নেই। যেটুকু তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তার ভিত্তিতে বলা যায়, বেশ ছোঁয়াচে হলেও হামের তুলনায় কোভিড উনিশ অনেকখানিই কম ছোঁয়াচে। সমাজের ষাট কি পঁয়ষট্টি শতাংশ মানুষের শরীরে যদি প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি থাকে, তাহলে সমাজ কোভিড উনিশের বিপদ থেকে মুক্ত হতে পারে।

. জীবাণুর বিরুদ্ধে কোনও ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত হল— যাতে কিনা টীকার মাধ্যমে বেশিরভাগ মানুষের শরীরে জাগিয়ে তোলা গেল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। এক্ষেত্রেও মাথায় রাখুন, সমাজের একটা বড় অংশকে টীকার মাধ্যমে সুরক্ষিত করা গেলে, সেই সুরক্ষার সুবিধে বাকি সকলেই পাবেন— অর্থাৎ সেই হার্ড ইমিউনিটি। পোলিও টীকার উদাহরণ তো এখুনি দিলাম।

মোদ্দা কথা, স্বাভাবিকপথে সংক্রামিত হয়েই তৈরি হোক প্রতিরোধক্ষমতা বা টীকার মাধ্যমে, উভয়ক্ষেত্রে ফল একই। সংশ্লিষ্ট জীবাণু যেই আক্রমণ করতে এগোবে, অমনি শরীরের ভিতরে আগের থেকেই তৈরি প্রতিরোধক্ষমতা জীবাণুকে আক্রমণ করবে। জীবাণু মানবদেহ আক্রমণ করে নিজের বংশবিস্তারে একটু সুবিধে হবে, এই আশায় (এক্ষেত্রে আশা শব্দটা কিন্তু আক্ষরিক অর্থে ব্যবহৃত হয়নি— ভাইরাসেরও সচেতন চিন্তাপদ্ধতি-আশা আকাঙ্ক্ষা থাকে এমন কথা কখনওই বলছি না)। এমন করে প্রতিরোধের নিরেট দেওয়ালে ধাক্কা খেলে সে আশা, বলাই বাহুল্য, পূরণ হবে না। এবং, ধাক্কা খেতে খেতে শিক্ষালাভ করতে করতে, সম্ভবত, জীবাণুর মানবশরীর আক্রমণের প্রবণতাও ক্রমশ হ্রাস পায়। আর, যেমন বললাম, একবার হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়ে গেলে সমাজের বাকিরাও, প্রতিরোধহীন শরীরও বিপন্মুক্ত থাকতে পারবে।

ভ্যাক্সিন বা টীকা নিয়ে এখুনি আশা না রাখাই ভালো। বিশেষত এই বিশেষ অতিমারী মোকাবিলার ক্ষেত্রে (পরের দফা অনুরূপ অতিমারী ঠেকাতে কার্যকরী হবে অবশ্যই)। কেননা, জীবাণুর বিরুদ্ধে ভ্যাক্সিন বাজারে আসতে সময় লাগে গড়ে আট থেকে দশ বছর। যুদ্ধকালীন তৎপরতা দেখিয়ে সময়টা কমিয়ে আনলেও আগামী দেড়-দুবছরের মধ্যে সবার নাগালের মধ্যে ভ্যাক্সিন এসে পড়ার আশা কম। বিশেষত, চিকিৎসা-গবেষণা ব্যাপারটা ইদানিং বহুজাতিক কর্পোরেটের হাতে। লাভের গুড়ের আশা ছাড়া সে গবেষণায় তেমন উৎসাহ দেখা যায় না। তারপর, সে গবেষণার সুফল কেনার জন্যে ধনী দেশের লাইন পড়ে। জার্মানির কোম্পানি কিছুদূর এগোলেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট কোম্পানিকে টোপ দেন গবেষণার কেন্দ্রটি যাতে জার্মানি থেকে আমেরিকায় চলে আসতে পারে। অতএব, এত প্যাঁচপয়জার পেরিয়ে আমাদের গরীব দেশে সবাই তাড়াতাড়ি ভ্যাক্সিন পাবেন, সে আশা না রাখা-ই ভালো।

অপর পথ, স্বাভাবিক পথে সংক্রামিত হতে হতে তৈরী হওয়া হার্ড ইমিউনিটি— যে কথা আগেই বলেছি।

যেকোনও সংক্রামক মহামারী/অতিমারী মোকাবিলায় রাষ্ট্রের সামনে কয়েকটি মাত্র পথ খোলা থাকে।

এক, সক্রিয়ভাবে কিছুই না করে দেখতে থাকা। মহামারী কদ্দূর এগোয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহামারী নিজে নিজেই প্রশমিত হবে, এমন আশা রাখা। এবং এর মাঝে আক্রান্ত মানুষজনের চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত রাখা। সমস্যা হল, এই পথে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এতটাই বেড়ে যায়— বিশেষত, কোভিড উনিশের মত ছোঁয়াচে অসুখের ক্ষেত্রে— কোনও রাষ্ট্রের পক্ষেই সব আক্রান্তের সঠিক চিকিৎসা সম্ভব হয় না। এমনকি, বেশ উন্নত পরিকাঠামোর দেশগুলোতেও না। মহামারীতে দেশের মানুষ মারা যাচ্ছেন আর সরকারবাহাদুর ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ করছেন— দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন কোনও রাষ্ট্রই এমন করতে পারে বলে বিশ্বাস হয় না।

দুই, এপিডেমিক মিটিগেশন। রাষ্ট্র মেনেই নেন, যে, মহামারীকে সম্পূর্ণ ঠেকানো সম্ভব নয়, চেষ্টা থাকে, তাকে যতখানি সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখা। আক্রান্তের চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করা, সন্দেহভাজন মানুষকে আলাদা রাখা, তাঁদের সংস্পর্শে আসা মানুষজনকে কোয়ার‍্যান্টাইনে রাখা— এটুকুই করা হয়। সুস্থ-সবল মানুষের জীবনযাপনে তেমন নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা হয় না। ধরে নেওয়া হয়, এঁরা কোনও না কোনওভাবে জীবাণুর সংসর্গে আসবেন, আসবেনই, এবং নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে সেই সংক্রমণ কাটিয়েও উঠবেন, এবং তাঁদের দেহে তৈরি হবে জীবাণুর বিরুদ্ধে বিশেষ প্রতিরোধক্ষমতা। এই ব্যবস্থায় আশা রাখা হয়, কখনওই আচমকা একইসঙ্গে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়বেন না। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যপরিকাঠামো বিপর্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম। উপরি পাওনা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, অনেক সুস্থ মানুষ যেহেতু জীবাণুর দ্বারা সংক্রামিত হবেন এবং সেরেও উঠবেন নিজে নিজেই, তৈরি হয়ে যাবে জীবাণুর বিরুদ্ধে বিশেষ প্রতিরোধক্ষমতা। কিছুটা হলেও হার্ড ইমিউনিটির সুবিধে পাবে পুরো সমাজ। খুব জটিল আকার না নিয়ে মহামারী প্রশমিত হবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।

কিন্তু, যদি অঙ্ক না মেলে? যদি কিছুটা-হলেও-অবাধ জীবনযাত্রার ফলে অসুখ ছড়াতে থাকে লাগামছাড়া? মিটিগেশনের পথে চলতে শুরু করে ব্রিটেন তথা ইউকে আজ ঘোর সংশয়ে। প্লাস, বিশ্বব্যাপী অতিমারীর আতঙ্কের মুহূর্তে মিটিগেশন পদ্ধতিকে আমজনতা রাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তা বলে ভেবে নিতে পারেন— বিশেষত, বাকি দেশগুলো যখন যুদ্ধং দেহি তৎপরতা দেখাচ্ছে।

তিন, এপিডেমিক সাপ্রেশন। এ একেবারে নো-ননসেন্স অ্যাপ্রোচ। মহামারীকে হারাতেই হবে ধরে নিয়ে এগোনো। নতুন করে রোগ ছড়াতে দেওয়া যাবে না, নতুন করে রোগী বাড়তে দেওয়া যাবে না— সন্দেহ হলেই পরীক্ষা করে দেখা— মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ ছড়ানো এক্কেবারে বন্ধ করতে হবে, করতেই হবে, মহামারী ছড়িয়ে পড়ার যে চেইন, তাকে ভেঙে দিতে হবে যে করেই হোক— এই পথে চলতে চাইলে, কোভিড উনিশের মতো অসুখের ক্ষেত্রে লকডাউনই সেরা পথ। এই পথে চলেই চিনদেশ চমকপ্রদ সাফল্য পেয়েছে।

কিন্তু, সাপ্রেশনের মুশকিল একটাই। এই পথে চললে হার্ড ইমিউনিটির কোনও আশা নেই – কেননা, আপনি তো সংক্রমণটাই আটকে দিচ্ছেন – সংক্রমণ ছাড়া তো স্পেসিফিক ইমিউনিটি তৈরী হতে পারবে না। মহামারী নিয়ন্ত্রণে এলেও নতুন করে জীবাণু এসে পড়লে একই মহামারীর পুনরাবৃত্তি হতে পারে, হতেই পারে। যেমন ধরুন, পরীক্ষায় দেখা গেছে, উহান অঞ্চলে যাঁরা অসুস্থ হননি, তাঁদের পঁচানব্বই শতাংশ মানুষের শরীরে কোভিড উনিশ প্রতিরোধের কোনও ক্ষমতা তৈরি হয়নি। সেখানকার কর্তৃপক্ষ সংশয়ে, বিশ্বজোড়া অতিমারী যতদিন না নিয়ন্ত্রণে আসছে, ততদিন অব্দি জনজীবন কতখানি স্বাভাবিক পর্যায়ে চলতে দেওয়া উচিত।

দেখুন, এত কথার শেষে সেই পুরনো প্রশ্নের জায়গাতেই ফিরে এলাম। কতদিন? ঠিক কতদিন ধরে চলতে থাকবে কঠোর বিধিনিষেধ? কতদিনে নিয়ন্ত্রণে আসবে এই কোভিড উনিশ অতিমারী??

আমাদের দেশের সরকার নির্দিষ্ট করে জানাননি কিছু। বিশ্বজোড়া অতিমারী কতদিন ধরে চলতে পারে, এমন পূর্বাভাস প্রত্যেক দেশকেই আলাদা করে দিতে হবে, এমনটা জরুরি নয়— কিন্তু, রাষ্ট্র যে পদক্ষেপগুলো নেবে, সেগুলো কতদিনের জন্যে, তার আঁচ পেতে গেলে হিসেবটা জরুরি। ইউকে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র— উভয়দেশেরই অনুমান, এই অতিমারী চলতে থাকবে এই বছরের অধিকাংশটা জুড়েই— এমনকি, অতিমারীর সময়সীমা পৌঁছে যেতে পারে সামনের বছরেও। এর মধ্যে যদি ভ্যাক্সিন চলে আসে, ভালো কথা। না হলে…

ততদিন, হ্যাঁ ততদিনই, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বিনা গতি নেই। কমপ্লিট লকডাউন না করতে পারলেও, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং তো বটেই।

প্রশ্ন একটাই, যেদেশে অধিকাংশ মানুষই কাজ করেন অসংগঠিত ক্ষেত্রে— সেদেশে আমরা লড়াইটা চালাতে পারব তো? টানতে পারব তো অতদিন??

অবশ্য, অতিমারী কতদিন ধরে চলবে, সে পূর্বাভাসও অঙ্ক কষেই হিসেব করা— চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অজানা ফ্যাক্টর এত বেশি যে অঙ্ক প্রায় খাটেই না— প্রতিটি দেশের নিজস্ব আবহাওয়া,  প্রতিটি দেশের মানুষের নিজস্ব প্রতিরোধ শক্তি, নিজস্ব সংস্কৃতি, ভূপ্রকৃতি, ভাইরাসের নিজস্ব মতিগতি— অঙ্কের ফল যে বাস্তবের সঙ্গে সবসময় মিলবেই, এমন সম্ভাবনা কম। কিন্তু, এধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের মুহূর্তে সনাতন পদ্ধতি— পরীক্ষিত ও নিরাপদ পদ্ধতি— সবচেয়ে ভালো সম্ভাবনার আশায় থাকুন, কিন্তু প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সবচেয়ে খারাপ সম্ভাবনাটির কথা মাথায় রেখে এগোন।

মনে রাখা জরুরি, সাপ্রেশনের বিপদ একটাই— যদি সেই পদ্ধতি সঠিকভাবে মেনে চলা না যায়, যদি মাঝপথে আচমকা গা-আলগা দেওয়া হয়, বা সাপ্রেশনের পদ্ধতিগুলো ব্যর্থ হয় প্রায়োগিক ত্রুটি বা পরিকাঠামোগত গলদ বা অন্য কোনও কারণে— সংক্রমণ এবং আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে ভয়ানক গতিতে। কেননা, সমষ্টিগতভাবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা (herd immunity) তৈরি হওয়ার কোনও সুযোগই থাকে না এই পদ্ধতিতে। মাথায় রাখুন, এই পদ্ধতির অন্যতম অসুবিধে হল, আক্রান্তের সংখ্যা কমার সঙ্গে সঙ্গে কমে যায় তাঁদের সংসর্গে আসা মানুষের সংখ্যা, কমে যায় সংক্রামিত মানুষের সংখ্যা। অতএব, প্রতিরোধক্ষমতা রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যাও যায় কমে। সুতরাং, তাঁরা দেওয়াল হয়ে বাকিদের সুরক্ষা জোগাবেন, এমন সম্ভাবনা প্রায় থাকে না। অতএব, দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন সহজ সিদ্ধান্ত নয়— দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইটা জারি রাখতে পারব তো অতদিন?

আরেকদিকে, অন্য উপায় কিন্তু তেমন কিছু নেই। প্রমাণিত বিকল্প পদ্ধতির খোঁজ এখনও কিছু মেলেনি।

স্বাভাবিক সংক্রমণ থেকে পুরো সমাজের হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়ে যাওয়া আর ভ্যাক্সিন বাজারে এসে প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করে দেওয়া বাদ দিলেও, মহামারী থেমে যাওয়ার আরেকটা কারণ আছে— মিউটেশন। মিউটেশনের ফলেই সাধারণ জীবাণু মারণব্যাধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তেমনই কোনও এক মিউটেশনের ফলেই হয়ত ভাইরাস হারিয়ে ফেলতে পারে তার সংক্রমণক্ষমতা বা মারণক্ষমতা বা দুটোই একসঙ্গে। কদিন আগে আতঙ্ক ছড়ানো সার্স-এর জন্য দায়ী করোনাভাইরাস (কোভিড উনিশ করোনাভাইরাসের থেকে স্বতন্ত্র) মিউটেশনের ফলে এখন বেশি মারণক্ষমতা ধরে, কিন্তু হারিয়েছে তার সংক্রমণক্ষমতা— মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছানোর ক্ষমতা আর তার নেই।

সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের বিজনের রক্তমাংস গল্পের শেষ লাইনগুলো মনে করুন—

বিজনের অতি গুরুতর অসুখ হয়েছে। এর কোনও ওষুধ নেই, এর কোনও চিকিৎসা হয় না, কিন্তু যে-কোনও মুহূর্তে এর ওষুধ বেরিয়ে যেতে পারে, এইজন্যে, যতদিন সম্ভব বেশি বাঁচিয়ে রাখার জন্যে, তিনি এখুনি বিজনের চিকিৎসা শুরু করবেন।

বিজনের ততদিন বেঁচে থাকার দরকার।

ভ্যাক্সিন আসা পর্যন্ত, বা ভাইরাস নিজে নিজেই সংক্রমণক্ষমতা বা মারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলা পর্যন্ত, অথবা, মহামারী অন্য কোনওভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত— আমাদের আলাদা আলাদা দূরে দূরে সাবধানে থাকা দরকার। সত্যিই দরকার।

 

পুনঃ

লেখাটার মধ্যে কিছু টেকনিক্যাল পরিভাষা এবং কনসেপ্ট ব্যবহার করা অবশ্যম্ভাবী ছিল। সেগুলো সবাই পুরোটা বুঝবেন কিনা জানি না, কারণ কোন টেকনিক্যাল পরিভাষা বা কনসেপ্ট উপযুক্ত ট্রেনিং ছাড়া পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয়। এবং আমার বোঝানোর ক্ষমতাও তেমন সরেস নয়। সেই জন্য কিছু বিভ্রান্তি জন্মাতে পারে।

কিন্তু সেসব বিভ্রান্তি যেন আলোচনার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকে। এবং সে বিভ্রান্তি যেন আমাদের এই মুহূর্তের কর্তব্য থেকে একটুও বিচলিত করতে না পারে।

সেই কর্তব্য এইরকম:

  1. মহামারী থেকে বাঁচার জন্যে এপিডেমিক সাপ্রেশন একটি পরীক্ষিত ও কার্যকরী পথ। এবং, সে পথ অবলম্বন করতে চাইলে, সোশ্যাল আইসোলেশন বা সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং জরুরি। কিন্তু, যেকোনও পথের মতোই, এপথেরও কিছু সমস্যা আছে। তবে সমস্যাগুলোর কথা উল্লেখ করার অর্থ এ নয়, যে, পথটিই ভুল।
  2. কোভিড উনিশ প্রতিরোধ করার জন্যে ব্যক্তিগত সাবধানতা অবলম্বন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে সাধারণ নির্দেশিকা— সেসব মেনে চলার চাইতে কার্যকরী কোনও পদ্ধতি এখনও জানা যায়নি।
  3. সরকারি সদিচ্ছার সঙ্গে সমান গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা। অন্তত এই একটি ক্ষেত্রে, শুধু সরকারকে দায়ী করে পার পাওয়া যাবে না। নিজে দায়বদ্ধ থাকা তো বটেই, পাশের মানুষটির দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করাও আপনারই দায়িত্ব। সামনের লোকটি যদি নাক ঝেড়ে সিঁড়ির রেলিং-এ মুছে রাখেন, তাঁকে সচেতন করার দায়িত্ব আপনারই। আপনি সরব না হলে, কোনও সরকারের ঊর্ধ্বতন চতুর্দশ পুরুষও দেশে মহামারী (সে মহামারীর কারণ কোভিড উনিশও হতে পারে, কিম্বা টিবি, অথবা অন্য কিছু) ঠেকাতে পারবেন না।
  4. যতটা পারেন, দূরে থাকুন। সেটাই পাশে থাকা। আর যখন কারও সঙ্গে থাকবেন, পাশের মানুষটাকে সচেতন করুন। এটুকু করতে পারলেই অনেক। আমলাপুত্র বা নেতাদের অর্বাচীনতা নিয়ে গালাগালি করে গায়ের ঝাল মেটান— বেশ কথা। কিন্তু, আমাদের সাধ্যের মধ্যে বা পরিসরের মধ্যে যেটুকু আছে, সেটুকু নিশ্চিত করা নিয়েই আপাতত ব্যস্ত থাকা যাক না!! সত্যি বলছি, আয়ত্ত করা গেলে এটা বেশ ভালো অভ্যেস। করোনার দিনগুলো কেটে যাওয়ার পরেও অভ্যেসটা কাজে লাগবে।

 

তথ্যসূত্র:

  1. https://www.livescience.com/coronavirus-outbreak-end.html
  2. https://www.imperial.ac.uk/news/196234/covid19-imperial-researchers-model-likely-impact/
  3. https://www.bbc.com/news/health-51915302
  4. https://www.livescience.com/coronavirus-flatten-the-curve.html
  5. https://www.popularmechanics.com/science/health/a31460746/coronavirus-covid-19-social-distancing/
  6. https://www.reuters.com/article/us-health-coronavirus-germany-usa/germany-tries-to-stop-u-s-from-luring-away-firm-seeking-coronavirus-vaccine-idUSKBN2120IV
  7. https://www.theguardian.com/commentisfree/2020/mar/16/trump-coronavirus-vaccine-big-pharma-president-drugs-industry-profit
  8. https://indianexpress.com/article/explained/coronavirus-what-is-herd-immunity-6320902/

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4643 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

4 Comments

  1. অসাধারণ লেখা। এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। অবশ্য পাঠ্য।

  2. অত্যন্ত জরুরি লেখা। আমাদের মতো অনেকেই যারা অজ্ঞতাকে আতঙ্ক দিয়ে ভরাট করে নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য তো বটেই!

  3. হার্ড ইমিউনিটির প্রশ্নটা নব্য ম্যালথাসিও যুক্তিবাদের পক্ষে যেতে পারে। তার চেয়ে চিনের নাছোড়বান্দা মনোভাব ভাল।

    • ডিডব্লু’র ডকুমেন্টারিটা দ্যাখো। হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালাম।

Leave a Reply to Sumit Roy Cancel reply