কুনাট্য এবং হিন্দি সিনেমার বহুত্ববাদ

সত্যব্রত ঘোষ

 


লেখক প্রাবন্ধিক, চলচ্চিত্রকার

 

 

 

 

সম্প্রতি প্রধান সেবক সবাইকে সতর্ক করে বলছেন বাজারে ওষুধ না আসা অবধি সামাজিক দূরত্ব বজায়ে ঢিলে দেওয়া চলবে না। তাহলে এতদিন আমরা করছিলাম কী? অপরিকল্পিত এক দীর্ঘকালীন লকডাউনের পীড়া এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে সংবাদমাধ্যমগুলির হেডলাইন ম্যানেজমেন্টে আতঙ্কিত হয়েছি। এবং বিভ্রান্ত হয়েছি তাদের অপরিসীম নির্লজ্জতায়।

কুনাট্য রচনায় দুর্নিবার দেশের কর্ণধারেরা। করোনা ভাইরাসই তাঁদের সহায়। প্রধান সেবক এবং তাঁর অনুগামীরা অতিমারির যুক্তিজাল ছড়িয়ে নয়-কে হয় আর হয়-কে নয় করে চলেছেন। লকডাউনের আড়ালে সরকারি সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণ হল। অ্যাকচুয়াল লাইন অফ কন্ট্রোলকে অগ্রাহ্য করল চিন। তখন সর্বদল বৈঠকের শেষে প্রধান সেবক বলেছিলেন দেশের সীমানা অক্ষতই রয়েছে। এখন সংসদীয় অধিবেশনে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী চিনের বিরুদ্ধে এলাকা দখলের অভিযোগ এনে তোপ দাগলেন। প্রধান সেবক সেই সময়ে কিন্তু সংসদে অনুপস্থিত। দু বেলায় দেশের মানুষদের ভাগ্যে অন্ন জুটবে কিনা, অথবা শিক্ষিত বেকারদের কর্মহীনতা ঘুচবে কিনা, সেই জাতীয় প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে প্রধান সেবক এবং তাঁর অনুগামীরা নতুন শিক্ষানীতির ঘোষণা করলেন। অরাজকতা, অবিচার, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা এবং মিথ্যাচারের বহর যত বাড়বে, ততই নজর ঘোরানোর নিত্যনতুন আখ্যান রচিত হবে। তাতে খলচরিত্র বারবার পালটে যাবে বটে, কিন্তু নায়ক থাকবেন একমেবাদ্বিতীয়ম।

এই কুনাট্যের মধ্যে সংবাদমাধ্যমগুলি হিন্দি সিনেমার এক উদীয়মান তারকার অকালমৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে তৎপর। যার সঙ্গে দেশের প্রাত্যহিক সঙ্কটের প্রত্যক্ষ কোনও সম্পর্ক নেই। তবুও নিউজ চ্যানেলগুলি যেভাবে ‘বলিউড’ শুদ্ধির কাজে মনোনিবেশ করেছে, তাতে অনেকেরই মনে হতে পারে যে বিনোদন জগতে এর পর আর স্বজনপোষণ থাকবে না। মেধার পূজার সেই পবিত্র বাতাবরণ থেকে মাদকব্যবসায়ীরা ভয়ে দূরে থাকবে। বন্ধু বা বান্ধবী যদি কোনও তারকাকে ‘বিপথে ঠেলে দেয়’, তাহলে তাকে কারাবাসের শাস্তি ভোগ করতে হবে। এবং এই পবিত্রতা বজায় রাখবার জন্য একজন বিশেষ তারকা যদি নিজের আয়ত্ত অভিনয় ভুলে ‘সুনাগরিক’-এর ভূমিকায় রাজনৈতিক উস্কানিতে দড় হয়ে ওঠেন, তাহলে ক্ষমতাসীন সরকার তাঁর সুরক্ষার যথাযোগ্য ব্যবস্থা করবেন।

তবে এই সাময়িক তৎপরতা দেখে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতাশীল মহা বিকাশ আঘাড়ি-র বিরুদ্ধে বিজেপি-র প্রতিহিংসার দিকটি ভুলে গেলে চলবে না। বিহার প্রশাসনও যে অবিশ্বাস্য তৎপরতায় এই কুনাট্যে অংশগ্রহণ করেছে তাতে সেখানকার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র জোটসঙ্গী নীতিশ কুমারের নিজস্ব অঙ্কও রয়েছে।

আপাতত মুম্বাইয়ে মাদকসেবীদের খুঁজতে গিয়ে কর্নাটকের বিভিন্ন তালেবরেদের পাকড়াও করছে নারকোটিক্স ব্যুরো। চলচ্চিত্রজগতের সঙ্গে মাফিয়া চক্র এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বোঝাপড়ার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনাটিকে স্থিতাবস্থায় আনতে প্রশাসনের দীর্ঘ প্রয়াস তো তা বলে মিথ্যা হয়ে যায় না। গত কুড়ি-পচিশ বছর ধরে ‘বলিউড ফিল্ম’-এ যে সংস্থাগুলি অর্থবিনিয়োগ করে এসেছে, বাজারজাত লাভ থেকে তারা এতকাল নিজেদের অংশ কড়ায়গণ্ডায় ফেরত পেয়েছে। এখন করোনা অতিমারি এবং লকডাউন হেতু টাকার উৎসে টান পড়েছে বটে। জোগান শুরু হলেই সবকিছু আবার স্থিতাবস্থায় ফিরে আসবে।

তবে সুশান্ত সিং রাজপুতের অকালমৃত্যুর পর স্বজনপোষণ এবং ‘বহিরাগত’— এই দুইটি প্রসঙ্গ প্রকটভাবে জনসমক্ষে এসেছে। এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এই দুই প্রবণতার বিরুদ্ধে সমবেত প্রতিবাদ চলছে, তার নিরিখে হিন্দি বাণিজ্যিক ছবির বহুত্ববাদী ধারার বিবর্তন নিয়ে এখানে কিছু কথা বলা আবশ্যিক। কারণ, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এসে মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্রজগতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ইতিহাসটি তার সঙ্গে সম্পৃক্ত। মনে রাখতে হবে, একটা কথা চালু আছে, হিন্দি সিনেমা নামে ভারতে একটি আলাদা রাজ্য আছে।

ভারতে প্রথম কাহিনিচিত্র নির্মাণের কৃতিত্ব মহারাষ্ট্রের ধুন্ধিরাজ গোবিন্দ ফালকের। ১৯১৩ সালের ২১শে এপ্রিল তাঁর ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ বোম্বের অলিম্পিয়া থিয়েটারে মুক্তি পায়। ছবিতে তাঁর পরিবারসহ বাকি সদস্যরা মারাঠি হলেও পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে বানানো ছবিটিকে গবেষকেরা ‘ভারতীয় কাহিনিচিত্র’র তকমা দিয়েছেন। যদিও হলিউড এবং ব্রিটিশ ঐতিহ্য অনুসরণে ভারতীয় নির্বাক চলচ্চিত্রে অন্তর্ভুক্ত সংলাপ এবং বর্ণনার জন্য প্রদর্শিত কার্ডগুলি ইংরাজি ভাষাতেই লেখা হত। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নির্বাক ছবি চলাকালীন যে ধারাবিবরণী দেওয়ার প্রচলন ছিল, ব্রিটিশ-অধীন ভারতে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রের ধারাবিবরণী প্রচার সংক্রান্ত তেমন কোনও ঐতিহাসিক নথির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানা নেই।

১৯৩১ সালে ১৪ই এপ্রিলে খানবাহাদুর আদের্শির ইরানি নির্দেশিত ‘আলম আরা’ ছবিটি ছিল সঙ্গীতবহুল। ফিরোজ শাহ মিস্ত্রির সুরারোপিত আটটি গান হিন্দুস্থানিতে হলেও ছবির সংলাপ ছিল উর্দু ভাষায়, যা সেই সময়ে জনপ্রিয় পার্সি থিয়েটারের অনুসরণে রচিত। বস্তুত, বাংলা, অহমিয়া, মালয়ালাম এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায় ছবির নির্মাণ হলেও সর্বভারতীয় স্তরে প্রদর্শিত ছবির ভাষা প্রধানত উর্দুই ছিল। সদত হসন মন্টো, কৃষণ চন্দর, এমনকি প্রেমচন্দের মতো প্রথিতযশা লেখক সহ মুখরাম শর্মা এবং আখতার-উল ইমানদের মতো প্রথম যুগের চিত্রনাট্যকারেরা অভিনেতাদের জন্য প্রধানত উর্দু ভাষাতেই সংলাপ লিখতেন।

স্বাধীনতা অর্জন এবং দেশ বিভাজনের দীর্ঘ শোকাবহ পর্বের মধ্যেও উর্দুকেই সর্বভারতীয় ভাষা বলে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে গুলজার এবং পথিকৃৎ চিত্রনাট্যকারদ্বয় সেলিম (খান)-জাভেদ (আখতার) সংলাপ উর্দু ভাষাতেই লিখেছেন। তাঁদের কর্মজীবনের বছরগুলিতে এ নিয়ে বিক্ষুব্ধ হওয়ার প্রবৃত্তি সংশ্লিষ্ট মানুষজনের মধ্যে ছিল কিনা জানা নেই। অসিত সেন, নবেন্দু ঘোষ, কমল চৌধুরী, মণি ভট্টাচার্য এবং শচীন ভৌমিকেরা চিত্রনাট্য রচনার পর ব্রজেন্দ্র গৌর এবং রাহী মাসুম রেজা-রা সংলাপ লিখতেন। এছাড়াও ছিলেন কে এ আব্বাস, কামাল আমরোহি, আহসান রিজভি, আবরার আলভি এবং ওয়াজাহাত মির্জা-রা, যাদের রচিত সংলাপ উচ্চারণ করে গত শতাব্দীর মধ্যভাগের নায়ক-নায়িকারা দর্শকদের মন জয় করতেন। কর্মসূত্রে মুম্বাইবাসী হলেও এনারা সবাই কিন্তু ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এখানে পৌঁছেছিলেন।

চলচ্চিত্রের সংলাপে যে হিন্দি ভাষার পরম্পরাগত প্রয়োগ ঘটে অধিকাংশ ভাষাতাত্ত্বিক তাকে হিন্দুস্থানি ও উর্দু ভাষার মিশ্রণ বলে নির্ণয় করেছেন। মূলস্রোতের সংস্কৃতির মধ্যে যারা দেশের ঠিকানা ও কালের স্পন্দন অনুভব করেন, নিজেদের প্রদেশের সংস্কৃতিকে মিশিয়ে হিন্দি ছবির ভাষার নির্মাণ তাঁদেরই রচনাতে সম্ভব হয়েছে। মুম্বাই শহর ও শহরতলি অবধি ছড়িয়ে যাওয়া এই স্বতন্ত্র সংমিশ্রিত রাজ্যটিকে দীর্ঘ এক সময় ধরে সমৃদ্ধ করেছেন দেশের সব প্রান্ত থেকে আসা এই মানুষগুলিই। ‘মারাঠা মানস’-এর অহঙ্কার নিয়ে যতই তাঁদের ‘বহিরাগত’ হিসেবে চিহ্নিত করবার প্রবণতা বাড়বে, হিন্দি সিনেমা ততই দরিদ্র হবে। কারণ, অন্য ভৌগোলিক পরিসরগুলির রূপ ও রসে যদি তা সিঞ্চিত না হয়, ক্রমশ তার ভারতীয়ত্ব খসে পড়বে। এবং পড়ছেও। বাণিজ্যিক হিন্দি সিনেমার নামগুলি এখন দ্রুত বদলে যাচ্ছে বটে। তবে সেগুলিতে চরিত্র, ঘটনাবিস্তার, সুর ও মেজাজ একে অন্যের পুনরাবৃত্তি মাত্র।

তাছাড়া, যন্ত্রের প্রয়োগ যত সোচ্চার হয়েছে আনুপাতিক হারে মানবিক আবেদন ক্রমশ কমেছে। বিশ্বায়নের পরে প্রায় এক দশক ধরে বহু ভারতীয় চিত্রনির্মাতাদের অভিযোগ ছিল চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যবহৃত যন্ত্রাদি বিষয়ে হলিউডের চেয়ে ভারত অনেক পিছিয়ে আছে। এদের মধ্যে কতিপয় গুণীজন কারিগরি সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করবার চেষ্টা করেছিলেন সৃজনগত অভিনবত্ব আর আন্তরিকতা দিয়ে। তাঁদের শৈল্পিক বিশ্বাস এবং মেধা পরবর্তীকালে প্রায় অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়। তার অন্যতম কারণ, অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল পদ্ধতির পর্বান্তর। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রথম ডিজিটাল সিনেমা প্রদর্শিত হয়। ২০০২-তে ভারতে প্রথম ডিজিটাল সিনেমা মুক্তি পায় (এই কলকাতায়)। আমেরিকা, জাপান এবং ইউরোপের প্রযুক্তি সংস্থাগুলির দ্বারা উৎপাদিত আধুনিকতম ক্যামেরা, শব্দযন্ত্র এবং সফটওয়্যার ভারতে নির্বিবাদে আমদানি শুরু হয়।

ডিজিটাল সিনেমার প্রযুক্তিগত উন্নতিতে যে বিশাল টাকার লগ্নি ঘটে, তার জোরে ব্যক্তিগত মালিকানার পাশাপাশি বিভিন্ন বহুজাতিক চলচ্চিত্র সংস্থা এবং টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ভারতবর্ষে দাপটও বাড়াতে থাকে। এবং বস্তুতপক্ষে পাঁচ বছর শাসনের শেষভাগে ২০০৪ সালে পুনর্নিবাচনের আশায় তৈরি অটলবিহারী বাজপেয়ি-র এনডিএ সরকারের রাজনৈতিক শ্লোগান ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’কে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব বলিউড স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে। সেবারের লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ-র ভরাডুবি হলেও আন্তর্জাতিক দর্শকদের সামনে ভারতীয় সিনেমা বস্তুত চকমকে এক ভারতের রূপদর্শনেই পরিণত হয়। কতিপয় ব্যতিক্রম বাদে ভারতের যে স্থুল বার্তাটি ‘বলিউড সিনেমা’র মাধ্যমে বিশ্বে পৌঁছায়, তাতে কর্পোরেট দুনিয়ার মেকিসর্বস্বতায় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পোশাক ও স্টাইলিঙের রমরমা অফুরন্ত থাকলেও, নেই ৫,৫০,০০০ গ্রামের কোনও প্রসঙ্গ যেখানে ভারতের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের বসবাস। রুপোলি পর্দায় সামন্ততন্ত্রের জয়গানের পাশাপাশি বস্তুতান্ত্রিক আকাঙ্খা চাগিয়ে তোলবার সমবেত প্রয়াসটি এখনও সক্রিয়। এই প্রয়াসে যারা শরিক, তাঁরা ব্যবসায়িক এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে চান না ভারতের আঞ্চলিক বাস্তব পর্দায় ফুটে উঠুক। কর্পোরেট সংস্কৃতির নামে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ এবং কৃত্রিম উচ্ছলতার এই আখ্যান রচনাকে ভারতীয়ত্ব বলে উপস্থাপনের কাজটিকে কার্যত সামন্ততান্ত্রিক পরিবারতন্ত্রই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একমাত্রিক এবং পুনরাবৃত্তির দোষে দুষ্ট বাণিজ্যিক এই মূলধারার সিনেমায় ভিন্নস্বর আনবার প্রয়াসগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সচেষ্ট অনেকেই।

২০১২ সালে শিবসেনা প্রধান বালাসাহেবে ঠাকরের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার প্রশ্নে শিবসেনা দ্বিধাবিভক্তির কারণে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়ে পড়লেও সিনেমা, টেলিভিশন এবং ওটিটি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা আজও শিবসেনা দলের সদস্যদের যথেষ্ট সমঝে চলে। শুধু হিন্দুত্ববাদীর ধ্বজা তুলে বিজেপি-র একটি সহযোগী দল হিসেবেই শিবসেনাকে ভারতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করে বাল ঠাকরে যদি ক্ষান্ত হতেন, পরিস্থিতি হয়তো এতটা জটিল হত না। মেরুকরণের রাজনীতিতে তিনি ‘মারাঠা মানস’ নিয়ে সোচ্চার হয়ে আঞ্চলিকতাবাদকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যান যেখানে ‘বহিরাগত’ সংক্রান্ত প্রশ্নটি প্রকট হতে থাকে। এই সঙ্কীর্ণ রাজনীতিতে সাধারণ মারাঠিরা কতটা উপকৃত হচ্ছেন, তা নিয়ে স্থানীয় স্তরেই প্রশ্ন বিস্তর। কারণ, বিভিন্ন রাজ্য থেকে কাজের সন্ধানে আসা মানুষদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এই ‘মারাঠা মানস’ প্রকল্পের কারণে কর্মক্ষেত্রগুলিতে যে ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং হিংস্রতা ছড়িয়েছে, তা আর যাই হোক সৃষ্টিশীল মৌলিক ভাবনার অনুকূল নয়।

কোভিড-পরবর্তী ভারতীয় চলচ্চিত্রে ‘বলিউড’ নামক বিশেষ্য ও বিশেষণ সার্থক থাকবে কি না, তা এখনই বলা যায় না। তবে সুশান্তের অকালমৃত্যুর পরের ঘটনাবলি থেকে এটুকু স্পষ্ট যে স্বজনপোষণ এবং বহিরাগত সংক্রান্ত প্রশ্নগুলি ঘিরে সাধারণ দর্শকদের মনে তথাকথিত বলিউডের ধ্বজাধারীদের বিশ্বাসযোগ্যতায় চিড় ধরেছে। সিবিআই তদন্তের পরে আদৌ যদি চার্জশিট পেশ করা হয়, তবে অভিযুক্তদের বহুব্যবহৃত বাণিজ্যিক সমীকরণগুলি হয়তো পরিবর্তিত হবে। সেক্ষেত্রে হিন্দি চলচ্চিত্র নির্মাণে টাকা লগ্নির ক্ষেত্রগুলিও প্রভাবিত হতে পারে। কিন্তু তা বলে আঞ্চলিক এবং পারিবারিক সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে ভারতীয় চলচ্চিত্রের মূলধারায় নতুন সংবেদনশীলতা প্রসারণের পরিসর বিস্তৃতির সম্ভাবনা কিন্তু নস্যাৎ করে দেওয়া যায় না।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4821 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...