
দেবাশিস দাশগুপ্ত
লেখক বাংলার একজন অগ্রগণ্য সাংবাদিক। রাজ্য রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণী ক্ষমতা প্রশংসিত। কর্মজীবনের সিংহভাগ কেটেছে বর্তমান পত্রিকায়। এখন এই সময় সংবাদপত্রের সহকারী সম্পাদক পদে আসীন।
সকালবেলা সংবাদপত্রের একটি ছবি দেখে মনটা যারপরনাই খারাপ হয়ে গেল। ছবিটার শিরোনাম এরকম “রোহিঙ্গা মুসলিম মেয়ে আফিলা বেবির কোলে কয়েকঘন্টা আগে জন্মানো তার ভাই। সে চলেছে তার মা ইয়াসমিন আরাকে বাংলাদেশের কুটুপালং শরণার্থী শিবির থেকে কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি করতে। সন্তানের জন্ম দিয়ে পেটের ব্যথায় কাতর তিনি।” ছবিতে দেখা যাচ্ছে দু’জন পুরুষ একটি চেয়ারকে ডুলি বানিয়ে তাতে বসিয়ে এক মহিলাকে নিয়ে যাচ্ছে।
কতই বা বয়স আফিলা বেবির? পাঁচ, ছয়, না হয় আট? এই বয়সে তার পিঠে স্কুলব্যাগ নিয়ে বেণী দুলিয়ে স্কুলের পথে এগিয়ে চলার কথা। আমরা বুক বাজিয়ে বিশ্ব নারী দিবস পালন করি, ফি বছর সভা সমিতি সেমিনারে নারীর স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন নিয়ে বড় বড় ভাষণ দিই। এই আফিলা বেবির মায়ের কাছে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল্য কতটুকু? ফুটফুটে আফিলার কাছে আন্তর্জাতিক শিশু দিবসেরই বা তাৎপর্য কী? তারা দু’জনেই আজ নিজভূমে পরবাসী। তাই মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে তারা পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে। রোহিঙ্গা হয়ে জন্মানোই কি তাদের একমাত্র অপরাধ?
কিংবা ধরা যাক হামিদা খাতুনের কথা, হামিদা খাতুন না হয়ে সে ইরফাত আরা বা জাহিদা বিবিও হতে পারে। মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার বিবরণ দিচ্ছিল তারা। জওয়ানরা রাতে গ্রামের পর গ্রামে বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে সুন্দরী মেয়ের খোঁজে। সেরকম মেয়ে পেলেই অর্ধমৃত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে তাদের বে-আব্রু শরীর, রাস্তার ধারে, জঙ্গলের আনাচে কানাচে। গ্রামের পর গ্রামে তারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ঘরবাড়িতে। তাদের ভয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা নিজভূমি ছেড়ে সমুদ্র জঙ্গল পেরিয়ে চলেছে অজানা আশ্রয়ের খোঁজে। কেউ যাচ্ছে বাংলাদেশে, কেউ বা শ্রীলঙ্কা, আবার কেউ পাড়ি দিচ্ছে ভারতের পানে।
এ এক বিচিত্র সমস্যা। মায়ানমারের এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আজ কোনও দেশ নেই। যে দেশে তাদের জন্ম সেখানে যাবার আজ আর কোনও অধিকার নেই। কেন? তারা নাকি জঙ্গি! গত ২৫ শে আগস্ট সীমান্ত প্রহরারত সামরিক বাহিনীর কয়েকজনকে হত্যা করেছে তারা। তারপরই শুরু হয়েছে গৌতম বুদ্ধের শান্তির ললিত বাণীতে দীক্ষিত মায়ানমারের শাসকদের নির্মম অত্যাচার। এও এক জাতিদাঙ্গা বই কি! বৌদ্ধদের সঙ্গে মুসলমানদের সংঘাত। ভাবতে অবাক লাগে, শান্তির জন্য নোবেলজয়ী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী আং সান সু কি’র দেশে এই নির্মম হত্যালীলা চলছে, চলছে রোহিঙ্গাদের ভিটেমাটি ছাড়া করার সামরিক আস্ফালন। ইতিমধ্যেই সু কি’র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। রাষ্ট্রপুঞ্জের তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছে মায়ানমারের সামরিক সরকার।
এ সমস্যা আজকের নয়, গত বছরখানেকের মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর আকার ধারণ করেছে। প্রত্যক্ষভাবে আমাদের দেশের কোনও বিষয় না হলেও এই সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছে ভারতও। কেন? রোহিঙ্গারা হল মূলত বাংলভাষাভাষী মুসলিম। কেন্দ্রীয় সরকার পরিষ্কার ঘোষণা করেছেন, এ দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের “পুশ ব্যাক” করতে হবে। যে যাই বলুন না কেন, একথা দিনের আলোর মত স্পষ্ট যে তীব্র মুসলমান-বিরোধী বিজেপি সরকার হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের কলেবর আর একটু বৃদ্ধির জন্যই এই “পুশব্যাক” থিওরির আমদানি করলেন। তাঁদের যুক্তি, রোহিঙ্গারা দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় “থ্রেট” (বিপদ)। কেন্দ্রীয় সরকার এই মর্মে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে হলফনামাও দাখিল করেছেন। রাজ্যের প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি, অধুনা ত্রিপুরার রাজ্যপাল মহামান্য তথাগত রায় মহাশয় সম্প্রতি বেশ উষ্মার সঙ্গেই বলেছেন, ভারতবর্ষ কি ধর্মশালা নাকি যে সকলকে আশ্রয় দিতে হবে? অপরপক্ষে এ রাজ্যের বাকি দলগুলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিজেপির অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বিভিন্ন বামপন্থী দল সবাই একযোগে কেন্দ্রের “পুশব্যাক” নীতির সমালোচনা করেছে। রাজ্য রাজনীতিতে বর্তমানে সংখ্যালঘু কংগ্রেস সিপিএমের মতামত রাজনীতির আঙিনায় ততটা “গুরুত্বপূর্ণ” না হলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে শাসকদল কিন্তু কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর “ভোকাল টনিকের” অনুপস্থিতি সত্ত্বেও, দলের এই অবস্থান অবশ্যই তৃণমূল সুপ্রিমোর বিনা অনুমোদনে নয়। রাজনৈতিক মহলের মতে, রোহিঙ্গারা বাঙালি মুসলমান বলেই তাদের প্রতি তৃণমূলের এত দরদ, অর্থাৎ মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক বৃদ্ধিই তাদের মূল লক্ষ্য। তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ বরাবরই প্রবলভাবেই উঠে আসে। কিছুদিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই বলে বসলেন, “কেউ কেউ বলে আমি নাকি মুসলিম তোষণ করি। হ্যাঁ, করি তো। কারণ এ রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় তিরিশ শতাংশ। তাদের কথা তো আমাদের ভাবতেই হবে।” তৃণমূল সরকার রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য কতটা কি করেছেন, তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে- তবে আর পাঁচটা বিষয়ের মত রোহিঙ্গাদের নিয়েও অদূর ভবিষ্যতে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত বেঁধে যেতে পারে কিনা, সে প্রশ্নও উঠছে। তার পিছনে রয়েছে সেই মুসলিম-তত্ত্ব। আসলে এরকম একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলি ভোটব্যাঙ্কের ঘোলা জলে মাছ ধরতে পিছপা নয়।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটা বিপুল অংশ মাথা গুঁজেছেন বাংলাদেশে। তবে ছাপ্পান্ন ইঞ্চির মহান ভারতের “পুশব্যাক”-এর মত অতটা আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারেননি মুজিবকন্যা হাসিনা। বাংলাদেশ সরকার পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা মায়ানমারই তৈরি করেছে, ফলত সমাধানের পথ তাদেরকেই খুঁজে নিতে হবে। ডোকালাম প্রশ্নে যতই মতভেদ থাকুক না কেন, রোহিঙ্গা প্রশ্নে বেজিংও ১০ নং রাইসিনা হিলসের মার্গেই বিশ্বাসী। আরও একধাপ সুর চড়িয়ে জিনপিং সরকার মনে করেন, মায়ানমারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণের জন্য রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান একান্তভাবে জরুরি। একথা হয়ত ঠিক, ভারত, বাংলাদেশ, চীন ইত্যাদি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্থান সংকুলান হয়তো অসম্ভব, তবে তার মানে কখনওই এই নয় যে রোহিঙ্গা মানেই দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটা বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন। সারা বিশ্বে বিভিন্ন জঙ্গিহানার ঘটনায় কিছু মুসলমান মানুষের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে- ফলে একটা গোটা জনজাতিই “জঙ্গি”, অতএব তারা দেশ ও দশের পক্ষে হানিকর- রোহিঙ্গা সমস্যার এই অতিসরলীকরণ কখনোই প্রত্যাশিত নয়, এবং এই প্রশ্নে ভারত তথা প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান দৃষ্টিকটুভাবে একপেশে।
সব মিলিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা ভালোই ডালপালা বিস্তার করেছে এ ধরার বুকে। আন্তর্জাতিক দুনিয়া মায়ানমারের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে, ফোঁস করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। কোণঠাসা হবার ভয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় অনুপস্থিত থেকেছেন সু কি। অন্যদিকে ভারত সরকারের “পুশব্যাক” থিওরি প্রবলভাবে সমালোচিত হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জে, ওয়াশিংটনের তোপের মুখে পড়েছে মায়ানমার।
যত দিন যাচ্ছে, বুদ্ধদেবের শান্তির আদর্শে দীক্ষিত ভূমি ততই অশান্ত হয়ে পড়ছে। বৌদ্ধধর্মীয় মায়ানমারের সামরিক সরকার এত হিংস্র হয়ে উঠেছে কেন, সেই প্রশ্নে আলোড়িত আজ বিশ্বের দরবার। তাই সবশেষে, এই বিশ্ব সকল শিশুর বাসযোগ্য হয়ে উঠুক এটাই সবার কাম্য। রোহিঙ্গারা বুঝে নিক তাদের প্রাপ্য অধিকার, সদর্পে প্রতিষ্ঠিত হোক নিজভূমে, হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বীতে নিষ্ঠুর দ্বন্দ্বের অবসান হোক শীঘ্রই। বিধাতার দরবারে অসহায় নতজানু মানুষকে আর যেন প্রশ্ন করতে না হয়…
কতটা রক্ত ঝরলে তবে “মানুষ” হওয়া যায়? বলতে পারো, হে পরিসংখ্যান?
lekhak maltake age india theke pichone lath mere bhagano uchit,porkistaner dalal
@প্রসেনজিৎ বেশ দায়িত্ববান নাগরিক দেখছি আপনি। দেশোদ্ধারের অনেক দায়িত্ব নিজেই নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছেন। মতানৈক্য হতেই পারে, সমালোচনা করুন, তবে শালীনতার মাত্রা টা বজায় রেখে। এটা আপনার খাটা পায়খানা নয়, এটা রুচিশীল একটা ম্যাগাজিন, তবে বেশ বোঝা যাচ্ছে বাড়িতে শৌচালয় বানানোর অবকাশ পাননি, তাই মাঠে ঘাটে ছড়িয়ে বেড়ান। কাকে কি বলতে পারেন একবার ভেবে দেখুন, অবশ্য এখন দিকে দিকে অশিক্ষার যে জোয়ার, মধ্য ও নিম্নমেধার যে অশ্লীল উদযাপন, তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ আপনার এই ভাষা ও বিশ্লেষণ। গরুর ল্যাজ ধরে ঝোলা প্রাকটিস করুন, তাঁতে যদি পেটে কিছু বিদ্যে ঢোকে! যাই হোক, আপনার বেগ আসতেই পারে, তবে সেটা ত্যাগ করার জায়গা এটা নয়, আর মনে রাখবেন, আমাশা বন্ধের ও নানান রকম দাওয়াই হয়। ভালো থাকবেন।
neka amar jara ekta machio mare na sei buddist ra hotat keno eto hingsar use korche,ta bhebechen kakahno he mohan NEKA lekhak
কোত্থেকে যে এসব বালছাল এসে জোটে!
প্রসেনজিতবাবু, লেখার বিষয়বস্তু ও লেখকের মতের সঙ্গে আপনার মতের অমিল হতেই পারে, সেটা যুক্তিসহ লিখুন। সেটা না করে খিস্তিতে নেমে আসা আপনার নিজের চিন্তার দৈন্যের লক্ষণ, এভাবে সেটা প্রকাশ করে ফেলবেন না।
apnara ek kaaj korun,rohingya fund e nijeder sompotti sob likhe din,tate besh ekta somajseba plus anti state glamourwala ekta besh bepar hobe
anyway,magazine er patay comment comment jhogra bhalo dekhay na,eta sotyi kotha.ami map chaichi kauke aghat kore thakle