গোট, ফিশ, স্নেক, স্প্যারো— বিলুপ্ত ভাষার ছবি ও গান

অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়

 


ঠিক যেমনভাবে ইংরেজি ধীরে ধীরে গিলে নিচ্ছে বাংলাকে, তেমনই আমরাও নির্দয়ভাবে গলা টিপে মেরেছি প্রত্যেক প্রান্তিক জনজাতির অস্তিত্বকে। কারণ, শেষপর্যন্ত নিছক সংখ্যার দাপটেই পিছিয়ে পড়ে বহুত্ববাদের গরিমাময় ঔদার্যের ধারণা। অন্তরে, অবচেতনে আমরা প্রত্যেকেই সংখ্যাগুরুর আভিজাত্যে গা ভাসিয়ে দিতে চাই। এইরকম এক সময়ে দাঁড়িয়ে গোট, ফিশ, স্নেক, স্প্যারো–র মতো কাজ আমাদের অন্তত এমন একেকটি ভাষার অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন করে। বাধ্য করে ভাবতে— এই ভাষাগুলির বিলুপ্তি আর কতদূর?

 

“এই বর্ষায় দিদা মারা গেলেন। দিদার সঙ্গে অতীত হয়ে গেল সতেরোটা কোঁড়া শব্দ। সেগুলো আর কেউ বলবে না।”

‘নেঃএ বর্ষারে দিদিমাঞ গঃএনে। দিদিমাঞ নাঃআ সঙ্গে অতীতনা সতেরোটা কোডা জাগার। আঙকুকে অটোঃ যাহায় কাকু গামাকো।’

বাংলা ভাষা নিয়ে আমরা যেমন চিন্তিত, তেমনই বোধহয় প্রত্যেকটি অন্য ভাষাকেও সংরক্ষণের দায় আমাদের সবার। প্রথাগত পিএইচডি-জীবনের শেষ পর্যায়ে এক বন্ধুর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল— সে রাজবংশী, কুড়মালি প্রমুখ ভাষার অস্তিত্ব, তাদের সাহিত্য, সমাজ, এবং আজকের সময়ে বৃহত্তর বাংলাভাষী সমাজে এই প্রান্তিক ভাষাগুলির অবস্থান নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী ছিল। তার সঙ্গে আলাপের মাধ্যমে তখনই কিছুটা বুঝেছিলাম ভাষার বিস্তারের প্রশ্নে, অথবা বিপুল সংখ্যক এমন অজস্র ভাষার অস্তিত্ব সম্পর্কেও আমাদের জ্ঞান কতখানি সীমিত, কতখানি হতাশাজনক। হতাশা শব্দটি স্পষ্ট করে বলতে হয়, কারণ ইদানীং সমাজের বিভিন্ন স্তর, বিবিধ মানবিক অস্তিত্বকে যখন কিঞ্চিৎ পরিশ্রমে খোঁজার ও বোঝার চেষ্টা করেছি, তখনই প্রতিভাত হয়েছে— আমাদের আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন ছিল। আমাদের আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন— এখনই।

এমন এক সময়েই কাজটি হাতে এল। জানলাম, কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে ডক্সা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রায় বিলুপ্তপ্রায় কোঁড়া ভাষায় নির্মিত প্রথম তথ্যচিত্র গোট, ফিশ, স্নেক, স্প্যারো’ প্রদর্শিত হয়েছে। পুনা ফিল্ম ইন্সটিটিউটের প্রাক্তনী অভ্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের প্রাক্তনী শোয়েব আজম এবং সিনেম্যাটোগ্রাফার স্নেহাশিস মিত্রের উদ্যোগে এই তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। ছবির গবেষণার কাজে যুক্ত ছিলেন বিশ্বভারতীর আরেক প্রাক্তনী জগন্নাথ পাড়ুই এবং বর্তমান ছাত্র সুদীপ কোঁড়া।

বাঙালির বোলপুর, শান্তিনিকেতন। তার কাছেই কোপাই নদী সংলগ্ন একটি গ্রাম— কমলাকান্তপুর। সেই কমলাকান্তপুরের কোঁড়াপাড়ায় আজও প্রায় ৫০টি কোঁড়া ভাষাভাষী পরিবারের বাস। উল্লেখযোগ্য, ছবির গবেষণার কাজে সাহায্য করা সুদীপ কোঁড়া নিজেও এই কমলাকান্তপুর গ্রামের বাসিন্দা। সেই গ্রামেই পৌঁছেছিল গোট, ফিশ, স্নেক, স্প্যারো-র দল।

বোলপুর সংলগ্ন কমলাকান্তপুর গ্রামের কোঁড়াপাড়া— আজও যেখানে প্রায় ৫০টি পরিবার কোঁড়া ভাষায় কথা বলেন

 

কানাডার এই নামজাদা চলচ্চিত্র উৎসবে শেষ অবধি পুরস্কৃত না হলেও ছবিটি বিশেষ প্রশংসা পায়। উল্লেখযোগ্য, ভারত থেকে এই একটি ছবিই এবারের ডক্সা উৎসবে মনোনীত হয়েছিল। কোঁড়া ভাষার পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে এই ছবি কি তাহলে সত্যিই কোনও সদর্থক প্রভাব ফেলতে পারবে?

 

আলোচনা-সমালোচনার অবকাশ চিরকালের। প্রথমে কোঁড়া ভাষাকে নিয়েই বরং এই সুযোগে কিঞ্চিৎ আলোচনা উঠুক। কমলাকান্তপুরের প্রবীণেরাই বলেন, ৫০টি কোঁড়া ভাষাভাষী পরিবার সেই গ্রামে থাকলেও, গ্রামের বিশেষত নবীন প্রজন্মের ৫০ শতাংশ মানুষই আজ আর সেই ভাষায় কথা বলতে পারেন না। এই ভাষার কোনও লিখিত লিপির অস্তিত্ব নেই। বাংলা হরফেই তাঁরা লেখালেখির কাজ চালান। কাজেই, লিপি না থাকার কারণে সরকারি ভাষা হিসেবেও কোঁড়ার স্বীকৃতি মেলেনি।

সাঁওতাল ভাষায় রঘুনাথ মুর্মু যে অলচিকি লিপির প্রবর্তন ঘটান, তেমন কোনও রঘুনাথকে পাওয়ার সৌভাগ্য কোঁড়াভাষাভাষী মানুষের কপালে ঘটেনি। তাই আমাদের মতো শহুরে পর্যবেক্ষকদের কাছে— যাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বোধহয় কৃষ্ণকায় আদিবাসী, জনজাতি গোষ্ঠীর সকল মানুষকেই একলপ্তে ‘সাঁওতাল’ বর্গে ফেলতে চান এবং বোলপুর ভ্রমণান্তে ‘সাঁওতাল নাচ’ দেখে ‘এথনিক’ আনন্দে তৃষ্ণা নিবারণ করেন— কোঁড়া ভাষার অস্তিত্ব থাকল কি না, তা নিয়ে তাঁদের বিশেষ চিন্তার অবকাশ থাকে না। এভাবেই ‘এক জাতি এক দেশ’ স্লোগানের চূড়ান্ত একমুখিতার আস্ফালনই ক্রমশ চুঁইয়ে পড়ে ভাষাগত পরিসরেও। আমরা বহুত্ববাদের বুলি আওড়ালেও তার গভীরতাকে হৃদয়ে জারিত করতে পারি না।

আরেকটু বিস্তারে আলোচনা চলুক।

ভাষাগত সাম্রাজ্যবাদ— এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েই গোট, ফিশ, স্নেক, স্প্যারো-র মতো ছবির উঠে আসা জরুরি। আমাদের মনে রাখতে হবে, ঠিক যেমনভাবে ইংরেজির আগ্রাসনে বাংলা তথা অন্যান্য অনেক ভাষার অবলুপ্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে— একইভাবে, স্থানীয় স্তরে বাংলা তথা এমন অনেক ভাষাই কিন্তু সমতুল চলনে তাদের প্রতিবেশী আরও অনেক স্থানীয় ভাষার অবলুপ্তির কারণ হয়ে উঠেছে। সাম্রাজ্যবাদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে উঠে এসেছে এক মাৎস্যন্যায়ের পরিস্থিতি। আদতে ‘ভাষা’— এই ধারণাটির প্রতি যথোচিত সম্মান না-থাকার কারণেই এই আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদ ও তৎপরবর্তী মাৎস্যন্যায় অবস্থার বিকাশ।

লাল
কালো
সবুজ
বাদামী
হলুদ
সাদা

কোঁড়া ভাষায় এই ছয়টি রঙেরই কেবল উপযুক্ত প্রতিশব্দ রয়েছে। গোট, ফিশ, স্নেক, স্প্যারো ছবির শুরুতে এক কোঁড়া তরুণীর সংলাপে তাই একরাশ আক্ষেপ ধরা পড়ে—

শীতের সময় মাঠ শিশিরে ভরে যায়। গাছের রং বদলায়। নদীর রং বদলায়। আমাদের ভাষায় সেই সব রঙের অস্তিত্ব নেই…

আমাদের ভাষার নাম কোঁড়া। শান্ত বলে, আমাদের ভাষাকে নাকি ‘বিপন্ন’ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের ভাষায় ‘বিপন্ন’ বলেও কোনও শব্দ নেই।

লিপিহীন এই ভাষা ও সংস্কৃতির প্রথম (সম্ভবত) সরকারি উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮৯২ সালে প্রকাশিত এইচএইচ রিসলে-র লেখা Tribes and Castes of Bengal গ্রন্থে। সেখানে বলা হয়েছে, “কোঁড়া— ছোটনাগপুর এবং মধ্য ও পশ্চিমবঙ্গ (Western and Central parts of Bengal) এলাকার এক দ্রাবিড়ীয় জনজাতি-গোষ্ঠী। এদের মুণ্ডা জনজাতির এক বিচ্ছিন্ন অংশ হিসেবেও বিবেচনা করা যায়।”

রিসলে বইটিতে উল্লেখ করেছেন, মানভূম ও বাঁকুড়ার কোঁড়া সমাজে মুণ্ডা রীতিনীতির সরাসরি প্রভাব লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে সাঁওতাল পরগণার কোঁড়া প্রতিনিধিরা নিজেদের মুণ্ডাদের থেকে পৃথক ও স্বতন্ত্র বলে মনে করেন এবং নাগপুর অঞ্চলকে নিজেদের আদি বাসস্থান হিসেবে মান্যতা দেন। বইটিতে লেখক কোঁড়া সমাজের বিবিধ রীতিনীতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সামাজিক অভ্যাস ও গঠনতন্ত্রের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রামাণ্য হিসেবে দুটি জনশুমারির তথ্য (যথাক্রমে ১৮৭২ ও ১৮৮১ সালে সংগৃহীত) উল্লেখ করেছেন। এই তথ্য থেকেই জানা যায়, বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং তৎকালীন বিহারের পাশাপাশি পূর্ববঙ্গের খুলনা, যশোর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া ও চট্টগ্রাম এলাকাতেও কোঁড়া জনজাতির অস্তিত্ব ছিল। অথচ ২০০৫ সালে বাংলাদেশের এবং ২০১১ সালের শেষ ভারতীয় জনগণনার তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, রাজশাহী অঞ্চলে মাত্র ১৩০০ জন এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকা মিলিয়ে গোটা ভারতে কোঁড়া ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা মাত্র ৪৭,২৬৮।

এরপর কেটে গিয়েছে আরও চৌদ্দ বছর। তার উপর অতিমারির কাল।

২০২৫ সালে ‘গোট, ফিশ, স্নেক, স্প্যারো’র প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কমলাকান্তপুরের প্রবীণ কোঁড়াভাষী বাসিন্দারা জানাচ্ছেন— প্রতিটি প্রবীণের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে অন্তত সাতটি করে কোঁড়া শব্দ। মানুষের অস্তিত্বের মতোই, মুছে যাচ্ছে ভাষার অস্তিত্বও।

 

 

ছবিতে নেপথ্য সংলাপে সেই কোঁড়া তরুণীর কণ্ঠে তাঁর প্রেমিকের কথা শোনা যায়। ঠিকাশ্রমিকের কাজ করতে সেই যুবক পাড়ি দিয়েছে ওড়িশায়। আজকের দিনে বেশিরভাগ তরুণ কোঁড়া পুরুষের ভবিষ্যৎ যেন এই অভিবাসী ঠিকাশ্রমিকের জীবনেই নির্ধারিত। ওড়িশায় কেবল বাংলা আর হিন্দিতে কথা বলতে হয়। সেখানে কোঁড়া ভাষায় কেউ কথা বলে না।

ঠিক যেমনভাবে ইংরেজি ধীরে ধীরে গিলে নিচ্ছে বাংলাকে, তেমনই আমরাও নির্দয়ভাবে গলা টিপে মেরেছি প্রত্যেক প্রান্তিক জনজাতির অস্তিত্বকে। কারণ, শেষপর্যন্ত নিছক সংখ্যার দাপটেই পিছিয়ে পড়ে বহুত্ববাদের গরিমাময় ঔদার্যের ধারণা। অন্তরে, অবচেতনে আমরা প্রত্যেকেই সংখ্যাগুরুর আভিজাত্যে গা ভাসিয়ে দিতে চাই।

ছোটবেলা থেকেই আমাদের শেখানো হয়— ‘কেবল সায়েন্স গ্রুপটাতেই জোর দেওয়া উচিত।’ এই ভাবনারই অনিবার্য পরিণতিতে আজ প্রায় প্রতিটি ভাষাচর্চার পরিসরেই পরবর্তী প্রজন্মের একটা বড় অংশের মধ্যে চরম দৈন্যতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একইভাবে, ‘সাঁওতাল’ আর ‘আদিবাসী’— এই গড়পড়তা শব্দবন্ধের আড়ালে আমরা চিরতরে মুছে দিয়েছি ‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান’-এর বহুত্বকে। আমাদের কাছে বহুত্ববাদ মানে এখন বড়জোর ‘এথনিক হ্যান্ডিক্র্যাফটসের বিকিকিনি’ আর ‘রংচঙে ফ্যাশনের উৎসব’। ‘নানা ভাষা’র যে গভীরতা, তার ভাবনাই যেন বিলুপ্ত হয়েছে আমাদের চেতনায়।

এইরকম এক সময়ে দাঁড়িয়ে গোট, ফিশ, স্নেক, স্প্যারো–র মতো কাজ আমাদের অন্তত এমন একেকটি ভাষার অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন করে। বাধ্য করে ভাবতে— এই ভাষাগুলির বিলুপ্তি আর কতদূর? অন্তত কিছুটা তো নাড়া দেয়, তাই না?

নাকি কেবল অভিজাত ফিল্মোৎসবের প্রাঙ্গণেই এমন ছবির মুক্তি আর পরিণতি সীমাবদ্ধ থেকে যায়? এই প্রসঙ্গে সংক্ষেপে বলতেই হয়, প্রযোজক-পরিচালকের পাশাপাশি দর্শক, শুভানুধ্যায়ী ও সমালোচকদেরও সমান দায়িত্ব— এই ছবির বক্তব্যকে শুধু অভিজাত অ্যাকাডেমিক পরিসরে নয়, মূলের কাছাকাছি পৌঁছে দেওয়ার। এ-কথা সত্যি, কোঁড়াদের কথা, গান, আখ্যান-উপাখ্যানের মালিকানা যেমন কোঁড়াদেরই, তেমনই সেই অধিকারকে সম্মান ও সুরক্ষা দেওয়ার দায় আমাদের সকলের। কেবল পরিচালক বা কলাকুশলীদের পক্ষে একা সেই ভার বহন করা সম্ভব নয়।

কারও পক্ষেই অতিমানব হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। কেউ হয়তো আলোচনার সূত্রপাত ঘটাবেন, কেউ সমালোচনার মধ্যে দিয়ে উন্মোচন করবেন সমাধানের সীমাবদ্ধতা। এমনই এক দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একেকটি ‘problem statement’ এবং তার ‘solution’ ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। বিশ্বায়ন ও ধনতান্ত্রিক আগ্রাসনের এই বিরাট পরিসরে, একেকটি ভাষা ও তার অবলুপ্তিকে কেন্দ্র করে কাজ করতে চাওয়াটাই বোধহয় আজ এক দুর্লভ আত্মবিশ্বাস ও দুঃসাহসের মিলিত উদযাপন।

এমন একেকটি কাজ, আর সেই কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা প্রতিটি ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ যেন একদিন মাথা উঁচু করে পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে দাঁড়াতে পারেন; তাঁদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মতোই তাঁদের ভাষা, সমাজ ও সংস্কৃতির অধিকারও যেন চিরকাল স্বীকৃতি পায়, সম্মান পায়। এই লক্ষ্যেই আজ আমাদের একসঙ্গে, নিয়ত, আলাপ-আলোচনা-সমালোচনার পথ ধরে এগিয়ে চলা জরুরি।

…ছবির অন্তিম পর্যায়ে, এক সংলাপে সেই কোঁড়া তরুণী তার প্রেমিককে অনুরোধ করে—

আমাদের কোঁড়া ভাষাটা অনভ্যাসে যেন একেবারে ভুলে যেও না, কেমন? না-হলে তুমি ফিরলে আমি কোন ভাষাতেই বা তোমাকে আমার মনের কথা জানাব?

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5217 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

2 Comments

  1. আমি অমর্ত্যর লেখার ভক্ত। একথা আগেও মতামত জানাতে গিয়ে বলেছি আজ‌ও বলছি। কোঁড়া ভাষার অস্তিত্বের কথা শুনলেও খুব বেশি জানা ছিলনা। কিছুদিন আগে এক অনুজপ্রতিম শিক্ষক বন্ধুর তৈরি এক তথ্যচিত্রে আরও এক হারিয়ে যাওয়া ভাষার কথা জেনেছি। আসলে ভাষাকে ঘিরেই মানুষের মনের উচাটন, ভালোবাসার জোয়ার ভাটা। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষার আগ্রাসনে আজ এমন জনগোষ্ঠীর ভাষা বিলীয়মান। এই লেখাটি পড়ার পর শহুরে ভ্রামণিকরা হয়তো বোলপুর যাবার অবকাশে হামলে পড়বেন কমলাকান্ত পুরে। সেলফি আর ভিডিওতে ভরে উঠবে সামাজিক মাধ্যম। আমরা দূর থেকে সেই আগ্রাসন প্রত্যক্ষ করবো।

    • আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সোমনাথবাবু। পরিবেশ-বিষয়ক আপনার লেখাগুলিও আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, ভীষণ শিক্ষণীয়। আপনাদের কাছ থেকে আমি শিখি, আরও লেখার রসদ পাই। শহুরে ভ্রামণিকদের বিষয়ে আপনার আশঙ্কার সঙ্গেও আমি সহমত। রবিঠাকুরের শান্তিনিকেতন ও খোয়াইবনেরই যে দশা তাদের হাতে হয়েছে, লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা নেই। কেবল ভরসা বোধহয়, রবিঠাকুর বা শান্তিনিকেতন যতখানি পণ্য হয়ে উঠতে পেরেছে – বিশ্বায়নের পৃথিবীতে কোঁড়া ভাষার বোধহয় ততখানিও বাজারমূল্য নেই। বাংলা ভাষাকে নিয়েই বাঙালীর যতখানি অনীহা, খামোখা কোঁড়া বা সমতুল ‘ট্রাইবাল ডাউনট্রডন’দের নিয়ে আবেগের উদ্গার থাকলেও পর্যটনে বোধ করি ভদ্দরলোকেদের পাড়ায় তাদের গুরুত্ব জুটবে না। তবু, তেমন একেকটি ভাষার কী ভবিষ্যৎ – আমরা জানি না। ভীষণ ভাবে মনে করি, মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার হল ভাষার ধারণা। অথচ যুগে যুগে তার প্রতিই আমাদের অবহেলা সর্বাধিক।

Leave a Reply to Somnath Mukhopadhyay Cancel reply