কুদুম্বশ্রী, কেরল এবং ফিরে আসার গল্প

কুদুম্বশ্রী, কেরল এবং ফিরে আসার গল্প

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

‘পরিবারের সমৃদ্ধি’। হ্যাঁ। কুদুম্বশ্রীর এটাই মানে। কুদুম্বশ্রী মানে কেরল। দেশের বৃহত্তম নারী সমবায়। সেই কেরল, শিক্ষার হারের ম্যাজিকাল সংখ্যার পাশাপাশি বানভাসি অতীত। শতাব্দীর ভয়ঙ্করতম প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আর সেখানেই কুদুম্বশ্রীর লড়াই। গল্প নির্মাণ।

জমি। কেরলের বর্তমান বন্যা পরবর্তী জমি অভিশপ্ত। ধান, সাবু-র সুজলা সুফলায় নদীর পলি, কাদা, টক্সিক মিশে একটা লেই করা জঞ্জালের স্তূপ। সমস্ত কেরল জুড়ে। একটা সময়ে মেঘ কেটে রোদ। বিপদ কমল? নাহ। রোদে শুকিয়ে সেই টক্সিক লেই একটা সিমেন্টের আস্তরণে ঢেকে দিল মাটি। কোথায় ধান? সাবু? কী জন্মাবে সেই অসম্ভব অনুর্বর আস্তরণ ভেদ করে? সঙ্গে আছে জলস্তরের সমীকরণের ইমব্যালেন্স। ভূস্তরের জল বাড়তে পারছে না উপরিতলের জলস্তরের হ্রাসের কারণে। এই ভারসাম্যহীনতার সঙ্গে বন্যার পর ক্রমশ কমে আসা পলি আর কাদা ঝর্না কিংবা নদীগুলির জল ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে হুহু করে। একটা আসন্ন খরা। আবার মৃত্যু। কেরল দিন গুনছে। কুদুম্বশ্রীও…

তবুও লড়াই। কেরলের সত্তর লক্ষ জনসংখ্যার পঁয়তাল্লিশ লক্ষ এই সমবায়ের সঙ্গে যুক্ত। নিয়মমাফিক, পরিবার পিছু একজন থাকতে পারেন কুদুম্বশ্রীতে। হিসেব বলছে সেক্ষেত্রে রাজ্যের ষাট শতাংশ পরিবার এই সমবায়ের সঙ্গে যুক্ত। প্রসঙ্গে এসে যায় সঙ্ঘ কৃষির কথা। পাঁচজন মহিলার একত্রে চাষ। অবশ্য অন্যের কাছ থেকে লিজ নেওয়া খামার পিছু আড়াই একর জমিতে। ন্যায়ভিত্তিক কৃষি পদ্ধতিতে। পাঁচ সদস্যের প্রত্যেকের পরিবারের সবার পেটের খাবারের যোগান মিটুক, তারপরের বাড়তি উৎপাদন বিক্রিবাটা করে যা আসবে। মনে পড়ে যায়, এখনও বীরভূম বাঁকুড়ার সাঁওতালদের কিচেন গার্ডেনগুলো। ওঁরাও এই পদ্ধতিতেই লড়াই করছেন। যদিও মাটি, আকাশ, জল ততটা বিশ্বাসঘাতক নয়।

ক্ষতির হিসেব? কেরলের পট্টনমথিট্টার রন্নি ব্লকের একাত্তরটি সঙ্ঘ কৃষি ব্যাঙ্ক লোন নিয়েছিল বাহাত্তর লক্ষ টাকা। পুরোটা শেষ। পরিবারের প্রত্যেকের গত মরশুমের পঞ্চাশ হাজার টাকা লাভের হিসেব এবছর উল্টে বিভীষিকার চেহারায়। গোটা রাজ্যে সঙ্ঘ কৃষিগুলির ক্ষতি চারশো কোটি টাকা। তার মধ্যে ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতি দুশ কোটি। বাদবাকি আনুষঙ্গিক অনেক কিছুই। কলা চাষ বাবদ গত বছরে ওনামের সময়ে যে লাভ হয়েছিল, এবারে সেই পাশার ছক বদলে চলে এল আনুষঙ্গিক অনেক কিছুই। দূষিত জমির আস্তরণ পরিষ্কার করতেই লেগে যাবে খামার পিছু এক লক্ষ টাকা। সঙ্গে আছে খাল শোধনের সময়। খরচ। খরার চিন্তা, ভয়। লিজ না করা জমিতে বিমা না করার সমস্যা। আরও যে কত কিছু…

কিন্তু এ তো ভালো খবরের গল্প। কুদুম্বশ্রী এখানেই অনন্যা। সারা রাজ্য ব্যাপী সর্বহারা সঙ্ঘ কৃষির সমষ্টিগত চাঁদা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে এসেছে সাত কোটি টাকা। ‘সরকারের সঙ্গে খাটি, সরকারের জন্য নয়’— প্রত্যয় নারীদের চোখে, মুখে, ভাষায়। একসঙ্গে মাঠ পরিষ্কারের হারকিউলিয়ান টাস্ক। রাজ্যের সত্তর হাজার সঙ্ঘ খামারের হেঁইসা মারো লড়াই। টান। জেদ। সঙ্গে সরকারি উৎসাহ। এগারোই সেপ্টেম্বর। ওইদিনই দিল্লিতে ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশনের প্রথমবারের জন্য দেওয়া আউটস্ট্যান্ডিং পারফর্মেন্স ইন ফার্ম লাইভলিহুডের জয়মাল্য কুদুম্বশ্রীকে। এককথায় কেরলকে। পুরস্কার। লড়াই করার পাথেয়। কঠিন রাস্তা। সঙ্কল্প।

হারে না। হারে না। ‘ঈশ্বরের নিজের দেশ’ কখনও হারে না।

 

তথ্যসূত্র: Kerala’s women farmers rise above the flood. PARI.

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4659 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...