মোদিজি আর শাহজির মত করে ভাবার প্র্যাকটিস

মোদিজি আর শাহজির মতো করে ভাবার প্র্যাকটিস -- দেবাশিস ভট্টাচার্য

দেবাশিস্‌ ভট্টাচার্য 

 

কোন এক প্রাজ্ঞ ব্যক্তি কবে যেন ভাবা প্র্যাকটিস করবার পরামর্শ দিয়েছিল, কাজেই, চলুন একটু ভাবা প্র্যাকটিস করি। কাজটা খুব একটা সোজা নয়, যদিও। যেমন তেমন ভাবনা প্র্যাকটিস করার কথা তো আর হচ্ছে না, মোদিজি আর শাহজির মত করে ভাবার কথা হচ্ছে।

ওভাবে ভাবতে সবারই যে খুব প্র্যাকটিস-ট্যাকটিস লাগে, এমনটা অবশ্য নয়। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর ক্ষমতাকেন্দ্রের ধারেকাছে থাকা লোকজন ও তাদের একান্ত ঘনিষ্ঠেরা, গুজরাটের রাঘববোয়াল ব্যবসায়ীকুল, অস্ত্রশস্ত্র কেনাবেচার দেশীয় বানিয়ারা মোদিজি আর শাহজির মত করে ভাবতে পারেন, ওটাই ওঁদের ভাবনার ‘ডিফল্ট মোড’, ওর জন্য ওঁদের তেমন অনুশীলন লাগে না।

তার বাইরে, আমার আপনার মত লোকেরা ওভাবে ভাবতে চাইলে এমনিতে পারবে না, একটু প্র্যাকটিস লাগবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের টাকাকড়ি প্রাণপণে চোট হোক, যুদ্ধাস্ত্র কেনার নামে যথেচ্ছ টাকা নয়ছয় হোক, আমার চাকরি গেলে যাক, বাতিল নোট ব্যাঙ্কে জমা দিতে গিয়ে সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত হলে হোক, আমার পুত্র উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়ে ধর্ম আর জাতপাতের কারণে নিগৃহীত বা বহিষ্কৃত হোক, আমার কন্যার পোশাক-আশাক-আচরণ সংশোধন করার মহৎ অভিপ্রায়ে রামভক্তেরা তাকে প্রকাশ্য রাস্তায় লাঞ্ছনা করুক, এ সবে কিছু যায় আসে না, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারলে আর এবং মুসলমান নাগরিকদের তটস্থ রাখতে পারলেই আমার আত্মার শান্তি, রাষ্ট্রের ইজ্জত এবং সনাতন ধর্মের রক্ষা— এভাবে ভাবতে পারাটা এমনি এমনি হয় না, একটু প্র্যাকটিস তো লাগেই।

কিন্তু, প্রশ্ন থাকছে একটা। আমার আপনার মত লোকজন আদৌ কেন ওভাবে ভাবতে যাবে, কেন ওরকম ভাবনায় অভ্যস্ত হবার জন্য অনুশীলন করবে? কী প্রণোদনা থাকতে পারে তার পেছনে?

হ্যাঁ, প্রণোদনা থাকতে পারে বইকি। মানে, অন্তত, প্রণোদনার কারণ আছে বলে মনে হতেই পারে, জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও টানাপোড়েনের কারণে। মনে করুন, ‘ক’ বাবু একজন ‘আমার আপনার মত’ লোক। এরকম লোকেরা সবাই এক ধাঁচের নয়, যদিও।

হয়ত তিনি সম্পূর্ণ ক্ষমতাহীন এক খর্বিত অপমানিত অস্তিত্ব, হয়ত তিনি ভাবেন, যে-ই সরকারে থাকুক না কেন, ‘এ দেশে জন্মে পদাঘাতই শুধু পেলাম’। কাজেই, তিনি মনে মনে মোদি বা ভারতরাষ্ট্র বা হিন্দুত্ব জাতীয় ‘শক্তিমান’ কোনও সত্তা খোঁজেন, যাতে তার সঙ্গে নিজেকে সমীকৃত করে তিনি কোনও এক স্তরে নিজেকে ‘সবল’ ভাবতে পারেন, এবং সেই প্রক্রিয়ায় নিজের খর্বিত অস্তিত্বের এক মানসিক ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। কিম্বা হয়ত, ‘ক’ বাবু ততটা হাড়-হাভাতে নন, মোটামুটি একটা চাকরিবাকরি বা ব্যবসা করেন বা সেই ধরনের আরও ভালো কিছুর চেষ্টায় আছেন, তাঁর ধারণা, মুসলমানদের তাড়াতে পারলে চাকরি আর ব্যবসার বাজারে প্রতিযোগিতা কমবে, ফলে তাঁর সুদিন আসবে। কিম্বা ধরুন, ‘ক’ বাবু এক অবস্থাপন্ন বনেদি বংশের সন্তান, এবং মহা ধার্মিক— মহানবমীর দিনে গাওয়া ঘিয়ের নুচি সহযোগে প্যাঁটার ঝোল একবারও মিস করেন্নাকো, আর সেইসঙ্গে মনে করেন, ভিন্নধর্মীদের জব্দ করতে পারলে সনাতন ধম্মের রক্ষে হবে। হরলিক্সের সেই বিখ্যাত পুরনো বিজ্ঞাপনের ছোট্ট মেয়েটি যেমন ‘এমনি এমনিই’ হরলিক্স খেত, ইনিও তেমনি ‘এমনি এমনিই’ সাম্প্রদায়িক হতে পারেন, বিশেষ কোনও অর্থনৈতিক বা মনস্তাত্ত্বিক অজুহাত ছাড়াই। অথবা এমনও হতে পারে, ‘ক’ বাবু মোটের ওপর বিদ্বান এবং ওয়াকিবহাল মানুষ, ইশকুল কলেজে শিক্ষকতা করেন, আদৌ তেমন একটা ধর্মপরায়ণ নন, এমনকি, হয়ত বা পরিচিতজনের কুসংস্কার নিয়ে হাসাহাসিও করে থাকেন। কিন্তু তিনি মনে করেন, জাতীয় স্তরের বিরোধী রাজনীতিকেরা একে বিশ্বাসযোগ্য নন, আর তার ওপর শতধাবিভক্ত, ফলে এমন একটা শক্তিশালী দলকে সমর্থন করা উচিত যারা একটা ‘স্টেব্‌ল্‌ গভর্নমেন্ট’ দিতে পারবে, এবং ‘দেশের ভালোর’ জন্য বেশ জোরের সঙ্গে অপ্রিয় সিদ্ধান্তও নিতে পারবে। আবার, এমনটাও হয়ত অসম্ভব নয় যে, আমাদের ওই ‘ক’ বাবু পেশাগতভাবে বেশ সফল এবং সচ্ছল ব্যক্তি, নিজেকে এবং পরিবারকে নিয়ে চমৎকার সুখে স্বচ্ছন্দে আছেন। মাঝে মাঝে তাঁর মনে হয়, তিনি শুধুই টাকা আর স্বাচ্ছন্দের পেছনে ছুটছেন, জীবনে উচ্চ আদর্শ কিছু থাকলে ভাল হত। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, তিনি তাঁর সঙ্কীর্ণ পেশাগত বিষয়ের বাইরে আর তেমন কিছু জানেন না, এবং, ধরম করমের পেছনে কিছু টাকা খরচা আর যুদ্ধবিগ্রহের ব্যাপারে দেশকে সমর্থন করা, এর বাইরে ‘উচ্চ আদর্শ’ বলে আর কিছু হতে পারে কিনা সে ব্যাপারে তাঁর খুব বেশি স্পষ্ট করে কোনও ধারণা নেই। ফলত, তিনিও মোদিজি আর শাহজির মত করে ভাবার অনুশীলন করতে চান। এখন কথা হচ্ছে, এভাবে ভাবার প্রণোদনা যে প্রক্রিয়াতেই আসুক, ভাবনাটাকে কতদূর পর্যন্ত অনুসরণ করতে পারা যায়? আসুন, চেষ্টা করে দেখা যাক।

ধরা যাক, আমি মেনে নিতে রাজি আছি, ধর্মনিরপেক্ষতা চুলোয় যাক, কাশ্মিরের মানবাধিকার চুলোয় যাক, সংখ্যালঘুদের ইজ্জত ও নিরাপত্তা চুলোয় যাক, তবুও মোদিজি আর শাহজির মত করে ভাবাটা জরুরি, কারণ এতে করে সারা দেশের ভালো হবে। ‘দেশের ভালো’ কীরকম? এক দল এক ভাষা এক সংস্কৃতির কব্জায় গোটা দেশকে এনে ফেলতে পারলে রাজনীতি ও প্রশাসন সুস্থিত হবে, রাষ্ট্র সংহত ও শক্তিশালী হবে। সেটা হলে কী হবে? অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলো নিশ্চিন্তে হতে পারবে, সমৃদ্ধি আসবে, দুর্নীতিবাজেরা জব্দ হবে, সন্ত্রাসীরা জব্দ হবে। দু-চারটে লোককে ধমকে চমকে রেখে যদি দেশের বেশিরভাগের জন্য সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা আদায় করে আনা যায়, মন্দ কী?

বেশ, ধরে নেওয়া যাক, সত্যিই মন্দ নয়। দেশের কিছু লোকের অধিকার ও নিরাপত্তাকে সঙ্কুচিত করে রাখাটা বৃহত্তর মানবতা ও নৈতিকতার চোখে সমীচীন কিনা, সে প্রশ্ন না হয় আপাতত মুলতুবিই থাকল। আপাতত শুধু এইটুকুই ভাল করে ভেবে দেখার চেষ্টা করা যাক যে, এতে করে সত্যিই দেশের বেশিরভাগের জন্য সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা আদায় হয় কিনা। নিরাপত্তা আর সন্ত্রাসের কথাটাই আজ সবচেয়ে বেশি আলোচিত, কাজেই সেই কথাটা হোক সবার আগে। মোদিজি আর শাহজির দল দেশ চালনার জনাদেশ পেয়েছে সেই দু হাজার চোদ্দ সাল থেকে, তার ফলে দেশে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের দশা ঠিক কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে? ছাপ্পান্ন ইঞ্চির দাপটে হু হু করে কমেছে নিশ্চয়ই? উঁহু, আদৌ না, ঠিক তার উল্টো । “National Consortium for the Study of Terrorism and Responses to Terrorism”-এর গবেষণার ফলাফল সাজিয়ে সারণি তৈরি করে উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত এ দেশে সন্ত্রাসবাদী হামলা বেশ কিছু ঘটলেও তার প্রবণতা ছিল কমবার দিকে, কিন্তু ২০১৩ সালের পর থেকে তা বেড়েছে অবাধে। নিচের সারণি দেখুন।

এ ক্ষেত্রে অবশ্য শুধু সংখ্যাবৃদ্ধিটাই একমাত্র দর্শনীয় নয়, সমান ভীতিপ্রদ হল সন্ত্রাসী আক্রমণের নকশাটিও, অর্থাৎ ঘটনাগুলো ঠিক কীভাবে ঘটছে সেই ব্যাপারটাও। আগে সন্ত্রাসী হামলা হত সাধারণ মানুষের ওপর, আর তা সামলাবার জন্য ডাক পড়ত পুলিশ আর সেনার, তাদেরকে নামতে হত ত্রাণকর্তার ভূমিকায়। অথচ, বর্তমান সরকারের আমলে সন্ত্রাসী হামলা ঘটছে সরাসরি সেনাদলেরই ওপর, সৈনিকেরা নিহত হয়ে যাচ্ছেন নিজেদের ব্যারাকে নিদ্রিত অবস্থায়, কিম্বা নিজেদের কনভয়ে নিজেদের গাড়িতে বসে বসেই। আশ্চর্যের ব্যাপার, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জান লড়িয়ে দেওয়া এই সরকারের কোনও কর্তাব্যক্তি এর ফলে লজ্জা পাচ্ছেন না, পদত্যাগ করছেন না, এমনকি কার বা কাদের গাফিলতিতে এসব ঘটল বা কেউ এর ফলে শাস্তি পেয়েছেন কিনা সে সবও জানাচ্ছেন না। বরং এমন ভাব করছেন যেন, তাঁদের আমলে যে এইসব ঘটছে এটাই তাঁদের এক মস্ত কৃতিত্ব ! হুঁ হুঁ বাবা, আমরা আগমার্কা সন্ত্রাসবিরোধী না হলে আমাদের আমলেই এত আক্রমণ কেন? এই দাপুটে মিথ্যাচার ও নির্লজ্জতাটুকু ছাড়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাঁদের আর ঠিক কী যে সাফল্য, সে কথাটা মোটেই পরিষ্কার করে বোঝা যাচ্ছে না।

এ সমস্তকে ভারতরাষ্ট্রের সুসংহত ও শক্তিশালী হবার লক্ষণ বলে মনে হচ্ছে বুঝি?

দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা আর দুর্নীতিকে দমন করার প্রশ্ন যদি ওঠে, তো সে নিয়ে এখন আর কথা বলাই বৃথা। সম্ভাব্য সমস্ত রকম মাপকাঠিতেই দেশের অর্থনীতির হাল যে খুব খারাপ, আর লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলো থেকে স্রেফ হাওয়া হয়ে যাচ্ছে, এ নিয়ে আর কোনও মহলেই বোধহয় কোনও প্রশ্ন নেই। তবে, প্রশ্ন না থাকলেও, ভাল করে জিনিসটা ভেবে না দেখলে বোঝায় ফাঁক থেকে যেতে পারে। মনে হতে পারে, এ দুর্দশা হয়ত বা সাময়িক, হয়ত বা অর্থনীতির স্বাভাবিক ওঠানামারই অঙ্গ, হয়ত বা সরকার বাহাদুর আরও বেশি বেশি কড়া হয়ে, পাজি দেশদ্রোহীদের আরও বেশি বেশি জব্দ করে এ অধোগতিকে রুখে দেবেন। উঁহু, নাঃ। সে গুড়ে বালি। আসলে, অর্থনীতির এই অধোগতি ছিল প্রায় অনিবার্য। সমাজতত্ত্ববিদেরা বিস্তর তথ্য-যুক্তি দিয়ে সন্দেহাতীতভাবে দেখিয়েছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের ধর্মমুখিনতার সঙ্গে তার অর্থনৈতিক প্রশাসনিক সাংস্কৃতিক উন্নতির সম্পর্ক পুরোপুরি বিপ্রতীপ। অর্থাৎ, যে দেশ ধর্মের নাগপাশে যত বেশি করে বাঁধা, সে দেশে অর্থনৈতিক অসাম্য ততই বেশি, এবং মাথাপিছু আয়, শিক্ষাদীক্ষা, আইনশৃঙ্খলা এইসব ততটাই দুর্বল। নিচের লেখচিত্র দেখুন, এখানে দেশের মাথাপিছু আয় ও ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্যের সম্পর্ক দেখানো হচ্ছে। এটিও উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া, উইকিপিডিয়ার প্রবন্ধকার এটি সংগ্রহ করেছেন ‘উইন-গ্যালাপ’ সংস্থার করা পৃথিবীব্যাপী ধর্মবিশ্বাসের সমীক্ষা থেকে। 


নেপালের মতো ছোট্ট গরিব দেশও রাজতান্ত্রিক হিন্দুরাষ্ট্র থেকে গণতান্ত্রিক সেকুলার রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়ে কেন অর্থনৈতিক উন্নতির পথে চলবে, আর তার উল্টোপথে হাঁটলে কেন ভারতের মতো সুদীর্ঘ গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যসম্পন্ন বড়সড় দেশেরও কেন যে অর্থনৈতিক সলিল সমাধি ঘটবে, সে ব্যাখ্যা খুব পরিষ্কারভাবেই এ লেখচিত্রে ধরা আছে।

একইরকম দশা ‘বিদেশি বিতাড়ন’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশকে শত্রুমুক্ত করে দেশের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি বাড়িয়ে তোলার প্রকল্পেরও। অসমীয়া জনতার বাঙালি-বিদ্বেষ কাজে লাগিয়ে সেখানে যে বীভৎস কুনাট্য সঙ্ঘটিত হল, তাতে ক্ষমতাসীন দলের কিছু সাময়িক রাজনৈতিক লাভ হলেও, এর ফলে বিশ লাখ বাঙালির জীবনে চরম অন্ধকারই এসেছে, এবং অন্য আর কারুরই নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি বিন্দুমাত্র বাড়েনি। এর দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল যে দেশের পক্ষে ভয়ঙ্কর হতে পারে, যা কিনা এমনকি ক্ষমতাসীন দলেরও পক্ষে যাবে না, সে ইঙ্গিত এখনই পরিষ্কার।

তাহলে, মোদিজি আর শাহজির মত করে ভাবা যাচ্ছে কি, আন্তরিকভাবে চাইলেও? নাঃ, কিছুতেই পারা যাচ্ছে না। কাশ্মিরিদের গোবেড়েন দিলে আর মুসলমানদের ধমকে চমকে রাখলেই আমার মত অনুগত নিরীহ প্রজা সুখে আর নিরাপদে থাকতে পারবে বলে ভাবছিলুম, সেটা তবে আর হবে না? এ তো মহা দুশ্চিন্তা হল মশায়, দেখুন দেখি!

অবশ্য, এত সব দুশ্চিন্তা তো ওইসব হাবিজাবি জিনিস মাথায় ঢোকালে তবেই। এ সব জানবার রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে আর একটুও দুশ্চিন্তা নেই। কোন মহান ধর্মগুরু তাঁর একান্ত শান্তির নীড় আশ্রমটিতে কোন মহাপাপী বালিকাকে ধর্ষণ করে স্বর্গগামী করলেন, কোন রামভক্তের দল কোন পাষণ্ডকে গোমাংসখাদক সন্দেহে বেদম প্রহার করে পৃথিবীকে পাপমুক্ত করল, কোন মহান দেশপ্রেমিক দেশরক্ষার্থে মহার্ঘ্য যুদ্ধাস্ত্র কেনায় মধ্যস্থতা করার পারিশ্রমিকস্বরূপ যৎসামান্য দু-চার পয়সা একান্তে নিজের জন্য সরিয়ে রাখলেন, এ সব অপ্রয়োজনীয় জিনিস না জানলেই বা ক্ষতি কি বলুন? তার চেয়ে বরং, সমস্ত পাঠ্যবই হিন্দুমতে সংশোধন হয়ে গেলে, পুলিশ প্রশাসন বিচারব্যবস্থা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এইসবের মাথায় গুছিয়ে হিন্দু মহাপুরুষগণ আসীন হয়ে গেলে, পত্রপত্রিকা টেলিভিশন ইন্টারনেট সব বন্ধ হয়ে গেলে, প্রতিবাদীরা সব গ্রেপ্তার হয়ে আটক হয়ে গেলে, তখন আর কোনও চিন্তা নেই। জানলেই সমস্যা, না জানলে শান্তি। অখণ্ড শান্তি। হিন্দুশাস্ত্রে সম্ভবত এই রকম কোনও অবস্থাকেই বলেছে চরম মোক্ষের দশা, সচ্চিদানন্দ।

জয় শ্রীরাম!

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4661 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...