সমিধ বরণ জানার কবিতা

পূর্বকথা ও দর্শন । সমিধ বরণ জানা

পূর্বকথা ও দর্শন

 

পূর্বকথা

–হে মহাত্মা কৃপা করে
এই বনভূমে আমার সকল উৎসাহের বিনাশ করুন
আমাকে কৌতূহলহীনতায় স্থিত করুন
এই ফলের উন্মোচন, পাখি ও প্রজাপতি
এই চিত্ত বিক্ষেপ আমি আর সহ্য করতে পারি না
–বৎস, তুমি ক্ষুধা তুমিই নিবৃত্তি
এই যে সদা পরিবর্তনশীল বনভূমি
তোমার নিবৃত্তি-প্রকাশ মাত্র
ক্ষুধা ও নিবৃত্তির মধ্যে পাখি ও প্রজাপতি
শান্তিকামী শাদা কেতন হইয়া উড়িতেছে
নির্বাণের পূর্বে তুমি আনন্দের সাথে
নিজস্ব স্বরূপগুলি দর্শন কর
যা তোমাকে উদাসীন হতে সাহায্য করবে

 

দর্শন

(১)

অন্ধকারে ভারি হচ্ছে নীচতলা
তুমি আন্দাজে সিঁড়ি ভেঙে উঠে যাচ্ছ ছাদে
সিঁড়িতে সাজানো টবের ভিতর থেকে
গতবছরের ফুলগাছের বীজ কথা বলছে
এত ঝড়ের মতো হাওয়া আসছে কোত্থেকে
তোমার শুকনো শাড়ি, লালচে ডুরে গামছা
উড়ছে ঘরময়
পরনের শাড়ি সামলে ছাদে
আকাশের নিচে দাঁড়াতেই
কলকল করে উঠল অপেক্ষমাণ আয়না
যার মধ্যে তুমি ম্রিয়মাণ আলোয়
আজ প্রথম বার দেখছ
তোমার আঁচড় কাটা মুখ

 

(২)

কিছুতেই পার হতে পারি না বাঁকা চাঁদ
তার চরকার ছায়া
চাঁদ থেকে যে দড়ি নেমে আসছে মাটিতে
সে ঘাটে ঘাটে বেঁধে দিচ্ছে নৌকা
নৌকার খোলের মধ্যে বাঁধা পড়ে
হাঁড়িকুড়ি, কেরোসিন স্টোভ

আমাদের পিছুডাক অগ্রাহ্য করে
জলের ভিতর দিয়ে বহুদূরে ছুটে চলে যায়
আমাদের প্রিয়তম, দুরন্ত নোঙর

 

(৩)

মাটির মধ্যে তুমি কতখানি সঞ্চিত করেছ করুণা
এখন পা তুলতে গেলে বুঝতে পারি
তোমার করুণা থেকে আমি মুক্ত হয়ে যাচ্ছি

ঝাঁপিয়ে পড়ছে ধূলিঝড়

পদছাপ সম্বল করে
মাটির নীচে ইতস্তত গড়ে উঠছে
দুয়েকটি ডুবোপাহাড়

 

(৪)

পুতুলের ঘর জুড়ে একটাই ছবি ফুটে ওঠে:
শরতের রৌদ্র ও ছায়ার ভিতরে
বালিকা কন্যার হাত ধরে পিতা চলেছেন
উঠোন জুড়ে ছড়িয়ে থাকছে খেলা
উঠোন জুড়ে ছড়িয়ে থাকছে হাসি

বাঁক পেরোতে পেরোতে
পিতার মুখের দিকে মুখ তুলে কন্যা শুধায়:
আমরা আবার কবে পুতুলের ঘরে
ফিরে আসব বাবা

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4650 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...