চারটি কবিতা

চারটি কবিতা | মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া

মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া

 

অ-সুখ

কথা বলো গানের অন্ধকার
বেড়াতে যাওয়ার মত কুয়াশা ঘনিয়ে এল
ছবি জুড়ে যেবার
প্রায়ই বলো কথায় কথায়
ঠিক কোনখানে সরলবর্গীয় শীত লেগে
ধুপিবন মিশে গেল টিলায়
যেখানে নেমে আসছে আজকের রোদ আর
উঠে যাচ্ছে গত বছরেরর হাওয়া
হাওয়ারা কি প্রেম শিখে নেয়?
ফটো ওঠার আগে আয়নায়
গুরাস ফুলেরা রিহার্সাল দেয় ঠিকঠাক হাসির?
বাতিল হারমোনিয়ামের লুকোনো অভিমান
তাদের মনে পড়ে যায় না?
তাহলে দুপুরের জলে ডোবা এই বাড়ি
হলুদ দাগ থেকে পিছলে পড়ে যে কাঁচের প্লেট,
খাবার টেবিলে হঠাৎই হেসে ওঠো তুমি,
বাবার কথা শুনে
পুরনো বন্দিশের ছায়ায় চুল বাঁধো যত্ন করে
অসুখ কি এরকম মা…?

 

স্বরগ্রাম

দুরূহ ধাঁধার মতো ছায়ায় জড়ানো কার গান
দেওয়াল ফাটিয়ে দেওয়া গুচ্ছমূল
চারিয়ে যায় সুরেলা রহস্যের মতো
বাদামি বটের সরু সরু তার
ফেলে গেছে জংধরা রাতের সেতার
চুনখসা দেওয়ালের আকাশে
আঁকাবাঁকা বিদ্যুৎশিখায়
শেকড়ের আদিসত‍্য ছুটে যায়..
টর্চের আলো গোল থেকে ভরাট বাতাসে
ঘুরপাক খেয়ে ওঠে বাতাসের গায়
ধুলোর আস্তরে কোন গান মৃদু অক্টেভে বয়ে যেতে
নিঝুম ঝুরিতে আরও বেশি নিজেকে জড়ায়
বুঝতে না পেরে পাথরের সিঁড়ি বেয়ে
ভূতে পাওয়া সন্ধেয় একা নেমে আসি
ভাঙাবাড়ি… জমে থাকা সুর আর রাত্তির
ফাঁকা স্বরলিপি হয়ে ভাসে…

 

ভ্রমণ কাহিনি-১

শাদা চাদরে কি এক শীতকাল লিখিস তুই
ইশারা দিস জিরো পয়েন্ট টপকে যাওয়ার
গল্পের কোথায় কোথায় ছড়িয়ে দিস ঝিমধরা পুকুর
আর চাদর উল্টে দেখি মুখ নেই,
শ‍্যাওলা ও জলঝাঁঝির ঘন ক‍্যানভাস
মোটা দাঁড়ার তুলিতে রঙের আস্তর
থুপে থুপে ঘোর লাগে জলের
ট্রেনের জানলায় দেখি ছুটে যাচ্ছে বন
মুহূর্তের ওপার থেকে ছুটে আসে অচেনা স্টেশন
জানলার ফ্রেমে বাঁধা দূরপাল্লার চাঁদ তটভূমি বরাবর ছোটে
সৈকতে নামলেই ঝাউবন,
ওলটপালট স্নানে ভাসে মর্মর..
অথচ মুখ নেই,
শাদা বালির হাড়ে ফাঁকা যে কোটর
কাছিমের খোল গর্ত করে তুই জুড়ে দিস
রুপোলি তারের ঢেউ
ঢেউয়ের ওপারে টানা দুঃখের মতো দিগন্ত
ক্ষত থেকে গড়িয়ে পড়ে বেদনা… ধোঁয়া ওড়ে
আবছা কিনারে
দেখি বিভাস লেগে আছে তোর
ভ্রমণকাহিনি জুড়ে একা জেলেডিঙি ভাসে… ভোর…

 

ভ্রমণ কাহিনি-২

অনেক পথের নাম মিশে আছে খড়কুটো
অনেক পথের শেষে ভিজে যায় বৃষ্টি আলাপ
উড়ানে উড়ানে দূর সে পথের রেখা টেনে টেনে
পাগল একাকী হাসে সবকিছু ধুলো হবে জেনে
গল্পের দিকচিহ্ন হারিয়েছে রাস্তা নিজেই
যেমন ঢেউয়ের নীচে মিশে যায় জলের শরীর
পাগলের বুকে নামে কবেকার বৃষ্টি-বাদল
বাঁক নিলে অন্ধকার, ডুবে যায় নদীরও আদল
ভাসমান পথ শুধু প্রথম ধ্বনির মতো জাগে
অচেনা জন্মকাল হেঁটে যায় যে ধ্বনির আগে
সন্ধের পাশে পাশে ধাবমান পায়ের পাতায়
মৃদু বোল পুড়ে ছাই, ছাই থেকে সে এসেছে জল
পাগল চলছে একা, ধ্বনি জুড়ে তার চলাচল…

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4596 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...