রিয়া চক্রবর্তী

পাঁচটি কবিতা -- রিয়া চক্রবর্তী

পাঁচটি কবিতা

 

এটা একটা শহরের গপ্পো

শ্মশান থেকে শুরু নগরসভ্যতার।
জ্বলন্ত মানুষেরা কাজে বের হয়।
কাজ সেরে চিতায় উঠে শোয়।
চন্দনের বনে বসে কাঁদে।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে… বিনিয়ে বিনিয়ে…
জ্যোৎস্নায় মেখে,
গন্তব্যের আগেই কামরা ছাড়তে হয়…
তল্লাট ছেড়ে তলিয়ে যায় ঢেউ।
চাঁপাফুল পোড়ে…
ছেঁড়া পকেটের ফাঁক গলে,
চিনেবাদামের সুখ ছড়িয়ে পড়ে
রাস্তায়… হাইড্রেনে…
ফিস্টি শুরু হয় ফুটপাথ জুড়ে।
আগুনখেকো শবেরা উঠে বসে।
টেনে নেয় উল্লাসের শেষ টান।

 

ফারাও হারেম

রাত নামলেই কারা যেন নেমে আসে। কাঁটাছেঁড়া করে… পাথর ভেঙে অশ্রু নামায়। গাঁইতিতে গাঁইতিতে অক্ষর ফোটায়…

একদিন কেউ আসবে… পড়বে এইসব গুহালিপি। হেমলক আজীবন থাকে পৃথিবীর বুকে। বালির গভীরে থাকে পিরামিড… হায়রোগ্লেফিক্স… অক্ষরের কাঁটাতারে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মমি ও মানুষ। সংলাপ এই শুরু হল বলে…

 

এত আলো, এত অন্ধকার

আতসকাচের ব্যবহার বড্ড বেড়ে গেছে। কীট… দংশন… বিষণ্ণতা… মরচে… এসব নিয়ে আসর সরগরম হয়। যেসব বটের কোটর হেরে যাওয়ার ওপর পাতার পোশাক বিছিয়ে দিত, তারা সব আকাশগঙ্গা হয়ে গেছে। মনখারাপের দিনে আমি দূষণ এড়িয়ে, জগৎ পেরিয়ে চিলেকোঠায় উঠে আসি… আকাশগঙ্গা কি আমার আকাশপ্রদীপকে দেখতে পায়? পায় হয়তো… কিংবা নয়। আনন্দের ভাষা ভুলে গেলে, সব চিঠিই ভুল ঠিকানায় যায়… অতল আমার ভালো লাগে। ঘুমের কোনও ভাষা থাকে না… কণ্ঠস্বর না… কোলাহল না… ‘তুমি পারোনি’ না… ‘হাহা হিহি দুয়ো’ না… বারবার কাঠগড়ায় ওঠা আর নামা না… কিচ্ছু কিচ্ছু থাকে না… কেবল অতল থাকে। আমি লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ২০% ডিসকাউন্টে ঘুম কিনি… চাবুকের আদর ভোলার স্ট্রিপের দাম মাত্র ৯০ টাকা। বিকেল হতে না-হতেই নেশার মতো টানে আমায় ক্ষত ভোলার এই খেলাটা। ৯০… ১৮০… ২৭০… কাছিমের কামড় থেকে আত্মাকে তবু আমি আজও বাঁচাতে শিখলাম না…

 

গ্যালিভার্স ট্রাভেলের গপ্পো

দূরবিন দিয়ে পৃথিবীকে বেশ ভাল দেখা যায়। কাউকে ছোট, কাউকে বড়— ইচ্ছেমতো দিক বদলে নিলেই হল। এভাবেই কেউ বহরে বেড়ে ওঠে, অথবা কমে… আপনি আসলে যেমনটা দেখতে চান আর কী… কিন্তু একটাই মুশকিল… যে মুহূর্তে আপনি চোখটা সরিয়ে নেবেন কাচের প্রান্ত থেকে, সেই মুহূর্তেই আপনার মানসিক এককগুলো বদলে যেতে থাকবে… আপনার মর্জিতে জগৎটা আর চলবে না একচুলও…
 

চিঠি চালাচালি

বাল্বের বুকে সর জমে। সর ঠেলে ঘাই মারে আলো। টুপ করে তলায় অতলে। কালি-জমা হ্যারিকেন-কাচ… কতদিন আঁধার নামেনি, পড়শি ঘুমের পাড়ায়। দিগন্তের ক্রিমসন গাঢ় হতে হতে কালশিটে রাত হয়ে যায়… রাতটাকে পোস্ট করি, বিজনবাড়ির ঠিকানায়। ঘুমিয়ে পড়ি এক তারার নীচে। এবারের মতো জানা-শোনা-ভোলা-খেলা, সব হল শেষ। নতুন তারার চিঠি বিকেলের ডাক দিয়ে গেছে রেখে। চললাম তবে। আসি… দেখা হবে আবারও কোনও নক্ষত্র সম্মেলনে…

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4661 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

Leave a Reply to Nilanjan Hajra Cancel reply