প্রিয়াঙ্কা

পাঁচটি কবিতা -- প্রিয়াঙ্কা

পাঁচটি কবিতা

 

অনুচ্চারিত

কথাই ভেবেছি শুধু, প্রতিশ্রুতি কখনও ভাবিনি
মধ্য তিরিশে এসে এটুকু তো জানা হয়ে যায়
কথা সব উঠে আসে অধরে ওষ্ঠে নানা রকম
কিছু তার থেকে যায়, বেশি যায় হেলায় ফেলায়
কিছু কথা পিছু পিছু মৃদু ঢেউ হয়ে চলে আসে
ভিজিয়ে পায়ের পাতা পালাবার পথ খোঁজে নিজে
মুখোমুখি সেই কথা দাঁড়িয়েছে যদিবা কখনও
চোখে চোখ রাখবার সুযোগ সে দেয়নি সহজে
সেইসব সাময়িক দ্রবীভূত কথার কথারা
জল হয়ে আসে আর বাষ্প হয়ে উড়ে চলে যায়
যে মুহূর্তে ভাবি তার কণায় কণায় হাত রাখি?
সে মুহূর্তে কথা তার গতিপথ দ্রুত বদলায়
এইসব বারবার হতে হতে কোনও একদিন
কথার ওপরে থাকা যাবতীয় মান অভিমান
প্রাচীন গাছের মতো শিকড়ে শিকড়ে শুষে নিয়ে
ভুলে যাই সেইসব কথা ছিল প্রেমিক সমান…

 

বিস্মৃতি

ধরে নাও কোনও দুঃখ হয়নি আমার
ধরে নাও কোনও শোক অবশিষ্ট নেই
নির্জন পাতার মাঝে পায়ের আওয়াজ?
সেরকমই জানান দেওয়ার মতো তুমি
সেরকমই না জানার মতো বসবাস
যেসব স্মৃতির আমি ধারক বাহক
অথচ কোথাও কোনও উচ্চারণ নেই
সময় হয়েই এল ফিরে আসবার
সেইসব রেখে দিয়ে গাছের কাছেই…

 

মুহূর্ত

ফিরে আসো, যতবার ফিরে আসি নিজ গৃহকোণে
প্রতিটি দিনের শেষে যে অজস্র মুহূর্তের ভীড়ে
এক একটা মুহূর্ত হয় অক্ষয়, ফেলে আসা পথে প্রান্তরে
সে পথে খোদাই করা মিনিট কয়েক
উৎসবের আলোর চেয়ে দ্রুতগামী আলো
কী করে বা ভুলি তাকে, বলো?

 

অপ্রাসঙ্গিক

দ্রুত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিলাম।
সমস্ত বৈপরীত্যকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সমস্ত ভিন্নতাকে আহ্লাদের মোড়কে পরিবেশন করা হয়েছিল।

আলোর গতিতে সব জানা হয়ে গিয়েছিল।
শঙ্খ প্রিয়? শক্তি প্রিয়? ভ্যান গঘের চিঠি, থিও…
‘আমি তোমার স্বপ্নে পাওয়া আঙুল’…
বলা মাত্রই তড়িৎ গতিতে উত্তর এসেছিল ‘স্পর্শ করি জলের অধিকারে…’

দ্রুত মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল সমস্ত রুটিন।
নিজের রুটিনেও খানিক পরিবর্তন এসেছিল।
কিন্তু সেসব হতে না হতেই আবার খুব তাড়াতাড়ি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে হল।
সম্ভবত ঘুম ক্রমশ এতটাই গাঢ় হয়ে গিয়েছিল যে স্বপ্নের আর প্রয়োজন রইল না।
তাই স্বপ্নে আঙুল খুঁজে পাওয়ার প্রশ্নই উঠল না আর!
সম্ভবত আরও অনেক কিছুই।
সম্ভবত বলছি, কারণ, কোনও প্রশ্নই তো তুলিনি
কারণ
প্রশ্নপত্র হয়ে ওঠার অভিপ্রায় কোনওকালে ছিল না আমার…

 

অনতিক্রম্য

এইসব দ্বিধাদের পার করে যেতে
পথে পড়ে যায় চোখে শিমূলের গাছ
অতিক্রম করি তার চোখে চোখ রেখে
যেভাবে তোমাকে রোজ পার করে যাই…
যেভাবে মুঠোয় বেঁধে অস্বীকার রাখি
কিংবা আড়াল রেখে সামনে দাঁড়াই।
দিনান্তে যখন আলো জ্বলে ওঠে পথে
শহরের ব্যস্ততম রাস্তা পারাপার
তোমার রহস্য ছুঁতে চেষ্টা শুধু করি
স্পষ্টতই, ব্যর্থ হই ঠিক প্রতিবার!

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4658 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...