সঙ্কটারূঢ় কংগ্রেস: অবনমনের প্রেক্ষাপট

শঙ্কর রায়  

 



সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক

 

 

 

 

ভারতের জাতীয় কংগ্রেস তার ১৩৮তম জন্মবর্ষে এক অভূতপূর্ব অস্তিত্বের সঙ্কটে। প্রায় দুই শতাব্দীব্যাপী ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদায়ী এই দল ধ্বংস করতে প্রধানত উদ্যত ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), যার তত্বগত নির্দেশক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ অচঞ্চলভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রতি সহযোগিতার হাত আনতভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে শুধু বিজেপি নয়, তৃণমুল কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি দলও হুঙ্কার দিচ্ছে। অথচ এই দুটি দল বিজেপি শাসন অবসান-প্রত্যাশী। অবশ্য ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই-এম) পশ্চিমবঙ্গের নেতারা বলে থাকেন বিজেপি ও তৃণমুল আসলে এক। গত বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআই-এম নেতারা (বিশেষত নতুন রাজ্য সম্পাদক ও পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম) প্রচারে বলে চলেছিলেন বিজেপি ও তৃণমুল-এর মধ্যে ‘সেটিং’ হয়ে গেছে, যা থেকে এসেছিল ‘বিজেমূল’ শব্দচয়। বিধানসভা নির্বাচনী পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় কমিটি এই প্রচারের কঠোর নিন্দা করে ও রাজ্য কমিটিকে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচনী পর্যালোচনা পার্টি চিঠি হিসেবে প্রচার করতে। সেটাই গত বছরে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট-প্রচারিত পার্টির ২ নম্বর চিঠি। বলা হয়, ‘একথা ভাবা ভুল হবে যে… তৃণমুল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে কোনও গোপন বোঝাপড়া হয়েছে। এবছর কেরালার কান্নুরে অনুষ্ঠিত পার্টির ২৩তম কংগ্রেসে গৃহীত রাজনৈতিক প্রস্তাবে তৃণমুল কংগ্রেস সম্পর্কে বলা হয়েছে: ‘The TMC, having been part of the BJP-led NDA, is today ranged against the BJP. It continues with its anti-CPI(M), anti-Left offensive and is today aspiring to be the leader of the anti-BJP forces at the national level.’ কিন্তু সেলিম, বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তীরা এই কথাগুলি বলছেন না।

আজ রাজস্থান আর ছত্তিশগড় ছাড়া আর কোনও রাজ্যে এককভাবে কংগ্রেস ক্ষমতায় নেই। হিন্দি বলয়ে কংগ্রেসের অস্তিত্ব বিপন্ন। এ বছর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে ২.৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে, কোনও মতে দুটি আসনে জয়ী হয়েছে। যদিও ১৯৭৭ অব্দি একবার বাদে (১৯৬৭) প্রত্যেকবার বিপুল ভোটে বিধানসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু দলের রাজনৈতিক শক্তি ও প্রভাবের অবনমনের ইঙ্গিত পরিলক্ষিত হয়েছিল ১৯৬০ দশকের গোড়াতেই। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর প্রয়াণের পরে কংগ্রেস-সংহারের রাজনীতির বিষবৃক্ষ রোপণ করেন সমাজতন্ত্রী নেতা ও তাত্ত্বিক ডঃ রাম মনোহর লোহিয়া। নেহরুর প্রয়াণের পর তিনি সস্তা রাজনৈতিক কৌশলের আশ্রয় নিয়ে নেহরুর বিরুদ্ধে আক্রমণ করেন— নেহরু বিদেশকে দিয়েছেন গ্যাস, দেশকে অ্যাশ (চিতাভস্ম) ও মেয়েকে দিয়ে গেছেন ক্যাশ। একজন রাজনৈতিক তাত্ত্বিকের এমন ছ্যাবলামো বিস্ময়কর। জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতির অন্যতম উদ্গাতা, শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্র নির্মাণ (তিনটি ইন্টিগ্রেটেড ইস্পাত কারখানা, ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেড, ইন্ডিয়ান ড্রাগস অ্যান্ড ফারমাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ওএনজিসি, ইন্ডিয়ান অয়েল প্রভৃতি), আইআইটি এসব তাঁর চোখে পড়ল না। তারপরেই তিনি পেশ করলেন অকংগ্রেসবাদের তত্ত্ব। এ ধরনের কথা কোনওদিন লোহিয়াজির মুখে শোনা যায়নি। লোহিয়াজি তিনি অন্তত ১৯৬০ দশক থেকে কোথাও কখনও আরএসএস বা জনসঙ্ঘের সমালোচনা করেননি। সিপিআই সাংসদ ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত লোকসভায় তাঁর শেষ অনাস্থা প্রস্তাব বিতর্কে স্মরিয়ে দিয়েছিলেন, গান্ধিজির লোহিয়ার প্রতি উপদেশ। বলেছিলেন দেশপ্রেমিক হওয়ার আগে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি দায়বদ্ধ। বাপু তাঁর অনুজ কংগ্রেসির মানসিকতা যে ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন, তা নিয়ে সংশয় নেই।

নেহরুর অন্তিম সময়ে ডঃ লোহিয়া আরএসএস ও ভারতীয় জনসঙ্ঘ দলের নেতা দীনদয়াল উপাধ্যায়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন। উত্তরপ্রদেশে ১৯৬৩ সালে দুটি লোকসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন হয়। দীন দয়াল উপাধ্যায় ১৯৬৩ সালে উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর লোকসভা আসনে উপনির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর প্রধান প্রচারক ছিলেন ডঃ লোহিয়া। আবার সে বছরেই ওই রাজ্যেরই ফারুক্কাবাদ লোকসভা আসনে উপনির্বাচনে লোহিয়া প্রার্থী হলে, তাঁর অন্যতম প্রধান প্রচারক ছিলেন দীন দয়াল উপাধ্যায়।[1] দুজনেই জিতেছিলেন, তাঁদের প্রচারে ছিল চিন আক্রমণে পর্যুদস্ত নেহরু সরকারের বিরুদ্ধে লাগামহীন আক্রমণ। বর্ষামুখ উদ্যত ছিল নেহরু ও তদানীন্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভেঙ্গালিল কৃষ্ণকুরুপ কৃষ্ণ মেননের দিকে। লোহিয়া একটি লেখা বা বক্তৃতাতেও আরএসএস ও জনসঙ্ঘের মৃদু সমালোচনা করেননি। অকংগ্রেসবাদ নীতি সংযুক্ত বিধায়ক দল সাফল্য লাভ পায় ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে অকংগ্রেসি সরকার গঠিত হয়, পশ্চিমবঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সরকারও অকংগ্রেসবাদের অন্যতর মোর্চা ছিল।

নেহরু তাঁর আত্মজীবনীতে ‘সংগঠিত ধর্ম’কে বলেছিলেন ‘বিভীষিকা’। ঠিকই আশঙ্কা করেছিলেন ভারতে সংখ্যাগুরু সাম্পদায়িকতাবাদের মাধ্যমে আসতে পারে ফ্যাসিবাদ— যা আজ আমরা হাড়ে হাড়ে বুঝছি। জরুরি অবস্থার সময় সিপিআই-এম জয়প্রকাশ নারায়নের (জেপি) ‘ভ্রস্টাচারবিরোধী’ ইন্দিরা গান্ধি-বিরোধী রাজনৈতিক সমাবেশে জনসঙ্ঘের পাশে দাঁড়িয়েছিল। জেপি-প্রস্তাবিত জনতা পার্টির (যাতে লোহিয়াপন্থী সোশ্যালিস্ট, সংগঠনপন্থী কংগ্রেস তথা সিন্ডিকেট কংগ্রেস, চরণ সিং-এর লোকদল ও জনসঙ্ঘ) গঠনে সবচেয়ে লাভবান হয়েছিল জনসঙ্ঘ। এর আগে ১৯৬৭ সালে জনসঙ্ঘ ৩৫টি আসন পেল, সিপিআই ও সিপিআই-এম মিলে ৪৬টি আসন জিতেছিল। কিন্তু ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির প্রার্থী হয়ে ৭০টির বেশি আসনে জিতল জনসঙ্ঘীরা।

এর আগে লোহিয়াপন্থী সংযুক্ত সোশ্যালিস্ট পার্টি (এসএসপিঁ) আরেক মারাত্মক পদক্ষেপ নেয়। তখন বিহারে মহামায়া প্রসাদ সিনহা-র মুখ্যমন্ত্রিত্ব চলছে। এসএসপির তখন ৬৮ জন বিধায়ক, সিপিআই-এর ২৫ (একা লড়ে জেতা)। হঠাৎ ২০ জনের বেশি এসএসপি বিধায়ক পার্টি ছেড়ে শোষিত দল গঠন করলেন, নেতৃত্বে বিন্ধেশ্বরী প্রসাদ মণ্ডল। সংযুক্ত বিধায়ক দল-এর সরকারের পতন হল। শুরু হল মণ্ডল রাজনীতি। প্রায় ২২ বছর পরে যখন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং প্রধানমন্ত্রী হলেন, তিনি বিন্ধেশ্বরী প্রসাদ মণ্ডলের নেতৃত্বে মণ্ডল কমিশন গঠন করলেন। নিম্নবর্গীয়দের প্রতিনিধিত্বের দাবিদার বিন্ধেশ্বরী প্রসাদ মণ্ডল প্রায়শ ইউরোপ আমেরিকায় যান। ঐ কমিশনই ধোঁয়াশাময় ‘আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস’ (ওবিসি) সৃষ্টি করে।

হিন্দুত্ববাদীদের কমণ্ডলু রাজনীতি ও জাতপাতনির্ভর বারবার দলপালটানো লোহিয়াপন্থীরা (যেমন মূলায়ম সিং যাদব, লালুপ্রসাদ যাদব, শরদ যাদব, নীতিশ কুমার) শুরু করল মণ্ডল রাজনীতি। উদ্ভূত হল কাঁশিরামের বহুজন সমাজ পার্টি, যা মণ্ডল রাজনীতিকে চিরে দু-তিন ভাগ করল। ফয়দা লুটল আরএসএস ও বিজেপি। কারণ সেখানে চিড় ধরল না। কংগ্রেস বা সিপিআই এই কমণ্ডলু-মণ্ডল রাজনীতির টানাপোড়েনে খাপ খাওয়াতে পারল না। সিপিআই-এমের অসুবিধে হয়নি। কেন্দ্রে যখন যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়ার পতন হল, সিপিআই-এমের সাধারণ সম্পাদক হরকিষাণ সিং সুরজিত প্রকাশ্যে বললেন (এশিয়ান এজ-দৈনিকে এক সাক্ষাৎকারে) তিনি মূলায়ম সিং যাদবকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চান। তাঁর চাল ভেস্তে দিলেল লালু যাদব। তিনি ইন্দ্রকুমার গুজরালকে সমর্থন। তাঁর পাশে দাঁড়াল সিপিআই। উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে মূলায়ম সিং যাদবের মুখোশ এখন খুলে পড়েছে, যা ১৯৯৬ সালে যুক্তফ্রন্টের একাধিক শরিক আঁচ করতে পেরেছিল।

কংগ্রেস কি আবার স্বমহিমায় চাঙ্গা হয়ে উঠবে? প্রাক-১৯৭৭ অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে, তা আদৌ মনে হচ্ছে না, যদিও বিজেপি ছাড়া একমাত্র কংগ্রেসেরই সারা ভারতে সর্বত্র সাংগঠনিক উপস্থিতি আছে। উত্তরপ্রদেশে ২.৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে মানে সে রাজ্যে কংগ্রেসের বিন্দুমাত্র প্রভাব নেই, তা নয়। বরং প্রশ্ন জাগে এত কম ভোট কী করে পায় কংগ্রেসের মতো রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী দল। ইভিএম-ভিভিপ্যাট কারচুপি হয়েছিল কি না, এমন প্রশ্ন ওঠে। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে একদা একটি আইআইটি-র বিভাগীয় প্রধান এই লেখককে পাঁচটি বিধানসভা ভোট গণনার প্রাক্কালে ইমেলে জানান, Certainly it can be manipulated in a very opaque manner, by bugging the firmware of the machines and it can evade the test runs. If the VVPATs are checked by the voter and All VVPATs are counted then it is as good as ballot paper voting.

আসি প্রশান্ত কিশোর প্রসঙ্গে। তিনি যখন তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে কাজ করছিলেন, তৃণমুল কংগ্রেসের নেতৃত্ব স্তরে ও নেতৃত্বের কাছাকাছিদের একটা বড় অংশে তাঁর সম্পর্কে গুজব ও কুৎসা রটেছিল যে তিনি আসলে বিজেপি-র লোক। মনে হয় প্রশান্ত কিশোরকে দেখে অনেকে ভেবেছিলেন তাঁদের নিজেদের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রধান সাগরেদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্‌ বলছিলেন, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২০০টির বেশি আসন জিতে রাজ্যে সরকার গড়তে চলেছে, প্রশান্ত কিশোর বারবার বলেছেন বিজেপি ১০০-র বেশি আসন পেলে তিনি তাঁর সংস্থা আইপ্যাক তুলে দেবেন। তৃণমুল কংগ্রেসের নীতিনির্ধারক কতিপয় নেতাদের তিনি বলেছিলেন ৮০টি আসনও পাবে না। এ প্রসঙ্গে প্রশান্ত কিশোর বলেছিলেন ২০১৯-এ বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি জেতার পর থেকেই তৃণমুল কংগ্রেস ২০২১এর ভোটের লড়াইয়ের প্রস্তুতি (আইপ্যাক-মডেলে) শুরু করে। বিজেপি-আরএসএসকে পরাস্ত করতে একটি কাউন্টার ন্যারেটিভ গড়ে তুলেই ২০২১ সালে বিপুল সাফল্য লাভ করে। উত্তরপ্রদেশে এবার ভোটে সমাজবাদী পার্টি নির্বাচনের তিন মাস আগে প্রস্তুতি নেয়, তার আগে নয়। কোনও কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরির প্রয়াস নেয়নি। সেই সুযোগ নিয়েই বিজেপি আবার জেতে। আমার মত অবশ্য আমি ভোটের ফলাফলের পরেই বলেছি— ৪০৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি ২৫৫টি আসনে জিতেছে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি ১৫০র বেশি আসনে বিজেপি-বিরোধী ভোট ভাগ করার ফলে।

কংগ্রেস নেতৃত্বের (সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে প্রধানত) চার-পাঁচদিন বসে প্রশান্ত কিশোর তুলে ধরেন বিজেপি মোকাবিলার রণনীতি। সোনিয়া গান্ধি তাঁকে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার শর্ত দেন, প্রশান্ত কিশোর তাতে রাজি হননি। ফলে প্রশান্ত কিশোর-প্রস্তাবিত নির্বাচনী রণনীতি কংগ্রেস গ্রহণ করেনি। আমার মনে হয় কংগ্রেস একটা বড় ভুল করল। অবশ্য এখনও সময় আছে। কংগ্রেস যদি নতুন করে ভাবে, প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ মেনে চলে, কংগ্রেসের চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে পারে। কমণ্ডলু-মণ্ডল রাজনীতির অন্তঃসারশূন্যতা অংশত হলেও উপলব্ধ। কংগ্রেস ও সিপিআই-এম, সিপিআই এবং সিপিআই-এমএল (লিবারেশন)-এর মতো সাম্প্রদায়িকতা/জাতপাত রাজনীতির ঘোর বিরোধী দলগুলির ঊঠে দাঁড়ানোর এখনই উপযুক্ত সময়। বিএসপির উপরতলার নেতৃত্ব নিম্নবর্গীয় মানুষদের ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। সেই নিম্নবর্গীয় মানুষদের কাছে পৌঁছতে হবে এই ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির। বিশেষ করে কংগ্রেস নেতৃত্বকে ভাবতে হবে নীচুতলার কর্মীদের কীভাবে জনসংযোগকর্মে নিয়োজিত করা যায়। একটা কথা মানতে হবে— কংগ্রেসই একমাত্র দল যা পরোক্ষভাবেও বিজেপি/জনসঙ্ঘের সঙ্গে অভিন্ন পঙক্তিতে দাঁড়ায়নি। বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং-এর প্রধানমন্ত্রিত্বে সরকার হতে পেরেছিল একদিকে বিজেপি আর অন্যদিকে সিপিআই-এম নেতৃত্বের সমর্থন পেয়েই। ভি পি সিং পরে স্বীকার করেছিলেন যে তিনি ভুল করেছিলেন।

মোদি সরকার একটিও কাজ করেনি, যাতে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে (বরং উল্টোটা হয়েছে)। কর্মসংস্থানের ভাঁওতা দিয়েছে। কাজের ভিত্তিতে বিচার করলে এ সরকারের বিপুল ভোটে হারার কথা। কিন্তু তা হয়নি, মোদি-নেতৃত্বে বিজেপি সাম্প্রদায়িক বিভেদ-হিংসা ছড়িয়ে, ভোট ভাগ করে ও ইভিএম-ভিভিপ্যাটের কারচুপি করে জিতেছে— এ ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। যদি বিজেপি-বিরোধী দলগুলি (বিএসপি এর মধ্যে পড়ে না) একজোট হয়, সঙ্ঘীদের বিভেদকামী সরকারকে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে হারানো সম্ভব। কিন্তু কংগ্রেসকে কোমর বেঁধে নামতে হবে, একটা কাউন্টার ন্যারেটিভ তুলে ধরতে হবে, যা করা সম্ভব।

সাংবাদিকদের কথার ওপর কংগ্রেসের সঙ্কটমোচন সম্ভব নয়, রাজনৈতিক সংগঠন চাঙ্গা করা অত সহজ নয়। যদিও অনেক সাংবাদিক নানা দাওয়াই দিচ্ছেন অযাচিতভাবে। দিন, তাতে আপত্তির কারণ নেই। কিন্তু কংগ্রেসের পুনরুত্থানের কাজটা কংগ্রেসের ভেতর থেকে হবে, বাইরে থেকে নয়।

পরিশেষে বলি, কংগ্রেসের বিপর্যয়ের জন্য রাহুল গান্ধি দায়ী যারা বলছেন (আমি সাংবাদিকদের কথা বলছি), কীসের ভিত্তিতে বলছেন, জানি না। রাহুল গান্ধির জায়গায় অন্য কে এলে কংগ্রেস ভালো ফল করত? সাংবাদিকতা করা আর রাজনৈতিক দলের চড়াই-উৎরাই পরিমাপ করার মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। দ্বিতীয় কাজটা দলের ভেতর থেকে করতে হয়, উইংসের পাশে বসে নয়।


[1] Thakur, Manish K. Ram Manohar Lohia and the politics of anti-Congressism. Mainstream. 26 March 1963.

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4666 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...