আবারও লং মার্চ (২০১৮ থেকে ২০২৩)

অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়

 



লেখক প্রযুক্তিবিদ্যার স্নাতকোত্তর

 

 

 

 

২০১৮-র ঐতিহাসিক মিছিলের পাঁচ বছর পর আবারও পথে নেমেছিলেন মহারাষ্ট্রের কৃষকরা...

 

২০১৮ থেকে ২০২৩। মাঝে অতিমারিতে কেটেছে তিন বছর। আরও দুই কেটেছে নানাবিধ অন্য ব্যস্ততায়। ভোট গিয়েছে। মোদি-শাহের জয়রথ আবারও ক্ষমতার রাজপথে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করেছে। এরই মধ্যে আমরা দেখেছি দিল্লির ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন। মোট কথা ঘটে যাওয়ার মতো অনেক ঘটনাই এই পাঁচ বছরে ঘটে যেতে পেরেছে। রাজনৈতিক উত্থানপতন, জয়পরাজয়, পরিবর্তন, প্রত্যাবর্তন হয়তো বা অনেক কিছুই ঘটেছে, অথবা ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কৃষক, মজুর, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, ও অন্যান্য আরও অনেক প্রান্তিক শ্রেণির যে মানুষেরা রয়েছেন, অতিমারির আগে ও পরবর্তীতে তাঁদের অবস্থার অবনতি ভিন্ন আর কোনও কিছুই পরিলক্ষিত হয়নি। তবুও তাঁদের মনোবল ভাঙেনি। বহু সংগঠনের মিলিত প্রচেষ্টায় যে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন আমরা দেখেছি ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে, অনেকেরই স্মরণে থাকবে ২০১৮ সালে মহারাষ্ট্রে আয়োজিত যে কিসান লং মার্চ, অল ইন্ডিয়া কিসান সভার ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল— সেই লং মার্চ থেকেই কিন্তু বৃহত্তর দেশব্যাপী কৃষক আন্দোলনের সলতে পাকানো শুরু হতে পেরেছিল। ২০১৮ সালের ৬ মার্চ মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে ৩৫,০০০ কৃষক মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে পদযাত্রায় সামিল হন। ৬ দিনের ব্যবধানে, ১২ মার্চ ২০১৮ তারিখে, সেই পদযাত্রা যখন মুম্বাই শহরে প্রবেশ করে, তখন তাতে অংশগ্রহণকারী কৃষকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৭০,০০০-এরও বেশি। এই ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কারণ, পুরনো সেই প্রবাদেরই মতো আজ, আবারও কিছুটা হলেও সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি ঘটে গিয়েছে। গত ১৩ মার্চ, ২০২৩ তারিখে, মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে ২০,০০০ কৃষক, অল ইন্ডিয়া কিসান সভার ব্যানারে আবারও ১৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। ১৭ মার্চ তারিখে সরকারের তরফে আশ্বাস মেলার পর পদযাত্রায় সামিল হওয়া কৃষকেরা মুম্বাই থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে থানে জেলার ভাসিন্দ এলাকায় ইদগাহ ময়দানে অবস্থান শুরু করেন। দেশের বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলির মধ্যে যে কয়েকটি মাত্র এই কৃষক আন্দোলন বা লং মার্চকে তাদের নিউজপ্রিন্ট অথবা পোর্টালে জায়গা করে দিয়েছিল, তাদের একেকজনের বক্তব্যের বয়ান ছিল অনেকটা এইরকম, “ইদগাহ ময়দানে অবস্থানের সময় কৃষকেরা দিল্লির কৃষক আন্দোলনের ধাঁচেই তাঁবু খাটিয়ে নিজেদের পাকাপোক্ত একেকটি থাকার ব্যবস্থা বানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছেন।” শাসক ও সংবাদমাধ্যমের উপর এতখানিই প্রভাব ফেলতে পেরেছিল দিল্লির কৃষক আন্দোলন। মহারাষ্ট্রের কৃষকেরাও জানিয়েছিলেন আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে তাঁরা পদযাত্রা স্থগিত করছেন ঠিকই, কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই বিধানসভায় সরকারি বিবৃতির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী যদি কৃষকদের সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ না নেন, তাহলে আবারও তাঁরা মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন। ততদিন অবধি এই ইদগাহের মাঠেই চলবে তাঁদের অবস্থান। মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের সরকারি আশ্বাসের পর আপাতত এই আন্দোলনের প্রাথমিক বিজেতা হিসেবে কৃষকেরা তাঁদের পদযাত্রা প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু আরও ব্যাপকতর আন্দোলনের আঁচ ইতিমধ্যেই ঈশানকোণে জমে উঠতে শুরু করেছে।

মোট ১৭ দফা দাবিতে এই আন্দোলনের সূচনা হয়। বিশেষ একটি সংবাদ হয়তো বা ইতিমধ্যেই আপনাদের নজর কেড়েছে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের শোলাপুরের এক কৃষক প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে এসে ৫০০ কেজিরও কিছু বেশি পেঁয়াজ বিক্রি করে দাম হিসেবে হাতে পেয়েছিলেন মাত্র দু টাকার একটি ব্যাঙ্ক চেক— যাও কিনা আবার ১৫ দিনের আগে ভাঙানো যাবে না কোনওভাবেই। ৫০০ কেজি পেঁয়াজের দাম কেমন করে ২ টাকায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে সেই হিসেব জানতে চাইলে সামাজিক মাধ্যমেই একটি শর্ট ফিল্ম দেখে ফেলতে পারেন। ২০১৮ সালে যশোবর্ধন মিশ্রের পরিচালনায় ‘মন্ডি’ নামের সেই শর্ট ফিল্মটিতে খুব স্পষ্ট ভাবে দেখানো হয়েছিল, কীভাবে এক কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম অঙ্কের ম্যাজিকে (-)২১৫ টাকায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে। সঠিকই দেখেছেন আপনি, পেঁয়াজ চাষিকেই সেখানে ব্যবসায়ীকে ২১৫ টাকা জমা দিয়ে পরে, নিজের এক কুইন্টাল পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছিল।

২০১৮র পর, আজ ২০২৩— আবারও মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজচাষিরা সেই একই বিপর্যয়ের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। এর পিছনে যেমন রয়েছে বিপুল ফলনের ঘটনা, তেমনই রয়েছে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনারও অবদান। সেই বিষয়ে আলোচনার অন্য জায়গা রয়েছে। এই প্রসঙ্গে কিছু জরুরি সূত্র এই নিবন্ধের শেষে আগ্রহী পাঠকের জন্য দেওয়া থাকবে। কিন্তু পেঁয়াজচাষিদের এই দুরবস্থা থেকেই মহারাষ্ট্রের এই বিপুল কৃষক আন্দোলনের প্রথম সূত্রপাত। কিসান লং মার্চে অংশগ্রহণকারী কৃষকদের ১৭ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল, অবিলম্বে পেঁয়াজচাষিদের জন্য ৬০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল হিসেবে নূন্যতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করতে হবে। এছাড়াও তুলো, সয়াবিন ও একই ধরনের অন্যান্য কিছু শস্যের ক্ষেত্রেও, একই রকমে সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। প্রতি কৃষকের ক্ষেত্রে সরকারের তরফে সেই সহায়ক মূল্যের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যুতের বিল মকুব করতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে ১২ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। তদুপরি মহারাষ্ট্রের ১৭ লক্ষ সরকারি কর্মচারীর জন্য সঠিক, সুস্থিত পেনশনের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। ২০১৮ সালের আন্দোলন প্রায় ঐতিহাসিক একটি চরিত্র নিয়ে ফেলায়, এবারে তাই সরকার তড়িঘড়ি মিছিল কিছুদূর অবধি না এগোতেই কৃষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়। সেখানেই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর তরফে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হলে পরে, আপাতত কৃষক সংগঠনের নেতারা মিছিলকে স্থগিত ঘোষণা করেন। সরকারের তরফে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের সামান্যতম ইঙ্গিত দেখলে পরেই আবারও আন্দোলন শুরু হবে বলে কৃষক নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। যদিও এই আন্দোলন কিন্তু কেবল মহারাষ্ট্রেই আর সীমাবদ্ধ হয়ে নেই। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

গত ১৭ মার্চ, শয়ে শয়ে ভূমিহারা কৃষক কর্নাটকের টুমকুরে যে জমি থেকে ২০১৭ সালে তাঁরা উচ্ছেদ হয়েছিলেন, মিছিল করে আবারও তাঁরা সেই জমির দখল নিয়েছেন। ঝাড়খণ্ডের সোনাহাটু অঞ্চলে কৃষক সভার আয়োজনে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান-সহ আরও অন্যান্য রাজ্যে একই রকমে মিছিল, মিটিং, সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। আদতে এই সমস্ত কিছুই অল ইন্ডিয়া কিসান সভার তরফে ৫ এপ্রিলের জমায়েতের কথা মাথায় রেখে আয়োজন করা হচ্ছে। ৫ এপ্রিল, ২০২৩, অল ইন্ডিয়া কিসান সভার ডাকে, খাস রাজধানী দিল্লিতে বিরাট কিসান মজদুর সংঘর্ষ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। একদিকে যখন মিত্র আদানির দু নম্বরির পর্দা ফাঁস নিয়ে মোদি-শাহের সরকার বেকায়দায় রয়েছে, একই সময়ে কৃষক-মজুরদের ডাকে ঐক্যবদ্ধ এই সংগ্রামের সলতে পাকানোর কাজ হয়ে চলেছে। সরকারি তথ্যে জানা যাচ্ছে বিগত ৯ বছরের বিজেপি শাসনে, মোদি-শাহের সরকার অন্ততপক্ষে ১০.৭২ লক্ষ কোটি টাকার কর্পোরেট ঋণ মকুব করেছে। রাঘববোয়ালেরা একেকজন ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপন করেছেন। অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে, দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ যেখানে কিনা দেশের ৪০ শতাংশ সম্পদের মালিক, সেখানে সেই ১০ শতাংশ মানুষই আবার মোট প্রদত্ত জিএসটির কিনা মাত্র ৩ শতাংশেরই অংশীদার। মধ্যবিত্ত ৪০ শতাংশ জনগণ, যারা কিনা দেশের ৫৭ শতাংশ সম্পদের মালিক, প্রদত্ত জিএসটির মাত্র ৩৩ শতাংশ আসে তাদের পকেট থেকে। অন্যদিকে দেশের গরিব, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক-শ্রমিক-মজদুরদের যে বিপুল জনসংখ্যা যারা কিনা দেশের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ প্রায়, এবং তারা সকলে মিলে দেশের মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদের অংশীদার, সেই তাদেরই পকেট থেকে কিনা আদায় করা হয় মোট জিএসটির ৬৪ শতাংশ! এছাড়াও রয়েছে আদিবাসীদের পক্ষে অরণ্যের অধিকারের আন্দোলন। শ্রমিকের পক্ষে বিতর্কিত লেবার কোড নিয়ে আসার বিরুদ্ধে আন্দোলন। কৃষক, শ্রমিক, আদিবাসী প্রভৃতি সকল প্রান্তিক অথবা খেটে খাওয়া মানুষের হকের লড়াই, ইজ্জত ও ইনসানিয়ৎ রক্ষার পক্ষে দাঁড়িয়ে, এই সমাবেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। এর আগে ২০ মার্চ, দিল্লির রামলীলা ময়দানেই কৃষক আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠা সংযুক্ত কিসান মোর্চার তরফে মহাপঞ্চায়েত অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রের মসনদে আসীন ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরাতে একযোগে, একবারে সমাজের সমস্ত খেটেখাওয়া শ্রেণির রাস্তায় নেমে আসা ভিন্ন আরও অন্য কোনও বিকল্পই কারও নজরে আসছে না।

এই সবকিছুই কৃষক-শ্রমিক নেতারা তাঁদের বক্তব্যে তুলে আনছেন। ৫ এপ্রিলের সমাবেশের প্রস্তুতিতে এই সমস্ত বক্তব্যগুলিকেই তাঁরা প্রাধান্য দিচ্ছেন। কিসান মজদুর সংঘর্ষ সমাবেশকে বড় রূপ দিতে আয়োজক সকল সংগঠনই দিবারাত্র পরিশ্রম করে চলেছেন। কিন্তু এর পরেও বলব, বৃহত্তর সংগ্রামের ক্ষেত্রে ফ্যাসিজমের বৃহত্তম শত্রুকে গণতান্ত্রিক পথে সরাতে গেলে বিস্তৃত ও সার্বিক বিরোধী ঐক্য ভিন্ন তা অসম্ভব। ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে এককাট্টা হয়েই রুখে দাঁড়াতে হবে। যেমনভাবে কিসান, মজুর, জেলে, কামার, সকল পেশার সকল খেটে খাওয়া মানুষকেই একত্রিত হয়ে পথে নামতে হবে, তেমনই রাজনৈতিক বিরোধিতার ক্ষেত্রে সমস্ত ফ্যাসিবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকেই এক ছাতার তলায় এসে দাঁড়াতে হবে। আজ যে কায়দাতে সংসদীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বিরোধী নেতা এবং দায়িত্বশীল রাজনীতিক রাহুল গান্ধিকে তাঁর সাংসদ পদ থেকে বহিষ্কার করা হল, তার পরবর্তীতেও আমরা দেখলাম একেকজন বিরোধী নেতা সরকারের নিন্দাপ্রসঙ্গে রাহুল গান্ধির নামটুকুও মুখে আনার প্রয়োজন বোধ করলেন না। এমনকি এই অবস্থাতেও যেখানে রাহুল সার্বিক বিরোধী জোট গড়ে তোলার কথা বললেন, আবারও তাঁর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র মতোই জোড়ার পথে, গড়ার পথে, ফ্যাসিস্টদের উৎখাতের প্রশ্নে সওয়াল করলেন, একেকজন বিরোধী নেতা আবারও সেই আগের মতোই ‘আঞ্চলিক শক্তির প্রয়োজনীয়তা’, ‘তৃতীয় ফ্রন্টের গুরুত্ব’ ইত্যাদি বিষয়ে মন্তব্য করতেই আগ্রহ বোধ করলেন। একথাও বোধহয় সত্যি যেমনটা রভিশ কুমার তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন, নিজে আদ্যন্ত সৎ হতে না পারলে অসততার বিরুদ্ধে শিরদাঁড়া সোজা রেখে লড়াই করা চলে না— তেমন অনেক বিরোধী নেতারই বোধহয় শিরদাঁড়া সোজা রাখার ক্ষেত্রে আজকাল যথেষ্টই অসুবিধার উদ্রেক হয়েছে। কেবল সরকারি এজেন্সিগুলিকে দোষারোপ করে গেলেই বোধহয় স্বকৃত পাপের প্রায়শ্চিত্ত ঘটে যায় না। আয়নায় তাঁদের নিজেদের মুখগুলিকেও দেখে নেওয়া উচিত। এই সময়ে দাঁড়িয়ে সত্যকারের যাঁরা বিরোধী, সত্য করেই যাঁরা এই ফ্যাসিস্ট সরকারের উৎখাত চান, তাঁদের সকলেরই উচিত সমস্ত রাজনৈতিক বিভেদকে বিস্মৃত হয়ে এককাট্টা হয়ে দাঁড়ানো।

কিসান লং মার্চের মতোই এমন প্রতিটি মিছিল, এমন প্রতিটি সমাবেশ, এমন পদযাত্রার আয়োজন, উদযাপন, যে সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে উজ্জীবিত করে, আমাদেরকে নতুন আশা জোগায়— তেমনভাবেই আমাদেরকে আশঙ্কিতও করে তোলে। এত আন্দোলনের পর, এত পরিশ্রমের পর, এত তিতিক্ষা পেরিয়েও— শেষমেশ কিনা দরবারে সেই ফ্যাসিজমের মুখটুকুকেই নির্বিচারে মেনে নিতে হবে? সত্যিই কি আমরা রাজনৈতিকভাবে একজোট হয়ে এই বিপুল সঙ্কটের মোকাবিলা করতে এগিয়ে আসব না? সংবিধান যখন বিপন্ন, দেশের চারিত্রিক অস্তিত্বই যখন বিপন্ন, সেই সময়ে দাঁড়িয়েও কিনা আমরা ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের হিসেব কষতেই ব্যস্ত হয়ে থাকব? আজ কিসান লং মার্চ বা এমন প্রত্যেক আন্দোলন ও তার সাফল্য অথবা অভিজ্ঞতাকে দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ ও তার লাভ বা প্রাপ্তিগুলি থেকে সার্বিক সামাজিক অবস্থার উন্নয়নকে সুনিশ্চিত করতে গেলে, ফ্যাসিজমের রাজনৈতিক পরাজয়কেও সুনিশ্চিত করতে হবে। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে চলা, খোলা আকাশের তলায় রাতের পরে রাত কাটিয়ে ফেলা অদম্য কৃষক, অজেয় শ্রমিকদের কথা মনে রেখেই সকল বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির কাছে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার আহ্বান রেখে গেলাম।

 

সূত্র:

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4888 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...