কুশমণ্ডিতে ধর্ষণ – একটি রিপোর্ট

ব্রতীন সরকার

 

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা কুশমণ্ডিতে এক আদিবাসী মহিলাকে পর পর ধর্ষণ করে তাঁর উপর ভয়ংকর অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। এতটাই বীভৎস অত্যাচার করা হয়েছে ওই আদিবাসী মহিলার উপর যে তাঁর গোপনাঙ্গের ভিতর থেকে মাংসপিণ্ড বেরিয়ে আসে। ১৭ই ফেব্রুয়ারি কুশমণ্ডি থানার দেহাবন্দ গ্রামের ঘাটনাপাড়ায় রাত ৯টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। নির্যাতিতা মহিলার বাবা মা দুজনেই ১৪-১৫ বছর আগে মারা যান। তারপর থেকেই ২৫ বছরের ওই মহিলা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। ফলে পুলিশে গিয়ে যে কেউ অভিযোগ জানাবেন, সে অবস্থাও পরিবারের নেই। এই অবস্থায় ওই গ্রামেরই এক আদিবাসী প্রতিবেশী বুয়া সোরেন (৫০) কুশমণ্ডি থানায় সোমবার অভিযোগ দায়ের করেন। নির্যাতিতা মহিলাকে প্রথমে কুশমণ্ডি হাসপাতাল পরে সেখান থেকে রায়গঞ্জ হাসপাতাল এবং তার পরেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় শেষে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে এদিন ভর্তি করা হয়েছে। এখন সেই মহিলা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছেন। এতবড় একটি ঘটনা যা মুখ্যমন্ত্রীর মালদহ এবং দুই দিনাজপুর জেলা সফরের ৪৮ ঘণ্টা আগে ঘটে গেল তাকে প্রথম‍‌দিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু সোমবার থানায় অভিযোগটি গ্রহণ করার পর ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যা‌‌‌য়।

বছর আটেক আগে এই মহিলার বিয়ে হয়েছিল। এরপর আদিবাসী ওই মহিলার মানসিক প‍‌রিস্থিতি কিছুটা খারাপ হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে গ্রামে ফিরিয়ে দিয়ে যায়। তাঁকে দেখাশোনার কেউ ছিল না। গ্রামের লোকজনের দেওয়া খাবার খেয়েই তাঁর দিন কাটত। উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মাঝখানে পড়ে দেহাবন্দ গ্রামটি। ইটাহারের দিকে একটি মেলা হচ্ছিল। আদিবাসী ওই মহিলা সেই মেলায় গিয়েছিলেন। মেলায় যখন তিনি ঘুরছিলেন সেই সময়ে ৮ জন যুবক একটি ব্রিজের নিচে সরষে ক্ষেতে জোর করে নিয়ে আসে। সেখানে তাঁকে পর পর ধর্ষণ করা হয়। তারপর গোপনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তারপর মহিলা অচৈতন্য হয়ে পড়েন। কুশমণ্ডি থানায় যে অভিযোগ দায়ের করা হয়ে‍‌ছে তাতে অপরাধী হিসাবে রামপ্রসাদ শর্মা (৪০) ওরফে ‘ল্যাংড়া কাঠমিস্ত্রি’ বলে একজনের নাম রয়েছে। তবে পুলিশ এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

অ‍‌ভিযোগে বলা হয়েছে, ১৮ই ফেব্রুয়ারি পতিরাজ হাট নামে একটি জায়গায় ব্রিজের নিচে আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ কয়েকজন অচৈতন্য অবস্থায় মহিলাকে পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁরা হাঁকডাক শুরু করলে পাড়ার মহিলারা ছুটে আসেন। মহিলারা তাঁর চোখে মুখে জল দিয়ে জ্ঞান ‍‌ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। শেষে তাঁর জ্ঞান ফিরে আসে। তারপর সে গ্রামের মানুষকে সবটা জানায়। মহিলা রামপ্রসাদসহ অপরিচিত ৭জনের কথা বলে। এরপর থেকে প্রবল উত্তেজনা দেখা দেয় গ্রামে। রাস্তা অবরোধ শুরু হয়। সেভ ডেমোক্র্যাসি ফোরামের রাজ্য সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য ২০১৭ সালে এ রাজ্যে ২৪ জন আদিবাসী মহিলা ধর্ষিতা হয়েছেন। যার মধ্যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপরাধীরা বেশিরভাগই শাসকদলের কর্মী বলে তিনি জানান। ফোরামের সদস্যরা ওই গ্রামে যাবেন বলে চঞ্চল চক্রবর্তী জানান। অন্যদিকে এলাকার আদিবাসী সমাজ ও লোকশিল্পী কল্যাণ মঞ্চের সভাপতি বুধন হেমব্রম অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা না করলে তাঁরা বড়সড় আন্দোলনের রাস্তায় যাবেন বলে জানিয়েছেন।

পুরো ঘটনাপ্রবাহের ওপর নজর রাখছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। সুবিচার আদায় করার জন্য প্রশাসনের ওপর নিরন্তর চাপ বজায় রাখতে হবে যাতে শাসক-ঘনিষ্ঠ বলে অপরাধীরা পার পেয়ে না যায়।

[ভেতরের ছবিদুটি এঁকেছেন লেখক নিজে]

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4888 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...